“এখনো ভালোবাসি”💖 পর্ব-৩২

0
3164

“এখনো ভালোবাসি”💖
Writer:TaNia
Part-32

সুখ নামের একটি পাখি আছে।যা সবার কপালে ধরা দেয় না।আবার কেউ পেয়ে খাঁচায় বন্দি করেও তাকে পোষ মানাতে পারে না।কতো আদর,যত্ন তবুও যেনো সুখ পাখিটি নিতে নারায।কি চায়?আল্লাহই ভালো জানে।যখন কেউ মন থেকে একটু শান্তি পেতে চায়,সুখের তাল্লাশে ঘুড়ে বেড়ায় তখনই এই সুখ পাখিটি সব থেকে বেশি অচেনা হয়ে দাঁড়ায়।অথচ আপনি যখন সব আশা ছেড়ে দিবেন। কষ্টটাকে নিজের নিয়তি মনে করে আপন করে নিবেন,তখনই সুখ পাখিটি তার পাখনা মেলে ঝাপটে ধরবে।কিছু সুখ তো আবার অকল্পনীয়।এমনই এক অকল্পনীয় সুখের আবাশ বয়ে যাচ্ছে আয়নের মন মস্তিষ্কে।হাতে থাকা প্রিয়ুর রিপোর্টটির উপর বারবার চোখ পড়ছে।ঝাপসা চোখ তবুও লিখাটি স্পষ্ট ভেসে আসছে,প্রেগনেন্সির রেজাল্ট পজিটিভ।’প জি টি ভ ‘ চারটি অক্ষরের শব্দ।অথচ এটা কতো ভারি একটা শব্দ কেউ কি কখনো চিন্তা করেছে।

–“না করেনি,বরং খুশিতে অনেকে মেতে উঠে আগে।বাবা মায়ের সন্তানের জন্য স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপ শুরু হয় এই চারটি শব্দের পরে।অনাগতো সন্তান হয়তো জানতেই পারে না কখনো, ওর আসার আগেই ওর ভবিষ্যৎ এর চিন্তাও বাবা মা করে ফেলেছে।এটা শুধু তৃপ্তিসাধক সুখ না,এর মধ্যে জড়িয়ে থাকে,সুখ,দায়িত্ব আর অসীম ধৈর্যের।আয়ন প্রস্তুত এসব দায়িত্ব নিতে,কিন্তু আয়নকে ভাবাচ্ছে প্রিয়ু নিতে পাড়বে তো।আমাদের মান অভিমানের পাল্লা এখনো ভারী,এই অবস্থায় এই খবরটি প্রিয়ু কিভাবে নিবে তাই এখন আয়নকে ভাবাচ্ছে।কিন্তু আয়ন খুশি,ভীষন খুশি।দুনিয়ার সব কিছু যদি এখন প্রিয়ুর পায়ে রেখে দিতে পাড়তো তাহলেও হয়তো প্রিয়ুর দেওয়া এই খুশির তুলনায় কম।আয়নের সত্যি আজ প্রিয়ুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে মন চাইছে।আয়ন বুঝতে পাড়ছে না ওর এমন আজব চিন্তার কারণ কি।এটা তো মেয়েদের কাজ।হয়তো মাঝে মাঝে মনও অবুঝ হয়ে যায়।খুব করে ইচ্ছে জাগছে মনে, নিজের অস্তিত্বকে একটু ছুঁয়ে দেখতে।একেই হয়তো বলে,প্রথম বাবা হবার অনুভূতি।”

প্রিয়ুর আজকাল ভার্সিটিতে তেমন যাওয়া হয়না।বেশির ভাগ সময়ই ওর বাড়ীতেই কাটে।তার থেকে বড় কথা নিজের শরীরের কন্ডিশন নিজেই বুঝে উঠতে পাড়ছে না।কখনো খুব খারাপ লাগে,আবার কখনো খুব ভালো।হঠাৎ হঠাৎ আজগুবি চিন্তাভাবনা মাথায় এসে ভর করে।খাওয়াদাওয়ার রুচিও আগের থেকে কমে গেছে।অদ্ভুত অদ্ভুত গন্ধ নাকে এসে বাজে।কখনো কিছু পছন্দ হয় কখনো বা অপছন্দ।এই যেমন এখন নিজের রুমের সাথে এডজাস্ট বালকানিতে দাঁড়িয়ে খুব গভীর চিন্তায় মগ্ন প্রিয়ু।কেউ দেখলে হয়তো বলবে”,ইস রে.. এই পিচ্ছি মেয়েটার মনে না জানি কতো কষ্ট,তাই তো উদাসীন হয়ে ঘুড়ে বেড়ায় সারাক্ষণ।নিজের এই উদাসীনতার কারণ হয়তো প্রিয়ু নিজেও জানে না।”

