মনের কিনারে তুই
লেখিকা:Tarin Niti
পর্ব: ৪৬
রাইমা ইশার রুমের দরজা নক করে বলে,
“ইশা আমি রাইমা।দরজা খুল”
রাইমা বলার কিছুক্ষণের মধ্যেই দরজা খুলে যায়। ইশা রাইমাকে দেখে হেসে বলে,
“আয় ভেতরে আয়”
রাইমা ভেতরে গিয়ে ইশার রুমটা দেখছে।অনেক সুন্দর আর অনেক বড়ও।রাইমা খাটে বসতে বসতে বলে,
“বাব বাহ! তোর রুমটা তো হেব্বি দেখতে”
ইশা কিছু বলে না চোখ মুখ কালো করে রাইমার পাশে বসে। রাইমা ইশাকে দেখে ভ্রু কুচকে বলে,
“কি হয়েছে?”
“রিহান ভাই তোকে কিছু বলেনি?”
“না তো!কেনো কি হয়েছে?”
ইশা কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে, “রিহান ভাইয়াকে কত ভালো ভাবতাম আর উনি আমার সাথে এরোকম বেইমানি করলো!”
“কি করেছে রিহান?”
ইশা রাইমাকে কে সব খুলে বলে। কালকে আরিয়ান ওকে জোর করে কাজী অফিসে নিয়ে গেছে।ইশা রিহানের কাছে সাহায্য চেয়েছে কিন্তু রিহান সাহায্য করেনি উল্টো বিয়ে করতে বলে।তারপর আরিয়ান ওকে বিয়ে করে!ইশা সব খুলে বলে।তারপর ইশা রেগে বলে,
“তোর বয়ফ্রেন্ডকে যদি একবার হাতের কাছে পাই না?আমি মেরে তক্তা বানিয়ে দেবো! তখন তুই কিছু বলতে পারবিনা”
ইশার কথা শুনে রাহিমা জোরে হেসে দেয়।রাইমা হাসতে হাসতে শেষ!ইশা ভেবেছিল রাইমা রেগে যাবে কিন্তু এর তো উল্টো রিয়েকশন!ইশা কাঁদো কাঁদো মুখ করে রাইমাকে বলে,
“তুই হাসছিস?”
রাইমা হাসি থামিয়ে বলে, ” সরি হাসার জন্য”
“তোরা কেউ ভালো না।সবাই উনার পক্ষে!প্রথমে তোর বফ আমাকে সাহায্য করল না।তারপর মা বাবা ওনাকে মেনে নিলে।এখন তুই হাসছিস!”
রাইমা হাসতে হাসতে ইশার দিকে তাকিয়ে বলে,
“আমার মনে হয় তুই তো সোজাভাবে বললে রাজি হবি না,তাই উঠিয়ে নিয়ে বিয়ে করেছে।ইশশ..আমাকেও যদি রিহান এভাবে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করতো!”
রাইমার কথা শুনে ইশা রাইমাকে বিছানায় ফেলে ওর উপর উঠে জোরে জোরে ঘুসি দিতে থাকে। আর এদিকে রাইমা তো হাসতে হাসতে শেষ!
অনেকক্ষণ পর দুজন ক্লান্ত হয়ে ফ্লোরে বসে পড়ে। রাইশা ইশার পাশে বসে বলে,
“তাই এখন কি করবি?”
ইশা নিচের দিকে তাকিয়ে বলে, ” আমি উনাকে মেনে নিতে পারবোনা”
“কেনো?”
ইশা রাইমার দিকে থাকে।রাইমা আবার বলে,
“তুই তো উনাকে ভালবাসিস আর আমার মনে হয় না উনার ভুলের জন্য তুই এখনো উনার উপর রেগে আছিস।তাহলে স্বামী হিসেবে মানতে পারবি না কেনো?একটা কারণ তো বল..”
“জানিনা!আমি কিছু জানিনা।তোকে আসতে বললাম সবকিছু খুলে বলে মনটাকে শান্ত করবো বলে আর তুই উল্টো উনার কথা বলছিস। তুই যেমন তোর বয়ফ্রেন্ড তেমন”
“হাহাহা…বাই দা রাস্তা রিহান তো আমাকে কিছু বললো না!”
“কি বলবে? নিশ্চয় ভয় পেয়েছে তুই সব শুনে যদি ব্রেকআপ করে দিস। আর এদিকে তুইতো খুশি হয়েছিস সব শুনে”
“এই আমি খুশি তোকে কে বললো? হ্যাঁ মানছি তোর সাথে অন্যায় হয়েছে,এভাবে বিয়ে করা ঠিক হয়নি। কিন্তু আরিয়ান ভাই তো এখন তোর স্বামী।তো আর কি করার আছে?”
