#এক_মুঠো_ভালোবাসা 💝
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::১১
— “আরেকবার আয় তুই উনুনের কাছে।।খুন্তি গরম করে যদি তোর পিঠে আমি না লাগিয়েছি ।তাহলে আমার নাম মেহের না” ।।(অগ্নদৃষ্টি দিয়ে মেহের)
মেহের এমন লাগামহীন কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকালো নিবিড় ।যে মেয়েটা এতোদিন পর্যন্ত তাকে আপনি বলে সম্মোধন করতো । আজ সেই রমনী তাকে তুমি রেখে ডিরেক্ট তুই বলে ডাকছে।। মুখ ফুটে কিছু বলার আগেই ড্রয়িং রুম থেকে শোনা গেল কয়েকজন মানুষের কথা বলার আওয়াজ। বিরামহীন ভাবে নিবিড় আর নিশি বলে ডেকে চলেছে।। অপেক্ষা না করে সেদিকে ছুটল সবাই। মেহের কৌতূহল নিয়ে একবার সেদিকে থেকে দৃষ্টি সরিয়ে উনুনের উপর দিল। নিভু নিভু তাপে বেগুন ফ্রাই কয়লা হয়ে গেছে।।তট জলদি প্যান টা নামিয়ে উচ্চে বসিয়ে দিল।
__________________
তৌফিক এসেছে তার পরিবার সমেত ।বাবা মা ছোট বোন তনুকে নিয়ে।তনুকে দেখে চরম বিরক্ত হলো নিবিড়। মেয়েটার চাল চলন ,, কথাবার্তা,,ব্যবহার কোনোটাই নিবিড়ের পছন্দ নয়।কেমন একটা ছিপকে
থাকে তার সাথে ।।এক কথায় চুইগামের আঠার মতো।আসার পর থেকে নিবিড়ের পেছনে পরে আছে ।খাবার টেবিলে বসেও শান্তি নেই।তার পাশের সিটটা বিনা বাধায় দখল করে আছে।। বোনের ননদ বলে কিছু বলতে পারছে না। চুপচাপ খাবারের দিকে মন দিল।।
টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে স্বযত্নে খাবার পরিবেশন করছে মেহের । তৌফিকের পরিবার আসাতে অনলাইনে খাবার অর্ডার দিয়েছে নিশি।গ্লাসে পানি ঢেলে তনুর দিকে এগিয়ে দিলে বাঁধল আরেক বিপত্তি।নিবিড়ের হাতের সাথে ধাক্কা লেগে সবটা পানি তনুর জামা।
নিজের শরীরে পানি পড়াতে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো তনু।আগে পিছনে কিছু না ভেবেই চড় বসিয়ে দিল মেহেরের গালে। নিজের কাজের জন্য অনুতপ্ত মেহের । বুঝতে পারেনি তনু এমন কিছু করবে। গালে হাত রেখে মাথা নিচু করে রইল মেহের। গর্জে উঠলো তনু…
— “যে কাজটা ভালোভাবে করতে পারিস না।কেন সেটা করতে আসিস। আমাদের বাড়ির কাজের লোক হলে মারতে মারতে বাড়িতে থেকে বের করে দিতাম। ইচ্ছে করছে তোরে…
রাগে চোখজোড়া বন্ধ করে নিল তনু। কাজের লোক শব্দটা শুনে কেমন অদ্ভুত অনুভুতির সম্মুখীন হলো সে। সকলের দৃষ্টির অগোচরে আড় চোখে একবার নিবিড়ের দেখলো। অপরাধী কন্ঠে বললো…– “সরি ,, আমি দেখতে পাই নি”।।
নিবিড় কিছু বলার আগেই বাহু চেপে থামিয়ে দিল নিশি।করুন চোখে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো সে। থেমে থেমে নিবিড়। রাগ সংযত করতে টেবিলের উপর থাকা কাঁচা চামচটা চেপে ধরলো । আংশিক শব্দে কাঁটা চামচটা দু খন্ডে পরিনত হলো।সবাই নিবিড়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করলো। বিনা বাক্যেয় খাবারের টেবিলে ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো সে। চপল পায়ে হেঁটে রুমে চলে গেল।
নিবিড়ের ভঙ্গিমা বুঝতে অসুবিধা হলো না নাজমার।তিনি মেহেরের দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বললেন..
