একটুখানি পর্ব : ৮

0
957

একটুখানি
#লামিয়া_চৌঃ
পর্ব:৮
হালকা হেসে কুহু ইরিনকে বললো,
– কেমন আছো?
– ভালো।
– আমি কিন্তু খুব কড়া।
– কি যে বলেন না ভা.. না মানে আপনাকে দেখে ভাবাই যায় না আপনি যে স্ট্রিক্ট হতে পারেন।
– পড়ছো তো পড়লেই বুঝবে। ইংরেজী পড়তে তোমার কেমন লাগে?
– বিরক্ত লাগে।
– আচ্ছা ঠিক হয়ে যাবে। আগে ইংরেজী কার কাছে পড়তে?
– কোচিং ক্লাসে।
– ওহ্ অন্য সাবজেক্ট গুলোর জন্যও কি আলাদা টিচার আছে?
– না আপু।
কুহু কিছুটা ভড়কে গেলো ইরিনের এমন জবাবে। ভাবতে লাগলো কলরব ইচ্ছে করে করেনি তো?
তারপর ভাবতে ভাবতেই ইরিনকে জিজ্ঞাসা করলো,
– সায়েন্স?
– হুম।
– তাহলে সায়েন্সের সাবজেক্ট গুলো যদি কোচিং করে কভার করতে পারো তাহলে সামান্য ইংরেজী পারো না?
– না আসলে বাবা তো আছেই অঙ্ক দেখিয়ে দেয় আর আমার ভাইয়া তো আছেই ফিজিক্স কেমিস্ট্রি কোনো সমস্যা হয় না। ভাইয়ার মতো যদি আমি ব্রিলিয়ান্ট হতাম তাহলে কতো ভালো হতো।
– তোমার রোল কতো?
– 36 কিন্তু আমার ভাইয়া ছিল ফার্স্ট বয়। ভাইয়া তো চিটাগাং ভার্সিটিতে ফরেস্ট্রীতে পড়েছে আর সেখানেও ভাইয়া…
– তুমি নিজে কোথায় পড়বে সেটা ভাবো।
ইরিন কুহুর এমন কথায় চুপ হয়ে যায়।
..
ইরিনকে ছুটি দেয়ার পর কুহু যেয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালো। খুব লক্ষ্য করে সে নিজেকে দেখছে। পিহু ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে কুহুকে এভাবে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো,
– মনে কি রং লেগেছে?
– না তো।
– তাহলে এভাবে আয়নায় কি দেখছিস?
– কাকে আবার আমাকে?
– তা তো বুঝলাম কিন্তু কেনো দেখছিস?
– ভাবছি তেমন সুন্দর তো আমি নই তারপরো ঐ আজব কলরব এমন করছে কেনো?
পিহু হাতে মোবাইল নিয়ে বসতে বসতে বললো,
– ইরিনকে পাঠিয়েছে তাই বলছিস?
– হুম।
– তোকে কলরব পছন্দ করে তাই হয়তো।
– এটাই তো ভাবছি কেনো পছন্দ করে? আসলে আমার মনে হয় ফাতরামি করছে আমার সাথে।
– আমার কেনো যেন তা মনে হয় না।
কুহু পিহুর পাশে বসতে বসতে বললো,
– কেনো তোর এমন মনে হয় না?
– আচ্ছা তুই ইদানিং সবসময় কলরবকে নিয়ে ভাবিস কেনো?
– সে এমননসব কাজ করে যে ভাবনায় পড়ে যাই।
– সামলে থাকিস কোনদিন না আবার প্রেমে পড়ে যাস।
– বাজে কথা রাখ তো। আমি ভাবছি কলরবের চোখে কি তোকে লাগে না?
কুহুর কথা শোনে পিহু বিরক্তিভাব নিয়ে কুহুর দিকে তাকিয়ে বললো,
– তোর মাথাটা পুরাই গেছে। আরো পর বেশি বেশি কবিতা হেনতেন তারপর আরো উল্টা পাল্টা কথা বলবি।
– না আসলেই ভাবছি তোকে তো সে চিনে নাহয় ইরিন তোকে চিনতো না।
– তো??
– তাহলে কলরব তোর পিছনে ঘুরে না কেনো?
– আমি একটা বাচ্চা মেয়ে আপুণি।
– কলেজে পড়িস বাচ্চা কীভাবে? আর তুই তো যা ঝাক্কাস তোকে দেখে মাঝে মাঝে আমি নিজেই হা হয়ে থাকি বিশেষভাবে যখন কাঁদিস তখন।
– আর কিছু বাকি আছে বলার?
