একটুখানি
#লামিয়া_চৌঃ
পর্ব: ৯
বেশ কিছুদিন ধরে হাসানাদ সাহেবের শরীর ভালো যাচ্ছিলো না কিন্তু আজ এমন কিছু হয়ে যাবে তা হাসানাদ সাহেব ভাবতে পারেনি। এখন তিনি বসে আছেন অচেনা অজানা একটা বাসায়। মাথার উপর ফ্যান ঘুরছে কিন্তু তারপরো গরম লাগছে। হাসানাদ সাহেব ব্লেজারটা খুলে টাই ঢিল করে সোফায় হেলান দিয়ে বসে আছেন। এসি না থাকায় কষ্ট হচ্ছে খুব। হাসানাদ সাহেব প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইল বের করে ফোন দিলেন কূজনকে। রিং হওয়ার প্রায় সাথে সাথেই কূজন ফোন রিসিভ করলো।
– হ্যালো বাবা!
– কূজন কোথায় তুমি?
– আমি ক্যাম্পাসে। তোমার কথা শুনে কেমন যেন মনে হচ্ছে। তুমি ঠিক আছো তো?
– সকালে ব্যবসার কাজে কুমিল্লার বাইরে এসেছিলাম। ফিরার পথে গাড়ি নষ্ট হয়ে গিয়েছে তাই ড্রাইভারকে পাঠিয়েচ্ছিলাম মেকানিকের কাছে।গাড়িতে একা বসে থাকতে ভালো লাগছিলো না তাই একটু বের হয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। হঠাৎ দেখি আশেপাশের সব আওয়াজ ধীরে ধীরে কমে আসছে, মাথা ভনভন করতে থাকে। ভেবেছিলাম ঠান্ডা জাতীয় কিছু একটুখানি খেলেই ঠিক হয়ে যাবে। সামনে এগিয়ে একটা বেকারি থেকে পেপসি কিনে ফিরে আসার সময় হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যাই।
– এখন তুমি কোথায় বাবা?
– একটা মেয়ের বাসায়। বেকারিতে যখন পেপসি কিনছিলাম একটা মেয়ে তার পার্স হারিয়ে ফেলেছিলো। আইসক্রিম বক্স হাতে নিয়ে ফেলেছিলো কিন্তু টাকা দিতে যেয়ে দেখে পার্স নেই তখন আমি বেশ জোর করেই টাকাটা দিয়ে দিয়েছিলাম। আমি এখন তার বাসায় আছি।
– বাবা আমি এখনই আসছি জাস্ট লুকেশন বলো।
– আহা আমি এখন ফেণী আছি তোমার কষ্ট করে আসা লাগবে না। এখন আমি ঠিক আছি গাড়িও ঠিক করা হয়েছে।
– না বাবা আমি আসছি আর শুনো মাকে বলার দরকার নেই।
– পাগল নাকি যে বলতে যাব? আর শুনো বাবা এখন ঠিক আছি। সামনে তোমার ফাইনাল পরীক্ষা মন দিয়ে পড়াশুনা করো।
– বাবা প্লিজ।
– না এখন আসা লাগবে না।
– ওকে বাবা খেয়াল রেখো নিজের আর বাসায় পৌঁছে আমাকে জানিয়ো। ও হ্যা রওনা হয়েও আমাকে ইনফর্ম করো কিন্তু।
– আচ্ছা।
হাসানাদ সাহেব ফোন রাখতেই তাকিয়ে দেখে মেয়েটা হাসি হাসি মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।
– মা তোমাকে কষ্ট দিলাম।
– না আঙ্কেল একদমই কষ্ট হচ্ছে না। এখন নিন একটুখানি আইসক্রিম খেয়ে নিন।
– না মা থেঙ্ক ইউ।
– আরে আঙ্কেল আপনি নিজেই তো কিনে দিয়েছেন।
– তোমাকে কিনে দিয়েছি তুমি খেয়ো।
– আরে আমি কি পুরো বক্স খেয়ে ফেলবো?
– না মা এখন খেতে ইচ্ছে করছে না।
– তাহলে পায়েশ এনে দিচ্ছি খেতেই হবে, একদম না শুনবো না।
– আচ্ছা নিয়ে এসো।
হাসানাদ সাহেব মুগ্ধ দৃষ্টিতে মেয়েটার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। মেয়েটার মাঝে একটা চটপটে ভাব আছে, সাথে আছে খুব তাড়াতাড়ি মানুষকে আপন করে নেওয়ার গুণ।
পায়েশ খেতে খেতে হাসানাদ সাহেব বললো,
– তুমি রেঁধেছো?
– জ্বি আঙ্কেল। কেমন হয়েছে বললেন না যে?
হাসানাদ সাহেব হাসতে হাসতে বললো,
– খুব ভালো।
– থেঙ্ক ইউ সো মাচ আঙ্কেল।
– আচ্ছা তোমার বাবা মাকে দেখছিনা যে?