–“হঠাৎ কারো বাজখাঁই কন্ঠে প্রিয়ু ঘাবড়ে চিন্তার চেতনা থেকে ফিরে আসে।ভয় পেয়ে চকিতে পিছনে তাকাতেই আয়নকে দেখতে পায়।আয়নকে এই সময় বাসায় দেখে কিঞ্চিত আবাক হওয়ার কথা থাকলেও,প্রিয়ু অবাক হবার পরিবর্তে মনটা কেমন খুশি খুশি লাগতে লাগলো।আজ অনেক দিন পর আয়নের কন্ঠ শুনতে পেলো।প্রিয়ু কিছুটা হিসেব করে দেখলো পুরো এক সপ্তাহ একদিন মানে ১৯২ঘন্টা ১১৫২০মিনিট ৬৯১২০০ সেকেন্ড পরে আয়ন প্রিয়ুর সাথে কথা বলছে।অথচ এই সময় টুকু প্রিয়ু কতোটা ছটফট করেছে এই লোকটির একটু কন্ঠ শুনতে তা কি জানে।আমি না হয় অভিমান করে কথা বলিনি।কিন্তু আয়ন কেনো তাকে মানালো না,এতেও প্রিয়ুর অভিমান জমেছে।প্রত্যেক বারতো ধমকিয়ে ঠ্রেড দিয়ে নিজের সব কিছু মানিয়ে নিতো অথচ এবার!এবার যখন প্রিয়ু নিজেই চাইছে আয়ন ওকে মানাক কিন্তু এই লোকটি নিজের ইগোর ঠেলায় আমাকে পোড়াচ্ছে।”

প্রিয়ু সম্বিৎ ফিরে পায়,আয়নের আবারও ঝাজালো কন্ঠে।”এই বেলায় এখানে কি করছিস।আর এখনো তোর লাঞ্চ হয়নি কেনো।কি হলো কথা বলছিস না কেনো।বোবার মতো দাঁড়িয়ে না থেকে জবাব দে।আয়ন কিছুটা তেজে কথাগুলো বলছে।”

–প্রিয়ু মুখটা নিচু করে নিজেই বিরবির করে বলতে লাগলো,”লে শুরু হয়ে গেলো।এই হিটলারের হিটলার গিরি।এতোদিন পর কথা বলছে,একটু ভালো করে মধুমাখা কথা বলবে।না!তা কেনো করবে।অভাবে স্বভাব নষ্ট বলে না।এই লোকের কাছে মধুর অভাব।তাই এতোদিন পর কথার শুরুতেই আবার ঝারি।আমি তো ভুলেই গেছি এই ব্যক্তি তো আবার তিতা করলার রস খেয়ে বড় হয়েছে।মধুমাখা কথা আসবে কিভাবে।”

‘কি হলো কি বিরবির করছিস।আমার কথা কি কানে যায় না।নাকি আমার কথার কোনও মূল্যই নেই তোর কাছে এখন।আসলে আয়ন কিছুটা বিরক্ত প্রিয়ুর উপর।একতো দুপুর টাইমে এই রোদে প্রিয়ু বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা,তার উপর দুপুরের খাবারটাও আজকাল ঠিকমতো নাকি করেনা প্রিয়ু।রুমে আসার সময় নাদিয়া খালার থেকে জানতে পেরে খুব রাগ উঠে গিয়েছিলো প্রিয়ুর উপর আয়নের।’

প্রিয়ুর মুখটা শুকনো করে জবাব দিলো,”আমার ভালো লাগছে না,কিছু খেতে মন চায় না।তাই,খাওয়া হয়নি।আর সারাক্ষণ রুমে থাকতে থাকতে হাফিয়ে যাচ্ছিলাম,তাই একটু বারান্দায় এসে বসেছিলাম।এতে হাইপার হবার কি আছে।”

