#কিশোরী_মাফিয়া
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
#পর্ব_৮
ঈদনি আকাশের ঠোঁটের উষ্ণ ছোঁয়া পেয়ে পুরোপুরি শান্ত হয়ে যায়!সে যেনো পাগলামি বন্ধ করার মেডিসিন পেয়ে গেছে!আকাশের মেডিসিনের কার্যকারিতা তার উপরে এতো পরিমাণে প্রভাব ফেলে,যে সে পাগলামির রাজ্য ছেড়ে অন্য কোনো রাজ্যে গিয়ে পাড়ি জমায়।
ঈদনি চুপচাপ আকাশের স্পর্শ অনুভব করছে।অবশ্য সে চুপচাপ থাকলেও তার ভিতরটা টর্নেডোর মতন উতাল পাতাল করছে!সে যেনো নিজের ভিতরটাকে কোনো ভাবেই শান্ত করছে পারছে না!তখনি আকাশ তাঁকে ছেড়ে দেয়।আর বলে…
–এবার ঘুমিয়ে পড়ো।
.
ঈদনি চুপচাপ আকাশের কথা মেনে নেয়।সে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।কিন্তু তার ভিতর থেকে মাতাল প্রবাহ এখনো পুরোপুরি বের হয়নি।এখনো তার ভিতরে আকাশের স্পর্শের রেষ রয়ে গিয়েছে।সে মনে মনে চিন্তা করে….
–কে আমি!আমি কি সত্যিই সেই ঈদনি,যে কিনা এই লোক’কে প্রথম দেখায় ছুরি মেরেছিলাম!আর আজকে সেই লোকের স্পর্শেই আমার ভিতরটা উতাল পাতাল করছে!নাহ,আমি তো আর আমি নেই!বদলে গেছি আমি!কারন আমার শরীরের সমস্ত রক্ত সব সময় রাগের কারনে উত্ত্যক্ত হয়ে থাকতো!আর আজো রক্ত উত্ত্যক্ত হয়ে আছে।কিন্তু সেটা ভিন্ন কোনো কারনে!
নাহ আমার মাঝে পরিবর্তন এসেছে!
.
ঈদনি এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে।
অন্যদিকে সকাল বেলায় ঈদনির আগে আকাশের ঘুম ভাঙ্গে।সে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়।পরে ঈদনিকে ডাক দেয়।
–এই ঈদনি ঘুম থেকে উঠো।তোমার স্কুলে যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে।সো উঠে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।পরে তোমাকে আর দিয়াকে স্কুলে দিয়ে এসে আমি আমার কলেজে যাবো।
.
আকাশের ডাকে ঈদনি ঘুম থেকে উঠে যায়।কিন্তু সে আকাশকে বলে…
–না,আপনার আমাদেরকে স্কুলে দিয়ে আসতে হবে না।আমি আর দিয়া মিলে চলে যেতে পারবো।
–নাহ তা হচ্ছে না।আমি তোমাদেরকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে এসেই কলেজে যাবো।
–এই খচ্চর চুপ একদম।আমি বলেছি না আমরা আমাদের মতন চলে যেতে পাবরো।আমাদেরকে তোর দিয়ে আসতে হবে না।তাও কেন তুই স্কুলে দিয়ে আসার জন্য বাড়াবাড়ি করছিস?সেই মেয়ের সাথে কথা বলার জন্য নাকি?তুই কি ভেবেছিস আমি কিছু বুঝি না?
