এক গুচ্ছো কদম পর্বঃ২৮ শেষ পর্ব

0
3555

#এক_গুচ্ছো_কদম
#পর্বঃ২৮ (শেষপর্ব)
লিখাঃসামিয়া খান

মাদিহা আর কুঞ্জনের কোলাহলে পুরো বাড়ি মুখরিত হয়ে রয়েছে।পুরো ড্রয়িংরুম জুড়ে একবার এখানে ছুটছে তো আর একবার ওখানে।আরাধ্যাদের বাড়িতে পৌঁছেই মাদিহার ঘুম ভেঙে গিয়েছে। সেই থেকে কুঞ্জনের সাথে মাতামাতি করছে সে।কুঞ্জনকে বেশ ভালো লেগেছে হিমাদ্রির।একটা দুরন্ত তের বছরের কিশোরী। পুরো দস্তর প্রফেসর ভৌমিকের মতো।

“কফি মিস.হিমাদ্রি?”

“সিওর প্রফেসর।”

হিমাদ্রির থেকে সস্মতি পেয়ে তার দিকে কফির মগটা এগিয়ে দিলো ভৌমিক।কফি মগে চুমুক দিয়ে হিমাদ্রি ভৌমিককে প্রশ্ন করলো,

“আপনার আর আরাধ্যা আপুর মধ্যে কি সমস্যা ছিলো?”

“আরাধ্যার বাবা আমাকে মেনে নিতে পারেনি।”

“কেনো?”

“আরাধ্যার সাথে আমার পরিণয় হয় আমি যখন পঁচিশ বছরের।তার এক বছর পরেই বিয়ে।প্রথম দিকে কারো কোনো সমস্যা না থাকলেও এক পর্যায়ে আরাধ্যার বাবা জানতে পারে আমার জন্ম ইতিহাস সম্পর্কে।ব্যাস শুরু হয়ে গেলো।রোজ রোজ আরাধ্যাকে আমার বিরুদ্ধে উশকিয়ে দেওয়া।আমাদের মধ্যে ঝগড়া সহ নানা ঝামেলা হতে থাকে।একদিন ওর বাবা সবার সামনে আমার মাকে গালি দেয়।রাগ সামলাতে না পেরে আমি তাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেই।যার দরুণ তার মাথা ফ্লোর লাগে এবং প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে মারা যায়।”

“কিন্তু এতে তো আপনার দোষ নেই।আপনি তো আর ইচ্ছাকৃতভাবে করেননি।”

“সেটা আরাধ্যার মা বুঝতে পারলেও আরাধ্যা বুঝেনি।কুঞ্জন তখন পেটে।সেই থেকে আমার সাথে থাকেনা আরাধ্যার।কিন্ত অভিমানের বরফ গলছিলো।আজ একবারে গলে পানি হয়ে গিয়েছে।”

“আপু আপনাকে অনেক ভালোবাসে।তাইতো আমার সাথে আপনাকে দেখে কোনো কিছু না ভেবে রিয়াক্ট করে বসলো।”

“জানি।পাগলী নিজেও জানতো আমার কোনো দোষ নেই।শুধু দূর্ঘটনা ছিলো।কিন্ত সমাজ ওকে আঙুল তুলবে যে বাবার খুনীর সাথে থাকে এবং কুলাঙ্গার সন্তান বলবে এটা হয়তো মেনে নিতে পারেনি।”

“সমাজ!সত্যিই এই সমাজ শব্দটা মানুষের অনেক চাওয়া পাওয়া কেড়ে নেয়।সমাজে ভালোভাবে বসবাস করার জন্য নিজের অনেক বিসর্জন করতে হয়।কিন্তু বিনিময়ে সমাজ কি দেয় আমাদের?”

“সমাজ জিনিসটা অনেক জটিল বিষয় মিস.হিমাদ্রি।হয়তো কেও পুরোপুরি ভাবে বলতে পারবেনা সমাজ জিনিসটা মূলত কি।”

“হয়তো।”

“মি.মৃদুলের জন্য খারাপ লাগছে?”

