মনের কিনারে তুই
লেখিকা: Tarin Niti
পর্ব: ৩৪
ইশার বাবা বলে, “দাঁড়িয়ে আছো কেনো বসো। তুমি কি যেন বলবে?”
বাবার কথা শুনে ইশা বলে, “আব্বু তুমি ও ওনাকে বসতে বলছো?এই যে, আপনি এখনো যাচ্ছেন না কেনো?”
ইশার মা বলে, “ইশা কি হচ্ছেটা কি?তোমাকে কি আমরা এরকম ব্যবহার করা শিখিয়েছি?সুন্দর করে কথা বলো”
“আম্মু এই ছেলেটা তোমার মেয়েকে ভার্সিটিতে অপমান করলো আর তোমরা ওর সাথে সুন্দর করে কথা বলতে বলছো?আমি কিছু জানি না তোমরা যা ইচ্ছা করো”
বলেই ইশা নিজের রুমে গিয়ে ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দে।ইশার মায়ের সাথে যে গতকাল আরিয়ানের কথা হয়েছিল এসব ইশার মা রাতে ইশার বাবাকে বলে তাই ইশার বাবা আন্দাজ করতে পারে যে আরিয়ান কি বলবে! ইশার মা বলে,
” তোমরা কথা বলো আমি একটু কিচেনে যাচ্ছি”
ইশার মা চলে গেলে ইশার বাবা আরিয়ানকে বলে,
“বলো কি বলবে”
আরিয়ান একটু ইতস্ত করে বলে, “আসলে আঙ্কেল..”
“তুমি আমাদের কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছো তাইতো? কিন্তু শুনো বাবা একটা কথা আমার মনে হয় না সব ঠিক হবে,তুমি ইশার সাথে অনেক বড় অন্যায় করেছো”
“আমি মানছি আমি অন্যায় করেছি কিন্তু আমাকে কি একটা সুযোগ দেওয়া যায় না? আমি ইশাকে খুব ভালোবাসি”
“সেটা যদি আগে বলতে তাহলে আজকে এই দিন দেখতে হতো না”
ইশা বাবার কথা শুনে আরিয়ান মাথা নিচু করে ফেলে।ইশার বাবা বলে,
“আচ্ছা আমি যাচ্ছি, এসেছো যখন নাস্তা করে যেয়ো”
ইশার বাবা চলে যেতে নিলে আরিয়ান দাঁড়িয়ে বলে,
“আমি ইশাকে বিয়ে করতে চাই”
ইশার বাবা পেছনে ফেরে।উনি একটুও অবাক হয় না,যেন এটা হওয়ারই ছিলো!ইশার বাবা বলে,
“ইশার মা কাল রাতে আমাকে বলেছে।ইশা তো তোমার মুখও দেখতে চায় না সেখানে বিয়ে তো অসম্ভব”
“আঙ্কেল আপনি রাজি তো?”
“আমার রাজি হওয়া, না হওয়া আসল কথা না।আসল কথা হলো ইশা তোমাকে কখনো বিয়ে করবে না।তোমার প্রতি আমার রাগ ছিল কিন্তু এখন তোমার সাথে কথা বলে রাগটা একটু কমেছে। তবে হ্যাঁ তুমি ইশার র সাথে যেটা করেছো সেটা ঠিক করোনি”
“আই এম সরি আঙ্কেল”
” ও আচ্ছা,বাই দ্যা ওয়ে তোমার তো নাকি গার্লফ্রেন্ড আছে তাহলে ইশাকে কেনো বিয়ে করতে থাকে চাও?”
আরিয়ান অবাক হয়ে বলে, ” আমার গার্লফ্রেন্ড আছে কে বলেছে আপনাকে? ইশা?”
“আর কে বলবে?”
আরিয়ার ভাবতে থাকে ইশা কেনো মিথ্যা কথা বললো! তারপর হঠাৎ জারার কথা মনে পড়ে। আরিয়ান তাড়াতাড়ি করে বলে,
“আপনি হয়তো জারার কথা বলছেন।আসলে জারা আমার গার্লফ্রেন্ড না,শুধু ফ্রেন্ড।আমি ইশাকে দেখানোর জন্য জারার সাথে কথা বলতাম। সত্যি জারা আমার গার্লফ্রেন্ড না, প্লিজ বিশ্বাস করুন”
“আচ্ছা আচ্ছা.. কিন্তু তোমার সম্পর্কে তো কিছুই জানা হলো না।তোমার বাবা-মা, পরিবারে কে কে আছে?”
“আমার পরিবারে আমি আর মম, ড্যাড”
“তোমার বাবার নাম কি?”
