এক শহর ভালোবাসা’ পর্ব-২১

0
1282

#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_২১
#সুরাইয়া_নাজিফা

“কি হয়েছে আমার পিছন পিছন ঘুরছো কেন একবার বললাম তো রুম থেকে বের হতে।”
আমি মন খারাপ করে বললাম,
“আমাকে দিন আমি ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছি। ”
“কোনো প্রয়োজন নেই আমারটা আমি করে নিতে পারব। তুমি তোমার কাজ করো। ”

“এতো রাগ করছেন কেন? বিশ্বাস করুন আমি আপনাকে অনেক আগেই মাফ করে দিয়েছিলাম। ফিরেও আসতাম বাট মা বললো যে আরেকটু ঘুরাতে। আমি প্রথমে রাজি ছিলাম না। কিন্তু পরবর্তীতে আপনার কাজ কর্ম দেখে কেন জানি আপনাকে জ্বালানোর লোভ সামলাতে পারলাম না। তাই আমরা শুধু একটু মজাই করছিলাম। আর কিছু না। ”

শান আমার দিকে ক্ষিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে তেড়ে আসল আমার দিকে। আমার বাম হাতের বাহু ওনার ডান হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে বললেন,

“অনেক মজা লেগেছে না। এটা মাথায় থাকে না তোমার মজা অন্যের কষ্টের কারণও হতে পারে। আমি এই গিল্টি ফিলিংয়ের জন্য ঘুমাতে পারছিলাম না যে আজকে আমার জন্য তুমি এতোটা কষ্ট পেয়েছো। আর তুমি আমার কষ্টটাকে নিয়ে মজা করছিলে। যাও তুমি তোমার মজা নিয়েই থাকো।আমার সাথে কথা বলাী দরকার নেই যাও। ”

কথাটা বলেই উনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে হাতটা ছেড়ে দিল। ওনার ধাক্কার কারণে আমি দু পা পিছিয়ে গেলাম। আমার চোখে জল ছলছল করছিলো।শাম আমার কাছ থেকে সরে গিয়ে সোফায় বসলো। তারপর ফার্স্ট এইড বক্স দিয়ে নিজেই নিজের হাতে তুলা দিয়ে পরিষ্কার করছে নিচের দিকে তাকিয়ে। আমার সাথে একটা কথাও বলছেন না। আমি উনার পাশে বসে এইবার উনার হাত ধরে বললাম,
“দেখি দিন আমাকে।কেন করছেন এমন। স্যরি বলছি তো?”

উনি আমার দিক থেকে হাত সরিয়ে আমার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকালেন,
“আমিও স্যরি বলেছিলাম বাট তুমি মাফ করেছিলে?তাহলে অন্য কারো কাছ থেকে কিভাবে আশা করো? ”

কথাটা বলেই শান আমার পাশ থেকে উঠে চলে গেলেন। আমার অনেক কান্না আসছিলো।নিজের ঠোঁট চেপে আমি আমার কান্না আটকালাম। নাহয় একটু মজাই করছিলাম তাই বলে এতো রাগ করতে হয়।


শান ছাঁদের এককোণে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে দুই হাত বুকে ভাজ করে দূর আকাশের দিকে। আকাশের বুকে একফালি চাঁদ দেখা যাচ্ছে যেটা মাঝেমাঝে মেঘের আড়ালে লুকিয়ে যাচ্ছে আবার ধরা দিচ্ছে। একরকম লুকোচুরি খেলা। হঠাৎ শানের পাশে একটা গাছের উপর নজর পড়ল।সেখানে দুইটা পাখি বসে কিন্তু কিছুটা দূরে দূরে। এই পাখি গুলো অনেকদিন যাবত এই গাছেই থাকে। মাঝে মাঝে ছাঁদে এলেই শান দেখতো পাখি গুলোকে একটা রোমান্টিক মুডে সবসময় একসাথে বাট আজকে দেখে শান একটু অবাক হলো কারণ পাখি দুটো অনেকটাই দূরে।কিছুক্ষন পর পাশের পাখিটা অন্য পাখির দিকে এগিয়ে গেল আর ডানা দিয়ে তাকে আগলে রাখতে চাইল কিন্তু পাখিটা বারবার ওর ডানার নিচ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল।শান খুব মনযোগ সহকারে দেখছে ওদের আর বেশ বুঝতে পারছে এদের মাঝেও হয়তো মান অভিমান চলছে।