–ঈদনি দেখো তেমনটা কিছুই নয়।
–এই রাখ তোর তেমন টেমন,তোর তেমনের গুষ্টি মারি আমি।আমাদেরকে তোর স্কুলে দিয়ে আসতে হবে না।
আমরা একাই স্কুলে যাবো।
–ঈদনি তুমি রাগ দেখাও আর যাই করো,তোমাদেরকে আমি একা ছাড়ছি না।কারন আমার পিছনে অনেক শত্রু লেগে আছে।তারা যে কোনো সময় তোমার আর দিয়ার ক্ষতি করে দিতে পারে।
–এই একদম বাহানা দেখাবি না আমাকে।আমি ভালো করেই জানি,যে তুই সেই মেয়ের সাথে কথা বলার জন্যই এতো তালবাহানা করছিস।সো আমি যেটা বলেছি সেটাই।তোর আমাদেরকে স্কুলে দিয়ে আসতে হবে না।আমরা আমাদের মতন একাই যাবো।আর যদি তুই আমাদেরকে একা যেতে না দিস,তাহলে স্কুলেই যাবো না আমি।
–ঠিক আছে যাও তোমার কথাই মেনে নিলাম আমি।আমি তোমাদেরকে স্কুলে দিয়ে আসতে যাবো না।কিন্তু তোমরা গার্ডকে সাথে নিয়ে যাবে।
–নাহ তারো কোনো প্রয়োজন নেই।
–ঈদনি অতিরিক্ত করাটা কিন্তু কোনো ভালো কিছুর লক্ষন না।সো তোমাদের সাথে গার্ড যাবে।আর তারা সেখানেই থাকবে।তোমাদের যখন স্কুল ছুটি হবে,তখন তারাই তোমাদেরকে নিয়ে আসবে।সো এবার রেডি হয়ে নাও।আমি চললাম।
.
আকাশ তার কথা শুনিয়ে নিচে চলে আসে।পরে নিচে এসে নাস্তা করে নেয়।নাস্তা শেষ করে চারজন গার্ডকে বলে ঈদনি আর দিয়াকে স্কুলে দিয়ে আসতে।আর ফুল টাইম স্কুলেই থাকতে।পরে আকাশ রেডি হয়ে তার পার্সোনাল গাড়ি নিয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়।
.
অন্যদিকে গার্ড দিয়া আর ঈদনিকে নিয়ে স্কুলের জন্য রওয়ানা হয়েছে।ঈদনি গাড়ির ভিতরে বসে বসে গত রাতের কথা ভাবছে।গত রাতের সমস্ত কিছুই যেনো তার কাছে এখনো স্বপ্নের মতন মনে হচ্ছে!
–আচ্ছা সত্যিই কি আমি বদলে গেছি!না হয় তো গতকাল রাতে সেই লোকটাকে কিছু বললাম না কেন আমি!তার মানে আমি সত্যিই বদলে গেছি!নাহ আমার নিজেকে সংশোধন করতে হবে।আমি লোকটার আচরণে তাল মিলালে হবে না।কারন লোকটাকে আমি ঘৃণা করি।সে আমায় জোর করে বিয়ে করেছে।তার উপরে এখন আবার আমার সমস্ত কিছুর মধ্যে অধিকার ফলাচ্ছে।সো আমি আবার আগের মতন হয়ে যাবো।আমি এখন থেকে আমার মন মর্জি মতন চলবো।আর লোকটার উপরে প্রতিশোধ নিব।
.
এসব ভাবতে,ভাবতে ঈদনি আর দিয়া স্কুলের সামনে চলে আসে।গার্ড তাঁদেরকে স্কুলের ভিতরে দিয়ে আসে।তারপর তারা স্কুলের বাহিরে পাহারায় লেগে যায়।স্কুলে টিফিন ব্রেক দিয়েছে।দিয়া তার বান্ধবীদের সাথে আড্ডা মারায় লিপ্ত হয়ে যায়।অন্যদিকে ঈদনি ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে স্কুলে বারান্দায় হাঁটতে শুরু করে।সে স্কুল টাকে খুঁটে খুঁটে দেখছে।তখনি তার সামনে তারই ক্লাসের একটা ছেলে আসে।তারপর সেই ছেলেটা তাঁকে বলে…
–তোমার সাথে একটু কথা ছিলো।
–কি কথা বলেন?
–তুমি না দেখতে খুব মিষ্টি।
–এ কথা সবাই বলে।
–তোমাকে গতকাল স্কুলে দেখেই আমি তোমার প্রেমে পড়ে গেছি।সো আমি চাই তোমার সাথে প্রেম করতে।তুমি কি হবে আমার মনের রানী?
.
ঈদনি ছেলেটার কথা শুনে চুপচাপ হয়ে যায়!