– হুম আছে তো। শোন তুই এক কাজ করবি এই শুক্রবারে ছাদে যেয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদবি।
– তুই দয়া করে যা মাথায় একটু ঠান্ডা পানি ঢেলে আয় নয়তো এমন পাগলের প্রলাপ পারতে থাকবি আর আমার কাছে ডান্ডা খাবি।
– আরে আগে সবটা শোন। তুই যখন কাঁদিস তখন তোর বড় বড় টানা টানা চোখগুলো লাল টকটকে হয়ে যায় তখন তোকে যে কি লাগে না বলে বোঝানো যাবে না। আর তোর থুতনীতে যে ছোট একটা তিল আছে উফ্ সেই। তুই পুরাই হলুদ পরী।
– ইশ্ এগুলো যদি জাস্টিন বিবার বলতো!
– উফ্ জাস্টু জাস্টু পরে করিস তো এখন তোকে একটা কাজ দিব করে দিবি।
– কি কাজ আর কেনোই বা করবো?
– কাজটা হলো ছাদে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে একদিন কাঁদবি আর কয়েকদিন আমার সাথে ছাদে যাবি। কোনো কোনোদিন একাও যাবি।
– নেভার!
– পুরস্কারটা শোন।
– কি?
– তোকে নিয়ে যেয়ে নাগরদোলা চড়াবো সাথে আমিও চড়বো।
– পারবো না।
– পুরো পনেরো দিন নিয়ে যাব তোকে রাজি?
– তুই আবার বলতে পারবি না যে পিহু তুই একাই উঠ আমি উঠবো না।
– বলবো না।
– নাগরদোলায় উঠে আঙ্কেল প্লিজ আমি নেমে যাব, পিহু থামাতে বল এধরনের কথা বলা যাবে না।
– ঠিক আছে।
– কিন্তু কথা হচ্ছে কাঁদবো কীভাবে? আই মিন কারণ ছাড়া কাঁদা যায়?
– আমি আছি না কাঁদতে তোমাকে হবেই সুন্দরী।
– আমি এতো সেন্টিমেন্টাল না।
– আমি জানি কোথায় আঘাত করতে হবে।
পিহু বিছানা ছেড়ে উঠতে উঠতে বললো,
– ঠিক আছে দেখা যাবে কেমন কাঁদাতে পারিস।
পিহু কথাটা বলেই রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো।
কুহু গা এলিয়ে দিয়ে যেই না চোখ বন্ধ করতে যাবে তখনই পিহু এসে ডেকে বললো,
– আপুণি।
– হুম কিছু বলবি?
– তুইও কিন্তু কম যাস না। তোর মাঝে মিষ্টি মিষ্টি একটা ভাব আছে। ভ্রু গুলোও অসম্ভব সুন্দর। আর একটা জিনিস আছে যেটা হলো তোর চুল খুবই সিল্কি তবে এটা তো আর কেউ দেখে না হিজাব তো থাকেই তোর।
– হুম আমার এই সিল্কি চুলগুলো আবার বর দেখবে মন ভরে তাই কাউকে দেখাই না। আচ্ছা এক মিনিট এতো পাম্পিং কেনো?
– হঠাৎ মনে হলো তাই বললাম আরকি।
– শোন ট্রেনের চাকায় পাম্প দিয়ে যেমন কোনো কাজ হয় না তেমনি এক্ষেত্রেও কিছুই হবে না।
– না তুই আমার এতোগুলো সুনাম করলি একটু ভদ্রতা আছে না?
কুহু পিহুর কথা শুনে হাসতে হাসতে বললো,
– পিহু তুই খুব চালাক।
– আজকাল তোর মতো ভ্যাবলি হলে হয় না।
– যা ভাগ।
– যাচ্ছি তো বাবা।
..
কলরব বাসায় ফিরতেই ইরিন বললো,
– ভাইয়া ভাবি অনেক কড়া।
কলরব হেসে বললো,
– আমি ফ্রেশ হয়ে আইসক্রিম খেতে খেতে তোর সাথে কথা বলবো।
– কোথায় আইসক্রিম?
– ফ্রিজে রেখেছি পাঁচ মিনিট লাগবে আমার।
– ঠিক আছে ভাইয়া। আচ্ছা তোমার হাতে কিসের কার্ড?
– বিয়ের কার্ড।
– কার বিয়ে?
– যে বন্ধুর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম ওর বিয়ে।
কলরবের মা রান্নাঘর থেকে কলরবকে জিজ্ঞাসা করলো,
– কোন বন্ধুর?
– রঞ্জুর বিয়ে মা।
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here