এক শহর ভালোবাসা’ পর্ব-২৪

0
1256

#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_২৪
#সুরাইয়া_নাজিফা

“আরশের কন্টাক্ট নাম্বারটা দিও তো।”
আমি ঘুম থেকে উঠে হঠাৎ শানের মুখে এমন কথা শুনে চমকে উঠলাম।শান আমার পাশে বসে ল্যাপটপের দিকেই চেয়ে আছে।আমি মুখ হা করে বললাম,
“কথাটা কি আপনি আমাকে বলেছেন? ”
“এখানে তুমি ছাড়া তো আমি আর কাউকে দেখতে পাচ্ছি না তাহলে তোমাকেই বলব। ”
আমি দুই তিনবার চোখ পিটপিট করে উনার দিকে তাকালাম। এক অঙ্গে কত রূপ আল্লাহ জানে। আগে তো জানতাম মেয়েদের মুখে একরকম থাকে আর মনে। ছেলেরা সবসময় স্ট্রেট ফরওয়ার্ড আর এই লোকটা! কালকেই রাতে আমার সাথে কথাই বলছিলো না আর আজ নিজেই ইচ্ছা করে আরশ ভাইয়ার নাম্বার চাচ্ছে স্ট্রেঞ্জ।

আমি বললাম,
“হঠাৎ কেন?”

এইবার শান মাথাটা উপরে তুলে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“কেন মানে? আরশ আর স্মৃতি এই বাড়িতে ফিরে আসুক সেটা চাও না? আমার হেল্প লাগবে কি লাগবে না ? ”

ব্যাস এই কথাটাই শুনার বাকি ছিল।আমি ধপ করে আবার বেডে শুয়ে পড়লাম। শান বিরক্ত হয়ে বললো,
“এসব কি করছো বাচ্চাদের মতো। ”

আমি বিরবির করে বলে উঠলাম,
“কি করব আপনার কাজ কারবার দেখলে মাঝে মাঝে আমার মাথাটাই ঘুরে উঠে। অদ্ভুত প্রাণী।”

আমি উনার কথা শুনে আস্তে করে শোয়া থেকে উঠে বসলাম,
“কিছু না।কিন্তু আপনি আমাদের হেল্প করবেন কেন?”
“কালকেই তো বলছিলে হেল্প করার জন্য। ”
“হুম কিন্তু কালকে তো আপনি আমার কথাই শুনতে চাননি তাহলে আজ কি হলো?”

শান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
“হুম শুনতে চাইনি কিন্তু তুমি ছাড়লে কোথায় জোর করে শুনিয়েছো তো সেটা শুনেই মনে হলো যে একটা হেল্প করাই যায় আফটার অল প্রিয় মানুষ বলে কথা তোমরা আমার সাথে যা করেছো সেটা আমি তোমাদের সাথে করলে পার্থক্য কোথায় থাকলো। ”

উনার এমন খোঁচা দেওয়া কথা শুনলে মাথাটা গরম হয়ে যায়। কাল রাতে বুঝালাম কি আর বুঝল কি। আমি মুখ গোমড়া করেই বললাম,
“আমার কোনো দোষ ছিল না। আর এখানে দোষ কারোরই নেই এটা একটা পরিস্থিতির চক্র ছিলো যেটা আমাদের সবাইকে এমনটা করতে বাধ্য করেছে। ”

“হুম জানি তাই তো হেল্প করতে চাইছি তবে তোমাদের প্রতি আমার রিয়েকশনটাও ভুল ছিল না।তোমার সাথে এমনটা হলে তোমার কেমন লাগতো সেটা একটু ভেবে দেখো। যাইহোক আরশের কথা নাহয় বাদ দিলাম বাট তুমি? তুমি হয়তো কখনো আমাকে কাছের মানুষই ভাবোনি তাই কথাটা আমার সাথে শেয়ার করতে পারোনি। ”

আমি মন খারাপ করে বললাম,
“আমি আপনাকে কালকে রাতে বলেছি সব আমি….। ”
আমি পুরো কথা বলার আগেই শান আমার কথা কেড়ে নিয়ে বললো,
“কি যে তুমি বলার চেষ্টা করেছো বাট আমি শুনিনি এটাই তো?আচ্ছা তখন নাহয় শুনিনি এরপর তো তোমার সাথে আমার কথা হয়েছে দেখা হয়েছে তখন কেন বলোনি?”

