কোনো_এক_শ্রাবণে পর্ব-০৪

কোনো_এক_শ্রাবণে

পর্ব-০৪

-শাহাজাদী মাহাপারা (জোহুরা খাতুন)

ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ঢুকতেই এক পশলা হিমেল বাতাস ছুঁয়ে দিয়ে গেলো দোলা আর জাদিদকে। এফবিএসের সামনে এসেই রিক্সা থেকে নামলো তারা।রিক্সা ভাড়া মিটিয়ে জাদিদ সামনের দিকে অগ্রসর হলো।
– আপনার বন্ধু বুঝি ডিপার্টমেন্ট এ?
– হুম ! হ্যাঁ ও আসলে এখানেরই একজন ফ্যাকাল্টি।
-ও আচ্ছা ! আমাকে দেখে কিছু মনে করবেন নাতো আবার? না মানে অ্যাপনাদের বন্ধুদের মাঝে কাবাবের হাড্ডি হচ্ছি আমি।
-হা হা ! না ব্যাপারনা চলুন প্লিজ।

জাদিদ আর দোলা ভিতরে গিয়ে তার বন্ধুকে পেলো না। জাদিদকে দোলা জিজ্ঞেস করলো তিনি কি জানিয়ে আসেন নি? জাদিদ বললো -আসলে আমি খোঁজ নিয়েছিলাম ওর কি কি বার ক্লাস হয়।সে হিসেবেই এসেছি।তবে আজকের ক্লাস যে ক্যান্সেল হয়েছে তাতো জানি না।
– সমস্যা নেই চলুন মধুর ক্যান্টিনে যাই। তারপর
শ্যাডো তে যাওয়া যাবে লাঞ্চের জন্য।
– হ্যাঁ ভালো বলেছেন।

দোলা আর জাদিদ রওনা হলো মধুর ক্যান্টিনের দিকে সারাদিন যেনো চলে গেলো স্মৃতিচারণেই।

——————————————————————
নিপা আবরার কে আরও এক গ্লাস পানি দিলো।ঢকঢক করে সবটুকু পানি পান করলো সে।
নিপা জিজ্ঞেস করলো আপনি কি চশমা ছাড়া কিছুই দেখেন না?
উত্তরে আবরার বললো-দেখি তবে ঝাপসা।এই যেমন আপনাকে দেখছি ঘোলা ঘোলা।
– ঠিকাছে।
আবরারের ড্রাইভার এলো আবরারের জন্য আরেকটা চশমা।নিয়ে। এখানে এসেই আবরার ড্রাইভারকে ফোন করেছিলো গাড়িতে আরেকসেট চশমা রয়েছে সেটা নিয়ে আসার জন্য।
অফিসের এলাকাটা পানি বন্দি হয়ে রয়েছে।গাড়ির জ্যাম।তাই আবরার কে কষ্ট করে কিছুটা পথ হেটেই আসতে হয়েছে।তাই এই বিপত্তি।
আবরার চশমাটা চোখে দিতেই স্পষ্ট দেখতে লাগলো সবকিছু।প্রথমেই চোখ গেলো চেয়ারম্যান এর চেয়ারে বসে থাকা লোকটার উপর। আবরার তাকে দেখে একটা বোকা বোকা হাসি দিলো।
এবং মাথাটা ঘুরাতেই পাশের চেয়ারে বসা মেয়েটার দিকে চোখ গেলো।কাঁচা হলুদ আর দুধে মিশেল গায়ের রং। এমারেল্ড গ্রিণ রঙা শাড়ি পরা। চুল গুলো হাত খোপাকরা তাতে লম্বা কাটা লাগানো। যাকে দেখলেই গ্রিক দেবীদের কথা মনে পরে যায়।এমন অমায়িক ঐশ্বর্যা তার সামনে বসা। আবরার ধাক্কার মত খেলো।মনে হচ্ছে তার হৃৎপিন্ডটা লাফিয়ে বেড়িয়ে আসবে।
নিজের অবস্থায় আজ সে নিজেই অবাক।
কি হচ্ছেটা কি আজ তার সাথে !
নিপার হঠাৎ ফোন আসায় সে উঠে পরলো আবরারের সামনে থেকে।

