ওরা মনের গোপন চেনে না পর্ব-১১

0
2647

#ওরা_মনের_গোপন_চেনে_না
#সিলিভিয়া_ফারাশ
পর্ব ১১

(২৩)

অফিসার শাহরিন সাইরাহর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মফস্বলের একতলা বাড়িটার রঙ ওঠে গাছপালা‌ আর শেকর বাকর দিয়ে জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। এলাকার সবাই এটাকে ভুতের বাড়ি নামেই চেনে। মাঝে মাঝেই নাকি রাতের বেলা অদ্ভুত সব আওয়াজ শোনা যায়। লোক মুখে শোনা যায় সাইরাহর বাবা মায়ের অতৃপ্ত আত্মা ঘুরাফেরা করে এই বাড়িতে। মরিচা ধরা লোহার গেটে মস্ত বড় তালা ঝুলছে। শাহরিন এখানের স্থানিয় আর সাইরাহ্দের সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশী মিসেস সালমা মাসুদ এর সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। মহিলার বয়স পঞ্চাশের কোঠা পেরিয়েছে। শাহরিন মিসেস মাসুদকে সাইরাহদের ব্যপারে যা যা জানেন সব বলতে বলেছে। উনি একে একে সবকিছু বলা শুরু করলেন,

“সাইরাহর মৃত্যুর পাঁচ বছর আগে তারা এই বাড়িতে ওঠে। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান সাইরাহ্। পড়ালেখার সুবিধার্থে হলেই থাকত সে। সাইরাহ্ সাধা সিধা খুব সাধারণ একটা মেয়ে। দেখতে টেনে টুনে সুন্দরের কাতারে ফেলা যায়। গায়ের রংটাও তেমন উজ্জ্বল না। কেমন যেনো ময়লা ময়লা। সবসময় বোরকা হিজাব নিকাব পড়ে চলাফেরা করত সে। এলাকার অনেক মহিলাও সাইরাহর মুখ দেখেনি। কঠিন পর্দা করতো মেয়েটা। কিন্তু কে জানত মেয়েটা তলে তলে এমন হবে? বিয়ের আগেই পেট বাঁধিয়ে ফেলবে। আবার সব নাগরদের সাথে একসাথে ধরা পড়ে গণধর্ষণের শিকার হবে? বলে না বোরকার আড়ালেই বেশি শয়তানি। ও হচ্ছে তেমন।”

মাঝ বয়সী মহিলার কথা শুনে শাহরিনের ইচ্ছে করল ঠাঁটিয়ে একটা চর মারার। বয়সে বড় না হলে এতোক্ষণে উনার গালের একপাশ লাল হয়ে যেতো। নিজের ইচ্ছেটাকে দমিয়ে প্রশ্ন করলো শাহরিন।

” ওদের কোনো আত্মীয় স্বজন নেই? বাড়িতে কখনো বেড়াতে আসতো না কিংবা ওদের মৃত্যুর পর লাশ নিতে কেউ এসেছিল?”

মিসেস মাসুদ কিছুক্ষণ ভাবলেন। শুকনো মুখে জবাব দিলেন,

” ওদের বাড়িতে কখনোই কাউকে আসতে দেখিনি। ওরাও বাড়ি থেকে তেমন একটা বাইরে যেতো না। আত্মীয় স্বজন থাকলে নিশ্চয়ই টাচ আপ থাকতো। মৃত্যুর পরও কাউকে আসতে দেখিনি। এলাকাবাসীরা ওদের ভ্যবিচারি মেয়ের পাশেই দাফন করে দিয়েছে তাদেরকে।”

শাহরিন একটু হতাশ হলো। ওর ধারণা সাইরাহর কাছেই কেউই তার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিচ্ছে। সন্দেহের তালিকায় দুজন ছিল। এক সাইরাহর ভাই। সেটা তো নেই তার তাহলে বাকি রইল ভালোবাসার মানুষ। সাইরাহ কেসে সন্দেহ শীর্ষ স্থানে ছিল সায়নের নাম। সায়নের নামের সাথে সাইরাহর নামের বেশ মিল আছে। কিন্তু নামের ভিত্তিতে কাউকে সন্দেহ করতে পারে না সে। তবে সায়নকে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে। শাহরিনের বাজ পাখির নজর। ওর নজর একবার যার উপর পরে তার রেহাই নেই। সায়নের ব্যপারে তার এপার্টমেন্টে খোঁজ নিয়েছিল সে। তবে বিশেষ কোনো ইনফরমেশন পায়নি। সায়নের অনেক প্রতিবেশী তো জানেও না এই ফ্লাটে কেউ থাকে। সায়ন মাঝে মাঝে এখানে আসে। কয়েকদিন থাকে তার পর কোথায় যেন গায়েব হয়ে যায়। কোথা থেকে আসে বা কোথায় যায় কিছুই জানা যায়নি।
আশানুরূপ ইনফরমেশন না পেয়ে ঠিক করল একবার সাইরাহর ভার্সিটিতে খোঁজ করবে সে। ফিরে আসার সময় হঠাৎ জোড়ালো চিৎকার শুনে দাঁড়িয়ে যায় শাহরিন। শব্দটা মনে হলো বাড়ির ভেতর থেকে এসেছে। কিন্তু এটা কীভাবে সম্ভব? নিজের মনের ভুল কিনা বুঝতে পারছে না সে।

