কিশোরী_মাফিয়া পর্ব_১

#কিশোরী_মাফিয়া
#লেখক_আকাশ_মাহমুদ
#পর্ব_১

চৌদ্দ থেকে পনেরো বছরের এক মেয়ে এসে আমার গলায় চাকু ঠেকিয়ে ধরে গালের মধ্যে ঠাস,ঠাস করে কয়েকটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো!তারপর কর্কশ ভাষায় বলতে লাগলো….

–এই বেটা সমস্যা কি তোর?
তুই এই গ্রাম দিয়ে এতো জোরে গাড়ি চালালি কেন?
.
মেয়েটার এমনধারা আচরণে পুরো থতমত খেয়ে গেলাম!কারন এই টুকু একটা মেয়ে,সে কিনা এসে আমার গলায় চাকু ঠেকিয়ে ধরেছে!তার উপরে আবার অপ্রত্যাশিত ভাবে আমার গালে থাপ্পড় ও মারলো!

–এই মেয়ে তুমি আমায় চেনো?

–তোকে চেনার গুষ্টি মারি,তুই গাড়ি থেকে নাম।পরে তোর বাহাদুরি বের করছি।
.
চুপচাপ গাড়ি থেকে নেমে রোডের মাঝ বরাবর দাঁড়ালাম।মেয়েটা এখনো আমার গলায় চাকু ঠেকিয়ে ধরে রেখেছে।সে মাঝ রাস্তায় আমার গাড়ি থামিয়ে গলায় চাকু ঠেকিয়ে ধরেছে।

–বল এবার কি সমস্যা?কিসের এতো বাহাদুরি তোর,যে তুই এমন বেপরোয়া ভাবে গাড়ি টেনে যাচ্ছিস?

–দেখো আসলে আমার একটু তাড়া আছে।তাই আমি জোরে গাড়ি টেনে যাচ্ছিলাম।

–তোর তাড়া আছে বলে তুই এভাবে গাড়ি টেনে যাবি নাকি?মানুষজনের প্রাণের কি কোনো মায়া-দয়া নেই তোর মাঝে?হুট করে যদি তোর গাড়ির নিচে কেউ এসে পড়ে তখন কি করবি?

–বললাম তো আমার অনেক জরুরী কাজ থাকায় আমি তাড়াহুড়ো করে ড্রাইভিং করছিলাম।
.
মেয়েটা কোনো কথা না বলে আবারো একটা থাপ্পড় মেরে দিলো আকাশের গালের মধ্যে!যার ফলে আকাশ রাগে ফুলতে থাকে…

–এই মেয়ে তুমি কিন্তু আমার সম্পর্কে এখনো ভালো করে জানো না!যে কে আমি,বা কি আমার পরিচয়….

–এই বেটা তোর পরিচয় তোর কাছেই রাখ।
তোর পরিচয় জেনে আমার কোনো লাভ নেই।আর শোন ভুলেও একদম আমাকে ভয় দেখাতে আসিস না!তুই ও কিন্তু জানিস না যে আমি কে,আর কি আমার পরিচয়!আমি হলাম এই গ্রামের সর্দার।আমি ছোট হতে পারি,কিন্তু এই গ্রামের কেউ আমার মুখের উপরে একটা কথাও বলে না।

–এই মেয়ে থামো।না হয় কিন্তু লাশ বানিয়ে দিব সোজা।
অনেকক্ষণ ধরে দেখছি তোমার বাহাদুরি।কিন্তু এখন আর না।আমি চুপ করে আছি বলে ভেবোনা আমার কোনো ক্ষমতা নেই।
.
আবারো একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো মেয়েটা আকাশের গালে!পরে বলতে লাগলো…

–এই শোন তোর এই পাওয়ার গুলো না অন্য কাউকে গিয়ে দেখা।আমার সামনে একদম বাহাদুরি করতে আসিস না।আর তুই ভুলে যাস না,যে তোর গলায় এখনো আমি চাকু ঠেকিয়ে ধরে রেখেছি।সো গলা নামিয়ে কথা বল…

