এমনও প্রেম হয় পর্ব:-১২

0
1219

#এমনও_প্রেম_হয়
#ইয়ানা_রহমান
#পর্ব:-১২

লিয়ার চোখে বিশাল শূন্যতা। কোন কিছুতেই হেলদোল নেই। জানালা দিয়ে রাতের আকাশের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। আশেপাশে কি হচ্ছে সে ফিরেও তাকাচ্ছে না।

রাতের ওই অন্ধকার আকাশটার মতই আমার জীবন। যেখানে আছে বিভীষিকাময় ঘোর অন্ধকার।
নিকষ কালো রাতের আঁধার তো একসময় ফুরাবে। ফুটে উঠবে ভোরের আলো কিন্তু আমার জীবনের ভোর কোনদিন আর হবে না। চির অমাবশ্যার অন্ধকারে ছেয়ে গেলো আমার জীবন। কত স্বপ্ন ছিলো চোখে, কত আশায় বুক বেধেছিলাম। ভালোবাসার মানুষেকে আপন করে কাছে পাবার কত সখ ছিলো। সব আশা আকাঙ্ক্ষা সমাপ্তি ঘটেছে চোখের পলকেই। সব স্বপ্ন ভেঙে খান খান হয়ে গেছে।

মৃত্যু দূতও ফিরে গেছে, সাথে করে নিয়ে যায়নি। এই জীবনে আর ফিরে আসতে তো চাইনি। তবুও পাড়ি দেয়া হলো না জীবন নদী।

পাশেই ওর আম্মু বসে আছে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে কিন্তু ও মায়ের দিকে ফিরেও তাকায়নি।

লিয়ার বাবা মিজান সাহেব লিয়াকে খাওয়ানোর জন্য গরম গরম চিকেন সুপ নিয়ে এলো।

লিয়ার মাকে বললো, তুমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে, খাওয়া দাওয়া করে নাও।

লিয়াকে হসপিটালে নেওয়ার পর থেকে তুমি কিছুই মুখে দাওনি।

না, আমি আমার মেয়েকে রেখে কোথাও যাবো না।
আমার ক্ষুধা নেই, পরে খাবো।
আমি ওর কাছেই থাকবো এখন।

তুমি ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নাও প্লিজ। আমার কথা শোন। আর যন্ত্রণা নিতে পারছি না।
তোমাকে খুব বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে। তুমি এমন করলে অসুস্থ হয়ে পড়বে।

যাও প্লিজ। যা বলছি শোনো।
তুমি খেয়ে এসে বসবে ওর কাছে, তারপর আমি যাবো।


আমি ওকে স্যুপ খাইয়ে মেডিসিন খাইয়ে দিবো।
তুমি না আসা পর্যন্ত আমি ওর কাছে বসছি, তুমি যাও।

ওর মা আর কথা বাড়ালো না।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও চলে গেল সেখান থেকে।


লিয়া গলা ব্যথার কারণে স্পষ্ট শব্দে কথা বলতে পারছে না। ফ্যাসফেসে গলায় বললো স্যুপ খেতে পারবে না।

বললো গলায় অনেক ব্যাথা করছে আব্বু। আমি এখন কিছু খাবো না।
ঢোক গিলতেই অনেক কষ্ট হচ্ছে, স্যুপ খেতে পারবো না।


মিজান সাহেব বুঝতে পরলো, স্টমাক ওয়াশ করার সময় গলায় মোটা পাইপ ঢোকানোর কারণে গলায় ব্যাথা হচ্ছে ওর।
কিন্তু সেটা ওকে বললো না আর বুঝতেও দিলো না।

শুধু বললো, মনে হয় তোর ঠাণ্ডা লাগছে, কারন আই সি ইউ র ভিতরে সর্বক্ষণ এসি অন থাকে।
আর বাসায় তো আমরা সারাদিন এসি অন রাখি না।
তাই ঠান্ডায় তোর গলা ব্যাথা করছে।


এই গরম স্যুপটা খেয়ে নে গলার ব্যাথা কিছুটা কমবে। তারপর দুই এক দিনের মধ্যেই ধীরে ধীরে ব্যাথা একদম সেরে যাবে।

লিয়া কিছুতেই খেতে চাইলো না। শোয়া থেকে উঠেও বসলো না।

মিজানুর রহমান খুব বুঝিয়ে আদর করে খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসালেন পিঠে বালিশ দিয়ে।

