একটুখানি পর্ব : ৪৩

0
444
  • একটুখানি
    — লামইয়া চৌধুরী
    পর্বঃ৪৩
    কলরব ড্রয়িংরুমে ফিরে আসতেই পিহু গেল কুহুর
    কাছে। রুমে যেয়ে দেখলো কুহু বিছানায়
    হতবাক হয়ে বসে আছে। মাথায় আর ঘোমটা
    নেই। কুহুকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে তার মাথা
    এখন পুরাই ফাঁকা। পিহু কিছুটা অবাক হলো।
    তারপর দরজা বন্ধ করে বোনের পাশে বসলো।
    কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বললো,
    – আপুণি কলরব ভাই কি তোকে কিছু করেছে??
    কুহু ভাবনায় মগ্ন ছিল তবে বুদ হয়ে ছিল না তাই
    কথাটা কানে গেল। সে পিহুর দিকে তীক্ষ্ণ
    দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,
    – কিছু করেছে মানে কি????
    পিহু ফিক করে হেসে দিয়ে বললো,
    – আপুণি তুই ইদানিং চালাক হয়ে যাচ্ছিস। মা
    আসলে ভুল বলে। তুই বোকা না।পৃথিবীতে
    বোকা বলতে কেউ নেই। সবাই চালাক কেউ
    একটুখানি কম আর কেউবা একটুখানি বেশি।
    তাছাড়া প্রেমে পড়লে বোকারা তো চালাক
    হয়েই যায়, তুইও হয়ে গেছিস।
    কুহু চোখ ছোট ছোট করে পিহুর দিকে রাগী লুক
    দিয়ে বললো,
    – আমি কবে চালাকি করলাম??
    – এই তো এখনি।
    – মোটেও না।
    – তাহলে তোকে এমন বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে
    কেনো??
    কুহু চোখ মুখ কুঁচকে বললো,
    – জানিস কলরব যে পাগল???
    পিহু আর্তনাদ করে বললো,
    – নাহ্ এ হতে পারে না! আমার ওয়ান এন্ড
    অনলি এটিএম কার্ড পাগল হতে পারে না।
    – এটিএম কার্ড মানে?
    – তোর জামাইর টাকা মারবো আরকি।
    – আরে জামাই টামাই রাখ আগে শোন পাগলটা
    কি করেছে।
    পিহু দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে বললো,
    – না না ছিঃ! আমি শুনবো না আমার শরম করে।
    কুহু হতাশ গলায় বললো,
    – পিহুন এমন করছিস কেনো? আর শরম আবার
    কি? লজ্জা বলবি। কতবার বলি সুন্দরভাবে কথা
    বলবি। শুনিস না কেনো?
    – এই যে মেডাম ফুলটুশী আমি তো সুন্দর করেই
    কথা বলি। মাঝে মাঝে দুষ্টোমি করি আরকি।
    – এই এগুলো আবার কি? ফুলটুশী টুলটুশী একদম
    বলবি না,যাস্ট ডিজগাজটিং লাগে।
    – কলরব ভাই বললে দোষ নাই আমি বললে দোষ
    কেনো??
    – আরে কলরব ভাই দিয়ে মনে পড়েছে জানিস
    কলরব কি করেছে?
    – কি করেছে?
    – প্রথমে ঘুরে ঘুরে রুমটা দেখেছে তারপর
    ওয়ারড্রবের উপর রাখা আমার ছবিটায় ইশারা
    করে আমাকে বলেছে আমি কি আপনাকে ছুঁতে
    পারি??
    পিহু ইন্টারেস্ট নিয়ে বোনের হাত চেপে ধরে
    বললো,
    – তুই কি বললি?
    – আমি তো প্রথমে বুঝতে পারিনি যে উনি
    ছবির কথা বলছে তাই ভয়ে বিছানায় ধপাস
    করে বসে পড়েছিলাম।
    পিহু অস্হির হয়ে বললো,
    – তারপর কলরব ভাই কি করেছে?
    – এরপর কলরব আমার অবস্হা দেখে হেসেছিল
    এন্ড দ্যান…
    পিহু বিরক্ত হয়ে বললো,
    – রাখ তোর মাস্টারি এন্ড দ্যান এন্ড দ্যান না
    করে তাড়াতাড়ি বল।
    – কলরব টুপ করে ফ্রেমটা হাতে নিয়ে ছবিটা
    খুলে পকেটে পুরে নিয়েছে।
    পিহু দাঁত বের করে হেসে বললো,
    – তারপর! তারপর!
