কাজল নদীর জলে পর্ব-২১

0
867

কাজল নদীর জলে
আফিয়া আপ্পিতা

২১.
সাবিনা মেয়ের বিয়ে নিয়ে এত তাড়াতাড়ি ভাবতে না চাইলে ও রেহানা বোনকে জোর করেন ভাবতে। রেহানার মতে, এমন সুযোগ্য পাত্র সব সময় মেলে না। এখন নাগালে আছে প্রস্তাব পাকড়াও করা উচিত। বোনের জোরাজোরি আর বোনের মুখে ছেলের প্রশংসা শুনে সাবিনার খানিক সিদ্ধান্ত নেন এ নিয়ে স্বামী তানভীরের সাথে কথা বলবেন। রেহানার সাথে কথা শেষ করার আগে চয়নের বায়োডেটা চয়নের পরিবার থেকে সংগ্রহ করে দিতে বলে । ফোন রেখে সাবিনা ভাবতে বসেন। আর রেহানা জোবায়েদাকে কল করে। নিতুর সুত্রে জোবায়েদার নাম্বার তার ফোনে সেভ আছে। প্রথম রিং হতেই রিসিভ হয়। রেহানা জোবায়েদাকে ছেলের বায়োডেটা দিতে বলেন। জোবায়েদা দিবে বলে জানায়। রাতে চরণকে বলে চয়নের বায়োডাটা দিতে। বিয়ে উপলক্ষে চয়নের অগোচরে চরণকে দিয়ে বায়োডেটা বানিয়ে রেখেছিলেন জোবায়েদা। আর তা মাসছয়েক আগেই। চরণ বায়োডেটার ছবি তুলে পাঠিয়ে দেয় রেহানার হোয়াটসঅ্যাপে।সাথে চয়নের কয়েকটা ছবিও পাঠায়। রেহানা তা বোনকে ফরওয়ার্ড করে। বায়োডেটা দেখতে গিয়ে প্রথমেই সাবিনার চোখ আটকায় পাত্রের নামে। ‘জুবায়ের আরেফিন চয়ন।’ নামটা বিড়বিড় করে পড়ে একবার। মনে পড়ে যায় সুরলার রুমে টাঙানো পেইন্টিংএর নিচে লেখা জুবায়ের নামটা। বিস্মিত চেহারায় হিসেব মেলায় সাবিনা। অনেক কিছু মেলে যায়। তাও নিশ্চিত হতে বোনকে ফোন করে। রিসিভ হতেই জিজ্ঞেস করে,
” আপা ছেলে কি পেইন্টিং করতে জানে বা করে?”

সবে তারাবির নামায পড়তে জায়নামাযে বসেছেন রেহানা। বোনের ফোন দেখে ভেবিছিলেন বিয়ের ব্যাপারে জুরুরি কথা বলবেন, কিন্তু আজগুবি প্রশ্ন শুনে ভ্রু কুঁচকে বলেন,
“কেন! তা দিয়ে তুই কী করবি?”
“বলো না আপা?”
“হ্যাঁ, চয়ন পেইন্টিং করে, তবে শখের বশত। এখন তো কাজের সুত্রে চট্টগ্রাম থাকে, ছুটিতে বাসায় এলে প্রতি বিকেলে ছাদে বসে পেইন্টিং করে। নিলয় আর নিতু বলে, চয়নের পেইন্টিং-এর নিঁখুত। আমি দেখিনি। ”
“তোমার সাথে পরে কথা বলছি।” বোনকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন রেখে দেন। কারণ সাবিনার হিসেব মিলে গেছে। এর অর্থ সুরলার মনের মানুষ, পেইন্টিং দাতা এবং বায়োডেটায় থাকা পাত্র একি জন। সাবিনা পুরো বায়োডেটা ঘেটে দেখেন। ছবিগুলো পরখ করেন। ছেলেকে বেশ পছন্দ হয় তার। এজুকেশনাল স্কিল আর ব্যাকগ্রাউন্ড ও উচ্চমাত্রার। রেহানার কাছে শুনে বুঝেছেন ছেলের স্বভাব চরিত্র ও ভালো,দেখতে ও মাশা আল্লাহ। বাদ দেবার পাত্র নয়। তা ছাড়া তার মেয়ের পছন্দ এই ছেলেকে। অন্তত মেয়ের রুমে ঝুলানো পেইন্টিং আর সেদিনের চেহারার লাজুকলতা এটাই বলে। মেয়ে খারাপ কাউকে পছন্দ করে নি বলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন সাবিনা। তারাবির নামায শেষে তানভীর আহমেদ বাসায় ফিরলে সাবিনা একে একে সব কথা জানান। সব শুনে তানভীর সাহেব বলেন,
“আমার মেয়ের মত ছাড়া আমি কোন পদক্ষেপ নিব না, সে যদি রাজি থাকে তবে আগাব না হয় নিষেধ করে দিব। ”
“তুমি কী মেয়ের সাথে কথা বলবে?” সাবিনা বলেন।
“ইদ যাক, তারপর বলব। এখন বললে ওর ইদ আনন্দ মাটি হবে। এসবের মাঝে মেয়েটা ইদের আনন্দ উপভোগ করতে পারবে না। জানো তো ও কতটা ইমোশনাল!”
“তা ঠিক। তাহলে আপাতত এই ব্যাপারে ভাববো না, ইদ যাক তারপর ধীরে সস্থে ভাবা যাবে।”

