#এক_গুচ্ছো_কদম
#পর্বঃ২৩
লিখাঃসামিয়া খান
“হিমের সাথে এটা আমার দ্বিতীয় বিচ্ছেদ চলছে।”
“আগেও হয়েছিলো নাকী?”
“হুম, যখন আমি রোদসী বিয়ে করি।তখন একটা কারণে আমি হিমকে থাপ্পড় দেই।”
“ওহ।কেনো তা কী জানতে পারি?”
“মিস. নূপুর আপনার সবকিছুতে একটু বেশীই আগ্রহ।”
“হয়তো।এট লাস্ট আপনি তো আমাকে মিস.এহসান থেকে মিস.নূপুর ডাকলেন।”
নূপুর কথাটা শুনে মৃদুল নিজের ওষ্ঠাধর একবার প্রসারিত করলো।
“রোদসীর সাথে বিয়ে হয় কীভাবে তা তো আপনি জানেন।আমার বড় ভাবী মূলত হিমকে আগে দেখতে পারতো না।যখন আমি বিয়ে করি তখন আমার মা কে অনেক কথা বলে ভাবী যে হিম এ বিষয়ে সব জানতো।আর আমার মা মনে করতো যে আমার সাথে হিমের সম্পর্ক আছে।কারণ হিম সবসময় আমার সাথে থাকতো।এলাকার সবার ধারণ এটা ছিলো যে আমি হিমকে বিয়ে করবো।এমনকি ওর মান্থলি ডেট গুলোও ওর থেকে আমি বেশী জানতাম।এজন্য রোদসীকে বিয়ে করাতে মা অনেক শক পেয়েছিলো।”
“বুঝতে পারলাম কিন্তু এতে থাপ্পড় মারার কারণ কী?”
“আছে।আমার মা তখন আমাকে প্রেশারাইজ করা শুরু করে রোদসীকে ডিভোর্স দিয়ে হিমকে বিয়ে করার জন্য।এটা আমার আমার বড় ভাবী রোদসীকে জানায়।রোদসী তখন কান্নাকাটি করে এবং আত্নহত্যার হুমকি দেয়।আমি আর পারছিলাম না তখন এতো প্রেশার নিতে।একদিন বিকালে হিম আমার জন্য গাছ থেকে পেয়ারা নিয়ে আসে।কিন্তু তা রোদসী আমাকে খেতে দেয়না।স্বাভাবিকভাবে হিমেরও রাগ উঠে।আর হিম রোদসীকে অনেক কটূক্তি করে।জানেন মিস. নূপুর দুজনে তখন ঠিক সতীনের মতো লড়ছিলো।অবশেষে রাগ সামলাতে না পেরে আমি হিমের গালে চারটা থাপ্পড় দেই।”
“ওহ মাই!তারপর?”
“তারপর আর কী?সে রাতেই মার এট্যাক হয়।বাবা বাড়ি থেকে চলে যেতে বলে।কিন্তু এসব কিছুর মধ্যে হিম বড্ড অভিমান করে।যার ফলসরুপ চার বছর কথা বলেনা।”
“ওহ।আর দ্বিতীয় বিচ্ছেদ?”
“আর দ্বিতীয় বিচ্ছেদ এখনো চলমান।আদৌ শেষ হবে কীনা তা জানিনা।”
“ইনশাআল্লাহ হবে একদিন।কারণটা কী জানতে পারি?”
ব্লুগেনে চুমুক দিয়ে মৃদুল জবাব দিলো,,
“আজ এ পর্যন্ত।অন্য আরেকদিন বলবো বাকী টুকু।আর আমি জানি অবশ্যই আপনি আবার আমার সাথে মিট করতে আসবেন।”
মৃদুলের কথা শুনে নূপুর উচ্চস্বরে হেসে দিলো।তার যেনো কেমন আলাদা সুখ সুখ লাগছে।অন্যরকম একটা গন্ধ পাচ্ছে সে।আচ্ছা শুধু মৃদুল আশেপাশে থাকলে এই গন্ধ কেনো পায় সে?
