ওয়েডিং স্টোরি পর্ব-১২

0
1105

#ওয়েডিং_স্টোরি
#পর্ব_১২
#আভা_ইসলাম_রাত্রি

কুরিয়ারের প্যাকেট সবসময় শক্ত বাদামি রঙের কাগজে মুড়ানো থাকে। সেই শক্ত আবরনের ভীতরে থাকে কোমল কিছু অনুভূতি। আভা প্যাকেট হাতে নিয়ে বিছানায় বসলো। প্যাকেটটার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে তারপর খোলা শুরু করলো। বুকের ভিতরটা ধুকপুক করছে। কে দিলো, কি আছে এটার ভিতর, সব একসাথে জট পাকাচ্ছে মাথায়।

প্যাকেটটা সম্পূর্ণ খুলে ফেলতেই একটা চিরকুট পেলো আভা, সাথে পেলো আরো দুটো প্যাকেট। এখনকার দুটো প্যাকেট নরম আকাশি রঙের কাগজে মোড়ানো। আভা প্রথমেই চিরকুট হাতে নিয়ে খুললো। চিরকুটের উপরের অংশে ” বউফ্রেন্ড” শব্দটা দেখেই তার ঠোঁটটা হেসে উঠলো। এই হাসিটা একদম মনের গহীন থেকে আগত। চিঠিতে লেখা,

মিস বউফ্রেন্ড
আমার বুকের ভিতরটা না ঝলসে যাচ্ছে। জ্বলেপুড়ে অঙ্গার হয়ে যাচ্ছে। কেনো যেনো মনে হচ্ছে আমি নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছি। এভাবে তোমার প্রেমে আমায় না মজালেই পারতে। আমি না কোথাও ঠিক শান্তি পাচ্ছি না। তার কারণ কি জানো? ” তুমি..। ” যখনই আমি চোখের পলক ফেলি বন্ধ চোখে তোমার প্রতিচ্ছবি ভাসে। যখন চোখ খুলে চারপাশ দেখি তখনও আমার চোখের দৃষ্টিজুড়ে তোমার রাজত্ব। এত কেনো জ্বালাও আমায়? একটু কম জ্বালালে হয়না?আমার এই অবস্খা দেখে খুব মজা পাচ্ছো, তাইনা? কিন্তু আমারও সময় আসবে। তখন বুঝাবো প্রেমজ্বালা কাকে বলে? জাস্ট ওয়েট অ্যান্ড সি।

তোমার জন্যে দুটো ভালোবাসা পাঠালাম। একটা কালো জামদানি শাড়ি আর কিছু অর্নামেন্টস।
একটা আবদার রাখবে, আমার দেওয়া ভালোবাসার সাজে একদিন আমার সামনে আসবে? আমি না খুব করে থমকাতে চাই..! তোমায় দেখে নিশ্বাস আটকে নিতে চাই। আসবে একদিন? ভয়ংকরী নারী হয়ে? একান্তই আমার ব্যাক্তিগত নারী হয়ে?

চিঠিতে এটুকুই লেখা। এই লেখা পড়ে আভা চোখের পলক ফেলতে ভুলে গেছে। মনে হচ্ছে আহনাফের আগেই সে নিঃশ্বাস আটকে মরে যাবে। চিঠিটায় প্রতিটা অক্ষর যেনো ভয়ংকর আবেগ দিয়ে সাজানো। এমন আবেগমাখা চিঠি কেউ কখনো পেয়েছে? নাকি আভা নিজেই সেই ভাগ্যবতী মেয়ে? আভা চিঠিটা কিছুক্ষণ বুকের সাথে চেপে ধরলো। চোখজোড়া বন্ধ করে লম্বাকতক শ্বাস নিলো। আজ কি অক্সিজেনের ঘাটতি হয়েছে? ও দম নিতে পারছে না কেনো? আভা মুচকি হেসে চিঠিটা বিছানার উপর রেখে দিয়ে বাকি দুটো প্যাকেটে হাত দিলো।
একটা প্যাকেট থেকে বেরিয়ে এলো কালো শাড়ি। কালো রঙ-ও এত সুন্দর হয়? নাকি আহনাফ শাড়িটা দিয়েছে বলেই এমন মনে হচ্ছে তার? আভা ভাজ করা শাড়িটা নিজের গায়ে দিয়ে দেখে নিলো। ভালোই মানিয়েছে। আরেকটা প্যাকেটে একটা কালো লকেট, সাধারণ কালো পাথরের ঝুমকো আর কালো দুই ডজন কাচের চুড়ি।

