এমনও প্রেম হয় পর্ব:-২০

0
880

#এমনও_প্রেম_হয়
#ইয়ানা_রহমান
#পর্ব:-২০

উদয় লিয়ার দিকে দুই হাত বাড়িয়ে দেয়। নিজেই কাছে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে।
চরম অনিচ্ছা স্বত্বেও লিয়া ধরা দিলো উদয়ের বাহুডোরে।

উদয়ের বুকে মাথা রাখলো। যে বুকে কোন উষ্ণতা অনুভব করলো না।

যার জন্য ওর মনে কোন ভালোবাসার টান অনুভব করে না।

যার জন্য মনে কোন আকর্ষন তৈরি হয় না, তাকে কি ভালোবাসা যায়!
ভালোবাসার মনটাতো অনেক আগেই মরে গেছে।
এখন যেটা করছে সেটা নিছক মনের বিরুদ্ধে অভিনয়।

ওর মায়ের বুঝানোর পর ও আপ্রাণ চেষ্টা করছে উদয়কে মন থেকে মেনে নিতে।

সমাজ, সংসার, পরিবার,পরিজন
আত্মীয় স্বজনদের সমালোচনার কথা ভেবে, নিজের মনকে মানিয়ে
নিতে চেষ্টা করে যাচ্ছে।

কিন্তু মাঝে মাঝে মনটা বিদ্রোহ করে ওঠে। যখন আর পেরে উঠে না তখন সব কিছু ছেরে ছুড়ে কোথাও পালিয়ে যেতে ইচ্ছা করে।

মনের কষ্টটা সারাদেহে ছড়িয়ে গিয়ে বিষের বেদনা হয়ে যায়। পাগল প্রায় হয়ে যায়। চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছা করে।

চিৎকার করে কান্নাও করতে পারছে না।

উদয়ের বুকে সে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে, যেনো দাড়ানো উচিত তাই সে দাড়িয়ে আছে।

তারপর বুক থেকে সরে আসার জন্য জোরাজুরি করতে থাকে। ও যতই শক্তি খাটায় উদয় ততই শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

ঘরে এসে উদয় ওর সারা মুখে চুমু দিতে থাকে।

গলায়, ঘাড়ে ইচ্ছেমত চুমুতে চুমুতে অস্থির করে দিতে থাকলো। আর কামড়াতে থাকলো যেখানে যেখানে ওর মন চায়।

কোনকিছুতেই থামানো যাচ্ছে না ওকে। ও যেনো আজ মরিয়া হয়ে উঠেছে।

জোড়ে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো লিয়া।

কি করছেন এসব!
তারপর বললো,
আপনি অসুস্থ, শুয়ে পড়েন। বিশ্রাম নেন। না হলে আবার জ্বর বাড়বে। কষ্ট হবে আপনার।

উদয় কিছুই শুনলো না। ওর মাথায় শুধু একই কথা ঘুরছে, যে করেই হোক লিয়াকে একান্ত নিজের কাছে টেনে ওর সাথে এক হয়ে
যাওয়া। ভোগ করার জন্য সে মরিয়া হয়ে উঠেছে।

মাথায় ঘুরছে আদিম উন্মাদনা।

উদয় উত্তেজনাময় আদরে আদরে ভরিয়ে দিতে থাকলো লিয়াকে।

ওর ঠোঁটে ঠোঁট বসিয়ে চেপে ধরে। লিয়ার ঠোঁট চুষে সমস্ত রস নিংড়ে নিতে চাইছে যেনো ও।

ব্যথায় লিয়া ছট্ফট্ করছে সেদিকে উদয়ের খেয়াল নেই কোন।

উদয় লিয়াকে নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল।
ওর অবাধ্য দুটি হাত লিয়ার সমস্ত শরীর জুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সারা শরীরে দাত বসিয়ে দিচ্ছে বেশ জোরেই।

