#এমনও_প্রেম_হয়
#ইয়ানা_রহমান
#পর্ব:২৫
ভাল মন্দ মিলিয়েই কেটে যাচ্ছে লিয়ার সংসার জীবনের দিনগুলি। এখন আর মন খারাপ করে থাকে না। সংসারের বিভিন্ন কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখে।
একটু একটু করে সে উদয়ের দিকে ঝুঁকছে। উদয়কে মন থেকে মেনে নিয়েছে।
উদয়ের দেয়া কষ্টগুলো সহ্য করা এখন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।
উদয় যেমনই হোক সে তার স্বামী তাই উদয়ের সাথেই জীবন কাটাবে বলে মনস্থির করেছে। বাবার বাড়িতেও খুব একটা যায় না। ভালো লাগে না সেখানে যেতে।
লিয়ার শাশুড়ি হেলেন দেখেছে লিয়ার শরীরে অমানুষিক অত্যাচারের দাগ। কিছু জানতে চায় নি। এমন কি সেযে দেখেছে এটাও লিয়াকে বুঝতে দেয়নি। সে নিজেই যা বোঝার বুঝে নিয়েছে।
প্রতিদিন একটু একটু করে লিয়াকে নেতিয়ে পড়তে দেখছে। আগের মত প্রাণচ্ছল নেই মেয়েটা। খাওয়া দাওয়ায়ও তেমন রুচি নেই।
লিয়াকে প্রতিদিন দুধ ডিম ফ্রুটস খাইয়েও চেহারার ফ্যাকাসে ভাব দূর করা যাচ্ছে না।
লিয়াকে ওর বাবার বাড়িতেও খুব একটা যেতে দেয় না। তার মনে ভয় লিয়ার বাবা মা যদি ঘুণাক্ষরও জানতে পারে তাদের ছেলের এই রাক্ষুসে পনা বিকৃত রুচির কথা তাহলে তারা মেয়েকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাবে। এতে কোন ভুল নেই।
বউ যদি ছেলেকে ছেড়ে চলে যায় তাহলে সমাজে মুখ দেখাতে পারবে না।
তার নিজের মেয়েকে বিয়ে দিতে হবে। উচ্ছাসকে বিয়ে করাতে হবে।
বাড়ির বড় বউ ছেলেকে ডিভোর্স দিয়ে চলে গেছে জানলে অনেকে বাজে কথা বলতে ছাড়বে না। তার ছেলে মেয়ের ভালো ঘরে সমন্ধ করতে পারবে না। চিন্তায় তার চোখে ঘুম নেই।
এই সব ভেবে ভেবে সে অস্থির। কি করা যায় সারাক্ষণ ভাবে।
তারপর তার মাথায় একটা কুট বুদ্ধি এলো। সে সুযোগ খুজতে লাগলো বুদ্ধিটা কাজে লাগানোর জন্য।
সুযোগ চলে এলো খুব দ্রুতই।
উদয় অফিসের কাজে কয়েকদিনের জন্য দেশের বাইরে যায়।
এই সুযোগে সে বাসার সবাইকে নিয়ে সেদিনই উদয়ের নানা বাড়ীতে বেড়াতে যায়।
উদয়ের নানা বাড়ির গ্রামটা দেখতে খুব সুন্দর। গ্রাম বলতে যা বোঝায় এই গ্রামটা তেমনই অজপাড়াগাঁ। গাছগাছালিতে পূর্ন। রাস্তা ঘাট কাচা। রাতের বেলা ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে যায়। চাঁদের আলো ছাড়া কোন বৈদ্যুতিক আলো নেই রাস্তায়। আশেপাশে দোকানপাট নেই তেমন, দুই একটা ছোট্ট ছোট্ট মুদির দোকান, যেখানে চাইলেই সব সদাই পাওয়া যায় না। বাজার অনেক দূরে।
সেখানে তারা সপ্তাহ খানেক থাকবে, ঘুরবে বেড়াবে, আনন্দ করবে।
হেলেন খান সবাইকে নিয়ে তাদের গ্রামে যাওয়ার পর তার ভাই ভাবি ভাইয়ের ছেলে মেয়েরা সবাই খুব খুশি হয়।
লিয়ারও খুব ভালো লাগে জায়গাটা। রিমি লিয়া ওদের মামাতো ভাই বোনদের সাথে গল্পে গল্প খুব ইনজয় করছে।
অনেক দিন পর কেমন যেনো একটা ভালো লাগা ঘিরে রেখেছে। বিশুদ্ধ বাতাস প্রাণ ভরে নিচ্ছে। নিজেকে একটা মুক্ত পাখি মনে হচ্ছে।
রাতে যখন সবাই খেতে বসেছে হেলেন তখন ঘরে গিয়ে গোপনে লিয়ার ব্যাগ থেকে জন্ম নিরোধক পিলের স্ট্রিপ সরিয়ে ফেলে।
তার ধারণা পিল মিস করলে লিয়া কনসিভ করবে।
আবার ভাবে যদি কনসিভ না করে?
