#এমনও_প্রেম_হয়
#ইয়ানা_রহমান
#পর্ব:-১৮
উদয় লিয়াকে ঘরে নিয়ে দরজা লক করে দিলো।
লিয়াকে জড়িয়ে ধরলো গভীর ভালোবাসায়।
এমনভাবে জড়িয়ে ধরেছে যে দুজন দুজনের হার্টবিট শুনতে পাচ্ছে। লিয়া কেপে কেপে উঠছে, ওর হার্টবিট অসম্ভব রকম বেড়ে গেছে। বুকের ধুকপুকানি থামানো যাচ্ছে না কিছুতেই।
উদয় লিয়ার চুলের ভিতরে নাক ডুবিয়ে ঘ্রাণ নিলো।
মন মাতানো সেই ঘ্রাণ। কোন পুরুষকে পাগল করতে এই ঘ্রাণই যথেষ্ট।
উদয় আষ্টেপৃষ্টে লিয়াকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। ওর গায়ের জরের উত্তাপ লিয়ার গায়েও অনুভূত হচ্ছে।
লিয়া উদয়ের বলিষ্ঠ বাহুর বন্ধন থেকে নিজেকে মুক্ত করতে অনেক জোড়াজুড়ি করছে কিন্তু পেরে উঠছে না।
ঘাড়ে গলায় গালে অমসৃণ ঠোঁট ছুঁয়ে যাচ্ছে অবাধে। তারপর কপালের সাথে কপাল মিলিয়ে নাকের সাথে নাক ঘষে দিলো, নাকের ওপর একটা চুমু দিলো উদয়।
লিয়ারও কেমন যেনো একটা অনুভুতি হচ্ছে। গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। লজ্জায় মুখ লাল হয়ে উঠছে।
অনেকক্ষণ চলে এই খুনসুটি।
তারপর একসময় ওকে ছেড়ে দিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিলো।
লিয়া যেনো একটু স্বস্তি পেলো। লজ্জায় মাথা তুলে দাড়াতে পারছে না। চোখে চোখ রাখতে পারছে না। অসভ্য লোকটা কি করলো এগুলি। লজ্জা শরমের মাথা খাইছে মনে হয়। জরের তাপে মাথার তার ছিঁড়ে গেছে মনে হয়। নির্লজ্জ বেহায়া খাচ্চোর একটা। তাড়ছিরা খাটাস।
লিয়া উঠে গিয়ে বললো, আমি আপনার জন্য খাবার নিয়ে আসি।
এই বলে যেতে নিলেই হাত ধরে টেনে নিজের কাছে এনে কোলের ওপর বসিয়ে দিলো আর পিছন থেকে দুহাত দিয়ে জাপটে ধরে রইলো।
আবারও ওর কাঁধে ঘাড়ে গলায় নাক ঘষলো আর বললো,
কোন খাবার আনতে যেতে হবে না, তুমি এভাবেই আমার কোলে বসে থাকো।
লিয়া খুব অসস্তি ফিল করছে। লোকটা এমন করছে কেন?
ব্যাটার লজ্জা শরম কি কিছুই নেই? আজব তো। বেহায়া একটা। এর কাছে বেশিক্ষণ থাকা নিরাপদ না। কি করি এখন!
দেখেতো মনে হয় না সেবা পেতে আমাকে এখানে এনেছে। মনে হচ্ছে রোমান্স করতেই এনেছে।
কিছু সময় বসার পর জোর করে কোল থেকে উঠে পড়ল। বললো,
মা কি ভাববে এভাবে দরজা বন্ধ করে থাকলে।
আমার খুব লজ্জা লাগছে।
ছাড়েন আমাকে।
আপনি খুব নির্লজ্জ একটা মানুষ। লাজ শরমের বালাই নেই।
বলে দরজা খুলে বেরিয়ে গেল।
উদয় মুচকি হেসে বিছানায় শুয়ে পড়ল।
নির্লজ্জ বলো আর যাই বলো। তোমাকে আমার সাথেই থাকতে হবে। আর ভালোবাসার অত্যাচার সহ্য করতে হবে।
ভীষন ভালোবাসি বউ।
আমি তোমার মায়া জালে জড়িয়ে গেছি।
এই মায়া কাটানো
অসম্ভব।
লিয়া খাবার আনতে শাশুড়ির কাছে গেল।
শাশুড়ি মা দুজনের জন্য খাবার সাজিয়ে দিয়ে বললো,
তুমিও ওর সাথে বসে খেয়ে নিও।
একটু পর ট্রেতে করে স্যুপ সহ আরো খাবার নিয়ে এলো। সাথে ওষুধ নিয়ে এলো।
উঠেন খেয়ে নিন।
মা তখন কি বলেছিল মনে নেই?
