#এক_মুঠো_ভালোবাসা 💝
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::১৩
দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ নিবিড়ের ক্লান্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে রইল মেহের। নিবিড় চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। চুলের পানিতে বেডের কিছুটা অংশে ভিজে গেছে। চুলগুলো মুছেনি। পড়নে শুধু ব্ল্যাক রঙের একটা ট্রাউজার ।বুকের উপর বিন্দু বিন্দু পানির ফোঁটা জমে আছে। ফর্সা শরীরে পানি গুলো মুক্তার কণার মতো লাগছে। প্রথমবার নিবিড়কে এমন অবস্থায় দেখলো মেহের। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিম্ন দৃষ্টি দিল।হাত বাড়িয়ে নক করতে গিয়েও থেমে যাচ্ছে। ভেতরে ক্লান্ত নিবিড়কে বিরক্ত করতে চাইছে না। খাবারের প্লেট নিয়ে চলে আসার জন্য পা বাড়ালো। তৎক্ষণাৎ শোনা গেল নিবিড় স্বাভাবিক কষ্ঠস্বর..
— “দরজার বাইরে না দাঁড়িয়ে থেকে ভেতরে আসো”।
ছোট তুলে তাকালো মেহের। পূর্বের ভঙ্গিতে নিবিড় শুয়ে আছে। চোখ জোড়া আগের মতো বন্ধ।ভেতরে ঢুকে খাবারের প্লেটটা শব্দ হীন টেবিলের উপর রাখলো।যাতে নিবিড়ের ব্যাঘাত না ঘটে। টেবিলের উপর পড়ে থাকা জগটা সামান্য পরিমাণে কালকের পুরোনো পানি রয়েছে। সময় নিলো না ,, দ্রুত গতিতে নিচে নেমে এলো। জগের অর্ধেক অংশ পানিতে পূর্ন করে পূর্ণরায় নিবিড়ের রুমের দিকে ছুটল। পা বাড়িয়ে রুমে প্রবেশ করতে গেছে থেমে গেল সে। নিবিড় কাবার্ডের এপাশ ওপাশ খুঁজে লাল রঙের টি শার্ট বের করে গায়ে জড়িয়ে নিল। বেডে টান টান শুয়ে বলল..
— “একবার তো ভেতরে আসার পার্মিশন দিলাম।তাহলে বারবার একই কাজ কেন করছ? নেক্সাস টাইম থেকে বিনা পার্মিশনে আমার রুমে আসবে ।
এবার ভেতরে আসো”!
ভেতরে এসে প্লেটের পাশে জগটা রাখলো। হাত মুচড়ে দ্বিধাক্ত ভাব দূর করে বলল…
— “আমি আপনার রুমে এসেছি জানলেন কিভাবে”??
হা হা হাচ্ছু। টাওয়াল দিয়ে নাক মুছে নিল সে। মেহেরের বাহুতে হাত রেখে টেনে বসিয়ে দিল।বলল..
— শুধু আমার উপস্থিতিতে কেন? আমার অনুপস্থিতিতে তুমি কখন, কি করো। আমার মন বলে দিতে পারে?? বিলিভ না হলে জিজ্ঞেস করতে পারো।
দমে গেল মেহের। এই মানুষটা বড়ই অদ্ভুত। যেমন অদ্ভুত তার চাল-চলন! তেমন অদ্ভুত তার কথা বার্তা।মেহেরের ধ্যান ভাঙল নিবিড়ের কথায় ।।
— “বাড়িটা এতো স্তব্ধ কেন? কোথায় গেছে সবা”ই??
— “নিশি আপুর বিয়ের শপিং করতে গেছে! আজকে ফিরবে কিনা বলে যায়নি
বাড়িতে কেউ নেই।তাই আমি আপনার জন্য খাবার নিয়ে এসেছি। খেয়ে নিন”।
কিছুক্ষণ গভীর দৃষ্টিতে মেহেরের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল নিবিড়। সারাদিনের কাজের চাপে মাথা ব্যাথা করছে তার। বলল..– “মাথা ব্যাথা করছে। খেতে ইচ্ছে করছে না। তুমি খাবার নিয়ে যাও।
আর গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। ওরা কখন আসবে কিনা ঠিক নেই”!