ঈদনির নিরবতা দেখে ছেলেটা তাঁকে বলে….
–কি হলো কথা বলছো না যে?
–আসলে আমার এসবের প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট নাই।
–এই প্লিজ প্লিজ তুমি এভাবে বলো না।আমি সত্যিই বলছি,গতকাল তোমাকে দেখেই তোমার প্রেমে পড়ে গেছি আমি।আর বিশ্বাস করো,গতকাল সারাটা রাত আমি ঘুমোতে পারিনি।কারন চোখ বন্ধ করলেই খালি তোমার চোহারা চোখের সামনে ভেসে উঠে।সো প্লিজ তুমি আমার সাথে প্রেম করো।আমি তোমায় কখনো কষ্ট দিব না।একদম রানী বানিয়ে রাখবো তোমাকে।কখনো তোমার মনে আঘাত লাগতে দিব না।তুমি যাই বলবে তা মুখ বুঝে সহ্য করে নিব।মেনে নিব তোমার সমস্ত আবদার।
.
ঈদনি ছেলেটার ভোলাভালা কথা শুনে মূহুর্তের জন্য ভুলে যায়,যে সে বিবাহিত।তার সাথে অন্য কারোর জীবন জড়িয়ে আছে।আর সেই ছেলেটাও ঈদনির ব্যাপারে জানে না,যে ঈদনি বিবাহিত।ঈদনি ছেলেটাকে বলে….
–আমিও এমন কাউকে জীবনে চেয়েছিলাম।কারন আমার অধিক পরিমাণে রাগ।তাই আমি এমন কাউকে জীবনে আশা করেছিলাম,যে সে সব সময় আমার রাগের প্রাধান্য দিবে।কিন্তু কপাল খারাপ আমার,যে এমন কাউকেই পাইনি।
–আরেহ আমি তো এসে গেছি।আমি তোমার সমস্ত রাগের প্রাধান্য দিব।তোমার কথার দ্বিমত কখনো পোষণ করবো না।তুমি মুখ ফুটে যাই বলবে,আমি তাই মেনে নিব।প্লিজ তুমি রাজি হয়ে যাও।
–আচ্ছা ঠিক আছে আমি ভেবে জানাবো।
–হুম তুমি আগামীকাল আমায় ভেবে জানিও।আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো।
.
তারপর ছেলেটা চলে যায়।কিন্তু ঈদনি সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে।অন্যদিকে তাঁদের দুজনের সমস্ত আলাপ গার্ড শুনে নিয়েছে।কারন গার্ড ঈদনিকে ক্লাস রুম থেকে বের হতে দেখেই তার দিকে এগিয়ে আসে।কিন্তু মাঝ পথে ছেলেটা ঈদনির সাথে এসে কথা বলায় গার্ড একটু দূরে নিজেকে আড়াল করে ফেলে।যা ফলে সে সমস্ত কথা শুনে ফেলে।
.
এদিকে টিফিন ব্রেকের সময় শেষ।ঈদনি গিয়ে ক্লাসে বসে।সে ক্লাসে বসে বসে সেই ছেলেটার কথা ভাবছে।
–ছেটা তো সুন্দর এই আছে।তার উপরে আমার সমস্ত ইচ্ছার প্রাধান্য দিবে বলেছে।অন্তত সেই লোকটার মতন তো আর করবে না।নাহ এই ছেলেকেই আমি আপন করে নিব।কারন আকাশ নামক খচ্চর টা আমার দুই চোখের বিষ!তাঁকে আমার কেন জানি সহ্যই হয় না।আর হবেই বা কি করে,সে তো আমার অনেক বড়।তার উপরে সব সময় আমার উপরে জোর খাটানোর ট্রাই করে।আর জোর খাটিয়েই আমাকে বিয়েটা করেছে।
সো এই ছেলের সাথেই আমি রিলেশনে চলে যাবো।
আর তার উপরে প্রতিশোধ নিব।কি ভেবেছিস তুই,যে তুই আমাকে বিয়ে করলেই আমাকে নিজের করে পেয়ে যাবি!তাহলে ভুল ভেবেছিস তুই!কারন ঈদনি এক কথার মানুষ।আর তার রাগ সম্পর্কে তুই এখনো ভালো করে জানিস না!সো এই ঈদনিকে কোনোদিন ও আপন করে পাবি না।
.
