#এমনও_প্রেম_হয়
#ইয়ানা_রহমান
#পর্ব:-৬
উদয় নামের লোকটা আমার হাতে আংটি পড়িয়ে দিলো।
আমি মুহূর্তেই অপরিচিত একজন লোকের বাগদত্তা হয়ে গেলাম।
যাকে কোনদিন দেখিনি, যাকে চিনি না, জানি না, কিভাবে এলো আমার জীবনে সে! কোনদিক দিয়ে ঢুকে পরলো!
আমার গোছানো জীবন এলোমেলো করে দিলো।
আমি কি করবো এখন?
আমার কি করা উচিৎ, কিছুই ভেবে পাচ্ছি না। কেদেই চলেছি। মনে হচ্ছে ওখান থেকে ছুটে বেরিয়ে যাই।
আমার কলিজা ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে।
মাথায় কোন কাজ করছে না।
সারা শরীর অবশ হয়ে আসছে।
মাথা ঘুরছে। চোখে অন্ধকার দেখছি। চোখের পলকে
আমার সব শেষ।
উদয়ের মা বললো, তুমি এখন ভিতরে যাও মা।
আমরা বড়রা কথা বলি।
আমি যেনো হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম। উঠে চলে আসছিলাম_
আম্মু ডেকে বললো, সবাইকে সালাম দিয়ে তারপর যা।
আমি সালাম দিয়ে সেখান থেকে দ্রুত পায়ে চলে আসলাম।
আমি কেদেই চলেছি আর ভাবছি,
আমি জিয়ানের কাছে ওয়াদা করেছি,
আমি সারা জীবন ওর হয়ে থাকবো।
সেই ওয়াদা তো আমি রাখতে পারলাম না।
আমি ওয়াদার খেলাপ
করলাম। কিন্তু আমার তো কিছুই করার নেই।
শুধু কান্নাই আমার সারাজীবনের সঙ্গী।
কাদছি আর
বারবার একই কথা মনে হচ্ছে,
এখন আমি কি করবো, আর কি করা উচিত। আমি কেমন করে জিয়ানকে ভুলে থাকবো।
জিয়ান আমার প্রথম ভালোবাসা, একমাত্র ভালোবাসা।
আমার কিছু ভালো লাগছিল না,
মরে যেতে ইচ্ছা করছে।
এছাডা় আমার আর কোন পথ খোলা নেই।
জিয়ানের কাছে যাওয়ারও কোন উপায় নেই।
আমি ওদের বাসাও চিনি না। আর চিনলেও কি হতো তারা কি আমায় মেনে নিবে?
জিয়ানকে জানালেও কিছুই হবে না। কারণ
ও মাত্র কিছুদিন হলো কানাডা গেছে । চার মাসও হয়নি।
ও আসতেও পারবে না, আর আমার এই সমস্যার কোন সমাধানও দিতে পারবে না। কারণ ও নিজেই তো স্টুডেন্ট।
মাঝখান থেকে ওর মন ভেঙ্গে যাবে আমার এনগেজমেন্টের কথা শুনলে।
পড়াশুনার বিরাট ব্যাঘাত ঘটবে।
আসতেও পারবে না,
থাকতেও পারবে না।
পড়াশুনাও হবে না।
ওর ভবিষ্যত নষ্ট হয়ে যাবে।
আমি কিছুতেই ওর ভবিষ্যত নষ্ট করতে পারি না। আমার বিয়ের কথা
জানতে পারলে ও পাগল হয়ে যাবে।
ও নিজেও যে আমাকে অনেক ভালোবাসে।
সবাই বিভিন্ন ধরনের গল্প গুজব করছে, আর আমি আমার ঘরে বসে ভাবছি আমার অন্ধকার ভবিষ্যতের কথা, ভাগ্যের লিখনের কথা।
এই ছিল আমার ভাগ্যে।
এতো বড় একটা আঘাত আমার প্রাপ্য ছিল?
