কিনারে তুই পর্ব : ২৮

0
2745

মনের কিনারে তুই
লেখিকা:Tarin Niti
পর্ব:২৮

বাসায় এসে রুমে ঢুকে ইশা ফ্রেশ হতে সোজা ওয়াশরুমে চলে যায়।ওয়াশরুমে গিয়ে চুলগুলো খুলে ওরনাটা হাতে নিতে আরিয়ানের কথা মনে পড়ে!আরিয়ান ওড়নাটার যে জায়গায় ধরেছিল ইশা সেই জায়গাটায় হাত রাখে। ওড়নাটা গালের সাথে লাগায়! ইশা কেন জানি আরিয়ানকে ফিল করছ!ইশা এটা ভেবে অবাক হয় যে,ও কেন আরিয়ানকে ফিল করছে!তারপর ওরনাটা রেখে ঝরনা ছেড়ে চুলগুলো খুলে ঝরনার নিচে বসে পড়ে।
গোসল করে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে মাথা থেকে টাওয়াল খুলে ভেজা চুলগুলো ছেড়ে দে।তারপর ওর বাবার রুমের দিকে যায়।
ইশাকে দেখে ওর বাবা বলে,
“কখন আসলি? আবার গোসলও করে ফেলেছিস?”

“আব্বু একটু গরম লাগছিল তাই এসে ফ্রেশ হয়ে গিয়েছি”

“ভালো করেছিস, আয় বস”

ইশা ওর বাবার কাছে বসলে ইশার বাবা বলে,
“তোর মা হয়তো তোকে কিছু বলবে,কোথাও যেতে হবে মনে হয়”

ইশা বলে, “কোথায় আব্বু?”

“জানিনা ওর ক্লাসের টাইম হয়ে গিয়েছিল তাই আমাকে সবটা বলতে পারেনি। তুই আসলে জিজ্ঞেস করিস”

“আচ্ছা তুমি দুপুরে খেয়েছো?”

ইশার বাবা হেসে বলে, “হ্যাঁ খেয়েছি, তুইতো ভার্সিটির ক্যান্টিন থেকে খাস, কতবার বলি টিফিন নিয়ে যা কিন্তু তুইতো শুনবি না, এভাবে বাইরের খাবার খেলে তো অসুস্থ হয়ে পড়বি”

“আব্বু আমি স্কুলে পড়া থেকে দুপুরে টিফিন নেইনি,বাইরের খাবারই খাই। আর ভার্সিটিতে উঠে ব্রেক টাইমে বাড়ি থেকে টিফিন নিতে বলছো? আমি কি বাচ্চা নাকি?”

ইশার বাবা হেসে বলে, “হুম তুই তো অনেক বড় হয়ে গিয়েছিস!ভার্সিটিতে উঠেছিস।কিছুদিন পরে বিয়ে দিয়ে দিবো!”

ইশা একটু রাগিভাবে ওর বাবার সাথে ন্যাকামি করে বলে,
“তুমি আমাকে বিয়ে দেওয়ার চিন্তায় আছো!আমাকে তাড়াতে পারলে বাঁচো তাই না?”

“নারে আমিও চাই তুই সব সময় আমাদের সাথে থাকিস কিন্তু মেয়ে হয়েছিস একদিন না একদিন তো অন্যের বাড়িতে যেতেই হবে”

ইশা একটু ইমোশনাল হয়ে যায় তারপর স্বাভাবিক হতে বলে,
“আচ্ছা এসব কথা রাখো,, আমি তোমাদের ছেড়ে কোথাও যাবো না হুহ”

ইশার বাবা হেসে বলে, “আচ্ছা সেটা পরে দেখা যাবে”

তারপর ইশা ওর বাবার কোলে মাথা রাখতে রাখতে বলে, “এবার গল্প বলো!”

ইশার বাবা হেসে বলে, ” তুই না কিছুক্ষণ আগে বললি তুই বাচ্চা না। তাহলে এখন বাচ্চাদের মত গল্প শুনতে চাচ্ছিস কেন?”

