#ওয়েডিং_স্টোরি
#পর্ব_১৩
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
সময়টা ঠিক তিনটা বেজে দশ মিনিট। কিন্তু এই ভর দুপুর বেলায়ও আকাশের উজ্জ্বলতা ক্ষীণ। রোদের তীব্রতা কমে শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। দিনটা ফুরফুরে ,সতেজ। মনে হচ্ছে দুজন কপোত কপোতীর মত আকাশটাও সেজেছে আজ। কি দারুন ব্যাপার..!
আভাদের গাড়ি এসে থামলো কমিউনিটি হলের সামনে। এতক্ষণ হলের সামনে আহনাফদের সবাই আভাদের আসার অপেক্ষা করছিলো। আহনাফ দূরে দাঁড়িয়ে কতজন লোকের সাথে কথা বলছিলো। দূর থেকে আভাকে দেখে আহনাফের ঠোঁটে অযাচিত হাসি ফুটলো। আহনাফ তাদের অপেক্ষা করতে বলে এগিয়ে গেলো আভার দিকে। আজকের দিনটা এমন সুন্দর কেনো?
আহনাফ গাড়ির দরজা খুলে দিলো। আভা আহনাফের দিকে চোখ তুলে তাকালো। আহনাফের পরনে সাদা টিশার্ট আর সাদা ব্লেজার এবং সাদা স্লিম ফিট ট্রাউজার। আহনাফ আভার দিকে একহাত বাড়িয়ে দিলো। আভা চারপাশে একনজর তাকিয়ে আহনাফের হাতে হাত রাখলো। আহনাফের ঠোঁটের হাসি এবার প্রসারিত হলো। আভার হাত শক্ত করে ধরে গাড়ি থেকে নামিয়ে একসাথে এগিয়ে গেলো সামনে। সবার করতালির শব্দ কানে এসে লাগছে। আভা সেদিকে মনোযোগ নেই। আজকে তার সম্পূর্ণ মনোযোগ কেড়ে নিয়েছে তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সুদর্শন সেই পুরুষটি। লোকটা এত সুন্দর কেনো? আভার হিংসে হচ্ছে তাকে দেখে। আভা চারপাশে একবার তাকালো। কেউ নজর দিচ্ছে না তো আহনাফের উপর? আজকাল মনটা বড্ড লজ্জাহীন হয়ে গেছে। মাঝেমধ্যে মনে হয় আহনাফের মুখর কালো কালি লেপ্টে দিতে। কেউ যেনো ওর সৌন্দর্য্য দেখতে না পায়। আহনাফ যেনো সারাজীবন আভার হয়েই রয়। কিন্তু কালো কালি লেপটানো তো সম্ভব না। তবে কালো কাজল? সেটা দিলে কি হবে? ছোটদের মত কানের পিছনে? আভা আনমনেই হেসে উঠলো। দিন তো দিন বাচ্চা হয়ে যাচ্ছে ও। অদ্ভুত..!
স্টেজে পাশাপাশি বসে আছে আহনাফ আর আভা। আভার নজর নিচের দিকে। আহনাফ একবার আগত লোকের সাথে কথা বলছে তো আরেকবার আভার দিকে চোরা চোখে তাকাচ্ছে। আভা মুখ তুলে আহনাফের সেই চাহনি না দেখলেও বুঝতে পারছে খুব। আর এই বুঝতে পেরেই তার লজ্জা লাগছে। লোকে কি বলবে?
