#ওয়েডিং_স্টোরি
#পর্ব_৩২
#আভা_ইসলাম_রাত্রি
রাতের আঁধার কেটে সকাল হলো। কালো আকাশ সাদা রঙে সাজলো। আভা মাত্রই ঘুম ছেড়ে উঠলো। ফ্রেশ হতে হবে এখন। কিন্তু, আভা কারো সাহায্য ছাড়া একা হাঁটতে পারে না। আভা বিছানা থেকে সজোরে ডাক দিলো,
— ” মা, মা! ”
আভার ডাক দেওয়ার প্রায় এক মিনিট পর আভার মা আঁচলে হাত মুছতে মুছতে রুমে প্রবেশ করলেন। আভার পাশে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
— ” ফ্রেস হবি? ”
আভা মাথা নাড়লো। হ্যাঁ, ফ্রেস হবে। আভার মা আভার হাত ধরে বিছানা থেকে নামতে সাহায্য করলেন। বাথরুম পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন,
— ” একা পারবি? আমি আসবো ভিতরে? ”
আভা মানা করলো। বললো,
— ” না, লাগবে না। পারবো আমি।তুমি রুমেই থেকো কিন্তু। ”
আভার মা সম্মতি দিলেন। আভা বাথরুমে চলে গেলো।
পাঁচ মিনিটে ফ্রেশ হয়ে বের হলো আভা। আভার মা মেয়েকে বিছানা পর্যন্ত নিয়ে আসলেন। আভা বিছানায় বসলো। আভার মা জিজ্ঞেস করলেন,
— ” নাস্তা নিয়ে আসি? ”
— ” আচ্ছা! ”
আভার মা চলে গেলেন। আভা দু হাত দিয়ে পা বিছানার উপরে তুললো। বাম পায়ে ফ্র্যাকচার বেশি হয়েছে। সে পায়ে হাঁটু অব্দি লম্বা সাদা রঙের ব্যান্ডেজ। যা ধীরে ধীরে ঈষৎ হলদে রঙ ধারণ করেছে। পায়ের দিকে তাকিয়ে আভার তুমুল মন খারাপ হলো। নিজেকে পঙ্গু, পঙ্গু মনে হচ্ছে। কবে নাগাদ ওর পা ঠিক হবে, বলা মুশকিল! কিন্ত, এভাবে অক্ষম হয়ে বসে থাকতেও বিরক্ত লাগছে। কিন্তু, ওই যে, কপাল! কপালে না থাকলে ঘি, ঠকঠকালে হবে কি?
আভার মা রুমে আসলেন। এক হাতে প্লেট, অন্য হাতে পানির গ্লাস। পানির গ্লাস টি টেবিলে রেখে আভার মা আভার পাশে বসলেন। আভা প্লেটের দিকে তাকালো। প্লেটে একটা ডিম অমলেট আর পরোটা। আভার মা আভাকে মুখে তুলে খাইয়ে দিতে লাগলেন। আভা খেতে খেতে প্রশ্ন করলো,
— ” আমার ফোন কোথায়, মা? ”
আভার মা কঠোর কণ্ঠে বললেন,
— ” ভেঙে গেছে। ”
‘ ফোন ভেঙে গেছে ‘ শুনে আভার রাগ লাগলো। এই ফোন কতশত অনুরোধ আর কাকুতি-মিনতির ফল ছিলো! কিন্তু ভেঙে গেলো। ধ্যুর! আভা মাকে আদুরে কণ্ঠে বললো,
— ” নতুন ফোন কিনে দিবে না? ”
— ” না। ”
আভার মায়ের স্পষ্ট উত্তর। আভার দুঃখ দুঃখ লাগলো। ফোন না পেলে ওর মৃত্যু নিশ্চিত। ফোন ছাড়া আজকাল চলা যায় নাকি? আভা মাকে মাখন দিতে লাগলো। বললো,
— ” মা, দেখো আমার অনলাইন কত কাজ থাকে। সেগুলো করবো কিভাবে? তাছাড়া, একবার অভ্যাস হয়ে গেলে, ফোন ছাড়া চলা যায় নাকি? তুমিই বলো। ”
প্লেটের খাবার প্রায় শেষের দিকে। আভার মা, আভার দিকে পানি এগিয়ে দিলেন। আভা পানি খেয়ে আবারো মায়ের দিকে তাকালো। আভার মা উঠে দাঁড়ালেন। থমথমে গলায় বললেন,
— ” অ্যাডমিশনের রেজাল্ট দিক। মেডিক্যালে চান্স পেলে, ভালো মোবাইল কিনে দিবো। এখন এভাবেই থাকো। ”
আভার মা বেরিয়ে গেলেন রুম থেকে। আভা কপাল চাপড়ালো। মা একবার যা বলেছেন, সেটা হাজারবার বললেও পরিবর্তন হবে না। কিন্তু, যদি চান্স না পায়? তবে?