মৃদুলের কথায় থমথমে গলায় উত্তর দেয় হিমাদ্রি,

“জানিনা।অনেক রাত হয়ে গিয়েছে এখন মাদিহার ঘুমাতে হবে।শুভ রাত্রী।”

কফির মগটা রেখে উঠে দাড়ালো হিমাদ্রি। তারপর মাদিহাকে ডেকে ওকে কোলে নিয়ে রুমের মধ্যে পা বাড়ালো।
,
,
বিলাসবহুল একটা হোটেলের সুইটে শুয়ে রয়েছে মৃদুল।বাহিরে যে কাপড় পড়ে ছিলো সে কাপড় এখনো ছাড়েনি।বুকের বাম পাশটা ভিষণ ফাঁকা লাগছে তার।খুব আশা করে এসেছিলো সে হিমাদ্রিকে নিয়ে যাবে এখানে।কিন্তু হিমাদ্রির ডরমিটরিতে গিয়ে তার খবর নিলে তার রুমমেটরা বলে হিমাদ্রি তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে শিকাগো ঘুরতে এসেছে।এই কথাটা শুনামাত্র মৃদুল বাংলাদেশের জন্য টিকিট করতে চেয়েছিলো।কিন্তু মাদিহার ছোট্ট মুখ দেখে করতে পারেনি।মাসুম বাচ্চাটা বিশ ঘন্টা জার্নি করে এসেছে শুধুমাত্র নিজের মা কে দেখবে বলে।তাইতো হাজার কষ্ট হওয়া স্বত্বেও মাদিহাকে হিমাদ্রির কাছে রেখে এসেছে।হয়তো মৃদুল মনে করছে হিমাদ্রি তার জন্য অপেক্ষা করেনি।আর সত্যি করে কতো ওয়েট করবে একটা মানুষ।

হুট করে কলিংবেলের টুংটাং শব্দ করে উঠলো।মৃদুল শোয়া থেকে উঠে বসে চোখের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়া পানিটা মুছে নিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো।
,
,
বড্ড হাশফাশ লাগছে হিমাদ্রির।কেও তাকে খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরে রেখেছে।অনেক পরিচিত একটা ঘ্রাণ এবং ছোঁয়া অনুভব করতে পারছে সে।হুট করেই চোখ খুলে নিলো হিমাদ্রি। আবছা অন্ধকারে অন্তত এটা বুঝতে পারলো একটা পুরুষ তাকে আস্টেপৃস্ট জরিয়ে ধরে ঘুম পাড়ছে।তাড়াতাড়ি করে ফোনটা হাতে নিয়ে ফ্ল্যাশ জ্বালালো। আলোকিত হওয়ার পর যার মুখটা দেখলো তাতে বেশ অবাক হলো হিমাদ্রি। বিস্ময়ে তার গলা দিয়ে কোনো শব্দ বের হলো না।

“বিলাই এর মতো ওরকম হা করে কেনো রয়েছিস হিম?”

“মৃদ তুমি এখানে?”

“তাহলে অন্য কেও থাকবে।মাদিহা নিজের মাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে আমি কেনো বাদ যাই বল।”

“কিন্তু তুমি তো…

” চুপ আর কোনো কথা শুনতে চাইনা।এখন তুই ঘুম দে।কালকে বিয়ে আমাদের।”

আরো একটা বড়সড় ধাক্কা খেলো হিমাদ্রি।আচ্ছা সে তো স্বপ্ন দেখছে না?পরীক্ষা করার জন্য কুটুস করে মৃদের গালি চিমটি বসিয়ে দিলো।
“আহ! হিমের বাচ্চা চিমটি কেনো দেস?”

“না দেখলাম তুমি সত্যি কিনা।আর আমার বাচ্চা ঘুমাচ্ছে।”

“তাই।বাবুর বাবারও ঘুম আসছে।তো গুড নাইট।”

“দাড়াও আগে বলো তুমি এখানে কীভাবে?”

“মি.ভৌমিক নিয়ে এসেছে।”

“প্রফেসর!তাও এত রাতে?”

“হুম।আসলে তোর ডরমিটরি থেকে বলে দিয়েছিলো তুই তোর বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঘুরতে এসেছিস।তাই আমি কথা বলিনি।কিন্তু প্রফেসর গিয়ে সব ভুল ভেঙে দিয়েছে।”

“হুম বুঝলাম।বাট তুমি না জেনে রাগ কেনো করলে?”

