এক_শ্রাবণ_হাওয়ায়-২ #লেখিকা – কায়ানাত আফরিন #পর্ব – ৩৮

#এক_শ্রাবণ_হাওয়ায়-২
#লেখিকা – কায়ানাত আফরিন
#পর্ব – ৩৮

‘ আমার তোমার মতো একটা কিউট মেয়ে বেবি চাই বুঝলে? তাই নিজেকে প্রস্তুত রাখবে। আজকাল তুমি যেভাবে আমায় পাগল করছো, হয়তো ক’দিন পরই বাবা-মাকে সুসংবাদ দিতে হবে।’

আনভীরের নিভু নিভু কন্ঠে এমন কথা শুনে কান গরম হয়ে গেলো আমার। সামনের পথ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তাই বড় বড় চোখ করে তাকালাম আনভীরের দিকে। উনার চোখ মুখের ভাব প্রতিক্রিয়াহীন। তবে ঠোঁটে বিদ্যমান খুবই সুক্ষ্ম, খুবই সুক্ষ্ম এক ধরনের হাসি। এই হাসির মর্ম বুঝতে পারাতে আমার শরীর দিয়ে অদ্ভুত এক শীতল স্রোত বয়ে গেলো। মাথা হয়ে গিয়েছে শূণ্য। আমায় এভাবে দেখে আনভীর কথা না বলে গাড়ি স্টার্ট করলেন এবার। জিজ্ঞেস করলেন,

‘ প্রস্তুত তো?’

চমকে উঠলাম আমি। উনি কি আমায় বেবি নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলছেন? আল্লাহ! আমি তো ভেবেই অজ্ঞান হওয়ার উপক্রমে আছি আর এই লোক তো সে কথা বলেই আমার জান কেড়ে নিবে। আমি অস্বস্তি নিয়ে বললাম,

‘ মোটেও না।’

আনভীর আমার দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হাসি দিলেন। সিট বেল্ট খুলে আচমকা এগিয়ে এলেন আমার কাছে। ততক্ষণাৎ উনার এমন কান্ডে বাকশূণ্য হয়ে গিয়েছি আমি। নিজের অবস্থান থেকে দু কদম পিছিয়ে সিটের সাথে ঘেষে বসে ভয়ার্ত চোখ করে উনার প্রতি দৃষ্টি আবদ্ধ করলাম৷ আর আমার ভাবনা উড়িয়ে নিঃশব্দে সিট বেল্ট লাগিয়ে দিলেন উনি। কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললেন,

‘ বেবি নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে বলিনি মিসেস আহি। জিজ্ঞেস করছিলাম এখন যাওয়ার জন্য প্রস্তুত তো?’

আমি সচকিত হয়ে ‘ হ্যাঁ’ প্রতিউত্তর দিলাম। আমি ভেবেছিলাম কি আর উনি বলেছেন কি। আনভীর সরে এলেন আমার কাছে থেকে। গাড়ির স্টেয়ারিং ঘুরিয়ে রোড সাইডে নিয়ে গেলেন এবার। ব্যাক মিররের দিকে তাকিয়ে একবার রাস্তা পরখ করে আমার উদ্দেশ্যে অস্ফুট স্বরে বললেন,

‘ আই লাইক ইউর ডার্টি মাইন্ড!’

লজ্জায় জুবুথুবু হয়ে বসে আছি আমি। এসি চলা সত্বেও কপালে জমে উঠেছে বিন্দু বিন্দু ঘাম। আনভীর নীরবে ড্রাইভ করছেন। আমি একটা কথাও বলিনি অস্থিরতায়। হঠাৎ মোবাইলে কলের আওয়াজে আমার ধ্যান কাটলো। স্ক্রিনে ভেসে উঠলো ‘ধ্রুব স্যার’ লিখাটি।

আনভীর ড্রাইভ করা অবস্থাতেই একবার আমার মোবাইলের দিকে আর একবার আমার মুখের দিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকালেন। তড়িঘড়ি করে তাই মোবাইল রেখে দেই আমি। কিন্ত কিছুক্ষণ পর আবার কল আসতেই হতাশায় হাসফাস করতে থাকলাম। এবার কল কেটে দেওয়ার জন্য মোবাইল হাতে নিতেই আনভীর বাঁধা দিলেন আমায়৷ বললেন,

‘ কল রিসিভ করো।’

আমি অপ্রতিভ হয়ে হয়ে পড়লাম। তাই জিজ্ঞেস করলাম,

‘ র-রিসিভ করবো?’