__________________
বিকেল হয়ে এসেছে। আভা বিছানায় বসে মায়ের মোবাইল দেখছে। মায়ের মোবাইল হচ্ছে আস্ত এক মসিবত! মায়ের ভাই-বোনের কলের যন্ত্রণায় ফোন ব্যবহার করা মুশকিল। কিন্তু, ঐ যে, উপায় নেই!
— ” হ্যাই ননদিনী..! ”
আরোহীর গলা শুনে আভা মোবাইল থেকে চোখ সরিয়ে দরজার দিকে তাকালো। দরজায় আরোহীকে দেখে আভা একপ্রকার লাফিয়ে উঠলো। মোবাইল একপাশে রেখে উচ্ছাস নিয়ে বললো,
— ” আরে ভাবী। তুমি? আসো, আসো। ”
আরোহী রুমে প্রবেশ করলো। আভার পাশে বসে আভাকে জড়িয়ে ধরলো। আভা জিজ্ঞেস করলো,
— ” কতদিন পর তোমাকে দেখলাম। তুমি তো আসোই না আমাদের বাসায়। ”
আরোহী হেসে জবাব দিলো,
— ” বিয়ের আগে শশুরবাড়ি বেশি আসতে নেই, ননদিনী। নজর লাগে। ”
আভা মুখ ফুলালো। বললো,
— ” আমার জন্যে তোমাদের বিয়েটা পিঁছিয়ে গেলো। খারাপ লাগছে। ”
আরোহী হাসলো। উজ্জ্বল ফর্সা মুখে হাসিটা ভারী সুন্দর দেখালো। ঠোঁটের হাসি বজায় রেখে বললো,
— ” একদিন থেকে ভালোই হয়েছে। আমারও এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করার ইচ্ছে নেই। ”
আভা অবাক হলো। বললো,
— ” কেনো? কেনো? ”
— ” ফ্যামিলিকে ছেড়ে আসতে মন চাইছে না। ”
— ” আরে, চিন্তা করো না তো। আমাদের ফ্যামিলিও তো এখন থেকে তোমার ফ্যামিলি। আর, তোমার প্রেমিকপুরুষ আছে না। সে থাকতে, এত চিন্তা কিসের? ”
মিনহাজের কথা শুনেই আরোহী লজ্জা পেলো। তবে, বাইরে সেটা প্রকাশ করলো না। বরং, আড়াল করলো। আভা আবারও বললো,
— ” তুমি জানো, আব্বু যখন তোমাদের ব্যাপারটা মেনে নিয়েছিল, ভাইয়া তো রীতিমত আব্বুকে জড়িয়ে ধরেছিলো। কেঁদেও ছিলো একটু। বুঝতে পারছো, কত গভীর প্রেম তোমাদের। আহা! জিও হোক এমন প্রেমের! ”
আরোহী লজ্জায় মিঁইয়ে গেলো। মিনহাজ কেঁদেছিলো ওর জন্যে? অসম্ভব ব্যাপার-স্যাপার, বটে। আরোহী আভার কাধে একটা চাপর দিয়ে হেসে বললো,
— ” দিন দিন পাজি হচ্ছো তুমি। দাঁড়াও, আহনাফকে বলে তোমার বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। তখন বুঝবে, প্রেম কাহাকে বলে! ”
আরোহীর কথা শুনে আভা হেসে দিলো। কে বলবে, আজই তাদের প্রথম কথা বলা? প্রথম একত্রে বসা? প্রথম মন খুলে গল্প করা? সবটাই সম্ভব হয়েছে, দুজনের মধ্যকার সরল মনের জন্যে। মন পরিষ্কার, তো সব ভালো। মন কুলষিত, তো সব খারাপ। এটাই সত্যি!
