ওয়েডিং স্টোরি পর্ব-১১

0
1178

#ওয়েডিং_স্টোরি
#পর্ব_১১
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

মিসেস শেখকে বিদায় জানিয়ে রুমে আসতেই আভার ফোন বেজে উঠলো। এত সকালে কে ফোন দিলো? আভা বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে ফোন হাতে নিলো। ইতিমধ্যে ফোনটা কেটে গেছে। আভা ফোনের স্ক্রিন অন করতেই দেখলো পাঁচটা মিসকল এসেছে। আর সব নাম্বারই আহনাফের। কেনো জানেনা আহনাফের নাম্বার দেখে আভার ঠোঁটে মুচকি হাসি ফুটলো।সে ফোন ব্যাক করতে যাবে তার আগেই আহনাফের কল এলো। আভা ফোন রিসিভ করে কানে ধরলো। সালাম দিতেই আহনাফ ঘুমঘুম কণ্ঠে বললো,
— ” গুড মর্নিং বউফ্রেন্ড..! বেশি লেট করে ফেললাম? ”

আহনাফের জড়ানো কণ্ঠ শুনে আভার মুখ ভরে হাসি আসলো। ইশ! ছেলেটা ঘুমজড়ানো কণ্ঠও কত সুন্দর। একদমন সুইট সুইট..! আভা চোখ তুলে দেয়ালে রাখা ঘড়ির দিকে তাকালো। দশটা পনেরো বাজে। আভা মুচকি হেসে বললো,
— ” জী না। এখনো দেরি হয়নি। আমার কাছে দশটা মানে সবে সকাল। বুঝলেন। ”

আহনাফের ঘুম অনেকখানি ছুটে গেছে। সে এখন চোখ সম্পূর্ণ মেলে সিলিংয়ের দিকে তাকালো। এক হাত মাথার নিচে রেখে আভার উদ্দেশ্যে বললো,
— “কি ভাগ্য তোমার। দশটা পর্যন্ত ঘুমাও। আর তোমার এই হতভাগা বর ভোর সকাল আটটায় উঠে। ব্যাড লাক। ”

আভা খানিক অবাক হলো। সারারুম পায়চারি করে এবার হেঁটে বারান্দায় যেতে যেতে বললো,
— ” কেনো? এত সকাল উঠেন কেনো? ”
— ” হসপিটাল তো সকাল আটটায় শুরু হয়। বাবার সঙ্গে একসাথে বেরিয়ে যেতে হয়।”
— “ওহ.. সো স্যাড। ”

আহনাফ ভ্রু কুচকালো। বললো,
— ” মজা নিচ্ছো? ”

আভা কৃত্রিম অবাক হওয়ার ভান করে বললো,
— ” সেই সাহস কি আছে আমার? ”

আহনাফ হেসে দিলো। শরীর থেকে ব্লেনকেট একটানে সরিয়ে ফেললো ও। আধ উদোম গায়ে ফোন কানে লাগিয়েই ওয়াশরুমে ছুটলো। ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে আভাকে বললো,
— ” এক মিনিট হোল্ড করো। ”

আহনাফ ব্রাশ শেষ করে কুলকুচি করে নিলো। অতঃপর ফোন হাতে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে বললো,
— ” আছো? ”
— ” হুম।”

আহনাফ একটা টিশার্ট গায়ে দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ালো। মোবাইলটা লাউস্পিকারে দিয়ে আয়নায় হেলান দিয়ে রাখলো। বললো,
— “বউফ্রেন্ড, একটা কথা বলি? ”
— ” বলুন। ”
— “কাল সারারাত বৃষ্টি ছিলো। জানো সেটা? ”
— ” হ্যাঁ।জানি। বৃষ্টির কারনে রাতে খুব ঠান্ডা পড়েছিলো। ”
— ” এক্সাক্টলি। আমারও অনেক ঠান্ডা লেগেছিলো। তখন আমার কি মনে হয়েছিলো ,জানো? ”
— ” কি মনে হয়েছিলো? ”

আভা অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো। আহনাফ দাত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে হেসে বললো,
— ” এই ঠান্ডায় ওম দেওয়ার জন্য হলেও একটা বউয়ের খুব দরকার। ”