গেল না মেহের বরংচ নিবিড়কে শোয়া থেকে টেনে তুললো। প্লেটটা নিবিড়ের বরাবর রাখল। ঢাকা প্লটটা তুলে নিবিড়ের ধুয়ে দিল।বলল.. –” খেয়ে নিন।মাথা ব্যাথা সেড়ে যাবে”??
মেহেরের করুন মুখটার দিকে তাকিয়ে না করতে পারলো না নিবিড় । আস্তে আস্তে খাবার খেতে লাগলো।নিবিড়কে খেতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিল মেহের। নিজের ওরনাটার খানিকটা অংশ তুলে স্বযত্ন নিবিড়ের চুল মুছিয়ে দিতে লাগলো। নিবিড় খাওয়া অফ করে মেহেরের দিকে তাকিয়ে বাঁধা দিল তাকে। ভেজা মাথায় থাকলে ব্যাথাটা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে না। কিন্তু কোনো বাঁধা তোয়াক্কা করলো না মেহের। যে নিজের মতো কাজ করে যাচ্ছে।
শেষ লোকমা টা মুখে তুলে হাত ধুয়ে নিল নিবিড়। টাওয়ালে হাত দেওয়ার আগে মেহের ওরনাটা অপর প্রান্ত এগিয়ে দিলো। বলল..
— “একটু আগে টাওয়ালে নাক মুছেছেন। এটায় হাত- মুখ মুছে নিন”।
সময় নিল না সে। মেহেরের ওরনাটায় হাত, মুখ মুছে থামলো সে। ড্রয়ার খুঁজে মাথা ব্যাথার মেডিসিন পেল না। বাধ্য হয়ে বালিশে মাথা হেলিয়ে শুয়ে পড়লো।
মেহের স্বল্প সময় নিয়ে বেড থেকে খাবারের প্লেটটা সরিয়ে রাখল। যাতে বেডের উপর এটোপানি গুলো না পড়ে। লাফ দিয়ে বেডের উপর উঠে আসন দিয়ে বসলো। আলতো হাতে নিবিড়ের মাথাটা নিজের কোলে তুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
হাতের স্পর্শে নিবিড় চোখ খুলে তাকালো।মেহের নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে ছিল। বিধায় দু’জনের চোখাচোখি হয়ে গেল। পূর্ণরায় আবার চোখ বন্ধ করে বলল..
— “এমনিতেই ব্যাথা সেড়ে যাবে । শুধু শুধু হাত ব্যাথা করার কি দরকার আছে”??
— “আপনার একটু কাছে থাকতে পারলে আমার হাত ব্যাথা হয়না। বরংচ আমি শান্তি পাই। আপনি কেন বুঝতে পারেন না? ( মনে মনে মেহের)
আসলে আপনারা তো কাল বাদে পরশুদিন গ্ৰামে চলে যাচ্ছেন? যদি ব্যাথাটা না কমে তাহলে বিয়েতে ইনজয় করবেন কীভাবে”??
— “চলে যাবো মানে?? তুমি যাবে না”??
“না” সংক্ষেপে উত্তর দিলো মেহের।কেউ আর কিছু বললো না। যে যার নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে উঠলো।।।
______________
ঘড়ির কাঁটা টিক টিক করতে করতে নয়টা আঠারো মিনিটে পৌঁছেছে। সারাদিন জার্নি করে রাতে গিয়ে পৌঁছাবে। জার্নি করার জন্য দিনটাই বেস্ট সময় কারণ রাতের বেলায় পৌঁছে একটু নিরিবিলিতে বিশ্রাম নেওয়া যায়। বড়দের গাড়ি আগে বেরিয়ে গেছে। ছোটদের টা বড়দের অনুসরণ করে এগিয়ে যাবে।
ডোর খুলে ভেতরে আসতে নিলে সেটে গেল মেহের। নিবিড় একটু চেপে মেহেরের জন্য খানিকটা জায়গা করে দিয়েছে । অবশ্য মেহের যেতে চাইনি ।নিবিড় জোর করে রাজি করিয়েছে।
মেহের উঠে বসে আংশিক শব্দে গাড়ির ডোর টেনে লাগিয়ে দিলো। দু’জনের মাঝে একটা সিটের দূরত্ব। মেহের গাড়িতে উঠতেই তৌফিক গাড়ি ড্রাইভে মন দিল। মিনিট পনের পেরুতে না পেরুতেই মেহেরের মাথাটা চারপাশ নিয়ে ঘুরতে লাগলো। এইজন্যই সে আসতে চায়নি। মাথায় হাত দিয়ে সিটে গা হেলিয়ে দিল। বমি বমি ভাব আসছে।
বোতলের ছিপি খুলে মেহেরের হাতে ধরিয়ে দিল নিবিড়। দুটো মেডিসিন প্যাকেট থেকে ছাড়িয়ে সেটাও হাতে তুলে দিল সে। স্লো কন্ঠে বলল..– “খেয়ে নাও মিনিট দশেকের ভেতরেই ঠিক হয়ে যাবে” ??
