এক শহর ভালোবাসা পর্ব_৩৪

0
1132

#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_৩৪
#সুরাইয়া_নাজিফা

আমার কথা শুনে সবাই আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। এতো খুশির মধ্যে এমন কথা হয়তে কেউ মানতে পারেনি।
শান আমার কাছে এসে বললো,
“হঠাৎ এমন কথা বলছো কেন?কি হয়েছে?”
“কি হয়নি তাই বলেন বিয়ে নিয়ে এতো প্লান প্রোগ্রাম করার পর যখন এমন একটা খবর শুনতে হয় তখন কতটা বিরক্ত লাগে শুনলে বুঝতে পারবেন।”

আমার কথা শুনে শান মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
“কি হয়েছে আগে সেটা তো বলো?”
“আরে তিনদিন পর থেকে আমার প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। ”

কথাটা বলেই আমি মেঝেতে বসে মরা কান্না কাঁদতে শুরু করলাম বাচ্চাদের মতো হাত পা ছড়িয়ে। আমার কথা শুনেই সবাই হাফ ছাড়ার মতো একটা নিঃশ্বাস ফেললো।

শ্বশুর মশাই আমার পাশে এসে বসে বললো,
“তাই বল তুই যেভাবে বলেছিলি আমি তো ভয়ই পেয়ে গেছিলাম যে এই শেষ মুহূর্তে এসে আবার কি অঘটন ঘটে গেল। ”

আমি করুণ চোখে তাকিয়ে বললাম,
“অঘটনের আর বাকি আছে কি?আপুর বিয়ে অথচ আমিই থাকতে পারবো না। কত কিছু প্লান করে রেখেছিলাম। ”

আমার কথা শুনে শান আমার পাশে বসে মুচকি হেসে বললো,
“সো স্যাড সুইটহার্ট। ”

উনার কথা শুনে মনে হলো উনি কথাটা দিয়ে আমাকে একটু ব্যাঙ্গ করলেন আমি উনার দিকে সরু চোখে তাকিয়ে বললাম,
“আপনার অনেক মজা লাগছে বুঝি। ”

শান চোখ বড় বড় করে বললো,
“মজা লাগবে কেন?আমি তো তোমার কষ্টটা ভাগাভাগি করতে চাইছিলাম কেন ভুল বুঝছো। ”

“আপনার মুখের এক্সপ্রেশন দেখে বিশ্বাস করুন আপনার কথা গুলো বিশ্বাস হচ্ছে না। ”

আমার কথা শুনে শান সহ বাকি সবাই খিলখিলিয়ে হেসে দিল। আর আমি মাঝে মুখ কাচুমাচু করে বসে রইলাম। আমার বাবা বললো,
“তাহলে এখন বিয়ের কি হবে পিছিয়ে দিবো সময় আরো?”

শ্বশুর মশাই বললেন,
“হুম এটা ছাড়া তো আর উপায় দেখছি না। ভাগ্যিস খবরটা আগেই পেয়েছি নাহলে যদি এমন হতো কার্ড বিলি হওয়ার পর এমন খবর আসতো তখন কি হতো। ”

আমার জন্য আপু আর আরশ ভাইয়ার বিয়েটা পিছিয়ে যাবে মেনে নিতে পারছিনা। বেচারারা কতো অপেক্ষা করেছিল এইদিনটার জন্য। আমি উঠে দাঁড়িয়ে বললাম,
“বাবা বলছিলাম কি আমার জন্য বিয়েটা পিছানোর কোনো দরকার নেই।আমার জন্য কেন আপুদের বিয়েটা পিছানো হবে। তোমরা তোমাদের মতো আয়োজন করো আমি নাহয় মাঝে মাঝে এটেন্ড করে নেবো। ”

আপু আমার মাথায় একটা গাট্টা মেরে বললো,
“বিয়ে হয়ে গেছি বলে বড় হয়েছিস নাকি ? তোকে ছাড়া আমি বিয়ে করব ভাবলি কি করে। বিয়ে তোর পরীক্ষার পরেই হবে। ”

আমি মন খারাপ করে বললাম,
“কিন্তু…।”
আরশ ভাইয়া বললো,
“কোনো কিন্তু না বড়রা যেটা বলছে সেটাই হবে তুমি মন দিয়ে পরীক্ষা দেও বুঝেছো। ”


