#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_২
#সুরাইয়া_নাজিফা
” আমার সাথে এমন নোংরা কাজটা করতে আপনার একটুও বিবেকে বাঁধেনি তাই না?”
শান ভাইয়া ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
“উহুম, একদম না। ”
“কেন করলেন আপনি এটা। আমি কালকে রাতে কতটা ক্লান্ত ছিলাম তার কোনো আইডিয়া আছে আপনার? ”
“তোমার যা কিছু হোক আই ডোন্ট কেয়ার।এখানে আমি শান্তিতে ঘুমাতে পারছি না আর তুমি শান্তিতে ঘুমাচ্ছো এটা তো আমি হতে দিতে পারি না। ”
“অদ্ভুত তো আপনি ঘুমাতে পারছেন না সেটা আপনার সমস্যা আমি কি করতে পারি এতে?”
“তুমিই পারো নিজের শান্তি হারাম করে আমার মনে শান্তি এনে দিতে।”
বলেই আরাম করে সোফায় আধশোয়া হয়ে বসে পড়ল। রাগে আমার শরীর জ্বলে যাচ্ছে ব্যাটা খচ্চর। সকাল সকাল আমার গায়ে এক জগ ঠান্ডা পানি ফেলে দিয়েছে। হঠাৎ ঘুমের মধ্যে এমন হওয়াতে প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলাম। তাই তাড়াতাড়ি উঠতে গিয়ে সোফা থেকে ধাম করে পড়ে গেলাম।কালকে সোফায় বসে থাকতে থাকতে কখন ঘুমিয়ে গেছিলাম জানি না। একদিকে শীত করছে অন্যদিকে ব্যাথায় আমার কোমর ফেঁটে যাচ্ছে আর সেখানে উনি বসে বসে সকাল সকাল আমাকে কীর্তন শোনাচ্ছে। এই ভেজা ড্রেস নিয়ে আর বসে থাকা যাচ্ছে না তাই ফ্রেস হওয়ার জন্য উঠতে যাবো তখনই মুখ থেকে বেরিয়ে এলো,
“ও মাগো। ”
আমার গোঙ্গানি শুনেই শান ভাইয়া এগিয়ে এসে বললো,
“হোয়াট হ্যাপেন?”
আমি শান ভাইয়ার দিকে একবার তাকিয়ে বললাম,
“নাথিং।”
“কিছু না হলে এমন বাজে আওয়াজ করছ কেন? বাহির থেকে মানুষ শুনলে কি ভাববে? ”
“কি ভাববে? ”
“তোমার মাথা স্টুপিড। ”
কথাটা বলেই উনি আমার পাশ থেকে উঠে আবার আগের মতো বসে পড়ল। উনি হঠাৎ আমাকে স্টুপিড কেনো বললো? এখন কি ব্যাথা পেলে প্রকাশও করব না? হনুমান একটা। আমি সোফাটা ধরে উঠে দাঁড়ালাম তারপর শরীরটা একবার এদিক ওদিক ঘুরিয়ে নিলাম। সারারাত সোফায় শুয়ে পুরো শরীরটা একদম ব্যাথা হয়ে আছে।
“আচ্ছা তুমি এতো টেনশন ফ্রী আছো কি করে বলোতো?”
শান ভাইয়ার হঠাৎ বলা কথাটা বুঝতে না পেরে আমি উনার দিক পিটপিট করে তাকালাম।শান ভাইয়া আমার তাকানোর মানে হয়তো বুঝতে পেরেছে তাই উনি আবার বললো,
“আমি কালকে রাত থেকে এটা ভেবেই ঘুমাতে পারছি না যে আমি আমার গার্লফ্রেন্ডকে কি বলবো?সেখানে তুমি এতো শান্তিতে ঘুমাচ্ছো কিভাবে?তুমি কি বলবে তোমার সো কলড বয়ফ্রেন্ডকে?”
শান ভাইয়ার কথা শুনেই বিরবির করে বললাম,
“বয়ফ্রেন্ড থাকলে তো ভাববো।”
“কি বিরবির করছো বলোতো?”
“হ্যাঁ।”
উফ ভ্যাগিস বুঝতে পারেনি।
“কিসব বলছো বলোতো? কি হ্যাঁ?”
