#এমনও_প্রেম_হয়
#ইয়ানা_রহমান
#পর্ব:-৯
আই সি ইউ তে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে লিয়া। মুখের ওপর অক্সিজেন মাস্ক লাগানো। হাতে স্যালাইন চলছে।
গায়ে বিভিন্ন মেশিনের কতো তার জড়ানো। সিটের পাশে দেয়ালের সাথে মনিটর লাগানো।
মনিটরে ওর পালস হার্টবিট ওঠা নামা করছে। বারবার ওর শারীরিক কন্ডিশন চেক করা হচ্ছে।
ওর যা যা ওষুধ, ইনজেকশন, লাগবে বাইরে থেকে সব কিনে এনে দিছে মিজান সাহেব।
একটু পর পর একটা করে মেডিসিনের স্লীপ হাতে ধরিয়ে দিয়ে যাচ্ছে, আর মিজানুর রহমান ছুটছে সেই ওষুধ আনতে।
সব ওষুধ কাছে ধারে পাওয়াও যায়নি।
কোন কোন ওষুধের জন্য যেতে হইছে অনেক দূরে ।
তারপরও খুঁজে খুঁজে সব ওষুধ এনে দিয়েছে।
একা তার পক্ষে খুব কষ্ট হয়ে যাচ্ছে ।
কারো হেল্পও নিতে পারছে না।
লিয়ার সুইসাইডের ব্যাপারটা আত্মীয় স্বজনদের মাঝে ছড়িয়ে গেলে মান সম্মানের আর কিছু থাকবে না।
আত্মীয় স্বজনদের, বন্ধু মহলের আর প্রতিবেশীদের নানান রকম প্রশ্নে জর্জরিত হতে হবে । কি জবাব
দিবে সবাইকে।
এই ভয়ে কাউকে কিছু বলতে পারছে না ।
নতুন আত্মীয়দেরই বা কি বলবে!
উদয়কে কি বলবে, আর পুলিশ কেস তো আছেই। সব কিছুর ওপর আছে মেয়ের জন্য চিন্তা।
মেয়েটা যে তার অনেক আদরের ধন।
এতো মনোকষ্ট, এতো চিন্তা, টেনশন আর নিতে পারছে না।
–
–
লিয়ার বাবা মা বাইরে বসে কেদে কেদে আল্লাহর দরবারে দুয়া করছে, মেয়ের জীবন ভিক্ষা চেয়ে ।
নিজেদের অপারগতা জানাচ্ছে আল্লাহর কাছে।
নিজের বাবার বাধ্য ছেলে হয়ে তার সম্মান রাখতে আজ আমার মেয়ের এই অবস্থা।
বাবার অবাধ্য হলে বাবার মনে কষ্ট দেয়া হতো, তাই আমি তাকে কষ্ট দিতে চাইনি,
বাবার বাধ্য হয়ে, এই পুরস্কার পেলাম আমি!
আমার মেয়েকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও মাবুদ ।
আমার মেয়েকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিও না মাবুদ।
–
–
সকাল হয়ে গেছে।
প্রতিটা মুহূর্ত এতো টেনশনে কাটছে যে কখন সকাল হয়ে গেছে ওরা কেউ বুঝতেই পারেনি,
ফোনের রিং বেজে উঠলে ফোন হাতে নিয়ে দেখে বাসা থেকে ফোন করছে ।
–
–
বাবা ফোন করছে,
লিয়ার এখন কি অবস্থা?