— “মেহের যাও,খাবারটা নিবিড়ের রুমে পৌঁছে দাও।নিবিড়ের খাওয়া শেষ হলেই নিচে নামবে এর আগে নয়”।।
আজ নাজমা কন্ঠস্বর আগের মতো মনে হয়নি মেহেরের কাছে।। একদম আলাদা ।যেন মেহের কে আদেশ করছেন।মেহের মাথা নেড়ে সম্মতি দিল।নিবিড়ের খাবার সাজিয়ে পা বাড়ানোর আগেই শোনা গেল তনুর কন্ঠ..– “আমার খাবারটাও সাজিয়ে নিবিড়ের রুমে নিয়ে আয়”।।
কথা শেষ না করেই নিবিড়ের রুমের দিকে ছুটল সে ।।মেহের নিবিড়ের খাবারটা পাশে রেখে তনুর খাবার সাজিয়ে নিল।।দুজনের খাবার নিয়ে উপরে পা বাড়ালো।।
পরপর দুইবার নক করার পর ভেতরে ঢুকার পারমিশন দিল নিবিড়।খাবার ট্রে টা টেবিলের রেখে বের হওয়ার আগেই হাত ধরে থামিয়ে দিল নিবিড়।তৃক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে বলল..
— “আমি তোমাকে একবারও বলেছি খাবার নিয়ে আসতে।।নাকি বলেছি আমার রুমটাকে রেস্তোরাঁ বানাতে ।।স্পিক আউট ” ( চেঁচিয়ে বললো নিবিড়)
ছলছল চোখে তাকালো মেহের।বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকার ক্ষমতা হলো না ।নিবিড়ের চোখ দিয়ে যেন আগুন বের হচ্ছে। নিবিড় শান্তকন্ঠে বললো…
— “এই মেয়ে তোমাকে এতোক্ষণ আমি কি বললাম শুনতে পাও নি ।।বেরিয়ে যাও বলছি।আর নেক্সাস টাইম আমার রুমে ঢোকার আগে পার্মিশন নিয়ে তবে ঢুকবে ।নাও আউট” ।
এক মুহুর্তের জন্য বেমালুম তনুর কথা ভুলেই গিয়েছিল মেহের। তনুর রাগি ফেসটা দেখে মেহেরের প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে। এতোটুকু বুঝতে পারছে ,এখানে সামান্য একটা ছোট খাটো ভূমিকম্প হয়েছিলো।।তনুর হনহন করে চলে গেল।এবার আর হাসি থামাতে পারলো না মেহের । শব্দ করে হেঁসে দিলো।। পরক্ষনেই আবার ভয়ে চুপসে গেল।
নিবিড়ের নয়নজোড়া আটকে আছে মেহের মাঝে। প্রথমবার মেয়েটাকে সে প্রান খোলা হাসতে দেখছে।সব রাগ উধাও হয়ে একরাশ ভালোলাগা এসে ভর করলো তার ভেতরে । আলতোভাবে হাতটা ছেড়ে দিয়ে গালে হাত রাখলো।এই মেয়েটার প্রতি শুধু নিবিড়ের অধিকার।সে মারবে ,,বকবে,আদর করবে ,, ভালোবাসবে ।কেউ কেন এই মেয়েটাকে কষ্ট দেবে।। নিজের অজান্তেই গালে অধর ছুয়ে দিল নিবিড়।
এতোক্ষণ স্তব্ধ ছিলো মেহের , এবার আর পারল না।শরীরটা তার মৃদু কাঁপছে। হাত দিয়ে পড়নের ওরনাটাকে খামচে ধরে পরম আবেশে চোখ জোড়া বন্ধ করে নিল।।
