#এক_শহর_ভালোবাসা
#পর্ব_৪৫
#সুরাইয়া_নাজিফা
আমি কপালে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে বারবার রায়ান ভাইয়ার বলা কথা ভাবছি আর শান আসার জন্য অপেক্ষা করছি।গাড়ির ভিতরে একটা কথাও বলিনি উনার সাথে।যদিও উনি আসতে আসতে অনেক কথাই বলছিলেন কিন্তু আমি তেমন একটা কথা বলিনি। আমি চেষ্টা করছিলাম বিষয়টা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলার কিন্তু আমি বিফল হয়েছি। এখন যদি আমি এটা মনে চেপে রাখি তাহলে আমি কখনোই ভালো থাকতে পারব না তাই শানের সাথে কথা বলে পরিষ্কার হওয়াটাই ভালো। কিন্তু শান এখনও আসছে না। তখন দেখেছিলাম সাম্য আর আরশ ভাইয়ারদের সাথে কথা বলতে হয়তো ব্যবসা সংক্রান্ত কিছু।আমার শরীরে অস্বস্থি লাগছিলো।কেমন ঘুম ঘুম ভাব। তাই সুয়ে থাকতে থাকতে কখন ঘুমিয়ে গেলাম বুঝতে পারলাম না।
আমার ঘুম ভাঙ্গল কারো শীতল হাতের স্পর্শ পেয়ে। আমি আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালাম। শান আমার পাশে বসে বসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো।শানকে দেখতে পেয়ে তখনকার কথা গুলো আমার মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। শানকে দেখতে পেয়ে আমি দ্রুত উঠে বসলাম শোয়া থেকে।
আমাকে ধরফরিয়ে উঠতে দেখে শান ব্যস্ত কন্ঠে বললো,
“শরীর খারাপ লাগছে?”
আমি শানের দিকে তাকিয়ে “না সূচক ” মাথা নাড়ালাম।
“তাহলে উঠে গেলে যে? ”
আমি উৎকণ্ঠিত হয়ে বললাম,
“আমার আপনার সাথে কিছু কথা আছে। ”
শান কপাল কুচকে বললো,
“এমন কি কথা যেই কথা তোমাকে ঘুমাতে দিচ্ছে না। ”
শান একটু কাছে এসে আমার কানে কানে ফিসফিস করে বললো,
“কোনো স্পেশাল কথা বলতে চাও না কিছু করতে চাও। ”
আমি উনার থেকে একটু দূরে সরে বললাম,
“আমি এখন মোটেও এসবের মুডে নেই আমি একটা সিরিয়াস বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই। ”
শান জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“সিরিয়াস?”
“হুম। ”
“কি কথা?”
আমি কিছুক্ষন নিজের প্রশ্ন গুলো একবার ভেবে নিয়ে জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললাম,
“ঐদিন তানিশার পার্টিতে আমার সাথে কি হয়েছিল?কেন সেদিন আমি অজ্ঞান হয়ে গেছিলাম? আপনি কখন এসেছিলেন? কেন আমার কিছু মনে নেই? ”
“আবার এসব প্রশ্ন?”
“জানতে চাই আমি।”
শান চুপ করে রইল আমি উনাকে চুপ থাকতে দেখে বললাম,
“প্লিজ চুপ করে থাকবেন না উত্তর দিন? ”
“তোমাকে আগেই বলা হয়েছে সবকিছু তারপরেও কেন সেটা বিশ্বাস করছো না । বারবার একই কথা বলো কেন?”
