এক_শ্রাবণ_হাওয়ায় পর্ব – ১১

এক_শ্রাবণ_হাওয়ায় পর্ব – ১১
#লেখিকা – কায়ানাত আফরিন

পিটপিট করে চোখ খুলতেই আমার মুখের অনেকটা কাছাকাছি দেখতে পেলাম আনভীরকে। উনি খাটের একপাশে বসেই মাথা এলিয়ে ঘুমিয়ে আছেন। কালো নরম চুলগুলো কপালে পড়ে আছে সন্তর্পণে। আমি আস্তে করে উঠে বসলাম এখন। গতকাল উনার সাথে কথা কাটাকাটি হওয়ার পর সন্ধ্যার সময় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তারপর কি হয়েছিলো আমার মনে নেই। এর মাঝে আনভীরকে আমার মাথায় জলপট্টি দেওয়ার বিষয়টি মনে করতেই আমি আশেপাশে তাকালাম। একপাশে একটি গামলা আর তোয়ালে পড়ে আছে। আমার বালিশের পাশেই থার্মোমিটার রাখা। নিজেকে কিছুটা ঘর্মাক্ত দেখে আমার বুঝতে বাকি রইলো না যে রাতে জ্বর এসেছিলো আমার। হয়তো শেষ রাতে জ্বর ছাড়ার কারনেই কিছুটা ঘেমে গিয়েছি।সকালের আলো ফুটে অবাধ্য রশ্নিগুলো সারা ঘর আলোকিত করে তুলছে।এর মধ্যে মানুষটার ঘুমন্ত মুখ আরও মোহনীয় ছিলো।

আমি আধো ঘুমন্ত চোখ নিয়ে তাকিয়ে থাকলাম উনার দিকে। আনভীর আজকে নিজের জায়গায় ঘুমান নি। খাটের একপ্রান্তে বসেই দেয়ালে কিছুটা মাথা এলিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন। আমি তপ্তশ্বাস ছাড়লাম এবার। গতকাল উনার সেই জঘণ্য ব্যবহারের কথাগুলো ভাবতেই কান্না পাচ্ছে আবার। আচ্ছা, আমি কি এতটাই খারাপ যে আমায় এতোটা ঘৃণা করেন উনি? আমি তো বলেছিলাম যে সময় হলে আমি নিজেই চলে যাবো তাহলে কেনো উনি এগ্রিমেন্টের কথাটি বলেন বারবার? আবার গতরাতে আমার জ্বরের মধ্যে এতটা কেয়ারিং এর দরকার ছিলো কিসের। সবই কি শুধু দায়িত্ববোধ?আমি চিন্তায় হাত মুঠো করে নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করলাম এবার।

এতদিন আমি উনার সব কিছু মেনে নিয়েছি তবে আর না। এই আমার জন্য কেয়ারিং হবেন আবার এই তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে দু’বার ভাববেন না, আমিও তো মানুষ। এবার আমি মনে মনে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম। এই মানুষটার সকল খারাপ ব্যবহার এড়ানোর জন্য নিজেকে শক্ত হতে হবে আগে। এভাবে দুর্বল থাকলে শুধু উনি কেনো, যে কেউই আমায় অপমান করে বেড়াবেন। এখন থেকে উনি শুধু নামেমাত্র আমার স্বামী, দ্যাটস ইট। আমার টার্গেট একটাই , কোনোভাবে মেডিক্যালে চান্স পাওয়া। তারপর আমি না থাকবো এখানে, না ফিরে যাবো আমার বাবার কাছে। এই পৃথিবীতে এখনও একজন আছে যে আমার দেখাশোনা করতে পারবে।

আমি এবার উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলাম ফ্রেস হওয়ার জন্য। উনাকে একবারও ডাকিনি খাটে ভালোমতো শোয়ার জন্য। এখন থেকে রীতিমতো আমি এড়িয়ে যাবো আনভীরকে।
.
.
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখি উনি খাটে নেই। বিছানাও ইতিমধ্যে গুছিয়ে ফেলেছেন। গামলা-তোয়ালে ওয়াশরুমের দরজার পাশে রাখা। আমি এগুলো তুলে ওয়াশরুমে রেখে দিলাম। আমার উপস্থিত টের পেয়ে উনি বারান্দা থেকে ভেতরে আসলেন। বলে ওঠলেন,

-‘শরীর কেমন এখন তোমার?’