–আয়ন জোড়ে একটা নিশ্বাস ছেড়ে,ধম নিলো।ভাবছে,হয়তো!এভাবে আসলেই রিয়েক্ট করার কিছুই ছিলো না।এই সময় এমন একটু আকটু হবেই।প্রিয়ুতো জানেই না এখনো কিছু।তাহলে শুধু শুধু ওকে কিছু বলা একদমই বৃথা।আয়ন আগের পিছের সব রাগ ধমিয়ে প্রিয়ুর হাতটি টেনে রুমের সোফাতে বসালো।সার্ভেন্টকে আসার সময় খাবার রুমে নিয়ে আসতে আগেই বলে দিয়েছিলো।সার্ভেন্ট খাবার দিয়ে যাওয়ার পর আয়ন নিজের হাতের শার্টিটি ফোল্ডার করে খাবার মেখে প্রিয়ুর মুখে ধরলো।
“আয়নের এমন কান্ডে প্রিয়ু কেমন আশ্চর্যান্বিত হয়ে আয়নের দিকে তাকালো,কিছু যেনো বলতে গিয়েও বলতে পাড়লো না প্রিয়ু।মুখ দিয়ে কোনও কথাই বের হলো না।বরং চুপচাপ খেয়ে নিলো আয়নের হাতে।প্রিয়ু ভেবেছিলো প্রিয়ু খেতে পাড়বে না,আজকাল ও ঠিকমতো খেতে পারেনা তাই।কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো,প্রিয়ু সত্যি আয়নের হাতে এক প্লেট ভাত খেয়ে ফেললো।কি হলো এটা,বুঝতে পাড়লো না।এটা কি আয়নের হাতের যাদু ছিলো নাকি অন্য কিছু ছিলো।”

তার অবশ্য একটি কারণ ছিলো,আয়ন বুদ্ধি করে প্রিয়ুর জন্য ভাতে লেবু চিপে নিয়ে ছিলো।আয়নের কিছুটা ধারণা ছিলো,হয়তো টক টক লাগলে প্রিয়ু শান্তি মতো খেতে পাড়বে।আর তাই হলো।কিন্তু আয়ন লেবু খেতে পারেনা,তবে আজ প্রিয়ুর জন্য লেবু দিয়ে মাখানো ভাতও তৃপ্তিসহি গিলছে।প্রিয়ুর বিশ্বাস হচ্ছিলো না,আয়নকে খেতে দেখে।কারণ আয়ন লেবু জিনিসটা খুবই অপছন্দ করে।লেবুর শরবতও আয়নের গলা দিয়ে কখনো নামে না।সেই লোক আজ লেবু ভাত খাচ্ছে।কিন্তু কেনো!আজ এতো মায়া কেনো এই ব্যাচারী লেবুর উপর!হাউ!

–“খাবারের মাঝেই আয়ন প্রিয়ুকে কাল সকালে একবার ডাক্তারের কাছে যেতে হবে বলে জানালো।প্রিয়ু অবশ্য প্রশ্ন করেছিলো কেনো?কারণ ওতো ঠিক আছে।তাহলে!
কিন্তু আয়ন কথাটা এড়িয়ে গিয়ে বললো”,কাল গেলেই জানতে পাড়বি।এখন এতো কথার মানে কি।আয়ন মূলত্ব প্রিয়ুর রিয়েকশন নিয়ে চিন্তায় আছে।ব্যাপারটা প্রিয়ু সহয চোখে নিবে নাকি সব বারের মতো এবারও আয়নের উপর দোষ চাপিয়ে দিবে তাই ভাবাচ্ছে।হয়তো প্রিয়ু শোকড হয়ে বলবে,সব তোমার দোষ।তুমি করেছো আমার এ হাল।আমি তোমাকে এই জনমে আর ক্ষমাই করবো না।”

আয়নের এমন ভাবলাহিন উত্তরে প্রিয়ু সন্তুষ্ট না,তবুও আপাততো চুপ থাকলো।কেনো জানি আজ আর আয়নের সাথে তর্ক করতে মন সায় দিলো না।তবে চুপ থাকাটা অবশ্যই ওর জন্য অনেক কষ্টকর ছিলো।
………………………………………
দিশা ও তিয়াশের নতুন সংসার।সব সাজানোই ছিলো তবে সাজানো ঘরটি সংসার বানাতে একটি রমনীর হাত লাগে।রুমগুলোতো যে কেউ সাজাতে পারে তার জন্য শুধু সৌখিনতা হলেই চলে।কিন্তু সেই রুমগুলোর সব কিছু মিলে সংসার বানাতে সবাই পারে না।দিশা মধ্যবিত্তের ঘরের মেয়ে।গায়ের র একটু চাপা বলে,মা খুব ছোট থেকেই মেয়েকে রান্নাবান্নায় নিপুন বানিয়েছে।যাতে পরের ঘরে গেলে,দিশার গুণে যাতে ওর গায়ের রং চাপা পড়ে যায়।আজ মায়ের শিখানো গুণগুলোই দিশার সংসারে কাজে লাগছে।নিজের ছোট সংসার কে নিজের মতো সাজিয়ে দিশা, তিয়াশ আর অনিকের জন্য রান্না করতাছে।

