এক ফুল সমুদ্র পর্ব-৯

0
2511

#এক_সমুদ্র_ফুল
#পর্ব_9(#অতীত_স্পেশাল_3)🌸
Writer:: Shaanj Nahar Sanjida


বাবা।আজ চার দিন হইয়া গেলো।মায় কেমন হইয়া গেছে।আর কতো দিন এমন সেলাইন দিয়ে রাখা যাইবো!(কাকা চিন্তিত হয়ে)

আমি তো তাই ভাবছি।বাবার মৃত্যু ফুলের উপর অনেক বড় প্রভাব ফেলছে।এখন কি করে মেয়েটাকে স্বাভাবিক করা যায়।আজ চারদিন হলো এক ফোটা পানিও খায় নি। কারো সাথে কথাও বলে নি।ডক্টর সেলাইন দিয়ে রাখছে।শুধু ও বিছানায় শুয়ে উপর দিকে তাকিয়ে আছে।কি করে এখন ওকে স্বাভাবিক করবো?(আরমান মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো)

বাবাই তো সেই ছোটো বেলা থেকে ওকে বড়ো করেছে।এমনটা হওয়াই তো স্বাভাবিক।মেয়েটার জীবনে বাবা ছাড়া আর কেউ তো ছিলো না কোনো দিনই।বাচ্চা মেয়েটা কি করে এত কিছু সামলাবে।বাবার মৃত্যুতে যেনো ওরও এক প্রকার মৃত্যু হয়ে গেছে।(আয়শা আরমানের কাধে মাথা রেখে)

কিন্তু ওকে তো বাঁচতে হবে।বাবা কোনো দিনও চাইবে না ওর এই অবস্থা।উনি যেখানেই থাকুক ফুলের এই অবস্থা দেখে কখনই খুশি হবেন না।আমাদের যে করেই হোক ফুলকে স্বাভাবিক করতে হবে।কিন্তু কি করে?(আরমান)

একটা কাজ করলে পারা যায়।আমরা ফুলকে শহরে নিয়ে গিয়ে ভালো কোনো মনো বিজ্ঞানীকে দেখাতে পারি।এতে বোধ হয় ও স্বাভাবিক হতে পারে।আর এখনও কিন্তু বেশি দেরি হয়নি।যতো তাড়াতাড়ি দেখানো সম্ভব তত তাড়াতাড়ি ভালো।(আয়শা)

তুমি ঠিক বলেছো আয়শা।আমাদের তাড়াতাড়ি ফুলকে শহরে নিয়ে যেতে হবে।তুমি তাড়াতাড়ি সবকিছু প্যাক করো।সাগর,,সমুদ্র আর সোনালীকে বলো আজ রাতেই আমরা রওনা দিবো।(আরমান)

ঠিক আছে।
বলেই আয়শা বেরিয়ে গেলো।

বাবা।আফনে ফুল মায়রে নিয়া যাইবেন?(কাকা মনমরা হয়ে)

আমি আপনার কষ্টটাও বুঝতে পারছি কাকা।কিন্তু কিছুই করার নেই।ফুলকে আমাদের সাভাবিক করতে হবে আর এরজন্য ওকে ডক্টর দেখানো দরকার।আমি কথা দিচ্ছি।হয়তো আপনার বা বাবার মত আমি ফুলের খেয়াল রাখতে পারবো না।তবে আমি ওকে আমার নিজের মেয়ের মতো করে বড়ো করে তুলবো।ওর কোনো কষ্ট আমি হতে দিবো না।ওকে আমি আর আয়শা অনেক আদর দিয়ে বড়ো করবো।জানি না ওর আসল বাবা মা ওকে কেমন ভালোবাসত।কিন্তু আমরা ওকে ওর আসল বাবা মার চেয়ে বেশি ভালোবাসবো।এইটুকু বিশ্বাস রাখতে পারেন।(আরমান)

আমার তোমার উপর বিশ্বাস আছে বাবা।কিন্তু মাইয়াডারে সেই ছোডোতে এই হাতে মানুষ করছি।তাই একটু ভাবুক হইয়া যাইতাছি।কোনো দিন ভাবী নাই মাইয়াডার তে আলাদা হইবো।আমগো মাইয়াডারে আদর কইরেন বাবা। ওই অনেক ভালা।একটু দুষ্টামি করে একটু সহ্য কইরেন।(কাকা হাত জোড় করে কাদতে কাদতে)

কাকা,,
বলেই আরমান কাকাকে জড়িয়ে ধরলো।


মা,,ফুলও কি আমাদের সাথে যাবে?(সোনালী প্যাক করতে করতে)