সেই অবাধ্য হাতের যথেচ্ছ ব্যবহারে প্রচণ্ড ব্যথার সৃষ্টি হচ্ছে লিয়ার গায়ে। চিৎকার করতেও পারছে না মুখ চেপে ধরে ধমকে উঠে। ভয়ে অমানুষিক অত্যাচার গুলি সয়ে নিচ্ছে।

বাঁধা দিচ্ছে বারবার কিন্তু কোন বাঁধাই আজ মানতে নারাজ উদয়।

নিশ্চুপ লিয়ার দুচোখে কষ্টের লোনা পানির ধারা বয়ে যেতে লাগলো।

ওর ভয়াল থাবা থেকে নিজেকে কিছুতেই ছাড়াতে পারছে না।

উদয় এক আদিম খেলায় মেতে উঠেছে। সঙ্গীর ইচ্ছা অনিচ্ছার কোন তোয়াক্কাই সে করছে না।

উদয় কাম তাড়নায় এতটাই উত্তেজিত যে ভালোবাসার বদলে সেখানে চলছে হিংস্রতা।

শারীরিক ক্ষুধা মিটাতে সে মরিয়া হয়ে উঠেছে। কোন দিকে খেয়াল নেই তার। সাথের মানুষটা মরলো না বাঁচলো কোন খেয়াল নেই সেদিকে। সে শুধু নিজে পাওনা আদায়ে ব্যস্ত।

অনেকক্ষণ সময় ধরে দৈহিক ক্ষুধা মেটানোর পর উদয় লিয়ার কাছ থেকে আলাদা হলো।

লিয়া প্রায় বেহুঁশ।এই মুহূর্তে যা হলো সেটাকে বৈধ ধর্ষণ ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না।

উদয় নিজের জৈবিক চাহিদা মিটাতে পেরে খুব খুশি। ওর হাসি দেখে মনে হচ্ছে ভোগের জন্যই নারী।

নিজের স্বামীর কাছে জোর পূর্বক ধর্ষিত হয়ে সব কিছু হারিয়ে ফেলার কষ্টে বালিশে মুখ গুজে গুমরে গুমরে কাদছে।

যেখানে তার ভালোবাসায় সুখ পাওয়ার কথা সেখানে আছে এক বুক যন্ত্রণা। এক পাহাড় সমান কষ্ট, এক সাগর কান্না।

উদয় লিয়ার চোখ মুছে দিলো।
দুই চোখের পাতায় চুমু দিলো।
কপালে এঁকে দিলো ভালোবাসার ছোয়া।
তারপর বুকে টেনে নিলো।

বললো, স্বামীকে দৈহিক তৃপ্তি দেয়া প্রতিটা স্ত্রীর কর্তব্য। এখানে এতো কান্নার কি আছে।

আর যখন তখন কাদতে বসবে না। এটা আমার খুব অপছন্দ।

তোমার দেহের প্রতিটা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আমার সম্পদ।

আমার সম্পদ আমি ভোগ করেছি এতে কান্না করে বুক ভাসানোর কিছু নেই।

তুমি ছোট মানলাম তাই বলে একদমও ছোট না যে তুমি স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে কিছু বোঝ না। ভবিষ্যতের জন্য সাবধান। আজকের মত আমাকে রাগিও না কখনো।

তোমার চোখের পানি আমার সহ্য হয় না। তোমার চোখের পানি আমার হৃদয়ে রক্ত হয়ে ঝরে পড়ে।

লিয়া মরার মত নিথর হয়ে পড়ে আছে।ওর নড়াচড়া করারও শক্তি নেই। বিছানা থেকে উঠে কাপড় পড়বে সেই শক্তিটুকুও নেই।

যেনো এক প্রচণ্ড কালবৈশাখী ঝড় ওকে দুমড়ে মুচড়ে রেখে গেছে। সারা শরীর ব্যথায় জর্জরিত।