আমি কঠোর গলায় বললাম,
“কারণ সেটাতে কোনো সত্যি কথা ছিল না যে বিশ্বাস করব তাই সত্যি জানতে চাই আমি। ”
“তোমাকে সত্যিই বলেছি। ”
“আপনি মিথ্যেটাকে জোর দিয়ে সত্যি বললে সেটা তো আর সত্যি হয়ে যাবে না। ”
শান রক্তলাল চোখে আমার দিকে তাকালো।আমি বেশ বুঝতে পারছি শানের রাগ হচ্ছে। শান কখনো এটা পছন্দ করে না যে উনার দিকে কেউ আঙ্গুল উঠাক। কিন্তু এখন যদি আমি ভয় পেয়ে চুপ থাকি তাহলে আমি কখনোই সত্যি কথা গুলো জানতে পারব না। শান চোখ বন্ধ করে লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে আবারও আমার দিকে তাকালো। চেষ্টা করছে নিজের রাগটা কন্ট্রোল করার।
“সুইটহার্ট কিসব কথা নিয়ে পড়ে আছো বলোতো ঘুমিয়ে পড় অনেক রাত হয়েছে এমনিতেও তুমি অসুস্থ। ” কথাটা বলেই উনি শুয়ে পড়লেন
“আপনি কথা ঘুরাচ্ছেন। ”
কিন্তু শানের কোনো উত্তর পেলাম না। একটু বিরক্ত হলাম আমি। অদ্ভুত এভাবে চুপ করে থাকার মানে কি?আমি জিভ দিয়ে একটু নিজের ঠোঁট ভিজিয়ে বললাম,
“আজ হাসপাতালে রায়ান ভাইয়ার সাথে দেখা হয়েছিল।”
আমার কথা শুনে শান শোয়া থেকে ধরফরিয়ে উঠে বসল আর অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে ভিত কন্ঠে বললো,
“রায়ান? ওর সাথে কি করে দেখা হলো? ও তো দেশে ছিলো না?কি বলেছে তোমায়? ”
আমি শানের কথা শুনে সরু চোখে শানের দিকে তাকালাম,
“শান আপনার কথা শুনেই মনে হচ্ছে আপনারা কিছুতো লুকাচ্ছেন। আপনি রায়ানের সম্পর্কে এতো জানেন কি করে? আমি যেতটুকু জানি ওর সাথে আপনার একবারই দেখা তাতে নিশ্চয় এতো জানা পরিচিত থাকার কথা না যে ও কখন কোথায় থাকে সেটাও জানবেন।”
শান রাগান্বিত স্বরে বললো,
“তোমাকে কি বলেছে ও প্রথমে সেটা বলো। ”
শানকে এভাবে রাগতে দেখে আমি একটু দম নিয়ে বললাম,
“ও কিছু বলেনি তবে আমি আপনার থেকে জানতে চাই। ”
শান একটা স্বস্তির শ্বাস ফেললো। আজকে রায়ান যদি সোহাকে কিছু বলতো তাহলে হয়তো রায়ানকে আজকে পুঁতে ফেলতো শান। তাহলে তানিশা ঠিকই বলেছে রায়ান পরিবর্তন হয়ে গেছে আশা করি ওর থেকে সোহার আর কোনো বিপদ নেই।
শানকে একদৃষ্টিতে অন্যদিকে তাকিয়ে আকাশ -কুসুম ভাবনা ভাবতে দেখে আমি বললাম,
“কথা বলছেন না কেন?”
আমার কথা শুনে শানের ঘোর কাঁটে। শান আমার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে আমাকে টেনে ওনার বুকের মাঝে নিয়ে আসল তারপর জড়িয়ে ধরে বললো,
“বেখেয়ালি কিছু কথা না যদি সারাজীবন অজানাই থাকে তাহলেই ভালো। সবকথা জানতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই। যদি কারো ভালোর জন্য কোনো কথা লুকানো হয় তাতে কোনো অপরাধ নেই। আমি চাই না তোমার মনে কোনো খারাপ প্রভাব পড়ুক বা তুমি মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ো। শুধু তুমি এতটাই জেনে রাখো তুমি যখন যেই অবস্থাতেই থাকোনা কেন সব সময় সেইফ থাকবে এইখানে আমার বুকের মাঝে। কোনো বিপদ আসার আগে তাকে আমাকে পেড়িয়ে যেতে হবে। সব সময় তোমাকে যত্ন করে আগলে রাখব আমার বুকে। খুব ভালোবাসি তোমায় । ”
শান আমার মাথায় ঠোঁট ছোঁয়ালো শানের কথা শুনে আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।আমি জানি উনি যা করবেন আমার ভালোর জন্যই করবেন হয়তো এই কথা না বলার মাঝেও আমার কিছু ভালোই হবে।
আমিও উনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম,
“আমিও আপনাকে খুব খুব খুব বেশী ভালোবাসি।”
★
★
পরেরদিন সকাল বেলা আমরা দুজনেই উঠে গেলাম। আরো একটা ব্যস্ত সকালের শুরু। তবে প্রতিদিনের মতো আজও মনে একরাশ মুগ্ধতা আর ভালোবাসা ছেয়ে আছে শানের যেই ভালোবাসার মুগ্ধতা থেকে আমি কখনো বের হতে চাই না।
প্রতিদিনের মতো আমি আমার নিজস্ব কাজ গুলো সেড়ে ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিলাম। কারণ এখন আর বাড়ির কাজ খুব একটা আমাকে কেউ করতেই দেয় না। সব আমার দুই আপু সামলে নেয় আর আমি সারাদিন বাচ্চাদের সাথে কাঁটাই। ওড়নাটা গায়ে সেট করে নিয়ে টেবিলের কাছে বই গুছানোর জন্য যেতেই শান প্রশ্ন করল,
“কোথায় যাচ্ছো তুমি? ”
“ভার্সিটিতে। ”
“কোনো প্রয়োজন নেই। ”
আমি গুছানো বন্ধ করে শানের দিকে তাকিয়ে বললাম,
“কেন?”