লিয়া কখনোই বাবা মায়ের অবাধ্যতা করেনি, এখনও করলো না।

কষ্ট হলেও সামান্য
স্যুপ খেয়ে নিলো।


লিয়াকে ওর বাবা স্যুপ খাওয়ালো, মেডিসিন দিলো।
তারপর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকলো।
কিছুক্ষণ পর ও ঘুমিয়ে পরলো।


রিয়া লিয়ার ঘরে এসে দেখলো ওর আব্বু আপুর পাশে বসে আছে।

রিয়া বললো,
আব্বু তুমি ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নাও, আমি আপুর কাছে বসছি।

তুই বসবি? তাহলে কোন শব্দ করিস না। মাত্রই ঘুমিয়েছে ও।

রিয়াকে লিয়ার পাশে চুপটি করে বসে থাকতে বলে ওর বাবা নিজের ঘরের দিকে যাওয়ার জন্য দাড়ালো।
আমি একটু পরই আসছি বলে উঠে গেলো।

মিজান সাহেব ফ্রেশ হয়ে টেবিলে এসে বসে ভাত খেতে।

লিয়ার মা আর বাবা ভাত খেতে বসে।

তুমি প্লেটে ভাত রেডি করো আমি আসছি।

লিয়ার ঘরে গিয়ে দেখে রিয়া বসে আছে আর লিয়া ঘুমাচ্ছে।

রিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে একটু বসে থাক, আমি ভাত খেয়ে আসি।

রিয়া বললো আচ্ছা, আমি আছি আপুর কাছে। তুমি খেতে যাও আব্বু।


মিজান সাহেব ভাত খেতে বসলো।

আফরোজা বললো কি দেখে এলে।

লিয়া ঘুমাচ্ছে কোন সমস্যা নেই।
রিয়া পাশে বসে আছে।

আফরোজা বললো,
রিয়ার কাছে শুনলাম উদয় ফোন করছিলো। লিয়ার কথা জিজ্ঞেস করছে। ওর ফোন বন্ধ পেয়ে ল্যান্ড ফোনে কল করছে।

এখন কি বলবো ওকে?
ওতো কাল আবার ফোন করবে।

লিয়ার সাথে কথা বলতে চাইবে।
তখন কি বলবো।


দুই চার দিন একটু ম্যানেজ করো, তারপর দেখি কি করা যায়।

এখন এই ব্যাপারে লিয়ার সাথে কোন কথা বলতে যেও না।
ও মানসিক ভাবে একটু স্ট্যাবল হোক।

আফরোজা মেয়ের সাথে ঘুমাবে বলে ওর ঘরে এলো।

এক মুহুর্ত মেয়েকে একা রাখতে চায় না সে।

আবার কখন কি করে বসে। তার কিচ্ছু ঠিক নেই।

দেখলো লিয়া গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। সে আস্তে করে ওর পাশে শুয়ে পড়লো।

মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে একই কথা ভেবে চলছে, ও কি কারণে এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নিলো। ভেবে কোন কিনারা করতে পারলো না।


আফরোজা ভাবছে,
ও ভালো স্টুডেন্ট, সামনে আর পড়তে পারবে না ভেবে এই কাজ করছে?
নাকি, ওর মত না নিয়ে হুট করে বিয়ে দেয়া তে?
নাকি ও কাউকে পছন্দ করে!!

কাউকে পছন্দ যদি করতো, তবে কিছু না কিছু তো চোখে পড়ত, তেমন কোন লক্ষণ তো দেখেনি ।
এই সব কথা ভেবে চলছে নিজ মনে আফরোজা।
মাথায় কাজ করছে না।

কেন এমন হলো?
ক্লান্ত অবসন্ন শরীর একসময় সে নিজেও ঘুমিয়ে পরলো।


পরদিন সকালে আফরোজা লিয়াকে দাত ব্রাশ করিয়ে, হাত মুখ ধুয়ে, ফ্রেশ করে দিয়ে কাপড় চেঞ্জ করে দেয়। চুল আঁচড়িয়ে দেয়।

লিয়া বিছানায় বসতে চাইলে ওর মা বলে, টেবিলে চল নাস্তা খাবি।
এখন থেকে আগের মত চলা ফেরা করবি। স্বাভাবিক জীবনযাপন করবি।

ঘরের কোনায় একা একা থাকবি না। মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আদর করে কপালে চুমু দিল।

