কল্পনার_কলমদানি ২

কল্পনার_কলমদানি ২
#চন্দ্রা
গল্প: “রঙ মিশেলে সেই দশমীর বিকেল”-০২

কুশলের অবাক চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে কেন জানি না খুব হাসি পাচ্ছে। একটু আগের ভয়টা এখন আর আমার লাগছে না। আমি ইচ্ছে করেই আরো দু পা এগিয়ে যেতেই ও নড়েচড়ে উঠল। থতমত খেয়ে নিজেই সরে যেতে লাগল। আমি তা বুঝতে পেরে ওর দিকেই তাকিয়ে থেকে মুচকি হাসলাম। ও গলা খাকরি দিল। হয়ত কিছু বলতে চায়। কিন্তু এই মুহূর্তে ওর কথা ঠিক শুনতে ইচ্ছে করছে না। আমি এবার সরাসরি পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা ছেলে গুলোর দিকে তাকালাম। ওরাও থতমত খেয়ে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।
– কি ব্যাপার হ্যাঁ…..?! দেখছ আমরা কথা বলছি। এখন যাও। একটু পরে আসবে।
আমার ধমকে ওরা সবাই কেমন যেন মাথা নেড়ে বিদেয় হল। এদিকে আমার যেন সাহস বেড়েই চলেছে। কি করছি কিছুই জানি না।
– এই যে মিস…! কি ব্যাপার হ্যাঁ…?! কে না কে ?! বিরক্ত করছেন কেন…. ?!
কুশলের ধমকে আমি ওর দিকে ফিরলাম।
– বিরক্ত কোথায় করলাম?! শুনতে পাওনি?! ভালোবাসি তোমাকে। আরেক বার বলব….?!
এবার কুশল বিরক্ত হল। কেমন যেন রাগী ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, বান্ধবীদের সাথে ট্রুথ এন্ড ডেয়ার খেলছ তো…?! ওকে তোমার প্রোপোজাল অ্যাকসেপ্টেড। যাও তুমি জিতে গেছ।
এবার আমি ভ্রু কুঁচকে ফেললাম।
– এই যে ! আমি এতদূর তোমার জন্য বাড়িতে মিথ্যে বলে এসেছি। যাস্ট তোমাকে ভালোবাসি বলব বলে। আর তুমি বলছ আমি ট্রুথ এন্ড ডেয়ার খেলছি….?! ইয়ার্কি চলছে…?!
– ইয়ার্কি আপনি করছেন। কোথাকার কে না কে এখানে এসে আই লাভ ইউ। এটা কি ফ্লিম মনে হচ্ছে….?! চিনি না জানি না। আরেহ্, আজকাল সারা জীবন দুটো মানুষ একসাথে থেকেও একে অপরকে চিনতেই পারে না। আর এ কোন পাগল?! …….প্লিজ ! আপনি যান।
নিজের কথা গুলো শেষ করে কুশল বাইকে উঠে পড়ল। কিন্তু আমার রাগ হচ্ছে। আমি ঝপ করে ওর,হাতটা চেপে ধরলাম। ও সাথে সাথেই ঝাড়া মেরে সরিয়ে নিল। আমার দিকে প্রচন্ড রেগে কি বলতে গিয়েও বাইক স্টার্ট করল। আর মুহূর্তের মধ্যেই গায়েব হয়ে গেল। আর আমি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম।

আপাতত এখন চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছি। দোকানটা একদম ফাঁকা। কারোর তো আর কাজ নেই এই রোদের মধ্যে চা খেতে আসবে…! আমাকে পাগলে পেয়েছে তাই আমি এসব করছি। এখন তো প্রথমেই মনে হচ্ছে, কেন এসেছিলাম বাড়ি থেকে?! কি বিরক্তিকর! একটু আগেই নিজের করা কাজ গুলো মনে করে ইচ্ছে করছে নিজের গালেই আচ্ছামত চড় বসাই। অসভ্য মেয়ে কোথাকার?! সত্যিই বলেছে কুশল। চিনি না জানি না কি করে প্রোপজ করলাম …..?! যদি ওরা খারাপ হত?! অত গুলো ছেলে ছিল। ওরা সবাই মিলে যদি আমাকে তুলে নিয়ে চলে যেত?! কোথাকার গাধামি যে আমার মধ্যে ভর করেছিল কে জানে….?!
কথা গুলো একা একাই ভাবতে ভাবতে চায়ের ভারে চুমুক দিয়ে চলেছি। কিন্তু এরপর কি….?! আজকে না এলে আমার বাঁচার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু আজ যা যা করেছি সেটা ভুলে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না।
চা শেষ । চায়ের ভারটা ছুঁড়ে মারতে গিয়েই হঠাৎ কথাটা মনে পড়ল। সত্যিই তো কুশল চাইলে আজ আমার সাথে যা কিছু করতে পারত। ওই সময় আমি এতটাই বোকা ছিলাম ও যদি আমাকে বাইকের পেছনে উঠতে বলত আমি তো উঠেই পড়তাম। নাহ্, এ ছেলেকে তো ছাড়া যাবে না। আজ এর খোঁজ খবর নিয়েই বাড়ি ফিরব। মোবাইলে নামটা দেখে নিলাম। দুপুর একটা বাইশ। সন্ধ্যা ছ’টার মধ্যে বাড়ি যাব বলেছি। তাতে দশ পনের মিনিট অ্যাডজাস্ট তো হবেই। তাহলে চার ঘন্টা মত সময় আছে।

