কখনো রোদ্দুর কখনো মেঘ পর্ব-১৮

0
194

কখনো রোদ্দুর কখনো মেঘ
পর্ব ১৮
___________________
অনেক দিনের পর নিজের গ্রামে ফিরছে আর্য। এ এক অপূর্ব আনন্দ। কতগুলো দিন হয়ে গেল গ্রামের রেললাইন,মেঠোপথ, ব্রিজ, অহনা নদী দেখেনি। শরীরের কোষগুলো বারবার নেচে উঠছে। পুরনো রাস্তায় প্রতিদিন হেঁটে চলা মানুষগুলো আজ বহুদূরে চলে গেছে। শুধু থেকে গেছে রাস্তাগুলো। প্রতীক্ষায় আছে পুরনো মানুষগুলোর। একদিন ঠিক ফিরবে। মনের মধ্যে কত রকমের লাল নীল আনন্দের ছটা দেখা দিয়েছে তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। নিজের পৈত্রিকভূমিতে ফিরছে। সামনে থেকে বাবা-মাকে দেখবে। কোলে মাথা রেখে ঘুমাবে। পৃথিবীর সবচেয়ে সুখের মুহূর্তের সাক্ষী হবে। এত আনন্দ এবং স্নিগ্ধতার মধ্যেও কোথাও একটা পিছুটান রয়েছে। দেড় বছরে এই শহরকে ভালোবেসে ফেলেছে। অনেক মানুষ প্রিয় হয়ে উঠেছে। এদেরকে ফেলে রেখে যেতে সংকোচন হচ্ছে। মনের মধ্যে পূর্ণতা আর শূন্যতা উভয় রয়েছে। মনকে এখন শূন্য না করলে নতুন ভাবে পূর্ণ হবে কি করে? একটি ভর্তি চালের কৌটোর মধ্যে চাল যতক্ষণ না ফেলে দেওয়া হচ্ছে ততক্ষণ ওই কৌটোর মধ্যে আর কিছু রাখা যাবে না। ওই চাল যতই দামি হোক না কেন সেটাকে না ফেলা পর্যন্ত অন্য কিছু দিয়ে ভর্তি করা কখনোই সম্ভব নয়। আজ মনের শূন্যতা নতুন এক পূর্ণতার ইঙ্গিত দিচ্ছে। প্লাটফর্মে ট্রেন পৌঁছতে বেশি সময় বাকি নেই। এতটা পথ আর্যকে একা আসতে হয়নি। তাকে পৌঁছে দিয়েছে লক্সমি। বারণ করা সত্ত্বেও শোনেনি। এখনো পাশে বসে আছে। ট্রেন না ছাড়া পর্যন্ত ফিরবে না, এ বিষয়ে সম্পূর্ণ নিশ্চিত আর্য। লক্সমিকে নিয়ে কখনো মনের মধ্যে কোনোরূপ দ্বিধাদ্বন্দের সৃষ্টি হয়নি। ভবিষ্যতে সৃষ্টি হবেও না আশাবাদী সে। দিদি কিংবা ভালো এক বন্ধু হিসেবে পারফেক্ট। তার সঙ্গে সব সময় থাকার চেষ্টা করেছে। চেনা অচেনার ভিড়ে সবকিছু সঠিকভাবে চিনতে শিখিয়েছে। প্রথম থেকে তার পাশে যেভাবে রয়েছে, আজ প্লাটফর্মে তাকে যে পৌঁছে দেবে তা নিয়ে কোনো সংশয় ছিল না। তাই মনের মধ্যে কোনোরূপ ভালোলাগা সৃষ্টি হয়নি। তবে মন ভীষণ ফুরফুরে।
ট্রেন আসার কয়েক মুহূর্তের আগে ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল আর্য। আরও কিছুক্ষণ বসতে বলল কিন্তু শুনল না। এই শহর আর্যর মনকে আর বেঁধে রাখতে পারছে না। তার মন ফিরে গেছে গ্রামের মেঠো পথে। দু-একটা প্রয়োজনীয় জিনিস ছাড়া অপ্রয়োজনীয় একটা জিনিসও নেয়নি। বই খাতাও বাদের খাতায় পড়েছে। পনেরো দিন ছুটি পেয়েছে। এই কদিন খুব ফুর্তি করে কাটাতে চায় পরিবারের সঙ্গে।ব্যাগ হালকা হওয়ায় খুব সহজে দাঁড়িয়ে রইল। কিছুক্ষণ পর লক্সমি বেঞ্চ থেকে উঠে উপরের দিকে হাত তুলে লম্বা একটা হাই তুলল। আলসেমি ভাবে হাই ভাঙতে দেখে আর্য হাসির ছলে বলল,”ঘুম পাচ্ছে নাকি?” কোনো উত্তর করল না। আর্য আবার হেসে বলল,”অনেক রাত হয়ে গেল এবার বাড়ি ফিরে যাও। আমি ঠিক ট্রেনে উঠে পড়বো।”
“তাড়িয়ে দিচ্ছো?”