— ” আরোহী, তোমাকে মা ডাকছেন। ”
দরজা থেকে মিনহাজের কণ্ঠ শুনে আভা আরো আরোহী দুজনেই সামনে তাকালো। মিনহাজের এক হাতে ফোন মুষ্টিবদ্ধ করে রাখা, ওপর হাত প্যান্টের পকেটে ঢুকানো। চুলগুলো ভিজে কপালে লেপ্টে আছে। শরীরে মিষ্টি পারফিউমের গন্ধ, যা শুঁকে আরোহী মাতাল হয়ে উঠলো। মিনহাজের কথা শুনে আভা ভ্রু কুঁচকালো। বললো,
— ” বলে দাও,আমরা গল্প করছি। পরে আসছে। ”
মিনহাজ মানলো না। বরং, ত্যাঁছরাভাবে বললো,
— ” বেশি কথা বলিস কেন? মাকে আমি এসব বলতে পারবো না। আরোহী, যাও। দেখে আসো, মা কি
বলেন। ”
মিনহাজের কথায় আরোহী কালবিলম্ব না করে দাঁড়াতে চাইলো। কিন্তু সঙ্গেসঙ্গে আভা হাত দিয়ে আটকে আরোহীকে বসিয়ে ফেললো। আরোহী অবাক হয়ে আভার দিকে তাকালে, আভা মিনহাজের দিকে তাকিয়ে ভ্রু উঁচিয়ে বললো,
— “ভাই, সত্যিই কি মা ডাকছেন? হুঁ? ”
আভার কথায় মিনহাজ ভ্যাবেচেকা খেয়ে গেলো। থতমত হয়ে বলে উঠলো,
— ” বড় ভাইয়ের সাথেও ফাজলামি করিস, বেয়াদব। ওকে ছাড়। দেখে আসুক, মা কি বলে। ”
মিনহাজের এমন শক্ত কথায় আরোহী ভরকে গেলেও একবিন্দুও ভরকালো না আভা। আরোহী আভার দিকে চেয়ে বললো,
— ” আভা, আমি গিয়ে দেখে আসি। মা পরে খারাপ ভাববেন। ”
আভা আরোহীর দিকে তাকিয়ে আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে বললো,
— ” আরে আমার ভোলাবালা ভাবী। তোমাকে কেউই
ডাকছে না। এসব ভাইয়ার প্ল্যান। তাইনা, ভাইয়া? ”
মিনহাজ কাঁচুমাঁচু হয়ে গেলো। আভার দিকে শক্ত চোখে তাকিয়ে বললো,
— ” তোরে আমি পরে দেখছি। ”
অতঃপর আরোহীর দিকে চেয়ে এক শক্তপোক্ত চাহনি দিলো। যার ভঙ্গিমা এমন ‘ একবার হাতের নাগালে পাই, খবর আছে তোমার। ‘ মিনহাজ চলে গেলো। মিনহাজের ওমন চাহনী আরোহী খুব ভালো করেই বুঝতে পারলো। ও ভয়ও পেলো। আভা আরোহীর ছটফটানি দেখে আলতো হাসলো। আরোহীর হাত ছেড়ে দিয়ে হেসে বললো,
— ” যাও, শুনে আসো তোমার পাগল প্রেমিক কি বলে। ”
আরোহী লজ্জা পেয়ে হেসে ফেললো। আভাকে আরো একবার জড়িয়ে ধরে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
মিনহাজ আর আরোহীর কাণ্ড দেখে আভা জোরেই হেসে ফেললো। ভাবলো,’ ভাই তার ফেঁসে গেছে। হায়! ‘ হঠাৎ আভার মায়ের ফোন কল এলো। হয়তো, মামাদের মধ্য থেকে কেউ দিয়েছেন। আভা বালিশের কাছ থেকে ফোন হাতে নিলো। অচেনা নাম্বার। আভা ভ্রু কুঁচকিয়ে ফোন রিসিভ করে কানে ধরে সালাম দিলো। কিন্তু কেউ সালামের উত্তর দিলো না। বরং, ওপাশ থেকে কেউ ভরাট কণ্ঠে বললো,
— ” আপনার রেজাল্ট দিয়েছে, মিস আভা। ”
আহনাফের কণ্ঠ! আভা অবাক হলো। কিন্তু, তার থেকেও বেশি অবাক হলো, রেজাল্টের কথা শুনে। বুকের ভিতরে ধকপক করছে। আভা কাঁপা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
— ” রেজাল্ট কি এসেছে? ”
আহনাফ আগের থেকেও দ্বিগুণ থমথমে গলায় বললো,
— ” দুঃখজনকভাবে, আপনি মেডিক্যালে চান্স পান নি। ”
#চলবে
গঠনমূলক কমেন্টের প্রত্যাশায়……
আগের পর্ব
https://www.facebook.com/105343271510242/posts/243172887727279/?app=fbl