এক_শ্রাবণ_হাওয়ায়-২ #লেখিকা – কায়ানাত আফরিন #পর্ব – ২০

#এক_শ্রাবণ_হাওয়ায়-২
#লেখিকা – কায়ানাত আফরিন
#পর্ব – ২০
‘ এতই যখন আমি লাজলজ্জাহীন, ক্যারেক্টারলেস, খাটাস; আমার তো উচিত সেগুলোর যথার্থ প্রয়োগ করা। তাই না?’

একথাটা বলেই আমার দিকে এগোলেন আনভীর৷ নিষ্প্রভ দৃষ্টি আমার দিকে। আমি বললাম,

‘ দরকার নেই এসবের। আর….’

‘ আর কি?’

আমায় না বলতে দিয়েই উনি ঝুকে গেলেন৷ আমি মিহিয়ে গেলাম উনার কার্যকলাপ দেখে। খুব একটা সুবিধা আঁচ করতে পারলাম না এখানে। তাই বললাম,

‘ আর দূরে সরুন আমার কাছে থেকে।’

আমি দু’কদম পেছাতেই আনভীর আমার হাত চেপে নিজের কাছে টেনে আনলেন। উনার এহেন কান্ডে বাকশূন্য হয়ে রইলাম আমি। লজ্জা আমায় যেন আবিষ্ট করে রইলো। আনভীর এখনও শুধুমাত্র ট্রাউজার পড়ে দাঁড়িয়ে আছেন। চোখে মুখে বিরাজমান শয়তানী হাসি। এ হাসিটা সুবিধার লাগলো না আমার। তাই হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে বললাম,

‘ দ…দেখুন!’

‘ দেখছি তো তোমায়। খুব ভালোমতো দেখছি। আর কি দেখবো তোমার? ‘

বলেই উনি ঝুঁকে এসে পলকহীন ভাবে পরখ করে নিলেন আমার চোখ থেকে ঠোঁট পর্যন্ত প্রত্যেকটি বিষয়। ঠোঁট নাড়িয়ে আবছাভাবে বললেন,

‘ মাই বেবিগার্ল! ‘

গাল আমার রক্তিম লাল গোলাপের মতো হয়ে গেলো এমন ফিসফিসানো মোহনীয় কন্ঠ শুনে। মানুষটার কন্ঠ কেমন যেনো? অল্পতেই ঘোরে নিয়ে যাওয়ার মতো তুমুল ক্ষমতা রাখে। তাই তো উনার কন্ঠ সবার কাছে এত আকর্ষণীয় বিষয়। আমি পলক ফেলে নিচে তাকিয়ে রইলাম। উনার গহীন চোখে চোখ রাখার সাধ্য আমার নেই। আবার এমন সুঠাম দেহের সিক্ত গড়নে হার্টবিট ক্রমান্বয়ে বাড়ছে আমার। আনভীর এবার বললেন,

‘ তো বলো? তোমায় কি শাস্তি দেবো এখন?’

আমি ইতস্তত বোধ করছি হঠাৎ। সেই সাথে এখনও অবাক হচ্ছি এটা ভেবে সাহেব এখনও শাস্তির কথা ভুলেননি। আমি এবার বললাম,

‘ আপনি ভুলেননি?’

‘ না তো! এআরকে’র ব্রেইন এতটা উইক না যে সে নিজের বেবিগার্লের ভুলটা এত সহজে ভুলে যাবে। তো বলো তো আহি? ফোন সুইচড অফ করে রেখেছিলে কেনো?’

শেষ কথাটি উনি বললেন দাঁতে দাঁত পিষে। এতক্ষণের রম্যতার ভাব নিমিষেই ধোঁয়ার মতো উড়ে গেলো। আমি কিছুক্ষণ নিষ্পলক পানে তাকিয়ে ছিলাম উনার দিকে। একটা মানুষ কিভাবে এত দ্রুত মুড চেন্জ করতে পারে? আমি হাজারো খুজেও এর উত্তর বের করতে পারলাম না।

‘ কি হলো বলো! ফোন সুইচড অফ করে রেখেছিলে কেনো? সাহস বেড়ে গিয়েছে খুব?’

উনার ধমকে চুপসে রইলাম আমি। উনি আবার বললেন,

‘ পর পর দু’টা ভয়াবহ কাজ করেছো তুমি আহি। এক আমার কথা অমান্য করে মোবাইল অফ করেছো আর দ্বিতীয়টা ওই ধ্রুবের সাথে ভাব জমিয়েছো!’

