#এমনও_প্রেম_হয়
#ইয়ানা_রহমান
#পর্ব:-২৩
লিয়া নিজের দুর্ভাগ্য কে মেনে নিয়ে মনের দুঃখ কষ্ট মনের ভিতর কবর দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে জীবন যাপন করে যাচ্ছে। কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে।
ফেইসবুক ডিয়েকটিভেট করে দিয়েছে।
জিয়ানের ফোন নাম্বারটা ডিলিট করে দিয়েছে।
মানুষটাই ওর নেই, মানুষটাকেই জীবন থেকে ডিলিট করে দিছি, তার ফোন নাম্বার রেখে দিয়ে আর কি হবে।
মনের মানুষ মনেই থাক সংগোপনে। সারাজীবন শ্রদ্ধায় ভালোবাসায় থাকবে আমার মনের ভিতর।
লিয়াকে তুলে নেওয়ার অনুষ্ঠানের ডেট ঠিক হয়ে গেছে।
গায়ে হলুদ, বিয়ে, বৌভাত সব প্রোগ্রাম হবে রাতে।
বিয়ের কার্ড বিলি করা প্রায় শেষ।
বর বধূ দুই জনের বাসায় বিয়ের শপিংয়ের ধুম চলছে।
লিয়ার মা লিয়াকে শপিং এ সাথে যেতে বললে ও সাফ না করে দেয়।
তোমরা যা আনবে সেটাই আমার পছন্দ হবে।
আফরোজা রিয়াকে নিয়ে, কখনো নিজের বোনকে নিয়ে, জা দেরকে নিয়ে শপিং শেষ করলো।
ভেনাস জুয়েলার্স থেকে হেভি একসেট জড়োয়া গহনার অর্ডার দেয়া ছিলো আগে থেকেই সেটা কালেক্ট করলো।
সাথে কিনলো ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড থেকে ডায়মন্ডের একটা সেট।
উদয়ের জন্য নিলো গলার চেইন, ডায়মন্ডের আংটি, দামী ব্র্যান্ডের ঘড়ি, সুট, শেরওয়ানি, জুতা সাথে আনুসঙ্গিক যা যা লাগে সব কিনে নিলো।
দোকান থেকে লিস্ট নিয়ে গায়ে হলুদের জন্য সব জিনিস কেনা হলো।
লিয়ার বাবা মিজান সাহেব একসেট হাই কোয়ালিটি ফার্নিচার, বড় সাইজের এল ই ডি টিভি, ডাবল ডোর ফ্রিজ, এসি, ওয়াশিং মেশিন, কিনে লিয়ার শ্বশুর বাড়িতে পাঠিয়ে দিলো।
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টকে দায়িত্ব দেয়া হইছে পুরো অনুষ্ঠানের।
তারা সে অনুযায়ী বাড়িঘর ডেকোরেশন থেকে শুরু করে গেট সাজানো, লাইটিং করা, বিয়ের আর হলুদের ডালা সাজানো পর্যন্ত সব করছে।
নামীদামী ক্যাটারিং সার্ভিসকে দেয়া হইছে খাবারের দায়িত্ব। মেনুতে থাকবে অনেক আইটেমের খাবার।
উদয়ের বাড়িতেও মহাধুমধামে আর জাকজমকে চলছে বিয়ের আয়োজন।
লিয়ার জন্য দামিদামী
জিনিসপত্র কেনা হইছে। পয়ত্রিশ ভরি স্বর্ণের জড়োয়া সেট কেনা হইছে। সেই সাথে ছোট একসেট গহনাও নিয়েছে সব সময় পড়ার জন্য।
বর বধূ দুজনের ফ্যামিলি যথেষ্ট ধনী।
তাই আভিজাত্যে যেনো কোন কমতি না হয় সেদিকে টানটান দৃষ্টি রেখে কাজ করছে।
লিয়ার বিয়ের অনুষ্ঠান হবে রাওয়া কভেনসন হলে।
আর উদয়ের বৌভাতের অনুষ্ঠান হবে গলফ ক্লাবে।