“তাড়াতে যাব কোন দুঃখে? এমন দুঃসাহস আমার নেই।”
“সত্যি তুমি না…। তুমি এমন ইমোশোনাল ভাবে কথা বল যে কোনো কঠিন মানুষ খুব সহজে নরম হয়ে যাবে। তোমার উপর রাগ করা বৃথাই হবে।” নিজের প্রশংসা শোনে মৃদু হাসলো আর্য।
“জলের বোতল খাওয়ার জিনিস ঠিকঠাক আছে তো? টিকিট আছে কি না আর একবার দেখে নিও।” লক্সমির কথা শুনে আর্য তাড়াতাড়ি ব্যাগ খুলে দেখে নিল টিকিট আছে কি না! চিন্তার কোনো কারণ নেই। সব ঠিকঠাক আছে।
“শীতের পোশাক নিয়েছো? শীত করবে কিন্তু।”
“হালকা শীত রয়েছে। ট্রেনের মধ্যে তাও থাকবে না।”
“আরে বাবা! এখন ডিসেম্বর চলছে। এখানে শীত নেই ঠিকই কিন্তু বাংলায় তো প্রচন্ড শীত রয়েছে। তুমি তো খুব ভোরে ট্রেন থেকে নামবে। আবার, সকাল সকাল তিন ঘন্টা বাসে কি করে যাবে শুনি? ঠান্ডা লাগবে না?” আর্য দাঁত দিয়ে জিভ কাটল। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে বিষয়টি মাথায় আসেনি। পশ্চিমবাংলায় এখন বড্ড শীত রয়েছে। সামনে একটা বড় সমস্যা দাঁড়ালো। এই মুহূর্তে বাড়ি ফিরে গিয়ে শীতের পোশাক নিয়ে আসা সম্ভব নয়। কি করবে ভেবে পেল না। কঠিন শীত বরণ করে নেওয়াই উত্তম। দ্বিতীয় কোনো উপায় নেই। কিন্তু লক্সমির স্নেহশীল মন আর্যর মনের কাঁটা দূর করে দিল। তার পরনে সাদা শাল আর্যকে দিল। এটা থাকলে অসুবিধা হবে না। শীত নিরাময়ের জন্য যথেষ্ট। এখান থেকে লক্সমির বাড়ি বেশি দূর নয়। তাছাড়া, এখানে শীত খুব বেশি নেই। সহজে ফিরতে পারবে সে। আর্য নিজের হাতে শাল নিল। তারপর হালকা হাসলো। তাকে হাসতে দেখে লক্সমি বলল,”কি হলো হাসছো কেন?”
“এই মুহুর্তটা কেমন একটা বাংলা সিনেমার মতো লাগছে। নায়িকার খুব শীত করছে, নায়ক নিজের জ্যাকেট খুলে তাকে দিয়ে দিচ্ছে আর এখানে ঠিক বিপরীতটা ঘটলো।” বলেই আবার ফিক করে হেসে উঠল। লক্সমি মাথায় হাত চাপড়ালো। বলল,”তুমি বড্ড উল্টেসিধে মানুষ। মজার সময় চুপচাপ বসে থাকো। আর সিরিয়াসের সময় হাসো।” আর্য আর একবার হাসলো।
“আমি যে এত প্রশ্ন করছি তুমি বিরক্ত হচ্ছো, তাই না! অস্বস্তি হচ্ছে তোমার?” লক্সমির কথায় হাসি থামালো আর্য। নিজেকে সামলে নিয়ে দ্রুত বলল,”তোমার কথায় আমার বিন্দুমাত্র বিরক্ত কিংবা অস্বস্তি হচ্ছে না। আমার তখনই অস্বস্তি হয় যখন আমার জন্য কেউ অনেক কিছু করছে কিন্তু আমি তার জন্য কিছুই করতে পারছি না। তুমি আমার জন্য অনেক কিছু করেছো, তোমার জন্য আমি কিছু করতে পারিনি। এটা ভেবেই মন্দ লাগছে।”
“এই নিয়ে মনের মধ্যে কোনো সঙ্কোচ রেখো না। তোমার পরিবার এবং তোমার বন্ধু-বান্ধব তোমার জন্য অনেক কিছু করেছে এবং করে চলেছে। কিন্তু তা নিয়ে কি কোন সংকোচন আছে? আশাকরি নেই। তাহলে আমার এই সামান্য পাশে থাকায় কেন অস্বস্তি হচ্ছে? কেন খারাপ লাগছে? আর যদি খারাপ লাগা সব সময় তোমার মনের মধ্যে থাকে, তাহলে ভেবে নিও তুমি কখনো আমাকে আপন ভাবোনি।” আর্য কিছু বলল না। চুপ হয়ে গেল। সময়মতো ট্রেন চলে