সন্ধ্যায় পড়ার টেবিলে বসে আছি আমার মাথা ঘুরছে এতো এতো পড়া দেখে।এজন্যই বলা হয় সময়ের কাজ সময়ে করা ভালো। জমিয়ে রাখলে শুধুই বোঝা বাড়বে কাজের কাজ কিছুই হবে না। তিনদিন পর আমি খাতায় কি লিখবো জানি না। না নোটস গুলো ঠিকঠাক আছে আর না আউটলাইন গুলো। কোনো উপায় না পেয়ে তানিশাকে ফোন দিলাম,

“ঐ পরীক্ষা আছে বলে খালাস হয়ে গেলি আমাকে নোটস গুলো কে দিবে। আমার কাছে তো অনেকগুলোই নেই। ”

“আচ্ছা অপেক্ষা কর আমি পিক তুলে সেন্ড করছি ঐগুলা দেখে পড়। ”

আমি চিল্লিয়ে বলে উঠলাম,
“এই না না পিক না কালকে মিট কর ফটোকপি করে নিবো। ”

তানিশা ধমক দিয়ে বললো,
“আস্তে চিল্লা কান ফাঁটিয়ে ফেলবি নাকি। ওকে কালকে নিস এখন ফোন রাখ নিজে পড় আমাকেও পড়তে দে। ”

কথাটা বলে তানিশা ফোনটা কেঁটে দিলো। গত একঘন্টা যাবৎ একটা টপিক নিয়ে বসে আছি মনে হচ্ছে শুধু পড়ছি কিন্তু পড়াটা আর মাথায় যাচ্ছে না। শান রুমে নেই জানি না কোথায় আছে।হয়তো নিচে সবার সাথে গল্প করছে, মজা করতেছে । আর আমি বসে বসে নিজের চুল ছিড়ছি।ধ্যাত ভাল্লাগে না! আমি বিরক্ত হয়ে টেবিলের উপর মাথা রেখে দিলাম। বই সামনে দেখলেই আমার প্রচুর ঘুম আসে।

হঠাৎ টেবিলের উপর ধুম করে একটা আওয়াজ হতে লাফিয়ে উঠে বসলাম। এমন মনে হলো টেবিলের উপর বাজ পড়ল। আমি পাশে তাকাতেই দেখলাম শান দাঁড়িয়ে,
“টেবিলটা কি পড়ার জায়গা নাকি ঘুমানোর। ”
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,
“পড়ছি তো। ”
“কি যে পড়ছো সেটা তো দেখাই যাচ্ছে।পড়া কতটুকু হয়েছে আর এখন কি পড়ছো? ”

শান আমার পাশের চেয়ার টেনে বসলো। আমি নিজের নখ কামড়াতে লাগলাম চিন্তিত ভঙ্গিতে। এখন কি বলবো? কিছুই তো পড়িনি। শান আবার ও টেবিলে একটা বারি মারতেই আমি থতমত খেয়ে উনার দিকে তাকালাম।
“কই হারিয়ে গেছো কিছু জিজ্ঞেস করেছি তো আমি। ”

আমি একটু হাসার চেষ্টা করে বললাম,
“এই তো ‘সাইন্টিফিক ম্যাথড’ পড়ছি এখন। ”
“আগে কি পড়েছো। ”
আমি খানিকটা হাসার চেষ্টা করে বললাম,
” এই তো এটাই পড়ছি। ”
শান অবাক হয়ে বললো,
“এই দুইঘন্টা যাবৎ শুধু একটা অধ্যায় পড়তেছো বাকি গুলা কখন পড়বে?ফাজলামি পাইছো? ”
“ধ্যাত আমার আর পড়াশোনা ভালো লাগছে না।
“পড়াশোনা কারোই ভালো লাগে না তারপরও পড়তে হয়। আর আমার বউ মাত্র ইন্টার পাশের স্টুডেন্ট হবে সেটা তো আমি মেনে নেবো না। সো পড়তেই হবে পড়ো চুপচাপ। ”
আমি কান্না কান্না মুখ করে বললাম,
“কিছু মাথায় ঢুকছে না। ”
“সারাদিন আবোল তাবোল কথা মাথায় ঢুকালে পড়া মাথা ঢুকবে কেমনে? ”
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম,
“উফ আমার কাছে কোনো নোটই নেই। বিয়ের পর এতো সব ঝামেলার মাঝখানে পড়তেই তো পাড়লাম না।আর এর আগে যা পড়েছি সব ভুলে গেছি কি যে করব বুঝতেছি না। আমার মনে হয় এইবার আমি ফেইল করব। ”
শান দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“বাহ বাহ খুব ভালো কথা যাওনা আরেকটু গিয়ে অন্যের বিয়ের ঘটকালি করো তাহলেই পাশ করবে। ”