তাড়াতাড়ি কথা ঘুরিয়ে বললাম,
“না। কিছু না।”
“কিছুতো বলেছো।সত্যি করে বলো নাহলে ?”
“নাহলে কি? ”
“সেটা পরেই দেখতে পারবে আগে বলো?”
শান ভাইয়াকে আমার দিকে এগোতে দেখেই আমি একটু পিছিয়ে গেলাম তারপর বললাম,
“বলেছি আমার বয়ফ্রেন্ডেকে কি বলবো সেটা আমার ব্যাপার আপনাকে ভাবতে হবে না। ”
বলেই ঘটঘট করে হেঁটে চলে গেলাম
“উফ বাবা যেভাবে ধরেছিল ঠিক উগলেই নিতো। ”
আমার ট্রলি ব্যাগের কাছে গেলাম জামা বের করব বলে। হঠাৎ আমার হাতের দিকে চোখ যেতেই চমকে উঠলাম। কালকে রাতেই তো এই হাতটা কেঁটে গেছিলো। আমি তো কালকে ব্যান্ডেজ করিনি। তাহলে হাতটা এতো সুন্দর করে ব্যান্ডেজ কে করল? আমি কিছুক্ষন বিষ্ময় নিয়ে হাতের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। তাহলে কি শান ভাইয়া? কিন্তু হঠাৎ আমার উপর এতো দয়ার কারণ কি? আমি যতটুকু জানি আমার কিছু হোউক বা না হোউক তাতে ওনার কিছু যায় আসে না? তাহলে এটা কি শুধু দায়িত্ববোধ না মনুষ্যত্ব। গিয়ে কি জিজ্ঞেস করব? না থাক সে কখনোই সোজা উত্তর দিবে না। কখনো সুযোগ বুঝে জিজ্ঞেস করে নেবো ভেবে একটা শাড়ী নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।
★
★
★
কোনো রকম একটু শাওয়ার নিয়ে তাড়াহুড়ায় বেরিয়ে গেলাম। একটা সবুজ রঙের জর্জেটের শাড়ি পড়লাম। শরীরটা ভালো করে না মুছাতে শাড়ীটা বেশ ভালো ভাবেই শরীরে বসে গেছে। আম্মুও আমাকে এরজন্য সবসময় বকতো যে এতো বড় হয়েছি তারপরও কেন ভালো ভাবে শরীর মুছতে পারি না। যাইহোক মাথা মুছতে মুছতে ড্রেসিংটেবিলের সামনে এসে দাঁড়ালাম।
শান বিছানায় বসে ল্যাপটপে অফিসের একটা কাজ করছিলো। হঠাৎ ড্রেসিংটেবিলের দিকে তাকাতেই শানের চোখ আটকে গেল। চুলের পানিতে কোমরের দিকে অনেকাংশেই ভিজে গেছে আর শাড়ীটাও হালকা সরে গেছে। যার ফলে সোহার শরীর স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।শানের বুক ধুকধুক করছে। শান তাড়াহুড়া করে নিজের চোখ সরিয়ে নিলো।
নিজেই নিজেকে বললো,
“নো শান আর যাই করিস না কেন এই মেয়ের চক্কোরে পড়িস না। জাস্ট ফোকাস অন ইউর ওয়ার্ক।”
শান আবার নিজের কাজে মন দিলো।
ড্রেসিংটেবিলের আয়নায় খুব ভালো ভাবেই বুঝা যাচ্ছে শান ভাইয়া বারবার আড় চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছে কিন্তু আমি ফিরলেই দেখি সে কাজ করতে ব্যস্ত। তাহলে কি আয়নায় ভুল দেখলাম। তাই হবে নাহলে ওই হনুমানটা নিজের গার্লফ্রেন্ডকে ছেড়ে আমাকে কেন দেখবে?
“লিসেন শাড়ী পড়তে হলে পড়ার মতো পড়ো না হলে যেই শাড়ী দিয়ে সবাইকে নিজের শরীর দেখানো যায় তেমন শাড়ী না পড়াই ভালো। ”
হঠাৎ কথাটা কানে আসতেই দেখলাম শান ভাইয়া আমার পিছনে অনেকটা কাছেই দাঁড়িয়ে আছে। আমি তাড়াতাড়ি করে শান ভাইয়ার দিকে ঘুরে তুতলিয়ে বললাম,
“মমমানে?”