না করলে নাই চেষ্টা করতে দোষ কি! আবার অন্য কোন প্ল্যান করবে।
একটা বাচ্চা ঘরে এলে বউ পুরোপুরি সংসারের মায়ায় জড়িয়ে যাবে। তখন আর উদয়কে ছেড়ে যেতে পারবে না।
লিয়া রিমি আর রিমির মামাতো বোন লতা এক ঘরে ঘুমাবে। ওরা ঘুমের চাইতে গল্পই করবে বেশি। এই প্ল্যান ওদের।
লিয়া ওষুধ খেতে গিয়ে দেখে ওর ব্যাগে পিলের পাতাটা নেই। ও ভাবে হয়তো বাসা থেকেই সে নিয়ে আসেনি ভুলে।
এখন কি করা যায়? কাকে বলবো এই কথা?
বললেই কি লাভ হবে, এখানে তো ঢাকার মত ধারে কাছে মেডিসিন কর্নার নেই।
তারপর ননদদের সাথে গল্প করতে করতে পিলের কথা ভুলেই গেলো।
ওরা পুরো এক সপ্তাহ গ্রামে বেরালো। খুব মজা করেছে সবাই। উচ্ছাস ভাইয়া গ্রামের মাঠে ঘাটে নিয়ে ঘুরিয়ে এনেছে। বড়শি ছিপ দিয়ে মাছ ধরতে নিয়ে গেছে, গ্রামের মেলা দেখতে নিয়ে গেছে, সবাই নৌকায় করে দূরে দূরে বেরিয়েছে।
সব মিলিয়ে অনেক আনন্দ করেছে। মনের মত কিছু ভালো সময় কাটিয়েছে।
কিছু দিন পর লিয়া খুব অসুস্থ, উদয় ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলো। টেস্ট করানোর পর জানতে পারলো লিয়া বেবি কনসিভ করেছে।
উদয় অনেক চিৎকার চেঁচামেচি করলো, বললো কিভাবে হলো এটা?
তুমি কি পিল কন্টিনিউ করনি আমি যাওয়ার পর?
লিয়া কিছুই বললো না। মাথা নিচু করে রইলো।
উদয় বললো তোমার বয়স কম, এই বয়সে মা হতে গেলে লাইফ রিস্কে পড়ে যাবে।
এই বাচ্চা আমরা রাখবো না। তোমাকে এবরশন করতে হবে।লিয়া রাজি হয় না।
উদয় রেগে গিয়ে হাতের কাছে যা পাচ্ছে সব ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে। জিনিসপত্র ভাঙচুর করতে থাকে।
হেলেন ছুটে ঘরে এসে দেখে ঘরে
লংকা কান্ড। ছেলে রেগে আগুন। চোখ মুখ লাল হয়ে আছে।
ঘটনা শুনে হেলেন বললো, এসব কি কথা উদয়!