উনার কথা শুনে নিজের মাথায় নিজেরই বারি মারতে মন চাইছে মানে প্রত্যেকটা কথার জবাব উনার কাছে আছে। এমন ভাবে বলছে যেন আমি অন্যের বিয়ের ঘটকালি করছিলাম। কোথায় আমাকে শান্তনা দেবে তা না কথা শোনাচ্ছে ফাজিল লোক একটা।

“মনে মনে আমাকে বকাঝকা না করে পড়াশোনায় মন দেও কাজে দেবে। ”
আমি ভ্রু কুচকে বললাম,
“আপনি জানলেন কি করে আমি আপনাকে কিছু বলছি। ”
“সেটা জানতে হবে কেন তোমার মুখে এক্সপ্রেশনই বলে দিচ্ছে।এইবার দ্রুত পড়া রেডি কর আর পড়া দেও আমাকে। ”

উনার কথা শুনে আমার মাথায় বাজ পড়ল।উনি এখন আমাকে পড়াবে নাকি ইম্পসিবল মাথা খারাপ নাকি যে উনার কাছে পড়ব। ক্লাস টেনের কথা মনে হলে আমি এখনও ভয়ে কেঁপে উঠে। উনার কাছে ম্যাথ পড়েছিলাম। সেই একটা বছর এতো অত্যাচার করেছে। রাত দিন চব্বিশ ঘন্টা শুধু পড়া আর পড়া। উনার জন্য আমার শ্বাস ফেলারও জো থাকত না।একবার তো এই পড়ার চক্করে জ্বর পর্যন্ত উঠে গেছিলো আমার।যদিও এরপর একটু স্বাধীনতা দিয়েছিল আর অনেক খেয়াল রেখেছিল আমার কিন্তু সুস্থ হতেই আবার উনার থিওরি এপ্লাই করা শুরু করেছেন। সেই একই পরিস্থিতি আমি আর সামলাতে পারবো না।

আমি ভয়ে আঁতকে উঠে বললাম,
“না। ”
আমাকে এবাবে চিল্লাতে শুনে শান ভ্রু কুচকে বললো,
“কি সমস্যা তোমার? ”
আমি একটু হাসার চেষ্টা করে বললাম,
“না মানে আপনি তো আমার ডিপার্টমেন্টে না আমাকে কিভাবে পড়াবেন?”
“তো কি হয়েছে? পড়া বুঝাতে না পারি।বুঝার দায়িত্ব তোমার।কিন্তু পড়া নিতে তো পারব। কোনো তাল বাহানা না করে চুপচাপ পড়।”
আমি উনার দিকে ছলছল করে তাকিয়ে রইলাম আর বিরবির করে মনে দুঃখে বললাম,
“যান না এতো পড়ানোর শখ যখন নিজের ছেলে মেয়েকে পড়ান না আমার পিছনে পরে আছেন কেন? ”

ভেবেছি শান শুনবে না কিন্তু আমার ধারণা মিথ্যা করে দিয়ে কিছুক্ষন পর শান মুচকি হেসে বললো,
“ছেলে মেয়ে যখন পৃথিবীতে আসবে তখন নাহয় ওদের পড়াবো আগে ওদের মাকে পড়িয়ে তো মানুষ বানাই। পড় দ্রুত। ”

আমি আবার বইয়ের দিকে তাকিয়ে পড়তে আরম্ভ করলাম।


আধা ঘন্টা হলো পড়ছি আর কিছুক্ষন বাদে বাদে আড়চোখে শানকে দেখছি। উনি এক নজরে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে আছে। এতো রাগ লাগছে কেমন জামাই পাইছি বুঝতেছি না। কোথায় সবে সবে প্রেম হলো এখন একটু চুটিয়ে প্রেম করবে তা না দেখো নিজে কাজের মধ্যে ব্যস্ত আর অন্যদিকে বউকে পড়ার মধ্যে ব্যস্ত করে রেখেছে।চোখের সামনে এমন সুন্দরি বউ রেখে সে কাজে মগ্ন। আবার আমাকে বলে আমি নাকি আনরোমান্টিক। ব্যাটা আনরোমান্টিকের সিল তো তোর গায়ে লাগানো উচিত। কথা গুলো মনে মনে বিরবির করতে করতে আমি উনাকে মুখ ভেঙালাম।