কি বলেছিল?
আমাকে তোমার হাত দিয়ে খাইয়ে দিতে বলেনি?
আমি অসুস্থ, হাত দিয়ে খেতে পারবো না। আমাকে তুমি নিজের হাতে খাইয়ে দাও।
ওরে বুড়া ব্যটার ঢং দেখো।
আর এতক্ষণ যে অসভ্যতা করছিলেন তখন অসুস্থ ছিলেন না?
বুড়ো কোথায় দেখলে, তোমার চেয়ে মাত্র বারো বছরের বড় আমি।
বয়স কোন ব্যাপার না সেটা একটা সংখ্যা মাত্র। আসল হলো মনের মিল। মনের মিল থাকলে সব ঠিক।
আর একটু আগে যা হলো সেটাকে অসভ্যতা বলে না বলে রোমান্স, বুঝলে বোকারানি।
নাও এখন খাইয়ে দাও, আমার ভীষন ক্ষুধা পাইছে।
উদয়ের ভাষণ শুনে লিয়া বাধ্য হয়ে উদয়কে খাবার খাইয়ে দিল।
উদয়ও লিয়াকে খাইয়ে দিল।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে উদয়কে
মেডিসিন খাওয়ালো।
এঁটো প্লেট পেয়ালা রাখতে গেলে শাশুড়ি মা বললো, ওর দিকে খেয়াল রেখো, জ্বর যদি আবার বাড়ে আমাকে ডাক দিও।
যাও এবার ঘরে যাও।
লিয়া রুমে আসলো ।
বললো, এই যে আপনি কিন্তু আমার অনুমতি ছাড়া আমাকে টাচ্ করবেন না।
মানে কি বুঝলাম না।
বুঝতে হবে না। শুধু আমাকে টাচ্ করবেন না । করলে কিন্তু আমি কান্না করবো।
ওকে, আমি তোমাকে টাচ্ করবো না।
তুমি কান্না করো না। শুধু আদরে আদরে ভরিয়ে দিবো।
আর সেই তখন থেকে আপনি আপনি করছো কেন?
ভালো লাগছে না শুনতে।
তুমি করে বলো।
স্বামী স্ত্রীর মাঝে তুমি সম্মোধন টাই মানায়। আপন আপন মনে হয়। তাতে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়াটা খুব সহজ হয়ে যায়।
এই অসভ্য লোকটা তো থামার পাত্র না মনে হচ্ছে। সারা রাত ধরে জ্বালাবে বোধয়। কি করা যায় এখন?
লিয়া ঘরের চারদিকে দেখছে। আধুনিক সব ফার্নিচারে সুসজ্জিত। খাটের পাশে কম্পিউটার টেবিলের সাথে রিভলবিং চেয়ার। সব ফার্নিচার আছে শুধু নেই শোবার মত বড় কোন সোফা বা কোন কাউচ।সিঙ্গেল একটা সোফা আছে খাটের বিপরীত দিকে।
কিন্তু সিঙ্গেল সোফায় তো বসে বসে রাত পার করা যাবে না।
এখন আমি ঘুমাবো কোথায়?
আর মহাশয়ের কথার ধরন ভালো লাগেনি। আবার শুরু হয়ে যাবে সামনে পেলে রোমান্টিক অত্যাচার।
আমি ফ্লোরে ঘুমাতে পারি না। তাকেও ফ্লোরে ঘুমাতে বলতে পারবো না কারণ তার গায়ে জ্বর। কি করি এখন! পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে।
ও আল্লাহ কেন তুমি আমাকে এমন বিব্রতকর অবস্থায় ফেলো!
