এক ফুল সমুদ্র পর্ব-১৯

0
2607

#এক_সমুদ্র_ফুল
#পর্ব_19
Writer::Shaanj Nahar Sanjida


আহা আপা ছাড়েন না।আপনি বলেন,,দুলাভাই আর আপনার ছেলে দুটো ওদের বউ বাচ্চারা কেমন আছে?(আয়শা)

কি আর বলবো?আমার ছেলে গুলো একটা ভালো বউও আনতে পারে নাই।(রুবিনা হতাশ হয়ে)

বউ ভালোই ছিলো আপনি দজ্জাল হলে কি আর করার।(সোনালী মনে মনে)

কি আর করবেন একটু মানিয়ে তো নিতেই হয়।(আয়শা)

মানিয়ে নিয়া তোর দায়িত্ব।আমি ভাই মানিয়ে টানিয়ে নিতে পারবো না।আমার আবার ওই ধৈর্য্য নেই।(রুবিনা)

আম্মু উনি কে?(আলো)

তোমার আরেক দাদী মা।সালাম দাও(আমি মুচকি হেসে)

আসসালমুআলাইকুম দাদী মা।(আলো রুবিনার কাছে গিয়ে)

হ্যা হ্যা অলাইকুম আসসালাম।(রুবিনা দূরে সরে গিয়ে)

আলো মনমরা করে এসে আবার আমার কোলে বসলো।আলোকে এই পরিবেশে রাখা ঠিক না।এখানে ওর আরো মন খারাপ হয়ে যাবে।খালাম্মা আলোকে পছন্দ করে না কারণ আলো মেয়ে।উনার মতে বংশের প্রথম সন্তান ছেলে হতেই হবে।

মা তুমি রুমে গিয়ে টিভি দেখ।মোটু পাতলু শুরু হয়ে গেছে।(আমি)

ওকে আম্মু।
বলেই আলো এক দৌড়ে রুমে চলে গেলো।

খালাম্মা পানি।(মিতু ভাবী পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে)

হ্যা দাও।একটু ঠান্ডা পানি তো দিতে পারতে।(রুবিনা)

আপনার শ্বাস কষ্ট।যদি ঠান্ডা লেগে যায়।এই জন্য আনছি।(মিতু)

এনে দিতে খেয়ে শ্বাস কষ্ট নিয়ে মরতো।খাটাস বুড়ি কোথাকার!(সোনালী মনে মনে)

খালাম্মা সবার সাথে বসে বসে কথা বলছে। অবশ্য কথা বলছে কম পিন মুল্লুক কথাবার্তা বেশি শুনাচ্ছে।

তা মিতু অনেক বছর তো হলো এখন তো একটা বাচ্চা নাও।(খালাম্মা)

মিতু ভাবী চুপ করে আছে।

সময় হলে বাচ্চা নিবে।এতে তো আপনার নাক গলানোর কিছু দেখতে পারছি না আমি খালাম্মা।(সোনালী দাত চেপে চেপে)

এই বেয়াদপ মেয়ে। শশুর বাড়ি গিয়ে এমন মুখের উপর কথা বললে জামাই এসে বাসায় দিয়ে যাবে।(খালাম্মা)

সোনালী বড়োদের মুখে মুখে কথা বলতে নেই।(আয়শা)

সোনালীও দাত চেপে চুপ করে রইলো।

এইজন্যই বলছিলাম সাগরের মতে বিয়েটা করাতে না।ছেলে প্রেম করছে, ভুল করছে কিন্তু তোরাও যার সাথে প্রেম করেছে তার সাথেই বিয়ে দিয়ে দিলি।দেখে শুনে মেয়ে দেখে বিয়ে দিতি বছর না ঘুরতেই বাচ্চা হয়ে যেতো।
তবে যাই হোক এদিকে কিন্তু ফুল ভালো।সমুদ্রকে জোর করে বিয়ে দিয়ে ভালোই করেছে বছর না ঘুরাতেই বাচ্চা হয়ে গেছে।যদিও মেয়ে হইছে।(রুবিনা)

খালাম্মা ভালোবাসাটা কি কিছুই না? বাচ্চাই কি সব?সাগর আর মিতু ভাবীর মধ্যে ভালোবাসা আছে।(আমি)

দূর কিসের ভালোবাসা?(খালাম্মা)

ভালোবাসা ওইটা যেটা মিতু ভাবী আর সাগর ভাইয়ার মধ্যে এখন আছে।অন্তত কোনো বাচ্চার দোহাই দিয়ে তো তারা এক সাথে না।তারা একে অপরকে ভালোবেসে এক সাথে।বাচ্চা মানেই যে তাদের মধ্যে ভালোবাস আছে,,আর বাচ্চা নেই বলে যে ভালোবাসা নেই।আবার বাচ্চা আছে বলেই তারা সুখী বাচ্চা নেই বলে যে তারা অসুখী এমন ভাবনা যদি আপনার থেকে থাকে তবে আপনার প্রতি আমার সমবেদনা।আসলে সমবেদনা বললে ভুল হবে আপনার প্রতি আমার করুণা হয়।
আর আমার সাথে মিতু ভাবীর তুলনা দিতে যাবেন না।কারণ মিতু ভাবী আমার থেকে হাজার গুনে ভালো।তাই আপনার হাজারটা অপমান করার পরেও চুপ করে আছে।কিন্তু আমি আগে ছিলাম কিন্তু এখন ভুলেও চুপ করে থাকবো না।আর আপনি আমার মেয়েকে পছন্দ করেন না নাই করেন ওর সামনে ভুলেও ওর মন খারাপের কারণ হতে পারবেন না।একটা বাচ্চাকে যদি ভালোবাসা না দিতে পারেন ওর মনে দুঃখ দিবেন না।আপনি আমার গুরুজন কিন্তু আফসোস এখন আপনাকে আমার শেখাতে হচ্ছে। অবশ্য আমার সমস্যা নেই আপনার মত মানুষকে শিক্ষা আমি দিতেই পারি।(আমি রেগে এক দমে সব কথা বলে ফেললাম)