– বাসায় নেই এখন।
– ওহ্।
– আঙ্কেল একটা ব্যাপার জানেন?
– কি?
– আপনার হাসিটা বেশ সুন্দর, আর হাসি ছাড়া একটাও কথা বলতে পারেন না আপনি, সব কথাই হেসে হেসে বলেন। খুব ভালো লাগে দেখতে।
হাসানাদ সাহেব হুহু করে হেসে দিলেন। তারপর বললেন,
– আমাকে দেখেই তোমার এই অবস্হা তাহলে আমার স্ত্রী আর ছেলেকে দেখলে তোমার যে কি হবে। ইনফেক্ট ওদের মা ছেলের সাথে থাকতে থাকতেই আমি এমন হয়ে গিয়েছি।
– তাহলে তো ওদের সাথে একবার দেখা করতে হয়।
– হুম অবশ্যই করাবো আর তোমার কণ্ঠটাও ভারি মিষ্টি।
– আঙ্কেল গান শুনবেন?
– শুনাও দেখি কেমন পারো।
” ভালোবেসে সখী নিভৃতে যতনে
আমার নামটি লিখো
তোমার মনেরো মন্দিরে
আমারো পরাণে যে গান বাজিছে
তাহার তালটি শেখো
তোমার চরণো মঞ্জীরে..”
– বাহ্ বেশ সুন্দর গান গাইতে জানো তুমি।
– সবাই তাই বলে।
– জানো আমি গান খুব পছন্দ করি। আমার ছেলেও গান গায়, খুব সুন্দর করে গাইতে জানে সে।
– তাই?
– হুম। আচ্ছা তুমি কার কাছে গান শিখেছো?
– আমার মায়ের কাছে।
– তোমার মা বাবা কারো সাথেই তো দেখা করা হলো না। আরেকদিন এসে দেখা করে যাব আজ উঠতে হবে।
– আঙ্কেল না খেয়ে তো চলে যেতে দিব না।
– আরেকদিন খাবো মা প্রমিজ।
– ঠিক আছে প্রমিজ যেহেতু করেছেন তাই ছেড়ে দিচ্ছি।
হাসানাদ সাহেব গাড়িতে উঠে বসে ড্রাইভারকে বললেন গাড়ি স্টার্ট দিতে। পরক্ষণেই মনে পড়লো মেয়েটার নাম জিজ্ঞাসা করা হয়নি তাই তিনি গাড়ি থেকে নামলেন। মেয়েটা এতক্ষণে বাসার গেটে ঢুকে গিয়েছে তাই তিনি মেয়েটার পিছন পিছন যেয়ে মেয়েটাকে ডেকে বললেন,
– মা তোমার নামটা তো জানা হলো না।
মেয়েটা হেসে জবাব দিলো,
– ইরিন।
হাসানাদ সাহেব হেসে বললো,
– হরিণ! তোমাকে হরিণ বলে ডাকবো। আপত্তি নেই তো তোমার?
– যদি আরেকদিন এসে বাসায় খেয়ে যান তাহলে অনুমতি দিব।
– বেঁচে থাকো মা।
..
কুহু বেশ বিরক্ত ইরিনের উপর। মেয়েটা খুবই ফাঁকি দেয় পড়ায়। তার উপর আবার এখন পা ভেঙ্গে বসে আছে বাসায়,সামনে পরীক্ষা। কুহু ইরিনের রেজাল্ট নিয়ে টেনশন করছে। বাকিগুলোতে ডাব্বা মারলেও কুহুর কিছু আসে যায় না কিন্তু ইংরেজীতে অবশ্যই ইরিনকে ভালো করতে হবে। কুহু বেশ বকাঝকা করে ইরিনকে তারপরো মেয়েটা রাগ করে না বরং দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে কুহুকে এটা ওটা জিজ্ঞাসা করে। কুহুরও সত্যি বলতে ইরিনকে খুব পছন্দ কিন্তু ইরিনকে সে বুঝতে দেয় না দুই কারণে। এক তখন কুহুকে ইরিন আর ভয় পাবে না আর আরেকটা হচ্ছে কলরবের ব্যাপারটা। কুহু এখন বেশ সাহস করেই ইরিনদের বাসার কলিংবেল চেপে দাঁড়িয়ে আছে। পিহুটাও নেই কলেজে গিয়েছে নয়তো পিহুকে নিয়ে আসতে পারতো। কুহু আরেকবার বেল চাপতেই দরজা খুলে যায়।
কলরব কুহুকে দেখে বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে।
কুহু ঢোক গিলে বললো,
– ইরিনকে দেখতে এসেছিলাম।
কলরবের তখনও অবাক হওয়ার পালা শেষ হয়নি। কলরবকে চুপ থাকতে দেখে কুহু বললো,
– ইরিন কি বাসায় আছে?
চলবে…