কখনো কারো সাথে রুম শেয়ার করিনি আর এখানে ওনার সাথে বেড শেয়ার করতে হবে। আর এই লোকটা সর্বক্ষণ রোমান্টিক মুডে থাকে। কত ধরনের জ্বালাতন করবে কে জানে। ভাবতেই গায়ে কাটা দিচ্ছে।
উদয় একটা মাথার বালিশ আর কোল বালিশ বিছানা থেকে চুপিচুপি খাটের সাইডে ফ্লোরে ফেলে দিলো। এমনভাবে ফেললো যেনো দেখা না যায়। লিয়া যেনো বুঝতে না পারে।
কি হলো দাড়িয়ে আছো কেন? শোবে না? নাকি দাড়িয়ে দাড়িয়েই সারা রাত পার করার প্ল্যান আছে!
হুম শোবো খুব ঘুম পাচ্ছে। আপনি একটু ওই দিকে সরেন, আমি এই পাশে ঘুমাবো।
আপনি যদি বিছানার মাঝে শুয়ে থাকেন তবে আমি কোথায় শুবো?
আর শুনুন আমি আপনার চেয়ে বারো বছরের ছোট তাই আপনাকে আমি আপনি করেই বলবো। তুমি করে বলতে আমার সংকোচ হচ্ছে।
তাহলে আমিও তোমাকে আপনি করেই বলবো। তখন ভালো লাগবে তো?
এই না না কক্ষনো না, আমার মত একটা বাচ্চা মেয়েকে আপনি করে বললে আমার খুব লজ্জা করবে।
আর একটা কথা
শোন, আজ রাতে আমরা কেউ ঘুমাবো না।
কেন ? ঘুমাবো না কেন? তাহলে কি করবো সারা রাত জেগে থেকে।
আজকে রাতে জেগে থেকে তোমার সাথে চুটিয়ে প্রেম করবো। যেটা আগে কখনো করিনি।
আমি সারাজীবন কোন প্রেম করিনি।
সবসময় ভেবেছি যাকে বিয়ে করবো তার সাথেই প্রেম করবো। একমাত্র
তাকেই ভালবাসবো।
আমার সমস্ত প্রেম ভালোবাসা শুধু আমার বউয়ের জন্য জমিয়ে রেখেছি।
ও আচ্ছা, তো এর সাথে না ঘুমানোর সম্পর্ক কি?
বুঝলাম না। বুঝিয়ে বলেন।
আজ সারা রাত আমরা গল্প করে কাটিয়ে দিবো। পাশাপাশি অনেক আদর করবো।
বাজে কথা রেখে বলেন কি গল্প করবেন? তারাতারি গল্প শেষ করেন, আমি ঘুমাবো।
আমার বউকে নিয়ে আমি যত স্বপ্ন দেখেছি ……
সেসব গল্প করবো, আর তোমার জীবনের সব কথা শুনবো।
এমা বলে কি …
আমি না আজ খুব
ক্লান্ত, কাল গল্প করি?
না, আজকেই গল্প করতে হবে। তুমি ঘুমালে তোমার গায়ে পানি ঢেলে দিবো।
বলে কি! এই রাতে আমার ভিজার কোন ইচ্ছা নেই।
তার চেয়ে বরং গল্পই করেন।
শুরু করেন আপনার গল্প।
তুমি তো দেখছি খুব বোরিং মানুষ, ঠিকমত কথাও বলতে পারো না। একটু রোমান্টিক মুডে আসো।
জানো, আমার সব ফ্রেন্ডরা রিলেশন করতো কিন্তু আমি করতাম না।
কেন করতেন না …….
কারন আমি আমার বউয়ের দুষ্টু প্রেমিক বর হতে চেয়েছি সব সময়।
কি রকম ….?
আমি সব সময় চেয়েছি আমার সব ভালোবাসা আমার বউকে দিবো। আর
ওকে খুব জ্বালাবো।
সেটা কিভাবে?
বউয়ের কাছে আমার প্রত্যাশা খুব কম। বউয়ের কাছে খুব বেশি কিছু চাওয়ার নেই। তার কাছে আমার চাওয়াটা খুবই সামান্য।
যেমন!?
