মনের কিনারে তুই
লেখিকা: Tarin niti
পর্ব: ৩৮
ইশা আর রাইমা ক্যান্টিনে বসে আছে।রাইমা খাচ্ছে আর বকবক করছে। আর ইশা চুপচাপ শুনছে।ঐদিনের পর আরো এক সপ্তাহ হয়ে গিয়েছে।তারমধ্যে আরিয়ানের বাবা দুইবার ইশাদের বাসায় গিয়েছিলো।একবার আরিয়ানের মাও গিয়েছিলো।ইশার বাবা সেই এক কথা,উনি আর ওই বাড়িতে ফিরবেন না।
আর এইদিকে আরিয়ান ভার্সিটিতে যখনই সুযোগ পায় তখনই ইশার সাথে মজা করে। ইশা উপরে বিরক্তিকর দেখালেও মনে মনে আরিয়ানের এসব কান্ড খুব ভালো লাগে।ইশা কেন জানি আবার আরিয়ানের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছে।না না এখন দুর্বল হয়ে পড়ছে,ই শা তো আগের থেকেই আরিয়ানের প্রতি দুর্বল। শুধু অভিমানের ভিড়ে চাপা পড়ে ছিল!
রাইমা ইশার দিকে তাকিয়ে দেখে ইশা এক দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।রাইমা ইশার কাঁধে একটা ধাক্কা দিয়ে বলে,
“কিরে এভাবে এক মনে বাইরে কি দেখছিস?”
রাইমার ধাক্কায় ইশার হুঁশ আসে।ইশা।রাইমার দিকে তাকিয়ে বলে, “না না কিছু না। তোর খাওয়া শেষ?”
“হুম, কিন্তু তুই তো কিছুই খেলি না!”
“আমার খেতে ভালো লাগছে না রে।চল ক্লাসে যাই”
বলেই ইশা উঠে পড়ে।রাইমা আর কিছু বলে না ইশার সাথে উঠে পড়ে।রাইমা আর ইশা ভার্সিটির করিডোর দিয়ে হাঁটছে। ইশা এদিকে ওদিক তাকাচ্ছে। আজকে সকালে আরিয়ানকে দেখেছিল তারপর আর দেখেনি। তাই কেন জানি নিজের অজান্তেই এখন আরিয়ানকে খুঁজছে।
ওরা ভার্সিটির গেটের সামনে এসে পড়ে।কিন্তু আরিয়ানকে দেখতে পায়না। ইশার কিছু না ভেবে রাইমার সাথে হেঁটে বেরিয়ে যায়।
ভার্সিটি গেটের বাইরে আসতেই ইশার ফোনে কল আসে। ইশা অবাক হয়,এমন সময় কে কল দিলো!ফোন বের করেদেখে মায়ের নাম্বার!ইশা একটু বেশি অবাক হয় কারণ এখন ওর মায়ের ক্লাস নেওয়ার টাইম।হঠাৎ এই সময় কল!
ইশাকে ফোন হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রাইমা বলে,
“কিরে আন্টি কল করছে। রিসিভ কর”
ইশা রাইমার দিকে তাকিয়ে বলে, “হুম..”
ইশা কল রিসিভ করে বলে, ” হ্যালো”
ওপাশ থেকে কোনো আওয়াজ আসে না।ইশা ওর মার অস্থিরতা বুঝতে পেরে বলে, ” হ্যালো আম্মু কি হয়েছে?”
” ই্ ইশা তোর ক্লাস শেষ না?”
“হ্যাঁ আম্মু কেনো?আর তোমার গলা এরকম শোনাচ্ছে কেনো? কি হয়েছে? ”
” তুই এক্ষুনি সিটি হসপিটাল আয়”
ইশা অবাক হয় একটু জোরে বলে, ” হসপিটাল?কেন তুমি ঠিক আছো? আব্বু ঠিক আছে?”
“এখন কিছু বলতে পারবো না। তুই তাড়াতাড়ি আয়”
ইশার মা কল কেটে দে। ইশার হাত,পা কাঁপছে।চোখে পানি টলমল করছে।রাইমা ইশার অবস্থা দেখে ইশার কাঁধে হাত রেখে গলায় বলে,
“ইশা কি হয়েছে?আন্টি কি বলেছে?তুই কান্না করছিস কেনো?
