ওরা মনের গোপন চেনে না পর্ব-১২

0
2858

#ওরা_মনের_গোপন_চেনে_না
#সিলিভিয়া_ফারাশ
পর্ব ১২

(২৫)

“রক্তজবা বাংলাদেশে আমার দায়িত্ব শেষ। যে উদ্দেশ্য নিয়ে এদেশের মাটিতে পা রেখেছি সে উদ্দেশ্য সফল হয়েছে তাই আমি নিজের বাসভূমিতে ফিরে যাচ্ছি।
যাওয়ার আগে আপনাকে একটা কথা জানিয়ে যেতে চাই। সেটা হলো আমি আপনাকে ভালোবাসি। কখনো যদি আমার জন্য কোনো কিছু অনুভব করেন তাহলে আমার কাছে চলে আসবেন। আমি অপেক্ষায় থাকব।”

চিরকুট পড়ে কপাল কুঁচকালো তুর। জুবান তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। শাহরিন নিজের জন্য বরাদ্দকৃত চেয়ারে বসে আছে। তার মন আজ অত্যাধীক খারাপ। সায়নকে এতোকিছুর পর এরেস্ট করে এনেও কোনো লাভ হয়নি। যাস্ট একটা ফোনকলের মাধ্যমে বুক ফুলিয়ে শাহরিনের সামনে দিয়েই হাঁটতে হাঁটতে চলে গিয়েছে সে। যাওয়ার আগে শাহরিনের একটা কথার জবাবও দেয়নি। শুধু এই চিরকুটটা রক্তজবাকে দিতে বলেছে। সাইরাহর সাথে সায়নের কি সম্পর্ক এটাও জানা হলো না।

” সায়ন এখন কোথায় শাহরিন?”

” চলে গেছে।”

“চলে গেছে মানে কি? একটা সাইকো সিরিয়াল কিলারকে কীভাবে যেতে দিলে তুমি? একবার তো তুরকে কিডন্যাপ করেছিল সে আবার যদি তুরের কোনো ক্ষতি করে দেয়? আমি কোনো রিক্স নিতে পারব না।”

” চুপ করুন তো জুবান। আপনারা আছেন এক মেয়ে নিয়ে আর আমার টেনশনটা বুঝতে পারছেন? এই ক্যাসটা সমাধান করতে কী না করেছি আমি। কিন্তু কেসটা সমাধান হয়েও হলো না। সায়নকে এখানে আনার পর ওর এমন নির্লিপ্ত ভাব দেখেই সন্দেহ হয়েছিল আমার। আমার সন্দেহকে ঠিক প্রমান করে হেড অফিস থেকে কল এলো। কমিশনার সাহেব একটা কথাই বলল সায়নকে যেন এই মুহূর্তে ছেড়ে দেই। আমার একটা কথাও শুনলেন না তিনি। আমার এখন এই ইউনিফর্মের প্রতি ঘৃণা হচ্ছে। একসময় অনেক শ্রদ্ধা নিয়ে এই পোশাকটা গায়ে জড়িয়েছিলাম। শপথ করেছিলাম কখনো অন্যায়ের সাথে আপোষ করব না কিন্তু এখন টাকার কাছে খুব সহজেই বিক্রি হয়ে যায় এই পোশাকটা।”

শাহরিন উঠে দাঁড়ালো। আবার বলল,

” সরি স্যার। বেশি বলে ফেলেছি। আপনার উডবিকে নিয়ে টেনশন করবেন না। সায়নের কথা শুনে মনে হচ্ছে সে দেশ ছেড়ে চলে গেছে।”

জুবান তুরকে নিয়ে থানা থেকে বেরিয়ে এলো। গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট দিল। তুরের দিকে না তাকিয়েই বলল,

” তোমাকে নিয়ে আমার অনেক টেনশন হয় রসগোল্লা। চলোনা বিয়ে করে ফেলি। আমাদের ছোট্ট একটা সংসার থাকবে। ৪/৫ টা আন্ডা বাচ্চা থাকবে। ওদের নিয়ে আমাদের ছোট সুখের সংসার হবে।”

জুবানের কথায় চোখ বড় বড় করে চাইলো তুর
প্রায় চেঁচিয়ে বলল,

” ৪/৫ টা বাচ্চাকাচ্চা থাকলে আবার ছোট পরিবার হয় কীভাবে জুবান? আর আমি আপনাকে কখনও বিয়েই করব না তাই বাচ্চাকাচ্চার প্রশ্নই আসে না।”

জুবানের মনক্ষুন হলো।

” কেন বিয়ে করবে না আমায়?”

” কারণ আপনাকে বিয়ে করলে আল্লাহ না করুক বাচ্চারা যদি আপনার মতো নাম্বার ওয়ান লুচ্চা হয় তাহলে? আপনি আর আপনার বাবা মিলেই দেশের অর্ধেক মেয়ের জীবন শেষ করে দিয়েছেন। আর ওরাও যদি বাপ দাদার মতো হয় তাহলে পুরো বাংলাদেশ শেষ।”

বাবার নামে এগুলো শুনে ভালো লাগলো না জুবানের তারপর পরিস্থিতি অন্যদিকে ঘুরাতে মুখে হাসি ফুটিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

” আমাকে তোমার কেমন লাগে রসগোল্লা? আই মিন তোমাকে তো আমার রসগোল্লার মতো লাগে। তাই ভালোবেসে রসগোল্লা বলে ডাকি। তুমি নিজেও তো আমাকে ভালোবেসে কিছু ডাকতে পারো।”

জুবানের কথায় মুখ বাকালো তুর।
” আপনাকে আবার কেমন লাগবে?….. উম হুম মনে পরেছে। আপনাকে আমার আলুর মতো লাগে জুবান।”

তুরের কথায় জুবানের চেহারা কালো হয়ে গেলো। অস্ফুট স্বরে বলল,

” আলু! এটা আবার কেমন নাম রসগোল্লা?”

