#এমনও_প্রেম_হয়
#ইয়ানা_রহমান
#পর্ব:-২১
খুব ভোরে ঘুম ভেঙে গেলো উদয়ের। সে লিয়ার দিকে একদৃষ্টিতে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইল। তারপর সে ওর ঘুম ভাঙ্গানোর জন্য নানান রকম দুষ্টামি শুরু করলো। খুনসুটি করতে লাগলো।
লিয়া বিরক্ত হলো ঘুমের মধ্যেই বিড়বিড় করে বলতে থাকলো, ঘুমাতে দেন প্লিজ, সারারাত ঘুমাতে দেন নি, এখনতো একটু ঘুমাতে দেন। নাহলে আমার অনেক মাথা ব্যথা করবে। না ঘুমাতে ঘুমাতে আমি পাগল হয়ে যাবো।
উদয় ওকে সোজা করে শুইয়ে দিয়ে ওর পেটের ওপর থেকে কামিজটা সরিয়ে লিয়ার পেটের সাথে নিজের গাল লাগিয়ে শুয়ে রইলো কিছুক্ষন। পেটের ওপর নাক ঘষে সুড়সুড়ি দিলো। হাত স্লাইড করতে থাকলো সারা শরীরে। তারপর নিজের চাহিদা মিটিয়ে উঠে পরলো।
উদয়ের শরীর এখন সুস্থ। আজ সে অফিসে যাবে। লিয়াকে বলছিল অফিস ছুটির পরে ওকে ওর বাসায় দিয়ে আসবে।
লিয়া রাজী হয়নি।
ও বললো না, আমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে তারপর আপনি অফিস যাবেন। না হয় আমি একাই চলে যাবো।
অগত্যা সে লিয়াকে নিয়ে অফিস টাইমের অনেক আগেই বেরিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিলো।
লিয়া আজ চলে যাবে তাই শাশুড়ি মা ভোরে উঠে নাস্তা রেডি করে ওদের দুজনকে খাওয়ালো।
লিয়া আগেই গোসল করে নিজে রেডি হয়ে ব্যাগ গুছিয়ে রেখেছিল।
নাস্তা খাওয়ার পর
শাশুড়ি মাকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলো।
শাশুড়ি মা ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে আদর করলো, অনেক দুয়া করলো। আর বললো, খুব শীঘ্রই তোমাকে এই বাসায় পার্মানেন্ট রাখার ব্যবস্থা করছি।
লিয়া মাথা নিচু করে মুচকি হেসে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে এলো।
গাড়িতে ওঠার পর উদয় বললো, তোমাকে একদম যেতে দিতে ইচ্ছা করছে না।
এই অল্প সময়েই তুমি আমার অভ্যাস বদলে দিয়েছো। তুমি আমার নেশা হয়ে গেছো।
অফিস শেষ করে বাসায় এসে যখন তোমায় দেখতে পাবো না তখন যে আমার কি অবস্থা হবে সেটা ভেবেই আমি ফিট খাচ্ছি।
কার মুখ দেখে চোখ জুরাবো। কাকে বুকে চেপে ধরে কলিজা ঠান্ডা করবো। কাকে আদর করতে করতে হারিয়ে যাবো অজানায়। পাগল করা ওই ঠোঁট কই পাবো কিস করতে।
ফাঁকা ঘর, শূন্য বিছানা ভাবতেই বুকটা হাহাকার করে উঠছে।
যতই ফিট খান আর যতই হাহাকার করেন আপনি কিন্তু আমাদের বাসায় আজকের পর আর আসবেন না। আজকে যাবেন আর তুলে নেওয়ার দিন আসবেন।
মনে থাকে যেন।
উদয় বললো কেন?