বাচ্চা নষ্ট করা অনেক গুনাহের কাজ আর অনেক সময় দেখা যায় এবরশন করলে পরবর্তীতে আর বাচ্চা হয় না।
লিয়া শাশুরির কথায় আরো জোর পেলো। সে কিছুতেই রাজি হয়নি এই পাপ কাজ করতে।
তাই আর এবরশন করানো হলো না।
লিয়া ভাবছে নিজের কথা। তার আর কলেজে পড়ার সপ্ন পূরণ হলো না। তুলে নেওয়ার দুই মাস পর আমার পেটে এলো। আমার আর উদয়ের বাচ্চা।
অল্প বয়স হওয়াতে খুব অসুস্থ হয়ে পড়লাম। সারাদিন শুধু বমি আর বমি।
পানিটুকুও মুখে দিতে পারছিলাম না।
খাবার খাওয়া সেতো স্বপ্নের মতো।
মরার মতো পরে থাকতাম।
এক কাত থেকে আরেক কাত হতে পারতাম না। নাকের সামনে মাছি গেলেও তাড়ানোর ক্ষমতা ছিল না।
এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছিলাম।
আমাকে
হসপিটালে ভর্তি করা হলো। বমি করতে করতে শরীর বেশ পানি শূন্য হয়ে পড়েছে।
স্যালাইনের পর স্যালাইন দিয়ে যাচ্ছে। বমি বন্ধ হচ্ছে না।
বমি করতে করতে শেষ অবধি গলা দিয়ে বমির সাথে রক্ত আসছে।
কোমরে ইনজেকশন পুশ করে বমি বন্ধ করে । ইনজেকশনের অ্যাকশন শেষ হয়ে গেলে আবার বমি শুরু হয়। এভাবেই
কাটে কিছুদিন।
বাসায় যদি থাকি সাতদিন তবে হসপিটালে থাকি দশ দিন। বাসায় নিলেই আবার অসুস্থতা বেড়ে যায়।
হসপিটালে থাকলেও শুধু স্যালাইনের ওপর থাকতে হয়। কোন খাওয়া দাওয়া করতে পারি না।
ওই সময়টাতে স্যালাইনের পাশাপাশি আমার খাবার ছিল শুধু আলুবোখারা আর কিসমিস। তাও খুব সামান্য।
হয়তো একটা আলুবোখারা মুখে নিয়েই সারাদিন পার হয়ে যেতো।
হসপিটালের দিনগুলিতে আম্মু আমার কাছে থাকতো সারাদিন আর রাতে থাকতো উদয়।
মাঝে মধ্যে শাশুড়ি মা এসে আম্মুকে সঙ্গ দিয়ে যেতো।
দিনের পর দিন স্যালাইন চলার ফলে হাত ফুলে উঠতো। আবার নতুন করে অন্য জায়গায় ক্যানুলা করে স্যালাইন শুরু করতো।
সাথে চলতো আরো অনেক রকম ওষুধ। মুখে খেতে পারতাম না তাই ইনজেক্ট আকারে সব ওষুধ স্যালাইনের সাথে দিয়ে দিতো।
চোখে ঘুম ছিলো না মোটেও।
ডক্টর বললেন, পেশেন্টের বয়স কম, তারপর প্রেগন্যান্সিতে কিছু জটিল সমস্যা দেখা দিয়েছে। বাচ্চাটাকে এবরশন করাতে হবে।
এবর্শান না করালে অদূর ভবিষ্যতে মা বাচ্চা কাউকেই বাঁচানো যাবে না হয়তো।
এখন আপনারা ডিসিশন নেন কি করবেন।
আম্মু আমাকে বুঝালো, উদয় বুঝালো কিন্তু আমি কিছুতেই রাজি হলাম না।
আমি এখন আমাদের বাসায় থাকি। হসপিটালে ভর্তি হলে সেখানেই পড়ে থাকি আর রিলিজ দিলে আম্মুর বাসায় থাকি। উদয়ের বাসায় যাওয়া হয় না অসুস্থতার কারনে।
বাচ্চাটা পেটে আসার পর থেকেই ওর জন্য বুকের ভিতর কেমন যেনো একটা মায়া ফিল করতাম। নিজেকে পরিপূর্ণ মনে হতো। ও আমার দুনিয়া, ও আমার জান। ওকে নিয়ে আমি খুব ভালো থাকবো ।
ওকে কিছুতেই আমার থেকে আলাদা করবো না। প্রয়োজনে মরে যাবো। তবুও এবর্ট করবো না কিছুতেই।
হসপিটালে থাকা কালীন একদিন রাতের বেলা, চোখে হালকা একটু তন্দ্রা মত এসেছে, পায়ের পাতার ওপর পানির ফোটার অনুভব করলাম।
চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি উদয় আমার পায়ের ওপর ঝুঁকে আছে। পা সরিয়ে নিয়ে ওকে কাছে ডাকলাম।
এমনিতে কাউকেই সামনে আসতে দেই না, কারো গায়ের গন্ধ সহ্য হয় না। কোন গন্ধ নাকে গেলেই বমি হয়ে যায়।
নাকে মুখে মোটা করে ওরনা পেঁচিয়ে, উদয়কে কাছে ডাকলাম।
বললাম, কি হইছে কাদছেন কেন?
আমার কথার কোন জবাব না দিয়ে আমার বুকে মাথা রেখে বাচ্চাদের মতো হু হু কেদে উঠল।
আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম, চুলে বিলি কেটে দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কি হইছে কাদছেন কেন?
বললো, বাচ্চাটা নষ্ট করে দাও। আমার কথাটা রাখো। বাচ্চাটা আমিও চাই, তবে তোমার বিনিময়ে না।
তোমার কিছু হোক এটা আমি চাই না। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচব না।
বলে, আমার হাত ধরে অনুরোধ করলো। আমার কথাটা রাখো প্লিজ।
আমি কিছুই বললাম না, অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলাম।
উদয় আমার মুখ ওর দিকে ফিরিয়ে এনে বললো, আমার কথাটা রাখবে না?