শফিক সাহেব এতক্ষণ আবরারের চাহনি পর্যাবেক্ষন করছিলেন। তিনি পিয়নকে ডেকে চা নাস্তার ব্যবস্থা করতে বললেন।
আবরারের সাথে খোশগল্প শুরু করলেন।এই চমৎকার ছেলেটিকে তার পছন্দ হয়েছে কোনো এক অজানা কারণে তবে দোলার জন্য নয়।নিপার জন্যে।

-আপা কে যে ছেলেটার দেখতে আসার কথা ছিলো সে আজ এসেছে অফিসে।
নিপার কথা শুনে নিলয়ের বুকটা ধরাস করে উঠলো।
– নিপা তুমি ছেলেটার সামনে যাবেনা।
-কিন্তু কেনো?
– যাবেনা মানে যাবেনা।
– কিন্তু আমিতো গিয়েছিলাম সে তো আমায় দেখেছে।
নিজের মেজাজকে যথা সম্ভব ঠান্ডা রেখেই নিলয় বললো- ঠিকাছে কিন্তু আর কখনো যাবেনা।
– আর এর কারণ?
– আমি এখন ব্যাখ্যা করতে পারবোনা তবে তুমি যাবেনা।
-ঠিকাছে। তারপর কিছুক্ষণ কথা বলেই নিপা ফোন রাখলো।

নিপার মেসেঞ্জারে টং করে আওয়াজ হতেই মেসেজটা খুলে দেখলো।এই আইডিটা অনেক পুরোনো।তবে কখনো কথা হয়ে ওঠে নি এর সাথে।একটা ফিমেল আইডি। আইডিতে একজন মহিলা তার ৪ কি ৫ বছরের ছেলে কে কোলে নিয়ে দোলনায় বসে আছে। আইডির নাম ম্যালিসা হপার।
নিপা কোনো প্রকার গুরুত্ব দিলোনা।মেসেঞ্জারে খুব কমই কথা হয় সবার সাথে তার।এই মুহূর্তে তার বাবার কাছে যেতে হবে।কারণ অফিসে গেস্ট এসেছেন।

————————————————————————————-

লাঞ্চ করেই আবার শপিং এ বের হলেন দু বান্ধবী। সালেহা শাড়ির দোকান গুলো চষে বেড়াচ্ছে আর তার সাথে ঘুরতে ঘুরতে রুবাবা অস্থির।রুবাবার হঠাৎ করেই শাড়ি কেনার ইচ্ছে হলো।তার তিন কন্যা এবং পুত্র বধূর জন্য।যদিও পুত্রবধূ কে হবে তা তার জানা নেই।তবুও তিনি চান তার পুত্রবধূর মুখ দর্শনেই তাকে শাড়ি দিতে।