” দেখছেন বলেছিলাম না এখানে ওদের আত্মা ঘুরাফেরা করে। সাইরাহর বাবার চিৎকার মাঝে মাঝেই শোনা যায়। এমনকি সাইরাহ্কেও মাঝরাতে ওদের কবরের আশেপাশে ঘুরা ঘুরি করতে দেখা যায়। তার পরনে থাকে সাদা পোশাক। বাতাসে খোলা চুলগুলো ওড়ে। কি ভয়ঙ্কর। দেখলে আপনি সেখানেই অজ্ঞান হয়ে যাবেন।”

মিসেস মাসুদ আর এক মুহূর্তও সেখানে না দাঁড়িয়ে দ্রুত পা চালিয়ে চোখের আড়াল হয়ে যান। শাহরিন সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। আবার চিৎকারের শব্দ হলো। শাহরিনের কাছে অনেক কম আওয়াজ এসেছে। মনে হচ্ছে অনেক দূর থেকে কেউ চিৎকার করছে। অথবা বন্ধ দরজার ওপাশ থেকে। নাহ্ এটা কোনো ভুতের চিৎকারের শব্দ নয়। জ্যান্ত মানুষের চিৎকার। তার অনুমান যদি ঠিক হয় তাহলে এই চিৎকার গুলো সাইরাহর বাবার আত্মার নয় সাইরাহর ধর্ষ/কদের। শাহরিন মোবাইল বের করে সামিরের নাম্বারে কল করল।

” সামির দ্রুত পুলিশ ফোর্স নিয়ে সাইরাহদের বাড়িতে আসো।”

” এনিথিং রং স্যার? কি হয়েছে আর আপনি কোথায়?”

” সবসময় এতো প্রশ্ন করবে না সামির। আমি এখন সাইরাহর বাড়ির ভেতরে যাচ্ছি। তুমি দেড়ি না করে তাড়াতাড়ি চলে আসো। ধরে নাও সাইরাহর কেসটা সমাধান হয়ে গেছে। ”

সামির বিষ্মিত হলো। এতো তাড়াতাড়ি কেস সমাধান হয়ে গেছে? স্যারকে আর কিছু জিজ্ঞেস করা হলো না তার। তাড়াহুড়ো করে নিজের কাজে লেগে পড়ল সে।

শাহরিন বাগানের সাইডে এসে খেয়াল করলো ভঙ্গুর কাঠের দরজাটা একটু ফাঁক করা। মনে হলো এখনি কেউ ভেতরে প্রবেশ করেছে। শাহরিন নিজেও বাড়িতে প্রবেশ করল। বাড়ির ভেতর পঁচা বিদঘুটে একটা গন্ধ। গা গুলিয়ে উঠলো তার। ইদুর টিদুর মরেছে হয়তো। আবার শব্দ পেয়ে সেদিকে গেলো শাহরিন। সায়নকে দেখেই চমকে গেলো সে। বরাবরের মতোই সায়নের গায়ে ওভার কোর্ট হাতে গ্লাভস মুখে মাক্স। খাবার ঘরের টেবিলটা ঠেলে সরালো সায়ন। ময়লা কার্পেটটা সরিয়ে মেঝের কাঠের দরজা উন্মুক্ত করলো সে। হাতের ধুলো ময়লা ঝেড়ে দরজা খুলে লাফিয়ে ভেতরে নেমে গেল ততক্ষণাৎ। সামিরকে ম্যাসেজ করে সবটা জানালো শাহরিন। পুলিশ ফোর্স নিয়ে তাড়াতাড়ি এখানে আসতে বলে নিজেও মেঝেতে তৈরি গোপন দরজাটিতে ঢুকে পড়লো।

(২৪)