আপনি আমাদের বাসায় আসলে আপনাকে নিয়ে এক ঘরে দরজা বন্ধ করে ঘুমানো আমার পক্ষে একেবারেই অসম্ভব।
তাহলে আমি লজ্জায় মরে যাবো।
তাহলে আমি আবার অসুস্থ হই। সেটাই ভালো, তুমি আমার কাছে থাকবে তখন।
লিয়া ওর দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙিয়ে বলে মুখে যা আসে তাই
বলেন…… না?
আর কখনো এই ধরনের বাজে কথা বলবেন না। অসুখ বিসুখ নিয়ে এধরনের কথা বলতে হয় না। এটা জানেন না!
উদয় হেসে ফেললো, এক হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং ধরে রাখছে আরেক হাতে লিয়ার হাত ধরা। এতো লজ্জা লজ্জা করে আমাকে দূরে রাখবে এতে কি তোমারও খারাপ লাগবে না। তুমিও কি আমাকে কাছে পেতে চাইবে না? আমাকে কি একটুও মিস করবে না ? তুমি খুব পাষাণ।
আপনি আমার সাথে দুই বাড়িতেই থাকতে পারবেন আর সেটা অফিসিয়ালি আপনার বাসায় তুলে নেওয়ার পর।
সত্যি বলছি বউ তোমাকে ছেড়ে থাকতে আমার খুব কষ্ট হবে।
অফিস ছুটি হলে আমি তোমার কাছে আসতে চাই, অনুমতি দাও।
একদম না, প্লিজ এ নিয়ে আর কোন কথা না।
আমরা ভিডিও কলে কথা বলবো।
ওরা বাসায় পৌঁছে গেল।
উদয় গাড়ি সাইডে রেখে লিয়ার সাইডের দরজা খুলে দিলো।
লিয়া গাড়ি থেকে নেমে ওকে টা টা বাই বাই করলো।
তুমি তো ভীষণ আজব! শ্বশুর বাড়ির গেট থেকে বিদায় দিচ্ছ।
ভিতরে আসতে বলবে, চা কফি কিছু অফার করবে, তা না করে গেট থেকেই বিদায় করে দিচ্ছ।
আফটার অল আমি এ বাড়ির জামাই। আমার একটা মানসম্মান আছে। জামাই আদর আমার বৈবাহিক সূত্রে পাওয়া হক। কই আমার সেই জামাই আদর!
সে সব তুলে নেওয়ার পরে হবে।
তুলে নেওয়ার কি কিছু বাকি আছে? শুধু অনুষ্ঠান করে খাওয়া দাওয়াটাই বাকি।
না তারপরও আমার খুব লজ্জা করবে।
আব্বু আম্মু দাদুর সাথে দেখা করে যাই। তারা আমাকে খারাপ ভাববে। বলবে, তাদের মেয়েকে রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে গেছি।
সে সব আমি বুঝবো, আপনি অফিসে যান। আপনার দেরি হয়ে যাচ্ছে।
পৌঁছে ফোন দিয়েন।
ঠিক আছে মহারানী, আমি যাচ্ছি।
ভালো থেকো। বলে
এদিক সেদিক তাকিয়ে সুযোগ বুঝে ওর কপালে একটা চুমু দিয়ে গাড়ীতে গিয়ে বসলো।
তারপর দুজনেই হাত ওয়েভ করে বাই জানালো।
গাড়িটা চোখের আড়াল হলে,লিয়া বাড়ির ভিতরে চলে গেলো।
বাসায় আসার পর লিয়ার মা বললো,
কিরে কার সাথে আসলি?
উনি নামিয়ে দিয়ে গেছে।
উদয় ভিতরে এলোনা কেন? ওকে আসতে বলিসনি?
আমি আসতে মানা করছি। ভিতরে আসলে ওনার অফিসের দেরি হয়ে যাবে।
মায়ের সাথে ডাইনিং টেবিলে বসে কথা বলছে লিয়া।
তোর শ্বশুর বাড়ির গল্প বল…..
তারা কেমন, তোকে কেমন আদর যত্ন করলো।
তাদের আচার ব্যবহার কেমন!?