।মেহের রুমের জিনিস পত্র পূর্বের ন্যায় গুছিয়ে রাখছে। নিবিড় তনুর উপরের রাগ রুমটার উপর ঝেড়েছে। এই রুমে সে একবার নিশির জোড়াজুড়িতে এসেছিল।তবে নিবিড়ের অনুপস্থিতে। রুমটার কোন জিনিসটা কোথা থাকবে সেটা এক দেখাতেই মুখস্ত তার। নিবিড় খাবার শেষে প্লেটে পানি ঢেলে হাত ধুয়ে নিল।একগ্লাস পানি পান করে তৃপ্তিকর ঢেকুর তুললো। এগিয়ে গিয়ে মেহের ঝুলন্ত ওরনাটায় হাত মুখ ভালোভাবে মুছে নিল। হঠাৎ ওরনাটায় টান অনুভব করে পেছনে ফিরলো সে। নিবিড় কে নিজের কাছে দেখে দুকদম পিছিয়ে গেল মেহের।ওরনাটা খসে পড়ে যেতে নিলে ,বুকে হাত রেখে সামলে নিল। লজ্জায় মাথা তুলতে পারছে না ।নিবিড় এখনো মেহেরের ওরনাটা ধরে আছে । এগিয়ে গিয়ে মেহেরের কাঁধে জরিয়ে দিল। আংশিক শব্দে ধ্যান ভাঙল তার।নিবিড় কাবার্ড থেকে একটা প্যাকেট এনে মেহেরের হাতে ধরিয়ে দিলো।। মেহের কৌতূহলী চোখে হাতে নিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ল..– “কিসের প্যাকেট এটা” ।
— “নিজেই খুলে দেখ “।।
হালকা ফাঁক করে চোখ বুলিয়ে নিল প্যাকেটের ভিতর।খুশীতে আত্মহারা হয়ে নিবিড়ের গলার জরিয়ে ধরলো। উৎফুল্ল কন্ঠে বলল..–” থ্যাংকিউ ।।থ্যাংকিউ সো মাচ”।
নিবিড় মৃদু হেসে হাত রাখলো মেহেরের পিঠে।
তোমার এই মধুর হাসিটা দেখার জন্য আমি সবকিছু করতে পারি প্রিয়।।
________ মুখোশের আড়ালে আমার জন্য লুকিয়ে আছে অসীম ভালোবাসা 💝💝
যা তুমি আমাকে বুঝতে না দিলেও
আমি সেটা অনুভব করতে পারি ✨
— ইফা 🌿
________________
— “আ’ম সরি মেহের ।তখন তোমার জন্য কিছু করতে পারলাম না। তাই বলে তুমি আমাদের সাথে যাবে না।এটা হতে পারে না”।(মেহেরের হাত ধরে নিশি)
— “নিশু আপু বিশ্বাস করো ,,আমি তোমার উপর বিন্দু পরিমাণ রেগে নেই ।দেখ এখানে শুধু তোমরা – তোমরা যাচ্ছ ।আমি কাজের লোক গিয়ে কি করবে। তারচেয়ে বরং যখন তোমরা ফিরে আসবে ।সবটা আমাকে বলো ,তাহলেই তো হলো”।(মেকী হাসি দিয়ে মেহের)
নিশি বুঝতে পারল কালকে তনুর কথাটা মেহেরের গায়ে লেগেছে।
— “এখানে কাজের লোকের ব্যাপার না মেহের। তুমি আমাদের বাড়িতে আসার পর থেকে কোথাও বের হয়নি ।তাই আজ তুমি আমাদের সাথে যাবে ব্যস ।।রেডি হও।সবাই অপেক্ষা করছে “।
বলেই দ্রুত পায়ে রুম প্রস্থান করলো নিশি।তৌফিক তার বোনের পাগল।। সামান্য কারণে যদি বিয়েটা ভেঙ্গে দে, তাহলে সেই কষ্ট সহ্য করতে পারবে না নিশি।তাই তো নিবিড়কে থামিয়ে দিলো সে।
ক্লান্ত চোখে নিশির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে প্যাকেট টা বের করলো মেহের ।কালকে রাতে এই প্যাকেট নিবিড় তাকে দিয়েছে। শপিং মলে দেখা সেই লাল শাড়িটা ।সাথে দুমুঠো লাল রঙের চুড়ি,, হালকা লাল রঙের লিপস্টিক,,কালো কাজল । শাড়িটার উপর হাত বুলিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।আজ এই শাড়িটা পড়বে সে।
মোটা করে কাজল, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক আর লাল শাড়িতে তৈরি মেহের। শতচেষ্টা করেও চুড়িজোড়া হাতে ঢুকাতে ব্যর্থ হলো সে। চুড়িজোড়া হাতে নিয়ে বেরিয়ে এলো সে।।
চলবে..🎀🎀
দুঃখিত ,,নেট ছিলো না।