আহনাফ হঠাৎ আভার হাত ধরলো। আঙ্গুলের ভাজে নিজের আঙ্গুল রেখে আভার হাতটা শক্ত করে নিজের মুঠোয় পুড়ে নিলো। আভা স্থির হয়ে গেলো। একবার নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে চোরা চোখে আহনাফের দিকে তাকালো। কি করছেন? কেউ দেখে নিলে? ভারী লজ্জায় পড়তে হবে তখন। আভা তাই নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলো। আহনাফ ছাড়লো না। বরং আরো জোড়ে হাত ধরলো। কতক চেষ্টার পরও হাত না ছাড়াতে পারে আভা মিহি সুরে বললো,
— ” কেউ দেখবে। ছাড়ুন। ”
আহনাফ আভার চোখে চোখ রাখলো। আভা থমকে গেলি ওর চোখের দৃষ্টিতে। আহনাফের চোখে আস্ত এক নেশা জড়ানো। চোখের দৃষ্টি সুগভীর। আভা আহনাফের এই দৃষ্টি দেখে কোথায় হারিয়ে গেলো। আজকাল আহনাফের সান্নিধ্য ওর ভালো লাগে।তার কারণটা অবশ্য অজানা। শত খোঁজার পরও কারণ পায়নি সে। আহনাফ হঠাৎই বললো,
— ” এই মুহূর্তে শুধু আমার কথা ভাবো। দেখবে সমস্ত লোক অদৃশ্য হয়ে গেছে। ”
আভা মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকালো। আহনাফের চোখে আর তাকিয়ে থাকা যাচ্ছে না। এত মাদকতা কেনো ওয়ে দুচোখে..! ডুবে যাচ্ছে ও।
আভা আচমকা উপলব্ধি করলো আহনাফের হাত কাপছে।আর এতে আভা অবাক হলো। শরীর খারাপ করে নি তো? আভা আহনাফের দিকে তাকালো। আহনাফ হেলান দিয়ে বসে আছে। চোখ জোড়া বন্ধ করে রাখা। আভা আস্তে করে বললো,
— ” আপনার হাত কাপছে।”
আহনাফ জবাব দিলো না। আগের মতই ঠায় বসে রইলো। আভা এবার ভয় পেয়ে গেলো। সত্যিই কি শরীর খারাপ করলো? আভা আরো একবার বললো,
— ” আপনার শরীর খারাপ লাগছে? আন্টিকে ডাক দিবো?”
আহনাফ এবার একটু নড়েচড়ে বসলো। কপালের ভ্রু সোজা হলো। লম্বা কতক নিঃশ্বাস নিয়ে চোখ খুললো। আহনাফের চোখের দিকে চেয়ে আভা অবাক হলো। চোখ দুটো এত লালচে হয়ে আছে কেনো? আভা অবাক হয়ে বললো,
— ” আপনার চোখ লাল হয়ে আছে। ”
হঠাৎ আহনাফ আভার হাত ধরে হেচকা টান দিলো। আভা এতে আহনাফের দিকে খানিক ঝুঁকে এলে আহনাফ আভার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে,
— ” ভয়ঙ্কর লাগছে। নেশা ধরে যাচ্ছে আমার। শুধু তাকিয়ে থাকতে মন চাচ্ছে। কিন্তু তোমার সো কোল্ড লোকে দেখবে। তাই নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছি। ”
আভা অবাক হয়ে আহনাফের দিকে তাকালো। আহনাফ এখন আভার চোখের দিকে চেয়ে আছে। ঠোঁটে মুচকি হাসি তার। আহনাফের বলা কথাটা আভার মস্তিষ্কে পৌঁছাতেই আভা লজ্জায় আধখান হয়ে গেলো। আভা লজ্জায় লাল নীল হয়ে বললো,
— ” পাগল হয়ে গেছেন আপনি।ছাড়ুন। ”
— ” ইয়াহ..! পাগল..! তুমি করেছো। ”
আভা হেসে সরে এলো আহনাফের থেকে। লেহেঙ্গা ওড়না ঠিকঠাক করে সোজা হয়ে বসলো। আহনাফ সত্যিই পাগল হয়ে গেছেন। কিসব বলেন.। আভার লজ্জা লেগে যায়।
_________________
অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। আংটি বদল হবে এখন। আভা আর আহনাফ মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে।
আহনাফ আংটি হাতে নিয়ে আভার একহাত ধরলো। আভার হাত কিঞ্চিৎ কাপছে। কিন্তু কেনো কাপছে ও জানেনা। শুধু জানে তার কষ্ট হচ্ছে। আহনাফ আভার অবস্থা বুঝতে পেরে চোখ দিয়ে আশ্বাস দিলো। আভা এতে খানিক সহজ হয়ে এলো। আহনাফ আভার আঙ্গুল ধরে ধীরে আংটি পরিয়ে দিলো। চারিদিক করতালিতে মুখরিত হলো। আভা আংটি পড়া আঙ্গুল নিজের সামনে এনে ছুঁইয়ে দিলো আংটিটা। বুকটা কেপে কেপে উঠছে তার। কিন্তু কোথায় যেনো এক সূক্ষ্ম ভালো লাগা জন্মেছে। কিন্তু কেনো?