দুই চোখের পানির ধারা যেনো বাঁধ মানতে চাইছে না।
ঝরেই চলছে, ঝরেই চলছে।

উদয়ের মনে আবার দুষ্ট বুদ্ধি খেলে গেলো।
উদয় বললো, তোমাকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজার শখ ছিল কিন্তু এখন বৃষ্টি পাবো কোথায়? তবে শখ তো পুরা করতেই হবে।

তাই দুজনে মিলে একসাথে ঝর্নার নিচে দাড়িয়ে ভিজবো।

লিয়া যেতে চাইলো না। মাথা নেড়ে, দুই হাত দিয়ে ভীষণভাবে না করলো।

বললো ওর তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা করছে, আর পা দিয়ে দাড়াতে পারছে না বমি বমি ভাব হচ্ছে।

পায়ের দিকটা কেমন অবশের মতো লাগছিল। পা নাড়াতে পারছিলো না।

ওর নিজের পায়ে দাঁড়ানোর মত শক্তিটুকুও অবশিষ্ট নেই। শরীরে কোন কাপড় নেই। গায়ে দেয়ার পাতলা চাদরটা গায়ের সাথে জড়িয়ে রেখেছে।

উদয় বুঝতে পারলো যে ওর খুব কষ্ট হচ্ছে।
কিন্তু তারপরও রেহাই পায়নি লিয়া। ওকে কোলে তুলে নিয়ে যায় বাথরুমে।

লিয়া বারবার না করতে থাকে।
কিন্তু কে শোনে কার কথা।

উদয় যে আজ ওর নিজের কথা শোনার মুডেও নেই। ওকে আজ পেয়ে বসেছে নিজের অধিকার আদায়ের নোংরা খেলায়।

বাথটাবের ভিতর বসিয়ে ফুল স্পিডে ঝর্না ছেড়ে দেয়।

দুজনেই ঝর্নার নিচে ভিজতে থাকে।

ভিজতে ভিজতেও লিয়াকে কামড়ে ক্ষত বিক্ষত করে দেয় উদয়।

বাথটাবে বসেও আবার চলে দৈহিক উত্তেজনার দুষ্টামী। উত্তেজনা পূর্ণ খুনসুটি, আর আদিম উন্মাদনা।

লিয়া বাথটাবেই পড়ে রইলো। দাড়ানোর মত শক্তি ওর গায়ে নেই ।

উদয় নিজেই লিয়াকে গোসল করিয়ে দিলো। নিজেও গোসল করে নিলো।

লিয়াকে কাপড় পরানোর জন্য দাড় করালো,

লিয়া দাড়াতে পারছে না, পড়ে যাচ্ছে। উদয় ওকে ধরে ফেললো।
কাপড় পড়ানোর আগে উদয় দেখে লিয়ার সারা শরীরের অনেক জায়গায় লালচে আর নীলচে দাগ হয়ে রক্ত জমে গেছে।

উদয় দাগগুলি হাত দিয়ে ছুয়ে দিলে লিয়া ব্যথায় ককিয়ে ওঠে।

দাগের ওপর আলতো করে চুমু দিলো।

সরি জান, মাফ করে দাও। এটা আমার একদম উচিত হয় নাই। এই রকম যেনো আর না হয় আমি সেদিকে লক্ষ্য রাখবো।

তারপর লিয়াকে কাপড় পরিয়ে ওয়াশরুম থেকে কোলে করে বেরিয়ে আসে।

লিয়াকে বিছানায় শুইয়ে দেয়।

উদয় নিজেও বিছানায় শুতে গেলে দেখে, বিছানায় জায়গায় জায়গায় ছোপ ছোপ রক্তের দাগ লেগে আছে।

কাবার্ড থেকে একটা চাদর বের করে লিয়াকে বিছানা থেকে উঠিয়ে সোফায় বসিয়ে দিয়ে নিজেই চাদর বদলে দেয়।