আমার লক্ষী সোনা মেয়ে।
আমার জান বাচ্চা।


সবাইকে নাস্তা খেতে টেবিলে ডাকে ওর মা। সবাই এলে একসাথে সবাইকে নাস্তা সার্ভ করা হয় ।
পরোটা, ভাজি, সুজির হালুয়া, ডিম, কলা আর চা ।

লিয়ার গলা ব্যাথা তাই জন্য নরম খাবার, দুধে ভেজানো পাউরুটি আর গরম এক মগ হরলিকস।

লিয়ার গায়ে জ্বর আর গলা ব্যথাতো আছেই। খুব সামান্য একটু খেলো সে।

লিয়ার নাস্তা শেষ হলে ওকে মেডিসিন দেয় ওর আব্বু।

নাস্তা খেয়ে মিজান সাহেব লিয়াকে ওর ঘরে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বলে, আম্মু আমি অফিসে যাই।
তুমি রেস্ট করো।
আজকে আমি তারাতারি চলে আসবো। তারপর আমরা সবাই মিলে ছাদে বসে গল্প করবো। লিয়াকে জড়িয়ে ধরে আদর করে কপালে চুমু দিল।


দুপুরে কি রান্না হবে তা বুয়াকে বুঝিয়ে দিয়ে লিয়ার মা মেয়ের কাছে এসে বসে।

তার মাথায় একই চিন্তা ঘুরছে।

মেয়ের কাছে বসে বালিশ থেকে ওর মাথাটা সরিয়ে নিজের কোলে নেয়। অনেক আদরে মমতায় লিয়ার মাথায় মুখে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।

লিয়া আবেগ প্রবণ হয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে কেদে ফেলে।
মেয়ের কান্না দেখে আফরোজা নিজেও কেদে ফেলে।


সরি মা, আমার জন্য তোমাদের অনেক কষ্ট হলো।
আমার কোন উপায় ছিল না।
তাই আমি মরতে চেয়েছিলাম। এই জীবন আমার চাই না।

মেয়েকে আরও জোরে জড়িয়ে ধরে বলে,
কি বলছিস এসব?
কেন মরবি তুই!
মরুক তোর দুশমন ।

কাদতে কাদতে
লিয়া মায়ের কাছে জিয়ানের সব কথা বললো।
ওর সাথে ওয়াদা করার কথাও বলে ।
আমি ভেবেছি জিয়ান পড়াশুনা শেষ করে কানাডা থেকে ফিরে এলে তোমাদের জানাবো ।
আর আমিও আমার পড়াশুনা শেষ করবো এই সময়টাতে।


কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেলো।
আমি এখন কি করবো?

এখন আমার কি করা উচিত, আমি যে চারিদিকে অন্ধকার দেখছি।


ওর মা মেয়ের চোখ মুছিয়ে দিলো।

শোন মা,আমি কিছু কথা বলি সেগুলি মনোযোগ দিয়ে শোন আর বোঝার চেষ্টা কর।

বিয়ে অনেক বড় একটা ব্যাপার।
একবার বিয়ে হয়ে গেলে তা থেকে মুখ
ফিরিয়ে নেয়া যায় না। একজন পুরুষের সাথে একজন নারীর বিয়েটা হয় সম্পূর্ন আল্লাহর ইচ্ছায়।

জন্ম মৃত্যু বিয়ে এই তিনটা জিনিস আল্লাহ নিজের হাতে নিজ দায়িত্বে রেখেছেন। এখানে মানুষের কোন হাত নেই। মানুষ চাইলেও কোন পরিবর্তন করতে পারবে না।

একটু দম নিয়ে আবার বলতে লাগলো,
বিয়ে আল্লাহর পবিত্র কালাম পড়ে তিনবার কবুল বলে সম্পন্ন করা হয়। এখানে দেনমোহর ধার্য করা হয়। উকিল থাকে। সাক্ষী গণের সামনে ইসলামের রীতিনীতি মেনে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করা হয়।
তাই ইসলামে বিয়ে জিনিসটা পবিত্র একটা বন্ধন।

স্বামীর বাম পাজরের হাড় দিয়ে স্ত্রীকে সৃষ্টি করা হইছে।

জিয়ানের বাম পাজরের হাড় দিয়ে তোকে সৃষ্টি করা হয়নি। তাই তার সাথে তোর বিয়েটা হয়নি। হলে নিশ্চয়ই তার সাথেই তোর মিলন হতো।

উদয়ের সাথেই তোর জুড়ি লেখা ছিলো। তাই বিয়েটা যেভাবেই হোক আর যে অবস্থাতেই হোক এটা আল্লাহ পাকের ইচ্ছাতেই হয়েছে।
এজন্য আফসোস করিস না।