‘ রিসিভ করে আমার কাছে দাও।’

আমায় আরও একধাপ অবাক করে দিয়ে বলে ফেললেন আনভীর। আমি তাজ্জব হয়ে বললাম,

‘ পাগল টাগল হয়ে গেলেন নাকি? আপনি কি কথা বলবেন?’

আনভীর কথা বাড়ালেন না। একহাতে ড্রাইভ করতে করতে অন্যহাত দিয়ে খপ করে ধরে ফেললেন আমার হাতের মোবাইলটি। রিসিভ করে বললেন,

‘ হ্যালো!’

অপরপাশে হয়তো হকচকিয়ে গিয়েছেন ধ্রুব স্যার। আমায় কল দিয়ে হঠাৎ পুরুষালি কন্ঠ শুনে হয়তো খেয়ালই করেননি এই পুরুষালি কন্ঠের অধিকারি মানব আসলে উনার বন্ধু। বস্তুত এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। অপরপাশে ধ্রুব স্যার বললেন,

‘ হ্যালো! এটা কি আহির নাম্বার?’

‘ হ্যাঁ এটা আহির নাম্বার এন্ড আমি ওর উড বি। এনি প্রবলেম? ‘

আমি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকি উনার দিকে। অপরপাশে হয়তো ধ্রুব স্যারও রীতিমতো থতমত খেয়ে গিয়েছেন। বলে উঠলেন,

‘ আহির উড বি আপনি? কই আমায় তো আহি কিছু বললো না?’

আনভীর বিদ্রুপ স্বরে বললেন,

‘ যতটুকু আমি জানি আপনার সাথে আহির প্রফেশনাল লাইফ ছাড়া আর কোনো পার্সোনাল কথা হওয়ার কথা না ড. ধ্রুব।’

‘ আপনি আমার কথাও জানেন?’

‘ তো জানবো না? আহি সবকিছুই বলেছে ওর প্রফেশনাল লাইফের কথা। এমনকি আজকে আপনি ডিনারের অফার করেছেন সেটাও। কিন্ত কি করবো বলুন, আমার উডবি ওয়াইফ মানে তো ওয়াইফই হয়৷ আর তাই আজকে আমি অফার করেছিলাম ডিনারে যাবো। আমার কথা বেচারি আর ফেলতে পারেনি।’

‘ ওহ! এখন বুঝলাম আহির জরুরি প্রোগামের কথা।’

‘ আপনার সাথে কথা বলে ভালো লাগলো বেশ। আহি তো আপনাকে বড় ভাইয়ের মতোই সমীহ করে। প্রবলেম নট ব্রাদার৷ আমাদের বিয়ে হলে আমি সহ আহিকে আর একবার আপনার বাসায় ডিনারে দাওয়াত দিবেন কেমন?রাখি তাহলে।’

বলেই টুট টুট করে কল কেটে দিলেন আনভীর। এতক্ষণ আমার চোখ বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে ছিলো। এই মাত্র কিসব বললেন উনি ধ্রুব স্যারকে? কল কাটা মাত্র আমি খপ করে হাতিয়ে নিলাম মোবাইলটা। অবাক মিশ্রিত গলায় বলে উঠলাম,

‘ কিসব বললেন আপনি উনাকে?’

‘ কিসব বলেছি?’

‘ এইযে আপনি আমার উডবি, বিয়ে করবেন আরও কত কি?’