“দেখ তোরা একই কালারের ড্রেস পড়েছিলি।তারপর ঠিক কাপলদের মতো ডান্স করছিলি।তো আমার ভুল ভাবা স্বাভাবিক।”

“হ্যাঁ তুমি সারাজীবন ভুলই ভেবে যাবে।”

“চুপ থাক না হিম।আপাতত ঘুমা।কালকে তোকে অফিশিয়ালি মাদিহার আম্মু বানাবো।”

“ঘুমাবো তো।কিন্তু তার আগে এখান থেকে যাও।দূর হও।আমাদের এখনো বিয়ে হয়নি।”

“ঢং করিস?”

“না তুমি যাও।”

মৃদুল বেশ বিরক্ত মুখে হিমাদ্রির পাশ থেকে উঠে মাদিহার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো।

“এর থেকে বেশী দূরে যেতো পারবো না।”

” কিন্তু সবাই কি ভাববে।”

“কচু ভাববে।এখন ঘুমা।”

হিমাদ্রি আর একটা কথা বাড়ালো না চুপচাপ ঘুমিয়ে গেলো।

সকালে ঘুম থেকে উঠেই মাদিহা বেশ অবাক হলো।তার তার বাবা-মা উভয়ে তার সামনে বসে আছে।উচ্ছাসিত হয়ে সে চোখ কচলে শোয়া থেকে উঠে হিমাদ্রির কোলে গিয়ে বসলো।হিমাদ্রি মাদিহার মাথায় একটা চুমো দিয়ে বলল,

“আমার মায়ের ঘুম ভেঙেছে?”

“বাবা কখন আসলো?”

“রাতে যখন তুমি ঘুমিয়ে ছিলে।”

“মাদিহা সোনা আজকে জানো তোমার মায়ের বিয়ে।”

“কিন্তু আম্মুর তো বিয়ে হয়েছে তোমার সাথে।”

“আজকে আবার হবে।”

“তাই!”

“হ্যাঁ। এখন চট জলদি লক্ষী সোনার মতো রেডী হয়ে যাও।”
,
,
কাউন্সিলর অফিস থেকে এই মাত্র হিমাদ্রি আর মৃদুলের বিয়ে হলো।হিমাদ্রির পড়নে একটা লাল কালারের জামদানী।এটা আরাধ্যার মায়ের বিয়ের শাড়ী। আজকে সকালে ভদ্রমহিলা হিমাদ্রিকে বিয়ের উপহার হিসেবে দিয়েছে।হাজার হোক তার মেয়ে এবং মেয়ের জামাই হিমাদ্রির জন্যই কোনোনা কোনোভাবে এক হয়েছে।

একটা ভারতীয় রেস্ট্রুরেন্টে লাঞ্চের জন্য এসেছে সবাই।বড় একটা টেবিল বুক আগে থেকেই দেওয়া ছিলো।রেস্ট্রুরেন্টে ঢুকার আগেই হিমাদ্রি ভৌমিককে ডেকে দাড়াতে বলল।

“প্রফেসর আপনাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাইনা। আপনি আসলে আমার লাইফে এঞ্জেল হয়ে এসেছিলেন।”

“মিস.হিমাদ্রি মানুষ কখনো এঞ্জেল হতে পারেনা।আর আপনিও আমার জন্য কম করেননি।আমার সারাজীবন আপনাকে মনে রাখবো।”

কথাটা বলে হিমাদ্রির মাথায় হাত রাখলো ভৌমিক।আবার বলতে শুরু করলো।

“যখুনি লাইফে কোনো ডিসিশন নিতে দ্বিধায় থাকবেন তখুনি আমাকে বলবেন।নিজের মধ্যে রাখবেন না।বন্ধ হিসেবে সবসময় পাবেন।এখন চলেন ভিতরে সকলে হয়তে অপেক্ষা করছে।

” হুম।”
,

কুঞ্জন আর মাদিহা একসাথে বসেছে।ব্যাস দুজনের যতো প্রকারের কথা পেটে আছে তা একের পর এক বলছে।কুঞ্জনের জন্ম আমেরিকাতে হলেও সে বাংলা বলতে পারে পুরোপুরি।এজন্য মাদিহার সাথে এত ভালোভাবে মিশতে পারে।টেবিলে আর সবাই বিভিন্ন কথায় ব্যাস্ত।হঠাৎ তাদের টেবিলে একজন এসে মৃদুলকে সম্বোধন করে বলল,

“হ্যালো স্যার। ভালো আছেন?”