–“দুজন টুনাটুনির সংসার দেখতে অনিকও এসেছে আজ।সারাকেও আসতে বলেছিলো অনিক,কিন্তু সারাতো মা ভক্ত।তাই ভাইয়ের বউয়ের মুখ দেখতেও রাজিনা।অনিকের মাঝে মাঝে টেনশন হয় অতি মা ভক্ত সারাকে দেখলে।কারণ বেশি চালাকে গলায় দড়ি বলতে একটা কথা আছে না, অনিকের ক্ষেত্রে না আবার তাই ঘটে।তাই অনিকের ভয় হয়।শ্বাসুরীর অতি চালাকের কারণে অবশেষ ওর সংসারটা না ভেঙ্গে যায়।”

তিয়াশ দিশাকে রান্নার কাজে হেল্প করছে,কিন্তু দিশার মনে হচ্ছে তিয়াশের হেল্প নেওয়ার চেয়ে কলা গাছে দড়ি বেধে ঝুলিয়ে পড়া ভালো।কারণ,তিয়াশ উল্টা একটা কাজের জায়গায়,দিশার দুটো কাজ বাড়াচ্ছে।এতে দিশারও রান্না করতে দেরি হয়ে যাচ্ছে।অথচ তিয়াশের কোনও রিয়েকশন নেই।বরং হাতে একটা খাতা নিয়ে দিশাকে বাতাস করতে লাগলো দিশা যাতে আগুনের এই শিখায় না ঘামে।প্রিয়তমার জন্য যতো অদ্ভুট চিন্তা ওর।কিন্তু এতে দিশার চুলা বারবার নিভে যাচ্ছে।দিশা মেঝাজ খিটমিট করে তিয়াশের দিকে তাকালো।”সমস্যা কি?”

–আরে!আমার কি সমস্যা।আমি তো তোমাকে সাহায্য করছি।দেখোনা তুমি গরমে গেমে একাকার।রান্নায়তে তো হাত লাগাতে দেওনা,তাই ভাবলাম বউয়ের একটু সেবা করি এভাবেই।

‘আমি কি বলেছি তোমাকে সাহায্য করতে,দেখতে পাওনা তোমার কারণে বারবার আমার চুলা নিভে যাচ্ছে।পাগল তুমি?বুঝো না।দিশা কিছুটা চিল্লিয়েই কথাগুলো বলেছিলো।’

–“দিশার চেঁচানো শব্দ শুনে অনিকও দৌড়ে এলো রান্না ঘরের দিকে।কি হয়েছে তোদের বিয়ে হতেনা হতে ঝগড়া শুরু করে দিলি তোরা।কি আশ্চর্য!লোকে শুনলে বলবে কি?বলতো.. ”

“দিশা নিজেকে কিছুটা শান্ত করে,না ভাইয়া আমরা ঝগড়া করছি না।এমননেই আর কি….।”

–“হুম,আমাকে আর বোঝাতে হবে না।আমি তোমাদের পর না বুঝলে।এখন বল সমস্যা কি।তিয়াশ তুই বল।আর মুখটা এমন বাংলা পাঁচের মতো করে রেখেছিস কেন রে।বউ মেরেছে।ওই দিশা তুমি আমার ভাইকে মেরেছো।”

কি বলছেন ভাইয়া।আমি কেনো তিয়াশকে মারবো।ওকেই জিঙ্গেস করেন ওর গুনের কথা,তারপর আপনিই বিচার করুন।

–“আর বলিস না ভাই,আজকাল তো উপকারের কোনও কদরই নাই বুঝলি।কি ভাবলাম বউয়ের সেবা করে বাহ বা পাবো।পাইতাছি কি জানিস, ধমক!”