আমার মাথা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। শানের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে বইয়ের পাতায় তাকাতেই মাথার মধ্যে একটা দুষ্টমি বুদ্ধি খেলে গেল শানকে বিরক্ত করার। আমি বইয়ের দিকে তাকিয়েই পড়ার অভিনয় করে আমার এক পা দিয়ে আস্তে করে শানের পায়ে একবার স্লাইড করে পা টা সরিয়ে নিলাম।

হঠাৎ এমন হওয়ায় শান একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল।কাজের মধ্যে ব্যস্ত থাকায় বুঝতে পারেনি আসলে কি হলো। প্রখর দৃষ্টি নিয়ে সোহার দিকে তাকিয়ে ছিল। কিন্তু সোহার দিকে তাকাতেই বুঝতে পারল সোহা পড়ছে তাহলে কি হলো?শান নিজের মনের ভুল ভেবে আবার কাজে মন দিলো।

শান চোখ সরাতেই আমি আবারও শানের পায়ে আলতো করে স্লাইড করলাম করেই সরিয়ে নিলাম শান আবার চমকে উঠলো।কিন্তু কিছু বললো না। আবারও কাজের দিকে মন দিতেই আমি আবারও সেইম কাজ করলাম কিন্তু এইবার আর শান কোনো রিয়েক্ট করল না। চুপ করে কাজ করে যাচ্ছে। কারণ শানের এখন আর বুঝতে অসুবিধা হলো না যে এটা সোহার কাজ শানকে বিরক্ত করার জন্য। শান কিছু না বলে পা টা সরিয়ে নিয়ে ঠোঁট বাকিয়ে একটু হাসলো।

শানকে কোনো রিয়েক্ট করতে না দেখে রাগ হলো।না আমাকে এমন বিরক্ত করে নিজে শান্তিতে কাজ করবে এটা তো হতে দিতে পারি না।আর এছাড়া আমার এখন পড়তেও ইচ্ছা হচ্ছে না। শানের আকর্ষন আমার দিকে ঘুরানোর জন্য আমি এইবার চেয়ারটা শানের আরেকটু কাছে নিয়ে বসলাম। আবারও উনার পায়ে স্লাইড করতে লাগলাম তবে এইবার উনার দিকে চেয়ে ঠোঁটের কোনো মুচকি হাসি নিয়ে। উনার হাতের উপর হাত রাখলাম আর শক্ত করে ধরলাম। শান আমার একবার আমার হাতের দিকে তাকিয়ে আমার চোখে চোখ রাখল।শানের চোখ আমার উপর পড়তেই শানকে একটা চোখ টিপ মারলাম আর সাথে বিভিন্ন ধরনের অঙ্গভঙ্গিমা তো আছেই।

শান আমার দিকে তিক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“কি করতে চাইছো বলোতো?”
আমি মুচকি হেসেই বললাম,
“বুঝেন না আপনি? ”
শান ল্যাপটপটা পাশে সরিয়ে রেখে আমার আরেকটু কাছে এসে বললো,
“তুমিই বুঝিয়ে বলো?”
আমি একই ভাবে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
“প্রেম করতে চাইছি। ”
আমার কথা শুনে শান নিজের নিচের ঠোঁট কামড়ে হেসে বললো,
“তাই বুঝি তা হঠাৎ ম্যাডামের এতো পরিবর্তন?”
“পরিবর্তন আগেই হয়েছে আপনারই চোখে পড়েনি। ”
শান চোখ বড় বড় করে মাথাটা একটু এদিক ওদিক নাড়িয়ে বললো,
“ওহ। তা আপনার পড়া কতটুকু হয়েছে বলেন তো ম্যাম ?”
আমি নিজের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়েই উনার মুখের আরেকটু কাছে গিয়ে উনার গালে হাত রেখে বললাম,
“বিয়ের পর কি আর এতো পড়াশোনা ভালো লাগে বলুন। তখন তো মনে শুধু স্বামী সংসার আর প্রেম ভালোবাসার কথাই ঘুরে। ”
শান আমার সামনে আসা চুল গুলো আলতো হাতে সরিয়ে দিয়ে বললো,
“তো আমি কি করতে পারি আপনার জন্য? ”
আমি নিজের দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে বললাম,
“আপনি চাইলে আমি পড়াশোনাটা বন্ধ করে দিতে পারি। এতো পড়াশোনা করে কি হবে বলুন আমার বাবা বা স্বামীর তো কিছু কম নেই তাই না । আপনারা তো আর জব করতে দিবেন না আমাকে তাহলে শুধু শুধু এতো কষ্ট করে কি লাভ। সংসার সামলানো আর বাচ্চা কাচ্ছা মানুষ করার জন্য যেটুকু পড়াশোনা করেছি সেটাই যথেষ্ট তাই না তাই বলছি কি পড়াটা ছেড়ে দি কেমন। ”