আমাদের প্রতিটা পদক্ষেপ আল্লাহর ইচ্ছাতেই হয়। আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া গাছের একটা পাতাও নরে না।

আর একটা কথা মনে রাখিস, সব ভালোবাসা সফল হয় না। আবার কত ভালোবাসা সফল হয়েও শেষ গন্তব্যে পৌঁছুতে পারে না। বিয়ের পর কত শত ভালোবাসার ঘর ভেঙে যেতে দেখেছি।
সব ভালোবাসা সফল হতে হবে এমন কোন কথা নেই।

আল্লাহর ইচ্ছাই সব, এখানে মানুষের করার কিছুই নেই। আল্লাহ যা চাইবেন তাই হবে। আমরা শুধু উসীলা মাত্র।

আমরা শত চেষ্টা করলেও তার ইচ্ছার বাইরে যেতে পারবোনা। এমনকি তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে একটা চুলও বাকা করতে পারবো না।

যে পুরুষের জন্য আল্লাহ যে স্ত্রীলোককে নির্ধারণ করছেন, তার সাথেই তার বিয়ে হবে।
তার সাথেই তার মিলন হবে। জুড়ি আল্লাহর তরফ থেকেই হয়ে আসে।


তুই এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিস। মোটামুটি লেখাপড়া জানিস।
তুই ভাল স্টুডেন্ট।
ভবিষ্যতে আরো পড়বি, তখন এই ব্যাপারে আরও অনেক কিছু জানতে পারবি।
আমার কথাগুলির সত্যতা যাচাই করতে পারবি।
আমি কি সত্যি বললাম, নাকি তোর মন ভুলানোর জন্য বললাম, সব জানতে পারবি।

না আম্মু তুমি মিথ্যা বলোনি। এর কিছু কিছু আমি জানি।
আমি ইসলামিক গল্পের বইয়ে পড়েছি।


কিন্তু মা আমি জিয়ানকে অনেক ভালোবাসি। জিয়ানকে ছাড়া আমি কিছু ভাবতে পারছি না। হতে পারে এই লোকটার সাথে আমার বিয়ে হইছে কিন্তু একে আমি কখনোই মেনে নিতে পারবো না। এই লোকটাকে কখনও ভালোবাসতে পারবো না।

এই কথা বলে না মা, স্বামী নামক মানুষটাকে চেষ্টা করে ভালবাসতে হয় না। ভালোবাসাটা হয়ে যায় তার সাথে। আল্লাহ নিজেই যে এই সম্পর্ক করিয়েছেন, জুড়ি বেধে রেখেছেন অনেক আগে থেকেই।
আল্লাহ তায়ালাই দুজনের অন্তরে অফুরন্ত ভালোবাসায় পূর্ণ করে দেন।

তুই নিজেও পারবি মা, যখন বাবা মায়ের ইচ্ছায় একটা ছেলে আর একটা মেয়ে কবুল বলার মাধ্যমে বিয়ে নামক বন্ধনে আবদ্ধ হয়, তখন আল্লাহর আরশ থেকে রহমত বর্ষন হতে থাকে।
ফেরেশতারা পবিত্র জুটির জন্য দুয়া করতে থাকে।
আর সেই কারণেই একে অন্যের প্রতি ভালোবাসা, মায়া মমতা, দায়িত্ব বোধ জন্ম নেয়। একে অন্যের প্রতিচ্ছবি হয়। একজনের কষ্টে আরেক জন কষ্ট পায়। এক জনের খুশিতে অপর জন আনন্দিত হয়।

আল্লাহ স্বামীকে অনেক মর্যাদার অধিকারী করেছেন।
স্বামীকে ইজ্জত দেয়া সম্মান দেয়া, তার অবাধ্য না হওয়া প্রতিটা স্ত্রীর কর্তব্য।

স্বামীর প্রাপ্য অধিকার, সম্মান,
ভালোবাসা না দিলে আল্লাহ নারাজ হবেন। অনেক গুনাহ হবে।


তাহলে আমি এখন
কি করবো আম্মু?
জিয়ানকে আমি অনেক ভালোবাসি। ওকে ভুলে যাওয়া অসম্ভব। ওকে ভুলবো কিভাবে?
ওকে ভুলে আমি বাঁচবো কেমন করে?