“আরে বাহ!এতো তারাতারি এতো কিছু।তো কি সেবা করছিলি। একটু শুনি।”

–গরমে কতোক্ষণ ধরে রান্না করছে ম্যাডাম,ভাবছিলাম একটু বাতাস করি ওর আড়াম লাগবে।তাই এই খাতাটা দিয়ে বাতাস করছিলাম।আর এতেই ম্যাডাম রেগে ফায়ার।
বলে কিনা….তিয়াশকে শেষ করতে না দিয়েই অনিক বললো।
“আরে হাদারাম,তুই তো দেখি আচ্ছা একটা গবেট।”

‘দিশা মনে মনে ভাবলো,যাক এক ভাইয়ের তো জ্ঞান আছে।বলার আগেই সমস্যা বুঝে গেলো।কিন্তু ওর এই ধারণা কিছুক্ষণের মধ্যেই ভুল বলে প্রমাণিত হলো।দিশা আর ভাবতে পাড়লো না অনিকের কান্ড দেখে।’

–“অনিক ডায়নিং রুমে রাখা চার্য ধারা চলিত ছোট একটা টেবিল ফ্যান এনে দিশার সামনে ছাড়তে ছাড়তে বললো।এখনতো ডিজিটেল যুগ।সব কিছু আধুনিকের ছোঁয়াছুঁয়ি আর তুই কিনা এখনো হাত দিয়ে বাতাস করছিস।শালা পাগলনি।দেখ আমার বুদ্ধি….।”

–ফ্যান ছাড়ার সাথেসাথে দিশার পাশের প্লেটে রাখা গুড়া মশলা সব বাতাসে উড়তে লাগলো।এখানে অল্প কিছু লঙ্কার গুড়াও ছিলো।দিশা নাকমুখ খিঁচে একটা চিৎকার দিলো।দিশার এমন ভুবন কাঁপানো চিৎকারে তিয়াশ ও অনিক বুঝতে পাড়লো ব্যাপারটা।আসলে ওরা কতো বড় গাধামি করে ফেললো।দিশার অবস্থা দেখে,অনিক উল্টাপায়ে আবার দৌড় দিলো বাড়ীর দিকে।হয়তো এই জনমে তিয়াশের বাড়ীর ত্রিসীমানায়ও আর পা বাড়াবে না।এমন দৌড় মনে হয় চোর ধরতেও কেউ দেয়নি।আর তিয়াশতো ব্যাচারা অসহায় বিড়ালের মতো চুপসে গেলো।আজ যে ওর গৃহিণী ওকে তেল লাবণ ছাড়াই কড়াইতে ভাজবে সেটা ভাবতে বৈকি।দিশা তিয়াশের চৌদ্দগোষ্ঠিরে গালি দিতে দিতে বাথরুমের দিকে ছুটলো।পাড়ছে না তিয়াশ আর অনিককে এখনই খুন করে ফেলতে।
…………………………………
তিতির আর দিনেশের কালকের প্রেজেন্টেশন ভালোই হয়েছে।সবাই ওদের প্রেজেন্টেশন এর অনেক তারিফও করেছে।বাকি এখন সুজেত বোসের হাতে।দেখা যাক কি হয়।তবে আজ সারাদিন দিনেশ আর তিতির কোনও কাজ নেই।তবে রাতে সুজেত বোস একটা পার্টির ইনভাইটেশন দিয়েছে।দিনেশ আর তিতিরকে সেখানেই উপস্থিত থাকতে হবে।যেহেতু আজ দিনের সময়টায় ওরা ফ্রি তাই দিনেশ তিতিরকে লন্ডন শহর ঘুরাতে নিয়ে গেলো।

–“প্রছন্ড শীত বর্তমানে লন্ডন শহরে।কাল রাত বৃষ্টি হয়েছিলো,এরপর আবার সকাল থেকেই তুষার বৃষ্টির সম্ভাবনাও জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।কিন্তু তিতির মনে হলো বাঙ্গালিদের এই তুষারবৃষ্টিপাত দেখারও সৌভাগ্য লাগে।তিতির তাই রিস্ক নিয়েই দিনেশের সাথে বের হলো,হয়তো ভাগ্যে থাকলে তুষারবৃষ্টিপাত দেখা মিলবে।”