আমি মাথানিচু করে রইলাম। শান আমার কাছে এসে উনার একহাতে আমার থুতনিতে হাত দিয়ে মুখটা উপর উঠালো,

“চোখ নিচে নয়। চোখে চোখ রেখে কথা বলাটা উচিত।”
আমি কাঁপা কন্ঠে বললাম,
“স্যরি।”
শান মাথা নেড়ে বললো,
“দরকার নেই। তবে একটা কথা দিতে হবে আমায়? ”
আমি ধীর কন্ঠে বললাম,
“কি?”
“এরপর থেকে আর কোনো কথা আমার থেকে লুকাবে না সেটা যেমনই হোক মনে থাকবে?”

আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালাম। শান বললো,
“শুধু মাথা নাড়ালে হবে না প্রমিজ করতে হবে। ”
“বললাম তো বলবো আবার প্রমিজ করতে হবে কেন?”
“কেন আবার তুমিও তো করাও আমার থেকে এমনটা সবসময় তো আমি করবো না কেন?”
আমি অবাক হয়ে বললাম,
“তো আপনি আবার কবে থেকে এমন বাচ্চাদের মতো বিহেভ করছেন?”
“যবে থেকে তোমার মতো একটা বাচ্চা মেয়ের সাথে সারাজীবনের জন্য আটকা পড়েছি তবে থেকে। ”
উনার কথা শুনে আমি খিলখিলিয়ে হেসে উঠলাম,
“আচ্ছা প্রমিজ। ”

তারপর আমি ফোনটা হাতে নিয়ে কন্টাক্ট নাম্বারে গিয়ে আরশ ভাইয়ার নাম্বারটা শানকে দিয়ে দিলাম।
“আচ্ছা কিভাবে কি করবেন?”
“সেটা তুমি আমার উপর ছেড়ে দেও।তবে তোমাদের হেল্প করলে আমি কি পাবো?”
আমি আশ্চর্যান্বিত হয়ে বললাম,
“নিজের ভাইয়ের হেল্প করবেন তাতে আবার কিছু লাগবে কেন?”
উনি মুচকি হেসে বললেন,
“না আমার লাগবে। এমনি এমনি কারো জন্য কিছু করতে পারবো না। ”
“আচ্ছা বলুন কি চাই? ”
“যা চাই দেবে তো?”
উনি আমার দিকে তাকিয়ে দুষ্টমির হাসি দিলেন। আমি ভ্রু কুচকে সরু চোখে তাকিয়ে বললাম,
“কি চাই? ”

উনি আস্তে আস্তে আমার দিকে এগিয়ে আসলেন। আমি একটু পিছিয়ে গেলাম। উনি আরেকটু এগিয়ে আসলেন আমি আরো পিছেয়ে গেলাম আর পিছাতে গিয়েই বেডে শুয়ে পড়লাম। শান আমার কাছে এসে আমার পাশে একহাতে ভর দিয়ে শুয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো আমি ভয়ে তাড়াতাড়ি চোখটা বন্ধ করে নিলাম। আমার হার্টবিট অস্বাভাবিক হারে বাড়ছিলো। নিঃশ্বাস নেওয়াটাও কষ্ট কর মনে হচ্ছিলো। শান একহাতে আমার সামনে পড়ে থাকা চুল গুলো আলতো হাতে সরিয়ে দিলো। আর কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,

“আমার সাথে লং ড্রাইভে যেতে হবে এবং এখন থেকে উনি, আপনি না বলে আমার নাম ধরে ডাকতে হবে। ”

উনার কথা শুনেই আমি উনার দিকে চোখ বড়বড় করে তাকালাম তারপর উনাকে ধাক্কা দিয়ে আমার উপর থেকে সরিয়ে দিলাম।আমি উঠে বসে লম্বা শ্বাস নিলাম,

“হুম তা নাহয় গেলাম কিন্তু কথায় কথায় এভাবে হুটহাট কাছে চলে আসা এটা তো ঠিক না। ”

কথাটা বলতে না বলতেই শান আমার হাত টেনে উনার বুকের উপর নিয়ে আসল।
“বেঠিকেরই বা কি আছে? ”