“মিস.এহসান আপনি এখানে?হাউ?”

“একচুয়েলি এটা আমার রেস্ট্রুরেন্ট স্যার।”

“ওহ রেলী।আপনি না বাংলাদেশে ছিলেন?”

“আপনার সাথে একই ফ্লাইটে এসেছি। কিন্তু আপনি দেখেননি।”

“ওহ।মিস.এহসান।এটা হিম।”

“ম্যামকে আমি চিনি।আমি এখানে বসতে পারি?”

“ইয়েস প্লিজ।”

কুঞ্জনের পাশে একটা চেয়ার খালি ছিলো। সেটাতেই নূপুর বসে পড়লো।

“স্যার আপনাকে একটা কথা বলার ছিলো।”

“জ্বী বলেন।”

“তিন মাস আগের কাহিনি। আমি আসলে রেস্ট্রুরেন্টে ওতোটা সময় দেইনা।তো তিনমাস আগে একদিন হুট করে এখানে আসি।এসে সব তদারকি করার সময় দেখি একজন নতুন ওয়েটারকে নেওয়া হয়েছে।আমি তার সম্পর্কে জানার জন্য তাকে ডেকে পাঠালাম।তো একটু পরে মেয়েটা আসলো।মেয়েটা দেখে আমার খুব মায়া হলো।একটা পা হাঁটু থেকে নেই।পুরো কাঁটা।আর্টিফিশিয়াল পা লাগানোর হয়তো টাকা নেই।মুখের ডান পাশে কপাল থেকে গাল পর্যন্ত অনেক বড় একটা কাঁটা দাগ।যা পুরো মুখ ভয়ংকর তুলে।চোখে ভালো দেখতে পায়না।তো মেয়েটার জন্য আমার মায়া হয়।যখন আমি জানতে পারলাম বাংলাদেশি তখন মায়া কয়েকগুণ বেড়ে গেলো।আমি মেয়েটাকে নিজের খরচে বাংলাদেশ পাঠাতে চেয়েছিলাম কিন্ত মেয়েটা না করলো।কারণ জানতে চাইলে জানালো সে তার পাপের শাস্তি পাচ্ছে।”

এটুকু বলে থামলো নূপুর।

“সেই মেয়েটাকে দেখতে চান স্যার?”

মৃদুল মাথা নাড়িয়ে সস্মতি প্রদান করলো।

“দাড়ান আমি নিয়ে আসছি।”

একটু পরে নূপুর সাথে একটা মেয়েকে নিয়ে উপস্থিত হলো।মেয়েটা স্ট্রেচারে ভর দিয়ে রয়েছে।মেয়েটাকে দেখে হিমাদ্রি বসা থেকে উঠে দাড়ালো।হয়তো তাকে এখানে আশা করেনি।কিন্তু মৃদ বেশ স্বাভাবিকভাবে বসে রইলো।

“রোদসী।”