— ” আভা? আভা? ভাত খাবি না? এই আভা? ”

রান্নাঘর থেকে মায়ের ডাক শুনে আভা ধরফরিয়ে উঠলো। তাড়াহুড়ো করে শাড়িসহ বাকি সব আলমারিতে তুলে রাখলো। আর চিঠিটা..! সেটা নিজের ডায়রির বিশ নম্বর পাতার ভাজে যত্ন করে রেখে দিলো। যখনই ডায়রি খুলবে সবার আগে যেনো এই চিঠিটাই নজরে আসে। আর আভা সেই চিঠি দেখে আবারও হেসে উঠে। আগের মত, বারংবার।

_______________________
আজ আভার একটা বিশেষ দিন। বিশেষ দিনে সবকিছুই বিশেষ হওয়া উচিৎ। হাঁটার জন্যে মাটিতে পা ফেলে সেটাও হওয়া উচিৎ বিশেষ কিছু। কিন্তু আভার ক্ষেত্রে সেরকম কিছুই হচ্ছে না। বাড়িভর্তি মেহমান। বাচ্চা-কাচ্চাদের কান্না, বয়স্কদের আগেরকার জামানা, বাবা-চাচাদের দায়িত্ব, তরুণদের সিঙ্গেল জীবনের জ্বালা, সব মিলিয়েই আভাদের বাড়িতে হুলস্থুল কাণ্ড। কিন্তু আভা এই মুহূর্তে ঘুমিয়ে আছে। কোলবালিশ দুহাতে জড়িয়ে ধরে ঘুমুতে ব্যস্ত সে। আভার নিজের রুমেও শোরগোল। এত শোরগোলের মধ্যেও সে ঘুমুচ্ছে। হয়তো এই ঘুমের কারণে আভা কোনো একদিন ছোটখাটো নোবেলও পেয়ে যেতে পারে।
হঠাৎ আভার পাশে ধাম করে শুয়ে পড়লো আরো তিন মেয়ে। আভা এতে খানিক কেপে উঠলো। ঘুমটাও একটু নড়বড়ে হয়ে গেলো। তবুও চোখ মেলে তাকালো না ও। রাইমা এবার আভার পায়ের তলায় সুরসুড়ি দিতে লাগলো। আভা পা বটে নিয়ে ভ্রু কুচকালো। তারা এবার আভার কানের কাছে জোরে চিৎকার করে বললো,
— ” এনগেজমেন্ট….! ”

আভা এবার ধরফরিয়ে চোখ মেলে তাকালো। কানের পাশে তারার মুখ দেখে রাগে বালিশ দিয়ে আঘাত করলো তারার পিঠে। তারা হাসতে হাসতে সরে এলো। আভার পেটে মাথা রেখে আভার দিকে তাকালো। চোখ টিপ্পনী দিয়ে বললো,
— ” কালকে সারারাত কি জিজুর সাথে কথা বলছিলি? এত ঘুম? ব্যাপার কি? ”

আভা চোখ কচলে হাই তুললো। ঘুমের কারণে চোখ থেকে পানি পড়ছে। আভা বললো,
— ” ও তো ব্যস্ত। কাল সারারাত বাবা ছেলে মিলে হসপিটালের কাজ করেছে। এখন আবার এনগেজমেন্ট নিয়ে ব্যস্ততা। ফোন দিবে কোথা থেকে? ”

তারা, সিনথিয়া হঠাৎ একসাথে হেসে উঠলো। আচমকা হাসির শব্দে রাইমা আর আভা অবাক হয়ে ওদের দিকে তাকালো। আভা ভ্রু নাচিয়ে প্রশ্ন করলো,
— ” হোয়াট? পাগলের মত হাসছিস কেনো? ”

তারা সিনথিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
— ” এমনিতেই। তাইনা সিনথিয়া? ”

সিনথিয়া মাথা নেড়ে সায় দিলো। তারা আর সিনথিয়ার মধ্যে অদ্ভুত এক ক্ষমতা আছে। তাদের একজন যে কাজটা করবে অপরজনও ঠিক একই কাজ করবে। আচ্ছা, এদের দুজনের মস্তিষ্ক কি একটাই? দুই দেহ এক মস্তিষ্ক ? একে অপরের মন কিভাবে পড়ে ফেলতে পারে এরা?

