#এক_গুচ্ছো_কদম
#পর্বঃ২৭
লিখাঃসামিয়া খান
টেবিলের এক প্রান্তে হিমাদ্রি এবং অপর প্রান্তে ভৌমিক বসে আছে।তারা একটা পার্টীতে এসেছে।জায়গাটা হচ্ছে শিকাগো।আসলে মূলত একটা সেরিমনিতে এসেছে ভৌমিক।সাথে হিমাদ্রিকেও নিয়ে এসেছে।আজকে সেই সেরিমনির আগে একটা পার্টি হচ্ছে।হিমাদ্রি আজকে শাড়ী পড়েছে।অফ হোয়াইট কালারের।এবং ভৌমিক অফ হোয়াইট কালারের টম ফোর্ড স্যুট।দূর থেকে যে কেও তাদের কাপল ভেবে ভুল করবে।
“তো মিস.হিমাদ্রি আপনি স্যামন ফিস কেনো খান না?”
“এমনি ভালো লাগেনা।সবার তো সবকিছু ভালো লাগে এমন তো নয়।”
“হুম তাও ঠিক।জানেন ইলিশ আমার সবথেকে ফেভারিট।ইলিশের স্বাদের কাছে আর সব মাছের স্বাদ ফিকে লাগে।”
“হয়তো।যার যা পছন্দ।”
“আমিই কি প্রথম ব্যাক্তি যে আপনাকে আপনার পুরো নাম ধরে ডাকি?”
“নাহ।আরো একজন ছিলো।”
“মি.দুর্জয়। এম আই রাইট?”
“ইয়েস।দুর্জয়ের হিম নাম শুনলে কেমন যেনো ঠান্ডা ঠান্ডা লাগতো বলে।”
“হোয়াট?নাম শুনলে কীভাবে ঠান্ডা লাগতে পারে?”
“সেটা সেই জানতো।”
এমন সময় হুট করে গিটারের টুংটাং আওয়াজ হতে লাগলো।এবং অন্য টেবিলে বসে থাকা মানুষগুলো কাপল ডান্সের জন্য এগিয়ে যাচ্ছে।তা দেখে ভৌমিকও হিমাদ্রির দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো।এবং হিমাদ্রি মুঁচকি হেসে তার সস্মতি জানালো।
ওওও,তুমহে কই ওর দেখে। তো জ্বালতাহে দিল।
বারী মুশকিলও ছে ফের সামলতাহে দিল।
ক্যা,ক্যা যাতন ক্যারতে হ্যে তুমহে ক্যা পাতা,,
এ দিল বোকারার কিতনা এ হাম নেহী জানতে মাগার জি নেহী সাকতে তুমহারে বিনা।
হামে তুমসে প্যার হ্যে কিতনা, এ হাম নেহী জানতে।মাগার জি নেহী সাকতে তুমহারে বিনা।
হামে তুমসে প্যার হ্যে কিতনা, এ হাম নেহী জানতে।মাগার জি নেহী সাকতে তুমহারে বিনা।
হামে তুমসে প্যার হ্যে।
সুনা গাম জুদাই কা উঠাতে হ্যে লোক।জানে জিন্দেগী ক্যাসে বিতাতে হ্যে লোক।
সুনা গাম জুদাই কা উঠাতে হ্যে লোক।জানে জিন্দেগী ক্যাসে বিতাতে হ্যে লোক।
দিল ভি ইহা তো লাগে বারস ক্যে সামান।
হামে ইন্তেজার কিতনা, এ হ্যাম নেহী জানতে মাগার জি নেহী সাকতে তুমহারে বিনা।
হামে তুমসে প্যার হ্যে কিতনা, এ হাম নেহী জানতে।মাগার জি নেহী সাকতে তুমহারে বিনা।
হামে তুমসে প্যার হ্যে।
পুরো গানে বেশ ভালোই নাচলো ভৌমিক আর হিমাদ্রি।
“ট্রাস্ট মি। মিস. হিমাদ্রি ইউ আর এ বিউটিফুল ডান্সার।”
“আমি আগে নাচ শিখতাম।”
“তা অফ করলেন কেনো?”
“এমনি।”
ভৌমিকের সাথে কথা বলার মাঝে হিমাদ্রি আঁচলে টান পড়লো।তা দেখার জন্য একটু নিচে তাঁকাতেই প্রচন্ডরকমের অবাক হলো সে।একটা ছোট্ট মেয়ে তার আঁচল ধরে তার দিকে মায়াবী দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে।তার চোখ অশ্রু দিয়ে পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছে।হিমাদ্রী দুই হাঁটু গেড়ে বাচ্চাটার সামনে বসে তার ছোট্ট মুখটা দু’হাতের আজলায় উঠিয়ে নিয়ে গালে মুখে শত শত মমতার স্পর্শ এঁকে দিলো এবং শক্ত করে বুকে জরিয়ে নিলো।
এভাবে কতোক্ষণ চলে গিয়েছে তা জানেনা হিমাদ্রি।হঠাৎ সেই চিরচেনা বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বরে তার চেতনা ফিরলো।
“মাদিহা!”