“কেন কি তুমি যে অসুস্থ সেটা কি ভুলে গেছো। ”
আমি উনার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললাম,
“আমাকে দেখে আপনার কোন দিক থেকে অসুস্থ মনে হয় কত সুন্দর চলে ফিরে বেড়াচ্ছি। ”
“অসুস্থ মানুষকে দেখে অসুস্থ মনে হতে হতেই হবে এমন কোনো কথা আছে কি?”
“সবসময় এমন উল্টা প্রশ্ন না করলে হয় না। ”
“তোমার এতো বেশী কথা না বলে যেটা বললাম সেটা শুনতে ইচ্ছা করে না। ”
আমি মুখ ফুলালাম। উনি হেসে দিলেন। আমার কোমড়ে হাত দিয়ে আমাকে উনার কাছে টেনে নিলেন আর ঠোঁটে আলতো করে একটা ভালোবাসার স্পর্শ একে দিয়ে বললো,
“বাসায় থাকো আর রেস্ট নেও।”
“রিপোর্ট কে আনবে? আমি ভেবেছিলাম আসার পথে নিয়ে আসবো।”
“তোমাকে ভাবতে হবে না আমি বুঝে নেবো তুমি শুধু আমার জানের দিকে খেয়াল রাখো। ”
আমি একটু হাসলাম তারপর উনাকে বিদায় দিয়ে আবারও রুমে এসে একটা ঘুম দিলাম। কিছুক্ষন পর ঘুম থেকে উঠে আরিশের কাছে গেলাম আর সারাদিন ওর সাথেই যেমন খেলাধুলা করে কাঁটাই তেমনই আজকের দিনটাও পার করলাম। বিকাল বেলা ভূমিকা আর স্মৃতি আপু এসে আমার রুমে ঢুকল,
স্মৃতি আপু বললো,
“আচার খাবি? ”
আচারের নাম শুনেই আমার মুখে পানি চলে আসলো,
“কিসের আচার? ”
ভূমিকা আপু বললো,
“আমের আমি আনিয়েছি। ”
আমি ছোঁ মেরে নিয়ে নিলাম আর কাউকে কিছু না বলেই খেতে আরম্ভ করলাম।আচার আনবে আর আমি খাবো না সেটা কি হয় নাকি। আর আজকাল তো একটু বেশীই খেতে মন চায় আচার। শুধু শানকে বলতে পারিনা। উনি এসব খাওয়া পছন্দ করে না। স্মৃতি আপু আর ভূমিকা আপু আমার মুখপানে তাকিয়ে খানিকটা হাসলো। তখনই রহিমা আন্টি হাতে করে খাবার নিয়ে ডুকল।
স্মৃতি আপু বললো,
“খেয়ে নে। ”
আমি আচার খেতে খেতে বললাম,
“না খাবো না। ”
“না খেলে আমি ভাইয়াকে বলব তুই দুপুরেও ঠিকঠাক খাস নি তবে বুঝবি ভাইয়া কিন্তু আমাকে বলে গেছে।”
আমি আচার খাওয়া বাদ দিয়ে বিরক্ত চোখে তাকিয়ে বললাম,
“উফ সবসময় একজন না একজনকে আমার পিছনে লাগিয়েই রাখতে হবে উনার। ”
আমি হাতে খাবারের প্লেটটা তুলে খেতে আরম্ভ করলাম।
ভূমিকা আপু বললো,
“তোমার শরীর কি ঠিক আছে এখন?