“আমার ড্যাড….”
আরিয়ান কিছু বলতে যাবে তখনি ইশার মা এসে বলে, “পরে কথা হবে, চলো নাস্তা করবে।ছেলেটা সেই কখন এসেছে এখনো কিছু খায়নি”
ইশার বাবা বলে, “ওর সাথে একটু কথা ছিল”
“না না আর কোনো কথা নেই।চলো নাস্তা করবে চলো”
“ইশা কোথায়?”
“কোথায় আবার!নিজের রুমে। এত রাগ মাগো মা..এটা আমার মেয়ে?”
বলতে বলতে ইশার মা টেবিলের কাছে যায়। ইশার মার কথা শুনে ইশার বাবা আস্তে আস্তে বলে,
“তোমারই তো মেয়ে।তোমার কি কম রাগ নাকি?”
আস্তে বললেও আরিয়ান ইশার বাবার কথা শুনে মুচকি হাসে।ইশার বাবা বলে,
” চলো তাহলে।মেয়ের রাগতো দেখেছো এবার না গেলে মার রাগ দেখতে হবে”
“আঙ্কেল আমি কিছু খাবো না, আমার যেতে হবে”
“আমি কোনো কথা শুনতে চাই না, চলো তো”
ইশারমবাবার জোরাজুরিতে আরিয়ান খাবার টেবিলে বসে। তারপর বলে, ” ইশা খাবেনা?”
ইশার বাবা বলে, “ও তো রাগ করেছে।আর রাগ করলে সবসময় খাবারের উপরে রাগ দেখায়”
“ইশা না খেলে আমি কিভাবে..
আচ্ছা আমি কি একবার ইশার রুমে যেতে পারি?”
ইশার মা,বাবা দুজন দুজনের দিকে চাওয়া-চায়ি করে কিছুক্ষণ পর ইশার বাবা বলে, ” আচ্ছা যাও”
আরিয়ান একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে ইশার রুমের দিকে যায়। ইশা তখন এসে কোন রুমে দরজা বাড়ি দিয়েছিল আরিয়ান দেখেছে।
আরিয়ান দরজার কাছে গিয়ে আস্তে আস্তে নক করে বলে,
” ইশু!এই ইশু.. আমি এসেছি বলে রাগ করেছো?সরি,প্লিজ দরজা খোলো”
ভেতর থেকে কোনো আওয়াজ আসে না। আরিয়ান আবার বলে,
“দেখো তুমি নাস্তা করবে না বলে আঙ্কেল আন্টিও বসে আছে। প্লিজ লক্ষীটি দরজা খোলো”
বাবা-মা’র কথা শুনে ইশা ফ্লোর থেকে উঠে আসে দরজা খুলে দেয়। আরিয়ান ইশাকে দেখছে। চোখেগুলো ফুলে আছে,চুলগুলো এলোমেলো হয়ে গেছে। বুঝেই যাচ্ছে এতোক্ষণ কান্না করেছে!আরিয়ান ভেতরে এসে ইশার দু গালে হাত রেখে আদুরে গলায় বলে,
“এতক্ষণ কান্না করছিলে?”
ইশা আরিয়ানের হাত সরিয়ে নিতে গেলে আরিয়ান জোর করে ইশার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,
“কাঁদছো কেনো সোনা?”
ইশা আরিয়ানের থেকে দূরে গিয়ে বলে,
“ডোন্ট কল মি দিস ওয়ার্ড!”
” আচ্ছা সরি।চলো নাস্তা করবে,চলো”
“আমি কিছু খাব না”
“প্লিজ ইশা লক্ষীটি এরোকম করে না,চলোনা”
“বললাম তো আমি খাবো না”
” তুমি না খেলে আমি কি করে খাই?আচ্ছা আমি চলে যাচ্ছি। ভার্সিটিতে দেখা হবে”
আরিয়ান চলে যেতে নিবে তখনই ইশা পেছন থেকে বলে, “দাঁড়ান”
আরিয়ান একটা বাঁকা হাসি দিয়ে পেছন ফেরে বলে,”চলো”
ইশা একবার আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে,রুমে গিয়ে কাঠি দিয়ে চুলগুলো এলোমেলো করে বেঁধে আরিয়ানের কাছে এসে বলে, ” চলেন”
আরিয়ান মুচকি হেসে ইশার সামনের চুলগুলো পেছনে গুঁজে দে।ইশা কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারে না!