শান খানিকটা টেনে বললো,
“ওহ তাই বলো।”

আমি টেবিলে এক হাত রেখে আরেক হাত একগালে রেখে উনার দিকে তাকিয়ে রইলাম।উনি আমার কাছে আরেকটু এগিয়ে এলেন আমি হাসলাম তাহলে কাজ হয়েছে। পরক্ষনেই এগিয়ে এসে আমার কপালের মাঝ বরাবর উনার হাত দিয়ে জোরে একটা টোকা মারলেন। আমি “আহ” শব্দ করে কপালে হাত দিলাম। আর উনার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে কপাল ঢলতে ঢলতে বললাম,

“এটা কি করলেন আপনি? ”
উনি ধমক দিয়ে বললো,
“যখন রেমান্স করতে বলি তখন তো এসব আসে না শুধু পড়তে বসলেই যতসব শয়তানি বুদ্ধি মাথায় আসে তাই না। তুমি কি ভেবেছো আমাকে সিডিউস করে পড়া থেকে বেঁচে যাবে। ফালতু আইডিয়া আসে কি করে মাথায়? ”

উনার ধমক খেয়ে আমি মাথা নিচু করে রইলাম। উনি আবার বললো,
“তোমাকে কে বলেছে মানুষ শুধু পড়াশোনা জব পাওয়ার জন্য করে। এসব চিন্তা ভাবনা করে পড়াশোনা করলে কখনোই জীবনে কিছু করতে পারবে না। পড়াশোনা করার মূল লক্ষ্য হলো জ্ঞান অর্জন করা। জ্ঞানের সর্বোচ্চ শেখরে আহরণ করা বুঝেছো। পড়াশোনা করে একজন উপযুক্ত উচ্চতর জ্ঞান, বুদ্ধি, মানবিকতা, মনুষ্যত্ববোধ সম্পন্ন মানুষ হওয়াটাই বড় কথা সেটা ভেবে পড়াশোনা করা উচিত।আমি চাই না কেউ কখনো তোমার উপর আঙ্গুল তুলুক। তুমি আমার ওয়াইফ সুতরাং আমার সম্মানের জন্য হলেও তোমাকে পড়তে হবে বুঝতে পেরেছো। ”

আমি “হ্যাঁ সূচক” মাথা নাড়ালাম। কিন্তু মনে মনে অকথ্য ভাষায় গালি দিলাম উনাকে।এই পড়াশোনা আমার কোনো কালেই ভালো লাগতো না। ভেবেছিলাম বিয়ের পর পড়ালেখা ছেড়ে দেবো কিন্তু কি করার ভাগ্য যদি খুব খারাপ হয় তাহলে এমনই রুড হাজবেন্ড কপালে জোটে।

উনি আমার থেকে বইটা কেড়ে নিয়ে বললো,
“দেখি পড়া দেও। আগে সাইন্টিফিক মেথডের স্টেজ গুলো বলো?তারপর বিশ্লেষণ করবে। ”

আমি হা করে তাকিয়ে ছিলাম। কি পড়েছি সবই তো গুলিয়ে ফেলেছি ওনার ধমক শুনে এখন উপায়?

শান আবার বললো,
“এবাবে কি দেখছো যেন জীবনে নামই শুনোনি। পড়া বলো জলদি? ”
আমি পাংশু মুখ করে বললাম,
“বলছি? ”
তারপর আমি আমতা আমতা করে বললাম,
“ডিফাইন দ্যা প্রবলেম, রিভিউ দ্যা লিটারেচার, ফরমুলেটিং এন্ড টেস্টাবল হাইপোথিসিস, সিলেক্ট আ রিসার্চ ডিজাইন কালেক্ট এন্ড অ্যানালাইজ ডাটা survey-ethnography-experiment- existing sources, ডেভেলপ দ্যা কনক্লুশন, দ্যান প্রিপেয়ার…..। ”

এতটুকু বলার পর ভুলে গেছি উফ এতো পড়া থাকতে ওটাই কেন ধরতে হলো ওনাকে। আমি একই ওয়ার্ড দুইতিনবার বললাম বাট মাথায় আসছে না। শান রেগে বললো,
“প্রিপেয়ার এর পরে আর কিছু নেই নাকি একই ওয়ার্ড এতোবার বলছো?”