মিজানুর রহমান কান্না জড়িত কণ্ঠে কথা বলছে, এবার
জোড়ে কেদে ফেললো,
বাবা আমার লিয়া বুঝি আর বাঁচবে না। ওর অবস্থা অনেক খারাপ।
ওর তো জ্ঞান ফিরছে না। ওর এই অবস্থার জন্য আমিই দায়ী।
ডাক্তার বলছে চব্বিশ ঘণ্টার আগে কিছুই বলা যাবে না।
বাবা আমি আমার কলিজার টুকরা, নয়নের মনিকে নিজের হাতে মেরে ফেললাম।
বলে অনেক কাদতে লাগলো।
–
–
–
কাদিস না,শান্ত হ,
লিয়ার কিচ্ছু হবে না।
তুই কোন চিন্তা করিস না, আল্লাহ সব ঠিক করে দিবেন।
আল্লাহর ওপর ভরসা রাখ।
তোরা ওকে কোন ক্লিনিকে নিয়ে গেছিস, আমি আসবো ওকে দেখতে।
–
–
–
মিজানুর রহমান বললো, এখানে আসতে হবে না।
আমরা কোন প্রাইভেট ক্লিনিকে ওকে ভর্তি করতে পারিনি। আমরা এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আই সি ইউ র সামনে বসে আছি।
লিয়াকে আই সি ইউ তে রাখা হইছে ।
বাবা রিয়া আর অর্পণের দিকে খেয়াল রাখবেন, আর বুয়াকে রান্না বান্না করতে বলেন ।
আপনি, বাচ্চারা সবাই খেয়ে নিয়েন । সময়মত ওষুধ খেয়ে নিয়েন।
আমরা কখন ফিরি কিছুই বলতে পারছি না।
ঘরে বসে আমার লিয়ার জন্য দুয়া করেন।
আল্লাহ যেন ওর জীবন ভিক্ষা দেয়, ওকে বাঁচিয়ে দেয়।
আমার বাচ্চা যেন আমার বুকে ফিরে আসে।
লিয়ার মা ননস্টপ কেদেই যাচ্ছে। তার কান্নার যেনো শেষ নেই।
–
–
–
বাবা, আর একটা কথা! উদয়ের ফোন বা ওদের বাসা থেকে কারো ফোন এলে এসব কিছু বলার দরকার নেই। বলবেন ওর মামা সাথে করে তার বাসায় নিয়ে গেছে।
যা বলার, পরে ভেবে চিন্তে বলা যাবে।
বুয়া কে বলবেন,
ও যেন এই ব্যাপারে কারো সাথে আলাপ না করে।
এই ব্যাপারটা কেউ জানুক সেটা আমি চাই না।
–
–
–
একজন নার্স ভিতর থেকে বেরিয়ে এলে লিয়ার মা তাকে জিজ্ঞেস করে তার মেয়ের কি অবস্থা,
সিস্টার বলে কোন চেঞ্জ নাই একই রকম আছে।
এখনও কিছুই বলা যাচ্ছে না।
প্রফেসর ডক্টর আসুক, দেখুক তারপর স্যারের সাথে আলাপ করে দেখেন স্যার কি বলে।
সিস্টার চলে গেল।
–
–
–
সকাল এগারটার দিকে প্রফেসর এসে রোগীকে দেখে,
ডিউটি ডাক্তারদের ব্রিফিং দিয়ে যান।
অন্যান্য রোগীদের দেখে প্রফেসর বেরিয়ে এলেন।
প্রফেসর কে বেরিয়ে আসতে দেখে মিজানুর রহমান এগিয়ে গিয়ে তার মেয়ের খবর জানতে চায়।
ডক্টর সিস্টারের দিকে তাকায়,
সিস্টার বলে স্যার ওই যে সুইসাইড কেস মেয়েটার বাবা।
তখন ডক্টর বললেন,
দেখুন আপনার মেয়ের শারীরিক কন্ডিশন সম্পর্কে এখনই কিছু বলতে পারছি না। ওর শরীরে মেডিসিন খুব একটা রেসপন্স করছে না । আরো কয়েক ঘণ্টা পর কিছু বলতে পারবো আশা করি। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। দেখা যাক কি হয়, আল্লাহ ভরসা।
–
–
–
ডক্টরের সাথে কথা বলার পর তারা মেয়ের কাছে গেল ।
দেখলো একই অবস্থায় পড়ে আছে।
অক্সিজেন চলছে। হাতের আঙুলে পালস অক্সিমিটার লাগানো।
কোন নড়চড় নেই,
নিথর হয়ে পড়ে আছে তাদের নয়ণের মনি, বুকের ধন।
লিয়ার আম্মু ওর হাত ধরে খুব কান্না করতে লাগলো।
নার্স ওদের আর ভিতরে থাকতে দিলো না।
ওরা বাইরে বেরিয়ে এলো।
মিজানুর রহমান বললো, চলো তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি।
এখানে এভাবে কান্নাকাটি করেত করতে তুমিও অসুস্থ হয়ে যাবে।
আর এতো বেলা পর্যন্ত তোমার কিছু খাওয়াও হয়নি।
লিয়ার মা বললো,
আমি কোথাও যাবো না। আমার মেয়ের জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত আমি কোথাও যাবো না।
আমি এখানেই থাকবো, আর মেয়েকে সাথে নিয়েই বাসায় ফিরবো।
(বানানের ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন )
(চলবে)