#এমনও_প্রেম_হয়
#ইয়ানা_রহমান
#পর্ব:-৭
আজ হঠাৎ করেই আমার বিয়ে হয়ে গেলো, না চাইতেও বিয়ে হয়ে গেলো।
এই বিয়েতে কেউ আমার মতামতের কোন প্রয়োজন মনে করলো না।
আমার আব্বু আম্মু আমাকে একবার এই ব্যাপারে জিজ্ঞেসও করলো না।
যাদের আমি নয়নের মনি ছিলাম, আমার একটু কষ্টে যারা অস্থির হয়ে যেত,
আজ তারা আমায় এক অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিলো।
এই কষ্ট দেয়ার জন্যই কি এতো আদরে লালন পালন করে বড় করছে আমায়?
আব্বু আম্মুর কাছে যখন যা চেয়েছি তাই পেয়েছি।
ভেবেছিলাম জিয়ান পড়াশুনা শেষ করে এলে আব্বু আম্মুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে, তাদের কাছ থেকে আমার ভালোবাসার মানুষকে চেয়ে নিবো।
কিন্তু সেসবের কিছুই হলো না। হুট করে জীবনে নেমে এলো বিয়ে নামক এক বিরাট বিপর্যয়।
যেই বিপর্যয় সামাল দেয়া আমার সাধ্যের বাইরে।
আমার এতো কাছের মানুষ আমার দাদু, যেই দাদুর কোলে পিঠে আমি বড় হইছি, দাদুর হাত ধরে হাটতে শিখেছি,
দাদু মুখে তুলে খাইয়ে দিয়েছে, শত অন্যায় অত্যাচার, আর দুষ্টামি হাসি মুখে সহ্য করেছে,
সেই দাদুও আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করলো না।
দূরে ঠেলে দিলো,পর করে দিলো, আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দিয়ে দিলো।
শুধু দাদু কেন সবাই পর করে দিলো আমাকে সবাই।
যেই আমাকে তারা এতো আদরে মানুষ করেছে।
আমি যাদের চোখের মনি ছিলাম, কেমন করে করলো তারা আমার সাথে এই অন্যায়।
শুনেছি ছেলে মেয়ে উভয়েরই মতামত লাগে বিয়ের জন্য।
তাহলে আমার বেলায় এর ব্যাতিক্রম কেন?
আমি কিছুই জানলাম না, হুট করে একদল লোক এসে প্রথমে আংটি পরালো।
পর মুহূর্তেই উঠ ছেমড়ি তোর বিয়া টাইপের বিয়ে হয়ে গেল।
বাসার সবাই অনেক হাসি ঠাট্টা আর গল্প গুজবে ব্যস্ত।
তারপর উদয়ের বাড়ির লোকদের ডিনার সার্ভ করা হলো।
খাওয়া দাওয়া হয়ে গেলে, দাদু বললো উদয় আর
লিয়াকে একটু আলাদা ছেড়ে দিতে। ওরা কিছুক্ষন নিজেদের মধ্যে কথা বলুক।
ওরা এখন আইনত ধর্মত স্বামী স্ত্রী।
কিছুক্ষণ ওরা নিজেদের মত করে সময় কাটাতেই পারে।
দাদু ভাইকে লিয়ার ঘরে দিয়ে এসো।
উদয়কে আমার ঘরে দিয়ে গেলো আমার ছোট বোন রিয়া।
উদয় আমার ঘরে এসে দরজা লক করে দিলো।
আমি কিছুই বলতে পারলাম না। এক নাগাড়ে শুধু কেদেই চলেছি।
উদয় আমার সামনে বসে আলতো করে আমার হাতে হাত রাখলো।
বললো, আমার দিকে তাকাও।
আমি মুখ তুললাম না ।
এবার নিজেই আমার চিবুক ধরে মুখ উঁচু করে ধরলো আর বললো, আমি এ বাসায় আসার পর থেকেই দেখছি তুমি কাদছ, কিন্তু কেন?
আমাকে কি তোমার পছন্দ হয়নি? তোমার কি এ বিয়েতে মত ছিল না! নাকি অন্যকিছু? যে কারণই থাকুক না কেন আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে, আমরা এখন স্বামী স্ত্রী।
আমার কিন্তু তোমাকে ভীষন পছন্দ হইছে।
এক কথায় আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি।
সে আমার হাতের আঙ্গুলগুলি নিয়ে খেলা করতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। আঙ্গুলের ফাঁকে আঙ্গুল ঢুকিয়ে হালকা চাপ দিচ্ছে।
আমার হাত টেনে নিয়ে হাতের পিঠে চুমু দিল।
দুই হাত আমার দুই গালে রেখে আমার কপালে গভীর করে চুমু দিল।
চোখের পানি মুছে দিলো। বললো,
আর কাদবে না, চোখ মুখ ফুলে একাকার হয়ে গেছে। বলে আমার দুই গালে চুমু দিল। আমার কান্না করা ফোলা দুই চোখে চুমু দিলো।
আমার গা ঘিনঘিন করে উঠলো। গায়ের পশম দাড়িয়ে গেলো। তবুও আমি কোন জবাব দিলাম না।
ও আমাকে লিপ কিস করার জন্য এগিয়ে এলে আমি হাত দিয়ে ওকে থামিয়ে দিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলাম।
উদয় একটু অপ্রস্তুত হয়ে বললো, ঠিক আছে তুমি সময় নাও।
কথাতো অন্তত বলতে পারো। তুমি কিন্তু আমার সাথে একটা কথাও বলোনি, এই কথা আমার মনে থাকবে। আমি গুনে গুনে এর শোধ নিবো। বলেই হেসে ফেললো।
এখন আমি তাহলে আসি। আমাকে ভয় পাবার কোন কারণ নেই। আমাকে তোমার বন্ধু ভাবতে পারো।
নিজে থেকেই
নিজেদের সম্পর্কে আরো অনেক কথা বললো। আমার কাছেও অনেক কথা জানতে চাইলো।
বললো, এই তুমি বোবা নাতো? বাবা মা না জেনেই একটা বোবা মেয়েকে আমার সাথে বিয়ে দিয়ে দিলো? হায় আল্লাহ শেষ পর্যন্ত এই বোবা বউ আমার কপালে জুটলো?