“জ্বী ম্যাম রোদসী।ও কথা বলতে পারেনা।বাট আপনাদের পুরো কাহিনি ও লিখে দিয়েছে আমাকে।হয়তো ও নিজের ভুল বুঝতে পারতো না যদি আহাদের থেকে ধোকা না পেতো।রোদসী যেরকম মৃদ স্যারকে ধোকা দিয়েছিলো ঠিক সেরকম আহাদও দিয়েছে।এ বিষয় নিয়ে রোদসী প্রতিবাদ করলে তাকে খুব মারে।পায়ে রড দিয়ে এত জোড়ে বারি দেয় যে ওর পা কাঁটতে হয়েছে।আহাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ না থাকায় কোনো কেস হয়নি।আবার আহাদ রোদসীকে ডিভোর্স ও করেনি।কিন্তু রোদসী ছেড়ে দিয়েছে।আজও রোজ আসে আহাদ এখানে।পুরো তিন ঘন্টা অপেক্ষা করে রোদসী জন্য কিন্তু রোদসী ফিরে যায় না তার বক্তব্য তার পাপের শাস্তি এগুলো।আপনাকে আর হিমাদ্রি ম্যামকে মিলানোর জন্যই আমি বাংলাদেশে গিয়েছিলাম।পুরো ঘটনা আহনাফ স্যারকে জানিয়ে সেদিন আমি বলাতেই সে অফিস গিয়েছিলো।স্যার আপনার কাছে রিকোয়েস্ট মেয়েটা নিজের পাপের শাস্তি পেয়েছে।ওকে ক্ষমা করে দেন।”

নূপুর কথা বলা অফ করলে আর কেও কথা বলেনি।চারপাশে পিনপতন নিরবতা।একটু পরে রোদসী আস্তে আস্তে মৃদুলের দিকে এগিয়ে গেলো।মৃদুলের সামনে ধুপ করে বসে পরে হাত জোর করে কেঁদে দিলো।হাইরে দুনিয়া!প্রকৃতি কখনো প্রতিশোধ নিতে ভুলেনা।একদিন মৃদুল কেঁদেছিলো আজ রোদসীর পালা।মৃদুল কিছু না বলে চেয়ার থেকে রোদসীর মাথায় হাত রাখলো।আর মৃদু হেসে বলল,

“আমি ক্ষমা আগেই করেছি রোদসী।প্রত্যেকটা ছেলের সাফল্যের পিছনে একটা নারী থাকে।আমার ক্ষেত্রে তোমার প্রতি ঘৃণা ছিলো।কিন্তু প্রকৃতি ক্ষমা করেনা। করেওনি।তোমার আর কোনো কষ্ট হবেনা এটা আমার প্রমিস।ভালো থেকো।”

কথাটা বলে পাশ থেকে মাদিহাকে কোলে নিয়ে রেস্ট্রুরেন্ট থেকে বের হয়ে গেলো মৃদুল।হয়তো মাদিহাকে তার আসল মায়ের করুণ পরিণতি জানাতে চায় না।”
,
,
সময় বহমান একটা নদীর মতো।হিমাদ্রি আর মৃদুলের বিয়ের ছয় মাস অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে।হিমাদ্রি তিনমাসের অন্তস্বত্তা। একটা ছোট্ট প্রাণ তার মধ্যে বেড়ে চলেছে।মৃদুল আর মাদিহা দেশে ফিরে যায়নি।মৃদুলের বক্তব্য একদম হিমাদ্রিকে নিয়ে ফিরবে ওর পিএইচডি কোর্স শেষ হলে।ওদের বিয়েতে সবাই খুশী।এমনকি মৃদুলের মা ও।তাইতো মৃদুলের বাবা বাড়ী ফিরে এসেছে।হিমাদ্রির সাথে মৃদুলের মায়ের ওই ঘটনার পরে বিজয়,মেহেলতা আর মৃদুলের বাবা বাড়ী ছেড়ে চলে গিয়েছিলো।কিন্ত আবার ফিরে এসেছে।মেহেলতা কনসিভ করেছে বহু চিকিৎসা করে।আহনাফ আর সৃষ্টিও ভালো আছে তাদের দু সন্তান আরাফ,আরাভ কে নিয়ে। অয়েত্রীর বিয়ে হয়েছে একমাস আগে তার ব্যাচমেটের সাথে।ভৌমিক ও আরাধ্যা ভালো আছে।মৃদুল আর ভৌমিকের বাড়ী পাশাপাশি হওয়ার দরুণ সারাদিন একসাথে থাকে কুঞ্জন আর মাদিহা।তারা দুজনেই খুব খুশী হিমাদ্রির অনাগত সন্তান নিয়ে।

