মনের কিনারে তুই
লেখিকা: Tarin Niti
পর্ব: ৪৫
রাতে ইশা চুপিচুপি দরজা খুলে ছাদে চলে যায়।ইশাকে ওর মা,বাবা আরিয়ানের মা,বাবা অনেকক্ষণ ডিনারের জন্য ডেকে গেছে কিন্তু ইশা দরজা খোলে নি।ইশা জানে না আজকে ও খায়নি বলে বাসায় কেউ ডিনার করে নি।
ইশা ছাদে উঠে চুপচাপ রেলিং ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।ইশার কিচ্ছু ভালো লাগছেনা। ওর মন কি চাইছে ও নিজেই বুঝতে পারছে না।আরিয়ান ওর স্বামী!ইশা আজ থেকে কারোর স্ত্রী!ভাবতেই অবাক লাগছে। ইশা ভাবছে ওর একটা সংসার হবে? ধুর ও মেনে নিলে তবেই তো সংসার হবে!ইশা ছাদে এসেছে একটু মনটাকে শান্ত করার জন্য।কিন্তু যেখানেই যায় সেখানেই শুধু আরিয়ানের কথা ভাবতে থাকে!
অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর হঠাৎ ইশা অনুভব করে ওকে কেউ আস্তে আস্তে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরছে। ইশা কেঁপে উঠে পেছনের মানুষটাকে ধাক্কা দেয়। কিন্তু পেছনে মানুষটা একচুলও নড়ে না! সেভাবেই ইশাকে জড়িয়ে ধরে রেকে ইশার ঘারে মুখ গুজে দিয়ে বলে,
“উমম ধাক্কা দিচ্ছো কেনো?”
ইশা বুঝতে পারে এটা আরিয়ান।ইশা রাগী স্বরে বলে,
“আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরলেন কেনো?ছাড়ুন”
“আমি আমার বউকে জড়িয়ে ধরেছি।আমার অধিকার আছে”
“কিসের অধিকার? ছাড়ুন বলছি”
“আমার বউকে আমি একশোবার জড়িয়ে ধরবো তুমি ছাড়তে বলছো কেনো?”
“কারণ আপনার বউ তো আমি।আমি ছাড়তে..”
ইশা এটুকু বলে চুপ হয়ে যায়। আরিয়ান ইশাকে আরো ভালোভাবে জড়িয়ে ধরে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলে, “কি?বলো? তুমি আমার বউ!”
“না আমি আপনার বউ না,,ছাড়ুন”
কিছুক্ষণ পর আরিয়ান ইশাকে ছেড়ে ইশার পাশে এসে দাঁড়ায়। তারপর নিজের কাঁধ দিয়ে ইশার কাঁধে ধাক্কা দিয়ে বলে,
“আজকে কি জানো?”
ইশা বিরক্তি নিয়ে বলে, ” কি??”
আরিয়ান ইশার কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,
“আজকে আমাদের বাসর রাত”
ইশা হা করে আরিয়ানের দিকে তাকালে আরিয়ান দুষ্টু হেসে চোখ টিপ দিয়ে বলে,
“কি?এভাবে তাকাচ্ছো কেনো?সকালে তো আমাদের বিয়ে হলো,তাহলে আজকের রাতটা আমাদের বাসর রাত।তাই না?”
ইশা চোখ ছোট ছোট আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে, “আপনার মতলব ভালো ঠেকছে না”
তারপর ইশা চলে নিলে আরিয়ান ইশার হাত ধরে আটকে দে।ইশা পেছন ফিরে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“কি হলো? আবার হাত ধরেছেন কেনো?”
আরিয়ান হেচকা টান দিয়ে ইশাকে নিজের কাছে এনে জড়িয়ে ধরে। ইশা প্রথমে ছোটার জন্য জোড়াজোরি করলেও পরে আরিয়ানের বুকে শান্ত হয়ে যায়। ইশা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে আর আরিয়ানের শক্ত করে ইশাকে জড়িয়ে ধরে আছে। ইশার কেন জানি আরিয়ানের বুকে মাথা রাখতে খুব ভালো লাগছে! আগেও অনেক ভালো লাগতো।ওদের যখন রিলেশন ছিলো ইশা প্রায়ই আরিয়ানকে এভাবে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রাখতো।আজকে অনেকদিন পরে ওই ফিলটা পাচ্ছে।
অনেকক্ষণ পর আরিয়ান ইশাকে ছেড়ে সোজা করে দাঁড় করিয়ে ইশার দুগালে হাত রেখে মায়াবী চোখে তাকিয়ে বলে,
“বউ !!”
