#এক_সমুদ্র_ফুল
#পর্ব_20
Writer:: Shaanj Nahar Sanjida
।
।
আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি।
তখনই সমুদ্র আমাকে বলতে শুরু করলো,,
আমি নিজের অজান্তেই যে কখন তোকে ভালোবেসে ফেলেছি আমি নিজেই জানি না।যখন তুই কিচ্ছু বুঝতি না সেই তখন থেকে আমি তোকে ভালোবেসেছি।কিন্তু কোনো দিন তোকে বলে নি।বলার সাহস ছিল না বলে বলি নি তা না।বলতে চাই নি।তুই দুরুন্ত পাখির মতো ছিলি।আমি তোকে সম্পর্কে বাঁধতে চাই নি।তোর বাচ্চা মনে ভালোবাসার বীজ বপন করতে চাইনি।আমি শুরু চেয়ে ছিলাম তুই তোর মত করে বড়ো হো।আর আমি আমার মত করে তোকে আমার স্ত্রী করে তুলবো।কিন্তু বাবার ছেলে হারানোর ভয় আমাকে আমার ভালোবাসার প্রকাশ করার আগেই তোকে আমার স্ত্রী বানিয়ে দিলো।বিশ্বাস কর আমি তখন যা করেছি সব রাগের মাথায় করেছি।তোর উপর রাগ,,নিজের ভালোবাসা প্রকাশ না করতে পারার রাগ।সব যেনো আমাকে ঘিরে ধরে ছিলো।আর সেই রাগ আমি তোর উপর ফেলি।যেটা আমার জীবনে করা সব চেয়ে বড় ভুল ছিলো।যখন তোকে ভালোবাসার কথা বলার ছিল তখন আমি তোর উপর জোর জুলুম করেছি।যখন সকালে উঠে তোর চেহারা দেখেছি তখন নিজের উপর লজ্জা হচ্ছিলো।তাই তো মুখ লুকিয়ে চলে গেছিলাম যাতে তুই না দেখিস।তোকে ডিভোর্সের কথা বলেছিলাম যাতে তুই থাকিস আমার অপেক্ষা করে।যদিও সেই অপেক্ষার কোনো মানেই হয় না।এতো দিন বিদেশ থেকে তোর সাথে এই জন্য কথা বলিনি যে আমি তোর উপর রাগ করেছি।এইজন্য বলিনি কারণ আমার সাহস হয়নি তোর মুখোমুখি দাড়ানোর।আমি যে অপরাধ করেছি তার পরেও আমি কি করে দাড়াতাম তোর সামনে।
তবে বিশ্বাস কর তোর জন্য এমন একটা রাত নেই কাদি নেই।নামাজে বসে শুধু আল্লাহর কাছ থেকে তোর কাছে ক্ষমা চাওয়ার কথা সাহস চেয়েছি।
আমি জানি আমি অনেক খারাপ।নিজের কথা গুলো সহজে বলতে পারি না,,বুঝাতে পারি না।কিন্তু বিশ্বাস কর ফুল তোকে আমি অনেক ভালোবাসি।সেই ছোটো বেলা থেকেই।আর পারছি না ফুল নিজের কথা গুলো লুকিয়ে রাখতে।
বলেই কাদতে কাদতে সমুদ্র আমার কাঁধে মাথা রাখলো।
আমি এতক্ষন স্থির হয়ে সমুদ্রের কথা গুলো শুনছিলাম।নিজের অজান্তেই চোখ থেকে পানি পড়তে লাগলো আমার।সমুদ্রকে এই প্রথম আমি কাদতে দেখলাম। তাও আমার জন্য।আমাকে হারানোর ভয়ে।একটা ছেলে একটা মেয়েকে কতটা ভালোবাসলে তার জন্য কাদতে পারে। তা আমার সত্যিই অজানা ছিলো।কিন্তু সমুদ্রের মতো মানুষকে কাদতে দেখে আমি এটা তো শিওর যে আমাকে ও অনেক ভালোবাসে।ওর প্রতিটা কথায় আমি সেই ভালোবাসার ছোঁয়া পেয়েছি।আমিও নিজের ফিলিংস গুলো সংযুত করলাম।কারণ আমি এতদিন নিজেকে বুঝ দিয়েছি আমি ওকে ভালোবাসি নি।ওর থেকে দূরে যাওয়ার হাজার বাহানা খুঁজে বেরিয়েছি।কিন্তু এখন আর না সমুদ্র যেহেতু ওর মনের কথা বলেছে আমিও নিজের মনে কথা ওকে বলবো।
আমি সমুদ্রকে জড়িয়ে ধরে
সমুদ্র আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি।হয়তো তুমি যখন থেকে ভালোবাসতে শুরু করেছো তখন থেকে না তবুও কখন ভালোবেসে ফেলেছি নিজেও জানি না।
তার মানে তুই আমাকে ছেড়ে যাবি না?(সমুদ্র আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে)