যদি আমার ভাগ্যে জিয়ান না থাকে তবে কেন এলো আমার জীবনে।
আমি কেমন করে ভুলবো ওকে।
ওদিকে উদয়ের বাবা লিয়ার আব্বুকে বললো, যদি আপনাদের আপত্তি না থাকে তো আমরা আজই আকদ করতে চাই।
আকদ হয়ে গেলে ওরা একে অপরের কাছাকাছি থাকবে।
ঘুরতে বেড়াতে পারবে, এতে ওরা একে অপরকে বুঝবে, জানবে।
আপনাদের মেয়ের তো বয়স কম, সংসার জীবনে ঢুকার আগে ওরা একে অপরের কাছাকাছি আসুক, দুজনে বন্ধুত্ব হোক , কি বলেন!
লিয়ার মা বাবা একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করে।
তারপর লিয়ার দাদুর দিকে তাকায়।
দাদু বলে, আমাদের কোন আপত্তি নেই।
আংটি পড়ানো হয়ে গেছে, অর্ধেক বিয়ের কাজ তো হয়েই গেছে। এখন তোমরা যখন চাচ্ছো কাবিন করতে, তাহলে হোক কাবিন।
সবাই বললো,
আলহামদুলিল্লাহ।
লিয়ার আব্বুকে উদয়ের আব্বু বললো, ভাই সাহেব কারোরই যখন কোন আপত্তি নাই, তবে কাজী ডাকার ব্যাবস্থা করেন।
বিয়ে পড়ানোর কাজটা হয়ে যাক।
ওরা একেবারে রেডি হয়েই এসেছে ।
গাড়ির ভিতর থেকে নিয়ে এলো মাঝারি সাইজের একটা লাগেজ যার ভিতর বিয়ের সব জিনিসপত্র
দিয়ে ভরা।
লিয়ার মাকে আকদের জিনিস পত্রের লাগেজ বুঝিয়ে দিয়ে বললো, ওকে রেডি করতে।
উদয়ের মা বললো, আমি আপনার সাথে আসি? ওকে রেডি করতে সাহায্য করি?
নিশ্চয়ই, আসুন ভিতরে চলুন। উদয়ের মায়ের সাথে এলো উদয়ের বোন রিমি।
ভিতরে গিয়ে দেখে লিয়া অঝোর ধারায় কাদছে।
উদয়ের মা ওকে সান্তনা দিল।
তারপর টিস্যু দিয়ে চোখ মুখ মুছে দিলো।
লিয়ার খালা ফুপু আর উদয়ের মা মিলে ওকে বউ সাজালো।
শাড়ি গহনা কসমেটিকস কোনটাই কম আনেনি পাত্রপক্ষ।
লিয়াকে খুব সুন্দর লাগছে। রিমি একের পর এক ছবি তুলেই যাচ্ছে।
লিয়ার মা ওকে জড়িয়ে ধরে কেদে ফেলে।
উদয়ের মা বললো,
সেই কখন থেকে মেয়ে কেদে চলেছে, তাকে থামানো যাচ্ছে না,
এখন আবার আপনি কান্না শুরু করলেন?
তাহলে মেয়েকে থামাবে কে শুনি।
লিয়া কিছুই বলছে না, শুধু কেদেই যাচ্ছে।
ওর মুখে কোন ভাষা নেই।
যেনো একটা প্রাণহীন পুতুল। যার নিজস্ব কোন সত্ত্বা নেই, কোন অনুভূতি নেই।
সাজানো শেষে ওকে বসিয়ে রেখে উদয়ের মা আর রিমি বসার ঘরে চলে গেলো।
ইতিমধ্যে কাজী সাহেব চলে এসেছেন, বিয়ে পড়ানো শুরু করে ।
বিশ লক্ষ টাকার কাবিন ধার্য করা হলো, বিনা ওয়াশিলে।
লিয়া কেদেই চলছে কিছুতেই কবুল বলছে না।
ওর বাবা সামনে বসে ওকে কবুল বলালো।
আর উদয় বিনা সংকোচে কবুল বলে ফেললো।
হয়ে গেলো বিয়ে পড়ানো।
লিয়া জন্মের মতো উদয়ের হয়ে গেলো ।
হেরে গেলো লিয়া আর জিয়ানের পবিত্র ভালোবাসা।
(বানানের ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন)
(চলবে)