মনের কিনারে তুই
লেখিকা:Tarin Niti
পর্ব:৩২
রাত 9 টা,,
ইশা খাটের সাথে হেলান দিয়ে নিচে ফ্লোরে বসে আছে।হাঁটু ভাঁজ করে দুই হাত হাঁটুর উপর রাখা।ইশা এক দৃষ্টিতে নীচে টাইলসের দিকে তাকিয়ে আছে! আজকের ভার্সিটির কাহিনীটা ইশার মন একটু নাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু ইশা দুর্বল হতে চায়না।
ভার্সিটি থেকে আসার সময় দেখে গেটের কাছে রাইমা দাঁড়িয়েছে।আরিয়ান কি বলছে রাইমা জিজ্ঞেস করলে ইশা রাইমাকে সব বলে।সব শুনে রাইমা বলে,
“আমার কেনো জানি মনে হয়েছিল এরোকম কিছু হবে!তুই তিনদিন আসলি না দেখে উনি অনেক অস্থির হয়ে গিয়েছিল!”
তারপর কিছুক্ষন চুপ থেকে রাইমা আবার বলে,
“গতবার আমি তোকে বলেছিলাম আরিয়ান ভাইয়ের সাথে রিলেশন কর কিন্তু আমি ভুল ছিলাম।এবার আমি তোকে কিছু বলবো না।
আমি জানিনা উনি নাটক করছে নাকি সত্যি সত্যি বলছে তবে আমার মনে হয় তোর ওনাকে এতো তাড়াতাড়ি ক্ষমা করে দেয়া উচিত না। আমার সাথে কেউ এরকম করলে আমি তো তার মুখও দেখতাম না”
রাইমার কথা শুনে ইশা কিছু বলে না একটু হাসে।তারপর ওরা এই টপিক বাদ দিয়ে অন্য বিষয়ে কথা বলতে থাকে। অনেকটা পথ একসাথে এসে তারপর দুজনের বাসা দুদিকে তাই বিদায় জানিয়ে দুইজন দুই দিকে চলে যায়।
ইশা ফ্লোর থেকে উঠে পড়ার টেবিলে বসে।আজকে পড়ায় মন বসছে না।বারবার আরিয়ানের কথা ভাবছে! ইশার কিছু ভালো লাগছেনা তাই ব্যালকনিতে যায় আকাশ দেখার জন্য।
আজকে আকাশে বেশি তারা নেই,আবার কম ও না। কয়েক জায়গায় আছে কয়েক জায়গায় নেই।ছোট ছোট তারা বেশি!ইশা আকাশ থেকে চোখ সরিয়ে নিচের দিকে তাকায়, কেন জানি মনে হচ্ছে নিচে একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে।ওদের বাসাটা রাস্তার একটু ভিতরে হওয়ায় এদিকে তেমন গাড়ি আসে না। ইশা ভাবে হয়তো কারো মেহমান হবে!ও চোখ সরিয়ে নিতে গিয়ে আবার গাড়ি দিকে তাকায়। কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে!
ইশা ভালো করে তাকিয়ে দেখে একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে, ওকে হাত নাড়িয়ে হাই দিচ্ছে।ছেলেটা আর কেউ না,আরিয়ান!ইশা অবাক হয়ে আরিয়ানের দিকে তাকায়।আরিয়ান ওর বাসার ঠিকানা কিভাবে জানে!
আরিয়ানের নাম্বার ইশা ব্লক করে রেখেছে।তাই আরিয়ান অন্য একটা নাম্বার থেকে ইশার নাম্বারে কল দে।
ইশা কল রিসিভ করলে আরিয়ান ইশার দিকে তাকিয়ে বলে,
“তুমি তো আমাকে পাগল করে দিবে এভাবে শুধু টি-শার্ট পরে কেউ ব্যালকনিতে আসে?”
ইশা তাড়াতাড়ি করে নিজের দিকে তাকায়।ইশা একটা টি শার্ট আর প্লাজু পড়ে আছে! ইশা দৌড়ে রুমে চলে যায় তারপর ওরনাটা নিয়ে আবার ব্যালকনিতে আসে।ইশা চোখে কটমট করে আরিয়ানের দিকে তাকালে আরিয়ান একটু জোরে হেসে দে।ইশা আরিয়ানকে বলে,
“এখানে কেন এসেছেন?আর আপনি আমার বাসা কিভাবে চেনেন?”
