#এক_গুচ্ছো_কদম
#পর্বঃ৪
লিখাঃসামিয়া খান
তোর স্বভাব কোনদিনও বদলাবেনা তাইনা হিম?সেই আগের মতো পুকুর পাড়ে বসে আছিস।তাও এতো রাতের বেলা?
কথাগুলো শুনে পিছন ফিরে মৃদুলকে দেখে একটা মলিন হাসি হাসলো হিমাদ্রি।
তুমি এতো রাতে এখানে কী করো মৃদ?
তোকে খুজতে এসেছিলাম।পাশে বসতে পারি।
তুমি আবার অনুমতি নেওয়া শিখলে কবে থেকে?
এইযে এখন থেকে।
ওহ। মাদিহা ঘুমিয়েছে?
হ্যাঁ।আজকে এতো তাড়াতাড়ি ঘুমালো কীভাবে। এমনি রাতে অনেক জ্বালায়।
বাচ্চা তো তাই।
ঠিক তোর মতো হয়েছে মাদিহা।
কীরকম?তুইও ছোটবেলায় এমন ছিলে।
আমার ছোটবেলা মনে আছে তো আমাকে দেওয়া প্রমিস কেনো মনে নেই তোমার?
ঠোঁটের কোণায় সিগারেট রেখে মৃদুল জবাব দিলো কোনটা?
না কোনোটা।
বলবি তো তাইনা?
আচ্ছা বাদ দেও।
মার সাথে দেখা করেছো?
জোরে একটা নিশ্বাস নিলো মৃদুল।
হুম করেছি। জানিস মা হয়তো আন্দাজ করতে পারছে যে কিছু হয়েছে।মানুষটা খুব কষ্ট পেয়েছে।
খুব কী দরকার ছিল তাদের অমতে বিয়ে করা।
তাদের ও বিষয়টা বুঝা উচিত।ওর বাবা ঘুষখোর পুলিশ তাতে ওর দোষ কী?
কারো দোষগুণ বিচার করতে পারবো না আমি।কিন্তু এটা বলবো তুমি যদি এভাবে অনুমতি ছাড়া বিয়ে না করতে তাহলে সব ঠিক থাকতো।হয়তো দুর্জয় ও বেঁচে থাকতো।
জানিনা।কিন্তু আমিও আমার ভালোবাসাটাকে আপন করে চেয়েছি এতে দোষের নেই।
কিন্তু তোমার ভালোবাসাটা ঝরা কদমের মতো কাজ করেছে।
হয়তো।
হয়তো না এটা সত্যি।
পানি থেকে পা উঠিয়ে হিমাদ্রি উঠে দাড়ালো।যেতে যেতে শুধু এটুকুই বললো,,
সিগারেট খেয়ে কেনো নিজের ঠৌঁট পোড়াচ্ছো মৃদ। তোমার পোড়া ঠোঁট আমার অসহ্য লাগে।
.
.
.
দুর্জয়ের মৃত্যুর আজকে সাতদিন।তাই বলতে গেলে ঘটা করে মিলাদ পড়ানো হচ্ছে।আনাচে-কানাচেতে যতো আত্নীয় আছে সব এসেছে।অথচ মৃত্যুর দিন কিন্তু এর কানাকড়ি ও ছিলনা।বিয়েতে যারা এসেছিল তারা বেশীরভাগ মানুষই চলে গিয়েছিল।
সৃষ্টি আর হিমাদ্রি কে রুম থেকে বের হয়নি।দুজনের পরনেই অফ হোয়াইট কালারের সুতির কাপড়।মৃদুলের বড় খালা একদম ধবধবে সাদা কালারের কাপড় পরাতে দেয়নি।তার ভাষ্যমতে এতো ফুটফুটে দুটো মেয়েকে কেনো সাদা শাড়ী পরাবে।এমনিতেও তাদের কম কষ্টনা।সবাই তার কথা বিনাবাক্য ব্যয়ে মেনে নিয়েছে।
মৃদুলের মেয়ে মাদিহা সবসময় হিমাদ্রির কাছে থাকে।ছোট্ট মেয়েটাও কেমন যেনো আনন্দ পায় হিমাদ্রি সংর্স্পর্শে এসে।
আপু আমার যেনো কেমন লাগছে!
