এক শহর ভালোবাসা’ পর্ব-২৭

0
1206

#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_২৭
#সুরাইয়া_নাজিফা

উনি আমার শরীর থেকে সম্পূর্ন ব্লাঙ্কেটটা টেনে নিয়ে ওপাশ হয়ে সুন্দর করে শুয়ে পড়ল। এমন ভাবে শুয়ে আছে যেন বিছানায় উনি ছাড়া আর কেউ নাই।আমি রেগে বললাম,
“এটা কি রকম হলো আপনি দেখলেন না আমি ঘুমাচ্ছিলাম ব্লাঙ্কেটটা সম্পূর্ন নিয়ে নিলেন কেন? ”

উনি কোনো উত্তর দিলো না। আমি আরো দুই তিনবার ডাক দিলাম তারপরও সাড়া নেই। আমি বিরবির করে বললাম,
“ওমা এরই মধ্যে ঘুমিয়ে গেল? ”

আমার এতো ঘুম পাচ্ছিল যে আর কথা না বাড়িয়ে উনার কাছ থেকে ব্লাঙ্কেটটা কিছুটা টেনে নিয়ে নিজের গায়ে দিলাম। দিয়ে শুয়ে পড়লাম ঠিক তখনই আমার ব্লাঙ্কেটে আবার টান পড়ল। আমি ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকাতেই দেখলাম উনি আগের মতোই শুয়ে আমি কোনো কথা না বলে ব্লাঙ্কেটটা আবারও টেনে আবার গায়ে দিলাম রীতিমতো আবার টেনে নিয়ে নিলো এইবার আর রাগটা কন্ট্রোল করতে পারলাম না আমি আমার সমস্ত শক্তি দিয়ে ব্লাঙ্কেটটা উনার থেকে টেনে নিয়ে বললাম,

“কি সমস্যা কি আপনার? ”
কথাটা বলতেই উনি হুরমুড়িয়ে উঠে বসল। বসেই আমার দিকে ক্ষিপ্ত চোখে তাকিয়ে বললো,
“দেখলে তো ঘুমাচ্ছিলাম তাহলে এমন করলে কেন?”
“আপনি যে এতক্ষন টানাটানি করে আমার ঘুমটা নষ্ট করেছেন তার বেলা? ”
“তো আমার গায়ে যদি ব্লাঙ্কেটটা না হয় তাহলে আমার কি করার আছে?এতো দূরে গিয়ে শুয়েছো বলেই এমন হচ্ছে। ”
আমি চোখ বড় বড় করে বললাম,
“ওমা তাই নাকি?কই এতোদিন তো কোনো প্রবলেম হচ্ছিল না আজই হয়ে গেল?”
শান সরু চোখে তাকিয়ে বললো,
“তোমার কি মনে হয় আমি মিথ্যা বলছি? ”
“আমি কি করে বলবো সেটা তো আপনি জানবেন?”
কথাটা বলতেই শান অন্যদিকে ফিরে নিজের মাথা চুলকালো। আমি উনার কান্ড দেখে ভ্রু কুচকে বললাম,
“আচ্ছা আপনিই রাখুন এটা আমি অন্য আরেকটা নিয়ে আসছি। ”