রক্তের দাগ লাগা চাদরটা আমি ধুয়ে মেলে দিয়ে আসি।

লিয়াকে আবার সোফা থেকে তুলে বিছানায় নিয়ে শুইয়ে দেয়। রেস্ট নাও।

তুমি বেশ অসুস্থ।
একটু রেস্ট নাও
আমি আসছি। বলে, চাদর নিয়ে বাথরুমে চলে গেলো আর মনে মনে বললো, এতটা উন্মাদনা ঠিক হয়নি।
খুব বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি।
পিচ্ছি বউটার নিশ্চয়ই খুব কষ্ট হইছে।

এখন লিয়ার এই অবস্থা দেখে খুব খারাপ লাগছে, মায়াও লাগছে খুব। কিন্তু তখন আমি আমার মধ্যে ছিলাম না।

আমি তো এমন না। এটা আমি কি করে করলাম।

বিছানার চাদর ধুয়ে বারান্দায় মেলে দিয়ে এসে
বৈয়াম থেকে বিস্কুট বের করে লিয়াকে খেতে দিলো।

ও খেতে চাইলো না ।
তারপর জোর করে একটা বিস্কুট খাওয়ালো।
তারপর ট্যাবলেট স্ট্রিপ থেকে খুলে দুটো প্যারাসিটামল
ট্যাবলেট খাইয়ে দিলো।

বললো ব্যাথা কমে যাবে একটু পরই।
শুয়ে থাকো চুপ করে।

লিয়া ক্ষীণ কণ্ঠে বললো,
আমি বাসায় যাবো,
আজই যাবো, এক্ষুনি যাবো।

এক মুহুর্তও থাকবো না আপনার কাছে। আমাকে বাসায় পাঠানোর ব্যাবস্থা করেন।

আমার ভয়ে বাসায় চলে যেতে চাচ্ছো?

সরি, আমার কৃতকর্মের জন্য। আমার তখন মাথা ঠিক ছিলো না।

আমার পিচ্চি বউটা খুব হট তাই নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি। কন্ট্রোলের বাইরে চলে গেছিলাম। তোমাকে দেখলে আমি স্থির থাকতে পারি না। মাথার মধ্যে সব এলোমেলো হয়ে যায়।

আমি বুঝতে পারিনি, তোমার এতো কষ্ট হবে।

তোমাকে দেখেতো মনে হয় না যে তুমি এত উইক। আমার পিচ্চি বউ, আমার লক্ষী বউ,
আর এমন হবে না বলে, কান ধরলো।

তুমি আছো বলে দেখো আমি কতো
তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে গেছি।

তুমি চলে গেলে আমি আবার অসুস্থ হয়ে যাবো।
এবার বোধয় মরেই যাবো।

লিয়া ওর দিকে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো।

উদয় ওকে পরম মমতায় আর ভালোবাসায় জড়িয়ে ধরলো।

দুপুরে রিমি কলেজ থেকে ফিরে এসে উদয়ের ঘরের দরজায় নক করলো।
উদয় উঠে দরজা খুলে দিলো।

রিমি বললো ভাবি কই তার সাথে গল্প করতে এলাম।

উদয় লিয়াকে দেখিয়ে দিয়ে নিজে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। উদ্দেশ্য ইমারজেন্সি পিল কিনে আনা।

রিমি ঘুরে ঢুকে লিয়ার কাছে গিয়ে বললো, ভাবি কেমন আছো?

লিয়া কোন উত্তর দিলো না।

রিমি দেখলো লিয়ার শরীর কেপে কেপে নড়ে উঠছে।

রিমি লিয়ার মুখ নিজের দিকে ফিরিয়ে এনে দেখলো লিয়া কাদঁছে।

লিয়ার মুখের করুন অবস্থা দেখে রিমির আর বুঝতে কিছু বাকি রইলো না। রিমি মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করলো। ওর চোখের কোনও ভিজে উঠেছে।

একটা মানুষ এতো হিংস্র হয় কিভাবে?
কি অবস্থা করেছে মেয়েটার। আস্ত রাক্ষস একটা। ঘরের বউয়ের সাথে এমন করে কেউ? এতটুকুও মায়াদয়া থাকবে না? কোন রেসপেক্ট থাকবে না?