–এই যে মেয়ে,আমি কিন্তু সত্যিই বলছি,যে তুমি অনেক বড় ভুল করছো আমার সাথে অসভ্যতা করে।এর ফল কিন্তু ভালো হবে না।

–এই বেটা কি করবি তুই হ্যাঁ?কি করবি তুই আমার?
.
আকাশ এবার এতোটা রেগে যায়,যে সে কোমড়ে হাত দিয়ে পিছন থেকে মেশিন টা বের করে।যেটা দেখে মেয়েটা অট্টহাসি হাসতে থাকে!কিন্তু আকাশ কিছু একটা ভেবে আবারো মেশিনটাকে কোমড়ে রেখে দেয়।

–কিরে খেলনার পিস্তল টাকে আবার কোমড়ে গুঁজে রাখলি কেন?
.
আকাশ আর কোনো কথা না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে!আর মেয়েটা আকাশের গলা থেকে চাকু নামিয়ে তার হাতের মধ্যে পোঁচ বসিয়ে দেয়!পরে মেয়েটা বলতে থাকে….

–শোন বাহাদুরি না করে সোজা এখান থেকে চলে যা।কারন তোর বাহাদুরি এখানে চলবে না।
.
আকাশের হাত থেকে চিড়চিড় করে রক্ত পড়ছে!কিন্তু সে আর কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে উঠে পরে।পরে সেখান থেকে গাড়ি স্টার্ট করে চলে আসে।আর সেই আকাশটা আর কেউ না।সেই আকাশটা হলো আপনাদের প্রিয় লেখক আকাশ মাহমুদ।যে কিনা গল্পের একটা মূল চরিত্র।আর আপনারা তো সবাই আকাশ মাহমুদ কে চিনেন এই।সো আসুন তারপরেও আবার পরিচয় করিয়ে দিয়ে দেই।

(আমি আকাশ মাহমুদ বরাবরের মতন আপনাদের সাথে আছি।আর পড়াশোনা এবার অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে।পাশাপাশি বিজনেস ও করছি।আর বাকি সমস্ত কিছু গল্পের সাথে থাকলেই জানতে পারবেন।চলুন এবার গল্পের ফেরা যাক)

–রক্তাক্ত হাত নিয়ে বাসায় ফিরে এসেছি।হাত থেকে এখনে চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পড়ছে!যেটা দেখে বাসার বডিগার্ড সবাই অস্থির হয়ে গিয়েছে!

–স্যার আপনার হাতে কি হয়েছে?
কি ভাবে কাটলো আপনার হাত?

–কাউকেই কিছু না জানিয়ে রুমে চলে এলাম।
রুমে এসে বসতেই নিচ থেকে মা চেঁচাতে চেঁচাতে উপরে উঠে এলো।কারন তিনি কোনো ভাবে শুনেছে,যে আমার হাত কেটেছে।তাই তিনি উপরে ছুটে এসেছে।অবশ্য এই নিউজ গার্ডরাই হয়তো মা’কে দিয়েছে।

–এই আকাশ তোর হাতে কি হয়েছে রে বাবা?
তোর হাত থেকে নাকি রক্ত পড়তে দেখেছে গার্ড রা?

–আরেহ মা’তেমন কিছু হয়নি।সামান্য একটু কেটে গিয়েছে যাস্ট।মায়ের কাছ থেকে কথাটা চেপে গেলাম।কারন মা’ আমার থেকেও আরো রাগি বেশি!একবার যদি জানতে পারে,যে কোনো এক মেয়ে আমার হাতে চাকু দিয়ে এই অবস্থা করেছে,তাহলে তিনি সেই মেয়েকে পাতাল থেকে হলেও খুঁজে বের করে কানের পট্টি গরম করবে।তাই মা’কে আর কিছু বললাম না এই বিষয়ে।

–কিছু হয়েছে কি হয়নি,সেটা তো আমি দেখতেই পাচ্ছি।কি করে হয়েছে এমনটা আকাশ?