উনি আমার দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে। আর আমি উনার দিকে তাকিয়ে। কিন্তু বেশীক্ষন পারলাম না উনার চোখে যেনো কি আছে যেটা আমাকে টানে বড্ড টানে উনার দিকে। উনার থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম,
“উফ কি করছেন বলুন তো ছাড়ুন আমাকে। ”
আমি উনার উপর থেকে উঠার চেষ্টা করতেই উনি আমাকে উনার দুই হাতদিয়ে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলেন,
“সবসময় এতো ছটফট করো কেন বলোতো? আমি ধরলে প্রবলেম কোথায়? ”
আমি ছোটার চেষ্টা করে বললাম,
“অনেক প্রবলেম ছাড়ুন আমাকে? ”

তখনই শান আমাকে নিচে ফেলে দিয়ে উনি আমার উপর চলে আসলেন।
“কি প্রবলেম আগে বলো যদি সুইটেবল হয় ছেড়ে দিবো। ”
আমি অসহায় ভাবে তাকিয়ে বললাম,
“আমার কাজ আছে কিচেনে যেতে হবে দেরী হলে কে কি ভাববে ছাড়ুন প্লিজ।”
“কে কি ভাবল তাতে কি আসে যায় আমরা হাজবেন্ড ওয়াইফ একসাথে থাকলে দেরী হতেই পারে। ”

উনি আমার দিকে তাকিয়ে হেসে হেসে কথা গুলো বলছিলেন। আমি বেশ বুঝতে পারছি এসব উনি আমাকে লজ্জায় ফেলার জন্যই বলছে। আমি কঠোর গলায় বললাম,
“এইবার কিন্তু বেশী বেশী হচ্ছে।মজা করছেন কেন?”
“আমি সত্যি কথা বলেছি মজা করব কেন?”
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,
“উফ প্রশ্নের পরিবর্তে প্রশ্ন করছেন কেন? ছাড়ুন আমাকে।”

উনি তারপরও আমাকে একইভাবে ধরে রেখেছে। আর আমার চুলগুলো নিয়ে খেলা করে যাচ্ছে। এদিকে আমি যে চেঁচিয়ে যাচ্ছি সেটা উনার কানেই যাচ্ছে না যেন।
“কি হলো আপনি শুনতে পাচ্ছেন কি আমার কথা? ”
শান এইবার আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“শুনবো যদি উনি, আপনি বাদে ডাকতে পারো? ”
আমি চোখ ছোট ছোট করে বললাম,
“উনি আপনি বাদে ডাকবো কি করে?”
“কেন আমার কি ডাকার মতো কোনো নাম নেই? ”
“তো আপনার নাম ধরে ডাকি তো সবার সামনে আর কি করব? ”
“কই কখন বলেছো আমি তো শুনিনি কখনো? ”
“এখন কি আপনাকে শুনিয়ে বলতে হবে?”
“হুম হবে। ”
“পারবনা। আমি আগেই বলেছি আপনার সামনে আপনাকে নাম ধরে ডাকতে পারব না।আপনি কত বড় আমার। ”
শান অবাক হয়ে বললো,
“তো তাতে কি হয়েছে? ”
“বড়দের নাম ধরে ডাকলে আল্লাহ পাপ দেয়।”
শান আমার কপালে কপাল ঠেকিশে অভিমানি কন্ঠে বললো,
“আমি কি বললাম আর তুমি কি বলছো?তুমি এমন কেন বলোতো তোমার থেকে পুষ্পও অনেক ভালো বুঝে। ”
“ছাড়ুন তো।”
“ছাড়ব আগে বলো শান আমাকে ছাড়ুন তার পরই ছাড়ব। ”
“বলবো না। ”
“ওকে তাহলে আমি ছাড়বও না। ”