কেমন?খারাপ লাগছে?
না।আসলে লজ্জা লাগছে এতোগুলো মানুষ। কেমন করে যেনো তাকায় আমার দিকে সবাই।
সেটা স্বাভাবিক নয় কী?
হুম।কিন্তু তাও কেমন যেনো লাগে।
ধীরে ধরে সহ্য হয়ে যাবে।এখন চলো নিচে যাই।
.
.
.
মৃদুলকে একটু দেখে রাখবি। কারণ জানিস তো সবসময় খালি হিম হিম করে।
রাখি তো মা।কিন্তু কী আমার কথা শুনলে তো?ওই মেয়ে যা বলে শুধু তাই শুনে।
তা আর বলতে। কিন্তু একটা জিনিস ভালো হয়েছে তুই তোর শ্বশুর বাড়িতে আসতে পেরেছিস।
আসলে কীহবে।এখানেও সে হিম।
দেখ রোদসী তুই একটা পুলিশের মেয়ে।চালাক চতুর না হলে চলবে।তোর শ্বাশুড়ি তো প্যারালাইজড। তাই তার কথা বাদ। কিন্তু মৃদুলের বড় ভাইয়ের বউ মেহেলতা আছেনা।ওকে হাত কর।
সেটার কাজ আগেই শুরু করে দিয়েছি।মাদিহাকে তো হিমাদ্রি এখন কোল ছাড়া করেনা।
তা না করলো।দেখে রাখলে সমস্যা কী?তুই এর মধ্যে নিজের মতো করে চলতে পারলি।দেখতো মডেলিং টা আবার শুরু করতে পারিস কীনা?
দেখি।আমার মাদিহাকে নিয়ে কোন টেনশন নেই কারন আমার মেয়ে আমার মতোই হবে।
তাই যেনো হয়।বেশী সমস্যা হলে বলিস।তাবিজ করে দিবো।
লাগবেনা।খালি ওই হিমকে বাড়ি থেকে বের করতে হবে।
দেখ কী করতে পারিস।আর কম গয়না পরছিস কেনো?
উফ মা এতোগুলো পরেছি তো।আর এর থেকে বেশী দেয়নি।
মাত্র একয়টা?আরোও বেশী দেওয়া উচিত ছিল।
সবুর মা সবুর।সব পাবো আমি দেখো।
তা আর বলতে।!!
.
.
.
কেমন আছেন প্রজাপতি?
ঘর ভরতি মেয়ে মানুষের মধ্যে একটা পুরুষালি কণ্ঠ শুনে ভরকে গেলো হিমাদ্রি। বুঝতে বাকী রইলো না এটা কে?কারণ প্রজাপতি তাকে একজনই বলে।
মাথা থেকে ঘোমটা সরিয়ে হিমাদ্রি দেখতে পেলো আহাদ দাঁড়িয়ে আছে।হাসিমাখা মুখে।পরনে একটা ব্লাক স্যুট,হাতে ঘড়ি।মানুষের মৃত্যুর মিলাদে কেও স্যুট পরে আসে তা জানা ছিলনা হিমাদ্রি। একটু হাসি পেলো হিমাদ্রির।তাও নিজেকে ধাতস্থ করে জবাব দিলো।
জানিনা কেমন আছি কিন্তু যেমনি আছে আলহামদুলিল্লাহ।
শুনে খুশী হলাম।
এখানে বসতে পারেন আপনি।
সিওর তো।
হুম।
হিমাদ্রির সামনের সোফাতে গিয়ে বসলো আহাদ।
আমি সত্যিই অনেক মর্মাহত এটা শুনে যে দুর্জয় মারা গিয়েছে।
ওহ।কিন্তু যা হওয়ার ছিল তা হয়েছে।আপনি তো দেশে ছিলেন না?
না ছিলাম না সেদিন সোশ্যাল মিডিয়াতে দুর্জয়ের নিউজ দেখলাম।তার আগের দিন আপনাদের বিয়ের ছবি।আই ওয়াজ টোটালি শকড!!তার জন্য তাড়াতাড়ি করে দেশে ব্যাক করেছি।
ওহ আচ্ছা।
হ্যাঁ। দুর্জয়ের আত্নহনন করাটা একদম উচিত হয়নি।এটা কোন সলিউশন না।
হয়তো।কিন্তু জানেন তো সুসাইড করতে অনেক সাহস লাগে।তা এমনি এমনি হয়না।মানুষ যখন সব দিক থেকে দিশেহারা হয়ে যায় তখন মূলত এ পথ বেছে নেয়।
হুম বুঝতে পেরেছি।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে কিছুটা মিনমিনে গলায় আহাদ বললো,,
ওই মেয়েটা এখন কোথায়?