সবাই ভালো আম্মু,
আরো কিছুক্ষন গল্প করলো মা আর মেয়ে।
আমি আমার ঘরে গেলাম আম্মু, একটু ঘুমাবো। খুব টায়ার্ড লাগছে। আমাকে যেনো কেউ না ডাকে।
নাস্তা খেয়ে তারপর যা_
না আম্মু এখন আর কিছু খাবো না। আমি ও বাড়ি থেকে নাস্তা খেয়ে এসেছি।
আমি ঘরে গেলাম।
ঘরে গিয়ে দরজা লক করে শুয়ে পড়লাম।
চোখে ঘুম ঘুম ভাব, চোখের পাতা ঘুমে ভারী হয়ে আসছে।
লিয়া ভাবলো, উদয়কে একটা ফোন দিয়ে তারপর ঘুমাই। নাহলে ও ফোন দিলে আমার কাঁচা ঘুমটা নষ্ট হবে।
উদয়কে কল দিলো
উদয় কল রিসিভ করে বললো, আমি এখনি তোমাকে ফোন দিতে যাচ্ছিলাম।
ঠিকমতো পৌঁছেছেন? হুম কিছুক্ষণ আগেই
পৌঁছেছি।
আমি তোমাকে এখনই মিস করতে শুরু করেছি।
তুমিও কি আমাকে মিস করছো?
বাজে কথা না বলে, মনোযোগ দিয়ে কাজ করেন।
এখন রাখি।
আমাকে তোমার কাছে আসতে বলবে না?
আবার সেই বাজে কথা,
উদয় হেসে ফেললো,
আচ্ছা আর বলবো না, তুমি এখন একটু ঘুমিয়ে থাকো।
আমি লঞ্চ ব্রেকে আবার ফোন দিবো।
আচ্ছা বলে ফোন রেখে লিয়া শুয়ে পড়লো।
ঘুমাতে চেষ্টা করছে,
তখনই মোবাইলটা বেজে উঠলো,
ফোন হাতে নিয়ে দেখলো বিদেশি নাম্বার। রিসিভ করল,
ফোনের ওপাশে জিয়ান বললো_
হ্যালো বাঘিনী, আমার বাঘিনী কেমন আছো?
সরি, অনেকদিন তোমার কোন খোজ খবর নিতে পারিনি।
লিয়া ওর গলার আওয়াজ শুনেই কেদে ফেললো। কতদিন পর প্রিয় মানুষটার গলার আওয়াজ শুনতে পেলো। ওর চোখের ঘুম গায়েব হয়ে গেলো।
কি বলবে ওকে!
আমার বিয়ের কথা ওকে কিছুতেই বলা যাবে না। ও তাহলে ভেঙে পড়বে, ওর
পড়াশুনা, ওর সামনের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সব নষ্ট হয়ে যাবে।
ও ঠিক করলো, জিয়ানের সাথে আগের মতই স্বাভাবিকভাবে কথা বলবে।
আর এমন কিছু একটা বলতে হবে যাতে ও আর ফোন না করে, আবার মনেও কষ্ট না পায়।
লিয়া বললো, ভালো আছি আমি …
এতো দিনে মনে পরলো আমার কথা!
মনে সব সময়ই পরে, কিন্তু সময় সুযোগ হয়ে ওঠে না।
সারাদিন ভার্সিটি আর কাজ করে আমি খুব ক্লান্ত থাকি । আবার বাসায় গিয়ে নিজের জন্য রান্না করা, কাপড় ধোয়া সব আমারই করতে হয়। তখন আর কিছুই ভালো লাগে না।
তারপর তুমি কখন কার সামনে থাকো ফোন দিলে যদি তোমার সমস্যা হয় এই ভেবে আমি ইচ্ছে হলেও কল দেই না।
কথা ছিলো তুমি কল দিবে নিজের সুযোগ মত। কিন্তু তুমি কোনদিন একটা কল দাও নি আমাকে। কেনো লিয়া কেনো আমাকে একটা কলও দাওনি!?