লিয়ার পেটের দিকের সরে যাওয়া জামাটার ফাঁকে যা দেখলো সেটা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না।

রিমি লিয়াকে আলতো করে ধরে উঠিয়ে নিজের ঘরে নিয়ে গেলো।

লিয়াকে ওর ঘরে নিয়ে জামা সরিয়ে ক্ষত স্থানে মলম লাগাতে গেলে লিয়া জামা টেনে নামিয়ে দেয়।

রিমি বলে তুমি সম্পর্কে আমার ভাবি কিন্তু বয়সে আমার ছোট। আমি যেটা করছি সেটা তোমার ভালোর জন্যই করছি।

লিয়া ডুকরে কেঁদে উঠলো।
বললো, আপু আমার সারা শরীরে খুব ব্যাথা করছে। আমি ঠিক মত বসতেও পারছি না।

সেইজন্যই বলছি মলম লাগিয়ে দেই কিছুটা আরাম পাবে।

তোমার স্বামী আমার বড় ভাই, এই ব্যাপারে তাকে কিছু বলতেও পারবো না। কিন্তু তোমার কষ্ট দেখে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।
খুব অমানুষ না হলে এমন ক্ষত বিক্ষত কেউ করে না।

দুপুরে রিমি নিজ হাতে লিয়াকে ভাত খাইয়ে দেয় নিজের ঘরে বসিয়ে। টেবিলে গেলে ওর চেহারা সবাই দেখে ফেলবে তাই।

উদয় লিয়াকে ডাকতে এসে দেখে রিমি ওকে ভাত খাইয়ে দিচ্ছে। তাই ও চলে যায় সেখান থেকে।

রিমি দুপুরের পর মামার বাসায় যাবে তাই যাওয়ার আগে লিয়াকে মেকাপ করে ওর চেহারার ক্ষত ঢেকে দিলো।

আর বললো এরপর জোরালো ভাবে প্রতিবাদ করবে। প্রতিবাদ না করলে এমনভাবে অত্যাচার চলতেই থাকবে এটা মনে রেখো।

স্বামী স্ত্রীর দাম্পত্য জীবন হবে মধুর। তাদের মাঝে যা হবে সেটা হবে দুজনের সম্মতিতে। এ কেমন হিংস্রতা!
জানোয়ারও কখন এমন করবে না।

বিকেলে উদয়কে দেখতে লিয়ার আব্বু আম্মু দাদু ভাই বোন সবাই এলো।
ঘরে রান্না করা পিঠাপুলি বিরিয়ানি, সেমাই, পায়েস আর দোকান থেকে দই মিষ্টি নিয়ে এসেছে।

উদয়ের মা বাবা দাদু মেহমানদের দেখে খুব খুশি হলো।

তাদের বসতে দিয়ে কুশলাদি জিজ্ঞেস করলো।
তারপর আপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে পরলো।

লিয়ার মা বললো উদয়ের এখন কি অবস্থা?

এখন একটু ভালো। জ্বর কিছুটা কম।

লিয়াকে যখন আসতে বললাম, তখনকার অবস্থা দেখে আমি খুব ঘাবরে গেছিলাম।

জ্বর ছিল একশ চারের উপরে। মাথা ব্যথায় বমি হইছে কয়েকবার।

কি যে অবস্থা হয়ে গেছিলো আমার ছেলেটার, সে কথা কি বলবো।

খাওয়া দাওয়া করে ওরা এখানেই ছিলো এতক্ষণ, একটু আগেই ঘরে গেলো।

বুয়াকে বললো ওদের ডেকে আনতে।

আপা রিমি
কোথায় ওকে তো দেখছি না।

আমার বড় ভাই রিমির জন্য বিয়ের সমন্ধ এনেছে।
পাত্রপক্ষ কোন আয়োজন ছাড়া ওকে দেখতে চায়। তাই বড় ভাইয়া তার বাসায় ওকে দেখানোর জন্য নিয়ে গেছে।