আসলো। ট্রেনে উঠে পড়তে লক্সমি একগাল হেসে বলল,”ট্রেনে ভারি পোশাক পরা অনেক মেয়ে মানুষ থাকবে। তাদেরকে আবার জিজ্ঞেস করো না, তারা কেন ভারি পোশাক পরে যাত্রা করছে? আর হ্যাঁ, বাড়ি পৌঁছে ফোন করে দিও।” আর্য খুব হাসলো। তারপর হাত নাড়িয়ে বিদায় জানালো। লাল সিগন্যাল সবুজ হলো। লক্সমিকে আর দেখতে পেলো না। জমাটবদ্ধ তিমিরের বুক চিরে ট্রেন ছুটলো। নিজের সিট খুঁজতে বেশি দেরি হলো না। সিটে বসে পড়তেই নানা ধরনের চিন্তা মনের মধ্যে উঁকি দিল। লক্সমির বলা শেষ কথাগুলো যুক্তি দিয়ে সাজালো। তার প্রতিটি কথা অক্ষরে অক্ষরে সত্যি। লক্সমি মাত্র কয়েকদিনের পরিচয়ে তাকে বিশ্বাস করে নিয়েছে। কিন্তু আর্য এখনো বিশ্বাস করতে পারেনি। মনের মধ্যে অনেক সংকোচন জমা হয়ে আছে। আজ লক্সমি তার পাশে রয়েছে। একসময় স্নেহা তার পাশে ছিল, এখন নেই তা বলা ভুল। সে তার বন্ধুর জন্য কত কিছু ভেবেছিলো। নিজের মতো করে তাকে পড়া বুঝিয়ে দিয়েছে। অ্যাসাইনমেন্ট প্রজেক্ট করে দিয়েছে। নিজের তৈরি করা নোট তাকে পড়তে দিয়েছে। রাতে একা বাড়িতে ফিরতে হতো, সেজন্য নিজে সাইকেল নিয়ে টিউশন যেতে শুরু করেছিল। কই তখন তো কোনো সংকোচন আসেনি। তার পাশে থাকার পরিধি ছিল বিশাল। এত কিছু করার পরও স্নেহা কখনো ভাবেনি, সে কাউকে সাহায্য করেছে। অথচ আর্য তাকে সামান্য কিছু টাকা সাহায্য করার পর নিজের মনকে কৃতার্থ করেছে। এখনো সেই সাহায্যের কথা ভেবে নিজেকে মহান ভাবে। সাহায্যের জন্য তার উপর অধিকার ফলাতে ইচ্ছে করে। এ তো এক ধরনের নিচু মানসিকতার পরিচয়। আর্যর খারাপ লাগলো।

বেলা বাড়লেও সূর্যের তেমন ঝাঁজালো রোদ বের হয়নি। শীতকালে মানুষ রোদ মাখতে ভালবাসে। অনেক দিনের পর গ্রামে আসলেও গ্রামের তেমন কোনো পরিবর্তন চোখে পরলো না।লক্সমির দেওয়া শালে মৃদু বাতাস আঘাত আনছে।তবে ভেতরের মানুষটিকে কাঁপাতে পারছে না।বেশ উষ্ণ হয়ে আছে। বাস থেকে নামার পর সামান্য পথ হাঁটতে হয়। যে পথে কয়েক বছরের আগে চটি পায়ে হেঁটে বেড়িয়েছে। আজ সেই পথে সুট বুট পরে হাঁটতে কেমন একটু বেশি স্মার্ট লাগছে। ঠোঁট টিপে হাসি বেরিয়ে আসলো। পুরনো কোনো অভ্যাসই বদলায়নি। বাড়িতে প্রথম পৌছতেই জুতো খুলে পুকুর ঘাটে পা ধুতে গেল। পা ধুয়ে উপরে উঠে আসতেই চোখ দুটো স্থির হয়ে গেল। জলের শব্দ পেয়ে বাড়ি থেকে ছোট বোন বেরিয়ে এসেছে। দাদা সকালে পৌঁছাবে জানতো। ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরল। কোনো কারণ ছাড়াই চোখ থেকে জল গড়িয়ে যায়।
“ছাড় আমায়, ভেতরে যেতে দে।”
“যেতে দেব না। আর একটু এইভাবে থাকি।” গলার স্বর ভরাট। কয়েক মিনিট একই ভাবে দাদাকে জড়িয়ে রইল। আর্য এমন বন্ধন ছিন্ন করে বেরিয়ে যেতে সাহস পেল না। কিছুক্ষণ পর লতা নিজে থেকে ছেড়ে দিয়ে বলল,”ভেতরে যা। আমি মাকে গিয়ে বলে আসি দাদা এসেছে।” লতা ছুটে পালিয়ে যাচ্ছিল তখনই আর্য পেছন থেকে ডেকে বলল,”বাবা কই রে? মাঠে?”