বলেই আমার বুকের উপর শুয়ে পড়ল আজব। উনার গরম নিঃশ্বাস আমার শরীরে লাগতেই আমি কেঁপে উঠছিলাম।আমি কাঁপা কন্ঠে বললাম,
“আচ্ছা বলছি আগে উঠুন। ”
“নো আগে বলো। ”
আমি কোনো উপায় না পেয়ে তুতলিয়ে বললাম,
“শান আমাকে ছাড়ুন। ”
কথাটা বলতেই উনি মাথা তুলে আমার দিকে তাকালেন,
“কি বললে আবার বলো।”
“কানা নাকি একবার বললাম তো। ”
“একবার যখন পেরেছো দ্বিতীয়বার বলতে কি সমস্যা।”
উনার সাথে তর্ক করাটাও বেকার। আমি অসহায় হয়ে বললাম,
“শান আমাকে ছাড়ুন প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ। ”
“উফ এতো মিষ্টি করে বললে কেউ না ছাড়বে কিভাবে? আরো শক্ত ধরে জড়িয়ে রাখতে ইচ্ছা করছে। ”
আমি রেহে বললাম,
“আপনি কিন্তু চিটিং করছেন।এটা ঠিক না। ”
শান বিরক্ত হয়ে বললো,
“উফ এতো কথা বলে আমার মুডটার বারোটা বাজিয়ে দিছো। যাও আজকের মতো ছেড়ে দিলাম। ”

কথাটা বলেই উনি আমার গালে গভীর ভাবে একটা কিস করলেন। আমি নিজের চোখ বন্ধ করে নিলাম। মনের মধ্যে ঝড় বয়ে ঝাচ্ছিল।সব যেন এলোমেলো করে দিচ্ছিলো। নিঃশ্বাস দ্রুত গতিতে পড়ছিলো। হঠাৎ উনি এমনটা করে বসবেন বুঝতেই পারিনি। কিছুক্ষন পর উনি আমাকে ছেড়ে দিলেন। উনি ছাড়তেই আমি এক লাফে উঠে নিচে নেমে ওনার থেকে অনেকটা সরে গেলাম। উনি ওভাবেই শুয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছিলেন। আমি দরজার কাছে এসে উনাকে ইঙ্গিত করে বললাম,
“আপনার মতো এমন বেসামাল আর অসভ্য লোক আমি একটাও দেখিনি। ”
শান হেসেই বললো,
“নিজের বউয়ের কাছে এমন একটু বেসামাল আর অসভ্য হতে ক্ষতি নেই বরং লাভই হয়। ”
উনার কথা শুনে আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম উনাকে মুখ ভেঙিয়ে এক দৌঁড়ে নিচে চলে গেলাম।


ঐশী চুপচাপ বসে আছে একটা পার্কে। আশেপাশে তেমন কোনো মানুষ নেই দূরে দূরে কয়েকটা কাপল দেখা যাচ্ছে আর কিছু বাচ্চারা খেলছে। ঐশী বাচ্চাদের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তখনই কেউ এসে ঐশীর পাশে বসে চকলেট এগিয়ে। ঐশী সেই ব্যাক্তির দিকে তাকিয়ে আছে ওর মুখে হাসি ফুটে উঠল।ঐশী হাত বাড়িয়ে চকলেট নিয়ে নিলো। একটু অভিমানি কন্ঠে বললো,

“কতক্ষণ ধরে ওয়েট করছি কোথায় ছিলে তুমি তিমির? ”
তিমির কানে হাত দিয়ে ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিতে বললো,
“স্যরি আসলে তোমার চকলেট খুজতে খুজতে লেইট হয়ে গেছে।তবে অপেক্ষা করা ভালো কারণ অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয়। ”
ঐশী বিষ্মিত হয়ে বললো,
“মিষ্টি?”
তিমির ইশারায় বললো,
“চকলেট। ”