“হুম। ”
“রিপোর্ট কি আজকে দিবে। ”
খেতে খেতে আমার হাত আটকে গেল। রিপোর্ট? শিট আমি তো ভুলেই গেছি প্রায় রিপোর্টের কথা। আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম,
“হুম। ”
এভাবে গল্প করতে করতে খাওয়া শেষ করলাম যদিও খাবার পুরাটা শেষ করিনি। যেটুকু পেরেছি খেয়েছি।যদি গল্পে মসগুল না থাকতাম তাহলে ততটুকুও হয়তো পেটে যেত না।
★
★
সন্ধ্যায় গিয়ে বাগানের ওই বেঞ্চটাতে বসলাম।ঘরের মধ্যে কেমন ভ্যাপসা গন্ধ এসে বারবার নাকে ঠেঁকছিল তাই এখানে এসে বসলাম এখন একটু ভালো লাগছে। চারদিকে লাইট জ্বলছে তাই চারপাশটা খুব ভালো দেখা যাচ্ছে। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম শান আসার টাইম হয়েছে।হয়তো আসতে আরেকটু সময় লাগবে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা ছিল রিপোর্ট নিয়ে। রিপোর্টের কথা ভাবতেই মনের মধ্যে সুপ্ত থাকা ভয়টা আবারও জেগে উঠল আচ্ছা রিপোর্ট ভালো আসবে তো। যদি ভুলভাল কিছু হয় তখন। বুকের মধ্যে ডিপডিপ করতে লাগল। তারপরও নিজেকে একটু শান্ত করে বেঞ্চেই বসে রইলাম।
কিছুটা সময় যাওয়ার পর একটু দূর থেকে দেখলাম শান আসছে। শানকে আসতে দেখে আমি উঠে দাঁড়ালাম। শান এক পা দু পা ফেলে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। শানকে দেখে বুকের মধ্যে ছ্যাঁত করে উঠলো। মুখটা কালো করে রেখেছে। একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে। আমার মাথায় খারাপ চিন্তা গুলো বাসা বাঁধতে লাগলো। আমি নিজেকে শান্ত করে শানের উদ্দেশ্যে বললাম,
“গেছিলেন ডাক্তারের কাছে? ”
শান মুখে কিছু না বলে মাথাটা একবার উপর নিচ করে নাড়ালো।আমি আবারও বললাম,
“রিপোর্ট কি হলো? ”
শান কোনো কথা না বলে ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল। হঠাৎ রিপোর্টের কথা জানতে চাইতে শানের ব্যবহারে একটু অবাকই হলাম। শান চোখ বন্ধ করে শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে আছে আর উনার নিঃশ্বাস খুব দ্রুত গতিতে পড়ছে। হৃদপিন্ডের সংকোচন প্রসারণের শব্দটাও যেন আনি শুনতে পাচ্ছি এতটা শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে আমায়। আমি এক হাত শানের পিঠে রেখে বললাম,
“শান? ”
কোনো রেসপন্স করল না আমি আবারও বললাম,
“রিপোর্টের কি হলো বললেন না কিন্তু। ডাক্তার কি কিছু খারা….।”
পুরো কথা বলার আগেই শান আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে আস্তে বলে উঠলো,
“আমাদের মাঝে একটা ছোট্ট প্রাণ আসতে চলেছে সোহা। আমার অংশ ধীরে ধীরে তোমার মাঝে বেড়ে উঠছে। ইউ আর প্রেগন্যান্ট মাই লাভ। ”
শানের কথাটা শুনে একমিনিটের জন্য হয়তো আমার হৃদপিন্ডের চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। কানের মধ্যে শানের বলা শেষের কথাটা প্রতিধ্বনিত হতে থাকল “ইউ আর প্রেগন্যান্ট মাই লাভ। ”
শান আমাকে ছেড়ে দূরে সরে দাঁড়ালো। আমি কাঁপা কাঁপা হাতে নিজের পেটে হাত রাখলাম। কেন জানি বিশ্বাস হচ্ছে না। আমি ধীর কন্ঠে বললাম,
“রিপোর্ট? ”
শান রিপোর্টটা আমার হাতে তুলে দিলো। আমার হাত কাঁপছিল। কাঁপা হাতে রিপোর্টটা আস্তে আস্তে খুললাম। পুরো রিপোর্টের এত লেখার মধ্যে আমার চোখে যেন শুধু “পজেটিভ “লেখার মধ্যে আটকে রইল। আমি ধাপ করে বেঞ্চের উপর বসে পড়লাম। শান এসে হাটু গেড়ে আমার সামনে বসল। আমার হাত ধরে বললো,
“সুইটহার্ট ?”