আমি রাগান্বিত চোখে তাকালাম।
হেসে ফেললো সে।
যাই যাই বলেও যাচ্ছে না। মেজাজ খারাপ হচ্ছে এখন।
আমি সম্পূর্ন নিশ্চুপ বসে রইলাম।
যাবার আগে আমার বেডসাইড টেবিল থেকে আমার মোবাইল হাতে নিয়ে
নাম্বার জিজ্ঞেস করলো, আমি তবুও কিছুই বললাম না।
সে আমার ফোন দিয়ে তার মোবাইলে কল করে আমার নাম্বার নিয়ে নিলো। আর
ওর নাম্বারটা উদয় লিখে সেভ করে দিলো।
বললো, মন শান্ত হলে আমায় একটা কল দিও। আমার ভালো লাগবে।
আমি তোমার ফোন কলের অপেক্ষায় থাকবো।
বুঝতে পেরেছি আমি এখানে থাকলে তুমি ইজি হতে পারবে না। আমাকে বিদায় দাও।
আমি যেভাবে বসে ছিলাম সেভাবেই মাথা নিচু করে বসে রইলাম।
আমার কোন নড়চড় নেই দেখে সে আমাকে হাত ধরে বিছানা থেকে নামিয়ে তার মুখোমুখি দার করিয়ে দিলো। তার দুই হাতে আমার মুখ তুলে একটু উচু করে কতক্ষন তাকিয়ে থেকে, নিজের বুকের সাথে আমাকে মিশিয়ে নিলো।
আমি তার পেশীবহুল বাহুর ভিতরে ছটফট করে উঠলাম। নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলাম কিন্তু তার শক্তির কাছে পেরে উঠলাম না। খুব শক্ত করে ধরে রেখেছে। যেনো বাঁধন আলগা হলেই পালিয়ে যাবো।
আমার গলায় ঘাড়ে ঠোঁট আর নাক দিয়ে কিছুক্ষণ ঘষাঘষি করে ছেড়ে দিলো।
বললো ধুর কোন রেসপন্স না থাকলে কি ভালো লাগে? তুমি এমন করছো কেন?
আচ্ছা এখন আসি তাহলে,
বলে বেরিয়ে গেলো ।
আমি নিষ্প্রাণ মূর্তির মত সব দেখে গেলাম।
নির্জীব পুতুলের মত সবার সাথে তাল মিলিয়ে গেলাম। আমার
ইচ্ছা অনিচ্ছা সব কিছুর জলাঞ্জলি দিলাম।
মানুষ ব্যাথা পেলে উঃ আঃ করে, আমি তাও করলাম না।
কারন আমার চোখে আমি মানুষের কাতারে পড়ি না।
উদয় সহ সব মেহমান বিদায় নিলো।
উদয়কে দাদু থেকে যেতে বললো কিন্তু উদয় বললো পরে আরেকদিন আসবো দাদু।
সবাইকে সালাম দিয়ে চলে গেলো।
আজ আমার মন ভালো নেই,
হৃদয়ের আকাশে জমেছে কালো মেঘ।
হয়তো কিছুক্ষণ পর কাল বৈশাখী ঝড় শুরু হবে।
লন্ডভন্ড হয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে সব।
শুধু থেকে যাবে কষ্টে জর্জরিত এই ভাঙ্গা হৃদয়।
আজ মনের মধ্যে অনেক ব্যাথা জেগে উঠেছে। বেদনার অথৈ সাগরে হারিয়ে যাচ্ছি।
একে একে মনের মধ্যে উকি দিচ্ছে
সুখের কত পথ পাড়ি দিয়েছি।
আজ দুঃখে ক্ষয়ে যাচ্ছে হৃদয়। এই করুন ব্যস্ত জীবনের মাঝে ফুলের সুবাস হয়ে এসেছিল স্নিগ্ধ ভালোবাসা।
প্রিয় জন চলে গেছে পড়াশুনার জন্য বহুদূরে। তাকে কাছে পাওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই।
তাই হৃদমাঝারে ঘর করেছে দীর্ঘ হতাশা।
নতুন করে হয়তো
আর সূর্য উঠবে না ।
আজ নতুন করে হিসাব করতে বসেছি।
ব্যার্থ জীবনের হিসাব।
পাওয়া না পাওয়ার হিসাব।
আমার আপন যারা তারাই আমাকে বোঝেনি, তবে আমি কোথায় যাবো, কার কাছে যাবো।
আমি এই কষ্টের সমাপ্তি চাই।
সবাই নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত, আমি চুপিচুপি দাদুর ঘরে গিয়ে তার মেডিসিন বক্স ঘেঁটে ঘুমের ওষুধের কৌটাটা নিয়ে এলাম।
দেরি না করে সব কটা ট্যাবলেট খেয়ে নিলাম। মনে মনে বিদায় জানালাম জিয়ানকে।
ওর কাছে আমার অপারগতার জন্য ক্ষমা চাইলাম।
তারপর লুটিয়ে পরলাম বিছানায়।
(বানানের ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন )
(চলবে)