বলেই আমি অন্য আরেকটা ব্লাঙ্কেট নেওয়ার জন্য উঠতেই উনি আমার হাত ধরে আবার বসিয়ে দিলেন। আমি চোখ বড় বড় করে বললাম,
“কি ব্যাপার? ”
“কোথায় যাচ্ছো তুমি?”
আমি চোখ মুখ কুচকে বললাম,
“ব্লাঙ্কেট আনতে।”
“কেন আমি বলেছি তোমাকে?”
“আপনাকে বলতে হবে কেন আমি কি এই শীতের মধ্যে ব্লাঙ্কেট ছাড়া ঘুমাবো। আপনার নাকি হচ্ছে না তাই আমি আমারটা জন্য আনতে যাচ্ছি। ”
শান রাগি চোখে তাকিয়ে বললো,
“একদম না এখানেই এই ব্লাঙ্কেটের মধ্যেই শুয়ে পড়ো। ”
“কিভাবে আপনি না বললেন দুজনের হচ্ছে না। ”
“হবে যদি তুমি আমার গা ঘেসে এসে ঘুমাও তাহলেই। ”
আমি চোখ বড় বড় করে বললাম,
“আপনার সাথে একসাথে? ”
“হুম আমার সাথেই। শুয়ে পড়ো আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে। ”
বলেই উনি শুয়ে পড়ল। আমি কি করব বুঝতে পারছি না তাই বসেই রইলাম। শান আবার ধমক দিয়ে বললো,
“কি হলো ওখানেই সারারাত বসে থাকার ইচ্ছা আছে নাকি? ”
“দেখুন…।”
“নো মোর টক। তাড়াতাড়ি এসো। ”
উনার কথা শুনে আমি উনাকে মুখ ভেঙালাম আর কোনো উপায় না পেয়ে গিয়ে উনার পাশে শুয়ে পড়লাম তবে একটু ফাঁকা রেখে। শান আমারও রাগান্বিত হয়ে বললো,
“মাঝে এতো ফাঁকা রেখেছো কার জন্য।আরো কাছে এসো। ”
আমি উনার আরেকটু কাছে গিয়ে শুলাম। উনি আবারও বলে উঠলো,
“আরো কাছে আসতে পারছো না? ”
এইবার আমি রেগে বললাম,
“অদ্ভুত এইবার কি আপনার বুকের ভিতরে ঢুকে যাবো নাকি?”
শান রাগি চোখে তাকিয়ে বললো,
“প্রয়োজন হলে তাই। শীতকালে একটু গা ঘেসে শুতে হয় তাহলে শীত কম লাগে বুঝেছো। ”

আমি কোনো কথা না বলে চোখ বুজে নিলাম।ঘুমের জন্য কথা কাঁটাকাঁটি করা দায় হয়ে যাচ্ছে আমার। হঠাৎ মনে হলো আমাকে কেউ আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরল। আমি দ্রুত শানের দিকে ফিরলাম,

“এটা কি হলো?”
“কি হবে? ”
“এভাবে ধরেছেন কেন?”
শান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
“আমার কোলবালিশ ধরে ঘুমানোর অভ্যাস আজ কোলবালিশ নেই তাই তোমাকে ধরেছি ব্যাস এইবার ঘুমাও। ”
উনার কথা শুনে আমার একটু রাগ হলো,
“মানে আপনি কোলবালিশের পরিবর্তে আমাকে ধরেছেন? এমন অপমান ন। করলে চলছিল না। দেখি ছাড়ুন।”
আমার কথা শুনে শান চোখ বড় বড় করে বললো,
“মানে তুমি কি চাও আমি তোমাকে তুমি ভেবে ধরি। ”
আমি কান্না মাখা কন্ঠে বললাম,
“অবশ্যই আপনি যখন আমাকে ধরেছেন তাহলে আমাকে ভেবেই ধরবেন অন্য কাউকে ভেবে ধরলে তো আমি মেনে নেবো না। ”

শান আমার কথা শুনে ঠোঁট কামড়ে খানিকটা হাসলো। উনার হাসি দেখে আমার আরো জোরে কান্না পাচ্ছে তাহলে জামাই কি আমার হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছে?

“বলছি কোথায় যেন পোড়া পোড়া গন্ধ আসছে? ”

“পোড়া গন্ধ মানে? ”

“সেটা তোমাকে জানতে হবে না। ঘুমাও তুমি চুপটি করে।”

“আগে ছাড়ুন আপনি আমাকে। ”

আমি উনার হাত নিজের শরীরের উপর থেকে সরানোর চেষ্টা করতে লাগলাম অনেক অভিমান হচ্ছে আমার। শান রেগে বললো,
“লিসেন আর একবার যদি নড়েছো তো হাত পা বেঁধে শুইয়ে রাখব একদম চুপচাপ থাকো। ”