-‘ভালো। ‘

আমার মৃদু প্রতিউত্তর ।আনভীর এবার বললেন,

-‘আমি ওষুধ এনেছি গতরাতে। টেবিলে রাখা আছে। সকালে নাস্তার পর ওগুলো খেয়ে নিলো।’

-ঠিক আছে।
বলেই আমি রুমের বাইরে পা বাড়াচ্ছিলাম। আমি মনে মনে ভাবি যে গতকালের সেই দুর্ব্যবহারের জন্য হয়তো আমার সরি বলবেন। কিন্ত আমায় একবারও আটকালেন না তিনি। আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুমের বাইরে বের হলাম। গতরাতে জ্বরের জন্য শরীর দুর্বল লাগছে বেশ। তার ওপর আবার দেরিতে উঠেছি। শ্বশুড়বাড়িতে এত দেরিতে ওঠাটি সাধারণত কেউই ভালো চোখে দেখেনা। কিন্ত আমায় অবাক করে দিয়ে কেউই কোনোরূপ কোনো আক্ষেপ প্রকাশ করলো না এতে।আমি রান্নাঘরে এগিয়ে যেতে দেখি নুড়ী আপা প্রতিদিনকার মতো রান্নাঘরে কাজ করছে। একপাশে দাঁড়িয়ে আছে শিউলি ভাবি। তবে মা’কে দেখে আমি খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লাম। তিনি নিজ ধ্যানে চা বানাতে মগ্ন। সকালে পড়তে বসার আগে চা খাওয়াটা আমার নিত্যদিনের অভ্যাস। তার ওপর গতরাতের জ্বর সারলেও এখন আদা চা খাওয়ার মতো একটা ইচ্ছে জেগেছে মনে। তাই উনাকে চা বানাতে দেখে কিছু বললাম না আমি। আর যাই হোক, নিজের শ্বাশুড়ি মাকে তো কেউ আর মুখের ওপর বলতে পারেনা যে ,’মা! আমায় চা বানিয়ে দাও।’
তাই ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসলাম। পরিকল্পনা করতে থাকলাম যে আজ সারাদিন কি কি করবো। এর মধ্যে হঠাৎ টেবিলে এক কাপ ধোয়াঁয় ওঠা চা আসাতে আমি আমার পরিকল্পনা কাটিয়ে বিস্মিত হয়েছি। পাশে তাকিয়ে দেখি মা দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের চোখাচোখি হওয়া মাত্রই তিনি মিহি স্বরে বললেন,

-‘চা টা খেয়ে নাও আহি। শরীরের গ্লানিটা একটু দূর হবে।’

আমি মাথা নাড়িয়ে চায়ের পেয়ালাটি হাতে নিয়ে নিলাম। আমার কোণাকোণি চেয়ারে বসে পড়লেন তিনি। আমি উনার নতুন রূপ দেখে কিছুটা অবাক হয়েছি। এই বাড়িতে একমাত্র আনভীরের মা’ই একমাত্র মানুষ যে আমার সাথে খুব যেচে যেচে কথা বলেন । কখনও কখনও তো কথাই বলেন না। ইশারায় বা আকার-ইঙ্গিতে ব্যাপারটি বুঝিয়ে দেন। এককথায় যত কম আমার সাথে কথা বলা যায় তই কম কথা বলার চেষ্টা করেন তিনি। তাই হঠাৎ আমার জন্য চা নিয়ে আসাটা বেশ ভাবিয়ে তুলেছে আমাকে। হয়তো গতরাতে জ্বর ছিলো বলেই শরীরের অবসাদবোধ দূর করার জন্য আমায় বানিয়ে দিয়েছেন। বিষয়টিতে একপ্রকার যেমন খুশি রয়েছে , তেমনই রয়েছে আত্নতৃপ্তি।
কেনা আমার মতো মা’হীনা মেয়ের কাছে এধরনের আদর বড়ই দুষ্প্রাপ্য। হঠাৎ আমায় অশ্রুসিক্ত হতে দেখে মা বিচলিত হয়ে বললেন,

-‘একি আহি! আবার শরীর খারাপ লাগছে?’