হুম।মেয়েটার যেই অবস্থা এই অবস্থায় রেখে যাবো কি করে?(আয়শা)

হুম।আমিও ভাবছি ওকে আমাদের সাথে নিয়ে যাই।(সোনালী)

হুম।তোদের কোনো সমস্যা হবে না তো?(আয়শা)

না মা।আমরা আরেকটা বোন হলে মাইন্ড করবো না।কি বলিস পেত্নী!(সাগর প্যাক করতে করতে)

আমি তো খুশি যে বাড়িতে আমি আর সবার ছোটো হবো না।আমার ছোটো কেউ হবে।এখন কেউ আমাকে পেত্নী বলবে না।আমিও কারো উপর হকুম চালাতে পারবো।(সোনালী)

খালি তুই আমার বোনের উপর হকুম চালা তোর খবর আছে।আর তুই পেত্নী ছিলি পেত্নীই থাকবি।(সাগর)

মা,,(সোনালী কান্না করতে করতে)

আহ্ সাগর কি হচ্ছে? বাড়ি ভর্তি মানুষ আর তোরা এখানে ফাজলামি করছিস?লোকে কি বলবে?আর সমুদ্র কোথায়?ওকে দেখছি না যে?(আয়শা)

তুমি তো জানো ওর লোকজন পছন্দ না।মিলাদের পর ও যেনো কোথায় চলে গেছে।আমি জানি না।(সাগর)

এই ছেলেটাও।চিন্তা ছাড়া আর কিছু দিতে পারে না।ওর ব্যাগ দে তো প্যাক করে দেই।(আয়শা)

ওর ব্যাগ ও নিজের প্যাক করে ফেলেছে।(সোনালী)

তুমি তো জানো ও কারো উপর নির্ভরশীল নয়।(সাগর)

মানুষকে মানুষের প্রতি নির্ভরশীল হতে হয়।না হলে জীবন চলে না।কিন্তু এই ছেলেকে কে বুঝাবে?
বলেই রাগে আয়শা ব্যাগ গোছাতে লাগলো।


অন্যদিকে
সমুদ্র পুকুর পাড়ে একটা বই হাতে নিয়ে বসে আছে।কিন্তু কিছুতেই মনোযোগ দিতে পারছে না বইয়ের উপর।একে তো দাদুর মৃত্যু।
কাউকে না বললেও সমুদ্র মন থেকে অনেক ভেঙ্গে পড়েছে।দাদুর সাথে ও অনেক ক্লোজ ছিলো ওর পরিবারের চেয়েও বেশি।যেটা এক মাত্র দাদু আর ওই জানতো।আর কেউ না।যখনই গ্রামের বাড়িতে আসত সারারাত দাদুর সাথে গল্প করতো।গল্প করতে করতে কখন যে রাত পাড় হয়ে যেত খেয়ালই ছিলো না দাদা নাতির।শহরের বাড়ীতে গেলেও দাদু আর সমুদ্র অনেক সময় কাটাতো।অনেক ভালোবাসতো দাদুকে।তবে দাদুকে নিয়ে ও ফুলের সাথে হিংসে করতো।ও কোনোদিন ফুলকে দেখে নি।কোনো দিন ফুলের নামও শুনে নাই।শুধু শুনেছে ওর দাদুর সাথে একটা বাচ্চা মেয়ে থাকে যে ওর দাদুর সাথে সব সময় কাটায়।আর এতেই সমুদ্রের হিংসে হতো ওর দাদু হয়েও ও দাদুর সাথে বেশি সময় কাটাতে পারতো না।কিন্তু ওই মেয়ে ওর দাদুর কিছু না হয়েও সারাদিন দাদুর সাথেই থাকতো মজা করতো সময় কাটাতো।শুনেছে ওই মেয়ে নাকি অনেক দুষ্টু,অনেক হাসি খুশি এতে সমুদ্র আরো বেশি হিংসে করা শুরু করে।তবে যখন মেয়েটা ওর দাদুর মৃত্যু দেহ দেখে ওর কোলে ঢলে পড়লো তখন ওকে দেখে অনেক মায়া হলো। অবশ্য এতো মায়াবী চেহারা দেখে সবারই মায়া হবার কথা।সমুদ্র তখন বুঝতে পারলো কেনো সবাই ওকে এতো ভালোবাসে।কারণ এই মায়াবী চেহারা দেখে কেউই ভালো না বেসে থাকতেই পারবে না।
একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে সমুদ্র ভাবতে শুরু করলো
মেয়েটা যখন আমার কোলে ঢলে পড়লো।তখন আমি খানিকটা অবাক হয়ে যাই।ওকে কোলে নিয়ে যখন রুমে শুয়াতে গেলাম তখন ও আমার শার্ট ধরে দাদুম,, দাদুম বুলি আওড়াতে লাগলো।ওর বন্ধ চোখ ভেদ করে পানি পড়তে ছিলো।তখন আমি বুঝতে পারলাম দাদু আমার ঠিকই ছিল।কিন্তু মায়াটা ওর বেশি ছিলো।আমাদের শুধু দাদু ছিলো।আর ওর দাদুম ছিলো। দাদু ও মা।আমাদের থেকে বেশি ওর কষ্ট হয়েছে।ওর পরিবার এখন ওকে ছেড়ে চলে গেছে।তাই তো এখন আমরা সাভাবিক হলেও ও এখন বিছানায় শুয়ে আছে।জীবিত থেকেও মরা লাশের মত।সত্যিই মেয়েটার জন্য মায়া হচ্ছে।