আরিয়ান ‘বউ’ বলায় ইশা একটু কেঁপে ওঠে।কি আছে ওই শব্দটাতে যা ইশার মনকে নাড়িয়ে দিয়েছে।ইশার হাত পা শিউরে।ইশা আরিয়ানের চোখের দিকে তাকায়। আরিয়ানও ইশার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।কিছুক্ষণ পর ইশার হুস আসলে ও আরিয়ান থেকে দূরে সরে যায়।তারপর চলে যেতে নিলে আরিয়ান আবার ইশাকে ডাকে।
ইশা পেছনে ফিরলে আরিয়ান ইশার দিকে ওর ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বলে,
“তোমার ফোন!”
ইশা ফোন হাতে নিয়ে আরিয়ানকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ব্যস্ত পায়ের নিচে নেমে যায়।আরিয়ান একদৃষ্টিতে ইশার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।তবে আজকে আরিয়ানের ভালো লাগছে কারন আজকে আরিয়ান ইশাকে টাচ করেছে কিন্তু ইশা কিছু বলে নি!
.
পরদিন সকালে সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে নাস্তা করছে। ইশাকে ওর মা আর আরিয়ানের মা অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে নিচে এনেছে খাবার জন্য।ইশাও গতকাল দুপুর থেকে কিছু খায়নি,অনেক খিদে পেয়েছিল তাই আর বারণ করেনি।খেতেখেতে আরিয়ানের বাবা গম্ভীরমুখে আরিয়ান কে প্রশ্ন করে,
“তোমাদের বিয়েতে কে কে সাক্ষী ছিলো?”
“রিহান, জয়,তিথি,রিহি,জোবায়ের,রিফাত,ফাহিম।তারমধ্যে রিহান আর তিথি সাক্ষী হিসেবে সাইন করেছে”
আরিয়ানের বাবা বিরক্তি মুখে বলে,
“সব নষ্টের মূল ওই বন্ধুগুলা।এক একটা বাদর”
আরিয়ান ওর বাবার কথা শুনে হাসে।ইশা চুপচাপ সবার কথা শুনছিলো।আরিয়ানের বাবা ইশার বাবাকে বলে,
“তো এখন কি ডিসিশন নিলি?”
ইশার বাবা বলে, “কি আবার? ওদের বিয়েতে তো হয়েই গিয়েছে।এখন আর কি বলবো!”
ইশা ওর বাবার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে,
“তারমানে তোমরা সব মেনে নিয়েছো?”
ইশার মা বলে,
“দেখ মা তোদের বিয়ে তো হয়ে গিয়েছে। আবেগি না হয়ে, বাস্তবে ভাব।তোদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে এখন কিছু করতে পারবি?”
ইশা খাওয়া বন্ধ করে বলে, “ডি..”
ইশা কে আর কিছু বলতে না দিয়েই ইশার মা একটু রাগী স্বরে বলে,
“খবরদার ডিভোর্সের কথা মুখেও আনবি না।আরিয়ান তোর স্বামী আর এটা তোকে মেনে নিতে হবে”
ডিভোর্সের কথা শুনে আরিয়ান ইশার দিকে চোখ তুলে তাকায়। ইশা ওর মায়ের ধমক শুনে চুপ হয়ে গেছে।
খাওয়া শেষে আরিয়ানের বাবা বলে,
“আরিয়ান তোদের বিয়ে রেজিস্ট্রি পেপারটা নিয়ে আয় তো”
আরিয়ান ‘আনছি’ বলে উপরে রুমে চলে যায়।ও আজকে সকালে রিহানের থেকে সবগুলো পেপার নিয়ে এসেছে।আরিয়ান বিয়ের ব্যাপারে এনে ওর বাবার হাতে দেয়।আরিয়ান বাবা পেপারগুলো দেখে বলে,
“সব তো পাকাপোক্ত ভাবেই করেছিস দেখছি”
বাবার কথা শুনে আরিয়ান হাসে।ইশা বলে,
“আমি বুঝতে পারছি না তোমরা উনাকে কিছু বলছো না কেনো? উনি এভাবে আমাকে জোর করে বিয়ে করলো!তোমরা কিছু বলবে না?”
ইশার কথা শুনে ওর মা বলে, “কে বললো আরিয়ানকে কেউ কিছু বলেনি?কালকে ওর বাবা ওকে অনেক বকা দিয়েছে।আর কি করবে বল?এত বড় ছেলের গায়ে হাত তুলবে?”