আভা হঠাৎ-ই স্থির হয়ে গেলো। আহনাফ একি বললো?
লজ্জায় কান লাল হয়ে গেছে তার। বলা হয়, কান লাল হওয়া কারণ নাকি অতিরিক্ত লজ্জা।তার মানে আভা লজ্জা পাচ্ছে? আহনাফ আবারও বললো,
— “কি হলো? কি বুঝলে? ”

আভা চুপ হয়ে রইলো। এই নির্লজ্জ কথার উত্তরে কি-বা বলা যায়? আদৌ কি কিছু বলার আছে? নাকি এসব কিছুই নীরব অনুভুতি? আভা শুধু এইটুকু বললো,
— ” কিছু বুঝার দরকার নেই। আমি রাখছি। ”

আভা তাড়াহুড়ো করে ফোন রাখতে গেলেই ওপাশ থেকে আহনাফ খানিক কড়া সুরে বলে,
— ” বউফ্রেন্ড, ফোন রাখবে না কিন্তু। ”

আভা আকাশের দিকে চেয়ে কিছু একটা বিড়বিড় করলো। তারপর মুখখানা ছোট করে ফোন আবার কানে ধরলো। আহনাফ বললো,
— ” ফোন কাটছিলে কেনো? ”
আভা মিনমিনে সুরে বললো,
— ” ম-মা ডাকছিলেন তাই। ”
— ” ডোন্ট লাই। একচুওয়ালি এটা তোমাকে স্যুটও করে না। সো খামোকা ট্রাই করে লাভ কি? ”

আভা এই কথার উত্তরে নীরব থাকাকেই বেছে নিলো। আহনাফ বললো,
— “আচ্ছা, তুমি লজ্জা পেলে কি করো? ফোন কেটে দাও নাকি অন্যকিছু? কোনটা? ”

আহনাফের কথা শুনে আভার মুখ কিঞ্চিৎ “হা” হয়ে গেলো।
এই অসভ্য ছেলে ওকে লজ্জা দেওয়ার একটা উপায়ও ছাড়ে না। বজ্জাত একটা..। আভা বললো,
— ” লজ্জা পেলাম কই? আমার ওসব লজ্জা-ফজ্জা লাগে না। ”
— ” তাই-ই? ”

আহনাফ এক ভ্রু উচিয়ে বললো। আহনাফের টিপ্পনী কাটার ব্যাপারটা আভা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে। আভা-ও কম যায়না। সে খুব স্বাভাবিক কণ্ঠে বললো,
— ” হ্যাঁ। তাই। ”
— “ওকে। বিয়ের পর দেখা যাবে। ”

” বিয়ে” শব্দটা শুনে আভার বুকটা কেপে উঠলো। অবশেষে তার বিয়েটাও হয়ে যাবে। সে-ও অন্যের ঘরের ঘরনী হবে। বিষয়টা কি খুব কঠিন হবে নাকি সরল? আভা কিছুই বুঝতে পারলো না। আরো কতসময় আহনাফের জ্বালাময়ী কথা শোনার পর আভা ফোন রেখে দিলো। ঠাশ করে বিছানায় বসে পড়লো ও। কানটা এখনো ভো ভো করছে। মস্তিষ্কের ভিতরে ক্রমাগত পায়চারি করছে আহনাফের বলা একেকটা অক্ষর। আভার খুব লজ্জা লজ্জা পাচ্ছে। একসময় সে দুহাত দিতে মুখ ঢেকে ফেললো। যদি এতে লজ্জা কিছুটা কমে..?

___________________
আজ থেকে দুদিন পর আভা আর আহনাফের এনগেজমেন্ট। এনগেজমেন্টের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে আভার বুকের ধকপকানি ততই যেনো বেড়েই যাচ্ছে। নতুন জীবনের সূচনার কথা মনে পড়তেই দিলটা মুচড়ে যাচ্ছে। মনের ভয়টা ক্রমশ প্রবল হচ্ছে। কিন্তু কেনো এমন হচ্ছে সেটা আভার অজানা।

— ” সূর্যের আভা…! চাঁন্দের রাইত..! এদিকে আয় জলদি। তাত্তারি আয়।”

বসার ঘর থেকে ভাইয়ের গলা শুনে আভা পড়ার টেবিল ছেড়ে উঠে দাড়ালো। ভাইয়ের মুখে নিজের ওমন সুন্দর নামের বিকৃতি দেখে মেজাজ-টাই চটে গেছে তার। সে চান্দের রাইত..? ছিঃ। কি বিচ্ছিরি ভাবে তার নাম ভেংগালো। আভা শরীরে ওড়না ঠিকঠাক জড়িয়ে হনহনিয়ে বসার ঘরের দিকে ছুটলো। সবসময় ফাজলামো..!