এমনিই আমি কল দেইনি। ভেবেছি যদি আপনার পড়াশোনায় কোন ডিস্টার্ব হয় তাই।
এটা কোন কথা বললে, প্রিয়জনের সাথে কথা বললে মনটা চাঙ্গা হয়ে এটা জানো না!
থাক ওসব কথা, এখন বলেন ওখানে আপনি কি কাজ করেন আবার! আপনি না পড়তে গেছেন। কাজ করেন কেনো তাহলে?
এখানে আসার আগেই ওয়ার্ক পারমিট করে আসছি,
এখানে অন ক্যাম্পাস,,অফ ক্যাম্পাস কাজ করি।
যেমন ….অন ক্যাম্পাস কাজ হলো লাইব্রেরীর কাজ বইয়ের হিসেব রাখা রেকর্ড রাখা, কে বই নিলো আর কে বই ফেরত দিল সেই রেকর্ড।
ল্যাবের কাজ হচ্ছে কোন প্রফেসর কোন ইনস্ট্রুমেন্ট নিলো তার রেকর্ড রাখা ফেরত দেয়ার রেকর্ড রাখা।
তারপর আছে ক্যান্টিনের কাজ।
অফ ক্যাম্পাসের কাজ হলো, শপিং মলে চাইলে কাজ করা যায়। আমি এখন ওয়াল মার্টে কাজ করছি। বড় বড় সুপার স্টোরে কাজ করা যায়।
কফি শপ টিম হর্টনস, স্টার বাক, আমি এখানেও কাজ করেছি। এরা ঘণ্টায় দশ কানাডিয়ান (cad) ডলার করে দেয়।
এখানে প্রতি সপ্তাহে বাইশ ঘন্টা কাজ করা যায়।
এতো কাজ করেন কেন? আপনার পড়াশুনায় ক্ষতি হবে না!?
শুধু আমি একা কাজ করি না, সব স্টুডেন্টরাই করে।পড়াশুনায় কোন প্রবলেম হয় না।
এখানে অন গ্রাউন্ড ক্লাসও করতে হয়,
আবার অবার অনলাইন কোর্সও করতে হয়।
প্রতি সপ্তাহে একেক জন প্রফেসর যার যার স্টুডেন্ট পর্টাল
গুগল ক্লাসরুমে পোস্ট করে।
স্টুডেন্টরা সেই ডেডলাইন অনুযায়ী এসাইনমেন্ট জমা দেয়। যার যার এসাইনমেন্ট অনুযায়ী গ্রেড আসে।
আরো বলেন, শুনতে ভালো লাগছে। আমি ওখানকার কথা আরও জানতে চাই।
তাহলে শোন ……
বাংলাদেশ আর কানাডার মধ্যে বারো ঘণ্টা ডিফারেন্স। এখানে দিন বারোটা হলে,
বাংলাদেশে তখন রাত বারোটা। আর বাংলাদেশের সিক্সটি ফাইভ টাকা এখানে এক ক্যাড ডলার।
ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার ভিতরে ভাঙ্কুভার শহরে আমার ভার্সিটি।
ভার্সিটিরর নাম লাসেল ইউনিভার্সিটি।
মাউন্টেইন এরিয়া,
পুরো এলাকাটাই পর্বতে ঘেরা। এই ভার্সিটির চারিদিকে পাহাড়।
বছরে চারটা সেমিস্টার। এখানে ২৪×৭ লাইব্রেরী খোলা থাকে। যে কোন সময়ই লাইব্রেরীতে গিয়ে পড়াশুনা করা যায়। এখানে কাপড় চোপড় ফ্লেক্সিবল। যার যার পছন্দ মত কাপড় পড়তে পারে।
বছরের দশ মাস প্রচুর ঠাণ্ডা থাকে। বরফে ঢেকে থাকে পুরো শহর। এখানে স্নো ফল হয় প্রচুর।
এতো ঠান্ডার মধ্যেও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হয়।
বাকি দুই মাস সময়কে সামার
বলে এখানে। কিন্তু এই সামার বাংলাদেশের কনকনে শীতের চাইতেও বেশি ঠাণ্ডা। পলিউশন নেই বললেই চলে।
এদেশের পড়াশুনা খুব এক্সপেন্সিভ। অনেক টাকা লাগে এখানে পড়তে।
চাইলেই সবাই এখানে এসে পড়তে পারে না।
আর….