“শাড়ী না শুকানো পর্যন্ত ঘর থেকে বের হবে না। এমনিতেই ঘর ভর্তি মানুষ আছে। সো যেটা বললাম মনে থাকে যেন। ”
“কেন? ”
“যা বললাম তাই করবে। আর কোনো প্রশ্ন নয়। ”
মনে মনে বললাম,
“উফ সবসময় এতো রাগ নিয়ে থাকে
কিভাবে কে জানে। ”
শান ভাইয়া আমার পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ পা পিছলে এসে আমার গায়ের উপরেই পড়লেন আর আমিও তাল সামলাতে না পেরে ধপাস করে পড়লাম শানকে নিয়ে মেঝেতে। ভয়ে আমি প্রচন্ড শক্ত করে শান ভাইয়ার শার্টের কলার চেঁপে ধরলাম। আমার খুব কাছে শান ভাইয়ার নিঃশ্বাস আমার মুখের উপর এসে পড়ছে।
শান অপলক তাকিয়ে আছে সোহার মুখের দিকে। এমন বাচ্চাদের মতো চোখ মুখ খিঁচে থাকা,শরীরে বিন্দু বিন্দু পানি সব কিছুর মধ্যেই যেন স্নিগ্ধতা খুজে পাচ্ছে শান। আলতো করে সোহার মুখের উপরে যে চুল গুলো পড়ে ছিল শান সেটা সরিয়ে দিলো তখনই সোহা বলে উঠল,
“কি করছেন আপনি?”
সোহার কথায় শানের ঘোর কাটল,
“কই কি করব? কিছু না। ”
“তাহলে এখনও আমার উপরে পড়ে আছেন কেন? উঠেন তাড়াতাড়ি। ”
শান কিছুক্ষন সোহার দিকে তাকিয়ে থেকে দুপাশে ভড় দিয়ে উঠতে যাবে তখনই হাত পিছলে আবার সোহার উপরেই পড়ল। শান পড়তেই আমি নিজের মুখটা সরিয়ে নিলাম। উফ আরেকটু দেরী হলেই শানের ঠোঁট এসে আমার ঠোঁটে লাগত। আমার বুকটা ধুকধুক করছে।
“আপনি বারবার পড়ার জন্য কি আমার মতো নিরিহ মেয়ের শরীরটাই পেলেন। ”
“অদ্ভুত তো তুমি দেখলে না আমি স্লিপ করে পড়ে গেলাম তাও তোমার জন্য। ”
“অমনি নিজের দোষ আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিলেন না। আমি কি করেছি?”
“মেঝেতে এতো পানি ফেলে রেখেছো কেন? চুল গুলোও মুছতে জানো না যে কেউই পড়ে হাত পা ভাঙত। ”
“কানা নাকি দেখে চলতে পারেন না। চোখ কই থাকে। ”
আচমকা শান ভাইয়া আমার ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে বললেন,
“জাস্ট স্টপ আর একটাও বাজে কথা শুনতে চাইছি না। ”
আমি উনার হাতটা আমার ঠোঁট থেকে সরিয়ে বললাম,
“আমি বলতেও ইচ্ছুক নই। এইবার দয়া করে আমার উপর থেকে উঠুন।নাহলে আমি আলুভর্তা হয়ে যাবো।”
আমি বলার পর শান ভাইয়া আর কিছু বলতে যাবে তখনই একটা মেয়েলি কন্ঠো কানে এলো,
“স্যরি স্যরি আমি কিছু দেখি নি তোমরা কন্টিনিউ করো। ”
কথাটা শুনে শান ভাইয়া তাড়াতাড়ি আমার উপর থেকে উঠে দাঁড়ালো সাথে আমিও। দরজায় ভূমিকা ভাবি দাঁড়ানো ছিল। শান দ্রুত ভূমিকা ভাবিকে বললো,
“আরে না তুমি যা ভাবছো সেটা একদমই নয়।”