ভুলতেi হবে,
ভুলে যাবার চেষ্টা করতে হবে মা।

কারন তুই এখন বিবাহিতা। তুই একজনের বিবাহিতা স্ত্রী।

জিয়ান তোর জন্য এখন পরপুরুষ।
অন্য পুরুষের চিন্তা মনে আনলেও অনেক পাপ হবে।মহাপাপী হবি তুই।
তুই কি সেই পাপের ভাগী হতে চাস?

না আম্মু আমি পাপের ভাগী হতে চাই না।

তাই বলে উদয়কে ভালোবাসতে ফোর্স করোনা, প্লিজ। তাকে ভালোবাসা আমার পক্ষে একেবারেই অসম্ভব।


আমি বলছিনা যে , উদয়ের সাথে একদিনেই তোর ভালোবাসা হয়ে যাবে। ওকে সময় দিয়ে দেখ তখন দেখবি, একটু একটু করে ভালো লাগতে শুরু করেছে।
কারন এই বন্ধন তো আল্লাহর ইচ্ছায় তৈরি হইছে । এখানে ভালোবাসা হতে বাধ্য। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ভাব
ভালোবাসা হবেই।

আশেপাশেই তোর পরিচিত জনদের মধ্যে দেখ_
আমাকে আর তোর আব্বুকে দেখ, আমরা কেউ কাউকে চিনতাম না
জানতাম না, তারপরও দেখ আমরা দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসি।

কারন এই ভালোবাসা আল্লাহ ই আমাদের মনের মধ্যে সৃষ্টি করে দিয়েছেন।

তোর আর উদয়ের ভালোবাসাও হবে, তবে একটু সময় লাগবে।

পরে আমার কথা মিলিয়ে নিস।

তাহলে তুমি আমাকে কি করতে বলো?


উদয় ফোন দিলে ওর সাথে একটু কথা বললি, একটু গল্প করলি।
তুই নিজেও ওকে একটা কল দিতে পারিস। তাতে দুজন দুজনকে জানতে পারবি, বুঝতে পারবি।

উদয় বাইরে বেড়াতে নিতে চাইলে যাবি। দেখবি ভাল লাগবে । উদয় ভালো ছেলে। শিক্ষিত ছেলে, সে তোকে বুঝবে। ভালো বন্ধু হবে।

উদয়ের এর সাথে খারাপ ব্যাবহার করলে তোর দাদু,
তোর আব্বু দুজনেই খুব কষ্ট পাবে।

উদয়ের দাদু আর তোর দাদু দুর সম্পর্কের আত্মীয় আবার দুজনে খুব ভালো বন্ধু। তাই তারা তাদের নাতি নাতনির বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অনেক আগে থেকেই। আমরা কেউ এই ব্যাপারে জানতাম না। তোর দাদু অসুস্থ তাই তড়িঘড়ি করে বিয়েটা হয়ে গেলো। না হলে আরো পরে হতো বিয়েটা।

তোর আব্বু তোর দাদুকে খুব ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে, তোর দাদু কষ্ট পেলে, তোর আব্বুও কষ্ট পাবে।

তুইও তো তোর আব্বুর মেয়ে, তুই তোর আব্বুকে ভালবাসিস না!শ্রদ্ধা করিস না!
তুই কি তাকে কষ্ট দিতে পারবি?

না আম্মু আমি ভুল করেও আব্বুকে কষ্ট দেয়ার কথা ভাবতে পারি না। আমি তোমাদের সবাইকে অনেক ভালোবাসি।

নিজের অজান্তেই তোমাদের অনেক কষ্ট দিয়ে ফেললাম আমাকে ক্ষমা করে দাও।

আমি এমন করতে চাইনি, কিন্তু হঠাৎ বিয়ে হওয়াতে আমার মাথা কাজ করছিল না। আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না।
জিয়ানের কথাও কিছুতেই ভুলতে পারছি না।


যেভাবেই হোক জিয়ান আমার জীবন থেকে চলে গেছে। তাই তুমি ওর কথা আব্বুকে কখনো বলবে না, প্রমিজ করো।

আচ্ছা বাবা প্রমিজ করলাম কাউকেই বলবো না।

তুইও প্রমিজ কর জিয়ানকে ভুলার চেষ্টা করবি।

আর উদয়কে একটু সময় দিবি। ওর সাথে ভালো ব্যাবহার করবি।

আমি প্রমিজ করলাম আমি চেষ্টা করবো। তোমার কথা রাখার চেষ্টা করবো।

আমি তোমাদের সবাইকে খুব ভালোবাসি আম্মু।

(বানানের ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন)

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here