ওনার ধমক শুনে আমি একদম চুপ হয়ে গেলাম। অভদ্র লোক একটা সবসময় আমার সাথেই এমন করে।
শান কিছুটা বিরক্তির সাথে বললো,

“উফ তুমি মনে মনেও এত জোড়ে জোড়ে কথা বলছো যে আমার ঘুমের প্রবলেম হচ্ছে চুপ করে ঘুমাতে পারছো না। ”

আমি উনার কথা শুনে চোখ পিটপিট করে বললাম,
“আপনি জানলেন কি করে আমি কথা বলছিলাম। ”
“তোমার না জানলেও চলবে ঘুমাও। ”
“না ঘুমাবো না আপনি আমাকে ছাড়ুন আগে আমি কারো সাবস্টিটিউশন হিসেবে থাকতে চাই না। ”
শান চোখ ছোট ছোট করে বললো,
“কি বলছো এসব? তোমার সাথে কারো কোনো তুলনাই হয় না সেখানে তুমি কারো সাবস্টিটিউশন হবে কি করে?”
আমি অভিমান করে বললাম,
“আপনিই বলেছেন। ”
শান হেসে বললো,
“আমি তোমাকে তুমি ভেবেই ধরেছি ওকে এইবার ঘুমাও। ”

কথাটা বলেই উনি আমাকে আরো শক্ত করে উনার বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরলেন। আমি উনার বুকে মুখ গুজেই খানিকটা হাসলাম। এটাই তো শুনতে চাইছিলাম আমি। আমার মনের মধ্যে অদ্ভুত একটা সুখানুভূতি হলো আর সাথে ভয়ও। আজ প্রথম উনার এতো কাছে। আমিও আস্তে করে কাঁপা কাঁপা হাতে ওনাকে জড়িয়ে ধরলাম। হঠাৎ একটা কথা মাথায় আসতেই আমি উনার বুক থেকে মাথা সামান্য উঠিয়ে বললাম,

“আচ্ছা আজকে যে এত কাহিনী হলো তারপর ওদের বিয়ে হবে কিভাবে?”
শান আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“এতো চিন্তা তোমাকে করতে হবে না যখনেরটা তখন দেখবো এখন ঘুমাও। ”

তারপর আমিও উনার বুকে চুপটি করে মুখ লুকিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।


সকালে ঘুম থেকে উঠতেই শানের মুখটা আমার চোখে ফুঁটে উঠলো। আজ মনে হচ্ছে অনেকদিন পর এতো শান্তিতে ঘুমালাম আমি। আমি পলকবিহীন শানের মুখপানের দিকে তাকিয়ে আছি। একদম বাচ্চাদের মতো ঘুমাচ্ছে। উনার চোখগুলো অনেক সুন্দর বিশেষ করে চোখের পাপড়ি গুলো।গায়ের রং একদম ফর্সা। কি দরকার একটা ছেলের এতো সুন্দর হওয়ার সেটাই বুঝতে পারিনা আমি। কত মেয়ের আমার বরটার উপর নজর পড়ে কে জানে। আমি আমার এক আঙ্গুল দিয়ে উনার কপাল থেকে স্লাইড করতে করতে ঠোঁট পর্যন্ত আনলাম। হঠাৎ উনি খানিকটা নড়ে উঠতেই আমি হাত সরিয়ে নিলাম। আর নিজের কাজে নিজেই লজ্জা পেয়ে গেলাম।