তিমিরের কথা শুনে ঐশী খিলখিলিয়ে হেসে দিলো। ঐশীর হাসির দিকে তিমির মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো।ঐশীর মুখে হাসির একমাত্র কারণ তিমির। অবাক হচ্ছেন না যে মেয়েটা তিমিরের সাথে কথা বলতেই পছন্দ করত না সেখানে এতো সুন্দর হেসে হেসে কথা বলছে? আসলেই অবাক হওয়ার মতো।এই তিনমাসে ঐশী আর তিমিরের সম্পর্কটা ভালোবাসাময় হয়ে গেছে। ঐশী যখন অসুস্থ ছিল তিমির তখন সর্বস্ব দিয়ে ঐশীকে সুস্থ করে তুলেছে। কখনো ঐশীকে হার্ট করেনি।ঐশীর যত্ন করেছে। খেয়াল রেখেছে। যদিও তিমির ততদিনে বুঝতে পেরেছিল যে ঐশী শানকে পছন্দ করত। তাই এতো কষ্ট পাচ্ছে। তিমির সবসময় ঐশীকে সেই কষ্ট থেকে বের করতে চেয়েছে। খুব সুন্দর ভাবে ঐশীর মনটাকে জয় করেছে। কিন্তু কখনো কিছু জানতে চেয়ে ঐশীকে কষ্ট দেয়নি। না তিমির এতোসব কিছু পাওয়ার জন্য করেনি। তিমিরতো এমন নাম যে নিঃস্বার্থ ভাবে শুধু ভালোবাসার মানুষটাকে ভালো রাখার জন্য করে গেছে।সেটা রিটার্ন পাওয়ার জন্য নয়। হুম তিমির ভালোবাসে ঐশীকে এই কয়দিন ঐশীর সাথে থাকতে থাকতে বুঝেছে যে ঐশীর জন্য ওর অনুভুতি গুলো ভালোবাসা।তবে ঐশী কি ওর ভালোবাসা কি কখনো গ্রহন করবে সেটা ভেবেই কখনো বলা হয়নি।

আর ঐশী সে তো এখন তিমিরকে ছাড়া চলতেই পারে না। তিমির পাশে না থাকলে কিছু ভালো লাগে না। এই তিমির নামক মানুষটাই ওকে ডিপ্রেশন থেকে বের করেছে। শানকে ভুলতে সাহায্য করেছে। ঐশী ভাবতেই পারছে না শানকে জীবন থেকে হারিয়ে যখন নিজেকে নিঃস্ব মনে হচ্ছিল। নিজের জীবনটা শেষ করে দিতে চাইছিল তখন যদি সত্যিই সেই কাজটাতে সফল হয়ে যেত তাহলে হয়তো এই নামক ভালো মানুষের সাথে দেখাই হতো না।জীবনের কত ভালো সময় সুখ থেকে বঞ্চিত হতো।জানাই হতো না জীবনটা কতো সুন্দর। তাই জীবনে যে কোনো জিনিসের জন্যই বিফল হলেও কখনো এমন ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক না। কারণ সেই খারাপ সময়টা জীবন থেকে যাওয়ার পর জীবনে যতটা সুখ ধরা দেয় তার পরিমাপ কখনো করা যাবে না। তিমির ঐশীর জীবনে এসেছে এক আশীর্বাদ হয়ে যে ওকে আবার নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছে। তবে শানকে পুরোপুরি ভুলে গেছে সেটা বলা যাবে না।কারণ প্রথম ভালোবাসা কখনো ভোলা যায় না। সেটা যেমনই হোক। এখন ও শানের কথা মাঝরাতে একা থাকলে মনে হয় কিন্তু সেটা স্থায়ী হয় না। সেখানে হৃদয়ের পুরোটা অংশ জুড়ে তিমির রয়েছে। তিমিরের যত্ন, ওকে আগলে রাখা, সবথেকে বেশী সব কাজের পর ওকে সময় দেওয়া, ঘুরতে নিয়ে আসা,ওর একাকিত্ব দূর করা যেটা ওর জীবনে সবচেয়ে বেশী অভাব ছিল। এই কয়েকমাসে সব অভাব পূরণ করেছে তিমির । আস্তে আস্তে তিমিরের প্রতি ঐশী দূর্বল হয়ে পড়েছে হয়তো ভালোবেসে ফেলেছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেটা মুখ ফুটে বলতে পারেনি।ভয় হয় যদি শানের মতো তিমিরও দূরে সরে যায়।তাই নিজের অনুভুতি গুলো নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছে।

তখনই ঐশীর ফোনে রিং হওয়ার শব্দে ঐশীর ঘোর কাঁটে। ফোনটা রিসিভড করে কানে দিয়ে ঐ পাশ থেকে কারো কথা শুনেই চিৎকার করে বললো,