“না না। বাবা কাজে গেছে। ফিরতে সন্ধ্যা হবে।” নিমিষে চোখের আড়াল হয়ে গেল। আর্য মুখ নাড়িয়ে হেসে উঠলো। নির্দিষ্ট জায়গা নির্দিষ্ট জিনিসপত্র রেখে বাড়ির চারদিকে ঘুরে দেখলো। সবকিছু সুন্দরভাবে সাজানো গোছানো রয়েছে। এলোমেলো কোনো কিছু নেই। একটি পুরনো সুবাস শরীরকে বারবার উত্তেজিত করে তুলছে। মনে করিয়ে দিচ্ছে অনেক অতীত। ধূসর হৃদয় রঙিন আলোয় আলোকিত হচ্ছে। চেনা মাটির গন্ধ নাকে ভেসে আসছে। তারপর নিজের রুমে প্রবেশ করল। ঘরের মধ্যে মৃদু আলো পড়েছে। সুইচ অন করে সমস্ত আলো জ্বালালো।ঘরের মধ্যে একরাশ স্তব্ধতা বিরাজ করে আছে। আরও এক পরিচিত ভ্যাবসা গন্ধ। রুমের মধ্যে ঢুকেই বুঝতে পারলো, দীর্ঘদিন ধরে এই রুমে যাওয়া আসা খুব কম হয়েছে। একটা চটচটে ব্যাপার রয়েছে। মানুষের অনুপস্থিতিতে গৃহে থাকা অন্যান্য অনেক প্রাণীর উপদ্রব বেড়ে গেছে। পরিচিত আরও এক মুহুর্ত। এই রুমে বাবার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়েছে। ঘরের মধ্যে দিদি বোন রিম্পির সঙ্গে কত খেলেছে। রাত জাগা পরিশ্রমের সাক্ষী আছে এই ঘরের প্রতিটি ইট পাথর। ছোটবেলায় বিদ্যুৎ ছিল না।হারিকেন জ্বালিয়ে পড়ার মুহূর্তগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠলো। জানালার পাশে একটা বড় তাকে প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার সমস্ত বই এবং কিছু গল্প বই সাজানো রয়েছে। পাশে রয়েছে স্নেহার দেওয়া উপহার এবং কয়েকটি সম্মান স্মারক। স্নেহার কয়েকটা বই খাতা আর্যর কাছে থেকে গেয়েছিল। সেগুলোও খুব সুন্দর করে সাজানো গোছানো অবস্থায় পড়ে আছে। দেখে বোঝা গেল, এগুলো কেউ প্রত্যেক সপ্তাহে অন্তত একবার করে ঝেড়ে মুছে পরিষ্কার করেছে। তাই এত ঝকঝকে তকতকে দেখাচ্ছে।সেগুলো হাতে তুলতেই বুক থেকে কান্না ঠিকরে বেরিয়ে আসলো। বারবার মোচড় খেতে রইল হৃদয়। জীবনের বাতাবরণে কত স্মৃতি হারিয়ে গেছে, সেগুলো আজ উগরে পড়ছে। শালটি সুন্দর ভাবে ভাঁজ করে বইয়ের উপর রেখে দিল। যাওয়ার সময় অবশ্যই মনে করে নিয়ে যেতে হবে। যার জিনিস তাকে ফেরত দিতে হবে।
দু-দিন ট্রেনে কাটিয়েছে। শরীর বড্ড ক্লান্ত। নিজেকে ঘরের মধ্যে বন্দি রাখলো না। তাড়াতাড়ি স্নান সেরে ফ্রেশ হয়ে নিল। খাওয়া-দাওয়া ঠিক মত হয়নি। বড্ড খিদে পেয়েছে। কাউকে আসতে না দেখে নিজেই বাড়িতে কি খাবার আছে খুঁজলো। পান্তা বিস্কুট মুড়ি ছাড়া তেমন কোনো খাবার পেল না। অনেকদিন পান্তা খাওয়া হয়নি। খেতে ইচ্ছে করলো। থালায় পান্তা বেড়েও নিলো। তারপর একা একা হেসে উঠলো। পান্তা তো বেড়ে নিয়েছে, কিন্তু খাবে কি দিয়ে? খুঁজতে গিয়ে পেঁয়াজ আবিষ্কার করল। এটুকুই যথেষ্ট। পেঁয়াজ কাটার আগেই বাড়ির মধ্যে কারোর প্রবেশের শব্দ ভেসে আসলো। সচেতন হয়ে চোখ ফিরে দেখল রিম্পিকে। দুজনের চোখাচোখি হওয়া মাত্রই দুটি হৃদয় কম্পিত হয়ে উঠল। সুন্দরভাবে দুটো মুখে হাসি ফুটে উঠল। যেন যুদ্ধে জয় করার পর রাজকুমার রাজকুমারীর কাছে ফিরে এসেছে। যুদ্ধের পর প্রথম সাক্ষাতের মুহূর্তের হাসি ফুটে উঠেছে তাদের চোখে-মুখে। রিম্পি খুব সন্তর্পনে ধীরেসুস্থে ঠোঁট টিপে হেসে বলল,”কি রে! কেমন আছিস? পেঁয়াজ হাতে দাঁড়িয়েছিস কেন?”