শাড়ির দোকানে গিয়ে বসতেই দোকানদার তাদের জন্য নাস্তা আর কোল্ড ড্রিংক্স এর অর্ডার দিলো। নানা রকমের শাড়ি, এত এত শাড়ি।শাড়ি দেখেই তার মাহাপারার কথা মনে পরলো।যদিও তার তিন মেয়েই শাড়ি পরে তবে মাহাপারা শাড়ির ব্যাপারে অনেক চুজি আর ক্লাসি।সে শাড়ি বলতে পাগল।চোখের কোণে পানি আর ঠোঁটে হাসি ফুটলো রুবাবার।
-কিরে কি ভাবছিস? শাড়ি পরে দুলাভাই এর সাথে চন্দ্র স্নানের কথা?
– যাহ! আমার এখন এসবের বয়স আছে নাকি?
তবে আমার তিন মেয়েই শাড়ি পরে।ওদের জন্য কিনবো।
– হেরে মাহাপারা আম্মুটার খবর কি? ৪ বছর হলো গিয়েছে।কবে ফিরবে?
রুবাবা উচ্ছল হাসি নিয়ে বললেন – আমার মাহাপারা শীঘ্রই আসবে সালে।ওর ফিরে আসার দিন চলে এসেছে। আর মাত্র দুমাস। আমার বাচ্চাটা আমার কাছে চলে আসবে। মাহাপারাকে জন্ম দিতে আমার সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয়েছে আমার এই মেয়েটা বাকি বাচ্চাগুলোর চেয়ে ব্যাতিক্রম।
সালেহা লক্ষ করলেন রুবাবা বলে এই সাধারণের মাঝে অসাধারণ নারীটি তার বান্ধবী।এবং তার জীবনের সবচেয়ে বড় খুশি তার সন্তানদের জন্য কতোটা নিবেদিতো প্রাণ। তিনি চট করেই রুবাবাকে প্রশ্ন করে বসলেন।
-মাহাপারাকে আমায় দিবি রুবা?
রুবাবা বিস্মিত হয়ে চেয়ে রইলেন সালেহার দিকে।

সে সন্ধ্যায় তারা শাড়ির দোকান থেকে আটটা শাড়ি কিনলেন।সালেহাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে রুবাবা বাসায় ফিরলেন।

——————————————————————
————-
কামাল গাড়ি পার্ক করে কোয়াটারে ঢুকলো। গোসল করে গামছা দিয়ে মাথা মুছতে লাগলো। কতগুলো আলু পুরি আর এক কাপ গরম চা নিয়ে রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে দরজায় টোকা দিলো নসিমা।
কামাল দরজা খুলেই বললো –
তোর হাতে কি?
– চা আর আলু পুরি। খালু আজ পুরি খাইতে চাইছে তাই এই আয়োজন।রাতে আরো ভালো আয়োজন আছে। আগামীকাল বাসায় মেমান আইবো।তাগো লেইগগাও তইয়ারি করতে হইবো যলদি ধরেন আমি জামু কাম আছে মেলা।
নসিমা প্লেটটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে যেতে নিলেই কামাল তার বেণী টেনে ধরলো।চোখে লজ্জা আর মুখে রাগ নিয়ে ফিরে তাকালো নসিমা।
-এডি কেমুন অসব্বতা কামাল ভাই। ছাড়েন বেণী।
– রাগ করিস না।একটু খাড়া।
কামাল ভিতরে গিয়ে বিছানায় প্লেটটা রেখে একটা প্যাকেট নিয়ে এলো।প্যাকেটটা নসিমার হাতে দিয়েই ঠাস করে তার মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিলো।নসিমা রাগ করে মুখ বাকিয়ে বললো – খচ্চর ব্যাডা।

রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে নসিমা গান গুন গুন করতে লাগলো- অন্তর দিলাম বিছাইয়া,
বইসা লওনা জিরাইয়া
যদি তোমার ইচ্ছে হয়,
নয়ন রাইখা নয়নে,
পরাণ রাইখা পরাণে
লা লা লা লালা লালা…….!
-কিরে! আজ মনে মনে এতো সুখের কোকিল ডাকছে যে? কি ব্যাপার?
ভ্রু নাচালো নিপা।
পিছন থেকে দোলা বলে উঠলো –
বুঝিস না আজ নসিমার মনের মানুষটা মনে হয় উকি দিয়েছিলো।কি নসিমা কি চলে?
বলেই দুবোন গলা জড়াজড়ি করে হাসতে লাগলো।লজ্জায় নসিমা নীল বেগুনি হতে থাকলো।
-আপা আপনেরা এডি কি কন? আমার লজ্জা লাগে।নসিমা বাংলা ছবির নায়িকাদের মত দুহাতে মুখ লুকালো।
– রুবাবা রান্না ঘরে এসেই ওদের হাসাহাসি শুনে ঝাড়ি দিলেন – হাসতেই থাক তোরা আজ আর খাওয়া লাগবেনা।সবাই চুপ।রুবাবা চলে গেলে আবার হাসি শুরু হলো।রুবাবা যেতে যেতে নিজেও মুচকি হেসে উঠলেন।
____________________