“আগামী এক ঘন্টার জন্য আমি বাচ্চা।আর তুমি একঘন্টা আমাকে গল্প শোনাবে”

ইশার বাবা মেয়ের পাগলামি দেখে হাসে তারপর ইশার মাথায় হাত বুলিয়ে গল্প করতে শুরু করে।

.
সন্ধ্যাবেলায় ইশার মা-বাবা,ইশা একসাথে বসে কফি খাচ্ছে।এই সময়টাই ওরা তিনজন একসাথে হয় আর খুব আড্ডা দেয়, মজা করে। সারাদিনের গল্প বলে একজন আরেকজনকে।
কফি খেতে খেতে ইশা বলে,
“আম্মু আজকে আব্বু বললো তুমি নাকি আমাকে কিছু বলবে?”

ইশার আম্মু কফির মগে চুমুক দিয়ে বলে, “ও হ্যাঁ। ভালো কথা মনে করেছিস,তুই কুমিল্লা যাবি?”

ইশা অবাক হয়ে বলে, “কুমিল্লা..?”

“হুম তোর ফাতেমা আন্টি একটু অসুস্থ তোকে দেখতে চাচ্ছে”

“কি!!আন্টির কি হয়েছে?”

“না না সেরকম গুরুতর কিছু না,একটু জ্বর মনে হয়। এমনিতে আমরা আসার পর আর একবারও যাইনি তুই তো জানিস ওনি তোকে কতো ভালোবাসে।তাই দেখতে চাচ্ছে”

ঢাকায় আসার আগে ইশারা কুমিল্লায় থাকতো।যদিও ইশার বাবা-মা ঢাকায় বড় হয়েছে, এখানে পড়াশোনা করেছে কিন্তু ওদের বিয়ের পর কোনো এক কারণে কুমিল্লা চলে যায়।ইশা সেখানেই বড় হয়।কুমিল্লায় ওরা যে বাসায় থাকতো তার পাশের ফ্ল্যাটে ফাতেমা আন্টিরা থাকতো। উনাদের কোনো ছেলে-মেয়ে নেই।স্বামী-স্ত্রী দুইজন একা থাকত।ইশার মা স্কুলে চাকরি করতো তাই ইশা প্রায় সময় ফাতেমা আন্টির কাছে থাকতো। উনিও ইশাকে খুব ভালোবাসে।
ইশারা যেদিন চলে আসবে সেদিন উনি অনেক কান্না করেছিলো।ইশাদের ফাতেমা আন্টির সাথে যোগাযোগ ছিল।ফাতেমা আন্টির ইশাকে দেখতে খুব ইচ্ছা হয়েছিল তাই উনি ইশার মাকে বলে।ইশার মাও রাজি হয়ে যায় কারণ ইশার মা জানে ফাতেমা আন্টি ইশাকে কতোটা ভালবাসে।ইশা ওর মাকে বলে,

“আমারও আন্টির সাথে দেখা করতে খুব ইচ্ছা কিন্তু আমি একা যাবো?”

ইশার মা বলে, “কুমিল্লা তো কাছেই আর আমার স্কুলের ছুটি নেই আমি যেতে পারবো না। তুই একা যেতে পারবি না?আমি বাসে তুলে দেব, কুমিল্লা বাসস্টেশন থেকে নাজমুল ভাই তোকে নিয়ে যাবে”

নাজমুল হচ্ছে ফাতেমা আন্টির হাজবেন্ডের নাম। ইশা বলে, “হ্যাঁ পারবো তো”

ইশার বাবা বলে, “তারপর কুমিল্লা গিয়ে তো সবই চিনবি”

ইশা বলে, “হুম কুমিল্লা গিয়ে হারাবো না, চিন্তা করো না।আমি কুমিল্লার সব চিনি”

ইশার মা বলে, “হুম তাহলে কালকে সকালে রওনা দিয়ে দিস”

ইশা অবাক হয়ে বলে, “কালকে সকালেই!”