–মা’আসলে গাড়ি চালাতে গিয়ে বেফাঁস ভাবে অন্য গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগেছে।যার ফলে গাড়ির জানালার কাঁচ এসে হাতে বিঁধেছে।

–এই ছেলে তুই কি কোনোদিন ও শুধরাবি না হ্যাঁ?
আজ যদি তোর কিছু হয়ে যেতো,তাহলে আমার কি হতো বল তো?কে সামলাতো আমায়?

–আরে মা’তুমি খামোখা টেনশন করছো।আমার সত্যিই তেমন কিছু হয়নি।যাস্ট একটু কেটেছে।

–এই ছেলে চুপ একদম।একটু কেটেছে হ্যাঁ?
আমার কি চোখ নেই নাকি হ্যাঁ,যে কতখানি কেটেছে তা আমি দেখতে পাইনা?

–চুপ হয়ে গেলাম।কারন মায়ের সাথে কখনোই পেরে উঠবো না আমি।মা’তড়িঘড়ি করে ডক্টরকে ফোন দিয়ে বাসায় আসতে বললো….

–চুপচাপ রুমে বস।ডক্টর বাসায় আসছে।

–আরে মা’তুমি এতো হতাশ হচ্ছো কেন?
আমার তেমন কিছু হয়নি।আমি ঠিক আছি।

–এই ছেলে একদম চুপ।তোরা কখনোই আমার ভিতরের ভয় টাকে উপলব্ধি করতে পারবি না।তোর বাবা’মারা যাওয়ার পর তুই আর তোর বোন এই আমার বেঁচে থাকার একমাত্র উৎস।আর সেখানে তোদের কিছু হলে আমি চুপচাপ বসে থাকি কি করে…

–মায়ের কথা শুনে একদম মুখে তালা লাগিয়ে দিলাম।কারন মায়ের কষ্টটা কোথায় হচ্ছে,তা আমি উপলব্ধি করতে পারছি।চুপচাপ বসে আছি।কিন্তু মা’চুপচাপ নেই!তিনার চোখ দিয়ে টুপটুপ করে পানি পড়ছে!যেটা দেখে আমারো আর চুপচাপ থাকা হলো না।অন্য হাত দিয়ে মা’কে জড়িয়ে ধরে মা’য়ের কাঁধে মাথা রাখলাম।আর তিনি চোখে পানি নিয়ে আমার মাথায় হাত বুলাতে লাগলো।কিছুক্ষণ পর ডক্টর বাসায় আসলো।তিনি আমার হাত দেখে বলতে লাগলো…

–আরেহ হাত তো অনেক খানি কেটেছে।

–ডক্টররের কথা শুনে মায়ের ছটফটানি ভাবটা আরো বেড়ে গেলো!আমি সাথে সাথে ডক্টরের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালাম!তিনি আমার চাহনি দেখে কথার মোড় ঘুরিয়ে ফেললো….

–আরেহ অতিরিক্ত কেটেছে ঠিক,কিন্তু সেটা চামড়ার উপরে।ক্ষতটা ভিতরে বেশি একটা লাগেনি।সামান্য কিছু মেডিসিন খেলেই ঠিক হয়ে যাবে।

–ডক্টর আমার হাত ওয়াশ করে দিয়ে কিছু মেডিসিন লিখে দিলো।হাতে তিন সেলাই পড়েছে।পরে তিনি আমায় ঔষধ গুলো কন্টিনিউ করতে বলে চলে গেলো।

–এই আকাশ তুই চুপচাপ রুমে বস।আমি গার্ডকে দিয়ে তোর জন্য মেডিসিন গুলো আনার ব্যবস্থা করছি।আর কিছু খাবার নিয়ে আসছি।