অন্যদিকে আকাশ ক্লাসে বসে আছে।আর স্যার লেকচার দিচ্ছে।কিন্তু তার মন অন্য কোথায়।সে বসে বসে ঈদনির চিন্তা করছে।তার মনে কেন জানি”কু”ডাকছে ঈদনির জন্য!
–ঈদনি ঠিক আছে তো!নাকি আমার প্রতিপক্ষ ঈদনির কোনো ক্ষতি করে দিয়েছে কে জানে!নাহ এখনি আমি ঈদনির স্কুলে যাবো।সেই মোতাবেক স্যার থেকে ওয়াশরুমের জন্য ছুটিয়ে নিয়ে বেরিয়ে গেলাম।বের তো হয়েছি ওয়াশরুমে যাবো বলে,কিন্তু আমি তো আর ওয়াশরুমে যাবো না।আমি যাবো হলো ঈদনির স্কুলে।তাই রাহাতকে বললাম ক্লাস ছুটি হলে আমার ব্যাগ নিয়ে যেনো সে বাসায় চলে যায়।রাহাত হলো আমার কলেজ ফ্রেন্ড।কলেজ থেকে বের হতেই ফোনটা বাজতে শুরু করলো।পকেট থেকে ফোন বের করতেই দেখি পাকিস্তানের মাফিয়া রকি ভাই ফোন দিয়েছে।ফোনটা রিসিভ করে সালাম বিনিময় করলাম।
–আকাশ ভাই একটা বেড নিউজ আছে আপনার জন্য।
–কি বেড নিউজ।
–ভাই আমি তো সমস্ত কিছু জেনে গেছি,যে কারা আপনার পিছনে লেগেছে।
–কে লেগেছে আমার পিছনে?
–ভাই যে আপনার পিছনে লেগেছে,সে হলো আন্ডারওয়ার্ল্ডের অনেক বড় মাফিয়া।যার নাম হলো আলফা।আর সেই আপনাকে মারার জন্য লোক পাঠিয়েছে।তবে তার পিছনে বাংলাদেশের কে আছে,সেই খবর এখনো হাতে লাগেনি।তবে আমার মনে হয় বাংলাদেশের কেউ এই নেই।আলফাই আপনার দেশে শাসন করার জন্য এসব করছে।আর শুনলাম দুই-এক দিনের মধ্যে নাকি আলফার ছেলেপেলে আপনাকে উঠিয়ে নিয়েছিলো।কিন্তু তারা নাকি আপনাকে বেশি সময় আঁটকে রাখতে পারেনি।কারন আপনার ছেলেপেলে নাকি আপনাকে বাঁচাতে চলে এসেছিলো।
–হুম….
–তাই তারা আরো ছেলেপেলে দেশে মোতায়ন করছে আপনাকে এবং আপনার পুরো টিমকে মারার জন্য।
আর আলফা নিজেও দুই একদিনের মধ্যে বাংলাদেশ যাবে।
–তো ভাই এখন এসব থেকে মুক্তি পাওয়ার সমাধান কি?তাঁদেরকে কি করে শেষ করতে পারবো আমি?
আর আপনি আমায় এসব থেকে পিছা ছুটানোর জন্য কি ভাবে সহযোগিতা করতে পারবেন?