‘ তো সত্য বলতে চাও যে তুমি আসলে আমার কে?’

আমি চুপ হয়ে গেলাম। আনভীর খানিকটা হেসে ব্যাস্ততম নগরীর পথে মনোনিবেশ করলেন আবার। গাড়ির স্টেয়ারিং ঘুরাতে ঘুরাতে বললেন,

‘ তবে যাই বলো না কেন, যদি ধ্রুব জানে যে ওই মানুষটা ওর নিজেরই বন্ধু এআরকে নির্ঘাত হার্ট এট্যার্ক করবে।’

কথাটি সত্য বটে। আমি কিছু না বলে ঠোঁট চেপে হাসি দিলাম তাই।

___________

নেটফ্লিক্সে ‘কে ড্রামা’ ছেড়েছে নীলু। ওদের বাসায় সচরাচর নেটফ্লিক্স দেখা হয়না। তবে আনভীরের বাড়িতে এসে ভালোই একটা সুযোগ পেয়েছে। আহি যাওয়ার পর সেই যে ড্রইংরুমে টিভি দখল করে বসলো আর সরলো না। নুড়ী আপা একটু পরপর পপকর্ন তো জুস নাহয় অন্য কিছু এনে দিচ্ছে। এদিকে নাহিদ এক ঘন্টার একটা ঘুম দিয়ে এসে দেখলো নীলু সেখানেই আছে যেখানে দেখে রুমে গিয়েছিলো।

ক্ষান্ত হলো নাহিদ। তখনও নীলু টিভিতে মন দিয়ে ছিলো এখনও সেভাবে আছে দেখে কথা বাড়ানোর সুযোগ পেলো না। ডাইনিং টেবিলে খাবারের ঢাকনা গুলো উঠিয়ে দেখলো যে খাবার কি কি আছে। তারপর নীলুর কাছে এসে বলে উঠলো,

‘ ডিনার করবে না?’

নীলু টিভি থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তাকালো নাহিদের দিকে। পরনে একটা লাইট ইয়েলো টিশার্ট যার বুকে বোল্ড ব্ল্যাক ওয়ার্ডে ”N” লিখা। সাথে পড়েছে গ্রে ট্রাউজার। ঘুম থেকে উঠে এসেছে বলে মুখটা অন্যরকম লাগছে।

নীলু কিছুক্ষণ হা হয়ে তাকিয়ে রইলো নাহিদের দিকে। এর চেহারা অনেকটাই এআরকে’র গঠনের। বিশেষ করে চোয়ালের দিকটা। হয়তো এআরকে’র কাজিন বলেই এতটা মিল।

‘ বলছি যে ডিনার করবে না?’

নাহিদের আবার ডাকাতে ধ্যান কাটলো নীলুর। এভাবে ফ্যালফ্যালিয়ে মানুষটার দিকে তাকিয়ে থাকাতে এবার লজ্জা পাচ্ছে বেশ৷ টিভি স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

‘ আপু আসলে খাবো।’

‘ ভাবি ডিনার করতে গিয়েছে আনভীর ভাইয়ের সাথে। উনি কি ভাবিকে না খাইয়ে নিয়ে আসবে?’

নাহিদের এমন কথায় নীলুর ভাব বদলালো না। নির্বিকার কন্ঠে বলে উঠলো,

‘ ক্যান্ডেল লাইট ডিনারে খাওয়া কম রোম্যান্স বেশি হয় বস।আপনি সিঙ্গেল মানুষ তো, বুঝবেন না।’
.
.
.
.
#চলবে ইনশাআল্লাহ

পার্টটা একটু ছোট হয়েছে জানি৷ আজকে দেওয়ার কথা ছিলো না কিন্ত আগামীকাল থেকে পরপর তিনটা অনলাইন এক্সাম থাকবে বলে আজ একটু তাড়াহুড়ো করেই দিয়েছি।
ভুলক্রুটি হলে ধরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ থাকবে 🥰

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here