–আচ্ছা…
মা,আমায় রেখে নিচে চলে গেলো।আর আমি বসে বসে সেই মেয়েটার কথা ভবাছি,যে কিনা চাকু দিয়ে আমায় হাতে আঘাতটা করেছে।এই টুকু একটা মেয়ে,তার কিনা কতো বড় সাহস,যে সে কিনা আমায় চাকু দিয়ে ঘা মেরে দিলো!সত্যিই বুকেরপাটা আছে বলতে হয় মেয়েটার!কিন্তু সত্যি বলতে আমি চাইলে তাঁকে মেরে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে পারতাম।অবশ্য সেটারো হয়তো প্রয়োজন পড়তো না।কারন আমার পরিচয়টা দিলেই তাই মাথা থেকে ঘাম ঝড়তে শুরু করতো!কিন্তু আমি তেমন কিছুই করিনি।আর তার কারন হলো,আমার অনেক জরুরী একটা কাজ ছিলো অফিসে।তাই তাড়াহুড়োয় ছিলাম।আর তাছাড়া কেন জানি মেয়েটাকে কিছু করতে ইচ্ছে হয়নি আমার!আর সেই ইচ্ছেটা কেন হয়নি,সেটাও আমার অজানা!তবে হ্যাঁ,মেয়েটাকে মারার জন্য যখন কোমড় থেকে মেশিন বের করি,তখন মেয়েটার হরিণের মতন চোখ গুলো দেখে কোনো একটা মোহে আঁটকে গিয়েছিলাম!হয়তো সেটাই আমার ইচ্ছে না হওয়ার কারন।এসব নিয়ে বসে বসে ভাবছিলাম।তখনি আমার ছোট বোন দিয়া স্কুল ব্যাগ নিয়ে দৌড়ে আমার রুমে আসে।

–এই ভাইয়া তোর নাকি হাতে কি হয়েছে?

–আরে নাহ তেমন কিছু না।সামান্য একটু লেগেছে খালি।কিন্তু তুই এই অসময়ে বাড়িতে কেন?তোর না ক্লাস চলছে এখন?

–ভাইয়া আমি খবর পেয়েই ক্লাস ফেলে চলে এসেছি।

–আরেহ পাগলী তার কি প্রয়োজন ছিলো।ক্লাস শেষ করে আসলেও তো আমায় দেখতে পেতিস।আমি কি কোথাও পালিয়ে যাচ্ছি নাকি।

–আরেহ রাখ তোর মরার ক্লাস।আমার ভাই হাতে চোট পেয়েছে,আর আমি ক্লাসে বসে বসে মুড়ি খাবো হ্যাঁ…

–দিয়ার কথা শুনে খুশিতে ভিতরটা নাড়া দিয়ে উঠলো!কারন আমার বোনটা আমায় অনেক বেশি ভালোবাসে।আমার কিছু হলে সে কখনো সহ্য করতে পারে না।সে যেখানেই থাকুক না কেন,আমার বিষয়ে কিছু শুনলেই সে আমার কাছে ছুটে আসবে।

–ভাইয়া এখন কেমন লাগছে তোর?

–এই তো ভালোরে।

–তুই এতো বড় হয়ে গেছিস,তাও তুই এখনো নিজেকে সামলাতে পারিস না।তোকে নিয়ে আর পাড়া যায় না।

–আরেহ পাকনা বুড়ী,থাক হয়েছে আর শাসন করতে হবে না আমাকে।আমি ঠিক আছি।বল তোর কি অবস্থা?কেমন যাচ্ছে পড়ালেখা তোর?

–ভাইয়া পড়ালেখা তো ভালোই চলছে।

–তোর বোর্ড পরিক্ষার প্রিপারেশন কেমন?

–আলহামদুলিল্লাহ….

–হুম মন দিয়ে লেখাপড়া কর।
দুই ভাই-বোন মিলে কথা বলছিলাম,তখনি মা খাবার নিয়ে আসলো।এর মাঝে গার্ড ও ঔষধ নিয়ে এসে গিয়েছে।মা দিয়াকে দেখে বলতে লাগলো…

–বাহ ভাইয়ের লাডলি বোন চলে এসেছে।

–হুম মা’সে তো আসবোই।

–আচ্ছা,যা এসেই যখন পড়েছিস,তাহলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নে।