সুরলার কানে কথা পৌঁছায় না। ইদ অবধি সুরলার বিয়ের ব্যাপারে কোন আলাপ হয় না। চট্রগ্রাম থেকে চয়ন এসে ইদের আগের দিন সকালে। ইফতার এর পর চরণ যায় ভাইয়ের রুমে। চয়ন সবে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে। ভাইকে দেখে উঠে বসে। চরণ আসার সময় দুই মগ কফি বানিয়ে এনেছে। একটা মগ ভাইয়ের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
“কতদিন আমরা আড্ডা দিই না! খুব মিস করি সেই দিন গুলোকে যখন আমরা সবাই একসাথে থাকতাম, হাসি আড্ডায় দিন কাটাতাম। আজ তোমাকে পেয়ে চলে এলাম আড্ডা দিতে।”

ভাইয়ের হাত থেকে কফি মগ নিয়ে চয়ন হেসে বলে,
“আমি ও মিস করি অনেক। আজ জমিয়ে আড্ডা দিব। তবে এখানে নয়, বারান্দায় চল।”
দুই ভাই বারান্দায় যায়। বিন ব্যাগে বসে জমে দুই ভাইয়ের আড্ডা। কফিতে চুমুক দিয়ে চয়ন বলে,
“তা বল, তোর দিনকাল কেমন যাচ্ছে আজকাল?”
“পূর্বকার নিয়মে যাচ্ছে। কোন নড়বড় নেই। তোমার দিনকাল কেমন যাচ্ছে?”
“কাজের প্রেশারে হাবুডুবু খেতে খেতে যায় দিন।” দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে চয়ন। চরণ তার মূল কথা ছাড়ে এবার।
“তোমার দীর্ঘশ্বাস ফেলার দিন শেষ, সুখের সময় আসছে। মনের মানুষকে বিয়ে করে সুখী হও।”

চয়ন ভাইয়ের কথা বুঝতে পারে না। ভ্রু কুঁচকে বলে,
“আমার সুখের দিন আসছে তুই কিভাবে জানলি? আমি তো জানলাম না। আর মনের মানুষকে বিয়ে করে সুখী হও মানে কী?”

“ভাইয়া, তোমার বিয়ের সানাই বাজল বলে, সুখী তো হবেই।” হেসে বলে চরণ। চয়ন খানিক ভেবে বলে,
” মা আবার আমার বিয়ে নিয়ে তোড়জোড় শুরু করেছে? নিষেধ করি এসবে আমাকে না জড়াতে তাও!”
“মা এবার কোমরে কাপড় বেধে নেমেছে, এ যাত্রায় মুক্তি পাবে না বলে মনে হয় না। বিয়ে তোমাকে করতেই হবে। তাও তোমার মনের মানুষকে।”

“মনের মানুষ মানে? মা কী ওই ধোকাবাক অনন্যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করছে? এমন হলে কিন্তু খুব খারাপ হবে বলে দিলাম!” চোয়াল শক্ত করে বলে চয়ন। চেহারায় রাগের আভা দেখা যাচ্ছে। চরণ ভাইয়ের রাগ শান্ত করতে বলে,
“তুমি ভাবলে কী করে তোমার জীবন তচনচকারীকে আমি তোমার জীবনে আবার আসতে দিব? পাত্রী অনন্যা নয়। অন্য কেউ। তা তোমার মনে কী অনন্যা ছাড়া কেউ নেই?”