‘ উনি আমার সিনিয়র ডক্টর বুঝেছেন? এছাড়া আর কিছুই না।’

‘ আই ডোন্ট কেয়ার। তুমি ওর সাথে বেশি ভাব জমাবা না দ্যাটস ইট! এখন খামোখা কথা বাড়িয়ে লাভ নেই আহি। তোমার শাস্তিটা যথার্থ করতে হবে তো!’

বলেই উনি টিশার্ট পড়ে চিৎ করে শুয়ে পড়লেন খাটে। ইশারায় আমায় বললেন উনার কাছে থাকতে। উনার বিদ্রুপ হাসির মতিগতি বুঝতে পারলাম না আমি। তাই ভয়ার্ত চোখে ঠায় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম উনার দিকে। উনি এবার বললেন,

‘ কি হলো কাছে আসো?’

ছোট ছোট পায়ে আমি উনার কাছে এগিয়ে গিয়ে খাটে বসলাম। আনভীর এবার আমায় অবাক করে দিয়ে বললেন,

‘ তোমায় আদর করার জন্য কাছে ডাকিনি আহি। ডেকেছি তোমায় শাস্তি দেওয়ার জন্য। আর তোমার শাস্তি হলো…’

বলেই উনি উঠে আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে গেলেন। বলে ওঠলেন,

‘ এখন আমার ঘুমানোর আগ পর্যন্ত তুমি আমার চুল টেনে দিবে। তারপর ঘুমানোর পর আমার যা আধোয়া কাপড় চোপড় আছে সব ধুয়ে ফেলবে।’

বিস্ফোরিত নয়নে আমি তাকালাম উনার দিকে। বললাম,

‘ এত রাতে ধুবো?’

‘ এজন্যই তো এটার নাম শাস্তি। আর আমার শার্ট টিশার্ট প্যান্ট ট্রাউজার সব আজ রাতেই ধুবে। কারন কাল সকালে আমরা এক জায়গায় যাবো।’

‘ কোথায়?’

‘ বাবার কাছে। আগামীকাল বাবা-মায়ের anniversary বলেছেই তো ভাবি। সেখানেই যাবো।’

চোখজোড়া চকচক করে ওঠলো আমার। বললাম,

‘ আপনি যাবেন?’

‘ হুম! ভাবি বলেছে।’

ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বললেন উনি। আমি হাফ ছেড়ে বাচলাম। পরক্ষণে শাস্তির কথাগুলো ভাবতেই মুখে বিরক্তির শব্দ এসে পড়লো। আনভীর বললেন,

‘ কাউন্টডাউন স্টার্ট আহি। আমার চুল টেনে দাও। ঘুমানোর আগ পর্যন্ত এক পাও নড়বে না। তারপর জামাকাপড় গুলো ধুয়ে দেবে।’

আমি বাধ্য মেয়ের মতো চুল টেনে দিতে থাকলাম উনার। অপেক্ষায় আছি কখন ঘুমাবে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে গেলেন আনভীর। হয়তো ক্লান্ত ছিলেন তাই। আমি ভালোভাবে পরখ করে দেখলাম উনাকে যে ঘুমিয়ে গেছে কি না। তারপর আস্তে করে কেটে পড়ার ট্রাই করতেই উনি ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বললেন,

‘ এক পাও নড়বে না। আগে চুল টানো, মাথা টিপো, দ্যান যা করতে বলেছি ওগুলো করো। আজ রাতেই করবে। ‘

আমি রেগেমেগে উনার কাছে বসলাম। মানছি তখন ফোন সুইচড অফ করে আবার ধ্রুব স্যারের সাথে কথা বলাটা উনি পছন্দ করেন না তাই বলে এমন করবেন। ব্যাটা খবিস কোথাকার! বিড়বিড়িয়ে তাই বললাম,

‘ ইচ্ছে করছে গলা টিপে মেরে ফেলি!’