“আমরা যাকে সবসময় যত্ন করে আমাদের বুকের মাঝে আগলে রাখতে চাই তারাই সবসময় আমাদের আগলানোকে অস্বস্তি অনুভব করে দূরে সরে যায়। কখনো আমাদের বুঝতেই পারে না। ”

কথাটা ভাবতেই শানের ভিতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। চারদিক ঘেকে কনকনে ঠান্ডা বাতাস গায়ে লাগছে। চট্টগ্রাম শহরেও এবার বেশ ভালোই শীত পড়েছে। শানেরও প্রচুর শীত লাগছে। রুমে গিয়ে একটা চাদর নিয়ে আসলে হয়তো ভালো হতো তাহলে। কিন্তু না এখন অভিমানটা শীতকেও ছাপিয়ে গেছে তাই যাবেনা রুমে। সোহার সাথে এখন কোনো কথা বলতো চায় না শান।

“কি ব্যাপার বেটা এতো ঠান্ডার মধ্যে ছাঁদে দাঁড়িয়ে তাও কোনো গরম কাপড় ছাড়া? ”

কন্ঠটা শুনেই শান নিজের পাশে তাকালো দেখল শানের বাবা দাঁড়িয়ে শান একবার দেখে ঘাড় ঘুরিয়ে নিয়ে বললো,
“এমনি ভালো লাগছিলো না তাই দাঁড়িয়ে আছি। তুমি এতো ঠান্ডার মধ্যে কেন ছাঁদে এসেছো। যাও রুমে গিয়ে রেস্ট নেও। ”
ইমতিয়াজ সাহেব কিছুটা ভাব নিয়েই বললো,
“কেন? তুমি কি আমাকে বুড়ো লোক মনে করো নাকি। তুমি যদি এই ঠান্ডার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে পারো আমি পারবো না কেন? এখনো আমি আর তুমি যদি একসাথে হেঁটে যাই সব মেয়েরা আমাকেই দেখবে এখনো এতটা সুদর্শন আছি হুম। ”

বাবার কথা শুনে মন খারাপের মাঝেও মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল।
“তাই তাহলে তোমার জন্য তো এবার মেয়ে দেখা দরকার। তোমাকে আবার বিয়ে দিয়ে দেই কি বলো?”

ইমতিয়াজ সাথেব আতকে উঠে বললো,
“মাথা খারাপ একজনের জ্বালাই সহ্য করতে পারিনা আবার আরেকটা। আমার মাথায় যেই চুল গুলো দেখছো না একটাও থাকবেনা তাহলে।”

শান হেসে বললো,
“ওহ মা তোমাকে এতো টর্চার করে তাহলে ছেড়ে দেও মাকে। ”

“উহুম এটা বলো না। ওটা আমি চাইলেও পারবো না।সে যেমনই হোক তাকে আমি ভালোবাসি।হয়তো একটু রাগি কিন্তু মনটা অনেক ভালো।মাঝে মাঝে রেগে থাকে আমার রাগ ভাঙায়, ফিরতে দেরী হলে অপেক্ষা করে রাতভর, কোনো ভুল দেখলে সেটা শুধরে দেয়। সে যাই করে তাতে কোথাও না কোথাও আমার জন্য ভালোই থাকে সেটা অস্বীকার করার কোনো পথ নেই। তাই আমার জন্য সেই ভালো। তাকে ছাড়া আর অন্য কাউকে কল্পনা করারও সম্ভব নয়। ”

নিজের বাবাকে মাঝে মাঝে বুঝতে পারেনা শান মায়ের সামনে সবথেকে বেশী বদনাম বাবা করে আর তার পিছনেই সব থেকে প্রসংশাও বাবাই করে। কি অদ্ভুত সম্পর্ক। কথা গুলো শুনে শানের সামনে সোহার মুখটা ভেসে উঠল। আচ্ছা ওর আর সোহার সম্পর্ক কি এমনই। সোহা কি ওর রাগ ভাঙানোর চেষ্টা আর করবে নাকি ওটুকুতেই আটকে থাকবে?সোহার মনে কি আধোও কোনো অনুভুতি আছে আমার জন্য নাকি সব দেখানো। তখনই ইমতিয়াজ সাহেব আবার বলে উঠল,