মুখে দিল না মেহের। ট্যাবলেট দুটো এপিঠ ওপিঠ করে পর্যবেক্ষণ করে বলল..
–” কিসের মেডিসিন”??
বিরক্তিকর ভাব ফুটে উঠলো নিবিড়ের মাঝে। যাকে বলে চরম বিরক্ত।হাত থেকে ট্যাবলেট দুটো নিয়ে বলল..
— “মেডিসিন খাইয়ে তোমাকে মেরে ফেললো। তারপর নদীতে ফেলে দিয়ে যাবো ”।
মুখ ছোট করে ফেললো মেহের। সে শুধু জানতে চেয়েছিল কিসের মেডিসিন। তার পরিবর্তে একগাদা বচন শুনিয়েছে দিল। নিবিড়ের হাতের বাজ থেকে ট্যাবলেট দুটো নিয়ে বিনা শর্তে খেয়ে নিল।
প্রায় মিনিট দশেক পর চোখজোড়া ঘুমে ঢুলুঢুলু হয়ে এলো তার। হাজার চেষ্টা করেও খুলে রাখতে পারছে না। গাড়ির কাঁচ নামিয়ে পর পর কয়েকবার পানির ছিটা দিল। কিন্তু কোনো উন্নতি হলো না বরংচ মনে হচ্ছে কাঁচের ফাঁক দিয়ে ঘুমিয়ে নিচে পড়ে যাবে। হাই তুলে সিটে মাথা রাখতেই, হাত মেলে দিল নিবিড়।ছোট স্বরে বলল..
— “আসো” ।।
এক মুহুর্ত অপেক্ষা করলো না মেহের। দুহাতে নিবিড়কে শক্ত করে জরিয়ে বিড়াল ছানার মতো গুটিয়ে গেল নিবিড়ের বুকমাঝারে। মৃদু হাসলো নিবিড়। ক্লান্তির হাত থেকে বাঁচাতে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দিয়েছে মেহেরকে। মেহেরের নিস্তেজ হাতটা নিজের হাতের বাজে বন্দী করে শব্দ করে অধর ছুয়ে দিল সে।
–” তুমি কি বোঝ না,, আমার মনের না বলা জমিয়ে রাখা কথাগুলো ।যদি সত্যিই বুঝতে না পারো ।অবুঝ মনটাকে জিজ্ঞাসা করো । দেখবে সে তোমায় বলে দেবে,, ভালোবাসার কথাগুলি প্রিয় 💓”!!
__________________
রাত তখন তিনটা তেত্রিশ। গভীর তন্দ্রায় ব্যস্ত সবাই।চোখ মেলে তাকালো মেহের। চারদিকে ঘন অন্ধকার। মাথার উপর ফ্যান চলছে।তবে দেখা যাচ্ছে না।। স্বশব্দে অনুভব করা যাচ্ছে। অন্ধকারের মাঝে টিনের বেড়া গুলো জ্বলজ্বল করছে। কপাল কুঁচকে এলো তার।তাহলে কি গ্ৰামে পৌঁছে গেছে। তখনকার কথা মনে পড়তেই নিজের উপর বিরক্ত হলো সে। কখনো এতো গভীর ঘুম সে ঘুমায় না। তাহলে আজ তার কি হলো।ঘুমের রেশ এখনো কাটেনি তার। কিন্তু বকুল ফুলের সৌরভ তার নাকে এসে বাড়ি খাচ্ছে। এই ফুলটা তার সবচেয়ে প্রিয় ফুল। অনেকদিন হয়েছে এই ফুলগুলো ছুঁয়ে দেখা হয়না। বেড থেকে ধীরে ধীরে নেমে গেল সে। আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল উঠানের দিকে…..
(চলবে.. ইনশাআল্লাহ)