“প্রচুর খিদে পেয়েছে রে। খাবো।” সহজ-সরল ভাবে উত্তর দিলো আর্য।
“পান্তা খাবি পেঁয়াজ দিয়ে?কেন বাড়িতে আর কিছু নেই? জেঠিমা কিছু বানায়নি?”
“কিছু খুঁজে পাচ্ছি না তো।”
“দাঁড়া! আমায় দেখতে দে।” আর্যর হাত থেকে পেঁয়াজ ছাড়িয়ে নিয়ে রান্না ঘরে প্রবেশ করল। কিছুক্ষণ পর শসা হাতে হতাশা হয়ে ফিরে আসলো। বটি নিয়ে পেঁয়াজ আর শসা কাটতে লাগলো। আর্য রিম্পির চলাফেলা আর মুহূর্তের আচার-আচরণ দেখে মুগ্ধ হলো বটে, তবে হাসি লুকিয়ে রাখতে পারল না।
“তোর মা না বড্ড এ আছে। তুই আজকে আসবি জানে। ট্রেনে খাওয়া দাওয়া ঠিকঠাক হয় না,কিছুতো একটা বানিয়ে দিতে পারতো। নিজেরা বানিয়ে খেয়ে নিয়েছে । অথচ বাড়িতে যে একটা ছেলে আসবে তার কথা কারোর খেয়াল নেই।”
“কি সব বকে যাচ্ছিস তুই? তোর জেঠিমা হয় মনে আছে না ভুলে গেছিস?”
“সব মনে আছে।”
“বুড়ির মতো কথাবার্তা বলছিস। কটা বছরে দেখছি পেকে গেছিস। বিয়ে দেওয়ার মতো হয়ে গেছিস।” রিম্পি কোনো উত্তর দিল না। সে সুন্দর করে শশা আর পেঁয়াজ কেটে দিল। আর্যর জন্য এগুলোই যথেষ্ট। তাকে আরাম করে খেতে বলল। তারপর রিম্পি আর্যর সামনে পিঁড়ি পাতিয়ে বসলো। আর্য খাচ্ছে তাই বেশি কথা বলল না। খাওয়া শেষ হওয়ার মুহূর্তে রিম্পি বলল,”দাদা তুই তো অনেক ফর্সা হয়ে গেছিস রে। কি করে ফর্সা হলি?”
“আবার শুরু করলি।”
“না রে সত্যি। অনেক ফর্সা হয়ে গেছিস। আমি ফর্সা হচ্ছি না কেন রে?” আর্য বড় হয়েছে সবকিছু বুঝতে পারছে। এটা গ্রাম সব সময় কাদা মাখা হয়ে থাকতে হয়। রোদে বের হতে হয়। তাছাড়া সমুদ্রের নোনা হাওয়া তো রয়েছে। কিন্তু শহরে এমনটা নয়। সারাদিন রুমের মধ্যে বন্দি থাকতে হয়। সেখানে তেমন বেশি গরম পড়ে না। তাই তার শরীরের আসল রং ফুটে উঠেছে। এই গৌণ বিষয়টি বুঝতে পারছে না সে। ধৈর্য সহকারে সবকিছু বুঝিয়ে বলল রিম্পিকে। মাথা নাড়ালেও খুশি হয়নি বুঝতে পারল। আর্য হাসিমুখে বলল,”মানুষের গায়ের রঙে কি আসে যায়! কত সুন্দর ফুটফুটে তুই। আর গায়ের রঙের জন্য চিন্তা করছিস।” রিম্পি মৌন হয়ে রইল। ইচ্ছে করে মুখটা ঘুরিয়ে নিল। কিছুক্ষণ মৌন থাকার পর বলল,”জানিস দাদা, আমার বাবা আর তোর বাবার সঙ্গে খুব ঝগড়া হয়েছে। কথা হয় না এখন। এখন আর আগের মত এ বাড়ি ও বাড়ি যাওয়া আসা হয় না।” রিম্পির কথা শুনে চমকে উঠলো আর্য। তার বাবা কারোর সঙ্গে ঝগড়া করতে পারে এটা অবিশ্বাস্যকর । তারপর নিজের ভাইয়ের সঙ্গে!সম্ভব নয়। আবার, রিম্পি মিথ্যে কথা বলার মেয়েও নয়। করুণ চোখে তার দিকে তাকাল। বলল,”কি করে? বাবা তো আমায় কিছু বলেনি।”
“ওই যে পাশে একটা জায়গা রয়েছে না, ওই জায়গা নিয়ে। ঝগড়ার সময় আমিও ছিলাম না। স্কুলে গেছিলাম। বাড়িতে আসার পর শুনেছিলাম ঝগড়া হয়েছে। বাবা বলেছিল আমি যেন আর এই বাড়িতে না আসি। কিন্তু আমি কিংবা আমার দুই বোন কেউ শোনেনি।”
“ঠিক করেছিস। যাই হয়ে যাক না কেন আসা যাওয়া বন্ধ করবি না।” আর্যর মুহূর্তে ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া হৃদয় আনন্দে ভরে গেল। তার হৃদয়ের আনন্দ আরও বাড়িয়ে দিল রিম্পির পরবর্তী বাক্য।