ভেতরে ডুকেই বিষ্ময়ে হা হয়ে গেল শাহরিন। চারদিকে তাকিয়ে বুঝল ছোটখাটো একটা হসপিটালের মতো জায়গাটা। হসপিটালের ছোটো খাটো প্রায় সব ধরণের ম্যাশিন আছে এখানে। পঁচা বিদঘুটে গন্ধটা প্রকোট হয়েছে। শ্বাস নেওয়া দায়। পকেট থেকে রুমাল বের করে নাক মুখ বেঁধে নিলো সে। মেয়েলি চিৎকার শুনে সেদিকে দৌড়ে গেল শাহরিন।

” আমাকে মারবেন না সায়ন। দূরে সরে যান। দূরে যান বলছি। না হলে আমি শ্যুট করে দেব।”

তুর দেয়ালের এক কোণে বসে আছে। মৃগিরোগীর মতো থরথর করে কাঁপছে সে। আনাড়ি হাতে বন্দুক ধরে রেখেছে। হাটটাও কাঁপছে। সায়ন তুরের সামনে হাঁটু মুড়ে বসে আছে। তুরের গালে হাত রেখে আদুরে কিন্তু শীতল গলায় বলছে,

” ওটা আমাকে দিয়ে দিন রক্তজবা। এটা বাচ্চাদের খেলার জিনিস নয়। ব্যথা পাবেন আপনি।”

শাহরিন বাঁকা হাসলো এগিয়ে এসে সায়নকে গান পয়েন্টে নিয়ে নিল,

“ডোন্ট মুভ সায়ন। আমি কিন্তু শ্যুট করে দেব। তোমার খেলা শেষ মি. সিরিয়াল কিলার। মেয়েটার কাছ থেকে দূরে সরে আসো।”

সায়ন পেছনে ফিরে তাকালো। শাহরিনকে দেখে এক রাশ বিরক্তি নিয়ে ওঠে দাঁড়ালো সে। তুর শাহরিনকে দেখে সাহস পেলো। এক ছুটে শাহরিনের আড়ালে লুকিয়ে পড়ল তুর। এখনও কাঁপছে মেয়েটা। কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,

“প্লিজ সেভ মি শাহ্ -রি-ন। সায়ন আমাকে মেরে ফেলবে।”

সায়নের চোখে মুখে বিরক্তি উপচে পড়ছে। সে বিরক্তি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শাহরিনের দিকে। তুরের ব্যপারটা কিছুতেই মেলাতে পারছে না শাহরিন।

” সায়ন একটা বিষয় ক্লিয়ার করুন তো‌। অন্য খুন গুলো করেছেন সাইরাহর খুনের বদলা নিতে কিন্তু আপনার প্রেমিকাকে খুন করতে চাইছেন কেন? ওকে তো আপনি ভালোবাসেন তাই না?”

” আরে এটা তো জুবানের ফিয়ন্সে। আজ সকালেই জুবান থানায় উনার মিসিং কমপ্লেন লিখে গেছেন। উনি এখানে কি করছে স্যার?”

সামির পুলিশ ফোর্স নিয়ে পৌঁছে গেছে। শাহরিনের কাছে এখন ব্যপারটা কিছুটা পরিষ্কার হয়েছে। তুর সায়নকে চিট করে জুবানের সাথে বিয়ে করছে এর জন্যই তুরকে খুন করতে চাইছিল সায়ন।

” সব মেয়েরাই লোভি দেখলেন তো সায়ন। জুবানের মতো বড়লোক পার্টি হাত করতে পেরে কতো সহজেই আপনাকে ধোঁকা দিয়ে দিল। আপনি নিজের জায়গা থেকে ঠিক থাকলেও আইনের চোখে একজন ভয়ঙ্কর অপরাধী। তাই আপনাকে আইনের আওতায় আনা হবে। ইউ আর আন্ডার এরেস্ট সায়ন।”

” শাট আপ অফিসার। আপনার সাহস কি করে হয় রক্তজবার নামে উল্টো পাল্টা কথা বলার।”

শাহরিন অবাক না হয়ে পারলো না। সায়নের সব ব্যবহার তার কাছে রহস্যময় লাগে। এই তো একটু আগেই মেয়েটাকে জানে মেরে ফেলতে চাইছিল। আর এখন ভালোবাসা উথলে পরছে যে একটা বাজে কথাও শুনতে পারছে না আজব।

” একটু আগে আপনি নিজেই তো ওকে মেরে ফেলতে চাইছিলেন আর এখন ভালোবাসা উথলে পরছে।”

সায়ন শাহরিনের পেছন থেকে তুরের হাত ধরে টেনে নিজের দিকে নিয়ে এলো। মেয়েটার ভয়ার্ত বিড়াল ছানার মতো চেহারার দিকে তাকিয়ে আদুরে গলায় বলল,

” আপনাকে কে বলেছে আমি রক্তজবাকে খু/ন করতে চেয়েছি? আমি কেনো শুধু শুধু ওকে খু/ন করতে চাইব?”