“ওহ কামন ইশা, তোমার বাসার ঠিকানা বের করা আমার দু মিনিটের ব্যাপার”
“এখানে কেনো এসেছেন?”
আরিয়ানের সোজাসুজি জবাব, “তোমাকে দেখতে”
“উফ আপনি আবার কি নতুন নাটক শুরু করলে!জারা আপু কোথায়? আজকে ক্লাবে যাননি?”
ইশার কথা শুনে আরিয়ান হেসে বলে,
“না তোমাকে দেখবো বলে এখানে এসেছি”
আরিয়ানের হাসি দেখে ইশার গা জ্বলছে।জারার কথা বলতে এতো হাসি?বাহহ..!
ইশা বলে, “কেনো জারা আপুকে এখন আর ভালো লাগেনা?”
আরিয়ান ইশার দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হেসে বলে,
“তুমি কি জারাকে নিয়ে জেলাস ফিল করছো?”
ইশা থতমত খেয়ে যায় তারপর হেসে বলে,
“আমি আর জেলাস?সো ফানি! আমি তো এমনি বললাম ”
“তাহলে বারবার জারার কথা কেনো বলছো?আমাকে জারার সাথে দেখতে তোমার ভালো লাগেনা,তাই না?”
“আপনি যার সাথে ইচ্ছা তার সাথে থাকেন,আই ডোন্ট কেয়ার!”
“আচ্ছা ইশা বাসার নিচে যখন চলে এসেছি তাহলে বাসায় আসি?আঙ্কেল আন্টি কে সত্যিটা বলতে হবে”
ইশা তাড়াতাড়ি করে বলে, “না না বাসায় আসার দরকার নেই, আপনি চলে যান”
“না আমি আসছি”
আরিয়ানের উঠে আসতে নিলে ইশার বারন করে,আরিয়ান তবু সামনের দিকে এগিয়ে আসলে ইশা পাশে তাকিয়ে দেখি ব্যালকনিতে ওর ফোমের বলটা পড়ে আছে।ইশা বলটা নিয়ে আরিয়ানের দিকে ছুঁড়ে মারে!আরিয়ান বলটা ক্যাচ ধরে একটা বিজয়ের হাসি দেয়।ইশা অসহায় দৃষ্টিতে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“প্লিজ চলে যান”
আরিয়ান হেসে বলে, “ওকে ওকে যাচ্ছি। তোমাকে দেখার জন্য এসেছি দেখা হয়ে গেছে।গুড নাইট”
ইশা আরিয়ানকে গুডনাইট বলে না কল কেটে রুমে চলে আসে।
আরিয়ান চলে গেলে ইশা আবার ব্যালকনিতে এসে দেখে আরিয়ান নেই, বলটা নিয়ে গেছে।ইশার বলটার জন্য খুব আফসোস হচ্ছে। এটা ওর অনেক ফেভারিট বল।ফোমের গোল ছোট একটা বল।উপরে প্রিন্সেস আর্ট করা! এত সুন্দর বলটা আরিয়ান নিয়ে গেল?কেনো যে বলটা ছুঁড়ে মারতে গেলো?বলটার জায়গায় একটা ইট থাকলে ভালো হতো!
.
সকালে ইশা ওর মা-বাবা একসাথে বসে নাস্তা করছে।ইশা একবার ভেবেছে আরিয়ান যে কাল রাতে আসছে,সে কথাটা বলবে। কিন্তু পরক্ষণেই আবার ভাবে যদি বাবা রেগে যায়! তাহলে আরো ঝামেলা হবে তাই এর থেকে ভালো ইশাই আরিয়ানকে বুঝিয়ে বলবে।
ইশা ভার্সিটিতে এসে গেট দিয়ে ঢুকতে যাবে তখনই কেউ ইশাকে ডাকে।পেছন ফিরে দেখে আরিয়ান!আরিয়ান ইশার কাছে এসে বলে,
“ইশা চলো আজকে ঘুরতে যাবো”
ইশা “সরি” বলে চলে যেতে নিলে আরিয়ান ইশার সামনে এসে দাঁড়ায়,
“প্লিজ চলোনা”
ইশা রেগে গিয়ে বলে, “আপনি আবার আগের মত শুরু করলেন? আগে আপনার এসব কর্মকাণ্ড মেনে নিয়েছি বলে ভাববেন না এবারও মেনে নেব!প্লিজ আমার থেকে দূরে থাকুন”
“ইশা প্লিজ এভাবে আমাকে কষ্ট দিও না!”