কোন মেয়েটা?
মানে দুর্জয়ের আরেক বউ।
ওর নাম সৃষ্টি।
ওহ কিন্তু কই এখন সে।
দূরে বসে থাকা সৃষ্টিকে হাত দিয়ে ইশারা করে দেখালো হিমাদ্রি।
ওইযে।
ওহ আপনাদের সাথে থাকে।
হ্যাঁ।
.
.
.
হিমাদ্রির দইভাত অনেক পছন্দের। তাইতো এতো বেছে বেছে দই বানিয়েছে মৃদুল।ওকে খাওয়াবে বলে এসেছিল মৃদুল। কিন্তু এসে যে ব্যাক্তিটাকে দেখলো তাতে মটেও খুশী হলোনা সে।ভ্রু কুঁচকে হিমাদ্রির দিকে এগিয়ে চললো সে।
হিম!!
আরে মৃদু কেমন আছিস?
ভালো আহাদ।তুই কেমন আছিস?
ভালো মৃদু।
আহাদ তোকে যদি কেও আহাইদা বলে ডাকে তাহলে তোর কেমন লাগবে?
কী!!আমাকে আহাইদা বলে কেনো ডাকবে?
তাহলে তুই আমাকে মৃদু বলে কেনো ডাকিস?
দেখ ব্যাসিকালি তোর নাম মৃদু হয় মৃদুলের।এমনি এমনি সবাই মৃদ বলে ডাকে তাইনা প্রজাপতি?
ওর নাম হিমাদ্রি। আর মৃদ বলবে না কী বলবে দ্যাটস নান অফ ইউর বিজনেস।
ওহ কুল মৃদু।
আই এম অলয়েজ কুল।চল তো হিম।খাবি এখন চল।
বলে টানতে টানতে হিমাদ্রিকে আহাদের সামনে থেকে নিয়ে গেলো।
ধপ সোফায় বসিয়ে দিলো হিমাদ্রিকে মৃদুল।তারপর ওর সামনে বসে দই দিয়ে পোলাও মাখতে লাগলো।
তুই যদি আর কোনদিন ওই আহাইদার সাথে কথা বলেছিস তো তোর খবর আছে।
তুমি আহাদকে কেনো দেখতে পারোনা??
জানিনা।কিছু কিছু মানুষ আছেনা যাদের ঘৃণা করতে কোন কারণ লাগেনা?/আহাদ হলো সেরকম।আসছে আমার প্রজাপতি।ওকে বলে দিবি প্রজাপতি বলে না ডাকতে।
কেনো বলবেনা?
আমি না করেছি তাই!
আমি তোমার সমপত্তি যে বলতে পারবেনা।
কথাটা শুনে আর কোন কথা বললো না মৃদুল। চুপচাপ হিমাদ্রিকে খাওয়াতে লাগলো।
কীহলো বলো।
এতো কথা কেনো বলিস?চুপচাপ খেতে পারিস না?এতো কাজ ফেলে তারপর তোর কাছে এসেছি। চুপচাপ খেয়ে নে।আমার অনেক কাজ আছে।
হিমাদ্রি আর কোন কথা বাড়ালো না।খাওয়ায় মনোযোগ দিলো।
.
.
.