“সোহার সাথে অভিমান করেছো?”
শান নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো।অন্যদিকেই তাকিয়ে বললো,
“তোমার কফিটা কে বানিয়ে দিছে মা?
ইমতিয়াজ সাহেব কফির দিকে তাকিয়ে বললো,
“কথা এড়িয়ে যাচ্ছো। ”
শান কিছু না বলে চুপ করে রইল। ইমতিয়াজ সাহেব আবার বললেন,
“মেয়েরা একটু পাগলামি দেখতে পছন্দ করে। তাদের পিছনে নিজের প্রিয় মানুষটাকে ঘুরাতে পছন্দ করে। কারণ তারা দেখতে চায় তাদের জন্য তাদের প্রিয় মানুষটা কি কি করতে পারে। কখনো রাগ না হলেও রাগ করার অভিনয় করে শুধু একটু ভালোবাসা, অ্যাটেনশন পাওয়ার জন্য। তারা দেখতে চায় তাদের জন্য তার ভালোবাসার মানুষটা কতটা পসেসিভ।এটুকুতেই তাদের মুখে হাসি ফুঁটে উঠে। একটা মেয়ে আমাদের জন্য কত কিছু করে তার বিনিময়ে আমরা তো তার জন্য এটুকু করতেই পারি। সোহাও তো তার ব্যতিক্রম নয়। তুমি যতোই পাগলামি করছিলে সেটাই ওর মুখের হাসির কারণ ছিলো তাই সে আরো দেখতে চাইছিল তুমি তার জন্য আর কি কি করতে পারো এটা তো ভুল নয়।কেন বুঝতে পারছো না সোহা তোমাকে ভালোবাসে।”

বাবার কথা শুনে শান এখন উনার দিকে তাকালো। আর আনমনেই বলে উঠল,
“ভালোবাসে? ”
ইমতিয়াজ সাহেব হাসলেন,
“তা নয়তো কি?ভালো না বাসলে যদি এড়াতেই চাইতো তাহলে থুরি না একটা স্পিমল বিষয় নিয়ে তোমাকে আগে পিছে ঘুরাতো। এটুকু বুঝতে পারোনা।”

শানের চোখে মুখে হাসির ঝলক ফুটে উঠল।কিন্তু বিশ্বাস হলো না। ইমতিয়াজ সাহেব বললেন,
“কি রাগ পড়েছে তো? পড়লে এইবার গিয়ে মান অভিমান শেষ করো। বাবা অনেক ঠান্ডা লাগছে আমি আসছি। ”

শানের বাবা চলে গেল। শান আবার একইভাবে দাঁড়িয়ে রইল। এতো কথা বললো কিন্তু ওর মধ্যে তার কোনো প্রভাব পড়ল বলে মনে হলো না।


শানের জন্য,অনেকক্ষন অপেক্ষা করছি বাট আসার কোনো নামই নাই। অদ্ভুত এই রাতের বেলায় একটা গরম কাপড় না নিয়েই উনি চলে গেলেন ছাঁদে। আমিও যেতে চেয়েছিলাম তখনই দেখলাম বাবা যাচ্ছে তাই আর যাইনি। না জানি বাবার সামনে আবার কি বলে বসে। কিছুক্ষন পরই দেখলাম বাবা আসছে। তাই আমি দরজার আড়ালে চলে গেলাম। ভাবলাম হয়তো বাবার সাথে শানও আসবে। কিন্তু বাবা নেমে চলে গেলেন কিন্তু শানের কোনো খবর নাই। আমি আর অপেক্ষা না করে দ্রুত পায়ে ছাঁদে চলে গেলাম।

ছাঁদে গিয়ে দেখলাম উনি ছাঁদে দাঁড়িয়ে।শরীরে কি চামড়া না প্লাষ্টিক। এতো ঠান্ডার মধ্যে কেমনে দাঁড়িয়ে আছে কে জানে?আমি গিয়ে উনার পিছন থেকে চাঁদরটা গায়ে দিয়ে দিলাম। দিতেই উনি আমার দিকে ফিরে তাকালেন। তাকিয়েই কর্কশ কন্ঠে বলে উঠলেন,

