#এমনও_প্রেম_হয়
#ইয়ানা_রহমান
#পর্ব:-২২
জিয়ানের সাথে কথা শেষ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো লিয়া।
ওর চার পাশটা অর্থহীন মনে হলো।
কি হয়ে গেল আমার জীবনটা। এ জীবন তো আমি চাইনি।
আমার জন্য জিয়ানের জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে? ওর তো কোন দোষ ছিলো না, তাহলে ও কেন কষ্ট পাবে।
ও যখন জানতে পারবে আমার বিয়ের কথা, তখন আমাকে ধোঁকাবাজ ভাববে। কিন্তু আমি তো ধোঁকা দেইনি। আমি নিজেইতো চরম ধোঁকার শিকার।
ধোঁকা আমার সাথে হইছে।
কিছুই বুঝে ওঠার আগেই আমি হয়ে গেলাম অন্য কারো।
এখানে আমার কি কোন দোষ ছিলো? আমার কি কোন অপরাধ ছিল? বিনা অপরাধে আমি যাবত জীবন সাজার ভাগী হলাম। কি করতে পারতাম আমি, বাবা মায়ের অবাধ্য হতাম! সেটাই কি ভালো হতো?
আর অবাধ্য হয়েই আমি কি করতাম, কোথায় যেতাম? কার কাছে যেতাম? কে দিতো আমাকে ঠাই?
যার জন্য ঘর ছাড়তাম সে নিজেই তো দেশে নেই। আর ওর ফ্যামিলির কারো সাথে আমার পরিচয় নেই। কাউকেই আমি চিনি না। এমন কি কোথায় থাকে সেটাও আমি জানি না।
এই অবস্থায় কি করার ছিল আমার।
অল্প কিছু সময়ের মধ্যে আমার দুনিয়া এলোমেলো হয়ে গেল। এখানে কার দোষ আমার নাকি আমার ভাগ্যের।
আমি এতো খারাপ ভাগ্য নিয়ে দুনিয়াতে এসেছি?
মরতে চেষ্টা করলাম, মরতেও তো পারলাম না। মৃত্যু দূতও আমায় নিতে চায় না।
বাবা মা এই পৃথিবীর আলো দেখাইছে, আদর যত্ন করে বড় করছে, লেখাপড়া শিখাইছে তাদের অবাধ্য হতে পারি না।
আমি অবাধ্য টাইপ মেয়ে না আর আমার সাহসও খুব কম। আর আমার বিবেকও আমাকে অবাধ্য হতে দিবে না কোনদিন।
উদয়ের সাথেও মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছি কিন্তু আমি সেখানেও ফেইলিউর।
উদয়ের সাথে আমার যায় না, ওর সাথে আমার মন মানসিকতা একেবারেই মিলে না।
ও এক মেন্টালিটির আর আমি আরেক মেন্টালিটির। দুজনের কিছুতেই ম্যাচ হয় না। তবুও মুখ বুজে মানিয়ে নেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি।
সংসার কথাটার আরেক নাম সেক্রিফাইস। যা
আমার স্বামী নামক মানুষটির মাঝে মোটেও নেই।
সব কিছুতে আমি মানিয়ে নেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। মাঝে মাঝে হাপিয়ে উঠি।
আমার ওপর হায়নার মত ঝাপিয়ে পড়া,
দেহটাকে খুবলে খাওয়ার কথা মনে হলেই ভয়ে কলিজায় পানি থাকে না। তার পশুত্বের কথা আমি কাউকেই বলতে পারিনি।
উদয় অসুস্থ হলে ওদের বাসায় যে কদিন ছিলাম দিন নেই রাত নেই যখনই মুড হতো ঝাঁপিয়ে পড়ত আমার ওপর। আমি সহ্য করতে পারতাম না, কখনো জ্ঞান হারিয়ে ফেলতাম। কখনো মৃতপ্রায় হয়ে পড়ে থাকতাম। যন্ত্রণায় কষ্টে ব্যথায় গায়ে জ্বর উঠে যেতো। তাও রেহাই পেতাম না। জোর করে ওষুধ খাইয়ে সুস্থ করার অপচেষ্টা চালাতো।