-‘না মা। ‘

আমার কথা শুনে তিনি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। আমি বারবার খেয়াল করছি যে উনি হয়তো কিছু বলতে চাচ্ছেন কিন্ত কোনো এক কারনে বলতে পারছেন না। তাই দ্বিধা নিয়ে প্রশ্ন করলাম,

-‘মা আপনি কিছু বলবেন?’

মা ‘হ্যাঁ’ বললেন প্রতিউত্তরে। তারপর কিছসময় মৌনতা কাটানোর পর বললেন,

-‘আনভীরকে তোমার কেমন লাগে আহি?’

এমন প্রশ্ন শুনে বিষম খেলাম আমি। অবাক চোখে উনার দিকে তাকাতেই উনি শুকনো কাশি দিলেন। হয়তো পুত্রবধূর কাছে এমন প্রশ্ন করে বেশ বিব্রত হয়েছেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম,

-‘মানে?’

উনি নিঃশ্বাস ফেললেন এবার। মৃদু কন্ঠে বলে ওঠলেন,

-‘দেখো আহি। আমি আমার কথার দ্বারা কি বোঝাতে চেয়েছি তুমি তা ভালোমতই জানো। তাই কথা ঘুরিয়ে-পেচিয়ে বলবো না। এটা সত্য যে তোমাদের বিয়েটা হয়েছে বরাবরই এক দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে। তবুও তোমরা দুজনেই যে এই বিয়ের দ্বারা এক বন্ধনে আবদ্ধ এটা মানো?’

-‘মানি।’

-‘আমি চাই না যে তোমাদের মধ্যে কোনো দুরত্ব বা ঝামেলা সৃষ্টি হোক। শুরুতে নিজের ছেলের এত পরিবর্তন, একরোখা স্বভাব দেখে কষ্ট পেয়েছিলাম আমি। যেখানে ও বিয়ের জন্যই প্রস্তুত ছিলো না সেখানে হঠাৎ ওর বিয়েটা ভাবিয়ে তুলেছিলো আমাকে। তাই মেনে নিতেও কষ্ট হচ্ছিলো তোমায়। কিন্ত আমি একটু আচঁ করতে পারছি যে আনভীরের তোমার জন্য অনুভূতি আছে। আর সেটাও খুব তীব্র।’

আরও এক দফা বিষম খেলাম আমি। তাই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলাম মায়ের দিকে। উনি নির্বিকার , তবে কিছুটা চাপা ভঙ্গিতে বসে আছে। আমি উনার মতো শ্বাশুড়ি মা কখনোই দেখিনি যে সোজাসাপ্টা নিজের ছেলের ব্যাপারে এভাবে কথা বলে। আমি না পারছি কিছু বলতে না পারছি এখানে থাকতে। উনি আবার বললেন,

-‘গতকাল রাতে সাড়ে বারোটার দিকে জ্বর এসেছিলো তোমার। আনভীর তা দেখে একেবারেই অস্থির হয়ে পড়েছিলো। তোমায় ডাকছিলো কিন্ত জ্বর তোমায় এতটাই কাবু করেছিলো যে গোঙানি ছাড়া আর কোনো শব্দ করোনি। পরে আনভীরের জন্য আজরান একপ্রকার বাধ্য হয়ে পাশের ফ্ল্যাট দেকে আমাদের পরিচিত এক ডাক্তারকে নিয়ে আসে। তিনি বলেন যে স্ট্রেস এর জন্য তোমার এ অবস্থা। আনভীর আবার তখন ওষুধ নিয়ে আসতে গেলো রাত করে। আমি-শিউলি তোমার সাথে বসে থাকতে চেয়েছিলাম কিন্ত আনভীর থাকতে দেয়নি আমাদের। বললো, ও নাকি নিজেই তোমার খেয়াল রাখতে পারবে। এর মানে বুঝো? ও যতই ওর বাবাকে বলুক না কেনো এ বিয়ে ওর অমতে হয়েছে তবুও তোমার প্রতি ওর দুর্বলতা আছে।’