শানকে পুরা কথা বলতে না দিয়ে ভুমিকা ভাবি বললো,
“আরে দেবর জি এতো ইতস্তত করার কিছু নেই আমারই নক করে আসা উচিত ছিল। দরজা খোলা দেখে আমি ভেবেছি তোমরা রেডি। কিন্তু তোমাদের ফুলসজ্জার আমেজটা যে এখনো কাটেনি সেটা বুঝতে পারিনি। ”
বলেই মুচকি মুচকি হাসছে। লজ্জায় আমার মাথা কাঁটা যাচ্ছে। ইশ কি ভাবছে ভাবী। এই লোকটাও না কখন থেকে উঠতে বলছি কিন্তু উনি তো উনিই সেখানেই প্রশ্নের ভান্ডার খুলে বসছে আছে। এখন লজ্জায় পড়তে হচ্ছে আমাকে। আমি শানের দিকে কটমট করে তাকালাম। শানও অসহায় হয়ে মাথায় হাত দিলো। আসলে শান সকালের দিকে একটু বাহিরে গেছিল। আর অন্যদিনের মতো নিজেকে সিঙ্গেল ভেবে রুমের দরজা আটকাতেই ভুলে গেছে তাতেই এই কান্ড। তখনই ভূমিকা তুড়ি বাজিয়ে বললো,
“কি হলো তোমরা দুজনেই এমন সাইলেন্ট মুডে চলে গেলে কেন? সোহা তাড়াতাড়ি নিচে চলো সবাই তোমাকে দেখবে বলে অধীর আগ্রহে বসে আছে। চলো। ”
বলেই আমার হাত ধরে তার সাথে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কিছুটা গিয়ে আবার পিছন ফিরে বললো,
“দেবর জি তুমিও চলে এসো। বাকি যেইটুকু ফুলসজ্জা বাকি আছে সেটা রাতে করো কেমন।আর এইবার একটু দরজা লাগিয়ে। ”
বলেই আমাকে নিয়ে চলে গেল। লজ্জায় মনে হচ্ছে মাটি ফাঁক হোক আর আমি তার মধ্যে চলে যাই।
★
★
★
সব আত্মীয়-স্বজনরা সহ বাড়ির সব সদস্য উপস্থিত ছিল শুধু পুরুষরা বাদে। বাড়ির পরিবেশটা একটু থমথমে। কারণ কালকেই আরশ ভাইয়া যে কান্ডটা করেছে কারো মন ভালো থাকার কথা না।না জানি আমার কপালে কি আছে।তখন শ্বাশুড়ী মা বললেন,
“ঐ তো সোহা এসে গেছে।”
শ্বাশুড়ী মা আমার কাছে এগিয়ে এলেন। এসে আমার হাত ধরতেই আমি “আহ ” করে উঠলাম।
“কি হয়েছে সোহা? ”
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই উনি বললেন,
“একি হাতটা এতোখানি কাঁটলো কিভাবে?”
আমি কি বলবো বুঝতেছি না। আমার হাতটার এই দশা তো আপনার আদরের পুত্রই করেছে। কিন্তু মুখে বললাম,
“ওয়াসরুমে পড়ে গেছিলাম। ”
“উফ কি যে করো না। একটু দেখে শুনে চলবে তো। মেডিসিন নিয়েছো ?হাতে ব্যান্ডেজ কে করেছে?শান?”
আমি কি বলবো বুঝতেছি না ব্যান্ডেজ কে করেছে আমি তো নিজেই জানি না তারপরও মাথা নাড়িয়ে ওনার কথায় সম্মতি দিলাম।
শ্বাশুড়ী মা কিছু বলবে তার আগেই শানের ফুফি বলে উঠল,
“বাবা বিয়ে হতে না হতেই শানকে দেখছি আঁচলে বেঁধে নিয়েছো। ”
উনার কথাটা শুনে খুবই খারাপ লাগল।কেউ কাউকে সাহায্য করলে সেটাকে কি আঁচলে বাঁধা বলে?