পরপর দুইবার বমি হলো সৃষ্টির।মূলত গরুর মাংসের গন্ধ সে সহ্য করতে পারছেনা।অথচ চারপাশে এতো মাংসের স্মেল।মনে হচ্ছে এবার পেটের নাড়িভুড়ি সহ বের হয়ে আসবে।ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসে দেখে আহনাফ দাড়িয়ে আছে।কোমড়ে হাত দিয়ে।
আহনাফ দেখে কোন কিছু বললো না।চুপচাপ মাথা নিচু করে যেতে নিচ্ছিল।
দাড়াও সৃষ্টি।
কিছু বলবেন।
হুম।এইযে নেও বমির মেডিসিন।খেয়ে নেও।আর আমি রুম ফ্রেশনার দিয়ে দিয়েছি। লেমন ফ্লেভার।রুমেই থাকবে বের হবেনা।
আমি আপনার কথা শুনতে বাধ্য না।
দেখ এমনিতেই তোর উপর আমার খুব রাগ।আমি জানিনা দুর্জয়ের সাথে কীভাবে রিলেশন হয়েছে।দুর্জয় বেঁচে থাকলে আমি কোনদিনও তোর আগে পিছনেও আসতাম না কিন্তু ও যেহেতু নেই তো এই বাচ্চা আমার।।
মুখে বললেই হয়ে যায়না।এটা দুর্জয়ের বাচ্চা।ওর পরিচয়ে বড় হবে।
হোক।কিন্তু আমি বড় করবো।
এতো সোজা না।আমি হিমাদ্রি আপুকে আপনার এই খামখেয়ালি কথা বলে দিবো।আর আমি কখনো মানবো না।
দেখা যাবে।আর বলে দিও নো প্রবলেম।এখন আমি আসি বাবুর খেয়াল রেখো।সাথে বাবুর আম্মুরও।
আহনাফ চলে যাওয়ার পরে ধপ করে মাটিতে বসে পরলো সৃষ্টি। ও খুব ভালো করেই জানে আহনাফ কেমন মানুষ।পাশে থাকা দুর্জয়ের ছবিটা বুকে জরিয়ে নিলো সৃষ্টি। এই একটা মানুষ আজকে থাকলে তার কোন কষ্ট হতো না।
.
.
.
আজকে হিমকে না খায়িয়ে দিলেও পারতে তুমি মৃদ।
কেনো? দিয়েছি তাতে কী হয়েছে?
কিছু হয়নি।কিন্তু হতে কতক্ষণ।
কীহবে?ক্লিয়ারলি বলো।
দেখো ও একটা মেয়ে। তার মধ্যে বিধবা।একটু কম কম ঘেসতে পারোনা।
না পারিনা।আর হিম বা আমি কেও ওরকম না।
আমি জানি কেও ওরকম না।কিন্তু মানুষ তো চুপ থাকবেনা?
মানুষের কথায় আমার কিছু যায় আসেনা রোদসী।দেখো হিম আমি আর হিম অনেক ছোট বেলা থেকে একসাথে থাকি।এমনও হয়েছে আমি যখন একা থেকেছি তখন ও আমার রুমে এসে আমার বিছানাতে শুয়ে থেকেছে।
তখন ছোট ছিলে তোমরা।
না ছিলাম না।তখন আমাদের এতো টুকু বয়স ছিল যে আমরা জানতাম নারী পুরুষের মধ্যে একটা বিশেষ সম্পর্ক ও সৃষ্টি হতে পারে।কিন্তু তাই বলে আমরা লিমিট ভুলে যায়নি।
কিন্তু,,
কোন কিন্তু না।প্লিজ রোদসী কোনদিন হিম আর আমাকে নিয়ে সন্দেহ করো না।
তুমি এমন কাজ না করলে কেনো করবো।
দেখো আমার জীবনে হিম আর তোমার জায়গা দুটো ভিন্ন জায়গায়।দয়া করে এমন কিছু বলবেনা যাতে আমার রাগ উঠে।
দেখা যাবে।
হুম।
রোদসীকে ছেড়ে মৃদুল মাদিহার কাছে গেলো।মেয়েটা ঘুমিয়ে আছে।মেয়ের নাকে আলতো করে নাক ঘষে দিলো মৃদুল।
জানো রোদসী মাদিহা ঘুমালে একদম আমার হিমের মতো লাগে।ঠিক আমার হিমের মতো।
আমার হিম কথাটা শুনে মনে হয় রোদসীর শরীরে আগুন লাগলো।চরম রাগ লাগছে।কিন্তু এমন সময় ম্যাসেঞ্জারে টুং করে একটা শব্দ হলো।ওই ম্যাসেজটা দেখেই রোদসীর রাগ গলে পানি হয়ে গেলো।মুখে হাসি ফুটে উঠলো।
চলবে,,,
সরি কালকে কথা দিয়ে কথা রাখতে পারিনি,😥😥😥