–না,আমি এখন কিছু খাবো না।তুমি ভাইয়াকে খাইয়ে দাও।আমি ভাইয়ার পাশে বসছি।

–আচ্ছা ঠিক আছে…

–মা,আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে।আমি চুপচাপ বসে বসে মায়ের হাতে খাইয়ে দেওয়া খাবার গুলো গিলছি।
মা’আমায় খাওয়ানো শেষ করে চলে গেলো।মা’যাওয়ার পর দিয়া আরো কিছু সময় আমার কাছে বসে ছিলো।পরে সেও নিজের রুমে চলে যায়।দেখতে দেখতে রাত হয়ে এসেছে।মা’রাতের খাবার টাও এসে খাইয়ে দিয়ে গেছে।কারন আমার ডান হাতেই সেই মেয়ে চাকু দিয়ে ঘা মেরেছে।খেয়ে দেয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।তখনি সেই মেয়ের কথা মনে পড়লো।শুয়ে শুয়ে সেই মেয়ের কথা ভাবছি।ইশ কি মারাত্মক চাহনি ছিলো সেই মেয়েটার!মেয়েটার কথা ভাবতেই কেমন যেনো একটা অনুভূতি হচ্ছে ভিতরে!নাহ মেয়েটার সাথে একদিন একটু দেখা করা দরকার।
.
এভাবে আরো দুইদিন কেটে গেলো।তিন দিনের মাথায় আমার সব চাইতে ক্লোজ যেই গার্ড ছিলো,যার নাম মঞ্জুর,তাঁকে সমস্ত কিছু জানালাম।সে আমার কথা শুনে হতবাক হয়ে গেলো!

–ভাই কিহহহ,এতো ছোট মেয়ে আপনার হাতে চাকু মেরেছে।চলেন তো দেখি তার গ্রামে।তাঁকে সেখান থেকে উঠিয়ে নিয়ে আসবো সোজা।দরকার হয় শহরে থাকা আমাদের সমস্ত ছেলেপেলেকে নিয়ে সেখানে যাবো।তারপর দেখবো তাঁকে তুলে আনা থেকে কে আঁটকায়।দেখি কতবড় বুকেরপাটা সেই মেয়ের,যে আপনার গায়ে চাকু দিয়ে আঘাত করে সেই মেয়ে!

–আরেহ মঞ্জুর ভাই তার কোনো প্রয়োজন নেই।
মেয়েটা এখনো অনেক ছোট।আমি শিওর,যে সে ভুল করেই এমনটা করেছে।সো তাঁকে উঠানোর কোনো প্রয়োজন নেই।কিন্তু হ্যাঁ এখন আমরা দুজন সেই গ্রামে যাবো।

–ঠিক আছে ভাই চলেন।

–বডিগার্ড মঞ্জুরকে নিয়ে সেই জায়গার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম।যেখানে মেয়েটা আমায় চাকু মেরেছিলো।হয়তো সেটাই মেয়েটার গ্রাম।গাড়ি নিয়ে সেই জায়গায় চলে গেলাম।সেখানে যেতেই দেখি মেয়েটা তার বয়সের চাইতে ছোট ছোট বাচ্চাদের সাথে কানামাছি খেলছে।আমি মঞ্জুর ভাইকে দেখিয়ে বললাম সেই মেয়েটা।

–ভাই কি মেয়েটাকে গিয়ে তুলে আনবো?

–নাহ,আমরাই তার কাছে যাবো।আর তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়ার কোনো মাখসাদ নেই আমার।না হয় তুলে নেওয়ার হলে সেদিন এই তুলে নিয়ে যেতাম।
পরে আমি আর গার্ড মঞ্জুর ভাই গাড়ি থেকে নামতেই
দেখি মেয়েটা খেলা বাদ দিয়ে আমাদের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছে!মঞ্জুর ভাই মেয়েটার চেয়ে থাকা দেখেই গাড়ির ভিতর থেকে হাত দিয়ে মেশিনটা হাতে উঠিয়ে নিলো।মঞ্জুর ভাই মেশিন নিয়েছেন ঠিক,কিন্তু সেটাকে কোমড়ে গুঁজে রাখুন।

–ঠিক আছে ভাই।

–মেয়েটা আমাদেরকে দেখতে পেয়ে খেলা বাদ দিয়ে রেখে আমাদের দিকে এগিয়ে আসলো।

–এই,যে আপনি আবার এখানে কি করছেন?

–মেয়েটার কথা বলার ভঙ্গিমা দেখে বেশ অবাক হলাম!কারন মেয়েটা সেদিন তুই তুকারি করছিলো,আর আজকে আপনি করে কথা বলছে!