আভার হাতে আংটি তুলে দেওয়া হলো। আভা আংটি হাতে নিয়ে ছলছল চোখে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নিজের বাবার দিকে তাকালো। আভার বাবার চোখটাও ভেজা। এনগেজমেন্ট ব্যাপারটা যতটা সহজ ভেবেছিলেন, ততটা সহজ না। আজ থেকে নিজের মেয়ের উপর তার অধিকার অর্ধেক কমে আসবে। এর থেকে দুঃখের অনুভূতি একজন বাবার কাছে আর কিইবা হতে পারে। আভা বাবার দিকে এখনো তাকিয়ে আছে। জুনায়েদ নিজের চোখ আঙ্গুল দিয়ে মুছে মেয়ের হাত আহনাফের দিকে এগিয়ে দিলেন। আভা আহনাফের হাত ধরে চোখ বন্ধ আহনাফের আঙ্গুলে আংটি পরিয়ে দিলো। আহনাফ মুচকি হেসে আভার দিকে চেয়ে আছে। আবারও করতালির ধ্বনিতে মুখরিত হলো হলের প্রতিটা অংশ। আংটি পর্ব সমাপ্ত হলো তবে।
_____________________
হলের একটা কক্ষতে আভা আর আহনাফ দাড়িয়ে আছে। আভা দেয়ালের সাথে মিশে আছে। নজর নিচের দিকে। আহনাফ আভার ডান পাশের দেয়ালে হাত রেখে সেই কখন থেকে আভাকে দেখেই যাচ্ছে। দেখার কোনো শেষ হচ্ছে না তার। আভা একসময় বিরক্ত হয়ে বললো,
— ” আর কত? এবার ছাড়ুন। সবাই আমাদের জন্যে অপেক্ষা করছে। ”
আহনাফ একটু নড়েচড়ে আবার আগের মত দাড়িয়ে গেলো। মুচকি হেসে বললো,
— ” করুক অপেক্ষা। আই ডোন্ট কেয়ার। ”
— ” বাট আই ডু। ছাড়ুন। যেতে হবে। ”
আহনাফ ছাড়লো না। এত সহজে কারো কথা মেনে নেওয়ার অভ্যাস তার নেই। আর এই ক্ষেত্রে তো কক্ষণো না। আভা আবারও ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। দাড়িয়ে থাকতে থাকতে পা ধরে এলো ওর। তবুও আহনাফের দেখা শেষ হচ্ছে না। অদ্ভুত..! তবে এইরকম বিরক্ত হতেও তার কেনো যেনো ভালো লাগছে। সুপ্ত ইচ্ছা জাগছে মনে। আহনাফ তাকে এভাবেই স্পেশাল অনুভব করাক সবসময়। সেটা আভার একটুও মন্দ লাগবে না বৈ ভালোই লাগবে।
আহনাফ হঠাৎ হাতে একটা বেলি ফুলের গাজরা আভার চোখের সামনে মেলে ধরলো। আভা অবাক হয়ে তাকালো গাজরার দিকে। খুব সুন্দর তো..! আহনাফ জিজ্ঞেস করলো,
— ” পছন্দ হয়েছে? ”
আভা মাথা নেড়ে সায় দিলো। আহনাফ বললো,
— ” খোপায় লাগিয়ে দেই? ”
আভা কিছু না বলে পিছন ফিরলো। আহনাফ মুচকি হেসে আলতো হাতে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে খোঁপায় গাজরাটা লাগিয়ে দিলো। আহনাফ এবার খোঁপার দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে বললো,
— ” পারফেক্ট। ঘুরো এবার। ”
আভা ঘুরে তাকালো। একবার হাত দিয়ে খোঁপায় গুজা গাজরা ছুঁইয়ে দেখলো। যদিও কখনো গাজরা ব্যাবহার করেনি ও তবুও আজকে খুব ভালো লাগছে। হয়তো আহনাফ দিয়েছে বলে।
হঠাৎ দরজায় টোকা পড়লো। আভা আর আহনাফ দুজনেই দরজার দিকে তাকালো। আভা এক মুহুর্ত কাল বিলম্ব না করে হুড়মুড়িয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো। রুম থেকে যেতে যেতে একবার আহনাফের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। ব্যাস। আহনাফ সেখানেই ঘায়েল হয়ে গেলো।
#চলবে
আজকের পর্ব খুব এলোমেলো হয়েছে। তাড়াহুড়ো করে লেখার ফল।
আগের পর্ব
https://www.facebook.com/105343271510242/posts/223594796351755/?app=fbl