স্টুডেন্টরা চাইলে প্রতি বছর চার মাস সামার ব্রেক নিতে পারে।
বেশির ভাগ স্টুডেন্ট এই ব্রেকটা নেয় না।
দুই তিন বছর পর পর ব্রেক নেয়।
এই ব্রেকের সময়টা তারা ধুমিয়ে কাজ করে।
প্রতি সেমিস্টারের পর দশ বারো দিন ইউনিভার্সিটি ছুটি থাকে।
এখানে ব্রেকফাস্টে প্যানকেকের সাথে ম্যাপেল সিরাপ খুব
পপুলার।
ইউনিভার্সিটির ডরমিটরিতে থাকা যায়।
যদি বাজেট ভালো থাকে তবে ডর্মের বাইরেও বাসা ভাড়া করে থাকা যায়।
সে ক্ষেত্রে ওয়াশরুম কমন।রুমের ভিতরে কোন ওয়াশরুম নেই।
এখানে ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট খুব ফেমাস। কিছু ইন্ডিয়ান আর পাকিস্তানী ফ্যামিলি ক্যাটারিং সার্ভিস প্রোভাইড করে। স্টুডেন্টরা অনেকেই এই ক্যাটারিং সার্ভিসটা নেয়। আমিও ওদের থেকে এই খাবার কিনে খাই মাঝে মাঝে।
এখানে ঋতুর বৈশিষ্ট্য গুলি বুঝা যায়।
যেমন ধরো, স্নোফল গাছের পাতার রং চেঞ্জ হয়ে যাওয়া,
আবার কিছু দিন পর সেই পাতাগুলি ঝরে পড়া। এইতো_
সারাদিন পড়া আর কাজ। নিজের ওপর নিজেই আমি বিরক্ত। ডর্মেটারিতে থাকলে সবার সাথে গিয়ে খাবার খেতে না পারলে গরম খাবার পাওয়া যায় না।
হয়তো কোন আইটেম আর দ্বিতীয় বার রিফিল করে না।
যে সব খাবার থাকে সেগুলি আমার পছন্দ না হলে আমি খাই না।
আর পছন্দ হলেও এই তীব্র শীতে ঠাণ্ডা খাবার খেতে পারবো না। গরম করেও দেয় না। তাই আর খাওয়া হয় না। না খেয়েই থাকি তখন।
তাই এক মাস ডর্মেটারিতে থেকে সেখান থেকে বেরিয়ে বাসা ভাড়া করে আরো স্টুডেন্টের সাথে গ্রুপ করে ছিলাম।
সেখানেও সমস্যা, সবার সাথে মিলে বাজার করা, রান্না করা, ঘর পরিষ্কার করা, সব কাজ ভাগ করে নিতে হয়।
এগুলি কোনটাই আমি ঠিকঠাক করতে পারি না মনোমালিন্য হয়ে যায় তাই আর সেখানেও থাকা হয়নি।
এখন একা একরুম ভাড়া করে থাকি। নিজের মত রান্না করি মন চাইলে, আর রান্না করতে না পারলে বাইরে গিয়ে কিছু কিনে খেয়ে নেই।
এখন তাহলে ভালো আছেন!?