–কি হলো কথা বলছেন না যে?

–আসলে এমনিতেই তোমাদের গ্রামটা দেখতে এসেছিলাম।

–ওহহহ আচ্ছা…
আসুন তাহলে আপনি আমার সাথে।আর আপনার চেলাকে বলুন গাড়িতে বসতে।তাঁকে আমি আমার সাথে নিয়ে যেতে পারবো না।

–মঞ্জুর ভাই মেয়েটার কথা শুনে বিশাল খেপে গেলো!কিন্তু আমি সাথে সাথেই মঞ্জুর ভাইয়ের হাত চেপে ধরলাম।মঞ্জুর ভাই আমার হাত চেপে ধরা দেখে চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে বসলো।আর মেয়েটা আমায় তার সাথে যেতে বললো।মেয়েটার পিছন পিছন হাঁটছি।কিছুটা দূর যেতেই দেখি বিশাল একটা গ্রাম।মেয়েটা আমাকে তার গ্রাম দেখানো বাদ দিয়ে রেখে তার বাসায় নিয়ে গেলো।

–কি হলো তুমি আমায় এখানে আনলে কেন?

–চুপচাপ বসুন।
আমি একটু আসছি।

–আমি চুপচাপ বসে আছি।কিছুক্ষণ পর মেয়ে হাতে করে একটা নাস্তার ট্রে নিয়ে আসলো।যেটাতে সম্ভবত খিচুড়ি রয়েছে।

–এই,যে এসব কি করছো।

–এই বেটা তুই চুপচাপ বসতে পারিস না?
তোর সব কিছুতে প্রশ্ন করতে হয় কেন হ্যাঁ?

–মেয়েটার কথা শুনে চুপচাপ হয়ে গেলাম!কারন মেয়েটার ঘাড়ের রগ যে মোটা,সেটা আমার বুঝতে বাকি নেই!সে কিছুক্ষণ আমাকে আপনি করে বলছে,আবার কিছুক্ষণ তুই।আমি চুপচাপ বসে আছি।তখনি সেই মেয়েটা নাস্তার ট্রে থেকে খিচুড়ির বাটিটা উঠিয়ে নেয়।পরে নিজেই হাত ধুয়ে আমার সামনে খাবারের লোকমা ধরে!আমি চোখ পাকিয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছি!

–আরেহ এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই।আপনি আমাদের এলাকার মেহমান।তাই একটু খাতির যত্ন করছি।আবার তার উপরে আপনার হাতে আমি নিজেই আঘাত করেছি।যার কারনে আপনি আপনার হাতে খেতে পারবেন না।তাই নিজের হাতেই আপনাকে খাইয়ের দিচ্ছি।

–আমি এখনো চোখ পাকিয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছি!

–কি হলো হা করুন।

–বাধ্য ছেলের মতন এই পিচ্চি মেয়েটার কথায় হা করলাম।আর সে আমায় খাওয়াতে শুরু করলো।আমায় খাওয়ানো শেষ করে করে হাত ধুয়ে নিয়ে আমার ক্ষত হাত টার মধ্যে নিজের হাত দিয়ে ছোঁয়াতে শুরু করলো!মেয়েটার আচরণে একটার পর একটা অবাক এই হচ্ছি খালি!কিন্তু আমি কোনো কথা
বা কোনো ধরনের রেসপন্স এই করছি না।হুট
করেই সে আমার হাতটা উঠিয়ে নিয়ে তার নরম ঠোঁট দিয়ে চুমু খেতে আরম্ভ করলো!মেয়েটার এমন আচরণে আমি যেনো আর আমার মধ্যে নেই।হারিয়ে গেছি কোনো এক কল্পনার রাজ্যে!

চলবে?

ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার নজরে দেখবেন।

সবাই মাফিয়া টাইপ গল্প চাচ্ছিলেন।তাই আবারো মাফিয়া টাইপ গল্প নিয়ে হাজির হলাম।ইনশাআল্লাহ এই গল্পে ভিন্ন কিছু দেখতে পাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here