আমি কোনো কথা বললাম না প্রতিউত্তরে। শুধু এটা ভেবে অবাক হলাম যে এই মানুষটাই সন্ধ্যায় আমার সাথে যাচ্ছে তাই ব্যাবহার করেছে আবার রাত পেরোতে না পেরোতেই এত মায়া? উনি যে আসলে চাচ্ছেনটা কি সেগুলো মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। আমি মায়ের অগোচরে ফিচালো হাসি দিলাম এবার। সব উড়িয়ে দিলাম তাচ্ছিল্যতার সাথে। আমার কানে এখনও বাজছে আনভীরের তখনকার বলা সেই কথাগুলো
‘তুমি যতই আমারওপর নিজের বউগিরি দেখাতে আসো না কেন, তুমি আমার কাছে একটা এগ্রিমেন্ট ছাড়া আর কিছু না। আমি যা করছি সবকিছু করছি দায়িত্ববোধের জন্য, কোনো ভালোবাসা-টালোবাসার জন্য নয়, ‘কজ আই হেইট ইউ আহি।’

আমি না চাইতেও বারবার উনি আমায় মনে করিয়ে দেয় যে আমি জাস্ট একটা এগ্রিমেন্ট! ইয়েস, জাস্ট একটা এগ্রিমেন্ট। এবার আর যাই হোক, আগের মতো আর দুর্বল হয়ে থাকবো না আমি। ভুলে যাবো এই মোহনীয় মানুষটাকে।
.
.
বেডরুমে গিয়ে দেখি আনভীর ইতিমধ্যে গোসল সেরে বেরিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শার্ট পড়ছেন। আমি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে ক্লোজেট থেকে জামা বের করতে লাগলাম কোচিংয়ে যাওয়ার জন্য। যদিও আমার কান অধীর হয়ে অপেক্ষা করছে উনার মুখে ‘সরি’ শোনার জন্য। কিন্ত বললোনা সে।আমি হতাশ হয়ে টেবিলে ব্যাগ গুছাতে গেলেই আনভীর ডাক দিলেন,

-‘আহি?’

আমি পেছনে তাকালাম। উনি আয়নার দিকে তাকিয়ে বললেন,

-‘গতকাল তো পড়তে বসোনি।আজকে কোচিং থেকে এসে পড়াগুলো কভার করে নিও। আমি রাতে সেগুলো ধরবো তোমায়।’

বলেই উনি ব্যাগ আর চশমা নি য়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে চলে গেলেন। হতাশ হলাম আমি। সাথে চাড়া দিয়ে উঠলো প্রবল অভিমান। এবারও উনি তাহলে সরি বললেন না আমায়!!

____________

মেডিক্যাল এডিমিশন টেস্টের জন্য আমাদের কোচিংয়ের এই ব্রাঞ্চটিতে মানুষের সমাহার অনেক। এর মধ্যে অনেকের সাথেই ভালো সখ্যতা হয়ে ওঠেছে আমার যার জন্য ক্লাসের নোট নিয়ে তেমন ঝামেলায় পড়তে হয়না। তবে এর মধ্যে আরও একজন আছে যে আমায় অনেক হেল্প করে , সেই মানুষটা হলো ধ্রুব ভাইয়া। উনি যেহেতু এখানে পড়াচ্ছেন তাই পড়াশোনা নিয়ে আমার তেমন একটা অসুবিধে হয়না। উনি ভালোমতোই পড়াগুলো ধরিয়ে দেন । আবার রাতে সেগুলো নিয়ে বসতে হয় আমার প্রফেসর বরের কাছে। উনি মেডিক্যাল স্টুডেন্ট না হলেও জিকে আর বায়োলজির ব্যাপারে ভালোই জ্ঞান আছে। এখন ক্লাস শেষ করে আমার দুজন ক্লাসমেটের সাথে কথা বলছিলাম আমি। তখনই ধ্রুব ভাইয়া ডাকেন আমায়। আমি এগিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

-‘কিছু বলবেন ভাইয়া?’

উনি একগাদা নোট এগিয়ে দিলেন আমার হাতে।বললেন,

-‘আনভীর বললো তোমার বায়োলজিতে নাকি একটু প্রবেম হচ্ছে। তাই তোমার ইজির জন্য এখানে অবজেকটিভ নোট করেছি আনভীরের কথায়।আশা করি সমস্যা হবেনা।’

আমি নিয়ে নিলাম এটি। একটু অবাকও হলাম আনভীরের নামে কথাটি শুনে। আমি ধন্যবাদ বলে ক্লাস থেকে বের হতেই থামিয়ে দিলেন ভাইয়া। বললেন,

-‘এখন ফ্রি আছো আহি?’

-‘জ্বি আছি। তবে কেনো ?’