চয়ন প্রশ্নবোধক চাহনি দিয়ে তাকায় ভাইয়ের দিকে। বলে,
“কার কথা বলছিস? ”
“আমার প্রশ্নের উত্তর দাও আগে তারপর বলছি।”
“না, কেউ নেই।” খানিক সময় নিয়ে উত্তর দেয় চয়ন। চরণ হেসে জিজ্ঞেস করে,
“তোমার কিট্টিকেও কি মনের বাইরে রাখো আজকাল!”
“কিট্টি!” অবাক চোখে তাকিয়ে বলে চয়ন। তারপর হাকচেকিয়ে উঠে বলে,
“মা কী ওই ইঁচড়েপাকা মেয়ের সাথে আমার বিয়ের কথা বলছে!”

চরণ ভ্রুকুটি করে বলে,
“কোন ইঁচড়েপাকা মেয়ে!কার কথা বলছো?” মজা নিচ্ছে চরণ। চয়ন ধমকে ওঠে,
“মজা নিবি না, ক্লিয়ার করে বল।”
“কী বলব?”
“মা কী ওই মেয়ের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে?”
“কোন মেয়ে?” ঠোঁট দিয়ে হাসি চেপে আবারও বলে চরণ। চয়ন বুঝে যায় তার ভাই তার মুখ থেকে সুরলার নাম জানতে চাচ্ছে। নাম না বলা অবধি বলবে না। তাই সে বিরক্ত হয়ে বলে,
“সুরিলা না কী নাম জানি মেয়েটা? নিতুর কাজিন। ওর সাথে আমার বিয়ের কথা চলছে?”

“না সুরিলার সাথে নয়।” চয়ন হাফ ছাড়ে। প্রশ্ন করে, “তবে কে?”
“বিয়ের কথা চলছে সুরলা ওরফে কিট্টির সাথে, তোমার কিট্টির সাথে। ” শব্দকার হাসি দিয়ে বলে চরণ। চয়ন চমকায়। মাথা চেপে বসে পড়ে। সাত পাঁচ ভাবে তারপর ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে গম্ভীরমুখে বলে,
“মাকে বলে দিস, ওই মেয়েকে আমি বিয়ে করব না। আর সে মোটেও আমার মনের মানুষ নয়। দুইদিন হেসে কথা বললে কেউ মনের মানুষ হয়ে যায় না।”

“আমার শুনেছি, তোমাদের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক আছে। তবে, এখন নিষেধ করেছো কেন!”
” তোদের এসব কে বলেছে? নিশ্চয়ই ওই মেয়ে বলেছে? এই মেয়েকে চিবার জন্মদিন পার্টির পরদিন এত অপমান করলাম তাও লজ্জা হলো না। বেহায়ার মত মানুষকে কী সব বলে বেড়াচ্ছে! আবার আসছে বিয়ে করতে! এই বিয়ের সমন্ধ ও নিশ্চয়ই এই মেয়ে তার বাপ মাকে দিয়ে পাঠিয়েছে? ”