“শান এটা কি সত্যি?”
“হুম। ”
“আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। ”
শান হাসল,
“তোমার কথা কি বলবো জানো ডাক্তার যখন আমাকে এই কথাটা বলেছিল আমারও একই অবস্থা হয়েছিল। আমিও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে আমি বাবা হবো আর এই ছোট্ট মেয়েটা মা। আমাদের অংশ আর কিছুদিন পর আমার সামনে থাকবে। ছোট্ট ছোট্ট পায়ে পুরো বাড়ি দৌঁড়ে বেড়াবে। তার সব আবদার আমাকে ঘিরে হবে যেগুলো সব আমি পূরণ করব। তার হাসির কলকল ধ্বনিতে বাড়ির আনাচে-কানাচে খুশিরা খেলা করবে।আমার মনে হচ্ছে সব আমি চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। আমার এত খুশি হচ্ছে মনে হয় তোমাকে কোলে তুলে পুরো পৃথিবী বলে বেড়াই আমি বাবা হতে চলেছি। ”
শানের এত খুশি দেখে আমার চোখে পানি চলে এলো। মানুষটা কতটা খুশি হয়েছে। শানের খুশি দেখে আমারও এতো খুশি লাগছে যেটা বলে বুঝানো যাবে না। আমার শরীরে একটা ছোট্ট প্রাণ বেড়ে উঠছে যে কিছু মাস পর আমার সামনে থাকবে তাকে আমি ছুঁতে পারব ভাবতেই খুশিতে দম আঁটকে আসছে।
শান কিছুক্ষন চুপ করে থেকে তারপর আবার বললো,
“কিন্তু তোমার স্ট্যাডি?এভাবে মাঝপথে বেবী? আই থিংক তুমি হয়তো এখন চাওনি আই আ’ম সো স্য…..।”
শান পুরো কথা বলার আগেই আমি আমার হাত দিয়ে উনার মুখ চেঁপে ধরলাম আর এসে উনার সামনেই হাটু গেড়ে বসে বললাম,
“প্লিজ এই কথা বলবেন না। আপনি জানেন আমি কতটা খুশি হয়েছি। এই বেবীটা খুব প্রয়োজন ছিল শান। আর বাকি রইল আমার মাস্টার্স সেটা তো যেকোনো সময়েই শেষ করা যাবে এই বছর নাহলে পরের বছর। এই চিন্তা করে কেউ কখনো নিজের জীবনের এতো সুন্দর অনুভুতি গুলো নষ্ট করে নাকি। এখন আমি যদি কিছু চাই তাহলে এই সময়ের এই অনুভুতি গুলো অনুভব করতে। ”
শানের কপালে কপাল ঠেঁকিয়ে আমরা দুজনেই দুজনের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলাম জীবনে যেই ছোট্ট অভাবটুকু ছিল সেটাও আজ পূর্ন হয়ে জীবনটাই রংধনুর সাত রঙ দিয়ে সেজে গেল।
.
.
চলবে….
বিঃদ্রঃ পার্সোনাল জীবনে একটু ব্যস্ত যার কারণে কালকে গল্পটা দিতে পারিনি এজন্য দুঃখিত। ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