আরে না এখন অবস্থা আরো খারাপ। আমি তো কিছুই রান্না করতে পারি না।
সকালে একটা নুডুলস রান্না করি, অর্ধেক খাই আর বাকি অর্ধেক রাতে ফিরে এসে খাই।
নুডুলস খেতে খেতে আমার জীবন অতিষ্ট।
মাঝে মাঝে বেশি ক্ষুধা লাগলে স্যান্ডউইচ খাই।
আর প্রচুর কফি খাই।
এখানে এক কাপ কফি দুই ডলার।
শীতে খুব কষ্ট পাচ্ছি। এত শীত আর চারিদিকে বরফে ঢাকা। ঠান্ডায় ঘর থেকে বের হতেই ইচ্ছা করে না।
কিন্তু উপায় নেই। বের হতেই হয়।
মাঝে মাঝে মনে হয় না এলেই ভালো হতো।
এবার তোমার কথা বলো__
আমার আর কি কথা, এসএসসির রেজাল্ট বের হইছে
গোল্ডেন A+ পাইনি।
জিপিএ ফাইভ পেয়েছি। এখনও কলেজে ভর্তি হইনি। তবে খুব শীঘ্রই ভর্তি হবো।
আপনার কথা গুলো শুনে খুব খারাপ লাগলো। এতো কষ্ট করতে হয় আপনাকে?
আপনাকে একটা কথা বলি, কিছু মনে করবেন না, মনে কষ্টও নিবেন না। আপনি পড়াশুনা ঠিক মত করবেন যত কষ্টই হোক।
আপনি আমাকে আর ফোন করবেন না। আমি সুযোগ বুঝে ফোন করবো।
কারন আপনার আমার সম্পর্কের কথা জানতে পারলে আমাকে বিয়ে দিয়ে দিবে। তখন আমার আর কিছুই করার থাকেব না।
এখন আমাকে অনেক চোখে চোখে রাখে। আগের মত ইচ্ছা স্বাধীনভাবে চলতে পারি না।
আপনি কি আমার কথা বুঝতে পারছেন?
হুম ,বুঝতে পারছি।
আমিই ফোন দিবো, ভাববেন না।
এখন তাহলে রাখি।
আপনি ভালো থাকবেন আর ঠিকমত পড়াশুনা করবেন।
অনেক স্বপ্ন নিয়ে পড়তে গেছেন।
সেই স্বপ্ন পূরণ
করতে যা
লাগে তাই করবেন।
পড়ার ক্ষতি হয় এমন কিছু করবেন না।
ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। নিজের খেয়াল রাখবেন।
জিয়ান বললো তোমাকে কেমন যেনো আপসেট লাগছে,
আমার বাঘিনীকে আমি ভালোভাবে চিনি, জানি।
তোমার কোন সমস্যা হইছে নাকি? আমাকে খুলে বলো, তোমার গলার সাউন্ড আমি চিনি। সত্যি করে বলো কি হইছে?
আরে না কিছু হয়নি, একটু সর্দিজ্বর তাই গলার আওয়াজ এমন শোনাচ্ছে।
তুমি সর্দি জ্বরের জন্য কোন ওষুধ খাইছো?
না খেয়ে থাকলে এখনই খাও।
হুম ওষুধ খেয়েছি।
আমি ফোন করলে যদি তোমার প্রবলেম হয়, তবে আমি আর ফোন করবো না।
তবে তুমি সুযোগ বুঝে আমাকে ফোন করবে, কথা দাও। তোমার সাথে কথা বলতে না পারলে আমি বাঁচবো না। একদম প্রাণে মরে যাবো।
হুম আমিই ফোন করবো মাঝে মাঝে।
তোমার অসুবিধা হয় এমন কাজ আমি কখনোই করবো না।
আমার একটা অনুরোধ তুমি শুধু আমার থেকো। আমি দুই বছর পর ব্রেকে দেশে আসবো তখন তোমার সাথে দেখা হবে।
তুমি ভালো থেকো মাই লাভ, আমার বাঘিনী, আমার ভীতু হরিণী।
আপনিও ভালো থাকবেন। গুড বাই।
(বানানের ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন)
(চলবে)