ভার্জিনিয়ার রিচমন্ড শহরে এই মুহূর্তে ইন্দো আমেরিকান কনসার্ট চলছে।
বিশাল স্টেজ। স্টেজের আশে পাশে না না রঙের বাতি জ্বলছে নিভছে আবার জ্বলছে।স্পট লাইট গুলো তাক করা স্টেজের দিকে।সামনে বিশাল মাঠের মতো।কিন্তু এই মুহূর্তে মাঠের কোনো অস্তিত্ব বোঝার উপায় নেই। দলে দলে লোকসমাগম দেখা যাচ্ছে।সবাই উৎসুক হয়ে পার্ফমেন্স দেখছে। কন্সার্টটা মূলত ইন্দো- আমেরিকান।বেশ ভালো ভালো শিল্পীরা এসেছেন বিভিন্ন স্টেট থেকে। স্টেজের পাশে বিশাল আকৃতির সাউন্ড বক্স থেকে নানা রকমের নানা ভাষার নানা ছন্দের গান বেজে উঠছে। দর্শকরের করতালি আর বাঁধ ভাঙ্গা উল্লাসে মুখরিত হচ্ছে পরিবেশটা।
কনসার্টে বিরাট বিরাট শিল্পীরাও এসেছেন তাদের কর্তব দেখাতে। কিছুক্ষণ আগেই “জাস্টিন বিবারের -কোম্প্যানী” গানে নাচ হচ্ছিলো মুখরিত ছিলো দর্শকরা। এর আগে ক্রিস ব্রাউন এসে স্টেজ মাতিয়ে রেখে গিয়েছেন।তারুণ্যের উচ্ছাস চলছে কনসার্ট জুড়ে। এখন কেপপ এর গানের তালে সবাই মুগ্ধ হয়ে নাচ দেখছে। এক্সোর অন পয়েন্ট কোরিয়োগ্রাফিতে সবাই মুগ্ধ।
আর দুটোর মত পার্ফমেন্স বাকি আছে।একটা তুর্কির আর একটা ইন্ডিয়ান।যেহেতু শো টা ইন্দো- আমেরিকান তাই এশিয়া থেকে আশা দেশ গুলোও থাকছে।

আর মাত্র একটা পার্ফমেন্স এর পরই ইন্ডিয়ান ডান্স শুরু হবে।প্রথমে “ভারাত নাট্টিয়াম” দিয়ে শুরু হবে তারপর ক্লাসিকাল, ওডিসি আর একটা কান্টেমপোরারিও রয়েছে। এরপর একটা অনুরোধ।তারপর দুটো বাংলা গান শোনার পালা।

মাহাপারা প্রচুর ঘামছে।উত্তেজনা আর ভয় দুটো একসাথে কাজ করছে সে পারবে তো? নিজের দেশটাকে রিপ্রেজেন্ট করতে? স্মরণ ভাইয়া বলেছে সে পারবে।কনফিডেন্ট থাকতে বলেছে।এই মানুষটার জন্য সে সব পারবে করতে। তবুও ভয়টা যাচ্ছেনা মন থেকে।
তুর্কিদের পার্ফমেন্স শুরু হয়ে গিয়েছে। আগামী সাড়ে ৬ মিনিট তাদের নাচ হবে। আর কিছুক্ষণ।মাহাপারার হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে আবার একেবারে কমে যাচ্ছে। মনে মনে নিজের স্রষ্টা আর নিজের পরিবার কে স্মরণ করলো সে।সবাই প্রায় রেডি। আর মাত্র কিছুক্ষণ।