“হ্যাঁ তুই যখন রাজি তাহলে দেরি করে লাভ কি?কিছুদিন পর পরীক্ষা শুরু হলে তো যেতে পারবি না”

ইশা বলে, “আমি তাহলে রাইমাকে ফোন করে বলে দি যে কালকে ভার্সিটিতে যাবো না,কুমিল্লা যাবো”

ইশা মা বলে, “হুম মেয়েটাকে বলে দিস আর ডিনার করে ব্যাগ গুছিয়ে রাখিস”

ইশা হেসে বলে, “ওকে”

তারপর ইশা আর ওর মা-বাবা ইশার যাওয়ার ব্যাপারে কথা বলতে থাকে।ইশার মা ফাতেমা আন্টিকে কল করে বলে দে যে,ইশা যাবে।শুনে তো উনি অনেক খুশি।

ইশা রুমে এসে রাইমাকে কল দে। একবার কল দেওয়ার পর কল কেটে যায়, ইস আবার কল দে। তখন রাইমা কল রিসিভ করে বলে,
“সরি রে, রুমে ছিলাম না তাই ফোনের আওয়াজ শুনতে পায়নি,হুম বল”

ইশা ইজি চেয়ারে বসতে বসতে বলে,
“কালকে ভার্সিটিতে আসতে পারবো না রে”

রাইমা কানের সাথে ফোন লাগিয়ে, মাথাটা কাঁধের সাথে লাগিয়ে দুই হাতে কাপড় ভাজ করতে করতে বলে,
“কেন?? ”

“কুমিল্লা যাবো”

রাইমা কাজ করা থামিয়ে অবাক হয়ে হাত দিয়ে ফোন ধরে বলে, “কুমিল্লা?কার কাছে যাবি?”

“ওই তোকে ফাতেমা আন্টির কথা বলেছিলাম না? আমরা আগে যেখানে থাকতাম, উনার বাসায় যাবো”

“ওহ তা কয়দিন থাকবি?”

“বেশি না দুই দিন থেকে চলে আসবো।ভার্সিটি খোলা আবার আমি বাবা-মাকে ছাড়া বেশিদিন থাকতে পারিনা তাই বেশিদিন থাকবো না ”

“তাহলে এটা তো ভার্সিটিতে বলতে পারতি,ফোনে বললি কেনো?”

ইশা হেসে বলে, “আরে আমিই তো জানতাম না।আম্মু একটু আগে বললো!”

রাইমা একটু মন খারাপ করে বলে, “তোকে খুব মিস করবো এই দুদিন”

“আমিও রে..”

তারপর ইশা রাইমার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে ব্যাগ গুছিয়ে নেয়। তারপর তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ে। কাল সকাল সকাল উঠতে হবে তো।

.
ভোর ছয়টা,,
ইশা এখনও গভীর ঘুমে! ইশার মা ইশার রুমে এসে দেখে মেয়ে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে!ওনি ইশাকে ডেকে বলে,

“এই ইশা ওঠ..দেখ ছয়টা বেজে গেছে”

ইশা ঘুমো ঘুমো কন্ঠে বলে, “আম্মু মাত্র ছয়টা বাজে,আরো দুই ঘন্টা আছে”

“দুই ঘন্টা! নাস্তা করতে হবে, রেডি হতে হবে তারপর বাস স্টেশনে যেতে হবে তাড়াতাড়ি ওঠ”

“আর একটু ঘুমাই!”

ইশার নাটক দেখে, ইশার মা ইশাকে ধাক্কা দে ওঠতে কিন্তু ইশা আরও শক্ত করে বালিশ জড়িয়ে শুয়ে থাকে।ইশার মা কোমড়ে হাত দিয়ে বলে,

“উঠবি না?দাঁড়া ঝাড়ুটা আনছি”

ইশা লাফ দিয়ে উঠে বলে, “সকাল সকাল এসবের দরকার নেই, আমি উঠছি”

তারপর দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।ইশার মা হালকা হেসে চলে যায়।ইশা ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে ওর বাবার খবরের কাগজ পরছে।ইশাকে দেখে ওর বাবা বলে,
“আয়,,নাস্তা করবি”

ইশা টেবিলে বসলে ইশার বাবা বলে, “কয়দিন থাকবি?”

“কয়দিন আবার!দুদিন থেকে চলে আসবো।তুমি তো জানো আমি তোমাদের ছাড়া থাকতে পারি না কিন্তু ফাতেমা আন্টিকে খুব মিস করছি তাই যাচ্ছি”

ইশার বাবা হেসে বলে, ” আমাদের ছেড়ে থাকতে পারিস না তাহলে বিয়ের পর কিভাবে থাকবি”

ইশা বিরক্তি নিয়ে বলে, ” তুমি খালি বিয়ে বিয়ে করো কেন!”
তারপর ওর আম্মুকে বলে, “ও আম্মু দেখোনা,আব্বু আমাকে তাড়ানোর ব্যবস্থা করছে”

ইশার মা হেসে বলে, ” ন্যাকামো রাখ,খাবার খা দেরি হয়ে যাচ্ছে”

ইশা মুখ ভেংচি দিয়ে বলে, “আমি ন্যাকা না হুম”

তারপর খাওয়া শুরু করে।ইশার মা কিছু বলে না একটু হাসে।
খেতে খেতে ইশার মা বলে, “ব্যাগ গুছিয়েছিস?”