বলছি, একটু শোনো না!
জীবন তো অনিশ্চিত, হিসেব মেলাবার আগেই শেষ।
রাতের পর দিনের আলো দেখার অপেক্ষা করতে করতেই ষোড়শী দশা পেরিয়ে গেলো যে!
ছুঁয়েই তো দেখতে পারলাম না!
আর তো কয়েকটা পাতা, ব্যস!
হয়ত জীবনের অন্তিম পর্ব প্রকাশিত হবে।
তাহলে?!
চলো পায়ে পা লাগিয়ে হুঁট করেই ভুলে যাই সব হিসেব।
চলো তো, বেরিয়ে পরি অজানার পথে।
শুধু তুমি থাকলেই চলবে।
আরে চলোই না! কি হবে এতো অঙ্ক কষে?!
সেই তো বাঁধা ধরা ঘড়ির কাঁটায় আটকে পড়া সময়!
আচ্ছা একটা কাজ করি চলো,
হঠাৎ করেই প্রেমে পড়ে যাই।
ভালোবাসা নয় কিন্তু প্রেম, প্রেমে পড়তে চাইছি।
ভালোবাসার পরিসর অনেক বড় তো!
দরকার কি এত কঠিন কঠিন অনুভূতি বোঝার?!
হাসি মুখে জীবন পথে হেঁটে হেঁটেই পাড় করে ফেলি
বাকিটা সময়……………।

পুরো কবিতাটা লেখার সময় কুশলের মুখটা চোখে, সামনে ভাসছিল। এখন রাত দশটা আঠেরো। বাড়িতে সেই সন্ধ্যা বেলাতেই চলে এসেছি। আর কালকেও ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান আছে সেটাও জানিয়েছি। বাবা মা সবসময় আমাকে বাহিরমুখি করতে গিয়েও পারেনি। পূজোর চারটে দিন ঘরে বসেই কাটাই আর তাতেই এদের যত আপত্তি। এবছর ঘুরছি তারা খুশিই হয়েছে। কিন্তু শর্ত একটাই সন্ধ্যা ছ’টার মধ্যে ঘরে ঢুকতে হবে। বিশ্বাস করে আমাকে। তবে তার অপব্যবহার করব না। কাল একটা শেষ চেষ্টা করতে যাব। আজকে কুশলের সব ডিটেলস জোগাড় করেই এসেছি। সাথে ওদের বাড়িটা দেখে এসেছি। কুশল বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে। ওর বাবা পাশেই এক কারখানার ওয়াচম্যান। কুশল এমএসসি ফার্স্ট ক্লাসে পাশ করেছে। সরকারি চাকরি হয়নি। আপাতত ও চেষ্টাও করছে না। কোনো এক বেসরকারি সংস্থাতেই কর্মরত। তবে আড্ডা দেওয়া ওর একটা বদ অভ্যেস। সাথে পাড়ার ক্লাবেও যোগাযোগ রাখে তবে খুব একটা নয়। পাড়ায় কেমন একটা মস্তান মস্তান টাইপ চেহারা।
কথা গুলো জেনে থেকেই কেমন যেন রোমাঞ্চকর লাগছে। তবে হ্যাঁ, জেনে এসেছি অভদ্র টাইপের ছেলে ও নয়। এখন ব্যাটা একটু রাজি হলেই আমার লাভ স্টোরি স্টার্ট।
পরদিন সকালেই জলদি জলদি রেডি হলাম। আজ শাড়ি পড়েছি। অষ্ঠমী বলে কথা। পাড়ার প্যান্ডেলেই প্রথম ব্যাচে অঞ্জলি দিয়েই ছুটলাম স্টেশনে। আজ হাঁটতে একটু কষ্ট হচ্ছে। শাড়ি পড়েছি তো। তবে শাড়িটা মোটামুটি ভালোই সামলাতে পারি।
শেষমেশ কাঁধের স্লিং ব্যাগটা, শাড়ির কুঁচি আর চুলের গোছা সামলে যতক্ষণে কুশলদের পাড়ার মন্ডপে পৌছলাম শেষ ব্যাচের অঞ্জলি চলছে। অলরেডি একবার মন্ত্র পড়া শেষ। তবুও আমি খুশী। কুশল এই ব্যাচেই অঞ্জলি দিচ্ছে। ঠেলেঠুলে ঠিক ওর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। ভিড়ের মধ্যে অসুবিধা হচ্ছে দাঁড়াতে। পাশেই তাকাতে দেখি গতকালের সেই ছেলে গুলো পরপর দাঁড়িয়ে আছে। আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে। আমি ইশারায় সরে যেতে বললেই ওরাও সরে আমাকে জায়গা করে দিল। ওদিকে অঞ্জলির শেষ বারের মন্ত্র চলছে। আমি কুশলের দিকেই তাকিয়ে আছি। ও চোখ খুলে হাতের ফুলটা ছুঁড়ে দিতেই আমিও ওর হাতেই হাত রাখলাম। ও চট করে ঘুরে দাঁড়িয়ে আমাকে দেখেই রেগে গেল। কিন্তু ভিড়ের মাঝে কিছুই বলতে পারছে না। আমি মুচকি হাসতেই ওর নিজে থেকেই এবার আমার হাতটা চেপে ধরল। আর আমার কিছু বোঝার আগেই আমাকে টেনে নিয়ে চলল বাইরের দিকে।

ক্রমশ …….

সমাজ, ফ্যাক্ট, বাস্তবতা সব ছেড়ে বলতে পারেন ইচ্ছেমত কিছু লিখে যাচ্ছি। তাই গল্প হিসেবেই নেবেন প্লিজ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here