_________

আজকের সকালটা সুন্দর। বাইরে কুয়াশায় আনাগোনায় অন্যরকম লাগছে সবকিছু। এই প্রথম আমি আনভীরের সাথে গাড়িতে উনার পাশাপাশি বসলাম। সচরাচর উনি ড্রাইভ করেন না, হয়তো উনার পার্সোনাল বডিগার্ড করেন বা নাহিদ ভাইয়া করেন। তবে আজ করছেন না, হয়তো ব্যাক্তিগত কাজের উদ্দেশ্যে বাইরে বেরোচ্ছেন তাই।
আমি চুপচাপ ভোরের শহরটা উপভোগ করতে মগ্ন। সকালে সচরাচর জ্যাম কম থাকে। এখনও তাই। কিন্ত চোখে রাজ্যের ঘুম বিরাজ করছে আমার। এর একটি কারন উনার এতগুলো শার্ট টিশার্ট রাতে একা ধুয়েছি আমি। এর জন্য ঠান্ডায় নাকও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মোবাইলে এখনকার তাপমাত্রা চেক করে দেখলাম ১৮° সেলসিয়াস৷

আমি ছোট দম ফেলে তাকালাম আনভীরের দিকে। চিকন গ্লাসের ভেতর দিয়ে সরু দৃষ্টি সামনের সিগন্যালে নিবদ্ধ। জানালা টা খুলতে ইচ্ছে করছিলো খুব। এতে ঘুমটাও কেটে যাবে।আমি তাই বললাম,

‘ আপনাদের ওই বাসায় যেতে কতক্ষণ লাগবে?’

‘ বেশিক্ষণ হয়নি বের হয়েছি। সময় তো লাগবেই।’

বলেই উনি ড্রাইভ করতে মন দিলেন। আমি জানালা খোলার চেষ্টা করতেই উনি এবার ধমকে বললেন,

‘ গ্লাস খুলছো কেন গাড়ির? ঠান্ডা লাগানোর ইচ্ছে আছে?’

আমি চুপসে বসে রইলাম এবার৷ ঠান্ডা তো অলরেডি লেগে গিয়েছে, এখন আর কি লাগবে? গতকাল যে জরিনা খালার মতো আমায় খাটিয়ে গেলো সেই খবর নাই। আমি আড়চোখে তাকালাম উনার দিকে।
আনভীর এক হাত দিয়ে ড্রাইভ করতে মগ্ন। এবার মুখে আর মাক্স বা সানগ্লাস পড়েননি যেটা সচরাচর পড়েন৷ হয়তো এখান থেকে ডাইরেক্ট ডেসটিনেশন এ যাবো বলে। ক্ষণে ক্ষণে হাত ঘড়ি দেখছেন বারবার। সেই সাথে ফেলছেন চোখের পলকও। আমি বলতে বাধ্য যে উনার চোখগুলো আসলে ভয়ঙ্কর ধরনের সুন্দর। ছেলেদের এত সুন্দর চোখ হতে নেই। ঠোঁট দুটো ভিজিয়ে নিচ্ছেন বারবার। হুট করে আমার মনে এক ভয়ঙ্কর চিন্তা আটক হলো। কথা নাই বার্তা নেই হুট করে চুমু দিয়ে দিলাম উনার গালে।

আমি যে এমনটা করবো তা কল্পনাও করতে পারেননি আনভীর। কোনোমতে ব্যালেন্স নিয়ন্ত্রন করে রাস্তার সাইডে গাড়ি চাপালেন। এখানে মানুষজন কম। দূর দূরান্তে শুধু আবাসিক ভবন দেখা গেলেও পথে কোনো মানুষ নেই। মাঝপথে সা সা করে ছুটে চলছে বিলাসবহুল গাড়ি।

আনভীর সিট বেল্ট খুলে শরীর এলিয়ে দিলেন সিটে। কাতর দৃষ্টিতে তাকালেন আমার দিকে। আমি ভড়কে গেলাম। টের পেলাম হার্টবিট বাড়ছে। ক্রমেই বাড়ছে। অন্যরকম লাগছে আনভীরকে।।কাতর কন্ঠে এবার বললেন,

‘ কি করলে তুমি এটা?’
.
.
.
.
.
~চলবে ইনশাআল্লাহ

আসসালামু আলাইকুম। এই চারদিন পারিবারিক অনুষ্ঠানের জন্য ব্যাস্ততায় ছিলাম খুব। আজকেই প্রোগাম শেষ হলে বাড়িতে ফিরে যাবো আমরা। গতকাল ভাইয়ের বাসর ঘর সবাই সাজিয়েছে আর এই অংশ টুকু লিখেছি সবকিছু ফেলে। রি চেক করতে পারিনি তাই ভুলক্রুটি ক্ষমাসুলভ চোখে দেখার অনুরোধ রইলো।
সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here