“হ্যাঁ আম্মু দুদিনই তো থাকবো, বেশি কিছু নেই নি”

“আচ্ছা খেয়ে রেডি হতে যা”

“হুম”
নাস্তা শেষে ইশা রুমে চলে আসে।
একটা সাদা কালো মিশ্রণে লং কুর্তি সাথে লেগিংস আর গলায় স্কার্ফ পড়ে।চুলগুলো উুঁচু করে জুটি করে বা হাতে একটা ঘড়ি পড়ে। তারপর একটু কাজল আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক দে। ইশার বেশি মেকাপ পছন্দ না।এই সাধারণের মাঝেই ওকে অসাধারণ লাগছে!
একটা ছোট সাইড ব্যাগ আর হাতে মাঝারি আকারের কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে আয়নায় নিজেকে আর একবার দেখে ইশা রুম থেকে বেরিয়ে আসে। তারপর ওর বাবাকে বলে,
“আব্বু,আমাকে কেমন লাগছে?”

ইশার আব্বু হেসে বলে, ” মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে”

ইশার মা ও রেডি হয়ে গিয়েছে স্কুলে যাওয়ার জন্য।ওনি ঘড়ি দেখতে দেখতে বলে,
“ইশা অলরেডি সাড়ে সাতটা বেজে গেছে,বাস স্টেশন যেতে আরো 20 মিনিট! তাড়াতাড়ি চল”

ইশা হেসে বলে, “হ্যাঁ আসছি”

তারপর বাবার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে।ইশার বাবা ইশার
কপালে চুমু খেয়ে বলে,
“সাবধানে যা আর খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আয়।তোকে খুব মিস করবো মামনি”

ইশা বাবার গালে একটা চুমু দিয়ে উঠে জুতা পরতে পরতে বলে,
“আমিও তোমাকে খুব মিস করবো আব্বু,আসছি আল্লাহ হাফেজ”

ইশার বাবা হেসে বলে, ” আল্লাহ হাফেজ আর পৌঁছে আমাকে একটা কল দিবি”

“হুম দিবো তুমি চিন্তা করোনা”

ইশা ওর বাবার থেকে বিদায় নিয়ে মায়ের সাথে বেরিয়ে যায়।
রিক্সায় উঠে ইশা ওর মাকে বলে,
“ফাতেমা আন্টিকে বলেছো?”

“হ্যাঁ বলেছি,নাজমুল ভাইয়া তোকে বাস স্টেশন থেকে বাসায় নিয়ে যাবে আর বাসে অচেনা কারো সাথে কথা বলবি না, কারোর দেওয়া কিছু খাবিনা কিন্তু! ”

ইশা হেসে বলে, ” আম্মু আমি কি এখনো ছোট নাকি?ভার্সিটিতে পড়ি,আমি সব বুঝি তুমি চিন্তা করো না”

ইশার মা বলে, ” কখনো তোকে এভাবে একা ছাড়িনি তো তাই চিন্তা হচ্ছে! ”

ইশা ওর আম্মুকে জড়িয়ে ধরে বলে, “নো চিন্তা ডু ফুর্তি”

ইশার মা ইশার কাঁধে হালকা থাপ্পড় দিয়ে বলে, “হুম তোর তো ফুর্তি হবেই, বেড়াতে যাচ্ছিস”

ইশা উৎফুল্ল হয়ে বলে, ” হ্যাঁ আম্মু অনেক দিন পর ফাতেমা আন্টিকে দেখতে পাবো খুব খুশি লাগছে, কিন্তু তোমাদের খুব মিস করবো”

ইশার মা কিছু বলে না শুধু হাসে। উনিও ইশাকে খুব মিস করবে।মেয়েকে কখনো এত দূরে রাখে নি!

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here