“তোকে কিছু করতে হবে না। ফাজিল মেয়ে একটা ”
“ওই আমি আজকে তোর কথা শুনে ভার্সিটিতে না গিয়ে ক্লাস মিস করে তোর এখানে এসেছি, আর তুই আমাকে ফাজিল বলছিস? তুই ফাজিল”
রাইমা ইশা ওরা দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে চুপ হয়ে যায়। কিছুক্ষন পর দুজনেই হেসে দেয়।অনেকক্ষণ পর রাইমা বলে,
“তোদের বাড়িটা ঘুরিয়ে দেখাবি না?”
ইশা বলে, “আমিই এখনো কোন ভালোভাবে দেখলাম না।আচ্ছা চল”
ওরা দু’জন নিচে এসে দেখে ইশার মা আর আরিয়ানের মা রান্না করছে। রান্নাঘরে কয়জন সার্ভেন্টও আছে। রাইমাকে দেখে ইশার মা হেসে বলে,
“রাইমা আজকে প্রথম তুমি এই বাড়িতে আসলে,কি খাবে বলো”
রাইমা হেসে বলে, “না না আন্টি এখন কিছু খাবো না। বাই দা ওয়ে আন্টি বাসার কাউকে দেখছি না যে?”
আরিয়ানের মা হেসে বলে, ” ইশার বাবা রুমে আর আরিয়ান ওর বাবার সাথে অফিসে গিয়েছে”
“আরিয়ান ভাইয়া অফিসে?”
ইশা আরিয়ানের মায়ের কথা শুনে একটু অবাক হয়। আরিয়ান অফিসে গিয়েছে ও জানতো না!আরিয়ান যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাক,তাতে ওর কি?রাইমা কথা শুনে আরিয়ানের মা বলে,
“হুম,,ও তো মাঝে মাঝেই অফিসে যায়”
ইশা রাইমাকে নিয়ে ছাদে যায়।তারপর একে একে বাগানসহ সব ঘুরে দেখায়।রাইমা দুপুর পর্যন্ত থেকে খাওয়া-দাওয়া করে,গল্প করে তারপর বাসায় চলে যায়। আরিয়ান সাথে দেখা হয় না।রাইমা চলে যাওয়ার পর ইশা ওর রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দে।আর রুম থেকে বের হয়না!
.
ইশা রাতে ডিনার করে শোয়ার প্রস্তুতি নিতে যাবে তখন ইশা মা ওর রুমে আসে।ইশা মাকে দেখে হাসি দে।ইশার মা ইশাকে খাটে বসিয়ে ইশার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“ইশা যা হওয়ার হয়ে গেছে এখন তো সবটা মেনে নিতে হবে নাকি? এভাবে তো জীবন চলে না”
মায়ের কথা শুনে ইশার মুখটা মলিন হয়ে যায়।তারপর বলে,
“আম্মু আমি পারছিনা”
“কেনো?”
ইশা ওর মাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “জানিনা!”
অনেকক্ষণ ওরা দুজন চুপচাপ থাকে। তারপর ইশার মা বলে, “আজ থেকে তুই আরিয়ানের সাথে আরিয়ানের রুমে থাকবি”
ইশা অবাক হয়ে মায়ের দিকে তাকায়ে বলে,
“হোয়াট!!!অসম্ভব”
“অসম্ভব কেন? আরিয়ান তোর স্বামী ইশা।স্বামী স্ত্রী আলাদা থাকবি কেনো?”