এখন আমাদের মাঝে পার্ফম করতে আসছে এশিয়া মহাদেশ থেকে ইন্ডিয়া।

করতালিতে মুখরিত পুরো পরিবেশ। প্রথমেই ভারত নাট্টিয়ামের দল উঠলো নাচতে। “জিয়া জ্বালে জাঁ জ্বালে” গানে তাদের অদ্ভুত সুন্দর নাচ শুরু হলো।এরপর ক্লাসিকালের জন্য স্টেজে উঠলো টিম মাহাপারাও আছে।লিড ডান্সার নাহলেও তিনজন ব্যাক ডান্সারের মধ্যে সেও আছে।এবং তার পেছনে ১২ জনের মতো ডান্সার রয়েছে। “ঘার মোরে পারদেসিয়া” গানে নাচছে সবাই। গানের তালে তালে পায়ে ঘুঙুর পরা মেয়েরা নানা রকম ছন্দ মুদ্রা তুলে নাচছে।কি দারুণ সে অনুভূতি। মনোমুগ্ধকর সে নাচ।
এবং তিন মিনিটের সে নাচ শেষ হতেই দর্শকের উচ্ছাস আর করতালির শব্দ প্রতিধ্বনিত হচ্ছে, হচ্ছে, এবং হচ্ছে।

স্টেইজে সকলে বো ডাউন করতেই স্টেইজে উঠলো উপস্থাপকেরা। আমেরিকান এক্সেটেন্টে টিম ইন্ডিয়াকে অভিনন্দন জানালো তারা।মাহাপারা ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে উপস্থাপকের কানে কিছু বলতেই তিনি মাইক্রোফোনটা তুলে দিলেন মাহাপারার হাতে।

মিহি কন্ঠ ভেসে এলো মাহাপারার মাইক্রোফোনের মাধ্যমে।সে সকলের নিকট আর্জি রেখেছে একটি। শুদ্ধ আমেরিকান এক্সেণ্টে কথা বলছে একজন মেয়ে।

“আ’ম মাহাপারা, আ বাংলাদেশী ডান্সার বাই বর্ন।টুডেই আ’ম পার্ফোমিং ফ মাহ নেইবারিং কান্ট্রি ইন্ডিয়া,বেসিক্যালি ইন বিগার সেন্স আ’ম রিপ্রেজেন্ঠিং এইশা(এশিয়া)।দো দেয়ার আর মোর এইশান কান্ট্রিস এন্ড বিগেস্ট, ফেমাস গ্রুপ্স আর হিয়ার। আ’ম আ ফ্যান অফ দেম ঠু। স্টিল আ’ম রিপ্রেজেন্টিং সাউথ এইশাস এনাদার কান্ট্রি। আই উইশ টু পার্ফম ফ মায় মাদারল্যান্ড। আই নিড ইউর ব্লেসিংস,সো দ্যাট মায় ড্রিম টু পার্ফম ফ মায় বাংলাদেশ কামস ট্রু।”

-(আমি মাহাপারা। আমি একজন বাংলাদেশী। ভারত আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ। আমি আজ ভারতের হয়ে মূলত এশিয়ার হয়েই নেচেছি। তবে আমি আমার মাতৃভূমিকেও রিপ্রেজেন্ট করতে চাই সকলের কাছে যদি একটি সুযোগ দেয়া হয় আমায় তবে।)

দর্শকরা আরেকটি পার্ফমেন্স দেখবে কিনা? তা নিয়ে মত জানতে চাইলে সরব হয়ে উঠলো পুরো মাঠ। উপস্থাপকরা আরেকটি পার্ফমেন্সের ঘোষনা দিলেন এবং এবার টিম বাংলাদেশের নামটাই এলো। অবশেষে বহু কাঙ্ক্ষিত সেই নাম -বাংলাদেশ।