    – ছবিটা পকেটে নিয়েই ড্রেসিংটেবিলের
    দিকে এগিয়ে গেল। আমি তখনো হা হয়ে
    আছি।
    – তোর কাহিনী বাদ রাখ আমি তো আমার
    দুলাভাইয়ের কাহিনী শুনতে চাই।
    – ড্রেসিংটেবিলের আয়নায় আমাকে দেখা
    যাচ্ছিল। সে আয়নায় হাত রেখে বললো,
    ” ফুলটুশী! আজ আপনার রুম অব্দি চলে এসেছি
    আর আপনাকে ছুঁয়েও ফেলেছি। ঘোমটাটা
    মাথায় দিয়ে ফেলুন হয়তোবা আমাকে ভয়
    পাওয়ার চুটে কখন খসে পড়ে গেছে খেয়ালই
    করেননি।”
    কুহু এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে থামলো।
    তারপর পিহুকে আঙুলের ইশারায়
    ড্রেসিংটেবিলের আয়নায় তাকাতে বললো।
    পিহু ড্রেসিংটেবিলের দিকে চোখ সরাতেই
    দেখলো সেখানে লিপস্টিক দিয়ে বড় বড় করে
    লিখা,
    ” ফুলটুশী! আই ডু লাভ ইউ।
    তোর আমায় মনে পড়লে তুই দে না মিসড কল
    ০১*********
    সরি! আপনি হবে গানের লাইনটাই এমন তাই
    বান্দা ভুল করলো ”
    পিহু বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়লো। তারপর
    নিজের দুইগালে হাত দিয়ে বললো,
    – উমা কলরব ভাই কি ফেসিনেটিং
    রোমান্টিক! কেমনে কি আপুণি?? তুই হলি
    বোরিং রোমান্টিক আর কলরব ভাই
    ফেসিনেটিং রোমান্টিক। আহা! আমাদের
    এলাকা রোম্যান্সে ডুবে যাবে।
    কুহু আবার চোখ ছোট করে বললো,
    – আমি রোমান্টিক ছিলাম কখন??
    পিহু কুহুর পাশে দাঁড়িয়ে কুহুকে কনুই দিয়ে
    গুঁতো দিয়ে বললো,
    – সেদিন কে যেন কলরব নামের কাগজে চুমু
    খেয়েছিল মনে পড়ছে না আমার। আপুণি তোর
    মনে আছে কি?
    কুহু পিহুর কান টেনে বললো,
    – ভাগ এখান থেকে।
    পিহু চলে যাওয়ার বদলে কুহুকে জড়িয়ে ধরে
    বললো,
    – আপুণি তোর কলরব কি লিপস্টিকটাও নিয়ে
    গেছে নাকি?
    কুহু লজ্জা পেয়ে বললো,
    – নাহ্ সেখানেই রেখে গেছে।
    ..
    জাহরা ছেলের রুমে যেয়ে বসে আছেন।
    কূজনের বিন ব্যাগের উপর বসে বসে জাহরা
    ভাবছে ছেলেটা তো এমনিতেই কষ্টের মধ্যে
    আছে
    তার উপর এভাবে উনার বলা উচিত হয়নি। ছোট্ট
    একটা নিঃশ্বাস ফেলে ফোন করলেন ছেলের
    কাছে। কূজন কল রিসিভ করেই বললো,
    – হ্যালো মা কেমন আছো?
    জাহরা ছেলের কণ্ঠ শুনেই কেঁদে দিলেন।
    কূজন ফোনের ওপাশ থেকে বললো,
    – মা কাঁদছো কেনো? আমি তো ঠিক আছি।
    জাহরা ছেলের কথা শুনে চোখের পানি মুছে
    বললেন,
    – আমার বুঝা উচিত ছিল তুমি যে পরিস্হিতির
    মধ্যে ছিলে বাবা এতে তোমার কোনো দোষ
    নেই। কলরবের সাথে কুহুর বিয়ের কথা শুনার পর
    আগে তো তোমার নিজেকে সামলাতে হবে
    তারপর না তোমার বাবাকে সামলাবে। কিন্তু
    আমি না বুঝেই তোমার সাথে রিএক্ট করেছি
    আব্বু।
    কূজন হেসে বললো,
    – মা তুমি এমন করছো মনে হচ্ছে আমি প্রেম
    করে প্রেমে ব্যর্থ ছ্যাঁকাকুমার। সেরকম কিছুই
    না। কুহুকে দেখে জাস্ট একটুখানি ভালো
    লেগেছিল। গভীরভাবে ওকে চেয়েছি বা
    ভালোবাসা টাইপের কিছু তো আমাদের মাঝে
    ছিল না।
    কূজনের কথা শুনে জাহরার আবার কান্না চলে
    এসেছে তাই তাড়াতাড়ি করে ফোন রেখে
    দিলেন। জাহরা তো জানেন তাঁর ছেলে কেমন।
    ছেলেটা সবাইকে ভালো রাখার জন্য যে
    এতোটুকু কষ্ট করছে তা এই মায়ের বুকে সুঁচের
    মতন বিঁধছে। বহুবছর আগে তাঁকেও সবার মুখে
    একটুখানি হাসি ফুটানোর জন্য অনেক কিছুই
    করতে হয়েছিল কিন্তু কোনো দুঃখ কষ্টের
    সম্মুখীন হতে হয়নি। শুধু একটুখানি সময় দিতে
    হয়েছিল হাসনাদকে। এর বিনিময়ে অনেক
    সুখেই দিন কেটেছে তার কিন্তু আজ তাঁর
    ছেলেকে কেনো সবার মুখে একটুখানি হাসি
    ফুটানোর জন্য এতোখানি কষ্ট করতে হচ্ছে???
    চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here