তিনমাস আগেও যখন উনার সাথে আমার বিয়ে হয় তখনও আমি ভাবিনি আমি উনার সাথে থাকব। এমনটা নয় যে উনার জন্য আমার মনে কোনো অনুভুতি ছিল না তাই।উনার জন্য আমার অনুভুতি ছিল প্রয়োজনের চেয়েও বেশী। আর সেটা একদিনের নয় অনেক বছর আগে থেকে।একটু একটু জমিয়ে ছিলাম। তাই তো উনি যখন আমাকে শাসন করতেন আমার ভালো লাগত, উনি আমাকে কোনো জিনিসের জন্য যদি বারণ করত সেটাই আমি বেশী বেশী করতাম কারণ আমি চাইতাম উনি বারবার আমার কাছাকাছি থাকুক। কলেজে পড়াকালিন যখন কোনো ছেলের সাথে কথা বললে উনি বারণ করতো ওই ছেলেকে বকাবকি করত খুব মজা পেতাম উনার জেলাসি দেখে। তাই উনাকে জ্বালানোর জন্যই বারবার ইচ্ছাকৃত একই কাজ করতাম যাতে উনি আমার উপর অধিকার দেখাতে পারে। উনার আমার প্রতি যত্ন, আমাকে আগলে রাখা, আমার উপর অধিকার দেখানোটাই কংন আমার কিশোরী মনে ওনার জন্য ভালোলাগা তৈরী হয়ে যায় বুঝতেই পারিনি। অনেকবার চেয়েছিলাম উনাকে সবটা সত্যি সত্যি বলতে কিন্তু ভয় হতো যদি সে আমাকে ভালো না বাসে। তাই আর কখনো বলা হয়নি।উনাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা, উনার সাথে সবসময় কথা বলার জন্য ঝগড়ার আশ্রয় নেওয়া, উনার কাছে থাকার জন্য উনাকে প্রতি মূহূর্তে বিরক্ত করা আরো কত কি নিজের ব্যবহারে নিজেই অবাক হয়ে যেতাম তবে ওনাকে কখনো বুঝতে দিতাম না।

তবে হুট করে বাবা একদিন বিয়ে ঠিক করে দিল। উনার বিয়ে আপু সাথে ঠিক হয়েছিল বলে খুব কষ্ট পাচ্ছিলাম ভিতর ভিতর শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম আমি। মনে মনে একটাই প্রার্থনা করছিলাম যে যেকোনো একটা মিরাক্কেল হয়ে যদি এই বিয়েটা না হতো জানি না আমার প্রার্থনাটা কোনো ভবে আল্লাহ শুনে নিয়েছে। বিয়ের দিনই আপু পালিয়ে যাওয়াতে ওনার সাথে আমার বিয়েটা হয়ে যায়। এতো সহজে যে আমি উনাকে পেয়ে যাবো ভাবতেই পারিনি।এইবার ভাবলাম যে না উনাকে সবটা সত্যি বলে দিবো যে উনাকে আমি কতটা ভালোবাসতাম।তাই ফুলসজ্জার ঘরে উনার জন্যই অনেক আশা নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম।

কিন্তু উনি যে ব্যবহারটা করলো তাতে আমার সব আশা, আকাঙ্খা এক নিমিষে শেষ হয়ে গেল। উনার কথাগুলো আমাকে সবচেয়ে বেশী ক্ষত বিক্ষত করেছিল উনার গার্লফ্রেন্ড আছে শুনে। সেদিন থেকেই উনার সাথে দূরত্ব বাড়াতে শুরু করি সাথে ইগনোর তো আছেই। আমার মনে হতো আমার জন্য উনি হয়তো উনার ভালোবাসার মানুষকে পায়নি। আর ঐশীর সাথে দেখা হওয়ার পর সেটা আরো বেশী শিউর হয়ে গেছিলাম। ঐশীর কথা শুনেই বুঝেছিলাম ও শানকে ঠিক কতটা ভালোবাসে। কিন্তু আমি শানকে চিনতাম শান হয়তো আমার প্রতি অবিচার করতে পারবেনা বলে উনার গার্লফ্রেন্ডকে ছেড়ে দিয়েছে আর না চাইতেও আমার জন্য নিজের মনে জায়গা তৈরী করছে এটাই ভেবেছিলাম আমি। তাই সবসময় চাইতাম শান যেন আমাকে কখনো ভালো না বাসে।আমি চাইনি দুজন ভালোবাসার মানুষের মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে। তারউপর আপুদের বিষয়টা তো ছিলই। সেটাও শানকে বলা হয়নি যদি শান আমাকে ভুল বুঝে। তাই ভেবেছিলাম আপুদের বিষয়টা মিটমাট হয়ে গেলে আমি চলে যাবো শানকে ছেড়ে। কিন্তু সেটা যে এতো সহজ হবে না সেটা শানের সাথে থাকতে থাকতে আরো তীব্র ভাবে অনুভব করলাম। তাই উনার থেকে দরত্ব বাড়াতে লাগলাম। কিন্তু যতোই দূরত্ব বাড়াচ্ছিলাম শান কেমন যেন ততোই কাছে চলে আসছিলো যেটা আমাকে আরো দূর্বল করছিলো। শান আরো বেশী যত্নশীল হয়ে পড়ল আমার উপর, আরো বেশী অধিকারবোধ দেখাতে লাগলো যার জন্য উনার থেকে দূরে সরতে হবে সেটা ভাবিইনি কখনো।