“কারণ আমি আপনার সত্যিটা জানতে পেরে গেছি। তাই আপনি চিরতরে আমার মুখ বন্ধ করে দিতে চেয়েছেন সায়ন। আপনি একটা খু/নি।”

” কোন সত্যের কথা বলছেন রক্তজবা? আর কাকে খু/ন করেছি আমি?”

“নাটক শুরু করেছেন নাকি মি.সায়ন? পরপর চারটা খু/ন তো আপনিই করেছেন।”

সায়ন তুরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। তারপর শাহরিনের দিকে তাকিয়ে দৃঢ় গলায় বলল,

” আমি কাউকে খুন করিনি অফিসার। আপনার তদন্তে কোথাও বড় একটা ভুল হয়েছে।”

“অপরাধী অপরাধ করে সবসময় আমি অপরাধ করিনি এই কথাই বলে সায়ন।”

সামির পাশের রুম থেকে চেঁচিয়ে উঠলো,

” স্যার তাড়াতাড়ি এদিকে আসুন।”

সায়ন তুরকে ধরে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। মেয়েটা একেবারে নেতিয়ে পড়েছে। গায়ের সাথে মিশে আছে।
এই রুমটা OT রুমের মতো। রুমের মাঝের দিকে একটা বেড রাখা আছে। বেডের উপর একটা লাশ। শাহরিন দেয়ালে একটা ঘুষি দিল। শিট এতটা কাছে থেকেও এ লোকটাকে বাঁচাতে পারলো না সে। এই বিভৎস লাশ দেখেও ভাবান্তর হলো না সায়নের। সে এক দৃষ্টিতে রক্তজবার দিকে তাকিয়ে আছে। তুরকে প্রথমে অনেক স্ট্রং উইমেন ভেবেছিল সায়ন। কিন্তু মেয়েটার কাছাকাছি এসে বুঝল ও নিজেকে যতটা স্ট্রং দেখায় আসলে ততটা স্ট্রং মেয়ে নয়। তুর আড় চোখে বিভৎস লাশটা কে দেখল। রক্তে সাদা চাদরটা লাল বর্ণ ধারণ করেছে। সেদিকে তাকিয়ে অবশিষ্ট শক্তিটাও চলে গেলো তার। লোকটাকে মারার সময় পাশের রুমেই ছিল সে। চাইলেই নিজের আত্মরক্ষার কৌশল গুলো দিয়ে লোকটাকে বাঁচিয়ে নিতে পারতো কিন্তু ব্লাড ফোবিয়া আছে তুরের। রক্ত দেখলেই অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। ঠিক যেমনটা এখন অসুস্থ হয়ে পড়েছে। শাহরিন রাগ সামলাতে না পেরে সায়নের নাক বরাবর একটা ঘুষি মারল কিন্তু সায়নের নাক স্পর্শ করার আগেই হাতটা ধরে ফেলল সায়ন। তার দৃষ্টি এখনও তুরের মুখে। শাহরিন চেঁচিয়ে বলল,

” তুই যত ভালো উদ্দেশ্য নিয়েই খুন গুলো করিস না কেন। আমার কাছে সব অপরাধী সমান। আমি চেষ্টা করব তোর যেন সর্বোচ্চ শাস্তি হয়। মৃত্যুদণ্ড না হলেও সারাজীবন যেন জেলে পচে মরিস সেই ব্যবসা আমি করব সায়ন।”

” আমাকে আটকে রাখার মতো জেল এখনও এই পৃথিবীতে তৈরি হয়নি অফিসার।”

শাহরিন সায়নের কাছ থেকে তুরকে ছাড়িয়ে নিতে চাইল কিন্তু সায়ন দিল না। তুরকে নিজেই নিয়ে চলল।
এতো ঠান্ডা মস্তিষ্কের খুনিকে থানা পর্যান্ত নিয়ে যেতে পারবে কীনা সেই বিষয়ে সন্দিহান ছিল শাহরিন। তবে অবাক করা বিষয় হলো কোনো রকম ঝামেলা না করেই থানায় পৌঁছুল সায়ন। এমনকি একবার পালানোর চেষ্টাও করেনি। সায়নের এমন ব্যবহার ভাবনায় ফেলে দিয়েছে শাহরিনকে। সায়নের চেহারায় একটুও ভয়ের আভাস নেই। বরং সে এমন ভাবে বসে আছে মনে হচ্ছে বড় কোনো অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সে।

চলবে….

( আপনাদের কি মনে হয় গল্পটি কত পর্বে শেষ করলে ভালো হবে? ১৫+ নাকি ২০+ পর্বে?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here