আমারও যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু উদয়ের এই অবস্থায় আমি যাই কি করে!
তাই আর যাওয়া হয় নি।

ও আচ্ছা।

দুই বাড়ির দুই দাদু নিজেদের মধ্যে গল্প ব্যস্ত।

উদয় আর লিয়া বেরিয়ে এলো খবর পেয়ে।

উদয় সবাইকে সালাম দিলো।

লিয়ার আব্বু আম্মু দাদু সবাই এক এক করে ওর শরীর কেমন আছে জানতে চাইলো।

উদয় বললো এখনও পুরোপুরি সুস্থ না। তবে এখন একটু ভালো।

ও সবাইকে জিজ্ঞেস করলো কে কেমন আছে।
রিয়া আর অর্পণের সাথে বসে গল্প করতে লাগলো উদয়।

এদিকে লিয়া বাসায় যাওয়ার পায়তারা করছে।

আবার উদয়ের কথা ভাবছে..
ও খুব রিকুয়েস্ট করছে না যাবার জন্য কিন্তু ওর কৃতকর্মের জন্য ছুটে বেরিয়ে যেতে মন চাইছে।

জিয়ান হলে হয়তো এই পশুর আচরণ কোনদিন করতো না।
কারন সেতো আমায় ভালোবাসে, আমায় বোঝে খুব।

অপরদিকে উদয়, সম্পূর্ণ আলাদা। আমাকে বুঝতেই চাইলো না। এ কেমন ভালোবাসা!
ভালোবাসার নামে খুবলে খেয়েছে দেহটা। রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত করেছে।

যে ভালোবাসায় স্নেহ নেই, মমত্ববোধ নেই শ্রদ্ধাবোধ নেই, শুধু মুখে বললেই কি ভালোবাসা হয়ে যায়?

লিয়া যেনো ওর বাবা মায়ের সাথে যেতে না পারে তাই উদয় কৌশল করে বললো,
শরীর সুস্থ হলে আমি নিজে গিয়ে লিয়াকে রেখে আসবো আপনাদের বাসায়। আপনারা ওর জন্য ভাববেন না। বাসার সবার সাথেই ওর ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। মায়ের সাথে দাদুর সাথে গল্প করছে। দুপুরে দেখলাম আমার বোন রিমি ওকে মুখে তুলে ভাত খাইয়ে দিচ্ছে।

লিয়া বুঝে ফেললো এই উদয় মহা ধড়িবাজ লোক। ও এখন কি করবে ভেবে কিনারা করতে পারছে না।
সকালের মত অবস্থা যদি আবার হয় তাহলে ও আর বাঁচবে না, নির্ঘাত মরে যাবে।

আবার এও ভাবছে এই সম্পর্ক তো আমাকে টেনে নিয়ে যেতে হবে বহুদূর পর্যন্ত। পালাবো কোথায়! পালালেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? যেখান থেকে ফেরার আর কোন পথ নেই।

আমি যে আম্মু কে কথা দিয়েছি, তার লক্ষ্মী মেয়ে হয়ে দেখাবো। তাদের লজ্জিত করবো না।

আর উদয়ের এমন পৈশাচিক ব্যবহারের কথাই বা তাদের বলবো কিভাবে? কেউ বিশ্বাস করতে চাইবে না। বলবে আমি বিয়ে ভেঙে দেয়ার বাহানা তৈরি করছি।