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান বর বধূ দুই পক্ষের একসাথেই মিরপুর পুলিশ কনভেনশন হলে অনুষ্ঠিত হবে।
আজ লিয়ার মেহেদী সন্ধ্যার প্রোগ্রাম।
মেহেদী অনুষ্ঠান নিজেদের বাসায়ই। লিয়া নিজের বান্ধবীদেরও ইনভাইট করেছে।
ওর জীবনের সব কষ্টের কথা শুধু নাফিসা জানে। জিয়ানের সাথে প্রেম থেকে শুরু করে ওর হঠাৎ বিয়ে হওয়া, আত্মহত্যা করতে যাওয়া, বেচেঁ ফিরে আসা, উদয়ের বাড়িতে ওর অসহায়ত্বের কথা সব শুধু মাত্র নাফিসা জানে।
বুকের মাঝে যখন কষ্টের ঢেউ উঠতো, মনটা যখন ছটফট করতো, সে কষ্টের কথা কাউকেই বলতে পারতো না তখন সেই কষ্টের সময়ের সাথী ছিলো একমাত্র নাফিসা। ওর প্রাণের বান্ধবী। ওর দুঃখের দুঃখী। ওর বেস্ট ফ্রেন্ড।
নাফিসা সব সময় ওকে বুঝাতো ধৈর্য্য ধরতে বলতো। কোন বাজে চিন্তা করতে দিতো না।
অনেক কষ্টের সময় একজন প্রিয়জনের সহানুভূতির খুব প্রয়োজন হয়। যার সাপোর্ট পেলে একটু শান্তনা পাওয়া যায়। মনটা হালকা হয়।
মেহেদী প্রোগ্রামের দিন লিয়া চিৎকার করে অনেক কাদলো।
এতদিন কেদেছে নিরবে নিঃশব্দে। বুকের মাঝে পাষাণ বেধে গুমরে মরেছে। আজ যেন মন আর বাধা মানছে না।
মনের ভিতর জমে থাকা কষ্টের বরফটা গলে বেরিয়ে আসতে চাইছে। কেউ বুঝলনা এই কান্নার অর্থ। শুধু নাফিসা ছাড়া। মা কিছুটা অনুমান করতে পেরেছিলো।
ওর আম্মুরও অনেক খারাপ লাগছে, মেয়ের জন্য কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কিছুই করার নেই। তখনও কিছুই করার ছিলো না।
বিয়ে থামানোর চেষ্টা করছিলো কিন্তু শ্বশুরের একগুয়েমীর কাছে হেরে গেছে।
সে নিজেও মেয়ের সাথে অনেক কান্না করলো।
মনে মনে ভাবলো, মেয়েদের জীবন যতই আধুনিক হোক যতই স্বাধীন হোক তারপরও কোথাও না কোথাও মেয়েরা খুব বেশি পরাধীন।
কখনো কখনো এই পরাধীনতার শৃংখল থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হয় না।
তারপর ওদের গায়ে হলুদ পার্টি গান বাজনা খাওয়া দাওয়া, অনেক আনন্দ হইহুল্লোড় করে শেষ হলো।
আজ লিয়ার বিয়ে।
বিয়ে তো আগেই হয়ে গেছে তবুও এটাকে বিয়ের অনুষ্ঠান বলাই ভালো।
আজ বর আসবে বধূকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতে।
খাওয়া দাওয়া, অনেক আনন্দ উল্লাস করলো সবাই।
এবার লিয়ার বিদায়ের পালা। আব্বু আম্মু দাদু নিকট আত্মীয় স্বজন সবাই অশ্রুসিক্ত নয়নে বিদায় দিলো লিয়াকে।
লিয়া অঝোর ধারায় কান্না করতে করতে গাড়িতে উঠলো।
চলতে চলতে গাড়ি এসে উদয়দের বাসার গেটে এসে থামলো।
বাসার মুরুব্বীরা এসে বউ নামিয়ে ভিতরে নিয়ে গেল। বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান করে বধূ বরণ করা হলো।
মিষ্টি শরবত খাওয়ানো হলো।