আভা ঘুম থেকে উঠতেই আভাকে ঘিরে ধরলো বাকি কাজিনগুলো। সবার চক্করে পড়ে আভার অবস্থা নাজেহাল। কোনোমতে ফ্রেস হওয়ার সময় পেয়েছে ও। বাকিটা সময় ওদের সাথেই কেটে গেলো।

______________________
আহনাফের বাড়িতেও হট্টগোল চলছে। পুরোদস্তুর মতে এনগেজমেন্টের প্রস্তুতি চলছে। মেহমানদের খাতিরদারি চলছে বেশ ভালোভাবেই। আহনাফ এই ফাঁকে আভাকে কল দেওয়ার জন্যে অনেকবার ফোন হাতে নিয়েছে। কিন্তু বারবার কাজিনগুলো ফোন কেড়ে নিয়েছে। তাদের মতে, একটু পর তো দেখা হচ্ছেই। তাহলে এখন এত কল কেনো? কিন্তু এরা কেউই আহনাফের ফিলিংস বুঝতে পারলো না। আফসোস..!

একসময় আহনাফ খুব কষ্ট করে তাদের থেকে ফোন আনলো। নিজের রুমে এসেই দরজা আটকে দিয়েছে সে। ফোন হাতে বিছানায় এসে বসলো। এখন তারার ফোন দেওয়ার কথা।
একটু পরই হোয়াটসঅ্যাপে ভিডিও কল এলো। ফোন দেখেই আহনাফের ঠোঁটে হাসি ফুটলো। সে কল রিসিভ করতেই স্তব্ধ হয়ে গেলো। ফোনের স্ক্রিনে আভার অবয়ব।মুখে গর্জিয়াস মেকাপ, চুলগুলো খোপা করা, খোঁপায় আবার ছোট ছোট পাথর বসানো। এই পাথরগুলোকে কি বলে আহনাফ জানেনা। তবে সে পাথরগুলোকে মনে মনে নাম দিলো, ” শিশিরবিন্দু। ”
আহনাফ আভার ড্রেসের দিকে তাকালো। সাদা রঙের ড্রেস কিন্তু ফোনের কারনে ড্রেস পুরোটা দেখা গেলো না। তবে আহনাফের আফসোস রইলো না। যা দেখেছে তাই নিয়েই সন্তুষ্ট সে। বাকি দেখা নাহয় সামনাসামনি দেখে নিবে। অপেক্ষা জিনিসটা বড্ড আনন্দদায়ক।

আভা তারাকে নিজের সামনে ফোন ধরে রাখতে দেখে যারপরনাই বিরক্ত হলো। হাত দিয়ে তারার হাত থেকে ফোন কেড়ে নিতে গেলে তারা খানিক পিছিয়ে যায়। আভা বিরক্ত হয়ে বলে,
— ” কি করছিস তুই আমার ফোনে? দে ওটা। ”

তারা দাত কেলিয়ে বললো,
— “ভিডিও শুট করছি। পড়ে আমার মোবাইলে সেন্ড করে দিবো। তুই তোর কাজ করনা। ”

আভা হাল ছেড়ে দিয়ে আবার সোজা হয়ে বসলো। এখনো চুলের সাজ অনেকটাই বাকি। আভার এসবে বিরক্ত লাগছে। সামান্য এনগেজমেন্টে এত সাজতে হয়। বসতে বসতে কোমর ধরে গেল ওর। তবে এনগেজমেন্টের সাজে ওকে খারাপ লাগছে না। বরং খুব সুন্দর লাগছে। আচ্ছা, আহনাফ ওকে এই সাজে দেখলে কি করবে? এসব ভেবেই আভা খুশিতে ক্রমশ উত্তেজিত হতে লাগলো।

#চলবে

আগের পর্ব
https://www.facebook.com/105343271510242/posts/222965009748067/?app=fbl

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here