আমি বললাম, না। বাচলে আমি আমার বাচ্চার জন্যই বাঁচবো,আর মরলেও ওর জন্যই মরবো। এ ব্যাপারে আমি আর কোন কথা বলতে বা শুনতে চাই না।
আমাকে না জানিয়ে যদি গোপনে কোন ওষুধের মাধ্যমে কিছু করেন তাহলে আমি সুইসাইড করবো বলে দিলাম। তখন আমাকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।
তারপর নিজের পেটে হাত রেখে বাচ্চাটাকে অনুভব করলো, আদর করলো লিয়া।
পাঁচ মাস সময়ের দিকে আমি কিছুটা সুস্থ হই। একটু একটু খেতে পারি। নিজে নিজে উঠে বসতে পারি।
তবে আগের মতোই কারো গায়ের গন্ধ সহ্য হয় না।
তাই বাসার সবাই একটু দুরত্ব মেইন্টেন করে চলে।
এর সাথে কিছু নতুন উপসর্গ যোগ হলো, মুসুরি ডাল বাগার দিলে যদি গন্ধটা আমার নাকে আসে তো সাথে সাথেই বমি হয়ে যায়।
তরকারী কষানোর সময় দরজা জানালা বন্ধ করে বসে থাকি। লাক্স সাবানের গন্ধেও বমি আসে।
এই পাঁচ মাসে যেই কাপড়গুলি পরে বমি করেছি সেগুলি দেখলেও বমি পায়।
আম্মু এগুলি বুঝে নিয়ে সেভাবেই কাজ করতো। আমার যেগুলিতে সমস্যা হতো সেগুলি চোখের সামনেও পড়তে দিতো না।
আমার রুমে কিং সাইজ বেড থাকার পরও আমার বিছানায় উদয়ের জায়গা হতো না।
উদয় ঘুমাতো একটু দূরে একটা লম্বা সোফায়। ও এখানেই থাকে আমার সাথে। সোফায় ঘুমাতে ওর অনেক কষ্ট হয়, ঠিক মত ঘুম হয় না তবুও আমাকে ছেড়ে একদিনের জন্যও বাসায় যায়নি।
উদয় এখন কোন কিছুতেই রাগ দেখায় না। ওর আমূল পরিবর্তন দেখে আমি কিছুটা অবাক হই।
ওর এই পরিবর্তন কি আমার অসুস্থতার জন্য নাকি বাচ্চার মায়া, কোনটা?
যে কারণেই হোক ওর এই পরিবর্তন আমার ভালো লাগছে। আমার জন্য ওর এতোটা মনোযোগ আগে কখনো দেখিনি। এটাও আমার ভালো লাগে। প্রশান্তি ছেয়ে যায় মনে।
আমি ওকে অল্প অল্প পছন্দ করতে শুরু করেছি, ভালবাসতে শুরু করেছি।
জিয়ানের জন্য মনের সব রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছি আর উদয়ের জন্য সব ভালোবাসার সব রাস্তা খুলে দিয়েছি।
কারন উদয় আমার সন্তানের বাবা। তার স্থান আমার কাছে সবার ওপরে।
গর্ভকালীন সময় যখন সাত মাস তখন আবার নতুন উপসর্গ দেখা দিলো, হাল্কা ব্লিডিং শুরু হলো।
আর দিনে অন্তত চার থেকে পাঁচ বার জ্ঞান হারা হয়ে যাই। মাথায় পানি দিয়ে, মাথার তালুতে তেল মালিশ করে হাত পায়ের তালু রাব করে জ্ঞান ফিরিয়ে আনতো।
হাত পায়ের তালু ঠাণ্ডা হয়ে যেত, হাত পায়ের তালুতে গরম তেল মালিশ করে দিতো।
এভাবেই চলছিল আমার প্রেগনেন্সির দিনগুলি।
আমার শাশুড়ি এসে মাঝে মাঝে দেখে যায় আমাকে । সেও আমার ওপর ভীষন রাগ, ডাক্তারের কথা মত
আমি কেন বাচ্চাটা ফেলে দিলাম না।
আমার এই ঘন ঘন জ্ঞান হারিয়ে ফেলা নিয়ে সবাই খুব চিন্তিত।
ডক্টরের সাথে কন্সালট করলে, ডক্টর বললো, আমি তো বলেছিলাম বাচ্চাটাকে এবর্ট করতে।
দেখা যাক কি হয় বলে, কিছু টেস্ট আর আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করাতে বললেন। আগের মেডিসিন গুলির সাথে কিছু নতুন মেডিসিন অ্যাড করে দিলেন।