তখনই আরেকটা মেয়ে বললো,
“উফ মা ওর স্বামী ওর খেয়াল রাখবে না তো কে রাখবে? আমি তো এটা ভেবে খুশি যে শান ভাইয়ার বউ পছন্দ হয়েছে। আর আমিও একটা মিষ্টি ভাবী পেয়েছি। ”
বলেই আমাকে জড়িয়ে ধরেছে। আমিও ধরলাম। এটা সম্ভবত শান ভাইয়ার ফুফাতো বোন সারা।
শানের চাচী বললো,
“যাইহোক মেয়ে কিন্তু মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর একদম শানের সাথে মানিয়ে গেছে।আমাদের রাজপুত্রের সাথে রাজকন্যা। কখনো শানকে কষ্ট দিও না। ”
আমি কিছু না বলে শুধু মাথা নাড়ালাম।
উনি আমার হাতে একটা উপহারের বাক্স ধরিয়ে দিলেন প্রথমে আমি নিতে না চাইলেও শ্বাশুড়ী মা বলায় নিতে বাধ্য হলাম। একে একে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো আমাকে। সবাই এতো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে আমাকে যে মনে হয় আমি কোনো ভিন্ন গ্রহের প্রাণী।
হঠাৎ একজন বলে উঠল,
“আচ্ছা তোমার বোন পালালো কেন?কোথাও কোনো চক্কোর আছে নাকি? বলা যায় না বর্তমানের ছেলে মেয়ে।”
কথাটা শুনে আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম কি বলবো বুঝতেছি না।
তখনই শানের বড় খালা বললো,
“বারবার ওর বোন পালিয়েছে বলিস কেন আমাদের ছেলেও তো পালিয়েছে। আমার মাথায় তো এটাই আসে না এমন একটা মিষ্টি মেয়েকে ফেলে আরশ পালালো কেমনে? ”
“যাই বলো আপু আমার কাছে কিন্তু ব্যাপারটা সুবিধার লাগছে না একই বিয়ে থেকে বরের ভাই আর বউয়ের বোন উদাও হয়ে গেল এর মধ্যে কোনো যোগসূত্র নেই তো। ”
কথাটা বলতেই আমি বিষম খেয়ে গেলাম। উফ এই টপিক নিয়ে আর ঘাটালে নির্ঘাত সবাই বুঝে যাবে যে এরা দুজন একসাথেই পালিয়েছে যেটা মোটেও সুখকর হবে না। তাই যেভাবে হোক বিষয়টা আটকাতে হবে কিন্তু কিভাবে?
তখনই প্রচন্ড জোরে হামি এলো আর ঘুমও পাচ্ছে।ঘুমেরও বা দোষ কি। কালকে রাতে সোফায় ভালো ভাবে তো ঘুমাতেই পারলাম না। তখনই একজন ভাবী বললো,
“নতুন বউয়ের খুব ঘুম পাচ্ছে বুঝি? কাল রাতে ভালো ঘুম হয়নি তাই না? ”
আমি কোনো দ্বিধা ছাড়াই বলে দিলাম,
“হুম। ”
তখনই সবাই খিলখিলিয়ে হেসে উঠল আরেকজন বললো,
“আরে ঘুমাবে কি করে শান তো কাল রাতে ঘুমাতেই দেয়নি। বেচারি বাচ্চা মেয়েটার উপরে কত অত্যাচার করেছে একটুও দয়া মায়া নেই। ”
আবার সবাই হাসতে লাগল। আল্লাহ এটা আমি কি করলাম একেই বলে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা। ঘুমের তাড়ণায় কি বলে ফেললাম।এখন মনে হচ্ছে এখান থেকে একছুটে পালিয়ে যাই।
তখনই আমার শ্বাশুড়ী মা বলে উঠলেন,
“উফ তোরা সব কি শুরু করেছিস। আমরা এখানে বড়রাও আছি সেটা কি ভুলে গেছিস। ”
শ্বাশুড়ী মায়ের ধমক শুনে সবাই মোটামুটি চুপ। আর আমিও এই অস্বস্তি থেকে রেহাই পেলাম ।
“সোহা চলো আমার সাথে। ”