আর এসব কিছুর মধ্যে রোদসী কেমন আছে?জ্বী সে ভালো আছে।এখনো নূপুরের রেস্ট্রুরেন্টে কাজ করে।রোজ আহাদ আসে দেখা করতে কিন্ত আহাদের সাথে ফিরেনা।হয়তো কিছু কষ্ট ভুলার মতো না।আহাদও হাল ছাড়েনা।তার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। একদিন সফল হতেও পারে।হিমাদ্রি প্রায় রোদসীর সাথে মাদিহাকে নিয়ে দেখা করতে যায়।মৃদুলের সস্মতি নিয়ে।রোদসীকে মাদিহা আন্টি বলে ডাকে।মা শুনার অধিকার তো সে অনেক আগে হাড়িয়েছে।

আজ বহুদিন পরে হিমাদ্রি দুর্জয়ের ডায়েরীটা খুললো।কখনো যে অংশটুকু পড়েনি সে অংশটুকু পড়া শুরু করলো।

“জানিস হিমাদ্রি সেদিনের পর থেকে মৃদ ভাইয়ার প্রতি সব ধরণের চিন্তা বদলে গেলো আমার।মানুষটা কতোটা কষ্ট করে বেঁচে রয়েছে।তার মধ্যে একজন ভালো ছেলে,ভালো ভাই,ভালো স্বামী, ভালো বাবা এবং ভালো বন্ধুর গুণ রয়েছে।কিন্তু সে কতোটা অবহেলিত।আমি যাওয়ার পর কি হবে জানিনা।কিন্ত আমি চাই তুই আর মৃদ ভাই পৃথিবীর সর্বোচ্চ সুখ পাস।হিমাদ্রি তুই আমার জীবনে দেখা সর্ব উৎকৃষ্ট নারী।তোকে জীবন সাথি হিসেবে পেয়ে হয়তো আমি সোনা পেয়েছিলাম কিন্তু সবকিছু সবার কপালে জুটেনা।ভালো থাকিস আর মৃদ ভাইয়াকে ভালো রাখিস।”

পুরো ডায়েরীটা কয়েকবার পরলো হিমাদ্রী।তারপর বেশ কিছুক্ষণ পরে কলম দিয়ে সে ডায়েরির মধ্যে লিখা শুরু করলো।

প্রিয় দুর্জয়,

কেমন আছো?এটা নিছক বোকার মতো প্রশ্ন হলো।তাও করলাম।জানো আমি ভালো আছি।সাথে মৃদও। মৃদ আমার ছোট থেকে ভালোবাসা ছিলো।কিন্তু বিশ্বাস করো যেদিন তোমার সাথে বিয়ে হয়েছিলো সেদিন থেকে মৃদকে নিয়ে আর কোনো চিন্তা করিনি।তুমি তো ফাঁকি দিয়ে চলে গেলে।তুমি যাওয়ার পর অনেককিছু ঘটে গিয়েছে।বর্তমানে আমি মৃদের স্ত্রী তার সন্তানদের মা।যাক সেসব কথা বাদ।হয়তো একথাগুলো তোমার কাছে পৌছাবে না কিন্তু তাও লিখছি।সবাই ভালো আছে। কেও কারো জন্য থেমে থাকেনা।তোমার শূন্যতাতেও হয়তো কিছু থেমে থাকেনি।কিন্তু তুমিও ভালো থেকো।তোমার সাথে সংসার করা আমার কপালে ছিলোনা।তুমি একটা চমৎকার মানুষ ছিলে।কিন্তু সৃষ্টিকর্তার মনে যে অন্য কিছু ছিলো।

এখন শুধু একটাই চাওয়া আজীবন মৃদের সাথে তার হিম হয়ে থাকা।এবং বৃদ্ধবয়সে কোনো এক বিকেলে হাতে এক গুচ্ছো কদম নিয়ে একসাথে পশলা বৃষ্টিতে ভেজা।

ইতি
তোমার হিমাদ্রি।

(সমাপ্তি)

আমি জানিনা
এই লেখাটা কতোটা সার্থক হয়েছে।আমি আমার নিজের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি।কতোটুকু পেরেছি জানিনা।আর যারা বিভিন্ন সময় আমার অনেক ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ।এভাবে আমার পাশে থাকুন।আর অবশ্যই বলবেন পুরো লেখাটা আপনার কেমন লাগলো।হ্যাপি রিডিং

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here