“আমি জানিনা রাইমা। আমার মনে হয় আব্বুর কিছু একটা হয়েছে!এক্ষুনি হসপিটালে যেতে হবে”
রাইমা অবাক হয়ে বলে, “আঙ্কেল হসপিটালে!আচ্ছা চল আমিও তোর সাথে যাবো”
.
আধাঘন্টা পর ইশা আর রাইমা হসপিটালে চলে আসে। নীচের ফ্লোরে এসে রাইমা ইশাকে বলে,
” আঙ্কেল কয় নাম্বার কেবিনে জানোস?”
ইশার কোনোদিকে খেয়াল নেই।ও শুধু ওর বাবার কথা ভাবছে।বাবা ঠিক আছে তো? রাইমা ইশার হাত ধরে বলে,
” ইশা প্লিজ শান্ত হ। তোর ফোনটা দে”
ইশা ব্যাগ থেকে ফোন বের করে রাইমার হাতে দিলে রাইমা ইশার আম্মুকে কল দে।
” আন্টি আমি রাইমা। আঙ্কেল কত নং কেবিনে আছে?”
“সেকেন্ড ফ্লোরে 103 নং কেবিন”
“আচ্ছা আমরা আসছি”
রাইমা ইশার কাঁধে হাত রেখে বলে, “ইশা চল”
ওরা সেকেন্ড ফ্লোরে এসে দেখে 103 নং কেবিনের সামনে বসার জাগায় ইশার মা চুপচাপ বসে আছে। এবার যেন ইশার হুঁশ আসে।ইশা দৌড়ে ওর মায়ের কাছে যায়।গিয়ে কান্না করতে করতে বলে,
” আম্মু,,আব্বুর কী হয়েছে?”
ইশার মা।ইশাকে জড়িয়ে ধরে। ইশা ওর মাকে জড়িয়ে ধরে বলে, ” আম্মু বলো না কি হয়েছে?”
” আমি জানি না ডাক্তার এখনো কিছু বলেনি”
রাইমা ইশার মার পাশে বসে বলে, “আন্টি আপনি প্লিজ এভাবে ভেঙ্গে পড়বেন না”
ইশা বলে, ” আম্মু,আব্বু হসপিটালে কেন?কি হয়েছে?”
“জানিনা। বারোটার দিকে আমাকে ফোন করে বললো আজকে নাকি ওর ভালো লাগছে না,আমি যেনো তাড়াতাড়ি বাসায় চলে যাই।তাই আমি হাফ ক্লাস করিয়েই ছুটি নিয়ে বাসায় চলে যায়।
ভালোই ছিল! আমি কিচেনে ছিলাম তখন তোর বাবার ডাকে রুমে গিয়ে দেখি ও বুকে হাত দিয়ে কেমন করছে! বলছে, বুক ব্যাথা করছে। যখন আরো বেড়ে যায় তখন উপায় না পেয়ে হসপিটালে আনি। হসপিটালে আনার পর ডাক্তাররা তাড়াতাড়ি করে ওকে নিয়ে যায়”
এইটুকু বলে ইশার মা কান্না করে দে।তারপর আবার বলে, “হঠাৎ কি হয়ে গেলো! আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা ”
ইশাও মার সাথে কান্না করে দে।এবার রাইমা বলে,
“ইশা,আন্টি আপনার এভাবে কান্না করলে তো আঙ্কেল ভালো হয়ে যাবে না। প্লিজ কান্নাকাটি করবেন না”
“ইশা তুই এভাবে কাঁদছিস কেনো?আন্টিকে সামলা”
ইশা রাইমার বুকে মুখ গুঁজে রাইমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে, ” রাইমা.. রাইমা আব্বু”
রাইমা ইশার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, “কিচ্ছু হবে না,তুই শান্ত হো”
কিছুক্ষণ পর ডাক্তার বেরিয়ে আসলে ইশা হুড়মুড় করে উঠে পড়ে। ডাক্তারের কাছে গিয়ে বলে,
” ডাক্তার আব্বু কেমন আছে?”
ইশার পিছু পিছু ইশার মা আর রাইমাও ডাক্তারের কাছে আসে। ডাক্তার একটু হাসিমুখে বলে,
“আলহামদুলিল্লাহ এখন সুস্থ আছে”
ইশার কান্নারত মুখে এক টুকরো হাসি ফুটে উঠে।ইশা ডাক্তারকে বলে, “আব্বুর কি হয়েছিলো?”