আর সাবধানে থাকতে বললেন,রিপোর্ট নিয়ে আবার আসতে বললেন।
আমি এখন ভাত খেতে পারি। প্রচুর ভাত খাই। আর কি দিয়ে খাই শুনলে সবাই হাসবে। শুধু টমেটো সালাদ দিয়ে ভাত খাই। যতক্ষণ পেট না ভরে আমি খেতেই থাকি। আমার পেটে যেনো রাজ্যের ক্ষুধা নেমে এসেছে।
উদয় অফিস থেকে ফেরার সময় আমার জন্য বিভিন্ন ধরনের খাবার নিয়ে আসে।
সেগুলির মধ্যে কোনটা একটু খাই কোনটা ধরেও দেখি না।
এভাবেই কেটে গেলো আরও কিছু দিন।
আমি আবার বিছানায় পড়ে গেলাম। শরীর ভীষন অসুস্থ হয়ে পড়লো।
নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো। সে যে কি কষ্ট, মনে হচ্ছিলো আমি মারা যাচ্ছি।
তারাতারি আমাকে হসপিটালে ভর্তি করা হলো।
ডক্টর চেক করে বললেন অতিরিক্ত ব্লিডিং হচ্ছে,এখনই ওটি করতে হবে।
ব্লাড অ্যারেঞ্জ করতে বললেন। ব্লাডগ্রুপ এবি+ ,
উদয় অফিসে ছিলো ওকে দ্রুত হসপিটালে আসতে বলা হলো।
কনসার্ন ফর্মে সিগনেচার করা হলো।
আমাকে ওটিতে নিয়ে যাবার সময় উদয় আমার হাত ধরে অনেক কান্না করলো।
আব্বু আম্মুও কাদছে।
শ্বশুর বাড়ির সবাই খবর পেয়ে চলে এলো। আমাকে ওটির ভিতরে নিয়ে গেলো।
উদয় খুব কাদছে ওর মাকে ধরে।
মা বলো না লিয়ার কিছু হবে না তো? লিয়া আর আমার বাচ্চাটা বাঁচবে তো?
হেলেন বললো, আল্লাহর কাছে দুয়া কর, নিশ্চয়ই দুজনেই বেঁচে ফিরবে।
হেলেন নিজেও ছেলের কান্না দেখে কাদছে।
একজন নার্স বেরিয়ে এলে লিয়ার আম্মু কাদতে কাদতে তাকে জিজ্ঞেস করলো, আমার মেয়ের কি খবর?
সিস্টার বললো এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না, তবে বাচ্চা তিন কেজির কম ওজন হলে অনেক সময় সমস্যা হয়।
সিস্টার চলে গেলো তার নিজের কাজে।
সবাই আল্লাহর কাছে দুয়া করতে লাগলো।
ঘণ্টা খানিক পর,
ডক্টর বেরিয়ে এসে জানালো ছেলে বাচ্চা হইছে, বাচ্চা ভালো আছে।
মিজানুর রহমান বললো আমার মেয়ে কেমন আছে?
বাচ্চার মায়ের অবস্থা খুব খারাপ। ব্লিডিং বন্ধ হচ্ছে না। পাঁচ ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়েছে কিন্তু রক্ত শরীরে থাকছে না।
উদয় জোড়ে চিৎকার করে কেদে ফেললো। ডক্টরের হাত ধরে বললো যেভাবেই হক আমার স্ত্রীকে বাঁচান।
আমরা চেষ্টার কোন ত্রুটি করছি না।
বাচ্চাকে অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে, একটু পরই আপনাদের কাছে দিয়ে যাবে।
অনেক সময় পর লিয়ার ব্লিডিং বন্ধ হইছে। নয় ব্যাগ রক্ত দেয়া হইছে ওকে। এখন সে বিপদ মুক্ত। বলে গেলো ডাক্তার
শুনে সবাই খুব খুশি হলো। বিশেষ করে উদয়।
বউ বাচ্চা ভালো আছে শুনে সে মহা খুশি।
লিয়ার আব্বু আম্মু খুশিতে কেদে ফেললো। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে
আমার বাচ্চা আর নাতি ভালো আছে।
আল্লাহর কাছে সবাই শোকরিয়া জানালো।
(বানানের ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন)
(চলবে)