আংটি খুজে বের করার খেলা হলো।
রঙিন পানি থেকে আংটি খুঁজে বের করতে হবে। পরপর তিন বারই লিয়া জিতলো।
এই হাসি ঠাট্টায় অনেক রাত হয়ে গেলো।
এবার বৌকে বাসর ঘরে নিয়ে গেলো রিমি।
আমার ননদ রিমি আপু আমাকে ঘরে নিয়ে খাটে বসিয়ে দিলো।
ঘরটা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। অর্কিড ফুল আর মরিচ বাতি দিতে সাজানো পুরো ঘর।
বিছানাটা ফুলে ফুলে সাজানো। শুধু লাল গোলাপ দিয়ে সাজিয়েছে। সিলিং থেকে গোলাপ ফুলের মালার ঝুল নেমে এসেছে বিছানার চারপাশে। ভীষন সুন্দর লাগছে দেখতে।
চারিদিক মুগ্ধ নয়নে চোখ ফিরিয়ে দেখলাম।
বিছানাটা দেখা মাত্রই ওর বুকটা ধ্বক করে উঠলো।
যদিও খাটটা নতুন, তবুও একই জায়গায় সেট করা।
কিছুদিন আগে যেখানে সে হয়েছে চরম অত্যাচারের শিকার।
যে কয়দিনই এখানে ছিলো, স্বামী নামক মানুষটা দিনে রাতে ওকে করেছে বৈধ ধর্ষণ।
কষ্টে গলা দিয়ে চিৎকার বেরিয়ে আসতো। পাষণ্ডটা কখনো হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে আওয়াজ বন্ধ করতো কখনো ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিয়ে শব্দ বন্ধ করতো।
তার ভয়াল হাতের থাবায় কোকিয়ে উঠতাম, নখের আঁচড় আর কামড়ের কারণে
আমি কষ্টে ছট্ফট্ করতাম, মুখে বলতাম আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, আমাকে ছেড়ে দেন, তবুও তার তৃপ্তি না হওয়া পর্যন্ত ছাড়া পেতাম না।
শরীরের ব্যাথা কমার জন্য বেলায় বেলায় ট্যাবলেট খেতে হতো ,
সে ব্যাথা কমার আগেই আবার নতুন ব্যাথার সৃষ্টি হতো।
সেই কথাগুলি মনে হতেই গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো। মন চাইছে এখান থেকে ছুটে পালিয়ে যাই।
আজকেও কি করবে ওই রকম ভয়ংকর অত্যাচার?
ভাবতেই ভয়ে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো। কিভাবে এই টর্নেডো থামাবে। আর বলবোই বা কিভাবে ?
ভাবতে ভাবতেই উদয় রুমে ঢুকলো।
মন ভুলানো ভালোবাসার দুই চারটা কথা বলে পকেট থেকে একটা ডায়মন্ড রিং বের করে লিয়ার হাতে পড়িয়ে দিলো।
ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে অনেকক্ষণ ধরে চুমু খেল। বললো কাপড় চেঞ্জ করে এসো।
লিয়া উঠছে না দেখে, নিজে ওর গা থেকে একে একে গহনাগুলো খুলে দিলো। তারপর একটা বক্স এগিয়ে দিল বললো পরে এসো।
বক্স খুলে দেখলো একটা লাল রঙের নাইটি।
ও নাইটিটা হাতে নিয়ে বসে রইলো। পিরিওড চলছে ওর। আজ সেকেন্ড ডে।
কি বলবে উদয় ওর পিরিয়ডের কথা শুনলে আর ওর রিয়েকশন কি হবে একথা শুনে ভাবছে লিয়া।
(বানানের ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন)
(চলবে)