রাগে গদগদ করতে করতে বলে চয়ন। সবটা পরিষ্কার হয়ে যায় চরণের কাছে। সুরলা বিষণ্নতা আর খালার বাসায় না আসার কারণ তার ভাই। বিনা অপরাধে মেয়েটাকে কতটা কথার ঘা দিয়েছে আন্দাজ করে সে। খারাপ লাগা কাজ করে। চোয়াল শক্ত করে প্রতিবাদী সুরে বলে,
“না জেনে কথা বলা ঠিক না ভাইয়া। মেয়েটাকে তোমার অপমান করা ঠিক হয় নি। অন্যের দোষের সাজা কেন তুমি ওকে দিয়েছো! তুমি জানো? সেদিনের পর মেয়েটা তার খালার বাসায় ও আসেনি, সম্ভবত তোমার সাথে দেখা করতে চায় না বলেই। আর মেয়েটা কাউকেই কিছু বলে বেড়ায় নি। অনন্যার পর কোন মেয়ে সম্পর্কে তুমি এতটা ইন্টারেস্ট দেখিয়েছো তাই আমরা সবাই ভেবেছি তোমাদের মাঝে ভাব ভালোবাসা আছে, আর সে ভেবেই মা প্রস্তাব পাঠিয়েছে সুরলার খালার কাছে। সুরলার পক্ষ থেকে প্রস্তাব আসে নি কিন্তু। আজ তিন চারদিন হয়ে গেল এখনো ওরা হ্যাঁ বলে নি। সুরলা যদি তোমাকে বিয়ে করার জন্য পাগল হতো তবে আগেই পরিবারকে মানিয়ে হ্যাঁ বলে দিতো। মেয়েটা নির্দোষ, তুমি শুধু শুধুই মেয়েটাকে দোষারোপ করছো।”

” তোরা সবসময় এক লাইন বেশি বুঝিস। যত যাই হোক আমি ওকে বিয়ে করব না, মাকে বলে দিবি।” চয়নের রাগ সরে না এতসব শুনেও। স্বরটা এখনো রাগত। চরণ উঠে দাঁড়ায়। যাবার জন্য পা বাড়িয়ে বলে,
“এই বিয়ে নিয়ে মায়ের থেকে বাবার আগ্রহ বেশি। একদিন বাবার বিপদে ও পাশে থেকেছিল। এখন বাবা যেভাবেই হোক ওকে ছেলেবউ করবে। মাকে বুঝাতে পারলেও বাবাকে পারব না বুঝাতে। তোমার বিয়ে তুমি গিয়ে জানাও তোমার সিদ্ধান্ত। আমি নেই এসবে।” ভাইকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে যায় চরণ। চয়ন রাগে ফোঁসফোঁস করে।

রাতে খাবার খেতে বসে বাবাকে শুনিয়ে মায়ের উদ্দেশ্যে বলে,
“শুনো মা, আমি একটা কথা স্পষ্টভাবে বলে দিই, আমি ওই মেয়েকে বিয়ে করতে পারব না। তাই কথা আগাবে না আর।”

চয়নের কথায় বাবা মা চিবা তিনজনই ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল। তাদের জানামতে, চয়ন সুরলাকে পছন্দ করে। তবে বিয়েতে এত আপত্তি কেন! চরণ বাবা মায়ের মুখের ভাষা বুঝতে পেরে বলো,
“আমাদের জানামতে, তোমরা একে অপরকে পছন্দ করো। হয়তো ভালো টালো ও বাসো। তবে বিয়ে করতে আপত্তি কোথায় তোমার? ”

চরণের কথার সাথে বাবা মা চিবাও সায় জানায়। চয়ন ভাইয়ের দিকে তাকায় অগ্নীদৃষ্টিতে। আর কেউ না জানলে ও সত্যটা তো চরণ জানে। তাও আগুনে ঘি ঢালছে কেন! সে গম্ভীরমুখে বলে,
“তোমরা সবাই এক লাইন নয়, পাঁচ লাইন বেশি বুঝো। আমাদের মাঝে প্রেম ভালোবাসা বা পছন্দের কোন সম্পর্ক নেই। আমি তো ওকে পছন্দ ও করি না। ”

জোবায়েদা তীক্ষ দৃষ্টিতে তাকান ছেলের দিকে। ছেলের পছন্দের কথা ভেবে প্রস্তাব নিয়ে তারাই এগিয়েছেন। এখন ছেলে বেকে বসলে কী অপমানটাই না হতে হবে! ভাবতেই বুক কাঁপে তার। বখতিয়ার সাহেব গাঢ়তর কন্ঠে বলেন,
“আমরা তোমার পছন্দের কথা জেনেই এগিয়েছি। এখন তুমি বেকে বসলেও কিছু করার থাকবে না। মেয়েটাকে আমাদের সবার পছন্দ। পাত্রীপক্ষ থেকে ইতিবাচক উত্তর এলে পুত্রবধূ হিসেবে ওকে ঘরে আনব আমরা। তোমার মত থাকুক আর না থাকুক সুরলাকে তোমার বিয়ে করতেই হবে। কোন বাড়তি কথা চাইছি না আমি।”

বাবার কথার উত্তরে কিছু বলতে পারে না চয়ন। খাবার ছেড়ে ওঠে যায়। রুমে গিয়ে সুরলার নাম্বার কল দেয়। সুরলাকে বিয়ের ব্যাপারে তার সিদ্ধান্ত জানবে। বলবে, যাতে তার পক্ষ থেকে ইতিবাচক উত্তর না আসে। সংযোগ দেয়া সম্ভব হয় না। ব্লক দিয়েছে সম্ভবত। সুরলার সাথে যোগাযোগের আর কোন পথ পায় না।
.