মায়ের কথা শুনে ইশা চুপ হয়ে যায়।আরিয়ানের মা ইশার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“আমার ছেলেটা খারাপ না রে,ওকে মেনে নে।ও তো তোকে ভালোবাসে ”
ইশার কিছু না বলে উপরে চলে যায়। আজকের ভার্সিটিতে যেতে মন চাচ্ছে না।আজকে ইশা সারাদিন একা থাকতে চায়।তাই চুপচাপ রুমে গিয়ে ব্যালকনিতে দেয়াল ঘেষে বসে পড়ে।
ইশা যাওয়ার পর সবাই যে যার কাজে চলে যায়। আরিয়ান জানে ইশা আজকে ভার্সিটিতে যাবে না, তাই ওর ও যেতে ইচ্ছে করছে না।তখন আরিয়ানের বাবা বলে,
“বিয়ে তো করে নিলে!তা বউকে খাওয়াবি কি?”
“কেনো?তুমি আছে কি করতে? ”
“আমি তোর বউকে কেনো খাওয়াবো?”
“তুমি চিন্তা করো না অনার্স শেষে আমি অফিসে জয়েন করবো”
আরিয়ানের কথা শুনে আরিয়ানের বাবা হেসে চলে যেতে নে তারপর আবার পেছন ফিরে বলে,
“আজকে ভার্সিটিতে যাবি?”
আরিয়ান একটু মাথা চুলকে বলে, “না যেতে ইচ্ছে করছে না”
“তাহলে অফিসে চল।একটা প্রজেক্ট নিয়ে একটু ঝামেলায় আছি”
আরিয়ান একটু ভেবে বলে, “আচ্ছা চলো”
আরিয়ান মাঝে মাঝেই ওর বাবার অফিসে যায়।ওর বাবার কাজে হেল্প করে।আজকে যেহেতু ভার্সিটিতে যাবেনা তাই আফিসে যাওয়াই ভালো।
.
ইশা অনেকক্ষণ ব্যালকুনিতে বসে থেকে রুমে এসে ফোন হাতে নে।ইশার এখন কেন জানি রাইমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে।রাইমার কাছে ইশয় সব কিছু শেয়ার করে।সব মনের কথা বলে।কিন্তু আজকে তো ভার্সিটি যাবেন আর রাইমার সাথে দেখাও হবে না। তাই ইশা রাইমাকে কল করে। রাইমা তখন মাত্র বাসা থেকে বের হয় ভার্সিটি যাওয়ার জন্য।এমন সময় ওর ফোন বেজে ওঠে।
রাইমা ফোন হাতে নিয়ে দেখে ইশার কল!রাইমা কল রিসিভ করে বল,
“হ্যাঁ বল”
“তুই একটু বাসায় আসতি পারবি?”
রাইমা অবাক হয়ে বলে,
“কেনো তুই ভার্সিটিতে যাবি না?
“না,,তুই একটু আমাদের বাসায় আয় না প্লিজ..”
“আচ্ছা আমি আসছি কিন্তু তোদের নতুন বাসার ঠিকানা তো আমি জানিনা”
“আমি ঠিকানা সেন্ড করছি তুই সাবধানে আয়”
তারপর ইশা রাইমাকে মেসেন্জারে ঠিকানা সেন্ড করে দে।প্রায় আধাঘণ্টা পর রাইমা ইশাদের বাড়িতে আসে।রাইমা তো বাড়ি দেখে হা হয়ে যায়! এত বড় বাড়ি?ও জানতো আরিয়ানরা অনেক ধনী কিন্তু এতো ধনী ভাবতে পারেনি। রাইমা ভাবে ইশা এতো বড় বাড়ির মেয়ে জেনেও ওর মধ্যে কোনো অহংকার নেই। ও আগে যেমন ছিল এখনো তেমনি!
রাইমা ভেতরে গিয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে,কেউ আছে কিনা দেখছে।রাইমা এই বাড়ির কাউকেই চেনে না।কিছুক্ষণ পর ইশার মা রুমে যাওয়ার সময় দেখে রাইমা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ইশার মা হেসে রাইমার দিকে এগিয়ে যায়। তারপর বলে,
“আরে রাইমা তুমি?ইশা আসতে বলেছে?”
রাইমা ইশার মাকে দেখে একটা স্বস্তির হাসি দেয়।এতক্ষণ ওর খুব ভয় লাগছিলো।তারপর বলে,
“জি আন্টি”
“আসো তোমাকে ইশার রুম দেখিয়ে দি”
রাইমা ইশার মায়ের পেছনে পেছনে ইশার রুমের দিকে যায়।রুমের সামনে এসে ইশার মা বলে,
“ইশা ভেতরে আছে, যাও”
তারপর ইশার মা চলে গেলে রাইমা ইশার রুমের দরজা নক করে।
চলবে…