হিমাদ্রির সামনে মৃদুল দাঁড়িয়ে আছে।কতোটা বদলে গিয়েছে তার মৃদ।আগে নরম চেহারার অধিকারী ছিলো।কিন্তু বর্তমানে চেহেরাতে কেমন যেনো নিষ্ঠুরতা বিদ্যমান।
বেশ কিছুক্ষণ হিমাদ্রি দিকে তাকিয়ে থেকে তার দিকে এগিয়ে আসলো মৃদুল।হিমাদ্রির মতো করে হাঁটু গেড়ে বসে মাদিহাকে নিজের দিকে ঘুরালো।
“মাকে পেয়ে খুশী মাদিহা?”
“অনেকককক।”
“তাহলে আজকে মায়ের সাথে যাও।আমি তোমাকে দুদিন পর নিতে আসবো।”
“তুমি যাবেনা?”
“না মামুণি।আমি যাবোনা।তুমি যাও।”
বলে মাদিহার গালে একটা চুমো দিলো মৃদ।তারপর উঠে দাড়িয়ে থমথমে গলায় বলল,
“মিস.হিমাদ্রি। আপনার কাছে মাদিহাকে দুদিনের জন্য রেখে গেলাম।ঠিক দুদিন পর এসে নিয়ে যাবো।ওর যাবতীয় দরকারি জিনিস আমি পাঠিয়ে দিবো।খুব সম্ভবত আপনাদের সকালে ক্যারালোনার ফ্লাইট আছে।মাদিহাও যাবে সাথে এবং তা আমার পার্সোনাল চার্লি ট্যাঙ্গো দিয়ে।আশা করি বুঝতে পেরেছেন।”
হিমাদ্রির জবাব দেওয়ার আগেই মৃদুল গটগট করে হেঁটে বের হয়ে গেলো।একবারও হিমাদ্রির দিকে আর তাকালো না।মৃদুলের যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে চোখ উপচে জল আসছিলো হিমাদ্রি। কোনো রকম নিজেকে শান্ত করে একটু ঝুঁকে মাদিহাকে কোলে তুলে নিলো।
“লেটস গো প্রফেসর।”
“মিস.হিমাদ্রি আই থিংক মি.মৃদুল আমাকে নিয়ে আপনাকে সন্দেহ করেছে।বাট আমি তাকে এক্সপ্লেনেশন করবো।এভাবে হয়না।”
প্রচুর কাঁদতে মন চাচ্ছে হিমাদ্রি। কিন্তু তাও নিজের কান্নাকে শক্ত করে আঁটকে জবাব দিল,
“ইটস ওকে প্রফেসর।এখন আমাদের হোটেলে ফিরা উচিত।মাদিহার হয়তো ঘুম আসছে।”
“ওকে লেটস গো।”
,
,
,
একটা গ্রোসারী শপের সামনে গাড়ি থামিয়েছে ভৌমিক কিছু দরকারী জিনিসপত্র কেনার জন্য।ঘুমন্ত মাদিহাকে কোলে নিয়ে গাড়ীতে বসে আছে হিমাদ্রি।আর হিমাদ্রি তাকে এক দৃষ্টিতে অবলোকন করে চলেছে।মেয়েটা পুরো দস্তর বাবার মতো হয়েছে।সেই মৃদুলের চোখ, মুখ, নাক।একটু ঝুঁকে কপালে ভালোবাসার স্পর্শ একে দিলো হিমাদ্রি।
হঠাৎ করে গাড়ীর গ্লাসে কারো নক করার শব্দ হলো।চমকে হিমাদ্রি সেদিকে তাঁকাতেই দেখতে পেলো একটা মেয়ে নিজের ডান হাত দ্বারা সমানে গাড়ীর জানালার বাড়ি মেরে যাচ্ছে।মেয়েটার হাতে শাঁখা এবং কপালে সিন্দুর।বেশ অস্থির হয়ে জানালায় শব্দ করে চলেছে।হিমাদ্রি ভাবলো হয়তো কোনো বিপদে পড়েছে তাই তাড়াতাড়ি গাড়ীর জানালার গ্লাস নামিয়ে দিলো।
“ইজ এনিথিং রং ম্যাম?”
মেয়েটা বেশ কাঁপা-কাঁপা কণ্ঠে জবাব দিলো,
“আর ইউ মিসেস.ভৌমিক?”
“হোয়াই আর ইউ আস্কিং মি দিস টাইপ কোয়েশ্চেন ম্যাম?”
“প্লিজ আন্সার।আর ইউ মিসেস.ভৌমিক?”
“ফার্স্ট ইউ আন্সার মাই কোয়েশ্চেন।ডু ইউ নো হিম?”