“জানিস তো দাদা, এবার দীপাবলিতে জ্যাঠামশাইও সবার জন্য ফানুস এনে ছিল আবার আমার বাবাও সবার জন্য ফানুস এনে ছিল। উৎসবের দিনে ঝগড়ার কথা কেউই মনে রাখেনি।”
“জানতাম। ভাই ভাই একটু মনোমালিন্য হবে। ওটাকে ঝগড়া বলিস না। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।”
“ঠিক হবে না রে। জ্যাঠামশাই হয়তো সবকিছু ভুলে গেছে কিন্তু বাবা ভোলেনি। এখনো অন্যের কাছে বাবা জ্যাঠামশাইয়ের নামে খারাপ কথা বলে বেড়ায়।” রিম্পির কথা শুনে আর্য ফিক করে হেসে উঠলো। তাকে হাসতে দেখে রিম্পি বিরক্ত হলো। আর্য বলল,”সমস্ত সত্য কথা আমায় বলে দিচ্ছিস। আমার কাকু তোর বাবা হয়,তা ভুলে গেলি না কি!”
“আমার বাবা হয় ঠিকই। কিন্তু তিনি যা করছেন তা তো ঠিক নয়। ঝগড়ার পর জ্যাঠামশাইকে কখনো বাবার নামে খারাপ কথা বলতে দেখেনি। তাহলে, বাবা জ্যাঠামশাইয়ের নামে খারাপ কথা বলবে কেন?” আর্য নিরুত্তর রইল। এই মুহূর্তে কথা বাড়ানো উচিত নয়। রিম্পি সহজ সরল মনে কোনোরকম দ্বিধা দ্বন্দ্ব রাখতে চায় না। তাই সব কিছু বলে ফেলছে।তার কথায় যথেষ্ট যুক্তিও রয়েছে। কথাগুলো সত্য। তবুও এই বিষয়ে আর কথা বাড়াতে চাইল না। ইতিমধ্যে খাওয়া শেষ হয়ে গেছে। হাতমুখ ধুয়ে এসে রিম্পির জামায় নিজের হাত মুখ মুছে ফেলল।
“হনুমান! এখনো তোর স্বভাব যায়নি। বাড়িতে আর কিছু নেই? আমার জামায় হাত মুছতে হয় সবসময়?”
“তো কি হয়েছে? জামায় ফোসকা পড়ে যাচ্ছে নাকি? কিন্তু তুই এত রোগা হয়ে গেলি কি করে?”
“আর বলিস না। কত কাজ করতে হয় জানিস। তুই ছিলিস আমার অনেক কাজ করে দিতিস। এখন সব আমায় করতে হয়।”
“বাড়িতে তো একটু-আধটু কাজ করতে হবে তাই না!”
“তা ঠিক। আমার না অনেক অ্যাসাইনমেন্ট প্রজেক্ট পড়ে আছে। করে দিবি?”
“ওও। তোর আসল উদ্দেশ্য তাহলে এটাই ছিল?”
“এটা গৌণ উদ্দেশ্য ছিল। মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল তোকে দেখার।”
“আচ্ছা ঠিক আছে করে দেবো। হয়েছে? খুশি? আমাকে এবার একটু ঘুমোতে হবে। দুদিন ঠিক মতো ঘুম হয়নি।”
“আচ্ছা ঘুমো।আমি পরে আসবো আবার।” রিম্পি নিজের বাড়ি চলে যাচ্ছিল। তখনই আর্য পেছন থেকে ডেকে বলল,”এই শোন শোন। সোনা আর টিয়া কই রে? ওরা এলো না যে।”
“ওরা স্কুলে গেছে। বাড়ি পৌঁছালে ঠিক পৌঁছে যাবে তোর কাছে।”

সন্ধ্যার সময় অশোকবাবু বাড়ি ফিরলেন। তারপর বাড়ির মন্দিরের সামনে বসে দীর্ঘক্ষণ ছেলের সঙ্গে কথা বললেন। সেখানকার মানুষের খাবার আচার-আচরণ বিভিন্ন সমস্যা-সমাধান সব কিছুই জানার চেষ্টা করলেন। আর্য যথাযথ উত্তর দিল। কাকুর সঙ্গে বাদানুবাদের কারণও জানতে চাইল। তিনি হাসিমুখে সমস্ত কিছু বললেন। তেমন কোনো সমস্যা নয়। সামান্য জায়গা জমি নিয়ে একটু সমস্যা হয়েছে। খুব শিগগিরই মিটে যাবে।