“তুমি এখানে কেন এসেছো? ”
“কেন ছাঁদে আসা মানা বুঝি?”
“না মানা না। তবে আমার পিছনে কেন এসেছো? দেখতে পাওনি আমি আছি। এখন যাও পরে এসো। ”
“আপনার পিছনে আসিনি তো আমার চেয়েছে তাই আসছি।”

শান আমার দিকে রাগি চোখে তাকালো। আমি ঠোঁট টিপে খানিকটা হাসলাম। শান নিজের গা থেকে চাঁদরটা ফেলে দিয়ে অন জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালো। আমিও উনার পিছনে গেলাম,

“আচ্ছা আপনি আমার উপর রেগে আছেন তাহলে রাগ আমার উপরে দেখানো উচিত নিজের শরীরকে কেন কষ্ট দিচ্ছেন?”
“আমি একবারও বলিনি আমি তোমার উপর রেগে আছি? ”
“না বললেও আমি বুঝতে পারি। ”

শান কোনো প্রতিক্রিয়া দিলো না। আমি উনার আরেকটু কাছে এগিয়ে গেলাম। উনার মুখটা আমার হাত দিয়ে আমার দিকে ফেরালাম।
উনি বিরক্ত হয়ে বললেন,
“কেন বিরক্ত করছো আমাকে রুমে যাও। ”

আমি উনার সামনে কান ধরে দুই তিনবার উঠবস করলাম। শান আশ্চর্য হয়ে বললো,
“এসব কি করছো বাচ্চাদের মতো? ”
“কেন মাফ চাইছি? ”
শান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো বললো,
“পাগলি। ”

কথাটা বলেই পাশ কেঁটে চলে গেলেন। উনার পিছন পিছন আমিও গেলাম। উনি দ্রুত সিড়ি দিয়ে নেমে যাচ্ছে। আমি উনাকে পিছনে ডেকে বললাম,
“শুনুন না। ”

কিন্তু উনি আমার ডাক শুনছিলেন না। হঠাৎ দ্রুত নামতে গিয়ে এক সিড়ি বাঁদ দিয়ে পরের সিড়িতে পা দিতেই আমি পা পিছলে পড়ে যেতেই “আহ ” করে চিৎকার
দিলাম। কিন্তু হঠাৎ মনে হলো আমি পড়িনি। কারো শক্ত বলিষ্ঠ বাহু আমাকে ধরে নিয়েছে। কারণ আমার হাতের মুঠোয় তার শার্ট খামছে ধরে রেখেছি । আমি আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকাতেই শান রেগে বলে উঠল,
“চোখ নেই সাথে দেখে চলতে পারো না। এখনি পড়ে হাত পা ভাঙত। ”
আমি হেসে বললাম,
“আপনি আছেন তো সামলাতে কিছুই হতো না। ”
কথাটা বলতেই শান আমাকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে আবার নিজের মতো রুমে ডুকে গেল।
“আচ্ছা আমার এতে কেয়ার কটেন তারপরও কেন রাগ করে আছেন। এবার তো রাগ ঝেড়ে ফেলেন। ”
শান আমার কথায় কর্ণপাত না করে বিছানায় বসে বললে,
“লিসেন আমি এখন ঘুমাবো একদম বিরক্ত করবে না। ”

কথাটা বলেই উনি লাইটটা অফ করে শুয়ে পড়ল।আমার কান্না আসছিলো অনেক। আমি আর উপায় না পেয়ে বিছানার একপাশে বসে পড়লাম।


সকালে শান ঘুম থেকে উঠতেই আমি মুচকি একটা হাসি দিয়ে এগিয়ে গেলাম ওনার দিকে।
“আপনার কফি আমি নিজের হাতে বানিয়েছি। ”

ঘুম থেকে উঠেই সোহার এই মিষ্টি হাসি দেখে মনটা খুশি হয়ে গেল শানের।কিন্তু হঠাৎ শান সোহার এই অবতার দেখে চমকে উঠলো। আজ পর্যন্ত কখনো তো আনলো না আজ হঠাৎ।ওহ এটাও রাগ ভাঙানোর জন্য। শান সোহার কথা না শুনাট ভান করে পাশ কেঁটে চলে গেল। শান উঠে যেতেই আমি বললাম,
“কফিটা খেলেন না। ”
শান গম্ভীর হয়েই বললো,
“খাবো না। ”
“কিন্তু আপনি তো সবসময় কফি খান। ”
“সবসময় খেলেও এখন খাবো না। ”
“কেন? ”
“তোমাকে বলতে বাদ্ধ নই। ”
“তাহলে এটার কি করব এখন? ”
“ডাস্টবিনে ফেলে দেও তাহলেই হয়। ”