রোজ সকালে আমি যখন অফিসে যাবো
তখন সে আমার সামনে থাকবে।
আমার গলায় টাই বেঁধে দিবে। এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিবে।
হাসি মুখে আমাকে জড়িয়ে ধরে বিদায় দিবে।
আমি তার কপালে ভালোবাসার একটা চুমু দিয়ে খুশি মনে বেরিয়ে যাবো।
আর …….?
অফিসে থাকা কালীন সময়ে দুপুরে আমাকে কল করে খাবার খেতে মনে করিয়ে দিবে।
বউ বলবে তুমি না খেলে আমিও কিন্তু খাবো না। সেই মধুর কথাটা শোনার জন্য মনটা কবে থেকেই ব্যাকুল।
ওকে, মনে করিয়ে দিবো।
আর …..?
অফিস থেকে ফেরার সময় বউ বায়না ধরে বলবে, চকোলেট, আইস্ক্রীম, ফুচকা,
ফুল কিছু না কিছু নিয়ে আসবে।
আমি তার পছন্দের জিনিসগুলি এনে দেয়ার পর সেগুলি পেয়ে খুশিতে আমার গলা জড়িয়ে ধরবে। আমাকে বুকে জড়িয়ে নিবে নিবিড় ভালোবাসায়।
ভ্যালেন্টাইন ডে, ম্যারেজ ডে সহ সব ভালো ভালো দিনে বৌকে নতুন করে প্রোপজ করবো গিফট হাতে নিয়ে।
বেলী ফুলের মালা এনে খোঁপায় পড়িয়ে দিবো।
আর ……?
কুয়াশা ভরা চাঁদনী রাত আমার পছন্দ,
তাই দুজনে বেরিয়ে পড়ব বেড়াতে। হাতে হাত রেখে হেঁটে যাবো লম্বা রাস্তা ধরে।
ওকে …..!
মাঝে মাঝে বারান্দায়
দোলনায় বসে একই কাপে দুজনে চা খাবো।
রাতে বৃষ্টি হলে ছাদে গিয়ে দুজনে বৃষ্টিতে ভিজবো।
বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বৌকে কোলে নিয়ে হাঁটবো।
আমার ওজন কিন্তু ছাপান্ন কেজির বেশি, পারবেন কোলে নিয়ে হাটতে !?
খুব পারবো, আমাকে দেখে কি দুর্বল মনে হয়? ভালবাসলে
সবই পারা যায়। শুধু মন থেকে ভালোবাসতে হয়।
একটু আমার দিকে
তাকান তো আপনাকে একটু ভালো করে দেখি। এতো রোমান্স কই পান। আপনাকে দেখে তো মোটেও রোমান্টিক মনে হয় না। মনেই হয় না আপনি যা যা বলছেন সেগুলি আপনার মনের মধ্যে ঘোরে স্বপ্ন হয়ে।
উদয় অবাক দৃষ্টিতে লিয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর তাদের চার চোখের মিলন হলো।
লিয়া চকিতে চোখ নামিয়ে নিয়ে বললো, আপনি না অসুস্থ, এখন একটু ঘুমান।
কালকে আবার শুনবো আপনার সব কথা।
তাহলে তুমিও কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নাও। রাত শেষ হতে বেশি দেরি নেই।
আচ্ছা শুনেন, এখানে বালিশতো একটা, এটা কেন?
সাধরনত একটা বিছানায় মাথার দুইটা বালিশ আর একটা কোল বালিশ থাকে। আপনার বিছানায় শুধু মাত্র একটা মাথার বালিশ।
আমি ঘুমাবো কিসে?
উদয় ইচ্ছে করে একটা বালিশ খাটের সাইডে ফ্লোরে ফেলে দিয়েছে।
আমার বুকের ওপর ঘুমাবে।
মানে …..!?
আমার অনেক গুলি স্বপ্নের মধ্যে এটাও একটা স্বপ্ন। আমার বউ বালিশ থাকলেও আমার বুকের ওপর ঘুমাবে। আর
সারাদিন যত রাগারাগি, ঝগড়া, মনোমালিন্য হোক না কেন রাতে আমরা কেউ কাউকে ছাড়া ঘুমাবো না।
(বানানের ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন)
(চলবে)