রিমি আপুর কথা মত একটু প্রতিবাদ করেছিলাম। বিনিময়ে প্রচণ্ড এক চড় বসিয়েছিল আমার গালে। তখনও আমি নীরব ছিলাম। কিছুই বলতে পারিনি।
একটি বারও তার মনে হয়নি যে আমিও একটা মানুষ। আমারও ভালো লাগা মন্দ লাগা, সুস্থতা অসুস্থতা বলে কিছু আছে।
রিমি আপুতো প্রথম দিনই জেনেছিল পরে আমার শাশুড়িও দেখেছে আমার গায়ে অত্যাচারের নমুনা। কিন্তু দেখেও কিছুই বলেনি কারণ মা হয়ে ছেলেকে এই ব্যাপারে কি বলবে। কি বলে শাসন করবে। কিছু ব্যাপার চোখে দেখা যায় বুঝতে পারা যায় কিন্তু মুখে কিছু বলা যায় না।
আমি ভাগ্যকে মেনে নিয়েছি। আমি যদি মরে যেতাম সেখানেও আমার সাজা ভোগ করতে হতো। না মরেও সাজা ভোগ করছি।
কাকে বলবো আমি আমার এই অতি গোপন কথা। আমার লজ্জার কথা। আমার কষ্টের কথা।
আর বললেও কেউ বিশ্বাসও করবে না।কারণ উদয়কে সবাই বিশ্বাস করে ভালোবাসে,পছন্দ করে। তার ব্যবহারে সবাই মুগ্ধ। তার আলাপচারিতা তার ভদ্রতার কোন তুলনা হয় না।
অতি অল্পসময়ে আমি উদয়ের দুই রূপ ধরে ফেললাম। সে প্রাইভেট মুহূর্তের সময় একরকম হায়নার মত আর সে সময়টা পেরিয়ে গেলে রোমান্টিক হাসবেন্ড।
জিয়ানকে কষ্টের মধ্যে ফেলে দিলাম আর উদয়কেও সুখী করতে পারছি না।
উদয়ের সামনে আমি একটা জীবিত পুতুল ছাড়া আর কিছুই না। সে আমাকে ভালোবাসুক আর নাই বাসুক তার পাওনা সে যে কোন মূল্যে আদায় করে নিবেই।
উদয় কোনদিন আমার মনের খবর নিতে আসবে না। আমার ইচ্ছা অনিচ্ছার মূল্য দিবে না। সে আসবে তার কু প্রবৃত্তি পুরা করতে। ভালোবাসার গলা ভেজানো কথা বলে অত্যাচার করে হলেও নিজের লালসা মিটিয়ে নিবে।
বাইরে থেকে দেখতে ভালো হলেই যে ভিতরটাও ভালো হবে এমন কোন কথা নেই। ওর সাথে আমার চিরদিনের সংসার হবে কিন্তু ভালোবাসা কোনদিন হবে না।
মনকে বুঝিয়ে ওর প্রতি নরম করে আনি কিন্তু পর মুহূর্তেই ওর ব্যবহারে মনটা বিষিয়ে যায়।
কিছু মানুষ আছে ভালোবাসি ভালোবাসি বলে হেঁদিয়ে মরে অথচ বিন্দু মাত্রও ভালোবাসে না।
উদয় হচ্ছে সেই প্রকৃতির মানুষ।
এই কদিনে এইটুকু ভালোভাবেই বুঝে গেছে লিয়া।
আমাকে সুস্থ রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করে, সেটা সে ভালোবেসে করে না, রাতের আদিম খেলার জন্য প্রতিপক্ষ খেলোয়াড় রেডি রাখে। ভালোবেসে নয়।
সে কোনদিন আমার মনের খোজ নিতে আসেনি।
এ খেলায় আমার ইচ্ছা আছে কি নেই তাও বুঝতে চেষ্টা করেনি। তার পাওনা সে বুঝে নিয়ে গেছে বারবার, রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত করে।
তার এই বন্যতা আমি কতটা সহ্য করতে পারবো সে খেয়ালও রাখেনি।
এটাকে অত্যাচার ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না ।
তারপরও মুখ বুজে সব মেনে নিচ্ছি।
ধরে নিয়েছি এটাই আমার ভাগ্যের লিখন। ভাগ্যের লিখন খন্ডানো যায় না।
(বানানের ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন)
(চলবে)