কাথাটা বলেই উনি চলে গেলেন।আমার বুক ফেঁটে কান্না আসছিলো এতো কষ্ট করে বানালাম আর উনি।আমি চোখের পানিটা মুছে মনে মনে বললাম,
” ওকে ব্যাপার না আমার নামও সোহা আপনার রাগ কেমনে না ভাঙে সেটাও আমি দেখব। ”

উনি ওয়াসরুমে গেলেন ফ্রেস হতে।আজকে উনি হয়তো আমার সাথে ঝগড়া করতে গিয়ে জামা কাপড় নিতে ভুলো গেছে তাই সেই সুযোগে আমি উনার জামা কাপড় ওয়ালেট, ঘড়ি, রুমাল সবকিছু বের করে বিছানায় সাজিয়ে রেখে রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম।

শান নিজের প্রতি নিজেই প্রচন্ড বিরক্ত হলো। কথায় কথায় জামা কাপড়ই আনতে ভুলে গেছে এখন বের হবে কেমনে। যদিও টাওয়াল পড়ে বের হওয়া যায় কিন্তু পড়ে ঐ মেয়ে আবার চিৎকার চেঁচামেচি না শুরু করে।শান আগে পিছে না ভেবে ভাবল একবার দেখে নেওয়া যাক রুমে আছে কিনা। ভেবেই একটা উঁকি মেরে দেখল। দেখতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো। শান বেরিয়ে এলো। কিন্তু বিছানার কাছে এসে অবাক হয়ে গেল। বিছানার উপর পর সব প্রয়োজনীয় জিনিস সুন্দর কটে সাজিয়ে রাখা। বুঝতে অসুবিধা হলো না সোহার কাজ। শানের মুখে এক চিলতে হাসি ফুঁটে উঠল,

“রাগ করলে এতো সুবিধা পাওয়া যায় জানা ছিলো না তো। ”

কিন্তু শান একটু ইগো দেখিয়ে জামা কাপড় গুলো না পড়ে নিজের পছন্দ মতো একটা পড়ে নিলো। কিছুক্ষন পর রুমে এসে শানকে দেখে প্রচন্ড রাগ হলো,

“এটা কি হলো?আপনার জন্য আমি যেই জামা কাপড় গুলো বের করলাম পড়লেন না কেন?”

“আমার ভালো লাগেনি তাই। ”

“ভালো লাগেনি মানে আপনি এখনি এটা চেন্জ করো ওটা পড়বেন। ”

“আমি একবার বলেছি মানে পড়ব না তখন পড়ব ন। একদম বিরক্ত করবে না। ”

কথাটা বলেই উনি ওনার প্রয়োজনীয় জিনিস গুছিয়ে চলে গেলেন। আমি ওখানেই স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।


শান যাওয়ার পর থেকেই আমি গালে হাত দিয়ে বসে আছি। মনটা একদমই ভালো লাগছে না। সারাদিনই এমন অগেছালোভাবে কেঁটেছে।কিভাবে যে ওনার রাগ কমবে আল্লাহ জানে। তখনই আমার মাথায় একটা আইডিয়া এলো। আচ্ছা শানের কোনো পছন্দের ডিশ বানাই। যেই ভাবা সেই কাজ।

আমি রান্নাঘরে গিয়ে শানের পছন্দের খাবার পায়েস বানাবো ঠিক করলাম। একটু মিষ্টি মুখ করিয়েই নাহয় রাগটা ভাঙাই। কিন্তু কিভাবে রান্না করবো কোনো আইডিয়া নেই।কারণ আম্মু বিয়ের আগে কখনো রান্নাঘরে আসতে দেয়নি। আর বিয়ের পর শ্বাশুড়ী মাও দেয়নি। তাই পড়লাম মহা ঝামেলায়। ইউটিউবটা ওপেন করে পায়েস রান্নার রেসিপিটা দেখে নিলাম আর ওই রকম ভাবেই রান্না করতে থাকলাম। যাক অনেক কষ্টে রান্নাটা শেষ করলাম। এখন বাকি শানের আসার।