আমি মুখ কাচুমাচু করে বললাম,
“মনে আসছে না তো। ”

শান বইটা আমার সামনে রেখে বললো,
“পড়া রেখে যতসব ফাউল চিন্তা করলে মনে আসবে কিভাবে দ্রুত পড় আজকে মোট তিনটা চ্যাপ্টার কম্প্লিট করে তারপর উঠবে এখান থেকে। ”

আর কি আবারও পড়তে শুরু করলাম। উফ পড়ছি না ঝুরছি জানি না। এরমধ্যে একবার গেছিলাম ডিনার করতে যদিও ডিনারের আগে ওনাকে পড়া দিয়ে যেতে হয়েছে। ডিনার শেষে আবার এসে পড়তে বসলাম।

শান বিছানায় বসে আছে আর বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে রাত প্রায় বারোটার ঘরে।
“বারোটা বাজছে ঘুমাবো। পড়া শেষ করো কালকে পড়বে আবার।এখন ঘুমাতে এসো।”

আমি এমন ভাব করলাম যেন ওনার কথা শুনতেই পাইনি। আমি নিজের পড়া পড়তে লাগলাম। এতগুলা বকা শুনেছি পড়ার জন্য এখন আবার আল্লাদ বেড়ে গেছে। শান আবারও বললো,
“কি বললাম শুনতে পাওনি। ”

আমি এইবার বিরক্ত হয়ে বললাম,
“আপনার ঘুমানো আপনি ঘুমান না আমার সাথে চিল্লাচ্ছেন কেন অদ্ভুত।আমার পড়া বাকি আছে এখনও। ”

উনি কিছু বললো না। আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার পড়তে শুরু করলাম। হুট করে উনি এসে আমাকে কোলে তুলে নিলেন। আমি হাত পা ছোটা ছুটি করতে লাগলাম,
“এটা কেমন ব্যবহার ছাড়ুন আমাকে আমার পড়া আছে। ”
“পড়ার সময় পড়া ঘুমানোর সময় ঘুমানো।এখন ঘুমের সময় তাই চুপচাপ ঘুমাও। ”

উনি আমাকে বিছানায় এনে শুইয়ে দিলেন। আমি উঠে গিয়ে বললাম,
“ঘুমাবো না আমি ছাড়ুন। ”

কথাটা বলে নিচে নামতে যাবো তৎক্ষণাৎ উনি টেনে আমাকে উনার বুকের উপর ফেললেন,
“এতো রাগ করছ কেন হুম তুমি পড়লে কি আমার লাভ হবে। আমি তো তোমার ভালোর জন্যই বলেছিলাম। আমাদের বাড়ির সবাই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত সেখানে তুমি ইন্টার পর্যন্ত পড়লে কেমন হবে। তোমার ভালো লাগবে কারো কাছে ছোট হতে? ”

আমি মাথা নিচু করে রইলাম।উনি আমার মুখটা উচু করে আমার নাকের সাথে উনার নাক স্লাইড করে আমার ঠোঁটে ছোট করে একটা কিস করলেন,
“তুমি জানো না তোমাকে ছাড়া আমার ঘুম হয় না।তুমি পাশে না থাকলে অসস্থি হয় প্রচন্ড। আমার ভালোবাসার কাছে তোমার রাগ কখনো টিকতে পারবে না তারপরও কেন এমন খামখেয়ালি করো সুইটহার্ট।”

উনার এই নেশাক্ত চাহনীর দিকে তাকানোর ক্ষমতা আমার নেই। অদ্ভুত শিহরণে শিহরিত হই বারবার। তাই নিচেই তাকিয়ে রইলাম। শান বললো,
“ঘুমাও। ”

কথাটা বলেই উনি আমাকে পাশে শুয়ে দিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে উনার বুকের সাথে ধরে ঘুমিয়ে পড়লেন। আর আমিও মুচকি হেসে উনাকে জড়িয়ে ধরলাম। সত্যিই উনার এসব পাগলামির কাছে আমার অভিমান কখনোই টিকতে পারবে না।
.
.
চলবে

বিঃদ্রঃ ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আর আপনাদের অনুভূতি জানাতে ভুলবেন না ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here