রাতে রান্না হতে দেরি আছে। সারাদিনের ক্লান্ত শরীর নিয়ে অশোকবাবু বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারলেন না। বিছানায় ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দিলেন। রান্না হয়ে গেলে উঠে খাবেন তিনি। কিছুক্ষণ পর আর্যও বাবার পাশে শুয়ে পড়লো। বাবাকে গল্প শোনাতে বলল। তিনি গল্প শোনালেন। কয়েক মুহূর্তের জন্য আর্য ফিরে গেল ছোটবেলায়। দেড় বছর আগে বাবাকে যেমন দেখে গিয়েছিল, তিনি ঠিক তেমনটাই আছেন। কোনো রকম পরিবর্তন আসেনি। মাথায় সাদা-কালো চুলে ভর্তি। শীর্ণদেহে আজও তলোয়ার ধরতে সক্ষম। যুদ্ধ করার জন্য সব সময় প্রস্তুত তিনি। লড়াই করতে চান লড়াই..। বাবার পাশে শুতেই পুরনো কাঁথা-বালিশের গন্ধ নাকে ভেসে আসলো। বিছানা শরীরের জন্য মোটেও আরামদায়ক নয় তবুও মনের জন্য বড্ড আরামদায়ক। চারিদিকে বাবাময় সুবাস মো মো করছে। বাবার শরীরের গন্ধ পৃথিবীর সমস্ত গন্ধকে হার মানিয়ে দেয়। এই গন্ধ শরীরের নতুন এক উদ্দীপনা জাগাচ্ছে। সমস্ত হারকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার সাহস যোগাচ্ছে। শুকিয়ে যাওয়া কোষগুলোকে খাদ্য যোগাচ্ছে। কিছুক্ষণ গল্প শোনার পর আর্য বলল,”বাবা,এই কয়টা বছর তোমার মনে পড়েছে,আমায়?”
“প্রত্যেকটা মুহূর্তে মনে পড়েছে। পৃথিবীর প্রত্যেক বাবাই সন্তানের কথা মনে না করে থাকতে পারে না। আমি কি করে থাকবো?” নরম ভাবে বললেন অশোকবাবু। একটু সচকিত হলো আর্য। বলল,”একটা সত্যি কথা বলি!”
“বল?”
“তোমার কথা আমার মনে পড়েনি এমনটা নয়। প্রচুর মনে পড়েছে। কিন্তু তোমার মতো প্রতিটা মুহূর্তে মনে পড়েনি।যখন বন্ধু-বান্ধবীর সঙ্গে থেকেছি ঘুরেছি ব্যস্ত হয়ে পড়েছি, তখন পরিবারের কথা ভুলে গেছি। একবারের জন্যও মনে পড়েনি।” ছেলের কথা শুনে মৃদু হাসলেন। বললেন,”এ তো স্বাভাবিক। আমি বাবা তুই ছেলে কিছুতো পার্থক্য থাকবে। ছেলে তার ছেলের বাবা হতে পারে কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও তার বাবার বাবা হতে পারে না।” একটু থেমে আবার বললেন,”এই যে তুই সহজ-সরল ভাবে সবকিছু স্বীকার করে নিলি, এটাই অনেক।খুব কম মানুষ পারে নিজের ভুলগুলো সবার সামনে প্রেজেন্ট করতে। তোর যে মনের মধ্যে কোনো সংকীর্ণতা নেই, এটাই তো আসল ভালোবাসা।” বাবার কথা শুনে একটু আস্বস্ত হলো। উভয়ে বেশ কিছুক্ষণ মৌন থাকলেন। তারপর আর্য আমতা আমতা করে বলল,”জানো বাবা, তুমি না বলেছিলে বয়সন্ধিকালে প্রেম করতে নেই। আমার মন তা তো শুনলো না। স্নেহার সঙ্গে এখনো ভালো সম্পর্ক রয়েছে। সম্পর্ক পিছিয়ে যায়নি বরং এগিয়ে গেছে।”
“আমি জানতাম তুই কখনো ভুলবি না।”
“কি করে?” আর্যর মধ্যে কৌতুহল বাড়লো।
“আমি আমার ছেলেকে চিনব না!নিজে হাতে তৈরি করেছি। কখন কি সিদ্ধান্ত নিবি আমি বলে দিতে পারি। কাউকে ভালবেসেছিস আর তাকে ভুলবি না, জানতাম। তাইতো সেদিন সাবধান করে দিয়েছিলাম, যাতে পড়াশোনা নষ্ট না হয়। পড়াশোনার পর মেয়েটা যখন নাম্বার চাইলো তখন তাকে দিয়ে দিলাম। ভালো খারাপ বোঝার চেষ্টা করিনি। তুই তোর জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি বেছে নিবি, আমি বিশ্বাস করি। একবারের জন্যও বাধা দেয়নি। মেয়েটির ব্যবহার ও খুব সুন্দর। খুব যত্ন করতে জানে।”
“নিজের ছেলেকে এতো বিশ্বাস করো? যদি আমি কোনদিন বিশ্বাস ভেঙ্গে দিই?”