কিন্তু আমি যে এতটা বোকা সেটা আমি বুঝতেই পারিনি। আমি শুধু শুধু নিজের এতো সুন্দর হাজবেন্ডকে ভাগ বাটোয়ারা করতে চাইছিলাম শুধু মাত্র একটা ভুল বুঝে। যার মনে আমার জন্য এতোটা ভালোবাসা ছিল সেটাকে আমি অন্য কারো জন্য ভেবেছিলাম।ভাবতেই নিজের মাথা ফাঁটাতে মন চাইছে। ভাগ্যিস ঐদিন ওনার কাবার্ড থেকে শাড়ি আর চিরকুটের সাথে একটা ছবিও পেয়েছিলাম।ছবিটা দেখে অবাক হয়েছিলাম এই ছবি উনার কাছে এলো কি করে। এটা তখনের ছবি ছিল যেদিন উনি আমাকে একটা ছেলের সাথে কথা বলার জন্য রাস্তায় সবার সামনে বকে ছিলেন।আমি মুখ গোমড়া করে গালে হাত দিয়ে পড়ার টেবিলে বসে ছিলাম। বাট ছবিটা তু্ললো কখন ছবিটা পেয়ে আমার কৌতুহল হলো তাই তাড়াতাড়ি সেটার পিছন উল্টাতে দেখলাম,

“ভালোবাসি বড্ড আমার বেখেয়ালি। খুব তাড়াতাড়ি তুমি শুধু আমার হবে শুধু আমার। সেদিন তোমাকে আদর সোহাগে সব রাগ ভুলিয়ে দিবো প্রমিজ। ”

লেখাটা দেখেই আমার মনের মাঝে যেই অনুভুতি গুলো সুপ্ত করে রেখেছিলাম এক মূহূর্তে সেটা আবারও জেগে উঠলো। আবার মন বললো উনাকে ভালোবাসতে। আমি যেন প্রাণ ফিরে পেলাম। তবে হঠাৎ কারো পায়ের আওয়াজ শুনেই আমি দ্রুত ছবিটা সরিয়ে রেখেছিলাম বাট চিরকুট আর শাড়িটা সরানোর টাইম পাইনি। সেটাই উনি আমার হাতে এসে দেখেছিলেন। তবে উনার উপর আমি খুব রেগে আছি উনি এখনো আমাকে প্রপোজ করেনি। যদিও বেচারা নিজের কাজের মাধ্যমে সেটা অনেকবার বুঝিয়েছে বাট যতক্ষন উনি নিজের মুখে না বলবে ততোদিন পর্যন্ত আমিও কিছু বলব না।

এতক্ষনে তিনমাস আগের কথা গুলো ভাবতেই আমার মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠলো। আর লজ্জায় আমি আমার মুখটা নিজের দুইহাত দিয়ে ডেকে নিলাম। ভাবতেই পারছি না এখন এই বদমেজাজি, এরোগ্যান্ট, কিউট, সুইট ছেলেটা শুধু আমারই আমার বর।

“হুম আজকাল আমার ঘুমের সুযোগ নিয়ে আমাকে এভাবে চোখ দিয়ে গিলে খাওয়া হচ্ছে জানতাম না তো।”