” প্লিজ আমাকে জোর করো না। আমি উনার সাথে..? কখনো সম্ভব না”
“সম্ভব না কেনো? তোদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ভাবি আজকে এটা নিয়ে অনেক দুঃখ করেছে।উনার একমাত্র ছেলে বিয়ে করেছে কিন্তু বউ পাত্তাই দেয় না,আলাদা থাকে! তোরা দুজন এভাবে আলাদা থাকিস আমাদের ভালো লাগে না”
“আম্মু প্লিজ তোমরা আমার দিকটা একটু বোঝ”
ইশার মা দাঁড়িয়ে বলে, “আমি আর কিছু বলতে চাই না। তুই আজ থেকে আরিয়ানের রুমে থাকবি।তোর যা যা লাগে ওই রুমে সিফ্ট কর।তোর বাবার ওষুধের সময় হয়ে গিয়েছে,আমি আসছি”
ইশা আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ইশার মা চলে যায়।ইশা বসে বসে ভাবছে ওকি আরিনের রুমে যাবে?নানা অসম্ভব!ও আর আরিয়ান কখনো একসাথে থাকতে পারে না।
আচ্ছা পারে না কেনো?ওরা তো এখন স্বামী স্ত্রী।ইশা কি করবে নিজেই বুঝতে পারছে না। অনেক ভেবে ইশা চুপচাপ রুমের লাইট অফ করে শুয়ে পড়ে।দরজা লক করতে ভুলে যায়।
প্রায় 1/2 ঘণ্টা পর আরিয়ান ইশার রুমে আসে। আজকে অফিস থেকে ফিরে ইশাকে দেখে নি কারন আজকে ইশা রুমে ডিনার করেছে।আরিয়ানের মন ছটফট করছিলো!
আরিয়ান আস্তে করে দরজা খুলে ইশার রুমে ঢুকে।দেখে ইশা বেডে ঘুমিয়ে আছে। আরিয়ান ইশার পাশে বসে ইশাকে দেখে। ইশার মুখের উপর চুলগুলো লেপ্টে আছে। আরিয়ান আলতো হাতে ইশার মুখ থেকে চুলগুলো সরিয়ে দেয়। তারপর ইশার গালে কিস করে।আরিয়ান অনেকক্ষণ ইশার দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর উঠে চলে যেতে নিলে আবার ফিরে এসে ইশাকে আস্তে করে কোলে তুলে নেয়!ইশা এখনো ঘুমিয়ে আছে।আরিয়ান ইশাকে নিয়ে ওর রুমে যায়।তারপরই ইশাকে বেডে শুয়াতে নিলে ইশার ঘুম ভেঙ্গে যায়।ইশা প্রথমে কিছু বুঝতে পারেনা তারপর আরিয়ানকে দেখিয়ে উঠতে নিলে আরিয়ান ইশাকে বাঁধা দিয়ে বলে,
“সরি তোমার ঘুম ভাঙ্গানোর জন্য। ওঠো না,শুয়ে পড়ো”
ইশা চারদিক তাকিয়ে দেখে এটা আরিয়ানের রুম
ইশা অবাক হয়ে বলে, “আমি এখানে কেনো?”
“আমি এনেছি তাই”
“আপনি আমাকে এখানে কেনো এনেছেন”
“বিয়ে করেছি বউ ছাড়া থাকতে কি ভালো লাগে নাকি?আর আমার বউটা তো নিজে নিজে আসবেনা তাই আমি কোলে করে নিয়ে আসলাম। এখন আসো দেখি শুয়ে পড়”
“অসম্ভব।আমি আপনার সাথে ঘুমাবো না”
ইশা উঠতে নিলে আরিয়ানি ইশার পাশে শুয়ে ইশাকে টেনে বুকে জড়িয়ে নেয়।তারপর বলে, “তোমার এখানেই ঘুমোতে হবে।আমার সাথে!”
ইশা আরিয়ানের থেকে সরে যেতে যেতে বলে,
“না আমি আপনার সাথে ঘুমাবো না। আপনি আমাকে এভাবে জোর করতে পারেন না”
আরিয়ানের ইশাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে, “আমি সব পারি বউ!এখন কি চুপচাপ ঘুমাবে নাকি আরো কিছু করবো?”
ইশা অবাক হয়ে বলে, “আরো কিছু করবেন মানে?”
আরিয়ান দুষ্টু হেসে বলে, “মানে..”
আরিয়ান আর কিছু বলতে পারেনা ইশা আরিয়ানের বুকে মুখ গুজে বলে, “প্লিজ কিছু করবেন না আমি এখানেই ঘুমাচ্ছি”
আরিয়ান বাঁকা হেসে বলে, “এই তো,,গুড গার্ল”
ইশার কেন জানি আরিয়ানের বুকে ঘুমোতে ভালো লাগছে! এতদিন তো মাঝে মাঝে আরিয়ানকে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রেখেছে।আর আজকে এভাবে আরিয়ান কে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মাথা রেখে ঘুমাতে কেমন যেন ফিল হচ্ছে!ইশা নিজেই বুঝতে পারছে না।
আর এদিকে আরিয়ান ইশাকে জড়িয়ে ধরে হাসে,ওর আর কিছু চাই না।ইশাকে সারাজীবন এভাবে আগলে রেখে ঘুমোতে চায়।
চলবে…