আরিয়ান আর ইশা খাবার টেবিলে একসাথে আসে।ইশার বাবা-মা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।দুজনকে খুব ভালো মানায়!তারপর ইশার মা সবাইকে খাবার দে।আরিয়ান সবার সাথে কথা বলতে বলতে নাস্তা করে।আরিয়ান ইশার।বাবা-মার সাথে অনেক ফ্রি হয়ে গিয়েছে। আরিয়ান ভেবেছে এখানে এসে অনেক অপমান সহ্য করতে হবে তাছাড়া ইশার বাবা প্রথমে যেভাবে কথা বলেছিল আরিয়ান খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ইশার বাবা আরিয়ানকে পছন্দ করেছে।আরিয়ান হাসি মুখে ইশার।দিকে তাকায়। এবার ইশা রাজি হয়ে গেলেই হবে।খেতেৃখেতে আরিয়াম ইশার মা বাবার সাথে অনেক কথা বলে।
ইশা চুপচাপ খাচ্ছে আর ওদের কথা শুনছে।
খাওয়া শেষে আরিয়ান ইশাকে বলে,
“তুমি এখন ভার্সিটি যাবে তো?আমিও যাচ্ছি।চলো,দুজনে একসাথে যাবো”
ইশা চোখমুখ শক্ত করে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে, “তার কোনো দরকার নেই আমি একাই যেতে পারবো” বলেই ইশা রুমে চলে যায়।
” ইশা…”
আরিয়ান কিছু বলতে যাবে তখন ইশার বাবা বলে,
“থাক ওকে আর জোর করো না। ও যখন তোমার সাথে যেতে চাচ্ছেনা তাহলে থাক..”
ইশার বাবার কথা শুনে আরিয়ান চুপ করে যায় আর কিছু বলে না। তারপর ইশার মা আর বাবাকে বলে বেরিয়ে যায়।
ইশা ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য রুম থেকে বেরিয়ে ডাইনিং টেবিলে এসে জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে পানি খায়।তারপর একবার ওর মা-বাবার দিকে তাকিয়ে বেরিয়ে যায়। ইশার বাবা-মা একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। ইশা আজকে রেগে আছে তাই ভার্সিটি যাওয়ার আগে ওদেরকে বলেও যায়নি।ওনারা শুধু মেয়ের রাগ দেখছে!
.
ইশা ভার্সিটিতে এসে ক্লাসে রাইমার পাশে ধপ করে বসে। রাইমা অবাক হয়ে বলে,
“কিরে কি হয়েছে?”
“আর বলিস না আজকে সকালে কার মুখ দেখে যে ঘুম থেকে উঠেছিলাম।ওহ মনে পড়েছে!ঘুম থেকে উঠে আগেই তো ওই অসভ্যটার মুখ দেখেছি”
“কে অসভ্য?কি বলছিস তুই?”
“কে আবার,তোর আরিয়ান ভাইয়া!”
“কেন?ওনি আবার কি করেছে?”
“কি করেছে? আজকে সকালে আমাদের বাসায় গিয়েছিল”
রাইমা উত্তেজিত হয়ে বলে, “কিহ?তোদের বাসায়?কি হয়েছে আমাকে সব বল”
ইশা রাইমাকে সব খুলে বললে রাইমা হাসতে হাসতে বলে,
“উনি তোকে বিয়ে করতে চায়?”
ইশার রেগে বলে, ” তুই হাসছিস?”
রাইমা কোনোরকমে হাসি থামিয়ে বলে, “কী করবো?হাসি পাচ্ছে তো!বিয়ে কবে? আমাকে দাওয়াত দিতে ভুলিস না যেন..”
ইশা এবার রাইমার।পিঠে একটা কিল বসিয়ে বলে,
“চুপ!একদম চুপ।কিসের বিয়ে?দাওয়াত খাওয়ার ইচ্ছে হলে তুই বিয়ে কর।হারামী একটা”
“আচ্ছা হয়েছে হয়েছে রাগ করতে হবে না আমিতো মজা করছিলাম।
বাই দ্যা ওয়ে,আজকে সব শুনে মনে হচ্ছে এবার আরিয়ান ভাইয়া আর নাটক করছে না,একদম সিরিয়াস।উনি বিয়ে পর্যন্ত চলে গিয়েছে!ইশা ভাব একটু”
“এতো ভাবতে পারবো না আর তুই একদম ওনার কথা বলবি না তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু ”
“আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে বলবো না।ওনার জন্য আমি আমাদের ফ্রেন্ডশিপ নষ্ট করতে চাই না।হ্যাপি?”
ইশা আনমনে বলে, ” হু…”
ইশা এখন আর রাইমার কথা শুনছে না।ও তো আরিয়ানের কথা ভাবছে..!
চলবে….