উনার কথা শুনে আমি দ্রুত আমার মুখ থেকে হাত সরিয়ে দেখলাম উনি জেগে আছে।আমি অবাক হয়ে বললাম,
“আপনি না ঘুমাচ্ছিলেন? ”
“হুম ঘুমাচ্ছিলাম তো ভাগ্যিস ঘুমটা ভাঙলো নাহলে তো দেখতেই পেতাম না। ”
“হুম আর ঘুম ভেঙেই উল্টা পাল্টা দেখেছেন শুধু শুধু অশ্লীল কথা বার্তা না বলে ছাড়ুন আমাকে লেইট হচ্ছে। ”
“অশ্লীল কথা এখনো বললাম কই?আমি কি তোমার বডি পার্ট নিয়ে কথা বলেছি না সি…..।”
উনার সম্পূর্ন কথা বলার আগেই আমি লজ্জা পেয়ে উনাকে ধাক্কা দিয়ে দ্রুত উঠে গিয়ে বললাম,
“আপনি সত্যিই অসভ্য। ”

আর একমিনিটও দাঁড়ালাম না। যা বলেছি এরপর না সত্যি সত্যি অসভ্যতামি শুরু করে তাই সরে গেলাম উনার সামনে থেকে। ”


উনি অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলেন তখনই আমি উনার জন্য কফি নিয়ে রুমে ডুকলাম,

“আপনার কফি।”
“টাইম নেই আজ লেইট হয়ে গেল শুধু তোমার জন্য। ”
আমি অবাক হয়ে বললাম,
“আমি কি করেছি? ”
“কি করোনি তাই বলো আমাকে তোমার নেশায় মাতাল করে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছো তাই তো উঠতে পারলাম না।”
“ওমনি আমার দোষ না। এমন হলে আমাকে ধরে না ঘুমালেই হয়।আমি অন্য রুমে চলে যাই। ”
“স্যরি সুইটহার্ট সেটা পসিবল নয়। আমার ঘুমপরী ছাড়া আমার ঘুম হবে না তাই ভুলেও এই কাজ করবে না তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হবে। ”
“হুম। ”
“আচ্ছা তুমি টাই বাঁধতে পারো?”
“না। আমার ভালো লাগে না স্কুলে যখন যেতাম আম্মু পড়িয়ে দিতো আর তারপরে তো আর লাগেওনি। ”
“আচ্ছা প্রবলেম নেই আমি শিখিয়ে দিচ্ছি। আমার টাইটা বেঁধে দেও। ”
“আপনি তো পারেন তাহলে আমি কেন?”
“আমি বলছি তাই।কথা না বলে এগিয়ে এসো। ”

আমি আর কথা না বলে উনার কাছে গিয়ে টাইটা নিয়ে নিলাম উনি আমার কোমড়টা শক্ত করে ধরে থেকে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন আর বলে দিচ্ছিলেন কিভাবে কি করতে হবে। টাই বাঁধা শেষ হলেও উনি এখনো আমাকে দেখে যাচ্ছে আমি গলা একটু খাঁকারি দিয়ে বললাম,

“বলছি এখন লেইট হচ্ছে না আপনার? ”
“ক্ষতি নেই বরং লাভই হচ্ছে। ”
“কিসের লাভ? ”
“সেটা তোমার মোটা মাথায় ডুকলে তো হয়েই যেত। ”

আমি উনাকে মুখ ভেঙালাম। শান একটু মুচকি হেসে বললো,
“আজ রাতে প্রস্তুতি নিয়ে রেখো কোথাও যাবো। ”
“কোথায়? ”
“পরেই দেখতে পাবে।নাউ বাই ”

কথাটা বলেই উনি আমার গালে একটা ডিপ কিস করে চলে গেলেন।উনি যাওয়ার পরই আমি গালে হাত দিয়ে লজ্জা পেয়ে আয়নার সামনে থেকে সরে গেলাম।
.
.
চলবে

বিঃদ্রঃ অনেক তাড়াহুড়া করে লিখেছি রিচেক দেওয়া হয়নি। বানান ভুল ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

পর্বঃ ২৬-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here