মিহি হাসলো ধ্রুব। বলে ওঠলো,

-‘পার্কে যাবে?’

আমি প্রশ্নবোধক দৃষ্টি নিয়ে তার দিকে তাকাই। কি বলবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। ধ্রুব আবার বললেন,

-‘তুমি যেই হারে পড়াশোনা করছো, আই থিংক তোমার কিছুটা রিফ্রেসমেন্টের দরকার। তাই বলছিলাম জাস্ট আধঘন্টার জন্য ঘুরে আসতে। পরে নাহয় বাসায় মন দিয়ে পড়ো।’

আমার হঠাৎ মনে পড়লো আনভীরের কথা। উনি না করেছিলেন পড়াশোনা ছাড়া ধ্রুব ভাইয়ার সাথে খুব বেশি একটা কথা না বলতে। সেদিকে উনার সাথে ঘুরলে উনি রেগে যাবেন নিশ্চয়ই। আমি দ্বিধা নিয়ে বললাম,

-‘আজ না ভাইয়া।’

-‘আনভীরের জন্য ভয় পাচ্ছো?’

উনার সন্দেহ জনিত কন্ঠ। আমি মৌন হয়ে রইলাম। ধ্রুব হেসে বললেন,

-‘রিলেক্স । আনভীর কিছুই বলবে না তোমায়। ও তো আর তোমার প্রতি এট্রাক্টেড না যে বেশি পজেসিভ ফীল করবে। তাছাড়া তোমরা জাস্ট এগ্রিমেন্টের জন্যই একসাথে আছো তা তো আমি জানিই। সো চিল, কিছু বলবেনা আনভীর।’

আবার এগ্রিমেন্ট! এই শব্দটা মাথা খেয়ে ফেলছে আমার। একইসাথে রাগ লাগছে আনভীর আর ধ্রুব ভাইয়ার ওপর। তবে আমি ভাবলাম বিষয়টা। উনি তো আরভুল কিছু বলেননি। যেদিকে আমাদের সম্পর্কটা টিকে আছে একটা খসড়া কাগজের জন্য সেখানে বাধা দেওয়ার আনভীর কে?উনি তো স্পষ্টই বলে দিয়েছেন যে আমায় সে ঘৃণা করে। আমি তপ্ত শ্বাস ফেললাম এবার। পড়াশোনা আর মানসিক যন্ত্রণা অতিষ্ঠ করে তুলছে আমায়। তাই মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম আমি।

_________

আকাশ আজ পরিষ্কার। পাখির কলকাকলির আনাগোনায় সুন্দর পরিবেশ।বলতে হবে ধ্রুব ভাইয়া মজার একজন মানুষ। উনার সাথে কিছুক্ষণ হাটাঁহাটি করাতে আমার অবসন্ন মন নিমিষেই ভালো হয়ে গিয়েছে। প্রায় ২০-২৫ মিনিট পার্কে ঘোরাঘোরি করার পর আমি আর ধ্রুব ভাইয়া একটা রিক্সা নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে গেলাম। আমি যদিও না বলেছিলাম যে আমায় বাসায় পৌঁছে দেওয়ার প্রয়োজন নেই কিন্ত উনি শুনলেন না আমার কথা। তাই আমি আর কথা বাড়ালাম না। কলোনির কাছেই রিক্সা থামালাম আমি। আমি নেমে উনাকে বিনয়ী স্বরে বললাম,

-‘আপনিও বাসায় আসুন ভাইয়া?’

উনিও রিক্সা থেমে নামলেন এবার।মিহি হেসে বলেন যে আজ আসবেন না। উনি আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলেন তখনই পেছন থেকে কেউ শীতল কন্ঠে বললো,

-‘এতক্ষণ কোথায় ছিলে আহি?’

আমি চমকে পেছনে তাকালাম এবার। আনভীর দাঁড়িয়ে আছে একটু দূরে। চোখের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ। ভ্রুজোড়া একটু বাকা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি শুকনো ঢোক গিললাম এবার। উনি হঠাৎ এভাবে রেগে গেলেন কেনো?
.
.
.
~চলবে……ইনশাআল্লাহ!!

গতকাল দেইনি বলে আজ কথামতো ১৫০০+ শব্দের বিশাল পর্ব দিয়েছি। আপনাদের মন্তব্যের অপেক্ষায় থাকবো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here