এখানে আমি মৃতপ্রায় হলেও কাউকে কিছু বলবো না। আমি ভাগ্যকে মেনে নিয়েছি।

যে জীবনে জিয়ানকে পাইনি, সে জীবন সুখের হবে এটা আশা করাও বোকামি। কষ্ট পেলেও সেটাই আমার জন্য সুখ মনে করতে হবে। এটাই আমার ভাগ্যের লিখন।

ঘরের বড়রা বসে আলোচনা করছে লিয়াকে অনুষ্ঠান করে তুলে আনার কথা।

মিজান সাহেব বলল, তুলে আনার ডেটটা আমি একা করতে চাই না। ওদের বিয়েটা হুট করে হয়ে গেলো, আত্মীয় স্বজন কাউকেই বলতে পারিনি তখন।

তাই মেয়েকে তুলে দেয়ার ডেটটা সবাইকে নিয়ে অর্থাৎ লিয়ার মামা খালা, চাচা ফুপুদের নিয়ে করতে চাই।

না হলে আত্মীয় স্বজনের কাছে আমি ছোট হয়ে যাবো।

আর সেদিন আপনাদের আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যাদের বলতে চান, বলবেন।

তুলে আনার ডেট ফিক্স করার জন্য কবে বসবে তার একটা ডেট ধার্য করে ফেললো সবাই।

রাতে খাওয়া দাওয়ার পর লিয়ার মা ওর শাশুড়িকে জিজ্ঞেস করলো লিয়াকে এখন নিয়ে যাবে কিনা।

লিয়ার শাশুড়ি বললো, উদয়ের শরীর সুস্থ হলে, উদয় যখন অফিসে যাওয়া শুরু করবে তখন ও নিজে গিয়ে লিয়াকে দিয়ে আসবে।

লিয়ার আম্মু লিয়াকে বলে গেল, ও যেনো উদয়ের যত্ন নেয়, খেয়াল রাখে।

মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আদর করে দিলো।

নিজের খেয়াল রাখিস।
তারপর সবাই সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।

উদয় আর লিয়াও ঘরে চলে গেল।

ঘরে গিয়ে উদয় লিয়াকে জড়িয়ে ধরে বললো তোমাকে এত্তগুলা ভালোবাসি।
আব্বু আম্মুর সাথে যেতে না চাওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

জিয়ান কানাডায় স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে পড়তে গেছে।
ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার
ভাঙ্কুভার শহরের
ল্যাসেল কলেজে।

চারিদিকে পাহাড় ঘেরা খুব সুন্দর একটা জায়গা। যেখানে বছরের দশ মাসই থাকে বরফে ঢাকা।
আর দুই মাস থাকে সামার।

আর সেই সো কল্ড সামারও বাংলাদেশের কনকনে শীতের চেয়েও বেশি ঠাণ্ডা ওখানকার সামার।
ওখানকার আবহাওয়া, পরিবেশ,
লোকজন, পড়াশোনাকরা,
নিজে রান্না করে খাওয়া, কাপড় কাচা, অন ক্যাম্পাস, অফ ক্যাম্পাস কাজ .….
সব মিলিয়ে জিয়ানের নাভিশ্বাস উঠার অবস্থা।

জিয়ান মনে মনে ভাবে, আজ লিয়াকে একটা ফোন দিবে। অনেক দিন লিয়াকে ফোন করা হয়নি। ওর খোজ নেয়া হয়নি।
কেমন আছে আমার বাঘিনী! আজ বাঘিনীকে খুব মনে পড়ছে। ভালো আছে তো আমার বাঘিনী!

ও কল করতে নিষেধ করছে বলে অনেকদিন কল করা হয়নি। কিন্তু বাঘিনী নিজেও একটা কল দেয়নি। মনে হয় রেগে আছে আমার ওপর। কিন্তু কি করবো আমি কোনভাবেই যে সব দিক ম্যানেজ করতে পারছি না। ও কি বুঝবে না আমার অপারগতা!

(বানানের ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন)

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here