ইদের দিন পুরোটা সময় আনন্দে কাটিয়েছে সুরলা। বন্ধুদের বাসায় গিয়েছে, ওদের নিয়ে ঘুরতে গেছে। রেহানা বেশ কয়েকবার ফোন দিয়ে যেতে বললেও যায় নি। চয়ন বাড়িতে আছে, পাচে না দেখা হয়ে যায় । ইদের পরদিন লাঞ্চের পর তানভীর সাহেব মেয়েকে ডেকে পাঠান নিজের রুমে। বাবার তলব পেয়ে ছুটে যায় বাবার রুমে। তানভীর সাহেব পাশে বসিয়ে স্ত্রীর ফোনটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,
“বায়োডেটা-টা পড়ে দেখতো কেমন লাগে?”
সুরলা ভ্রু কুঁচকে পড়া শুরু করে। পাত্রের নাম জুবায়ের আরেফিন চয়ন দেখে অবাক হয়। তারপর চোখ ডলে, ভুল দেখছে কি-না। চয়নের বায়োডেটা তার বাবা মায়ের হাতে যাবে কেন! পুরো বায়োডেটায় চোখ বুলায়। পর পর কয়েকটা ছবি ও দেখে। বায়োডেটা আর ছবি চয়নেরই। সে অবাক হয়ে বলে,
“এসব কী বাবা?”

তানভীর সাহেব আর সাবিনা এতক্ষণ মেয়ের কান্ড দেখছিলেন। তানভীর সাহেব মেয়ের পছন্দের কথা জানেন না, সাবিনা জানেন। তিনি মুচকি হেসে বলেন,
“বিয়ের প্রস্তাব এসেছে এই ছেলের বাসা থেকে। কী করা যায় বলতো?”

সুরলার অবাকের মাত্রা বাড়ে। চয়নের বাড়ি থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসছে! চয়নের না ক’দিন পর বিয়ের কথা ছিল? বিয়ে কি ভেঙে গেছে? হয়তো-বা। আর তাই পাত্রী না পেয়ে তাকে বিয়ে করতে চাইছে। নাকি চয়ন আবার কোন প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছে। নিজেকে শক্ত করে নিয়েছে সে, যত যাই হোক ওই লোকের কথা ভাবনা আর, আর না তার কোন ফাঁদে পা দিব। সুরলা সরাসরি বলে দেয়,
“কী করবে আর? নিষেধ করে দাও। পাত্রকে আমার পছন্দ হয় নি। আর একটা কথা, আমার বিয়ের কথা কেন আসছে এখন? বাবা তুমি না বললে আমার পড়াশোনা শেষ করার আগে বিয়ের কথা ভাববে না?”

তানভীর সাহেব মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন,
“আমি নিষেধই করেছি, তোর মা-ও নিষেধ করেছে। রেহানা আপা জোর করছেন ভাবতে। পাত্র নাকি ভালো, এমন পাত্র হাতছাড়া করলে পরে পাবে না। তবে আমি বলেছি তোর মত থাকলে আগাব, না হয় বাদ।”
“আমার মত নেই, বাদ দিয়ে দাও?” কড়া গলায় বলে সুরলা। সাবিনা অবাক চোখে তাকান মেয়ের দিকে। হঠাৎ কী হলো? বেকে বসল কেন। দুজনের ঝগড়া টগড়া হয়েছে নাকি! তিনি বলেন,
“ভেবে বলছিস তো? আমরা নিষেধ করে দিলে কিন্তু আর হ্যাঁ বলতে পারব না।”

“ভেবেই বলছি, না করে দাও।” কড়া গলায় বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায় সুরলা।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here