“ভাঙ্গবি না‌। আমি জানি।” বেশ জোর গলায় অশোকবাবু বললেন। আর্যর মধ্যেও কেমন একটা উত্তেজনা জাগলো। সে বলল,”তবুও, আমি যদি বদলে যাই! তোমাদের ছেড়ে বহু দূরে চলে যাই।” অশোক বাবু পুনরায় এক উওর দিলেন। তার ছেলে কখনো বদলাতে পারে না। গভীর বিশ্বাস রয়েছে। শুধু বিশ্বাস নয়। শুধু পরিশ্রম নয়। তিনি সঠিক শিক্ষা দিয়ে ছেলেমেয়েদেরকে বড় করেছেন। তাই জোর গলায় বলতে পারছেন ছেলে মেয়েরা কখনো খারাপ পথে যাবে না। তার উত্তর সময় দেবে। আর্য বড্ড অবাক হলো, বাবার তার প্রতি নিবিড় বিশ্বাস দেখে। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো, বিশ্বাস কখনো ভাঙ্গবে না সে। আরও কিছুক্ষণ চুপ থেকে আর্য বলল,”আর একটা কথা বলি?”
“হুম,বল? বারণ তো করিনি।”
“আসলে?” আর্য থামল। কি করে বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। একটা ঢোক গিলে বলল,”আসলে স্নেহা বলেছে কালকে তার সঙ্গে দেখা করতে। তাই কাল বিকেলে একবার শহরে যেতে চাই।” এইটুকু বলতেই গা থেকে ঘাম বেরিয়ে গেল আর্যর। ভয় পেয়ে জীভ আর নড়লো না। অশোক বাবু জোরে হাসলেন। হাসতে হাসতে বললেন,”এতে এত আমতা-আমতা করার কি আছে? নিজের বন্ধুর সঙ্গে দেখা করা অন্যায় নয়। একদিন নয় বারবার গেলেও আমার কোনো আপত্তি নেই। এর জন্য অনুমতির প্রয়োজন নেই। নিজের দায়িত্ব আর গুরুত্বপূর্ণ কাজের পর তুই যা করিস না কেন তাতে কোনো আপত্তি নেই। এতদিন ধরে পরিশ্রম করেছিস এবার কয়েকদিন ছুটি পেয়েছিস বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে ঘুরবি। আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে যাবি,স্বাভাবিক। তবে তা যেন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে।” আর্য মন খুশিতে ভরে গেল।তার বাবা যে একজন বিচক্ষণ ব্যক্তি বারবার প্রমাণ পেয়েছে। কেমন ভাবে মানুষ গড়তে হয় তিনি ভালোভাবে জানেন।জীবনে কতটুকু স্বাধীনতা প্রয়োজন কতটুকু পরাধীনতার প্রয়োজন সব কিছুই জানেন। উনি কোনো পুঁথিগত বিদ্যা থেকে এই সব শিখেননি, জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে শিখেছেন। সবকিছু বুঝেছেন।
“বড্ড ঘুম পাচ্ছে রে বাবু। তুইও তো দুটো রাত ঘুমাসনি। ঘুমিয়ে পড়। আমায় আবার ভোরে উঠতে হবে।”
“ভরে উঠবে কেন? এত পরিশ্রম করে কি হবে? বলতো?”
“সকালে তো বাগানে জল দিতে হবে। তারপর আবার লোকের বাড়িতে কাজে যেতে হবে। কত কাজ বাকি আছে।”
“তোমায় ভোরে উঠতে হবে না। ভোরে নিজের বাড়ির কাজ আমরা করে নিবো। তুমি দেরি করে উঠবে। বেলা হলে অন্যের বাড়িতে কাজ চলে যাবে। আমি আর মা মিলে বাগানে জল দিয়ে দেব। রোজ ভোরে উঠলে ঠান্ডা লেগে যাবে তো।”
“তা কি হয় রে? স্ত্রী আর ছেলে কাজ করবে আর বাবা ঘুমাবে। তা কখনো সম্ভব নয়?”
“বাবা-মা কাজ করবে আর বুড়ো ছেলে ঘুমাবে! এ ও কি সম্ভব?” অশোক বাবু হেসে উঠলেন। আর কিছু বললেন না। বুঝতে পারলেন, ছেলে তার মতো হয়েছে। তার সঙ্গে সহজে পেরে উঠবেন না।

পর্ব ১৯ আসছে
বিঃদ্রঃ আজকের পাঠক বন্ধুদের জন্য দুটো প্রশ্ন রইল। আশাকরি যথাযথ উত্তর দেবেন।
আর্যর নিজের বোনের নাম কি? তার বইয়ের তাকে বইয়ের পাশাপাশি আর কি ছিল?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here