“কোনো প্রয়োজন নেই বাবা তোমার আসার। এখানের কাজ আমি সামলে নেবো। আমি সারাজীবন একা থেকেছি এখনও পারবো। শুধু টাকা পয়সা দিলেই সন্তানের প্রতি বাবা মায়ের দায়িত্ব শেষ হয়না। আজ আমার জন্মদিন ছিল আর আজ তুমি আমাকে একবার ফোনেও উইশ করলে না। কেমন আছি সেটাও জানতে চাইলে না। চাই না আমার তোমার থেকে কিছু রাখো ফোন। ”

ফোনটা ছুড়ে ফেলে দিলো।তিমির একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল এই তিনমাস ধরে এটাই দেখে আসছে কিন্তু ঐশীকে কখনোই জিজ্ঞেস করেনি। ও বুঝতে পারেনা ঐশীর বাবার সাথে ওর এতো অভিমান কিসের। ওর বাবার কথা বললেই ও কখনো কথাই বলতে চায় না ভালো করে। ঐশী বলতে চায়না তাই ও কখনো জোড়ও করেনি। তিমির ঐশীর আরেকটু কাছে গিয়ে বসল। ঐশীর কাঁধে হাত রাখতেই ঐশী তিমিরকে জড়িয়ে ধরল। এখন ওর একটা ভরষার হাত চাই যাকে ধরে একটু কাঁদতে পারবে। নিজের কষ্ট শেয়ার করতে পারবে। তিমির ঐশীর অবস্থা বুঝতে পেরে ঐশীর মাথায় হাত বুলিয়ে ওকে শান্ত করতে থাকে।

“প্লিজ ঐশী চুপ হয়ে যাও আশেপাশে মানুষ দেখছে। ”

ঐশীর কান্না তবুও থামছে না। ঐশী কাঁদতে কাঁদতে বললো,
“একটু কাঁদতে দেও তিমির মনের মধ্যে অনেক কষ্ট জমে আছে যেটা আমি এই কান্নার মাধ্যমে মন থেকে ধুয়ে ফেলতে চাই। ”
বলেই আবার কাঁদতে লাগলো। তিমিরের শার্ট ভিজিয়ে ফেলেছে। কিছুক্ষন পর ঐশী একটু শান্ত হলো। তিমির পানি এগিয়ে দিলো। ঐশী পানিটুকু মুখে দিলো। কিছুক্ষন দুজনেই চুপ।
হঠাৎ ঐশী বলে উঠল,
“আচ্ছা তিমির তুমি কখনো কেন জানতে চাও না কেন আমি বাবার সাথে এমন ব্যবহার করি?”
ঐশীর কথা শুনে তিমির স্বাভাবিকভাবে বললো,
“তুমি কখনো বলতে চাওনি এড়িয়ে গেছ তাই জিজ্ঞেস করিনি। ”
ঐশী অন্যদিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
“ছোট বেলায় আমার মা মারা যায়।এরপর থেকেই আমি একা হয়ে পড়ি। মা মারা যাওয়ার পর বাবা কখনো আমায় দিতোনা। সবসময় দূরে দূরে থাকতেন আমার থেকে।নিজের বিজন্যাস, সমৃদ্ধি এসব নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন। আমার দিকে ফিরে থাকানোরও সময় হতো না তার। সার্ভেন্টদের হাতে বড় হই। কখনো খেলে বা না খেলেও কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করত না আর না কেউ মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিত।অসুস্থ হলেও কেউ পাশে বসে শরীরের অবস্থা জানতে চাইতো না ।”

ঐশীর কন্ঠে অনেক অভিমান সাথে গলা ধরা ভাব। ঐশী একটু থামলো। অনেক কষ্ট হচ্ছে তারপরও বলতে হবে যদি একটু ভালো থাকা যায় ঐশী আবারও বলতে শুরু করল,