ইশা তাচ্ছিল্য হেসে বলে, “কষ্ট?? আপনি আমাকে যে কষ্ট দিয়েছেন আমি কি আপনাকে তার থেকে বেশি কষ্ট দিচ্ছি?”
“হ্যাঁ আমি মানছি আমি ভুল করেছি।আমাকে একটা সুযোগ দেওয়া যায় না ইশা?”
“না যায় না” বলেই ইশা তাড়াতাড়ি করে হেঁটে চলে যায়।
ইশা ক্লাসে আসলে রাইমা বলে,
“ইশা আরিয়ান ভাইয়া আর কিছু বলেছে?”
ইশা রাইমার পাশে বসে বলে, “ওনি কালকে রাতে আমাদের বাসায় নিচে এসেছিলো।তুই ওনাকে আমার বাসা ঠিকানা দিয়েছিস, তাই না?”
রাইমা অবাক হয়ে বলে, “ইশা বিশ্বাস কর আমি কিছু বলিনি।হ্যাঁ তোর কুমিল্লা যাওয়ার খবরটা আমি দিয়েছিলাম কিন্তু এসব কিছু বলিনি সত্যি”
“তাহলে ওনি কিভাবে জানলো?
“সেটা তো আমিও বুঝতে পারছি না! আচ্ছা বাসার নিচে গিয়ে কি বলেছে?”
তারপর ইশা রাতের সব কথা বলতে থাকে।আসার সময় গেইটে যা কথা হয়েছে সব বলে।রাইমা অনেক্ষণ পর বলে,
“আরিয়ান ভাইয়া মনে হয় পাল্টে গিয়েছে”
ইশা বাইরের দিকে আনমনে বলে, “হয়তো!”
.
বিকাল চারটায় ইশার মায়ের স্কুল ছুটি হয়। উনি টিচার তাই একটু দেরিতে স্কুল থেকে বের হয়।পড়নে একটা হালকা আকাশী কালারের শাড়ি, চুলগুলো বেনী করা। কাঁধে ব্যাগ আর হাতে কিছু খাতা নিয়ে স্কুলের গেটের সামনে আসে।ইশার মা একটু এগোলে সামনে আরিয়ানকে দেখে থেমে যায়!
উনি একটু অবাক হয়।আরিয়ানকে এখানে আশা করেনি। আরিয়ান ইশার মার কাছে এসে মাথা নীচু করে বলে,
“আপনি হয়তো ভাবছেন আমি এখানে কেনো এসেছি, আসলে আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই”
আরিয়ান কি বলবে উনি বুঝতে পারে।ইশার মা ভেবেছিলো আরিয়ান হয়তো কোনোদিন ওনার কাছে আসবে, ক্ষমা চাওয়ার জন্য।ওনি আরিয়ানের চোখে ইশার জন্য আলাদা কিছু দেখেছে!ইশার মা এটা ভেবে হাসে যে ছেলেটা কত বোকা! নিজের মনের কথাটাই বুঝতে পারে না।আরিয়ান ওনার কাছে আসবে মনে হয়েছিল কিন্তু সেটা যে এতো তাড়াতাড়ি ওনি ভাবতে পারেনি।আরিয়ান ইশার মাকে আবার ডাকে, “আন্টি..”
“হ্যাঁ বলো,কি বলবে?”
“এখানে?আপনি আমার গাড়িতে চলেন আমি আপনাকে আজকে পৌঁছে দিই”
ইশার মা বলে, ” না না ঠিক আছে, তোমার পৌঁছে দিতে হবে না। কী বলবে এখানেই বলো”
“আন্টি প্লীজ আমার গাড়িতে চলুন”
ইশার মা আরিয়ানের গাড়ির দিকে তাকিয়ে বলে,
“এতো দামি গাড়িতে চড়া আমাদের অভ্যাস নেই”
আরিয়ান অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
” আন্টি এভাবে কেনো বলছেন? প্লিজ চলুন..”
আরিয়ান অনেক অনুরোধ করলে তাই ইশার মা বলে,
“আচ্ছা চলো শুনি তুমি কি বলবে..”
চলবে…