স্টেইজে দেখা যাচ্ছে চারজন মেয়ে নাচের মুদ্রায় দাঁড়িয়ে। সাউন্ড ট্র্যাক হতে বেজে উঠলো –
যাও বলো তারে

মেঘের ওপারে
বৃষ্টি বন্দনা জুড়ে ধরণীতল।

নাচে গানে মিলে জেনো একাকার।বাংলাদেশী দর্শকদের উপস্থিতি থাকায় তারাও জেনো গেয়ে উঠছেন গানটি।

এবং সর্বশেষ গান
– চলো বাংলাদেশ…
প্রত্যয় হাতে হাতে,কোটি প্রানে এক সুর ছিলাম, থাকবো সাথে চলো যাই বহুদূর।
চলো বাংলাদেশ চলো বিশ্ব উঠানে চলো বাংলাদেশ
চলো বিজয়ের টানে…!
———————————–

ইউটিউবে কনসার্ট টি লাইভ হচ্ছে। দোলা, নিপা, নাফি,বাবা -মা সকলে দেখছে তাদের ছোট্ট মাহাপারাকে। গানের ছন্দে নেচে যাচ্ছে তাদের ছোটো। কি আনন্দই না হচ্ছে তাদের। বিশ্ববাসী লাইভ দেখছে শো।এই নিয়ে বহু কল চলে এসেছে বাড়িতে।প্রশংসার জোয়ার বইছে “বাণিহালে”। শফিক সাহেবের বন্ধু সহ বিজনেস পার্টনার সকলেই মাহাপারার প্রশংসায় ব্যস্ত।
নসীমা খুশিতে কেঁদেই যাচ্ছে।কামাল তাকে ধাক্কা দিয়ে বললো আরে খুশির সময় কান্দিস ক্যানে?
-ও আপনে বুজ্বেন্না কামাল ভাই।ছোটপায় কত্ত নাম করছে দেখছেনতো। আল্লাহ তেনারে সুস্থ রাখুক।বাঁচায় রাখুক।শাড়ির আঁচলে নাক মুছলো নসিমা।কামাল ওর উদ্ভট কাজ দেখে “এহহেরে ” বলে নাক সিটকালো।
কান্না শুধু নসীমা না রুবাবাও করছিলেন।এইতো আর কিছুদিনের অপেক্ষা তারপর ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরবে।
—————————————————-

“হোয়াট আ ট্রেমেন্ডাস পার্ফোমেন্স বাই টিম বাংলাদেশ।সাচ আ প্রাউড গার্ল ইউ আর। আ বিগ রাউন্ড অব এ্যাপলস ফর মাহাপারা এন্ড হার টিম।”
মাহাপারা আবেগ আপ্লুত হয়ে গেলো।তার চোখ হঠাৎ বাষ্পান্বিত হয়ে উঠলো। স্টেজে বো ডাউন করে সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে নেমে এলো মাহাপারা।স্মরণ ব্যাকস্টেজেই ছিলো।মাহাপারা দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো।তার শরীর কাঁপছে উত্তেজনায়।স্মরণ তাকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে বললো – তুমি পেরেছো মাহাপারা।সবাই তোমায় নিয়ে গর্ব করবে এখন। আংকেল আন্টির ফোন এসেছিলো। আমাদের বাড়ি ফিরতে হবে।
পোশাক পাল্টেই মাহাপারা রওনা হলো ফিলাডেলফিয়ার উদ্দেশ্যে।
———————————-