” স্কুলে যখন সবার বাবা মা সবাইকে নিতে আসত বাচ্চারা কত খুশি হতো কিন্তু আমি তখন একপাশে দাঁড়িয়ে অশ্রু বিসর্জন করতাম।চার দেয়ালে বন্দি ছিলাম। একদম একা ছিলাম আমি। কারো সাথেই কথা বলতাম না। না কেউ আমাকে বুঝত। সবসময় অপেক্ষা করতাম বাবার জন্য কখন বাবা আসবে দুটো কথা বলবে। বাবার সাথে জীবনের কিছু কথা শেয়ার করব কিন্তু কখনোই আমার সেই ইচ্ছাটা পূরণ হয়নি। সবসময় অবহেলা পেয়েছি। তাই এখন আর অপেক্ষা করি না আর না কোনো এক্সপেকটেশন রাখি। এখনও বাবা সেই ব্যস্ত রয়েই গেছে। দেখোনা আজ আমার জন্মদিন কিন্তু না একটা উইশ আর না একটু ভালো কথা। উনার প্রয়োজন না হলে উনি কখনোই আমার সাথে কথা বলেন না। হয়তো ভুলেই গেছেন আমার জন্মদিনের কথা। দুইহাতে টাকা উড়িয়েছি শুধু একটু সুখের জন্য বাট সেটা কখনোই হয়নি। কারণ আমরা চাইলেও কখনো টাকা দিয়ে তো সুখ কিনতে পারি না।আমি জীবনে সবসময় একটু সুখের অভাব রয়েই গেছে। না কখনো বাবার ভালোবাসা পেয়েছি আর না নিজের ইচ্ছা মতো ভালোবাসার মানুষ। জীবনে যা পেয়েছি তার চেয়ে বেশী হারিয়েছি। একটু ভালোবাসার কাঙাল আমি প্লিজ তিমির তুমি কখনো আমায় ছেড়ে যেও না তাহলে আমি হয়তো মরেই যাবো। ”

কথাটা বলেই ঐশী আমার কান্নায় ভেঙে পড়ল। তিমিরের চোখ দিয়েও এতক্ষনে অশ্রুধারা বয়ে যাচ্ছিল ঐশীর কথা শুনে। এই মেয়েটা সবসময় নিজেকে এতো হাসি-খুশি, স্ট্রং দেখাতে চায় সেই মেয়েটার জীবনে হাসির আড়ালে এতো কষ্ট লুকিয়ে ছিল সেটা কখনোই বুঝতে পারেনি তিমির।এতো স্ট্রং মেয়েটা যে এভাবে তিলে তিলে ভিতর শেষ হয়ে যাচ্ছিল সেটাও বুঝতে পারেনি। ভাবতেই অন্তরের ভিতরটা হুহু করে উঠল। তিমির নিজের চোখের পানি মুছে নিলো।ঐশী এখনো কেঁদে যাচ্ছে। তিমির ঐশীর হাতের উপর হাত রাখল। সাথে সাথে ঐশী তিমিরের দিকে ছলছল চোখে তাকালো।

তিমির বললো,
“কথা দিচ্ছি এখন থেকে তোমার চোখে কখনো পানি আসতে দেবো না। সবসময় হাসবে তুমি আজ থেকে। সবসময় পাশে থাকবো তোমার যতই কঠিন মুহূর্ত আসুক না কেন কখনো ছেড়ে যাবোনা। আজ থেকে তোমার জীবনে একটা নতুন অধ্যায় শুরু হবে নতুন করে যেখানে শুধু সুখ আর ভালোবাসাই থাকবে। এতোটা সুখ থাকবে যেটা তুমি পরিমাপও করতে পারবেনা। ”

তিমিরের কথায় আস্বস্ত হলো ঐশী। এখন এমন একটা মানুষের খুব দরকার ছিলো যে সবসময় শক্তি হয়ে পাশে থেকে আত্মবিশ্বাস বাড়াবে ঘুরে দাঁড়ানোর।এই হাত কখনোই ছাড়তে চায় না ঐশী কখনো না। ঐশীও নিজের দুইহাত দিয়ে তিমিরের হাতটা শক্ত করে আকড়ে ধরলো।
.
.
চলবে

বিঃদ্রঃ আমি একটু অসুস্থ থাকার কারণে কিছুদিন ধরে নিয়মিত গল্প দিতে পারছি না। না দিতে পারলেও সেটা আমি সবসময় গল্পের শেষে বলেদি । তারপরও অনেকে বলেন একদিন পর পর কেন দেই? অনেকেই অপেক্ষা করেন। আমি বুঝতে পারিনা আপনারা কি নিচের লেখাটা পড়েন না 😢😢😢😢।যাইহোক এখন একটু ভালো আছি কালকে থেকে গল্প নিয়মিত দেওয়ার চেষ্টা করবো। গল্পটা কেমন হয়েছে জানাতে ভুলবেন না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here