–ভাই আমি আপনার জন্য ফেইসটু ফেইস কিছুই করতে পারবো না।কারন আলফা অনেক বড় মাফিয়া আন্ডারওয়ার্ল্ডের।তার সোর্স এবং ছেলেপেলেও অনেক বেশি।তার সাথে কখনোই আমি পেরে উঠবো না।আর সে যদি জানে,যে আমি আপনাকে সাহায্য করেছি,তাহলে সে আমায় জানে মেরে দিবে।
–তার মানে আপনি আমার সাথে থাকবেন না।
–আরে ভাই তেমনটা নয়।আমি আপনার সাথেই থাকবো,কিন্তু আড়ালে থেকে সাহায্য করবো।আর আমার বাংলাদেশে যেই ছেলেপেলে আছে,তাঁদেরকে বলে দিব আপনার টিমের সাথে যুক্ত হয়ে আপনাকে সাহায্য করতে।তবে আমার মনে হয় না তাতেও কোনো কাজ হবে।কারন আলফার জনবল অনেক শক্তিশালী।তার টিমে এমন এমন মানুষ রয়েছে,যারা মানুষকে কামড়ে মেরে ফেলতে পারে।আর আপনাকে মারার জন্যেও সেসব মানুষকে সে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে।আর তাঁদের মাঝে সব চাইতে ভয়ংকর হলো একটা মেয়ে।যার বয়স বেশি হবে না।অনেক অল্প বয়সি একটা মেয়ে।কিন্তু সে মানুষ মারায় অনেক দক্ষ।সেই মেয়েটাই আলফার পুরো টিমকে ট্রেইন করেছে মানুষকে কামড়ে মেরে ফেলার।সো তাঁকে যদি আপনি শেষ করতে পারেন,তাহলে আলফার টিম অনেকটা নড়বড়ে হয়ে যাবে।
–ঠিক আছে ভাই আমি দেখছি।
–হুম ভাই সাবধানে থাকবেন।আর আমি আপডেট নিউজ আপনাকে দিব।
–ঠিক আছে।
তারপর ফোন রেখে দিলাম।ভিতরে ভিতরে অনেক ভয় কাজ করছে!কিন্তু সেই ভয়টা নিজেকে নিয়ে নয়।সেই ভয়টা হলো আমার মা’আর ছোট বোন দিয়াকে নিয়ে।তার উপরে আবার ঈদনি তো আছেই।কারন অন্যের ঘরের একটা মেয়ে নিয়ে এসেছি,তার উপরে সে মা হারা।তো আমার যদি কিছু হয়,তাহলে আমার মা,বোন আর ঈদনিকে কে সামলামে!এসব ভাবতেই চোখের কোন বেয়ে টুপ করে দুই ফোটা পানি গালে গড়িয়ে পড়লো।তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে ঈদনির স্কুলে চলে গেলাম।তাঁকে আর দিয়াকে বাসায় নিয়ে আসবো।আজকে তাঁদের আর ক্লাস করতে দিব না।
.
স্কুলের প্রিন্সিপালকে বলে আকাশ দুজনের জন্য ছুটি নিয়ে নেয়।স্কুলের পিয়ন দশম শ্রেণির ক্লাসে গিয়ে বলে..
— আজকের মতন ঈদনি আর দিয়ার ছুটি।
বাহিরে কেউ আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
.
দিয়া আর ঈদনি ক্লাস থেকে বের হতেই দেখে আকাশ দাঁড়িয়ে আছে।ঈদনিকে আকাশকে দেখতে পেয়ে তার কাছে গিয়ে বলে..
–কি হলো আমাদের ছুটি করালেন কেন?
–চুপচাপ গিয়ে গাড়িতে বসো।আজকে আর ক্লাস করতে হবে না।
.
দিয়া গিয়ে গাড়িতে বসে।কিন্তু ঈদনি দাঁড়িয়ে আছে।
ঈদনির দাঁড়িয়ে থাকা দেখে আকাশ একটু রাগান্বিত কন্ঠে ঈদনিকে বলে…
–ঈদনি আমি বলেছি গাড়িতে গিয়ে বসতে।
.
ঈদনি গিয়ে চুপচাপ গাড়িতে বসে।পরে আকাশ তাঁদেরকে নিয়ে চুপচাপ বাড়িতে চলে আসে।বাসায় এসে দিয়া তার রুমে চলে যায়।আর ঈদনি আর আকাশ তাঁদের রুমে চলে আসে।তখনি আকাশ ঈদনিকে বলে…
–আজকে তুমি সারাক্ষণ আমার চোখের সামনে থাকবে।এক ফোটাও আমার চোখের সামনে থেকে নড়বে না।
–কেব নড়বো না?কি ঠেকা আমার,যে আপনার সামনে আমার সারক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হবে?