বলেই আমার শ্বাশুড়ী মা ওনার সাথে নিয়ে গেলেন রান্নাঘরে।রান্নাঘরটা অনেক সুন্দর করে গোছানো। আমি তাকিয়ে দেখছিলাম তখনই শ্বাশুড়ী মা বললেন,
“আজকে তোমার রান্নার কথা ছিল। তবে হাতের যে অবস্থা মনে হয় না তুমি পারবে। তারচেয়ে আমি রান্না করছি তুমি এটা ওটা এগিয়ে দেও। ”
“না। সমস্যা নেই আমি পারব। ”
“একদম পাকা পাকা কথা বলো না কি পারবে না পারবে যেটা আমি বুঝব যেটা বললাম সেটা করো। ”
বলেই উনি একটা মুচকি হাসি দিলেন আর আমিও হাসলাম।
তারপর উনি রান্না করছিলেন আর আমি সব এগিয়ে দিচ্ছিলাম। তখনই ওনাদের বাড়ির কাজের মেয়ে কমলা এসে বললো,
“ভাবী এই লন আফনের ফোন। বসার ঘরে ফালাইয়া আইছেন। কেডা জানি ফোন দেয় বারবার। ”
আমি কমলার হাত থেকে ফোনটা নিলাম দেখলাম আননোন নাম্বার। একটু খটকা লাগতেই শ্বাশুড়ী মাকে বলে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আড়ালে চলে গেলাম।
★
★
★
“হ্যালো সোহা। কেমন আছিস? ঐদিকের খবর কি?”
আমি অভিমানি কন্ঠে বললাম,
“তোমাদের সাথে কোনো কথা নেই। তোমরা আমার সাথে এটা কেমনে করতে পারলা?”
“কি হয়েছে শালীসাহেবা এত রেগে আছো কেন? আমরা কোন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে এমন করেছি তুমি তো সেটা জানো?”
“হুম জানি। আর তোমরা যাওয়ার পর যে এখানে কতো কিছু হয়ে গেছে সেটা কি তোমরা জানো?”
“কি হয়েছে।”
তারপর আমি আপু আর আরশ ভাইয়াকে কালকের সবকিছু বললাম,
স্মৃতি আপু আর আরশ ভাইয়া দুজনেই চেঁচিয়ে বললো,
“হোয়াট?”
“হুম।”
“ভাইয়া আর তোমার বিয়ে হয়ে গেছে। আই কান্ট বিলিভ দিস।”
“আমি নিজেও বিশ্বাস করতে পারছি না তোমাকে কি বলবো।”
“স্যরিরে বোনু আমার জন্য তোর সাথে এমনটা হলো।”
আপু কান্না করে দিলো। তখনই আরশ ভাইয়া বললো,
“তুমি কেন কান্না করছ স্মৃতি। আমার ভাইয়া তোমার বোনের জন্য পারফেক্ট একজন মানুষ। অনেক খেয়াল রাখবে সোহার দেখো। ”
আমি আরশ ভাইয়ার কথায় বললাম,
“হ্যাঁ আপু তুই মন খারাপ করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে। ”
“তুই খুশি এই বিয়েতে?”
আপুর কথা শুনে কিছুক্ষন চুপ করে রইলাম।কি বলবো?এই বিয়ের পরিণতি কি সেটাই তো জানি না। এখন যদি না বলি নির্ঘাত আবার কান্নাকাটি করবে। তাই ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বে বললাম,
“হুম। ”
“তবে যাই বলো না কেন শালীসাহেবা আমি কিন্তু অনেক খুশি। তবে এখন তোমাকে কি ডাকব শালী না ভাবী। ”
আরশ ভাইয়া হাসতে লাগল।আমি রেগে বললাম,
“এটা মজা করার সময় না ভাইয়া তোমার ভাইয়ের সাথে আমি একমিনিটও থাকতে চাই না। বদ্ধ পাগল একটা। ”
কথাটা বলে পিছনে ঘুরতেই আমার চোখ চড়কগাছ। শান ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে। দেখেই মনে হচ্ছে রেগে আছে। কিন্তু শান ভাইয়া এখানে কেমনে?কখন আসলো? কিছু শুনে ফেলেনি তো?
আমি ফোনে বিরবির করে বললাম,
“আপু ফোন রাখ সর্বনাশ হয়ে গেছে।”
.
.
চলবে