বসার ঘরে দারুন হইচই চলছে। মা-বাবা আর মিনহাজ বসে আছেন। সোফা সংলগ্ন টেবিলে কয়েক প্লেট ফুচকা রাখা। চারটা বাটিতে চটপটিও আছে। নিশ্চই ভাইয়া এনেছেন। ফুচকা আর চটপটি দেখে আভার জীভ থেকে পানি পড়ছে। আভা এসব দেখে জলদি সোফায় এসে বসলো। কাউকে কিছু বলার আগেই হাত বাড়িয়ে ফুচকা একটা টক মেখে মুখে পুড়ে নিলো। আহা..! কি মজা..! মিনহাজ আচমকা আভার মাথায় সজোরে চাটা মারলো। আভা এতে দাত কিরমিরিয়ে ভাইয়ের দিকে তাকালো। মিনহাজ বললো,
— ” ফুচকা দেখলে হুশ থাকে না? তাইনা? দিবো এক থাপ্পর।”

আভা ভাইয়ের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আরো একটা ফুচকা মুঝে ঢুকালো। বললো,
–” না। হুশ থাকে না। এখন খেতে দেও ত।”

মিনহাজ আভার দিকে চেয়ে নিজে আরো একটা ফুচকা আভার মুখে ঢুকিয়ে দিলো। আভা ফুচকা চিবুতে চিবুতে ভাইয়ের দিকে রাজি চোখে তাকালে মিনহাজ দাড়িয়ে বললো,
–” আরো খা। বেশি করে খা। এসব অখাদ্য কুখাদ্য খাস দেখেই স্বাস্থ্য বাড়ে না তোর। ”

মিনহাজ চলে গেলো নিজের রুমের দিকে। এখন মিনহাজের এমন ব্যাবহার নিয়ে আভা নালিশের ঝুড়ি খুলে বসলো মা-বাবার কাছে। তাদের ছেলে সবসময় এমন করে। সেটা কি কেউ দেখে না? দেখেও কিছু বলে না কেনো? আভার মা-বাবা সেসব শুনে শুধু হাসলেন। ধুর..! এবারও বিচার হলো না। আফসোস..!
____________________
রাত হয়ে গেছে। আভা নিজের রুমে বসে পড়ছে। বহুত পড়া জমে গেছে ওর। আপাতত সেসব কভার করাই তার কাজ। ঠিক তখন মিনহাজ আভার রুমে প্রবেশ করলো। আভা ভাইয়ের দিকে তাকালে মিনহাজ একটা বাদামী রঙের প্যাকেট আভার দিকে এগিয়ে দেয়। আভা অবাক হয়ে প্যাকেটটা হাতে নিয়ে ভাইকে প্রশ্ন করে,
— ” এসব কার? ”

মিনহাজ একটা চেয়ার টেনে আভার পাশে বসে পড়লো। আভার বই সামনে এনে পৃষ্ঠা উল্টাতে উল্টাতে বললো,
— ” তোর হাতে দিয়েছি,অফকোর্স প্যাকেটটা তোর। গাধার মত প্রশ্ন করিস কেনো, ডাফার। ”
— ” কিন্তু এসব কে দিয়েছে? ”
— ” আমি কি জানি? কুরিয়ার থেকে আনতে বলেছে আমি গিয়ে নিয়ে এসেছি।খুলে দেখ কে দিয়েছে। ”

মিনহাজ ঠাস করে বইটা বন্ধ করে আভার রুম থেকে চলে গেলো। আভা প্যাকেটটা নেড়েচেড়ে দেখলো। কে দিয়েছে এসব?

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here