” ছোটখাটো একটা হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল”
ইশার মা উত্তেজিত হয়ে বলে, “হার্ট অ্যাটাক?”
“না না চিন্তা করবেননা।এখন সব ঠিক আছে। আসলে উনি এমনিতে সারাদিন বাসায় থাকে। মনের দিক থেকে তো সতেজতা প্রয়োজন।আমার মনে হয় উনি সারাদিন বাসায় থাকে বলে মানসিকভাবে একটু আপসেট।পায়ের অপারেশনটা হয়ে গেলে তো সব ঠিক হয়ে যেতো। আপনারা কি টাকা জোগাড় করতে পারলেন?”
ইশা মা বলে, ” টাকা কিছু জোগাড় হয়েছে। সবটা না! ”
“ওহ..আপনারা শীঘ্রই টাকার ব্যবস্থা করুন। আশা করি পায়ের অপারেশনটা হয়ে গেলে ওনার শরীর আরও অসুস্থ হয়ে যাবে”
ডাক্তার চলে যায়। ইশার মা পাশের চেয়ারে বসে পড়ে।ইশা ওর মায়ের পাশে বসলে ইশার মা বলতে থাকে,
“অপারেশনের জন্য 4 লাখ টাকার প্রয়োজন। 2 লাখ টাকা আছে। কিন্তু বাাকি 2 লাখ?”
ইশার মা চুপ করে যায়।ইশা ওর মায়ের কাঁধে হাত রেখে বলে, “আম্মু চিন্তা করো না।টাকা জোগাড় হয়ে যাবে”
ইশার বাবার কেবিন থেকে একটা নার্স বেরিয়ে আসে। ইশা নার্সের কাছে গিয়ে বলে,
“আমরা কি আব্বুর সাথে দেখা করতে পারি?”
নার্স ইশাস দিকে তাকিয়ে বলে, ” হ্যাঁ উনি এখন সুস্থ আছে।দেখা করতে পারেন। তবে বেশি মানুষ যাওয়া যাবে না”
ইশা হাসি মুখে বলে, ” বেশি না আমি আর আম্মু যাবো”
” আচ্ছা তাহলে যান”
রাইমা ইশা আর ইশার মায়ের কাছে গিয়ে বলে, “আন্টি আপনারা ভেতরে যান। আমি এখানে আছি”
ইশা আর ওর মা ভেতরে গিয়ে দেখে,ইশার বাবা চোখ খুলে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। ওদেরকে দেখে ওনার মুখে হাসি ফুটে উঠে।এ দুইজনই তো ওনার আপনজন। উনার অসুস্থতায় দুজনের চোখেমুখে কত অস্থিরতা! বুঝাই যাচ্ছে দুইজন কিছুক্ষণ আগে কান্না করেছে।ইশার বাবার মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে।ইশার ওর বাবার পাশে বসে হাত ধরে বলে,
“উফ তুমি তো ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে। জানো আমরা কতো টেনশন এ ছিলাম?”
মেয়ের কথা শুনে ইশার বাবা হেসে দে। তারপর ইশার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে, ” কান্না করছিলি? ”
“হু..”
“আচ্ছা আর কান্না করতে হবে না।আমি তো ঠিক আছি”
” তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠো আব্বু”
ইশার মা ইশার পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলো। ইশা উঠে দাঁড়িয়ে মাকে বসতে দিয়ে বলে,
“আম্মু তুমি বসো আমি রাইমার কাছে যাচ্ছি বাইরে”
ইশা একবার হাসি মুখে ওর বাবার দিকে তাকিয়ে বাইরে চলে যায়।এখন একটু মা-বাবাকে সময় দেয়া দরকার।বাবা তো সুস্থ আছে। এখন ইশা অনেক খুশি।ইশাকে বাহিরে আসতে দেখে রাইমা বলে,
“এতোক্ষনে মেয়ের মুখে হাসি ফুটেছে”
ইশা রাইমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “থ্যাংকস রে। আমার পাশে থাকার জন্য”
রাইমা একটু রাগ দেখিয়ে বলে, “আমি না তোর বান্ধবী।আমাকে থ্যাঙ্কস দিচ্ছিস?যা তোর সাথে কথাই বলবো না”
ইশা একটু হেসে বলে, ” আচ্ছা হয়েছে আর বলবো না।রাগ করিস না বনু”
চলবে…