–ঈদনি প্লিজ তোমায় দু’টো হাত জোর করে বলছি,প্লিজ তুমি আজকে আমার কাছে কাছেই থাকো।
.
ঈদনি আকাশকে আর কিছু বলে না।কারন আকাশের গলার স্বর তার কাছে কেন জানি অন্য রকম লাগছে!তাই সে আকাশের কথায় আর প্রশ্ন তুলে না।চুপচাপ তার কথায় মেনে নেয়।তবে কিছুক্ষণ যেতেই ঈদনি লক্ষ্য করে আকাশের আচরণের কেমন যেনো পরিবর্তন ঘটেছে!কিন্তু সে তার পরেও আকাশকে কিচ্ছু জিগ্যেস করে না।সে চুপচাপ আকাশের সামনে বসে আছে।আর আকাশ বিছানায় শুয়ে আছে।সে আকাশের কথা মতন তার সাথেই রুমের মধ্যে সারাদিন ছিলো।অন্যদিকে ঈদনির বিষয়ে গার্ড এখনো আকাশকে কিছুই জানায়নি।
.
দেখতে দেখতে রাত হয়ে এসেছে।ঈদনি খাবারের টাইমে গিয়ে নিচ থেকে খাবার খেয়ে আসে,কিন্তু আকাশ কিছুই খায় না।সেই সকালে খেয়েছে সে।সে মন মরা হয়ে শুয়ে আছে।ঈদনি ধীরে ধীরে আকাশের অনেকট পরিবর্তন লক্ষ্য করে।সে বুঝতে পারে যে আকাশের কিছু একটা হয়েছে।তাই সে এবার আকাশকে জিগ্যেস করে….
–কি হয়েছে আপনার?
.
ঈদনির কথার কোনো উত্তর এই দেয়না আকাশ।
তাই ঈদনি নিজের অজান্তেই আকাশের বুকে হাত রাখে।পরে তাঁকে আবার জিগ্যেস করে….
–এই কি হয়েছে আপনার?
আপনি এমন মন মরা হয়ে আছেন কেন?
.
আকাশ এবারো কিছু বলে না।সে কখনো চুপচাপ হয়ে আছে।এদিকে ঈদনি যে তার শরীরে নিজ থেকে হাত রেখেছে,সেই দিকেও আকাশের কোনো খেয়াল নেই।সে নিজের মতোই শুয়ে আছে।
–এই যে,কি হয়েছে বলেন না আমায়?আপনার এমন অদ্ভুত আচরণ দেখে আমার না কেমন জানি লাগছে!
.
এবার আকাশ উত্তর দেয়।
–আমার কিছু হয়নি।তুমি চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ো।
.
ঈদনি আর কোনো কথা বলে না।সে চুপচাপ আকাশের বুকে হাত রেখে ঘুমিয়ে পরে।আকাশ ও কিছুক্ষণ পর ঘুমিয়ে যায়।কিন্তু সে ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখে,যে আলফা তাঁকে মেরে ঈদনিকে তার সাথে নিয়ে গিয়েছে।ঈদনিকে তার সাথে নিয়ে গিয়ে তার বিশাল বাংলোয় আঁটকে রেখে তার সাথে অশালীন আচরণ করছে।তখনি আকাশ ঘুমের ঘোরে চেঁচিয়ে উঠে!যার ফলে তার ঘুম ভেঙ্গে যায়।সে ঘুম ভাঙ্গার পর বুঝতে পারে,যে সে এতোটা সময় স্বপ্ন দেখছিলো।সে চোখ মেলে আশেপাশে ঘুরে ঘুরে তাকাতে থাকে।তখনি তার নজর ঈদনির দিকে যায়।তার নজর ঈদনির দিকে পড়তেই সে দেখতে পায়,ঈদনি চিতাবাঘের মতন চোখ বড় বড় করে ভয়ানক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে!
চলবে?
ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার নজরে দেখবেন।
গল্প সম্পর্কে সবার মতামত আশা করছি।