“গট ড্যাম ইট।জাস্ট আন্সার মাই কোয়েশ্চেন।”
শেষের কথাটা মেয়েটা বেশ জোড়ে বলল।আশেপাশের মানুষ একবার ঘুরে তাদের দেখে নিজের কাজে মন দিলো।হিমাদ্রি বেশ বিব্রতবোধ করলো।মাদিহাকে সিটে শুইয়ে দিয়ে গাড়ী থেকে নেমে দাড়ালো।
“ম্যাম প্লিজ কাম ডাউন।উইল ইউ প্লিজ টেল মি হু আর ইউ?”
এ পর্যায়ে মেয়েটা কেঁদে দিলো এবং তা বেশ জ্বরে।
গ্রোসারী শপ থেকে বাহির হয়ে ভৌমিক দেখলো হিমাদ্রি একটা মেয়ের সাথে কথা বলছে এবং মেয়েটা জোড়ে জোড়ে কাদছে।ঘটনা বুঝতে না পেরে দ্রুত হিমাদ্রির দিকে এগিয়ে গেলো ভৌমিক।
“ইজ এনিথিং রং মিস.হিমাদ্রি?”
হিমাদ্রি জবাব দেওয়ার আগে পাশে থাকা মেয়েটা ঘুরে ভৌমিকের শার্টের কলার চেপে ধরলো।বেশ ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলতে লাগলো,
“শালা খচ্চর।এই তোর ভালোবাসা আমার প্রতি?বিয়ে করে নিয়েছিস?একবারোও কুঞ্জনের কথা ভেবে দেখলি না?আমাকে নয় হয় ভালোবাসিসনি কিন্তু তোর মেয়ে কুঞ্জনকে কি জবাব দিবি?ওকে কি বলবি?”
আরো বেশ কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিলো।কিন্তু ভৌমিক বেশ নিশ্চুপ ঠোঁটে মৃদ হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে।কোনো কথা না বলে শুধু নিজের কপালের সাথে সামনে থাকা ব্যাক্তির কপালটা ঠেকালো।
“আরাধ্যা শান্ত হও।আমি বিয়ে করিনি।মিস.হিমাদ্রি আমার স্টুডেন্ট।তুমি প্লিজ শান্ত হও।”
ভৌমিকের কথায় মনে হয় ভরষা পেলো আরাধ্যা।বেশ শান্ত হয়ে গেলো।কিন্তু ঠিকই চোখ দিয়ে অনর্গল পানি পড়ছে।ভৌমিক মৃদু হেসে আরাধ্যাকে বুকে জরিয়ে নিলো।
“আমাকে না তুমি ভালোবাসো না তাহলে এটা কি ছিলো?”
“আমি বাসিনা তো।শুধু কুঞ্জনের জন্য এমন করলাম।”
“তাই?”
“হুম।শিকাগো এসেছো তারপরেও মেয়ের সাথে দেখা করলে না।কেমন বাবা তুমি?”
“কে বলেছে দেখা করিনি।করেছি তো।সকালে এসেই দেখা করেছি।”
“আর আমার সাথে?”
“তোমার সাথে দেখা করতে চাইলে তো করো না।”
“এখন থেকে আর করতে হবেনা।আমার শিক্ষা হয়েছে।আমি তোমার সাথে যাবো।”
“সত্যি তো?”
“হুম।”
“ঠিক আছে এখন আসো হিমাদ্রির সাথে দেখা করিয়ে দেই।”
আরাধ্যাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে হিমাদ্রির দিকে এগিয়ে গেলো ভৌমিক।
“মিস.হিমাদ্রি সি ইজ মাই ওয়াইফ।আরাধ্যা।”
“হ্যালো ম্যাম হাউ আর ইউ?”
“সরি মিস।”
“ইটস ওকে ম্যাম।”
“ইউ ক্যান কল মি আরাধ্যা।”
“ওকে।”
“তো আরাধ্যা হোটেলে যাই আমরা?”
“ভাব ধরো?চুপচাপ গাড়ী আমার বাসার দিকে ঘুড়াও।কিন্তু একটা কথা গাড়ীতে যে বাবুটা আছে ওটা কে?”
“মিস.হিমাদ্রির মেয়ে মাদিহা।”
“ওহ।আমি ওকে এখনো ভালোভাবে দেখিনি।কিন্তু মেয়েটা ঘুমিয়ে গিয়েছে।তো বাসায় চলো।”
“আমার গাড়ীতে চলো।তোমারটা ড্রাইভার পরে নিয়ে যাবে। ”
“হুম।”
গাড়ী চলছে তার আপন গতিতে।সামনের সিটে ভৌমিক আর আরাধ্যা বসে আছে।আরাধ্যা সেই কখন থেকে কথা বলে চলেছে।ভৌমিককে দেখে মুখে যেনো খই ফুটেছে।একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে মাদিহার দিকে তাকালো হিমাদ্রি।বেশ আরাম করে তার বুকে মুখ লুকিয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে।মৃদুলের কথা বেশ মনে পড়ছে তার।মানুষটা কি কোনোদিনও বুঝবেনা তাকে?
চলবে,,,