‘প্রথমেই তিতির ও দিনেশ গেলো হাইড পার্ক।লন্ডনে এলে এখানে একবার আসতেই হবে।কারণ এটি লন্ডনের বিশাল রয়্যাল পার্ক।পার্কটি বিশাল জায়গা জুড়ে বিস্তৃত।যেখানে চোখ যাবে গাছ আর গাছে ভরা প্রকৃতি চোখে পড়বে।চোখ ধাঁধানো সেই সৌন্দর্য।প্রকৃতির প্রেমে পড়ে যাবে যে কেউ।চারদিকে সারি সারি বিশাল আকারের গাছ,বড় মাঠ,পার্কে বসার স্থান সব মিলিয়ে একটি ধারুন জায়গা।এখানকার স্থানীয়,মানুষরা সকালে এই পরিবেশে জগিং করতে আসে।কেউ দৌড়িয়ে কেউ বা সাইকেল করে।কারো কারো আড্ডার আসর জমেছে পার্কের বেঞ্চগুলোতে।পার্কের ভেতর একটা বিশাল বড় লেক আছে।লেকের পাড়ে একটু সামনে যেতেই চোখে পড়ে ডানা মেলে উড়ে বেড়াচ্ছে কতো নাম না জানা প্রজাপতি।মজার বিষয় হলো এই লেকগুলোতে হাস আর কবুতরও দেখা গিয়েছিলো।তবে এদের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলেই ফুড়ুৎ করে উড়ে চলে যায়।’

–তিতির ও দিনেশ লেকের পাড়ে পাতানো একটা বেঞ্চে বসে,নয়ন ভরে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করছে।চারদিকে এখনো অনেক ঠান্ডা।শীতের পোষাকে আব্রত তিতির মুখটি ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে না।হঠাৎ দিনেশের কথায় তিতিরের উৎফুল্ল মনটা নিমিষেই ধোঁয়াশায় ছেয়ে গেলো।

যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে,
অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুছবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
ছবি আমার বুকে বেঁধে
পাগল হ’লে কেঁদে কেঁদে
ফিরবে মর” কানন গিরি,
সাগর আকাশ বাতাস চিরি’
যেদিন আমায় খুঁজবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!
কবি-কাজী নজরুল ইসলাম।

দিনেশের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন তিতির।কিন্তু তবুও দিনেশের মুখের অভিব্যপ্তি বুঝতে পাড়লো না।কারণ দিনেশ একটি বারও তিতির দিকে তাকালো না।তা দেখে তিতির নিজেও মুখ ঘুড়িয়ে সামনে নিক্ষেপ করলো।কিছুক্ষন চুপ থেকে হঠাৎ তিতির কাপা কন্ঠে নিজেই বললো,”লোরিন দেখতে খুব সুন্দর স্যার।আপনার সাথে ভালো মানাবে।আর লোরিন ম্যামও আপনাকে খুব পছন্দ করে,আমার মনে হয় আপনি হয়তো কিছুটা… তিতির কথা শেষ করার আগেই দিনেশ ওকে একদম কাছে টেনে নিলো।এতোটা কাছে যে এই ঠান্ডা আবহাওয়ায় দিনেশের গভীর নিশ্বাসগুলোর গরম বাতাস আচড়ে পড়ছে তিতির সারা মুখে।দিনেশ ফেডআপ এখন তিতির উপর।তাই কিছুটা রাগ দেখিয়ে দাঁতেদাঁত চেপে বললো..

“ভালোবাসবে না? না বাসো।বারবার এতো বাহানা কেনো করো।আমাকে তোমার কি মনে হয়।রাস্তার লোফার,নাকি আরো জগন্য।যার কারণে যাকে পাও তাকেই আমার গলায় ঝুলিয়ে ফেলতে চাও।আমার ভালো কিসে আমি বুঝি,তোমাকে এই নিয়ে টেনশন করে ঘুম হারাম করতে বলেনি।আমার ভালোবাসাকে অবহেলা করে দূরে সরিয়ে দেওয়া,এটা তোমার ইচ্ছা।তাই বলে নিজের মাথা ব্যাথার জন্য,আমাকেও মেডিসিন খেতে বলবে,মানবো না।
ভালোবাসা কোনও উপন্যাসের বই না,যে ইচ্ছে হলেই মাঝ পথে পড়া ছেড়ে দিবো।বা অন্য আরেকটা লেখকের বই নিয়ে বসে পড়বো।ভালোবাসা তো এমন একটা জিনিস যার সান্নিধ্যে এসে একজন অপদার্থও উপন্যাস লিখে ফেলে।আমি ভালোবাসি তোমাকে।আর এটা সত্য।এই সত্যকে না তুমি পাল্টাতে পাড়বে না আমি পাল্টাতে দিবো কখনো।দরকার পড়লে সারা জীবন সন্নাসীদের মতো সংসার ছাড়াই ঘুড়ে বেড়াবো।তবুও তোমার জায়গায় অন্য কাউকে বসতে দিবো না।মাইন্ড ইট।আর তুমিও চেষ্টা করবে না।

চলবে…।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here