,
,
,
”
সকালে তাড়াহুড়ো করে বের হওয়ার জন্য কিছু খেতে পারেনি হিমাদ্রি।এজন্যই সব কাজ শেষ করে তাড়াতাড়ি ক্যাফেটেরিয়াতে চলে এসেছে।একটা ল্যাটে এবং একটা বার্গার নিয়ে ক্যাফেটেরিয়ার এক পাশে বসে পরলো সে।
“ক্যান আই সিট হেয়ার মিস?”
চোখতুলে হিমাদ্রি দেখতে পেলো এক জোড়া সবুজ রঙের চোখের অধিকারি তার অনুমতি পাওয়ার জন্য আগ্রহ নিয়ে তাঁকিয়ে আছে তার দিকে।হিমাদ্রি সেদিক থেকে চোখ সরিয়ে আশেপাশে তাঁকিয়ে দেখলো এখনো আরো অনেক টেবিল ফাঁকা আছে।
“ইয়েস ইউ ক্যান।”
ছেলেটি হিমাদ্রির পাশে বসতে বসতে বললো,,
“আর ইউ ইন্ডিয়ান?”
“নো আই এম নট।আই এম ফ্রম বাংলাদেশ।”
“ওহ।আর ইউ ফ্রি টুনাইট?”
“হোয়াই?”
“লেটস হ্যাভ এ ডিনার।”
“নো,,, এক্সকিউজ মি।”
হিমাদ্রি ছেলেটার পাশ থেকে উঠে আসতে নিলে ছেলেটা তার হাত টান দিয়ে ধরে।
“প্লিজ কাম।”
“আই সেইড নো।সো ইউ সুড লিভ মাই হ্যান্ড।”
হঠাৎ একটা বলিষ্ঠ হাত ছেলেটির হাতে থেকে হিমাদ্রির হাতটা ছোঁ মেরে কেঁড়ে নিলো।হাতটা আর কারো না ভৌমিকের।
“ডোন্ট টাচ মাই লেডী ওকে?”
ছেলেটি আমতা আমতা করে জবাব দিলো,,
“ইয়েস প্রফেসর।”
জবাবে আর ভৌমিক কিছুই বললো না।শুধু হাত দিয়ে ইশারা করে ছেলেটিকে চলে যেতে বললো।এতোক্ষণ যাবৎ হিমাদ্রি অবাক হয়ে ভৌমিকের দিকে তাঁকিয়ে ছিলো।হঠাৎ মুখ খুললো,,
“আই এম নট ইওর লেডি।”
হিমাদ্রির দিকে একটা ঠান্ডা দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ভৌমিক।পরক্ষণে ঠোঁটে মৃদু হাসি ফুটিয়ে তুললো।
“কাম উইথ মি।”
,
গাড়ী তার আপন গতিতে চলছে।ভৌমিক ড্রাইভ করছে আর হিমাদ্রি তার পাশে বসে আছে।হিমাদ্রির মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে। আর তা হলো “মাই লেডী”। কিন্তু ভৌমিককে সে কিছু জিজ্ঞেস করছেনা।এ মানুষটাকে অনেক সস্মান করে হিমাদ্রি। আমেরিকাতে আসার পর প্রথম বন্ধু হিসেবে তাকে পেয়েছে সে।একবার ভৌমিকের দিকে তাঁকিয়ে হিমাদ্রি গাড়ীর কাঁচ গলিয়ে বরফ ঢালা রাস্তার দিকে তাঁকালো।এসব রাস্তায় ড্রাইভিং করা কঠিন।তাও ভৌমিক অনেক দক্ষতার সাথে করছে।হঠাৎ ভৌমিকের কথায় হিমাদ্রি ঘোর ভাঙলো।
” মিস.হিমাদ্রি, আই এম মেরিড!”
চলবে,,