এইসব ভেবেই সমুদ্র পুকুরের পানির দিকে তাকিয়ে রইল।


আয়শা ব্যাগ প্যাক করছে তখন দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে কাপড়ে মুখ দিয়ে কাদঁছে কাকী।

কাকী?আপনি কাদছেন?কিন্তু কেনো?(আয়শা রুমের বাহিরে গিয়ে)

তোমগো কাকায় কইছে মাইয়ারে বলে লইয়া যাইবা?(কাকী কাদতে কাদতে)

হুম।আপনি তো দেখতেই পাচ্ছেন।(আয়শা)

আমগো মাইয়াডা অনেক ভালো।ওরে একটু আদর দিলেই হইবো।(কাকী আঁচলে মুখ মুছতে মুছতে)

কাকী একটু না।ওকে অনেক আদরই দেবো আপনি চিন্তা করবেন না।এখন গিয়ে আপনি ফুলের জিনিস পত্র সব প্যাক করেন।(আয়শা)

আইচ্ছা।
বলেই কাকী চোখ মুছতে মুছতে চলে গেলো।


সন্ধায় সবাই গাড়ি নিয়ে তৈরি।এখনই বের হবে।কিন্তু কাকা কাকী খুব কান্না করছে।আরমান আর আয়শা উনাদের সামলানোর চেষ্টা করেছে।উনাদের শান্ত করে,,
কেউ গিয়ে ফুলকে নিয়ে আসো।(আয়শা)

আমি যাচ্ছি।(আরমান)

না বাবা আমি যাইতাছি।শেষ বারের মত মাইয়াডারে কোলে নেই।
বলেই কাকা বাড়িতে ঢুকতে লাগলো কিন্তু তার আগেই সমুদ্র ফুলকে কোলে করে নিয়ে আসলো।আর তা দেখে সবাই অবাক।যেই সমুদ্র কারো পরোয়া করে না সেই সমুদ্র কাউকে না বলেই ফুলকে নিয়ে আসলো।ফুল সমুদ্রের কোলে চোখ বুজে আছে।হয়তো ঘুমিয়ে আছে।বিকেলে ডক্টর এসে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে গেছে।অনেকটুকু পথ।যেতে যাতে ওর কোনো কষ্ট না হয় তাই ঘুমের ইনজেকশন দেয়া। তবে সমুদ্র ফুলের এতো কেয়ার করা দেখে সবাই খুবই অবাক হয়ে গেল।এই কাহিনীটা সবার মাথার উপর দিয়ে চলে গেলো।

আমাকে চিমটি দে তো?(সাগর হা হয়ে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে)

সোনালী জোড়ে চিমটি দিয়ে দিলো।

আহ্!এতো জোরে কেউ কি চিমটি দেয়?(সাগর হাত ঘষতে ঘষতে)

তুইই তো বললি চিমটি দিতে!(সোনালী হা করে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে)

হ্যা।কে জানতো নিজের চোখে অষ্টম আশ্চর্য দর্শন হবে।(সাগর চোখ কচলে)

Same ব্রো।(সোনালীও চোখ কচলে)

সমুদ্র আয়শার সামনে এসে
এই মেয়ের জিনিস রাখা হয়ে গেছে মা?(সমুদ্র)

আ,,হা হা।(আয়শা অবাক হয়ে মাথা নেড়ে)

তাহলে চলো।
বলেই সমুদ্র ফুলকে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো।

এইটা আমাদের ছেলেই না?(আরমান)

মনে তো হয় কিন্তু বিশ্বাস হয় না।(আয়শা)


চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here