সবাই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।সমুদ্র তো হা হয়ে তাকিয়ে আছে।

সরি মা।তোমার বোনকে অনেক কথা শুনিয়েছি(আমি মাথা নিচু করে)

না।ঠিক আছে।(আয়শা অবাক হয়ে)

ঠিক আছে?(রুবিনা আয়শার কথা শুনে অবাক হয়ে গেলো)

ওয়াও ভাবী ফাটিয়ে দিয়েছো।(সোনালী হাত তালি দিয়ে)

মিতু ভাবী মুখে না বললেও মনে মনে ঠিকই অনেক খুশি হয়ে হয়েছে।

আমি আর সেখানে এক মুহূর্তও না থেকে সোজা উপরে চলে আসলাম।উপরে নিজের রুমে যায়নি সেখানে আলো আছে আমার মন খারাপ দেখলে মেয়েটার মন আরো খারাপ হয়ে যাবে।তাই একদম সোজা ছাদে চলে গেলাম।


নিচে ফুলের কড়া কথা শুনে তো খালাম্মা সেই রেগে গেছে।ফুলকে বেয়াদপ,, অসভ্য মেয়ে আরো যতো রকম গালি সে পারে সবই পর্যায় ক্রমে দিচ্ছে।মাঝে মধ্যে বলছে চলে যাবে এই বিয়েতে উনি থাকবে না।আরো অনেক কথা।
আয়শা,,আরমান,,মিতু সবাই তাকে আটকানোর চেষ্টা করছে।অন্যদিকে সোনালী বসে বসে তামসা দেখছি।এদিকে ফুলের কথা শুধু খালাম্মার না আরো একজনের গিয়ে লাগলো।সে আর কেউ না সমুদ্র তাই ও উঠে ফুলের পিছু পিছু গেলো।


ছাদে
ফুল ছাদে দাড়িয়ে দাড়িয়ে আকাশ দেখছে।দুপুরে অনেক কড়া রোদ উঠলেও এখন আকাশ হালকা মেঘলা মনে হচ্ছে।বিকেলে না হয় সন্ধ্যার দিকে অনেক বৃষ্টি নামতে পারে।হয়তো এইটা কাল বৈশাখী ঝড়।তবে যাই হোক আমার ঝড়ের পূর্বের আবহাওয়া আর সারারাত ঝড়ের পর সকালের মিষ্টি রোদ অনেক ভালো লাগে।দুটিতেই যেনো এক প্রশান্তি অনুভব করি।ঝড়ের আগের ঠান্ডা বাতাস গুলো মনে।হাজার কষ্টের আগুনকে যেনো নিভিয়ে দিয়ে যায়।আর মিষ্টি রোদ যেনো সকল কষ্ট ভুলিতে নতুন করে শুরু করার শক্তি জোগায়।জানা অজানা অনেক উপায়ের প্রকৃতি আমাদের বাঁচার লক্ষ উপায় দেখিয়ে দেয়।শুধু সেই উপায় দেখার চোখটা আমাদের থাকতে হয়।আমি এইসব কথা ভাবছি তখনই সমুদ্র পিছন থেকে আমার হাত ধরে বললো

ফুল কি হলো?(সমুদ্র)

কি হলো তুমি বলো?তুমি এভাবে কেনো আমার হাত ধরলে?(আমি অবাক হয়ে)

তুই নিচে এইসব কি বলে আসলি?(সমুদ্র রেগে)

কি বলে আসলাম?(আমি অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে)

তোর কি মনে হয় আমাদের সম্পর্কটা কি শুধু আলোর জন্য?(সমুদ্র)

তাহলে কার জন্য শুনি!যাওয়ার আগে তুমি বলেছিলে তুমি আমাকে ডিভোর্স দিবে এসে বললে দিবে না।কারণ কি?কারণ হচ্ছে আলো।এখন আমাদের মধ্যে আলো আছে।তাই ডিভোর্স হচ্ছে না।তাহলে কি বলতে পারো আমার কেনো আছি?আমরা কি আলোর জন্য আছি না?আমাদের মধ্যে কি কোনো ভালোবাসা আছে?(আমি রেগে)

আছে।আমাদের মধ্যে ভালোবাসা আছে।আমি তোকে ভালবাসি।(সমুদ্র)

মিথ্যা কথা।তুমি শুধু এই ভয় পাচ্ছো যাতে আমি আলোকে নিয়ে চলে কোথাও চলে না যাই!তুমি তোমার মেয়েকে নিজে নিজের কাছে রাখার জন্য আমার সাথে ভালোবাসার নাটক করছো?(আমি চিৎকার করে)

তোর এইটা মনে হচ্ছে ফুল(অবাক হয়ে)তাহলে শোন আমি আজ তোকে আমার সব মনের কথা বলবো!(সমুদ্র ফুলকে ধরে)


চলবে,,
জানি এতো দিন পর দিছি তাও পর্বটা ছোটো।আসলে আমি বেড়াতে আসছি।এখানে লেখার সময় পাই নাই।অনেক কষ্ট করে এইটুকু লিখছি।কালকে বাসায় যাবো।আবার আগের মত বড়ো করে লিখবো।😌ততক্ষণ একটু সহ্য করেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here