সন্ধা ছয়টায় শান বাসায় এলো। শানকে দেখেই আমার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। শান রুমে গিয়ে চেন্জ করে একটু বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। তখনই আমি হাসি মুখে পায়েসের বাটি নিয়ে রুমে ডুকে গেলাম। পায়েসের বাটিটা সামনে এগিয়ে শানকে বললাম,
“খেয়ে দেখুন তো এটার টেস্ট কেমন হয়েছে? ”
শান চোখ মেলে আমাকে একবার দেখে বললো,
“খাবো না নিয়ে যাও। ”
আমি বায়না করে বললাম,
“প্লিজ একটু। ”
শান এইবার রেগে বললো,
“একটা কথা কয়বার বলতে হয় তোমাকে বললাম তো খাবো না নিয়ে যাও।”
ওনার কথা শুনে আমার এখন প্রচুর কান্না পেলো। আমি কান্না করে বললাম,
“কালকে থেকে আপনি এমন করছেন কেন?একটু মজাই তো করেছি এমন কি? তাও ভুল হয়েছে তাই স্যরি বলেছি বাট তাও আপনি আমার কথাটা মানছেন না।এতো এটিটিউড দেখাচ্ছেন কেন? আজকে প্রথম আমি আমার হাত পুরিয়ে আপনার জন্য রান্না করেছি আর আপনি একটু ছুয়েও দেখলেন না। ”

আমার কথাটা শুনেই শান দ্রুত উঠে বসল,
“হাত পুড়েছে মানে কোথায় দেখি?”
“না দেখতে হবে না। দেখে কি করবেন আমি তো আপনার শত্রু। ”
শান রেগে বললো,
“একদম এক্সেস কথা বলবে না হাতটা দেখি। ”
বলেই আমার হাতটা টেনে নিলেন। পায়েস রান্না করতে গিয়ে হালকা ভাঁপে হাতটা একটু লাল হয়ে গেল। শান বক্স থেকে ঔষুধটা বের করে আমার হাতে একটু মলম লাগিয়ে দিলো আর আমাকে বকতে বকতে বললো,
“যে কাজ পারো না সেটা করতে যাও কেন। আর কখনো যেন তোমাকে আমি রান্নাঘরে যেতে না দেখি। ”
আমি কান্না করতে করতে বললাম,
“যাবো। যদি মাফ না করেন তাহলে আমি আপনার কথা শুনবো না। ”
শান আমার চোখের পানি মুছে বললো,
“মাফ করলে খুশি?”
“অনেক খুশি। ”
শান হেসে বললো,
“ওকে যাও মাফ করে দিলাম। ”
“তাহলে একটু আমার রান্না করা পায়েসটা খান। ”
শান পায়েসটা এক চামচ মুখে দিয়ে বসে রইল আমি বললাম,
“কি হলো ভালো হয়নি? ”
“ওয়াও খুব ভালো হয়েছে। এই প্রথম বউয়ের হাতে রান্না খাওয়ার সৌভাগ্য হলো। আমি তো ভেবেছিলাম কখনো হবেই না কারণ আমার বউ তো কিছুই পারত না। বাট আগে যদি জানতাম রাগ করলে এতো তাড়াতাড়ি রান্না খাওয়ার সৌভাগ্য হবে তাহলে অনেক আগেই রাগ করতাম। তবে প্রবলেম নাই এখন থেকে মাঝে মাঝে এমন রাগ করব। ”
উনার কথা শুনে আমি আঁতকে উঠলাম,
“না প্লিজ আর রাগ করবেন না। আমি সামলাতে পারবো না। আপনার রাগ অনেক ভয়ংকর। ”
কথাটা বলতেই শান খিলখিলিয়ে হেসে দিল। এতক্ষন পর উনাকে মন খুলে হাসতে দেখে আমি একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলাম।


রকিং চেয়ারে বসে আছে রায়ান। ওর কিছু ভালো লাগছে না। ও কিছুতেই আজকে শানের বলা কথা মেনে মিতে পারছে না। সোহা কিছুতেই অন্যকারো হতে পারে না। রায়ান সোহার ছবির দিকে তাকালো,

“নো সোহা তুমি কিছুতেই অন্যকারো হতে পারোনা তুমি আমার ছিলো আর আমারই থাকবে সেটা যেকোনো মূল্যে।”
.
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here