” আপনাকে দেখলে আমার শুধু আলুর কথাই মনে পড়ে বুঝলেন। আপনার মতো আলুও একটা ক্যারেক্টাল্যাস সবজি। তবে আপনাকে আলু বললে আলুও লজ্জা পেয়ে যাবে।”

(২৬)

জুবান তুরকে নিজের বাড়িতে নিয়ে এসেছে মায়ের সাথে দেখা করাতে। জুবানের বাড়িটা খুব সুন্দর। সাদা মার্বেল পাথরের। বাড়ির ভেতরে অনেক ইনডোর প্লান্ট আছে। সবকিছুই তুরের পছন্দ হয়ে গেলো। বাড়ির হ্যাল্পিং হ্যান্ডরা অবাক চোখে তুরকে দেখছে। এভাবে তাকিয়ে থাকার কারণ বুঝল না তুর। সে জুবানের সাথে এক কোনার একটা রুমে চলে আসলো। ভারি পর্দা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলো তারা। শুভ্র বিছানায় ঘুমন্ত নারিটিকে দেখে তুরের একটা কথাই মনে হলো। বাড়িতে এতো সুন্দর বৌ থাকতে জুবানের বাবার বাইরের মহিলাদের দিকে নজর গেলো কীভাবে?
জুবান সোফিয়ার পাশে বিছানায় বসলো। মায়ের হাতের উলটো পাশে চুমু খেলো সে।

“মা ওঠো। দেখো কাকে নিয়ে এসেছি।”

সোফিয়া ধীরে আখি পল্লব মেলে তাকালো জুবানের দিকে। জুবান ইশারায় তুরকে দেখিয়ে বলল,

“ও রসগোল্লা। কয়েকদিন পর আমরা বিয়ে করবো। কিন্তু মা রসগোল্লা কিছুতেই বিয়ের জন্য রাজি হচ্ছে না। তুমি একটু বলো না রাজি হয়ে যেতে। আমি ওকে অনেক ভালোবাসি মা।”

সোফিয়া তুরের দিকে। তাকালো। হুট করেই ছটফট করতে লাগলো সে। হয়তো সুস্থ থাকলে এখন তুরকে বুঝাতো।

জুবান তুরকে এপার্টমেন্টের সামনে নামিয়ে দিলো। তুর চলে যাচ্ছিল। জুবান পেছনে ডেকে বলল,

” রসগোল্লা আমাকে একবার ভালো মানুষ হওয়ার সুযোগ দাও না প্লিজ। রাজি হয়ে যাও।”

তুর জবাব না দিয়ে এপার্টমেন্টের ভেতরে চলে গেলো। লিফটে বাটন চেপে লিফটে প্রবেশ করে দাঁড়িয়ে রইলো। সায়নের সাথে বেশিরভাগ সময় এখানেই দেখা হতো। জুবানের কথা চিন্তা করতে লাগলো সে। জুবান যদি সত্যিই ভালো হয়ে যায় তাহলে তাকে একটা সুযোগ দেওয়া উচিৎ কিন্তু খারাপ কি এতো সহজে ভালো হয়? এই সবটাই যদি ওর নাটক হয়ে থাকে তাহলে? দুমনা মনোভাব নিয়ে লিফট থেকে নিচে নামল সে। দরজায় নক করে অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল কিন্তু তোয়া দরজা খুলছে না কেন? ভাবতে ভাবতেই ফ্লাট নাম্বারের দিকে তাকালো সে। ফ্লাট নাম্বার 6_A। আবারও সায়নের দরজায় এসে কড়া নেরেছে ভাবতেই বিরক্ত বোধ করল সে। বার বার একই ভুল। ফিরে আসার সময় বন্ধ দরজার দিকে তাকালো সে। রুমে আলো জ্বলছে না। হয়তো আর কখনও সায়নের সাথে দেখা হবে না তার।

শাহরিনের কোনো কাজেই মন বসছে না। সায়নের চলে যাওয়াটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না সে। সবকিছু এতো স্বাভাবিক কীভাবে? হঠাৎ শাহরিনের মনে হচ্ছে খুনগুলো সায়ন করেনি। অন্য কেউ করেছে। সায়নের কথাই ঠিক তার তদন্তে কিছু একটা ভুল হয়েছে। কিছু তো মিস করে গেছে সে। কাল সকালেই সাইরাহর ভার্সিটিতে খোঁজ নিতে যাবে সে। সাইরাকে কেন খুন করা হয়েছিল? আর ওর বাচ্চার বাবা’ই বা কে? সায়নের সাথে সাইরাহর কি সম্পর্ক? এই সবগুলো প্রশ্ন মাথার মধ্যে গিজগিজ করছে। কোনো কাজেই মন বসাতে পারছে না সে।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here