জাদিদ এর কল তুলেই দোলা চিৎকার করে বলছে আপনি দেখেছেন শো টা? আমার ছোট বোন।দেখেছেন?
-জাদিদ হাসলো। হ্যাঁ দেখেছি।দারুণ নাচে।তোমরা সব ভাই বোনই বেশ গুণী।
– যাহ আমার কোনো গুণ নেই।
– আমার মতে আপনি দারুণ গান করেন। আপনার মেঝো জন দারুণ লেখিকা তার ব্লগ গুলো প্রায়ই পড়ি আমি।নাফি ভালো আর্টিস্ট তার এক্সিবিশনেও যাওয়া হয়েছে।য়ার ছোট জনকেতো আজ দেখেই নিলাম।
– এগুলো সবই শখ। আমরা চার ভাই বোন একে অপরের থেকে আলাদা হলেও আমাদের মাঝে কোনো ফাটল নেই।
-বাহ বেশ তো।
– আমি এখন রাখছি।পরে কথা হবে।
– দোলা সত্যিই কি কথা হবে?
দোলা কিছুক্ষণ থম মেরে রইলো।এই মানুষটার প্রতি দিন দিন মায়া বাড়ছে। আজ বাদে কাল তাকে দেখতে আসবে।কি করে কাটাবে এই মায়া?
ফোন রেখে দিলো দোলা উত্তর না দিয়েই।
একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করলো জাদিদ।
—————————

আহ !
-জাফর আর মারিস না ওরে আল্লাহর দোহাই লাগে ছাইড়া দে বাবা।বৌ পোয়াতি মারিস নারে।
-তুই চুপ কর ব্যাটি তোর জন্যই এত বার ওর। রিক্সায় পরপুরুষের লগে ঘুরস? এত চুলকানি তোর? ফষ্টি নষ্টি কইরা বেরাস নিজে আর আমি করলেই দোষ? মাগী….!
– আল্লাহর ওয়াস্তে ছাড়েন আমারে।মাফ করেন আর হবে না এমন।বাচ্চাটার কথা ভাবেন অন্তত।মাফ কইরা দেন।
-তোর কলিজা ৪ হাত হইছে না? নটি, আর যাবি কনোদিন?
চিৎকার করতে করতে ক্লান্ত ঋতু এখন আর শব্দ করার মত শক্তিও অবশিষ্ট নেই।
জাফর ঋতুর স্বামী।এই মুহূর্তে তার মার খাবার কারণ নাফির সাথে রিক্সায় করে হাসপাতে যাবার সময় জাফরের লাফাঙ্গা বন্ধু দেখে ফেলেছিলো এবং তা জাফরের কানে তুলেছে।তাই আজ ঋতুর এই পরিণতি।
মারতে মারতে হয়রা হয়ে জাফর বের হয়ে যায়।যাবার আগে ঋতুর ব্যাগে যা টাকা ছিলো সব নিয়ে যায়।শাশুড়ী ঋতুকে তুলে খাটে বসায়।
– আম্মা ও তো এই মাসের বাড়ি ভাড়াটাও নিয়ে গেছে এই মাসে চলবো কেমনে? বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পরে ঋতু।
– তুই মরিস না কেন? তোরে কতবার বলছি চইলা যা এ বাড়ি থেইকা তুই যাস না। আর কত সহ্য করবি?
– জানিনা আম্মা। আমি আর পারতেছিনা নিতে। আর পারতেছিনা।বলতে বলতেই ঋতু জ্ঞান হারায়।
মোমেনা বেগম চেয়ে চেয়ে দেখেন তার বড় ছেলের দুঃসহ অত্যাচার আর ছেলের বৌয়ের কষ্ট। চোখের পানি ফেলা ছাড়া যে কিছুই নেই তার করার। মা হয়ে নিজ সন্তানকে অভিশাপ দিতে পারছেন না শুধু। কিন্তু তিনি জানেন পাপ বাপকে ছাড়েনা উপরে একজন আছেন দো জাহানের প্রতিপালক তিনি নিশ্চই এর বিচার করবেন।নিশ্চই….।

চলবে…!

Shahazadi Mahapara’s Inscription

বিঃদ্রঃ কাল্পনিক কনসার্ট 😁।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here