না।আমি আমার সমুদ্র থেকে কোথাও যাবো না।(আমিও সমুদ্রকে জড়িয়ে ধরে)
এই বিশাল আকাশের নিচে আমাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেল।এতদিন এই আকাশের দিকে তাকিয়ে কতো কেঁদেছি আমরা দুজন তা কখনও একে অপরকে বলা হয়নি।ওর জন্য অপেক্ষার সাক্ষী এই আকাশ।সকল দুঃখ কষ্টের সাক্ষী এই আকাশ ছিলো।আজ ভালোবাসার সাক্ষীও হয়ে গেলো।
আকাশ ঘন হয়ে আসতে লাগলো।হয়তো বিকেলের বৃষ্টি আমাদের ভালোবাসা দেখে এখনই আসতে চাইছে।তাইতো ঝুম করে বৃষ্টি পড়ে গেলো।
সমুদ্র আমাকে ছেড়ে বললো
দেখলি ফুল।আমাদের ইমোশনাল কাহিনী দেখে আকাশও কাদতে শুরু করলো।
তাই তো দেখছি।চলো চলো ভিতরে চলো।না হলে ভিজে যাবো।(আমি)
আরে থাক না বৃষ্টিতে ভিজি।
বলেই সমুদ্র আমার কোমর চেপে ধরে নিজের কাছে টেনে নিল।
তাই নাকি! তা কবে থেকে আপনার বৃষ্টিতে ভেজার শখ জন্মালো।(আমি সমুদ্রের কাধে হাত রেখে)
যবে থেকে তোর মত বন্য ফুলের প্রেমে পড়েছি।(সমুদ্র আমাকে নাকে নাক ঘষতে লাগলো)
কিন্তু আমি তো এক সমুদ্র ফুল।(আমি হাসি দিয়ে)
তাই না!
বলেই সমুদ্র আমার ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলো।
।
।
অন্যদিকে
খালাম্মাকে শান্ত করে রেস্ট করার জন্য গেস্ট রুমে পাঠানো হলো।সোনালী মোবাইল ফোনে সায়ানের সাথে কথা বলতে বেস্ত।আরমান অফিসে গেছে। মিতু আয়শাকে রান্নার কাজে হেল্প করে এখন নিজের রুমে গেছে ফ্রেশ হতে।
ওয়াশরুমে শাওয়ার ছেড়ে নিজের চোখের বাঁধ গুলোও ছেড়ে দিলো।আজ ওরও চোখের জল আকাশের বৃষ্টির সাথে তালে তাল মিলিয়ে পড়তে লাগলো।আর সেই চোখের জলের কারণ খালাম্মার বাচ্চা নিয়ে খোটা দেয়া।মিতু আর সাগর অনেক চেষ্টা করছে বাচ্চা নেয়ার জন্য কিন্তু কোনো কিছুই হচ্ছে না। ডক্টরও দেখানো হয়েছে কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।ওদের বাচ্চা না হওয়ার ব্যাপারটা শুধু সাগর আর মিতু জানে।বাড়ির কেউ এই ব্যাপারে জানে না।বাড়ি থেকে ওদের বাচ্চা নেয়ার জন্য কখনও কোনো চাপ দেয়া হয়নি।কিন্তু আজ যখন খালাম্মা মিতু সেই ক্ষতে আঘাত দিলো ও মুখ বুজে সহ্য করে নিলো।
।
।
অনেকক্ষন কান্না করার পর ও ওয়াশরুম থেকে বের হলো।
আয়নার সামনে বসে নিজের দিকে তাকিয়ে কি যেনো ভাবছে তখনই সাগর ফোন দিলো।অনেক বার রিং হলো কিন্তু মিতু ধরলো না।অবশেষে না ধরেও পারলো না।
ফোন ধরে
হ্যালো মিতু!কি হয়েছে তুমি আমার ফোন ধরছো না কেনো?(সাগর চিন্তিত হয়ে)
এমনি।ওয়াশরুমে ছিলাম।(মিতু)
তুমি কেঁদেছো?(সাগর)
কই না তো!(মিতু)
দেখো মিতু।আমি তোমাকে ভালোবাসি।তোমাকে আমার থেকে ভালো করে কেউ চিনে না।কোনটা তোমার হাসি মুখের কথা,,কোনটা কান্না করার আমি তা ভালো করেই জানি।এখন মিথ্যা বলে লাভ নেই বলো কি হয়েছে!(সাগর)
সাগর আমি তোমাকে বাচ্চা দিতে পারিনি।বাবা হওয়ার সুখ দিতে পারিনি।তবুও কেনো তুমি আমাকে এতো ভালোবাসো!(মিতু কাদতে কাদতে)
কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি।এইটাই যথেষ্ট।সেটা বাচ্চা থাকুক আর না থাকুক আমাদের ভালোবাসা এক চুলও কমবে না।(সাগর)
তুমি কেনো এত ভালো বলতো?(মিতু)
কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি তাই।তোমার ভালোবাসা আমাকে ভালো মানুষ হতে বাধ্য করে।(সাগর)
আমি যদি মা না হতে পারি তুমি আরেকটা বিয়ে করবে প্লিজ!(মিতু কাদতে কাদতে)
না।কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি।অন্য কাউকে ভালোবাসার সময় আমার নেই।আর্মি ম্যানদের অনেক কাজ।(সাগর)
সাগর তুমিও না।(মিতু মুচকি হেসে)
দেখো তোমার মুখের হাসি কিন্তু আমি অনেক ভালোবাসি।আর তুমি সব সময় হাসি মুখেই থাকবে ওকে?(সাগর)
ওকে বাবা।ধন্যবাদ আমাকে এতো ভালোবাসার জন্য।আমি তোমাকে জীবন সাথী হিসেবে পেয়ে সত্যিই অনেক ধন্য।তোমাকে ভালোবাসা আমার জীবনের সব চেয়ে সুন্দর সিদ্ধান্ত।(মিতু)
ওয়েট ম্যাম ওয়েট।পরশু বাড়ি আসছি তখন না বলবেন কতটুকু ভালোবাসেন। একচুয়ালি বলতে হবে না একটু করে দেখালেই হবে।(সাগর টিটকারি মেরে)
ওরে লুচ্চু।(মিতু)
আরে নিজের বউয়ের সাথে লুচ্চামি করি।প্রতিবেশীর বউদের সাথে তো আর না।(সাগর মিতুকে খেপানোর চেষ্টা করে)
এই একদম মেরে পুঁতে ফেলবো।আমি ছাড়া অন্য কারো দিকে তাকালেও।(মিতু ক্ষেপে)
ইস!একটু আগেই আমাকে অন্যর সাথে বিয়ে দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে এখন ক্ষেপে বোম্ব হয়ে আছে।(সাগর)
ওইটা তো এমনি আবেগী হয়ে বলছিলাম।তোমাকে ছাড়া আমি থাকলে পারলে তো।(মিতু কিউট করে)
আবেগী হয়েও বলবে না।ঠিক আছে?(সাগর)
ঠিক আছে।আচ্ছা এখন আসল কথায় আসি।(মিতু)
তাহলে কি এতক্ষন নকল কথায় ছিলাম?(সাগর ফাজলামি করে)
সাগর,,(মিতু কিছুটা রেগে)
আচ্ছা আচ্ছা।অনেক হয়েছে ফাজলামি।এখন কি বলতে চাও বলো।(সাগর)
তুমি সত্যি আসবে পরশু?(মিতু কিউট করে)
আআ আমার বউটা এতো কিউট করে বললে তোমার কাছে তো উড়ে আসতে মন চায়।(সাগর আবার ফাজলামি করে)
সাগর,,(মিতু চিল্লিয়ে)
সরি সরি।হা পরশু আসবো।তুমি কিন্তু কাউকে বলো না।সবার জন্য সারপ্রাইজ হবে এইটা। স্পেশালি সোনালীর জন্য।(সাগর)
আচ্ছা।কাউকে বলবো না।(মিতু)
তাহলে আজ রাখি কাজ আছে।(সাগর)
রাখতেই হবে।(মিতু বাচ্চাদের মত বায়না করে)
দেখো এমন বায়না করলে তোমাকে ছেড়ে যেতে পারবো না।তারপর আমাকে আর্মি ছেড়ে দিতে হবে।তুমি কি তা চাও!(সাগর)
না না।আচ্ছা যাও। খোদা হাফেজ।(মিতু)
আচ্ছা শুনো।(সাগর)
কি হয়েছে?(মিতু)
আমি তোমাকে ভালোবাসি।(সাগর)
আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি।এখন রাখো।(মিতু)
সাগর মুচকি হেসে ফোনটা রেখে দিলো।
ফোন রেখেই মিতু বেলকনিতে গেলো।এখন আর আগের মত বৃষ্টি পড়ছে না।তবে হালকা বৃষ্টি পড়ছে সাথে হালকা বাতাসও বইছে।মিতু দুহাত মিলিয়ে দিলো।বাতাস এসে ওর চুল,,ওড়না ছুয়ে যাচ্ছে।মুখের উপর আছড়ে পড়ছে কপালের অবাধ্য কিছু চুল।কিন্তু কেনো জানি আজ তাদের সরাতে ইচ্ছে করছে ওর।এতক্ষন মন খারাপ করে থাকলেও ভালোবাসার মানুষটির সাথে কথা বলে মন ভালো হয়ে গেছে।কেমন করে যেনো ভালোবাসার মানুষটি জেনে গেলো ওর আজ মন খারাপ।
সত্যিই স্বামী যদি স্ত্রীর পাশে থাকে তাহলে পুরো দুনিয়া তার বিপক্ষে গেলেও লড়াই করার শক্তি থাকে।তাইতো বলে স্ত্রী প্রাপ্তি স্বামীতেই।
।
।
চলবে,,